Gangstar In Love Part-50 and Last Part

0
3367

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 50 {Last part}

💐💙💐..
..
..
..
..
..

সকাল থেকেই সবাই প্রচুর পরিমানে ব্যাস্ত বিয়ের তোড়জোড় নিয়ে। বিয়ের পেন্ডেল অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তবে অয়ন আর রাত্রির মাঝে ঝগড়া লেগে গেছে ফুল নিয়ে। মানে ডেকোরেশনে কোন ফুল দিবে তা নিয়ে। নিপার পছন্দ বেলি ফুল আর নিরবের পছন্দ স্টার গেজেজ ফুল। এখন ডেকোরেশনে কি ফুল ব্যাবহার করবে তা নিয়ে ঘটলো বিপত্তি।

অয়ন;; পুরো ডেকোরেশনে তো স্টার গেজেজ ফুলই ইউজ করা হবে।

রাত্রি;; মামার বাড়ির আবদার,, বেলি ফুল ইউজ করা হবে। তুমি দেখেছ বেলি ফুলের কি সুন্দর স্মেল,, আহহহহহ মনে হয় ডুবে যাই।

অয়ন;; হ্যাঁ তো ডুব না, কেন বারণ করেছে। কিন্তু পুরো ডেকোরেশন স্টার গেজেজ ফুলেরই হবে।

রাত্রি;; মোটেও না। বেলি ফুলের।

অয়ন;; স্টার গেজেজ ফুলের।

রাত্রি;; বেলি ফুলের।

অয়ন;; স্টার গেজেজ ফুলের।

রাত্রি;; বেলি ফুলের।

আইরাত;; সবাই চুউউউউউউউউউউপ।

অয়ন আর রাত্রি এমন ঝগড়াতে অতিস্ট হয়ে আইরাত তাদের দুজনকেই থামিয়ে দিলো। রাগে ফুসছে আইরাত। সারাক্ষণ শুধু ঝগড়াই করে কাজের কোন নাম নেই। যাদের বিয়ে তাদের তো কিছু বলার সুযোগ টুকু দিচ্ছে না বরং উল্টো তারাই মিলে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে। তারা ঝগড়া করছে বাকি সবাই নির্বাক দর্শকের মতো দেখছে। তাই আইরাত আর না পেরে তাদের থামতে বললো।

আইরাত;; কি সারাটাক্ষণ বাচ্চাদের মতো লেগে থাকিস তোরা বল তো। ফুল গুলো এদিকে দে দেখি কারোর কিছুই করতে হবে না। যা করার আমিই করছি। আর কোন একটা ফুলের ডেকোরেশন হবে না দুটো ফুলের কম্বিনেশনেই ডেকোরেশন হবে।

আইরাতের ধমকে সবাই চুপ হয়ে গেলো। তারপর আইরাত সার্ভেন্টদের সাহায্য নিয়ে ফুলের ঝুড়ি গুলো নিয়ে বিয়ের আসর অর্থাৎ যে জায়গাতে বর-বউ বসবে ঠিক সেখানে চলে গেলো। কাজে মনোযোগ দিলো আইরাত। বেলি ফুল দিয়ে উপরে অনেক বড় করে একটা থোকা বাধা হলো ঠিক সবার মাথার মাঝ বরাবর। তার মাঝ খানে কয়েকটা স্টার গেজেজ ফুল। তারই চারিপাশে স্টার গেজেজ ফুল দিয়ে সাজানো। সিড়ি গুলোর রেলিং-এ স্টার গেজেজ আর বেলি ফুল মিক্স করে সাজানো হয়েছে। এভাবে পুরো পেন্ডেলই সাজানো হয়েছে। পুরো প্লেন আইরাত করেছে। কাউকে কোন কাজের ধারে কাছেও আসতে দেয় নি সে। প্রায় ৩ ঘন্টা পর কাজ শেষ হলে। সবকিছু শেষে আইরাত দাঁড়িয়ে এক লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে এবং বা হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলে। এখন যেই পেন্ডেলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে সেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ তো পিক তুলে সোজা ফেইসবুকে আপ্লোড দিয়ে দিচ্ছে। সবাই প্রশংসার ডালা নিয়ে বসলো আইরাতের। সত্যি অনেক সুন্দর সাজানো হয়েছে।

অয়ন;; ওয়াও বউমনি তুমি এতো সুন্দর করে সাজালে।

রাত্রি;; তো সুন্দর করে সাজাবে না,, তোমার মতো অকম্মার ঢেকি নাকি।

অয়ন;; এইইইই

আইরাত;; আহা বাবা ছাড় না এখন এসব।

নিরব;; আমি তো চোখই সরাতে পারছি না।

নিপা;; সিরিয়াসলি আইরু অনেক বেশিই সুন্দর হয়েছে।

সবার কথা মাঝে আব্রাহাম চলে এলো। আইরাতের এইসব কান্ড এবং সবার কথা শুনে বলে ওঠলো…

আব্রাহাম;; দেখতে হবে না বউ কার, সবকিছু তো সুন্দর আর স্পেশাল হতেই হবে।

এবার তাদের মাঝে আবির আহমেদ এসে পড়লেন।

আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি জলদি যাও সময় হয়ে আসছে আর কাজ সব প্রায় শেষের দিকে।

অয়ন;; শেষের দিকে না বাপি সব শেষই।

আবির আহমেদ;; হ্যাঁ তাই তো, এবার সবাই যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।

আব্রাহাম;; মেয়েরা এসে পরেছে। আইরাত নিপাকে নিয়ে ভিতরে যাও। আর নিরব অয়ন তোরাও চল আমার সাথে।

এই কথা বলে আব্রাহাম চলে যায়। আইরাত, রাত্রি আর নিপাও চলে যায় তাদের ঘরে। সাজানোর জন্য যে মেয়েরা এসেছিলো তারা নিপা কে সাজানোর কাজে লেগে পরে। বিয়ে বাড়িতে ধীরে ধীরে মানুষের আনাগোনাও বেড়ে যায়। বেশ খানিক সময় নিয়ে নিপা কে সাজানো হয়। অবশেষে সাজানোর কাজ শেষ হয়। রাত্রিও প্রায় রেডি হয়ে গেছে। নিপাকে আজ একটা লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। সাথে ভারি সাজ, বউ বলে কথা। অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে নিপা কে। রাত্রি হালকা গোলাপি রঙের লেহেঙ্গা পরেছে সাথে বেশ ভালোই সাজ। কিন্তু আইরাত রেডি হওয়ার আর সময় পাচ্ছে কোথায়, কাজের চাপ দৌড়াদৌড়ি তেই সময় কেটে যাচ্ছে। তারপর তাদের ঘরে আবির আহমেদ এসে পরলেন। সবাই রেডি কিন্তু আইরাত সবকিছু দেখছে, নিপার সাহায্য করছে, আইরাতকে সবাই বলছে জলদি রেডি হয়ে নিতে কিন্তু সে কাজ করেই যাচ্ছে। আবির আহমেদ আইরাতকে দেখে তড়িঘড়ি করে বলে উঠলেন…

আবির আহমেদ;; আরে আইরাত মামনি তুমি এখনো রেডি হও নি। তাড়াতাড়ি করো সবাই তো এসে গেছে।

আইরাত;; হ্যাঁ বাপি এইতো আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।

আইরাত বসে পরলো রেডি হতে। অন্যদিকে নিরবকে আব্রাহাম আর অয়ন মিলে রেডি করিয়ে দিচ্ছে। লাল-সাদা শেরওয়ানি তে নিরবকে বর বেশে অনেক মানিয়েছে। অয়ন ব্রাউন কালারের একটা পাঞ্জাবি পরে নিলো তাকেও বেশ লাগছে। আব্রাহাম ধূসর রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। নিরব আব্রাহামকে দেখে বলে ওঠলো..

নিরব;; বর আমি কিন্তু সবথেকে বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে ভাই,, মেয়েরা আজ তোমাকে গিলে না ফেললেই হয়।

আব্রাহাম;; গিলবে না কারণ আমার বাঘীনি আছে তো। সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলবে।

অয়ন;; গ্যাংস্টারের বউ বলে কথা।

অয়নের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। তারপর নিরবকে নিয়ে নিচে নেমে পরে। এবার আইরাতও পুরোপুরি রেডি হয়ে নিয়েছে।

নিপা;; সব লুকেই এতো যে কিউট লাগে তোকে। এমনিতেই পুতুল এর মধ্যে আরো সুন্দর লাগছে।

রাত্রি;; বুঝো না এর জন্যই তো আব্রাহাম ভাই আইরুর প্রেমে একদম লাট্টু হয়ে গিয়েছিলো।

আইরাত;; আরে ধুর কি শুরু করলি তোরা। তাড়াতাড়ি নিচে চল সবাই অপেক্ষা করছে।

সবাই এক এক করে নিচে চলে আসে। নিপার মাথার ওপর গাঢ় লাল রঙের ওরনা দিয়ে ছাওনির মতো করে ধরা হয়েছে। নিপা কে তো আইরাত আর রাত্রির নিয়ে আসার কথা ছিল কিন্তু আইরাতের একটা কাজ পরে যায় যার ফলে সে নিপাকে নিয়ে নিচে নামতে পারে না। তার বদলে এক পাশ দিয়ে রাত্রি আর অন্য পাশ দিয়ে নিপার এক ফ্রেন্ড ওরনা ধরে। আর ওরনার নিচে নিপা ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। নিরব ফাটা চোখে নিপার দিকে তাকিয়ে আছে। নিপাতে হারিয়ে গেছে সে। নিরবের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আব্রাহাম আর অয়ন ফিক করে হেসে দিলো। আব্রাহাম তার কাধ দিয়ে নিরব কে ধাক্কা দিয়ে বলে..

আব্রাহাম;; আর কিছুক্ষন বাদে তোরই হয়ে যাবে এখন যদি এভাবে দেখতে থাকিস না তাহলে তোর বউয়ের ওপর তোর নিজেরই নজর লেগে যাবে।

নিরব;; না মানে..

অয়ন;; চোখ নামা বাদর।

নিরব;; নিজের বউ কে দেখলেও দোষ 😑

এবার রাত্রি কে দেখে অয়ন থেমে যায়। এক নয়নে তাকিয়ে থাকে। রাত্রি চোখ তুলে দেখে যে অয়ন তার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। তা দেখে রাত্রি অয়নকে এক চোখ মেরে দেয়। সাথে সাথেই অয়নের কাশি ওঠে পরে। রাত্রি মুখ চেপে হাসে। কিন্তু আব্রাহামের অস্থির মন তো আরো জোড়ে হাতুরি পেটাচ্ছে কারন সবাই থাকলেও আইরাত নেই। আব্রাহামের এবার রাগ হচ্ছে আবার বিরক্তিও লাগছে।

আব্রাহাম মনে মনে;; এই মেয়ে কে আমি কি যে করবো সবাই নিচে নামছে তাহলে ও কোথায় ওই কেন নামছে না। আমার যে আর ভালো লাগছে না।

নিপা রাত্রি নিচে নেমে পরলে,, আব্রাহাম তাদের সাথে সাথে জিজ্ঞেস করে।

আব্রাহাম;; নিপা আইরাত কোথায়?

রাত্রি;; আয়য় হায়য়য়য় ভাই আপনার যেন আর তোর সইছে না।

আব্রাহাম;; সইবেই না তো কখন থেকে দেখছি না ওকে।

নিপা;; ভাই মাত্র ২ ঘন্টা হয়েছে।

আব্রাহাম;; ২ ঘন্টা আমার কাছে ২ বছরের সমান।

রাত্রি;; হাহাহা আরে ভাইয়া আসছে আপনার প্রাণপাখি চিন্তা করবেন না।

নিপা আর রাত্রি চলে গেলো। আব্রাহাম এখনো মুখ লটকিয়ে বসে আছে। অবশেষে কিছুটা দূর এসে সে কোল্ড ড্রিংস্ খেতে থাকে। কিছু সময় পর রাত্রি আইরাত বলে চিল্লিয়ে ওঠে। আব্রাহাম তা শুনতে পেরে ঘুড়ে তার পেছনে তাকায় দেখে যে আইরাত নিচে নামছে। আইরাতের পরনে নেভি ব্লু কালারের লেহেঙ্গা, চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, হাত ভরতি চুড়ি, কানে ঝুমকা তার সাথে বেশ সাজ। আব্রাহাম সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে মুচকি হেসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক প্রিটি লাগছে ওকে দেখে। আব্রাহাম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। আইরাত নিচে নেমে এলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক হাত এগিয়ে দেয়। আইরাত হেসে আব্রাহামের হাতে তার হাত রাখে। তাদের দেখে নিরব বলে ওঠে..

নিরব;; যত যাই বলো না কেন বেস্ট কাপল তোমরাই।

আব্রাহাম;; আচ্ছা হয়েছে এবার তুই যা। কাজি আসার সময় হয়ে গিয়েছে।

সবাই নিরব আর নিপার পাশে বসে আছে। কাজি এখনো আসে নি। তবে এসে পরবে। সবাই আড্ডা দিতে ব্যাস্ত কিন্তু এরই মধ্যে একটা ছেলে আইরাতের দিকে বাজে নজরে তাকিয়ে আছে। আর তার এই নজর অনেক ক্ষন যাবত আইরাতের ওপর স্থির। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে আড্ডার মাঝ খান থেকে আইরাতকে ডেকে নিয়ে যায়। আইরাত তার সাথে চলে যায়। স্টোররুমে কিছু একটা রাখার জন্য ডেকেছিলো। স্টোর রুম থেকে ফিরে আসার সময় হঠাৎ আইরাতের হাত ধরে কেউ টানাটানি শুরু করে দেয়। আইরাত ছাড়া পাওয়ার জন্য চিল্লাতে থাকে। এদিকে আইরাত কে অনেকক্ষন ধরে আব্রাহাম দেখছে না। একটা মেয়ে এসে যে আইরাতকে নিয়ে গেলো আর তো ফিরে আসলো না। এবার আব্রাহামের কেমন যেন খটকা লাগতে লাগে। আব্রাহাম সবাইকে বলে ওপরের দিকে যায়। সামনে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেতেই আব্রাহাম কারো চিল্লানোর আওয়াজ পায়। আব্রাহাম সেদিকে এগিয়ে যায়। এগোতেই আব্রাহাম শুনতে পায় আইরাত তার নাম ধরে চিল্লাছে “আব্রাহাম”। আব্রাহাম দেখলো যে ছেলেটি আইরাতের হাত ধরে টানছে। আব্রাহামের রাগে শরীর লাল হয়ে গেলো। আব্রাহাম এক লাথি দিলো ছেলেটির বুকে। ছেলেটি ছিটকে দূরে সরে গেলো। এমন ভাংচুরের শব্দ শুনে সবাই ঘাবড়ে গেলো। সবাই একসাথে ওপরের দিকে চলে আসে। আব্রাহাম ছেলেটাকে বেধরক ভাবে মারতে লাগলো। মারতে মারতে একদম আধা মরা করে দিয়েছে। যে হাত দিয়ে আইরাতের হাত ধরেছিলো সেই হাত একদম ভেংে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে আব্রাহাম। ছেলেটি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে বারবার মাফ চাচ্ছে কিন্তু আব্রাহামের রাগ থামার নাম নেই। আইরাত বেশ ভয় পেয়ে আছে এখন। সে আব্রাহামের রাগ সম্পর্কে খুব ভালোই যানে। কি পরিমান যে হিংস্র হয়ে ওঠে আব্রাহাম তা হয়তো আইরাতের থেকে বেটার আর কেউ জানে না। ছেলেটিকে মারতে মারতে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ছেলেটি কথাও বলতে পারছে না। রক্তে নাক মুখ সব ভেসে গেছে। আব্রাহামের হাতের ছাল উঠে গেছে ঘুষি মারতে মারতে। অবশেষে অয়ন আর নিরব মিলে আব্রাহাম কে টেনে তুলে আনে।

আব্রাহাম;; সর তোরা সবাই, ছেড়ে দে আমাকে। ওই জানোয়ার জানে না যে ও কার ওপর নজর তুলে তাকিয়েছে। ওকে আমি জানে মেরে দিবো।

আইরাত;; প্লিপ্লিজ এএএবার থামুন প্লিজ, মাফ করে দিন ওকে মারা যাবে তো। (ভয়ে)

আব্রাহাম এবার অয়ন আর নিরব কে সরিয়ে আইরাতের কাছে গিয়ে তার দুহাত দিয়ে আইরাতের গালে ধরে বলে ওঠলো।

আব্রাহাম;; জানপাখি আমি কি করে মেনে নিবো যে তোমার দিকে কেউ বাজে নজরে তাকিয়েছে। তুমি আমার তোমাকে দেখার অধিকার শুধুই আমার রয়েছে। আর এই কুলাংগার গুলো থেকে তোমাকে রক্ষা করাও আমার দায়িত্ব আর তুমি কেন একা একা আসতে গেলে এখানে বল তো। অনেক চিন্তা হয় তোমাকে নিয়ে। ভালোবাসি তো অনেক বেশিই।

এই বলে আইরাতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম। আইরাত খেয়াল করে দেখে যে আব্রাহামের হাত দিয়ে রক্ত পরছে যখম হয়ে গিয়েছে। আব্রাহামের হাত তাড়াতাড়ি করে নিজের হাতের মুঠোয় এনে বলে ওঠে…

আইরাত;; একি আপনার হাতেও তো অনেক ব্যাথা পেয়েছেন ,চলুন হাতে ব্যান্ডেজ করে দিবো।

আব্রাহাম;; ________________

আইরাত;; কি হলো চলুন।

আব্রাহাম;; অয়ন, এই কুকুরের বাচ্চা কে দূরে ফেলে দিয়ে আয়।

অয়ন;; জ্বি দাভাই।

আইরাত এক প্রকার টেনেই আব্রাহামকে সেখান থেকে নিয়ে গেলো। অয়ন বডিগার্ড দের ডেকে এনে ওই ছেলেটিকে বাড়ির বাইরে বের করে দেয়। আব্রাহাম কে আইরাত তার ঘরে নিয়ে যায়। বিছানার ওপর বসিয়ে দেয়।

আইরাত;; আপনি বসুন আমি ফাস্ট এয়িড বক্স নিয়ে আসছি।

আইরাত গিয়ে বক্স নিয়ে আসে আবার আব্রাহামের সামনে বসে পরে। আব্রাহামের হাত টা নিজের কাছে নিয়ে খুব যত্নের সাথে ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। ব্যাথা পেয়েছে আব্রাহাম কিন্তু চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে আইরাত। মলম লাগাতে গিয়ে নিজেই চমকে উঠছে তো আবার জোড়ে জোড়ে ফু দিচ্ছে। আব্রাহাম পলকহীন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাতের এই সব কান্ডে আব্রাহাম হেসে দেয়। আইরাতের তা দেখে মুখ চুপসে যায়।

আইরাত;; এতো ব্যাথা পেয়েছেন তবুও হেসে যাচ্ছেন। ভুতে ধরেছে নাকি?!

আব্রাহাম এবার আইরাতকে তার সামনে থেকে হাত ধরে টেনে এনে নিজের উরুর ওপর বসিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; এতো টেনশন করতে হবে না জানপাখি, আমি ঠিক আছি।

আইরাত;; তা বুঝলাম কিন্তু এভাবে কি কেউ কাউকে মারে!!

আব্রাহাম;; দোয়া করো যে ওকে জানে মেরে ফেলিনি।

আইরাত;; আপনি কি জীবনেও ভালো হবেন না।

আব্রাহাম;; এমনিতে আমি যথেষ্ট ভালো আছি কিন্তু তোমাকে কেউ কোন ক্ষতি করুক তো তার বেলায় আমার থেকে খারাপ কেউই হবে না, মাথায় রেখো।

আইরাত;; আচ্ছা হয়েছে বুঝলাম এবার নিচে চলুন সবাই আমদের জন্য অপেক্ষা করছে। কাজিও এসে পরেছে বিয়ে পরানো শুরু হয়ে যাবে।

আব্রাহাম;; হুমমম।

আইরাত আব্রাহাম নিচে চলে যায়। কাজিও এসে পরে বিয়ে পরানো শুরু হয়। বিয়ে শেষ হলে সবাই নিপা এবং নিরব কে অভিনন্দন জানায়। নিপা কে তার ঘরে দিয়ে আসে আইরাত আর রাত্রি। তবে নিরবের তার বাসর ঘরে ঢোকার আগে অয়ন, রাত্রি আর আইরাত বাধ সাধে।

আইরাত;; এই এই দাড়ান কোথায় যাওয়া হচ্ছে এতো জলদি!?

নিরব;; আসলে আমি তো ভাবি…

রাত্রি;; এতো তাড়াতাড়ি বাসর ঘরে যাওয়া হচ্ছে না।

নিরব;; কিন্তু কেন?

অয়ন;; আগে আমাদের পাওনা টা দিয়ে যা ভালো ভাবে।

নিরব;; কিহহ অয়ন তুইও শেষে কিনা..

অয়ন;; জ্বি 😁😁

আইরাত;; হয়েছে হয়েছে এবার বের করো ২৫ হাজার দ্রুত। যত দ্রুত টাকা দিবে তত দ্রুত বউ পাবে।

নিরব;; কিহহ ২৫ হাজার, মানে একটু বেশি হয়ে গেলো না।

অয়ন;; ছিহ মান সম্মান আর রাখলি না, ২৫ হাজার একটা বেপার হলো তাড়াতাড়ি দে বলছি।

তখন আবির আহমেদ আর আব্রাহাম এসে পরে সেখানে। নিরব আব্রাহাম কে দেখে অসহায় ভংিতে বলে ওঠে…

নিরব;; আব্রাহাম ভাই প্লিজ তুমি তো কিছু বল এরা আমাকে একদম লুটে নিলো।

আব্রাহাম ;; আমি আর কি বলবো,, বলেও লাভ নেই। এরা তোকে ছাড়ছে না সুতরাং টাকা দিয়ে বিদায় করাই ভালো তাই না।

নিরব আর কি করবে কোন উপায় নেই তাই টাকা দিয়ে তাদের বিদায় দিলো। তারপর আইরাত আর রাত্রি নিরবকে ঠেলে রুমের ভিতরে পাঠিয়ে দিলো। নিরব নিপার কাছে চলে গেলো। আইরাত সব টাকা অয়ন আর রাত্রি কে দিয়ে চলে গেলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে তাই যে যার যার ঘরে চলে গেলো। আইরাত তার ঘরে চলে এলো। ঘরে গিয়েই আইনার সামনে বসে পরলো। তারপর এক এক করে নিজের গহনা খুলতে লাগলো। তখনই আব্রাহাম তার ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। আসতেই দেখে আইরাত বসে এক এক করে ornaments খুলছে। আব্রাহাম ফোন টা পাশে রেখে আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলো। আইরাতকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আইরাত আইনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আবার নিজের চুড়ি খোলাতে মন দেয়। আইরাতের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আইরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয় আব্রাহাম। আইরাত এখনো তার মাথা নিচু করে আছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে। আইরাত এবার অশ্রুসিক্ত নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাতের চোখে পানি দেখে আব্রাহামের বুকের পাশে কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। আইরাতের এবার কান্নার বেগ বেড়ে যায়,, কেঁপে ওঠে সে। আব্রাহাম আর কিছু না বলে আইরাতকে নিজের সমস্ত দিয়ে আলিঙ্গন করে নেয়। আব্রাহান আইরাতকে কিছু বলে না,, শুধু চুপচাপ আইরাতকে জড়িয়ে ধরে থাকে। কেননা আব্রাহাম জানে আইরাতের এই অশ্রুর কারণ। আসলে কারণ টা সে নিজেই। আইরাত আর আব্রাহামের বিয়ের সময় কিছুই আইরাতের মন মতো হয়নি। যা হয়েছে তা এক প্রকার বাধ্যতা ছিলো। সত্যি আইরাত আজ অনেক বেশিই কানছে, একদম হিচকি ওঠে গিয়েছে। আব্রাহাম আইরাতের কাপড় পালটে দিলো। তারপর পাজাকোলে করে নিয়ে এসে আইরাতকে বিছানাতে শুইয়ে দেয়। নিজের বুকে আইরাতকে শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় বিলি কেটে দিতে থাকে। আইরাত আব্রাহামের বুকে মাথা রেখেই কখন যে ঘুমের ঘরে পাড়ি জমিয়েছে তা সে নিজেও জানে না। কিন্তু আব্রাহাম এবার ভাবতে থাকে যে আজ নিপা আর নিরবের বিয়ের এতো কিছু করে আইরাতের নিজের বিয়ের কথা মনে পরে গেছে। যেখানে আইরাতের বিয়ে বলতে কিছুই হয় নি। শুধুমাত্র কাগজে কলমে হয়েছিলো মনের দিক থেকে হয়নি। আইরাতের আজকে ঠিক কেমন ফিল হয়েছিলো আব্রাহাম তা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আব্রাহামের মাথায় একটা আইডিয়া কাজ করে। তারপর আব্রাহাম প্রশান্তির একটা হাসি দিয়ে আইরাতের মাথায় গভীর চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।



পরেরদিন সকালে আইরাতের ঘুম ভেংে যায়। উঠে দেখে তার পাশে আব্রাহাম নেই। আইরাত তার এলোমেলো চুল গুলোতে হাতিয়ে ঘরের আশে পাশে তাকায়। কিন্তু না আব্রাহাম কোথাও নেই। আইরাত ভাবে হয়তো কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাইরে চলে গিয়েছে। কিন্তু যতোই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হোক আইরাতকে সবসময় বলেই যেত কিন্তু আজ গেলো না। এতে আইরাতের কিছুটা মন খারাপ হলো। তবুও ইনিয়েবিনিয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে চলে গেলো দেখলো যে সবাই একসাথে বসে কথা বলছে। আইরাতকে দেখে সবাই খুশি হয়ে গেলো। সেও তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। কিন্তু কোথা থেকে যেন আব্রাহাম এসে আইরাতকে বলতে শুরু করলো যে…

আব্রাহাম;; আইরাত যাও কিছু রান্না করে নিয়ে আসো সবাই আজ তোমার হাতের খাবার খাবে।

আইরাত;; জ্বি আ.. আচ্ছা।

আইরাত মলিন হেসে রান্নাঘরে চলে গেলো। ভাবতে লাগলো যে আব্রাহাম সকাল থেকেই কোন কথা বলছে না। এখন এসেও কোন কথা বললো না সোজা রান্নাঘরে চলে আসতে বললো তাকে। যে কিনা রান্নাঘরের নাম শুনে রেগে বোম হয়ে গেতো সেই কিনা আইরাতকে আজ নিজে রান্নাঘরে যেতে বললো। আচ্ছা যাই হোক আইরাত সবার জন্য রান্না করতে লাগলো। এই সুযোগে আব্রাহাম সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো…

আব্রাহাম;; আমি আবার বিয়ে করবো।

আব্রাহামের এমন কথায় অয়নের কাশি উঠে পরলো। বাকি সবাইও আব্রাহামের কথায় বেশ অবাক। মানে হঠাৎ আব্রাহামের এমন বিয়ের শখ জাগলো কেন!.

অয়ন;; মানে কি বলছিস কি তুই দাভাই?!

আব্রাহাম;; যা এইমাত্র শুনেছিস তাই।

নিরব;; আর ইউ জোকিং ভাই!?

আব্রাহাম;; নট এট অল। আই এম টু মাচ সিরিয়াস। আমি বিয়ে করবো তো করবোই।

আবির আহমেদ;; কিন্তু পুনরায় বিয়ে কিভাবে সম্ভব, তুই পাগল হয়েছিস আব্রাহাম?!

আব্রাহাম;; পাগল আমি না বরং তোমরা হয়েছ আমি অন্য কাউকে না, আমি আইরাতকেই আবার বিয়ে করতে চাই। কিন্তু এই কথা যেন আইরাত ভুল করেও টের না পায়।

এবার যেন সবাই এক স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

রাত্রি;; আরে এটা তো ভালো কথা কেননা আইরাতের বিয়ে হয়েছে একটা খারাপ পরিস্থিতিতে। কিন্তু এখন যখন সবকিছুই ঠিক হয়ে গেছে তাহলে কেননা সবকিছু আবার নতুন রুপে শুরু করা যাক।

নিপা;; অবশ্যই তাই।

নিরব;; তো ভাই কবে থেকে শুরু হচ্ছে বিয়ের সবকিছু?!

আব্রাহাম;; আজকে থেকেই এখন থেকেই।

অয়ন;; যো হুকুম দাভাই।

এই সময়ে আইরাতও চলে আসে সবার জন্য নাস্তা নিয়ে। এখন সবাই এমন একটা ভাব ধরে যেন এতো ক্ষন কেউ কিছুই বলে নি, কিছুই জানে না। একদম চুপচাপ। আইরাত সবাইকে খেতে দিয়ে নিজেও আব্রাহামের পাশে বসে পরে। কিন্তু আইরাতের মুখে আজ তেমন কোন হাসি নেই। মনটা কেমন যেন ভার ভার তার। সবার খাওয়ার মাঝেই আইরাত তার খাবার হাফ খেয়েই ওঠে পরে। আবির আহমেদ আইরাতকে আটকাতে চাইলে আব্রাহাম তার হাতের ইশারাতে তাকে থামিয়ে দেয়। আব্রাহাম এবার আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকায়। আব্রাহাম বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে আইরাতের মনে এখন কি চলছে। তবুও মুখ বুজে থাকে সে। কারণ সামনে আইরাতের জন্য এক বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে চলেছে। আব্রাহাম খেয়ে দেয়ে আর আইরাতের সাথে কোন কথা না বলেই কাজে বাইরে চলে যায়। এদিকে আব্রাহাম স্টাফদের, অয়ন, নিরব, রাত্রি আর নিপা কে বলে যায় সবকিছু ঠিকঠাক মত দেখাশুনা করতে। আর আইরাত যদি জিজ্ঞেস করে যে এতো আয়োজন কিসের তাহলে তাকে বলতে যে আব্রাহাম ছোট খাটো একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছে তাই। তারা কাজে লেগে পরে কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে আইরাত আজ সারাদিন তার ঘর থেকেই বের হয় না,, সারাদিন মন মরা হয়ে বসে থাকে। শুধু বাপির ঔষধ দেওয়ার টাইমে নিচে এসে দুবার ঔষধ দিয়ে গেছে এই আর কি। অবশেষে আব্রাহাম বাইরে থেকে জলদি এসে পরে। সবার কাছে জানতে পারে যে আইরাত নাকি তার প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বাইরেই বের হয়নি। কিন্তু এর মাঝে রাত্রি আর নিপা রুমে গিয়ে জোর করে কিছু খাইয়ে দিয়ে এসেছে। আব্রাহাম কিছুই বলে না যেন এমন হবে এটা তার জানাই ছিলো। ধীরে ধীরে দিন গড়িয়ে রাত হয়। এদিকে বিয়ের কাজও শেষ। কম সময়ের মাঝেও কিন্তু চৌধুরী বাড়ি কম সুন্দর করে সাজানো হয়নি। চৌধুরী বাড়িকে দেখতে একটা প্যালেসের মতো লাগছে। আর সবকিছুই করা হয়েছে আইরাতের পছন্দের। আইরাতের পছন্দ Dark Red Rose🌹🥀। আব্রাহাম সেগুলোই মাথায় রেখে থিম সাজিয়ে গেছে। আব্রাহাম আর সময় নষ্ট না করে চলে যায় রেডি হওয়ার জন্য। আইরাত বসে বসে তার ফোনে গেমস্ খেলছিলো কিন্তু তখনই হুটহাট করে ২-৩ জন মেয়ে সাথে রাত্রি আর নিপাও এসে পরে। আইরাত তাদের দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। তবে আইরাতকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিপা বলে ওঠে…

নিপা;; আইরু তাড়াতাড়ি ওঠে এটা পরে নে।
(আইরাতের সামনে একটা Ash & White কালারের অপরুপ সুন্দর কাজ করা ভারি লেহেঙ্গা দিয়ে)

আইরাত;; কিন্তু কেন? (বেশ অবাক হয়ে)

রাত্রি;; ওফফ ফো এতো কথা বলিস না তো বেবিজান প্লিজ তাড়াতাড়ি ওঠ এটা পরে নে।

আইরাত;; আহা বাবা বুঝলাম পরতে হবে কিন্ত কেন বলবি তো,, আর তোরা এভাবে সেজেছিস কেন,, আর এই মেয়ে গুলো কারা???

নিপা;; আরে থাম একটু শ্বাস নিতে দে বইন। এতো শত প্রশ্নের জবাব পরে তুই একাই পেয়ে যাবি। এখন আপাতত নিজের মুখ টা বন্ধ রাখ আর এগুলো পরে নে।

আইরাত আর তাদের সাথে না পেরে লেহেঙ্গা টা পরেই নিলো। আইরাতকে টেবিলে বসিয়ে দেওয়া হলো মেয়েরা তাকে সাজাচ্ছে,, আইরাতের হাত ভরতি সাদা পাথরের চুড়ি, কানে ঝুমকো, গলায় নেকলেস, কপালে টিকলি মানে এক কথায় কোন হুর পরি কেউ হার মানাবে,, অসম্ভব সুন্দর লাগছে আইরাতকে ❤️।

আইরাত তৈরি হয়ে রাত্রি আর নিপার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। নিপা আইরাতের পেছনে কালো টিকা লাগিয়ে দিলো যেন কারো নজর না লাগে। তারপর আইরাতকে নিয়ে নিচে যাওয়া হলো। নিচে গেতেই আইরাত অবাকের চরম পর্যায় কারণ বাড়ি পুরো বিয়ে বাড়ি লাগছে। আর আজ যেহেতু আইরাত তার রুমের বাইরেই আসে নি তো এই সবকিছুর কিছুই জানে না সে। কিন্তু নিচে গিয়ে আইরাত যেই না আব্রাহামকে দেখলো বর বেশে আইরাত তখন চট করেই তার সকল প্রশ্নের উত্তর আপনা-আপনি পেয়ে গেলো। আব্রাহাম নিচে আইরাতের অপেক্ষাতে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের পরনে সাদা কালারের পেন্ট আর Ash & white কালারের কম্বিনেশনে শেরওয়ানি, হাতে সোনালী কালারের ঘড়ি, শেরওয়ানির ওপরের দুটো বোতাম খোলা, নীলাভ চোখ, কপালেও ওপর পরন্ত চুল, সাথে চাপদাড়ি, মন না হেরে কেউ কি আর থাকতে পারবে ❤️। আইরাতের আসার শব্দ শুনে আব্রাহাম ওপরের দিকে তাকায়। মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। যেন হাজার বছর এই মুখখানার দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার মন ভরবে না। মাথায় কাপড় ধরে আইরাতকে আনা হলো। সামনে এগিয়ে যেতেই কাজিকে আইরাতের চোখে পরে। এবার আইরাতের বুকের ভেতর টা কেমন ধক করে ওঠে। আইরাত না চাইতেও তার চোখেও কোণে হালকা পানি জোড় হয়। আইরাত নিপার দিকে অবাক নয়নে তাকায়। নিপা আইরাতকে আস্থা দিয়ে মুচকি হাসে।

আইরাত আর কিছু বলে না চুপ হয়ে যায়। সে ভাবতেও পারেনি যে আব্রাহাম তাকে এতো বড়ো একটা সারপ্রাইজ দিবে সাথে বাকিরাও। আইরাতকে নিয়ে আব্রাহামের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়। এবার আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম আড়চোখে দেখে যে আইরাত তার দিকে তাকিয়ে আছে। খানিক বাদে আব্রাহামও তার দিকে তাকায়। আইরাত সাথে সাথেই একগাল হেসে দেয়। সারাদিন পর আইরাত এখন হেসেছে। আব্রাহামের মনে এতোক্ষণে শান্তি লাগলো। এ যেন কাঠ ফাটা রোদে এক ফোটা পানির সমান। আব্রাহাম সাথে সাথে তার বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে দিলো এবং আইরাতের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো “” হায়য়য় কোয়ি তো রোক লো””। আইরাত এবার লজ্জা মাখা হাসি হাসে। কাজি তাদের কবুল বলতে বললে তিনবার কবুল বলে পুনরায় আইরাত-আব্রাহামের বিয়ে হয়ে যায়। এবার আইরাত তার রুমে চলে যায়। রাত বেশ গভীর হয়েছে। কিন্তু আইরাত তার ঘরে একটু জলদিই চলে গেছে। অয়ন, রাত্রি, নিরব, নিপা ভাবে যে আব্রাহামকে আটকিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। কিন্তু হলো তার উল্টো টা। তারা সবাই আব্রাহামের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে অনেক অবাক। কেননা দরজার সামনে বড়োসড় করে লেখা আছে যে “” আমি জানি তোরা টাকা নেওয়ার জন্য আমাকে ঠিক আটকাবি কিন্তু আমি এটার সুযোগ দিব না, পাশে দেখ একটা খাম রয়েছে আর সেখানে ৪০ হাজারের মতো আছে,, তোরা নিয়ে নে, আর হ্যাঁ শয়তানের দল ভুলেও দরজার পাশে কান পেতে থাকবি না যে যার যার ঘরে যা, গুডবায়””

এটা দেখে অয়ন বলে ওঠে…

অয়ন;; দাভাই এতো বেশি স্মার্ট কেন!? 😕

নিপা;; কারণ উনি আর কেউ না বরং আমেরিকান গ্যাংস্টার মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

আব্রাহামের এমন কাজে তাদের সকলেই বেয়াক্কেল হয়ে গেলা। তারা ভাবতেও পারেনি যে আব্রাহাম তাদের সাথে এমন কিছু একটা করবে। কিন্তু তারা হেসেই খুন। অবশেষে তারা সবাই চলে গেলো। কিন্তু আব্রাহাম ঘরের ভিতরে গিয়ে প্রচুর অবাক। কারণ ঘরের কোথাও কোন আলোর রেশটুকু নেই। শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। আব্রাহাম সুইচ অফ অন করছে বারবার কিন্তু তাতেও কোন লাভ নেই। আব্রাহাম সামনে এক কদম পা রাখতেই হঠাৎ করেই তার সামনে এক পলশা আলো জ্বলে ওঠে। মোমবাতি জ্বলছে, তার আলোতেই আইরাতের সুনিপূণ মুখখানা দেখা যাচ্ছে। আইরাত ধীরে ধীরে মুখ তুলে চোখ মেলে তাকায় আব্রাহামের দিকে। পুরো ঘর অন্ধকার তাতে মোমবাতির আলো যেন ঘরকে রাঙিয়ে তুলেছে। অনেক গুলো বেলুনও আছে ঘরে সাজানো। তবে চারিদিক মোমের আলোয় আলোকিত। তাতে আইরাতের মুখ জ্বলজ্বল করছে। আইরাত ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আব্রাহামের সামনাসামনি দাড়াঁতেই ঘরের প্রতিটা কোণায় মোমবাতি জ্বলে ওঠে। সারা রুমে আলো জ্বলছে। এবার আইরাতকে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে। বিয়ের পোশাক সে ছেড়ে ফেলেছে। তা ছেড়ে একটা নেটের লাল টুকটুকে শাড়ি পরেছে। তাতে কিছু পাতা এবং পুতির সংমিশ্রণ রয়েছে। চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। আইরাতের প্রতিটা অঙ্গ বেশ ভালো করেই বুঝা যাচ্ছে। সে তার মুখের সামনে মোমবাতি টা নিয়েই আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু আব্রাহামের এখন তো নাজেহাল অবস্থা। সে কি বলবে খুজে পায় না। বাক্যহীন হয়ে গেছে সে। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে তার কল্পনাতেও কখনো ভাবেনি যে আইরাত তাকে এভাবে এরকম করে চমকে দিবে। আইরাতকে এই ভাবে দেখে সে নিজের ওপর প্রতি সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণ হাড়াচ্ছে। নিজেকে এই পরিস্থিতিতে ঠিক রাখা খুব কঠিন, খুবই কঠিন। আব্রাহাম আইরাতের হাত থেকে মোমবাতি টা নিয়ে টেবিলেও পাশে রেখে দেয়। আইরাতের হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে এনে কোমাড় জড়িয়ে ধরে।

আব্রাহাম;; মানা করেছি না কতো বার, যে এভাবে কখনো আমার সামনে আসবে না। নিজেকে সামলাতে পারি না। মাথা তো আমার খারাপ করেই দিয়েছো এখন কি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছো। আইরাত তোমাকে ঠিক কতো টা আবেদনময়ী লাগছে তাকি তুমি জানো!!

আইরাত;; __________________।

আব্রাহাম;; আইরাত, আমি আজ তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবে কি আমায়?

আইরাত;; হুমমম।

আব্রাহাম;; আজ আমি তোমাকে সম্পূর্ণ রুপে আমার করে নিতে চাই। শুধুই আমার। এবার থাকবে না কোন বাধা, থাকবে না কোন অমত। শুধু থাকবে ভালোবাসা আর আমরা দুজন মিলে এক। আমাকে কি দিবে সেই সুযোগ আইরাত, আজ সম্পূর্ণভাবে কি হবে তুমি আমার আব্রাহামের আইরাত?!

আব্রাহামের প্রতিটা কথায় আইরাত কেপে কেপে ওঠে।মনের ভেতরে কেমন যেন ঝড় বয়ে যায় তার। আইরাত ধীরে ধীরে আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার উত্তরের আশায় এখনো আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত আর কিছুই না বলে মুচকি এক হাসি দিয়ে সোজা আব্রাহামকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম আইরাতের সম্মতি বুঝতে পেরে। তাকে পাজাকোলে তুলে নিলো। বিছানার ঠিক মাঝখানে শুইয়ে দিলো। আইরাতের ঠোঁটের সাথে আব্রাহাম তার ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। আইরাতের শাড়ির আচল সরিয়ে দিলো গায়ের ওপর থেকে। আব্রাহাম আইরাতের গলাতে মুখ ডুবায়। নিজের শেরওয়ানি খুলে ফেলে সে। শুরু হয় আব্রাহাম-আইরাতের নতুন এক প্রেম কাহানি 🌷।


৭ বছর পর~~““

দিনগুলো পেরিয়ে গেছে। সময় তার আপন গতিতে চলে গেছে। সাথে অনেক গুলো বছরও কখন যে চোখের পলকে পেরিয়ে গেছে তা কেউ টেরই পায় নি। আবির আহমেদ, আব্রাহাম,আইরাত,অয়ন,রাত্রি,নিরব, নিপা,রাশেদ সবাই একই বাসাতে একসাথে থাকে। মাঝখানে রাত্রি আর অয়নের বিয়েও হয়ে যায় অনেক ধুমধাম করে। আব্রাহাম আর আইরাতের জমজ দুটো ছেলে-মেয়ে হয়েছে। ছেলে আতিফ আহমেদ চৌধুরী আর মেয়ে আরুশি আহমেদ চৌধুরী। দুজনই ভারি মিষ্টি দেখতে। মেয়ে হয়েছে আব্রাহামের আদরের দুলালি আর ছেলে মায়ের আদরের শালিক। নিপা আর নিরবের একটা ছেলে হয়েছে নাম রোদ, আর অয়ন রাত্রির একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে নাম প্রভা। চার ভাই বোন মিলে সারাক্ষন বাড়িকে মাথায় তুলে রাখে। সবার চোখের মণি এরা, বাড়ির প্রাণ। তবে মাঝে মাঝে বাচ্চাকাচ্চাদের অত্যাচারে আইরাত ক্লান্ত হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই সবার হাসি মুখ দেখলে পরাণ জুড়িয়ে যায়। আতিফ আর আরুশিকে দেখলে নিপা নিরব, রাত্রি আর অয়নের মন ভরে যায়। আব্রাহাম আর আইরাতের ক্ষেত্রেও নিপা-নিরব আর অয়ন-রাত্রির বাচ্চাদের দেখলে একই অবস্থা। একে ওপরের জীবন। আইরাত,রাত্রি,নিপা তিনজন মিলে জমিয়ে সংসার করছে। চার নাতি-নাতনীদের পেয়ে আবির আহমেদ যেন ধন্য। এদের কে ঘিড়েই আবির আহমেদ-এর পুরো দুনিয়া। আব্রাহাম আর আইরাত এখনো আগের মতোই রয়েছে। ভালোবাসা যেন তাদের মাঝে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এখনো যে কেউ দেখলে ভাববে যে নতুন বিয়ে করা কাপল এরা। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের চোখে হারায়। এখনো আব্রাহাম সেই একই রকম হ্যান্ডসাম আর পারফেক্ট রয়েছে। আর আইরাত তো মনে হয় দিন দিন সুন্দর হচ্ছে। আইরাত-আব্রাহাম হয়ে রইলো একে ওপরের পরিপূরক হিসেবে 💞।

আব্রাহাম;; মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী!!
আইরাত;; জ্বি বলুন চৌধুরী
আব্রাহাম;; ধন্যবাদ আমার জীবনকে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য,, ভালোবাসা কাকে বলে বুঝানোর জন্য, এতো গুলো খুশি আমাকে দেবার জন্য, ভালোবাসি।
আইরাত;; ভালোবাসি অনেক বেশি।

সমাপ্ত~~~?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে