Destiny of Love Part-05+06

0
2531

#Destiny_of_Love
#PART_05+06
#Nishat_Tasnim_Nishi
_____________________________

আমার ভাবনা চিন্তার মাঝেই কেউ পিছন থেকে আমার ঘাড়ে হাত রাখলো।সাথে সাথে আমি চমকে গেলাম, বার কয়েক বার ঢোক গিলতে লাগলাম।মনে মনে জপতে লাগলাম যে আর যে কেউই হোক না কেনো দাদী যেনো না হয়। আমি বিরবির করে আল্লাহ আল্লাহ বলে পিছনে ঘুরলাম।পিছনে ঘুরে দেখলাম রুমকি।বুকে হাত দিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিলাম,যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। পর মুহূর্তেই রেগে গেলাম,এ রুমকি এখানে কী করছে?

ভ্রু কুচকে রুমকি কে বললাম–‘তুই এখানে কী করছিস?’

ওড়নার কোন মুড়াতে মুড়াতে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো,–‘ ইয়ে মানে আফা।’

ওর নটাংকি দেখে রাগ টা আরেকটু বেড়ে গেলো। ওকে ধমক দিতেই ও বললো,

–‘আসলে আফা পোলা টারে দেখতে আসছিলাম। ‘

এবার মেজাজ টা চরম খারাপ হয়ে গেলো, ওকে দুচারটা ঝাড়ি দিয়ে বিদায় দিয়ে দিলাম। সাথে ওয়ার্নিং ও দিয়েছি যে দ্বিতীয়বার যেনো ওকে আবরারের পাশে না দেখি।

রেগে মেগে দুম করে দিদুনের রুমে চলে আসলাম। রুমে প্রবেশ করতেই দিদুন গম্ভীর কন্ঠে বললো,–‘লাইট নিভিয়ে।দরজা চাপিয়ে আসো।’

দিদুনের কথামতো কাজ করে, আমি ঠাই দাড়িয়ে রইলাম।আসলে কী করবো? সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। একটুপর দিদুন বললো উনার পাশে আসতে।চুপিচুপি পা ফেলে সামনে গিয়ে দাড়ালাম। চাঁদের আলোয় পুরো রুম আলোকিত হয়ে আছে,দিদুন যে স্পষ্ট আমাকে দেখছেন সেটা না তাকিয়েও বুঝতে পারতেছি।

আচমকা দিদুন আমাকে বকা শুরু করে দিলেন। বিশ মিনিটের মতো আমাকে বকঝকা করলেন। চুপচাপ সব শুনতে লাগলাম। হুট করে দিদুন কেঁদে দিলেন,আমি দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরলাম।

–‘সর,একদম ধরবি না আমায়। আমি তোর কে?’

–‘সরি,সরি, সরি,দিদুন। আমি সত্যি আর এমন করবো না।প্রমিস!’

–‘সর।গুষ্টি কিলাই তোর প্রমিসের।’

—‘সত্যি,সত্যি আমি আর এমন করবো না। এবার থেকে প্রতিদিন তোমার সাথে কথা বলবো,হ্যাপি?’

–‘এবার থেকে মানে?আমি আর তোকে যেতে দিলে তো? শফিক রে বলেছি তোর সবকিছু ট্রান্সফার করে এখানে নিয়ে আসতে,তুই এখানেই থাকবি।’

–‘কিন্তু,দিদুন,,,’

–‘কোনো কিন্তু নয়।আমার কথাই ফাইনাল।’

আমি চুপ করে গেলাম,দিদুন কে শতবার বুঝালেও বুঝবে না। আমিও আচ্ছা বললাম। অতঃপর দিদুন আমাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। আমার দিদুন একমাত্র আমাকে নিয়ে অতি পজেসিভ। আমার তিন বছর বয়স থেকেই দিদুনের সাথে ঘুমাতাম। দিদুন কাউকেই আমাকে দিতো না। আমার প্রতি এক আলাদা টান উনার। ভাইয়ারা তো আমায় বলতো,–‘জানিস অতি কোনো জিনিস ই ভালো না। দেখিস দিদুনের তোর প্রতি এ অতি টান না আবার কাল হয়ে দাড়ায়।’

আমি দাত বের করে হেসে বলতাম,–‘তোমাদের যে হিংসা হচ্ছে সেটা বলো।’

ভাইয়ারা বলতো,’বুঝবি একদিন। ‘

ভারী নিঃশ্বাস চোখের পাতায় পড়ায়,চোখ মেলে তাকালাম। দিদুন ঘুমাচ্ছে,দেখে মনে হচ্ছে কত বছর পর শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছেন।

ধীরে ধীরে দিদুনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালাম। আমার মন যে শান্ত নেই,আমার আবরার অসুস্থ, কীভাবে শান্তির ঘুম আসবে?
আমার সাধারণত দুবার কাশি আসলে ওর হুশ ঠিক থাকে না। পাগলের মতো হয়ে যায়,ডাক্তারের থেকে এত এত ঔষধ নিয়ে আসে সাধারণ কাশির জন্য।সেখানে আজ ওর এত জ্বর।

চুপিচুপি পা ফেলে রুমে ডুকলাম। চাচ্চু ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। ধীরে ধীরে ওর কাছে গেলাম,কপালে হাত দিতেই চমকে উঠলাম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। মুখ টা শুকিয়ে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে কত দিনের অনাহারী।আবরার কি কিছু খেয়েছে? পাশে তাকাতেই দেখলাম,প্লেট অর্ধেক এটো খাবার, অন্য প্লেটে মালটা। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম,চাচ্চু হয়তো খাইয়ে দিয়েছেন। হঠাৎ অস্বাভাবিক এক ইচ্ছা জাগলো!আচ্ছা খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে মনের সামান্য ইচ্ছা পোষণ করলে?মাঝরাতে প্রেমিকের পাশে বসে থাকায় হয়তো,শয়তানের কু মন্ত্রণায় পড়ে যাই।সচেতন চোখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে, কপালে অধর স্পর্শ করেই ফেললাম। সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায় আবরার,আমি চমকে গেলাম।লজ্জা আর অস্বস্তি দুটোই ভেসে উঠলো মুখে।

আবরার ভ্রু কুচকে বললো,–‘কি?’

আমি ফিসফিস করে বললাম-‘কই কি?’

–‘এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমার?কতক্ষণ অপেক্ষায় ছিলাম জানো?’

আমি চুপ করে রইলাম।

–‘এই শোনো তোমার চাচা নাক দিয়ে ট্রাক্টরেরর মতো শব্দ করে কেনো?আচ্ছা,তুমি আবার এমন করো না তো?’

আমি অসহায় মুখে তাকালাম। এর নাকি জ্বর হয়েছে।

–‘কি হলো চুপ করে গেলে কেনো?

দাত চেপে বললাম –‘না।’

আবরার খুশি মুখে বললো,,’উফফ,বাঁচা গেলো।’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ও আবার বললো,–‘শুনো,আমি এখানে থাকবো।আ,,’

ওর কথার মাঝেই আমি বললাম যে এটা আমার দাদু বাড়ী,ও মাথা নেড়ে বললো যে ও জানে সেটা। আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম,অতঃপর ও বললো যে, এখানে নিয়ে আসার সময় নাকি ওর জ্ঞান ছিলো। আর ও ইচ্ছে করেই একটু বেশি অসুস্থতার নাটক করেছে।

আমি অবাক হয়ে বললাম,-‘কেনো করেছেন এমন?’

ও আমাকে হালকা ধমক দিয়ে উঠে,সাথে সাথে চাচ্চু কিছুটা নড়ে ওঠে। চাচ্চুকে নড়তে দেখে আমি বিছানার নিচে চলে যাই,আর আবরার ঠিক আগের মতো শুয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর চাচ্চুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি মাথা বের করলাম,দেখলাম চাচ্চু আগের মতোই শুয়ে আছে। আবরার চুপি চুপি পা ফেলে আমাকে টেনে নিয়ে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে।ওর শরীরের তাপমাত্রা তখন অনেকটা স্বাভাবিক।

আড়ালে আসতেই আমি মুখ খুললাম।
—‘আজব,সমস্যা কি?এখানে কেনো নিয়ে আসলেন?’

–‘ওখানে আর এক সেকেন্ড ফুসুরফুসুর করলে তোমার চাচা উঠে যেতো।’

আমি বিরক্তি নিয়ে চুপ করে রইলাম। শরীরের জ্বর হালকা হতেই, বকাঝকা শুরু করে দিয়েছে। একদম সুস্থ হলে জানি কি করবে?

–‘এবার শুনো, আমার অসুস্থতা বোধহয় উপরওয়ালা কোনো কারণে দিয়েছেন।’

–‘মানে?’

—‘মানে হলো, দাদুরবাড়ীর সাথে আমার আম্মুর সম্পর্ক টা ঠিক করার জন্যই হয়তো আমার অসুস্থতা টা হয়েছে। ওয়েট ডিটেইলসে বুঝাই,,’

এরপর আবরার সব বললো,ওর কথার বিশ্লেষণ হলো, ও এখানে থেকে সবার মন জয় করবে তারপর সবার সাথে তার মায়ের মিল করবে।এবং বুঝাবে যে তারা যা করেছিলো সেটা ভুল ছিলো।

আমি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললাম,–‘সেটা কখনো সম্ভব নয়। সবাই যদি এক ধরনের হতো তাহলে পারতেন,আমাদের ফ্যামিলির একেকটা মানুষ একেক ধরনের। পুরো দুনিয়া টা এনে দিলেও ওদের মনের মতো হতে পারবে না কেউ। ‘

আবরার ধমক দিয়ে বললো,–‘সব কিছুতে নেগেটিভ ভাবনাচিন্তা না করলে কি হয় হয় না?
শুরুতেই নেগেটিভ কথাবার্তা,বেয়াদপ।’

ওর ধমকে আমার হাসি মুখটা চুপসে গেলো।
আমি মিনমিন করে বললাম–‘আমি সত্যি কথাই বলেছি।’

এ কথা শুনে ও আবার আমাকে ধমক দিয়ে ওঠে।কি রে ভাই?এ সত্যি আবরার তো? এক জ্বরে এত পরিবর্তন। সেকেন্ডে সেকেন্ডে ধমক দেয়।

এরপর কয়েক মুহূর্ত ও চুপ করে রইলো।ওর নিরবতা দেখে বললাম,

–‘আবরার হাত ছাড়ো,আমাকে যেতে হবে।দিদুন যদি উঠে যায় তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’

ছোট ছোট মুখ করে বললো,–‘যাবে?আচ্ছা যাও।’

আবারো চুপিচুপি পা ফেলে রুমে এসে দিদুনের পাশে শুয়ে পড়লাম। আমি শুতেই দিদুন চোখ মেলে তাকালো,সাথে সাথে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

–‘কোথায় গিয়েছিলে?’

ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে আসলো।কি বলবো,কি বলবো? হঠাৎ কথা শূন্যতায় ভুগতে লাগলাম। দিদুন আবার প্রশ্ন করতেই বললাম,–‘ ওয়াশরুম।হ্যা,ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম দিদুন।’

১২.
কোন গোপনে মন পুড়েছে,
বৃষ্টি থামার পরে।
আমার ভিতর ঘরে,
নয়ন কালো মেঘ জমালো,
ঝিনুকের অন্তরে!
আমার ভিতর ঘরে।
নয়ন কালো মেঘ জমালো
ঝিনুকের অন্তরে!
আমার ভিতর ঘরে!!

শিশিরের ফোটাগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে গান গাইছেন দিদুন,উনার পাশেই দাড়িয়ে আছি আমি। দিদুন প্রায়ই আমাকে গান শুনাতেন,সেজন্য আজ আবার বায়না ধরেছিলাম আমি গান শুনানোর জন্য। ভোরেই দিদুনের সাথে হাটতে বের হয়েছি।দিদুনের কথা হলো,শীতের সকালে কুয়াশার মধ্যে হাটার মজা ই নাকি আলাদা! সেজন্য ভোরেই আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। ভোর বলতে আমার জন্য ভোর আর কি,সকাল সকাল উঠার অভ্যাস নেই সেজন্য।তখন হয়তো সাত টা সাড়ে সাত টা বাজে। ওপরের টপস টা কোনোরকম বদলে বড় একটা জামা গায়ে জড়িয়ে বের হলাম দিদুনের সাথে।

–‘এই দেখ, এই গাছে দুটো ফুল ধরছে।চিনতে পেরেছিস,এটা সেই গাছ,যেটা তুই যাওয়ার আগে লাগিয়ে গিয়েছিলি।’

দিদুনের কথায় গাছের দিকে তাকালাম।সত্যি ফুল ফুটেছে।ওয়াও কি সুন্দর লাগছে! আমি ফুল টা ছিঁড়ার জন্য যেতেই দিদুন বললো,–‘ না,একদম না। ফুলেরা গাছেই সুন্দর!’

আমি কথা কাটিয়ে বললাম,–‘দিদুন আমি তো ছুঁতে নিচ্ছিলাম ছিঁড়তে নয়।’

–‘আমি জানি কি করতে নিচ্ছিলে।’

১৩.
দিদুনের সাথে পুরো এলাকা চক্কর দিয়ে আসলাম, দিদুনের কত বান্ধবীদের বাড়ীতেও ঘুরে এসেছি।নাস্তাপানি উনার এক বান্ধবীর ঘরে করা শেষ। পথে আমার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মিতুর সাথেও দেখা হয়েছে। সেখানে জুড়ে দিয়েছি আমাদের জমানো শত শত কথা। দিদুনও তখন উনার বান্ধবীর সাথে আমার কথা বলতে ব্যস্ত ছিলেন। হি,হি,হি!দাদী নাতিন একসাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলাম।
বাড়ীতে আসতে আসতে ১১ টার বেশি বেজে যায়।
বারবার মনে হচ্ছিলো আবরার বাসায় জানি কী করছে?ও কী চলে গিয়েছে? না, ও তো বলেছে ও যাবে না। কিন্তু চাচ্চুরা যদি চলে যেতে বলে তখন?ও কীভাবে কি বলে থাকবে? চিন্তায় পুরো পথ অস্থির হয়েছিলাম।

বাড়ীতে এসে সোজা রুমে চলে আসি, কিন্তু রুমে এসে যে এভাবে টাসকি খাবো কল্পনা করি নি। বিছানার মাঝে সেট করা কতগুলো থ্রিপিস। আমি মুহূর্তেই বুঝে গেলাম এটা আবরারের কাজ। কারন সবগুলা ই আবরারের ফেবারিট কালারের, কালো,সাদা,নেভি ব্লু কালারের। রুম থেকে উঁকি দিতেই দেখি ও এদিক দিয়ে যাচ্ছে, চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কি না? কাউকে না দেখে ওকে টান মেরে রুমে নিয়ে আসলাম। ও হয়তো কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে, ওর রিয়েকশন কে পাত্তা না দিয়ে আমি বললাম–‘এসব কী?জামা কেনো কিনেছেন?বাজারে গেলেন কখন?চিনলেন ই বা কীভাবে? কেনো এনেছেন?’

আবরার ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। মনে হলো যেনে সবচেয়ে বিরক্তিকর কিছু বলা হয়েছে তাকে।

–‘ এত কিছু জেনে কী করবে?’

–‘কিন্তু কেনে এনেছেন?’

উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,
–‘কী করবো? রাতে তোমাকে দেখলাম তোমার দাদীর পোশাক পরতে,তাই নিয়ে আসলাম। জানি এখানে আসার সময় কিছু নিয়ে আসতে পারো নি।’

আমি অবাক হয়ে বললাম,–‘দাদীর পোশাক মানে?দাদীর কী পরেছি আমি?’

এবার যেনো আবরারের বিরক্তির পরিমাণ বেড়ে গেলো,ও বিরক্তিকর মুখে আমার প্লাজু পায়জামা টা দেখিয়ে বলে, এই যে এই পেটিকোট।’

—‘কে বলেছে এটা দাদুর?’
–‘দাদুর না হয় তেমার মায়ের তো।একজনের তো হবেই।পেটিকোট তো পেটিকোট ই।’

ওর কথা শুনে আমার মুখ টা হা হয়ে গেলো। কী বলে? আমার আড়াইশো টাকার প্লাজু দেখে ওর দিদুনের পেটিকোট মনে হলো?

.

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে