Adorable Love পর্ব : ০৪

0
4366

#Adorable_Love ?
পর্ব : ০৪
লেখা : ঊর্মি ধর
.
.
ঈশিকা জানালার ধারে চেয়ার এ বসে পরন্ত বিকেল দেখতে ব্যস্ত। সাথে আছে মনে একরাশ এলোমেলো ভাবনা৷ জীবন সত্যি বৈচিত্রময়। কখন যে কোন চিত্র দেখিয়ে দেয় তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। প্রথমে বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নিতে কঠিন লাগলেও এখন সেরকম কিছু মনে হচ্ছেনা। অদ্ভুতভাবে বিয়েটা আর আমানকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগছে তার।

আমান ঈশিকাকে ঘুমানোর জন্য শুইয়ে দিয়ে বাগানে গেছিলো হাঁটতে। আসলে মূলত সিগারেট খেতে৷ ঘরে খেলে ঈশিকার সমস্যা হবে ভেবে বাইরে চলে আসে। সেখানে বাগানের মালির সাথে কথা বলে বেশ কিছুক্ষন পরে রুমে যায়। রুমে গিয়ে দেখে ঈশিকা জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে এক ধ্যান এ। আমান গিয়ে ঈশিকাকে পেছন থেকে নিচু হয়ে জড়িয়ে ধরে। ঈশিকা প্রথমে চমকে গেলেও বুঝতে পারে ব্যক্তিটি কে। আমান ঈশিকার কাধে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,
—-” ঘুমাওনি? কি ভাবছো এতো?”
—-” কিছুনা।” মলিন গলায় বলে ঈশিকা।
—-” মন খারাপ?”
ঈশিকা উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—-” আপনি তখন আমাকে রেসিস্ট বললেন কেনো?”

আমান বুঝলো…কথাটা ঈশিকার ইগোতে লেগেছে। মেয়েটা সব কথাই খুব সিরিয়াসলি নিয়ে নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমান বললো,
—” তো কি? রেসিস্ট হওয়া কি খারাপ কিছু নাকি? আমি তো মনে করি এতে এলিগেন্স এর ব্যাপার আছে।
—” কিন্তু আমি মোটেও এমন না। আমি কাউকে নিচু চোখে দেখি না। সবাইকেই সমান চোখে দেখি।” পেছন ঘুরে আমানের দিকে তাকিয়ে বললো ঈশিকা।
আমান হেসে বললো,
—” আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। আমারই বুঝতে ভুল হয়েছে।তার জন্য আমি খুব খুব সরি!”

ঈশিকা কিছু না বলে অভিমানী মুখ করে অন্য দিকে মুখ ঘোরালো। আমান এবার হাত দিয়ে কান দুটো ধরে বললো,
—-“ঈশু…এইযে কান ধরে বললাম সরি। আর কখনো এমন বলবো না। এইবার আর মন খারাপ করে থেকোনা প্লিজ লক্ষী।”

আমানের কান ধরা দেখে ঈশিকার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। মুখের ভাব স্বাভাবিক রেখে বললো,
—-” হুম সরি এক্সেপ্ট করতে পারি…তবে একটা শর্তে। ”
—” কি শর্ত বলো? যা বলবে তাই মঞ্জুর।”
—” কান ধরে পঞ্চাশ বার উঠবস করতে হবে।”
—-” কি!! পঞ্চাশবার!! বেশি হয়ে গেলো না? একটু কম করা যায়না? প্লিজ লক্ষীটা ..” করুন মুখ করে বললো আমান।
—-” উমম..আচ্ছা ঠিকাছে। উনপঞ্চাশ বার। এর একটুও কম হবে না। গুনবো কিন্তু আমি।” জোর গলায়।

আমান নিরুপায় হয়ে উঠবস করা শুরু করলো। এতবড় ছেলেকে এভাবে কান ধরে উঠবস করতে দেখে ঈশিকা আর হাসি আটকে রাখতে পারলো না। একবার গুনেই হা হা করে হাসতে লাগলো।
ঈশিকার হাসি দেখে আমানের মুখেও প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। যাক মন খারাপ কেটেছে।

এরপর আমান হুট করে এগিয়ে গিয়ে ঈশিকার গালে চুমু খেলো। এহেন আচমকা ঘটনায় চমকে গিয়ে ঈশিকার হাসি থেমে গেলো৷ ফের রাগের ভঙ্গিতে বললো,
—-” এই এই একদম চিটিং না। ধান্দাবাজ লোক। যান যান… আবার শুরু করুন।”

আমান কিছু না বলে আবারো হুট করে ঈশিকার ঠোঁটের উপর চুমু খেলো।
—” ইশ! ছিঃ আপনি সিগারেট খেয়েছেন? গন্ধ বেরিয়েছে। নেশাখোর লোক!” নাক মুখ কুচকে বললো ঈশিকা।

আমান অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়। সামান্য একটা সিগারেটের জন্য এই মেয়ে তাকে ডিরেক্ট নেশাখোরের তকমা লাগিয়ে দিলো।

—” কি বললে! আমি নেশাখোর?!” অবাক হয়ে।
—” হ্যাঁ নেশাখোর। সিগারেট খান, মদ খান, গাঁজা খান। নেশাখোর লোক একটা।?
কিছুক্ষন পর আবার বললো,
—” দেখি সরুন… আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো৷” বলেই উঠে আস্তে আস্তে বিছানায় গেলো ঘুমোবার জন্য৷

আমান একেবারে আহাম্মক বনে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে ঈশিকার দিকে৷ সিগারেটটা সে মাঝেমাঝে খায় রেগুলার না৷ ড্রিংক ও কোনো বিশেষ কারণ ছাড়া করেনা৷ কিন্তু গাঁজা!!! এই মেয়ের দৌলতে আর কি কি শুনতে হয় আল্লাহ মালুম!!
.
.
_________________________________________________সন্ধ্যা বেলায় রাজিয়া বেগম চা এনে আরমান আহমেদ এর দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
—-” ছেলের খবর জানলে?”
—-” হুম। জাহিদ বললো সে নাকি ব্রেকে আছে। দু’দিন পর্যন্ত। বাড়ি আসবে না।” চা এর কাপে চুমুক দিয়ে বললো আরমান আহমেদ।
—” কোথায় গেছে?”
—” তা কিছু বলেনি।”
—-” তো ফোন বন্ধ রাখার কি প্রয়োজন? এই ছেলের মতি গতি আমি বুঝিনা বাপু। হুটহাটই এভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার মানে কি।”
কিছুক্ষন থেমে আবার বললেন,
—-” ওরা কি একেবারেই না করে দিয়েছে বিয়েতে?”
—-” ফ্যামিলির সবারই সম্মতি আছে। শুধু মেয়েটা রাজি না।”

রাজিয়া বেগম এর মনে ক্ষোভ জমলো। তার একমাত্র অমন গুনবান সুদর্শন ছেলের জন্য যেখানে কিনা অগণিত সুন্দরী পাত্রীর বাবারা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে এই মেয়ে কিনা তাকে প্রত্যাখ্যান করে!?

আবার ছেলের উপরেও রাগ হলো ভীষন। ওই মেয়ে ছাড়া নাকি সে বিয়ে করবে না। তা সাফ জানিয়ে দিয়েছে৷ কি এমন দেখেছে ওই মেয়েতে যে ওই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে?! এখন আবারও নিরুদ্দেশ হয়েছে৷ নেহাতই ছেলেটাকে প্রানের থেকেও বেশি ভালোবাসে৷ একেবারে যক্ষের ধন তার। তাই কিছু বলতে পারেনা৷

চাপা রাগ আর ক্ষোভ মেশানো একটা শ্বাস ছাড়লো রাজিয়া বেগম।
.
.
.
চলবে…
® ঊর্মি ধর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে