Love Marriage Part-09

0
1314

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০৯
দিশা তার শশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
আজ তার মুখে কি সুন্দর হাসি!!!

ইশান তার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর ভাবছে সবসময় যদি এইরকম হাসিখুশি থাকতো!!!
তাহলে কত ভালো হতো!!!
কিন্তু উনি তো তা করবেন না।
সামান্য কিছু নিয়েই ঝগড়া শুরু করে দিবেন।
আর একটুতেই কেঁদে ফেলবেন।
আর আমাকে শুধু শুধু টেনশনে ফেলে দেবেন।

দিশাঃওভাবে কি দেখছো?

ইশানঃকিছু না।

দিশাঃতাহলে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

ইশানঃনিজের বউ এর দিকে তাকাবো না তো কার দিকে তাকাবো?

দিশা ইশানের কাজে এগিয়ে গেলো।
তারপর তাকে বিছানা থেকে টেনে নিচে নামালো।

ইশানঃকি করছো?
পড়ে যাবো তো?

দিশাঃকয় টা বাজে দেখেছো?
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
এই বলে সে বাহিরে চলে গেলো।

ইশান দেখতে পেলো মেঝেতে তার ফোন পড়ে আছে। এতোক্ষনে তার মনে হলো বাড়ির কথা।
একটা ফোন ও করা হলো না বাড়িতে।
ইশান ফোন টা তুলে দেখতে লাগলো।
আর বললো এই মেয়েটার একটুও মায়ামমতা নাই।
কিভাবে এতো দামী একটা ফোন ভেংগে ফেললো?

দিশা ঠিক তখনি আবার রুমে এলো।
কি হলো?
রেডি হবে কখন?

–এই তো হচ্ছি।
কিন্তু তার আগে বলো তুমি যে রাগ করে ফোন টা ভেংগে ফেললে এখন আবার নতুন একটা ফোন কিনতে টাকা লাগবে না?

দিশা কোন উত্তর দিলো না।
সে নিচ মুখ হয়ে থাকলো।

ইশান দিশাকে তার পাশে এনে বসালো।
আর বললো আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করো না দিশা?
একবার যদি আমার মনে রাগ ঢুকে যায়,
আমি যদি কঠোর হই,
তাহলে কিন্তু তোমার আর রেহাই নাই।
তখন আমার পিছে পিছে ঘুরলেও আর কোন ভালোবাসা খুঁজে পাবে না।
তাই আমি যেমন আছি তেমনই থাকতে দাও।
কিন্তু তোমাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে।
তুমি আমার শুধু ভালোবাসাই দেখেছো।
আমার রাগ,অভিমান এগুলো এখনো দেখো নি?
এবার ও ছাড় দিলাম।
কিন্তু পরবর্তীতে আর মাফ করবো না।

দিশা সেই কথা শুনে কেঁদে ফেললো।

ইশানঃকি হলো এটা?
আমি কি কাঁদার কথা বললাম?
চোখে কি পানি লেগেই থাকে?

ইশান দিশার চোখের পানি মুছে দিলো।
আর বললো আজকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে।

দিশা রাগান্বিত চোখে ইশানের দিকে তাকালো।

ইশানঃসত্যি বলছি।
আর সকালবেলার ওই মুখের হাসি টা একদম পাগল করে দিচ্ছিলো আমাকে।
সবসময় সেইরকম ভাবেই হাসবে।

দিশা চুপচাপ ইশানের কথা শুনছে।

ইশান দিশাকে তার কোলের ভিতর নিলো আর বললো
মাঝে মাঝে তোমার কি হয়?
এতো খারাপ ব্যবহার করো যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
কেনো এমন করো?
এখন থেকে রাগ টা একটু কন্ট্রোলে আনতে হবে।

দিশাঃআমি সত্যি বুঝতে পারি না কিছু?
কেনো যে এমন করি?

ইশানঃবাসায় তো যাচ্ছো কিন্তু মা যদি বকাবাকি করে খবরদার তর্ক করবে না।
মনে থাকবে?

দিশা ইশান কে জড়িয়ে ধরলো।
আর বললো মনে থাকবে।
কিন্তু আমার খুব ভয় করছে মা বাবা যে কি কি বলে?
ওনারা তো আজ আমার কান ঝালাপালা করে দেবে।

ইশানঃবেয়াদবি যখন করেছো তখন তো শাস্তি পেতেই হবে।

দিশাঃএখন একটা উচিত কথা বলি?

ইশানঃকি?

দিশাঃআমি কি মাকে বলেছিলাম তানিয়ার পিছনে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে?
আর উনি কি কানা নাকি?
কার পিছনে দৌঁড়াচ্ছেন?
কাকে মারছেন তা একবারের জন্য ও দেখেন নি?
আগে যাচাই করে নিবেন না?

ইশানঃএই কথা আমাকে বলছো ঠিক আছে।
মাকে যেনো আবার বলো না।
দয়া করে নতুন কোন অশান্তি শুরু করবে না।

দিশা কোন উত্তর না দিয়ে উঠে গেলো।

ইশান রেডি হয়ে নিলো।

দিশা তার মাকে বললো যাচ্ছি আমি।
তার মা সেই কথা শুনে কেঁদে ফেললো।
আর বললো কালকে চড় মেরেছিলাম দেখে নিশ্চয় আমার উপর এখনো রেগে আছিস?

দিশা চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

মাঃকি হলো?
কথা বলছিস না কেনো?

দিশাঃরাগ করে আছি কিনা জানি না তবে আর আমি এ বাড়িতে আসবো না।

মাঃও,,,,,,,
তাহলে রেগে আছিস এখনো?
রাগ করে থাক আর অভিমান করেই থাক একটা কথা মনোযোগ দিয়ে শোন।
ইশানের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করবি না আর।
ওরকম ছেলে জীবনেও আমি দেখি নি।
তোর এতো অত্যাচার সহ্য করেও কিভাবে হাসিখুশি থাকে বুঝি না।
আর তোর শশুড় শাশুড়ীর সাথে কোন বেয়াদবি করবি না।
মনে থাকবে?

দিশা কোন উত্তর না দিয়ে রাগ করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
তার আজ খুব খারাপ লাগছে।
কেনো তাকে এতো বোঝাতে হবে?
একদিকে ইশান বোঝাচ্ছে আবার অন্যদিকে তার মা।
সে কি এতই খারাপ?
তাকে কেউ ভালো বলছে না।
সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো যে নিজেকে এবার পাল্টিয়ে ফেলবে।
ইশানের মুখের উপর আর কোন কথা বলবে না।
তার অনেক সেবা করবে।
ইশান কে অনেক বেশি ভালোবাসবে।
যেমন করে ইশান তাকে ভালোবাসে।

দিশা আর ইশান বাড়ি চলে গেলো।
দিশার মা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো যতদূর চোখ যায়।

দিশা আর ইশান বাড়ি পৌঁছে দেখে তার বাবা সোফায়,তার মা চেয়ারে আর তার বোন দাঁড়িয়ে আছে।
তাদের কে দেখে কেউ কোন কথা বললো না।
তারা সবাই রুমে চলে গেলো।
ইশান হা করে তাকিয়ে রইলো।
কিছুই বুঝতে পারলো না।

ইশান তার মা কে বললো মা যাচ্ছো কেনো?
তার মা কোন উত্তর দিলো না।

ইশান তানিয়ার মাথায় একটা টোকা দিলো।
কি হয়েছে রে?
সবাই চলে গেলো কেনো?

–সবাই রাগ হয়ে আছে।
তুই যে ভাবীকে আনতে যাবি তা সবাই কে বলে যাবি না?
এদিকে আবার ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিস?
খালা আর খালু কাল সারারাত ঘুমায় নি।
পুলিশে রিপোর্ট পর্যন্ত করেছে।

–আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।

হঠাৎ তানিয়ার চোখ দিশার দিকে গেলো।
সে এই প্রথমবার দিশা কে সরাসরি দেখতেছে।
কিন্তু তানিয়ার মনে হলো দিশা কে সে আগে কোথাও দেখেছে।
সে ইশান কে বললো তোর বউ কে চেনা চেনা লাগছে কেনো?
কই যেনো দেখেছি।

ইশান বললো মাথা মোটা কোথাকার।
সেদিন যে ভিডিও কলে কথা বললি তাই হয় তো চেনা চেনা লাগছে।

–না,না।
ভাবীকে আমি কোথায় যেনো দেখেছি।

–মানে কি?
দেখতেই পারিস।
হয় তো কোন মার্কেট বা রাস্তাঘাটে দেখেছিস।

–কি জানি?
মনে করতে পারছি না।
আচ্ছা তোর এক্স গার্লফ্রেন্ড টা কি বিয়ে করেছে?

ইশানঃতা আমি কি করে জানবো?
আমি কি ওর খোঁজ রাখি নাকি?

দিশা বললো গার্লফ্রেন্ড?
তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো?
কে সে?
আমি তো জানি না।

ইশানের এবার খুব রাগ হলো।
সামান্য ব্যাপার টা দিশা বুঝতে পারছে না।
দিশাই তো তার গার্লফ্রেন্ড।
সে তো তার কথায় বলছে।
তানিয়ার সামনে তাকে বুঝায়তেও পারছে না।

ইশান দিশা কে বললো তুমি ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।

–আগে বলো তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো?

তানিয়া বললো ভাবি তুমি জানো না
ইশান ভাই এর গার্লফ্রেন্ড এর কথা?

দিশাঃনা তো।

তানিয়া বললো টানা পাঁচবছর ধরে রিলেশন করেছে।
এক নাম্বারের চিটার তোমার স্বামী।
তাকে বাদ দিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে।

ইশান তানিয়া কে বললো এমন মার দিবো না তোকে।
আমাকে চিটার বললি কেনো?

–চিটার কে চিটার বলবো না?

–তুই তো জানিস আমি আমার মায়ের কথা সবার আগে শুনি।
মা যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই আমি মেনে নিয়েছি।

–তোর মা তো প্রেম করতেও বারন করেছিলো।
তবুও করেছিলি কেনো?
তখন মনে ছিলো না মায়ের কথা?
বেচারি মেয়েটা যে এখন কি করছে কে জানে?
আর তুই দিব্যি বউ নিয়ে আনন্দে আছিস?

–তুই কি চাস আমি দিশার সাথে সারাক্ষণ ঝগড়া করি?

–না, না সেটা বলি নি।
পাঁচবছরের সম্পর্ক কে তুই কি করে ভুলে গেলি সেটাই ভাবছি।

দিশা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো।
তাই সে বললো অতীত তো অতীত ই।
তা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নাই।
এখন সে আমাকে বিয়ে করেছে তাই আমি ওর গার্লফ্রেন্ড আমি ওর বউ।
বুঝেছো?
আর কখনো এ ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে না।

ইশান দিশার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে গেলো।
দিশা তানিয়া কে বললো আমিও যাই।
পরে কথা হবে।
দিশাও রুমে গেলো।

তানিয়া মনে মনে বলতে লাগলো ভাবলাম পাঁচবছরের রিলেশনের কথা শুনে রেগে যাবে কিন্তু কিছুই তো হলো না।
এতো স্বাভাবিক ভাবে ব্যাপার টা মেনে নিলো কিভাবে?
আচ্ছা ওসব না হয় বাদই দিলাম।
কিন্তু দিশাকে আমি এর আগেও দেখেছি এটা সত্যি।
কিন্তু কোথায় দেখেছি?
দূর শালা ব্রেন!!!
এতো ধীরে ধীরে যে কেনো কাজ করে?
তাড়াতাড়ি কাজ কর আমার প্রিয় ব্রেন।
আমার ভালোবাসার ব্রেন।
এই বলে সে চোখ বন্ধ করে মাথায় টোকা দিচ্ছে আর ভাবতেছে।

ইরা এসে দেখে তানিয়া কেমন জানি করছে?
সে জিজ্ঞেস করলো কি করছিস তুই?
তানিয়া ঐ অবস্থায় বললো আমার ব্রেন ওয়াশ করছি।

–মানে কি?
পাগল টাগল হলি নাকি?

–হতেই পারি।
সেদিন যেহারে তোমার মা আমার পিছনে দৌঁড়ায়ছে এখনো মনে হলে ভয় করে আমার।
রাতে এখন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি খালাকে।

–কি কি দেখিস স্বপ্নে?

–খালা একটা লাঠি নিয়ে আমার পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে।
আর আমি তার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কখনো নদীতে ঝাপ দিচ্ছি।
কখনো আবার আকাশে উড়ে যাচ্ছি।
কাল তো কুয়ার মধ্যে ঝাপ দিয়েছিলাম।

ইরা হাসতে লাগলো।

–আপা হেসো না।
সত্যি বলছি।
মনে হয় বুদ্ধি টা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
খালা যে কেনো এতো বড় একটা ভুল করলো?

ইরা তানিয়ার মাথায় জোরে করে টোকা দিলো আর বললো এসব পাগলামি কথা বাদ দিয়ে খাবার দে।
ক্ষুধা লাগছে।
আর এসব কেনো দেখিস জানিস?

–কেনো??

–সারাক্ষন মোবাইলে গেম খেলিস।
আবার ভুতের মুভি দেখিস সেই জন্য।

হঠাৎ তানিয়া চিৎকার দিয়ে উঠলো আর ইরার গালে চুমু খেতে লাগলো।
আপা তুমি একটা জিনিয়াস।

–মানে?

–তুমি টোকা দেওয়ার সাথেই আমার বুদ্ধি কেমন জানি বেড়ে গেলো।
আরেকবার টোকা দাও দেখি।

–মানে কি?
কি বলছিস তুই?
আসলেই তুই একটা পাগলি।
ভাগ্যিস ইশানের সাথে তোর বিয়ে টা হয় নি।

–তানিয়া আবার চিৎকার দিয়ে উঠলো বুদ্ধি আমার আরো বেড়ে গেলো।
এই বলে সে ইরা কে আবার একটা চুমু দিলো।

–কি করছিস তুই?

–তুমি আমাকে পাগল ভেবো না আপা।
আমি আসলেই অনেক বুদ্ধিমান।
তবে ব্রেন টা আমার খুব দুষ্টু।
সহজে কাজ করে না।
ধীরে ধীরে কাজ করে।

–বলবি তো কি হয়েছে?
তুই এমন করছিস কেনো?

–তাহলে শোনো।
আমি অনেকক্ষন ধরে আমার ব্রেনের সাথে পরামর্শ করছিলাম যে দিশা কে আমি এর আগে কই দেখেছি।
কিন্তু আমার ব্রেন আর আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তুমি যেই একটা টোকা দিলে আর মোবাইলের কথা বললে তখন মনে হলো যে আমি ফোনে দেখেছি দিশার ছবি।
তারপর আবার ভুলে গেলাম যে কার ফোনে দেখেছি।
যেই তুমি ইশানের কথা বললে তখন মনে হলো আমি দিশা কে এর আগে ইশানের ফোনে দেখেছি।

–তো কি হইছে?
ওর বউ এর ছবি ফোনে থাকতেই পারে।

–হ্যাঁ পারে।
কিন্তু ছবি টা আমি অনেক আগে দেখেছি।

কিন্তু এখন আমি এটা মিলাতে পারছি না যে তখন তো ইশানের সাথে দিশার বিয়েই হয় নি।
তাছাড়া দিশা আমাদের ফ্যামিলির চেনা পরিচিত কেউ না।
আর ইশান ও বিয়ের আগে ওকে দেখে নি।
তাহলে দিশার ছবি বিয়ের আগেই ইশানের ফোনে কিভাবে এলো?

ইরা বুঝতে পারলো ব্যাপার টা।
যে দিশার ছবি তানিয়া ইশানের ফোনে দেখেছে।
সে তানিয়া কে বললো এসব নিয়ে তুই এতো মাথা ঘামাচ্ছিস কেনো?
আজাইরা বুদ্ধিগুলো শুধু এমনি এমনি কমে ফেলছিস।
এসব নিয়ে আর না ভেবে নিজের কাজে মন দে।

–আচ্ছা ইরা আপা দিশা আবার ইশানের গার্লফ্রেন্ড না তো?

–তুই কি বলছিস এসব?
এসব আবোলতাবোল কথাবার্তা বলে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাস?

–রাগ করছো কেনো?
আমার মনে হলো তাই বললাম।

–আর বলবি না এসব কথা।
মা শুনলে তো ভাববে সত্যিই দিশা ইশানের গার্লফ্রেন্ড।

ইরা আর এ ব্যাপারে কথা না বলে অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করলো।

দিশা রুমে যেতেই ইশান তাকে বললো এই মাথামোটা?
তোমার বুদ্ধি তো দেখছি তানিয়ার থেকেও কম।
আমার গার্লফ্রেন্ড কে ছিলো তুমি জানো না?
কি করে এটা তুমি বিশ্বাস করলে যে তুমি ছাড়াও অন্য কেউ ছিলো?

–তানিয়া এমন ভাবে বলছিলো যে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

–আচ্ছা ধরো তুমি আর আমি দুইজনই অজানা।
আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে না করে তোমাকেই করলাম।
আর তুমি বিয়ের পর জানতে পারলে তোমার স্বামীর রিলেশনের কথা।
তখন কি করতে?

দিশা ইশানের গলা টিপে ধরলো।
আর বললো খুন করতাম।
আমার জিনিস অন্য কারো কেনো হবে?

–সত্যি সত্যি দেখি খুন করছো?
আচ্ছা ছাড়ো এখন।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো তানিয়া কিন্তু তোমাকে চিনতে পেরেছে।
যদিও সিওর হতে পারছে না।
তবুও বলছি ওর সামনে একটু কম কম যাবে।

–হ্যাঁ ঠিক আছে।

ইশানঃতাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।
মা বাবার রুমে যেতে হবে।
আল্লাহই জানে কি আছে কপালে?
আমি কি করে যে এই ভুল টা করলাম?

দিশাঃSorry
আমার জন্য এসব হচ্ছে।

ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো আর বললো ঠিক আছে।
এবার ভুল হয়েছে।
পরবর্তীতে আর না হলেই হলো।
যা বলতে হবে মনে আছে তো?

–হ্যাঁ আছে।
মা যতই বকুক কোন উত্তর দিবো না।
চুপ করে শুনবো।
আর ক্ষমা চাইবো মার কাছে।

–Good.
লক্ষী বউ আমার।

ইশান দিশা কে নিয়ে তার মায়ের রুমে গেলো।

ইশানঃমা আসলে এতো তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি যে কাউকে বলার সময় পাই নি।
ভুল হয়ে গেছে মা।
আমি জানি তোমরা অনেক টেনশন করেছো?
দয়া করে রাগ করে থেকো না।

তার মা চুপ করে আছে।

ইশান তার বাবার কাছে গেলো,
বাবা তুমি অন্তত বোঝার চেষ্টা কর।

ইশানের বাবা বললো কি এমন দরকার যে তাড়াহুড়ো করে বের হতে হলো?

ইশানঃদিশা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলো।
তাই আমি কাউকে না বলেই তাড়াতাড়ি করে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম।

ইশানের মা এখনো চুপ করেই থাকলো।

–কথা বলছো না কেনো মা?

ইশান দিশাকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো মায়ের কাছে ক্ষমা চাও।
দিশা তাই তার শাশুড়ী কে বললো মা আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
আমি সত্যি সেদিন বুঝতে পারি নি।
আর করবো না এমন ফাজলামি?
Sorry maa.
Please Forgive me.

ইশানের মা কোন কথাই বলছে না।

ইশান কতবার মা মা করে ডাকলো কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না।

ইশানের বাবা বললো তোর বিবেক আসলেই নষ্ট হয়ে গেছে।
তোর বাবা মা যে বেঁচে আছে তুই মনে হয় এটা ভুলে গেছিস।
আমরা যে তোকে নিয়ে টেনশন করবো এটা ভেবেছিলি কখনো?
যাওয়ার সময় বলে যাস নি।
আবার ওখানে গিয়ে তো একটা ফোন করতে পারতি?

ইশানঃআমার ফোন ভেংগে গেছে তাই যোগাযোগ করতে পারি নি।

সেই কথা শুনে ইশানের বাবা বললো তোর বউ ভেংগেছে নাকি?
তোর বউ এর তো আবার অনেক রাগ।

দিশা সেই কথা শুনে ইশানের দিকে তাকালো।

ইশানঃনা,না।
ও ভাংবে কেনো?
আমার পকেট থেকে পরে গেছিলো।

ইশানের বাবা বললো তোর শশুড়বাড়িতে কি আর কারো ফোন ছিলো না?

ইশান আর কোন উত্তর দিতে পারলো না।
সে শুধু বার বার ভাবছে সে কি করে এই ভুল টা করলো।

ইশান তার মা কে জড়িয়ে ধরলো।
বললাম তো ভুল হয়েছে।
দরকার হলে কয়েকটা চড় দাও।
তা না হলে কান টা মলে দাও।
যা মন চায় করো।
আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে যে শাস্তি দেবে সেটাই মেনে নেবো।
সত্যি বলছি।
তবুও কথা না বলে থেকো না।
তুমি কথা না বললে আমি কার সাথে কথা বলবো?
প্লিজ মা।
রাগ করে থেকো না।

ইশানের মা কথা বললো এতোক্ষনে।
তোকে আমি কি বলেছিলাম?
দিশাকে আর আমি এ বাড়িতে দেখতে চাই না।
ওর মুখ আমি আর দেখবো না।
আর তুই কি করলি?
কাউকে না বলে ঠিক বউ এর কাছে চলে গেলি।
ওকে বাড়িতেও নিয়ে এলি।
তোর বাবার থেকেও পারমিশন নিলি না।
আর আমাকেও একবারের জন্যও বললি না।

আমি সব বুঝি রে বাবা।
বিয়ে করলে বউ ই সব থেকে আপন হয়।
আর মা বাবা হয় বোঝা।
তুই ভালো থাক এটাই আমি চাই।
কিন্তু আমি দিশাকে আর এ বাড়িতে থাকতে দেবো না।
ওকে চলে যেতে বল।
দরকার হলে তুই ও চলে যা তোর বউ এর সাথে।
আমার কোনো আপত্তি নাই।

ইশানঃমা কি বলছো এসব?
কই যাবো আমি?

মাঃযেখানে মন চায়।
যেখানে শুধু তুই আর তোর বউ থাকবে।
আর কেউ থাকবে না।
কেউ তোদের কে কথা শুনাবে না।
তোর বউ তার ইচ্ছামতো বেয়াদবি করতে পারবে।
কেউ বকবেও না।

ইশানঃমা,এইবারই লাস্ট।
আর দিশা কোন ভুল করবে না।
যদি সে এইরকম বেয়াদবি আবার করে আমি নিজে ওকে ঘর থেকে বের করে দেবো।
এই তোমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করলাম।

সে সত্যি অনেক অনুতপ্ত।
ও আমার কাছে অনেক কেঁদেছে।
তোমার সাথে ফাজলামি করে সে অনেক বড় ভুল করেছে।
সে বুঝতে পারে নি।
এবারের মতো ওকে ক্ষমা করে দাও।
প্লিজ মা।

ইশান দিশা কে বললো ওভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
ক্ষমা চাও মার কাছে।

দিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
তার খুব খারাপ লাগছে।
কেনো বার বার সে এমন করছে?

দিশা তার শাশুড়ীর পায়ে পড়লো।
কিন্তু কোন কথা বলতে পারলো না।
চোখের এক ফোঁটা পানি তার শাশুড়ীর পায়ে পড়লো।
তার শাশুড়ী দিশা কে ওঠালো।
এই দিশা তুমি কাঁদছো কেনো?
চোখ মোছো।

ইশানঃও এমন ই।
কিছু একটা বলতেই কেঁদে দেয়।
কোন শাসন ই করতে পারছি না আমি।

দিশা ইশানের দিকে তাকালো।

–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
আমি কি ভুল কিছু বললাম?

ইশানের মা বললো এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম।
পরবর্তীতে যেনো এরকম না হয়।
দিশার শাশুড়ী দিশা কে বললো আমি তোমার গুরুজন হই।
আমাদের সাথে তোমার ঠাট্টা করার সম্পর্ক নয়।
আমাদের কে সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে।
মনে থাকবে?

দিশা মাথা নাড়লো।

ইশানের মা ইশানের কান ধরে এমন জোরে মলা দিলো যে কানটা মনে হয় ছিঁড়েই গেলো।
কিভাবে তুই এটা করতে পারলি?
আমার তুই ছাড়া আর কে আছে?
তুই কোথায় যাবি কেনো যাবি আমাকে বলবি না?
বউ কে আনতে যাবি সেটা আমাকে বললে কি হতো?

–মা লাগছে তো।
ছেড়ে দাও।

–লাগার জন্যই তো ধরেছি।
আর তুই না বললি যা শাস্তি দেবে দাও।

–ঠিক আছে ঠিক আছে তাহলে কান টা ছিড়েই ফেলো।
তখন সবাই বলবে অমুকের ছেলের কান নেই।
তখন নিশ্চয় তোমার শুনতে ভালো লাগবে না।

ইশানের মা ইশানের কান ছেড়ে দিলো।
আর বললো তুই দিশা কে আনতে যাবি সেটা আমাকে বললে কি ক্ষতি হতো?
অন্তত তোর বাবা কে বলতে পারতি বা ইরা কে বললেও হতো।

–তুমি যদি না যেতে দাও তাই বলি নি।

–আমি যদি এমন টাই চাইতাম তাহলে তো তোকে বিয়ে করাতাম না?
আমার আঁচলে বেধে রাখতাম।

তোর বাবা কালকেই এ নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে যে দিশা কে তার বাড়ি থেকে আনতে হবে।
আমি আরো বললাম সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না।
ইশান নিজে গিয়ে নিয়ে আসবে।
তখন তোর বাবা বললো তোমার থেকে পারমিশন না নিয়ে সে জীবনেও দিশা কে আনতে যাবে না।
কিন্তু কি হলো?
তুই কাউকে না বলে একাই গিয়ে নিয়ে আসলি।

ইশান তার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুইলো।
আর বললো সত্যি আমি অনেক বড় ভুল করেছি মা।
জীবনেও এই ভুল আর হবে না।
দেখে নিও।
আর যদি আবার এইরকম কোন ভুল করি তাহলে আমাকে শাস্তি দিও কিন্তু কথা বলা বন্ধ করবে না।
তাহলে কিন্তু আমি দম ফেটে মরে যাবো।

–কি বলছিস এসব?
এসব কথা মুখে আনবি না খবরদার।

ইশানের বাবা বললো তোরা কি আজ ঘুমাবি না?
দিশা মা রুমে যাও।
ইশান তুইও যা।

ইশান বললো বাবা আজ আমি মায়ের কোলেই ঘুমাবো।
তোমরা চলে যাও সবাই।

ইশানের মা বললো তোর বউ আবার রাগ করবে।
যা ঘরে যা।

দিশা বললো রাগ করবো কেনো?
সেই কথা বলে দিশা রুমে চলে গেলো।

ইশানের মা বললো তোর বউ কিন্তু রাগ করে চলে গেলো।
যা ঘরে যা।।

–রাগ করে করুক।
আজ আমি এখানেই থাকবো।
তোমার কোলেই ঘুমাবো।
আমার চুল গুলো বুলিয়ে দাও।

ইশানের বাবা তাই রুমের ভিতর যে সোফা আছে ওখানেই শুয়ে পড়লো।
আর ইশান তার মায়ের কোলে।
তার মা আজ অনেক খুশি হলো।
তার ছেলে কে নিয়ে সেই জন্যই তো তার গর্বের শেষ নেই।
এরকম ছেলে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।

চলবে,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে