#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_38+39
#Sabrina_Summa
মাহিরের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই মিস সিক্রেট কিছুটা অবাক হলো। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম। তানিশা সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে আর কেউ নেই।
পরিবেশ দেখে মিস সিক্রেটের তেমন সুবিধার লাগছে না। কিছু অঘটন তো ঘটবেই আজ।
মাহির আস্তে আস্তে মিস সিক্রেটকে বললো, ” তোমাকে বাঁচিয়ে দেশে আনার একটাই কারণ সুপ্তিকে তোমার হাত থেকে ছাড়ানো আর ডিভোর্স। ”
মিস সিক্রেট অবাক হয়ে মাহফুজ চৌধুরীর দিকে তাকালো। সম্ভবত মাহফুজ চৌধুরী সবই জানে, তবে কেন সে কিছু বলছে না!
মাহির এবার জোরেই বললো, ” চুপচাপ সাইন করে দাও। ”
মিস সিক্রেট স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার বড্ড ইচ্ছে করছে কাঁদতে।
সে তো ভেবেছিল এতদিনে মাহির সব ভুলে গেছে কিন্তু হলো তো তার বিপরীত। বেঁচে ফেরার সব আনন্দই যেন একটি বাক্যে ফিকে হয়ে গেল।
যতই হোক সে তো মিস সিক্রেট। সে তো আর সুপ্তি নই যে নিজের ইমোশন প্রকাশ করতে পারে। এতদিন ধরে সে আবেগকে নই বিবেক কে প্রশ্রয় দিয়েছে আজ কি তার ব্যতিক্রম করবে! কখনোই না।
তাই তো ইমোশনকে লুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” তুমি তোমার সিদ্ধান্তে সিউর তো? ”
মাহির : অবশ্যই।
মিস সিক্রেট : ওকে।
বলে টেবিলে রাখা ডিভোর্স পেপারের দিকে আগালো ৷ কোনো কিছু না ভেবেই নাইন করে দিলো।
মাহিরের খুশি দেখে কে! সে বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।
মিস সিক্রেট : ডিভোর্স দিলাম। বিয়েতে তো গিফট দেয় নি ডিভোর্সে দেয় অন্তত।
বলা শেষ করে মাস্কটা খুললো।
এতক্ষণ মাহফুজ চৌধুরী, রাগিনী বেগম, তানিশা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও এবার তারা একসাথে বলে উঠলো, ” সুপ্তি….”
মাহিরও তাকালো। তার বিশ্বজয়ের হাসি একমুহূর্তে চুপসে গেল। সে এতটাই বিস্মিত যে কোনো টু শব্দও করতে পারলো না।
সুপ্তি : হ্যাঁ, মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি।
( কথায় দৃঢ়তা থাকলেও কষ্ট অভিমান স্পষ্ট )
আর হ্যাঁ ভালো কথা। মাহফুজ চৌধুরী আপনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি আপনার সকল কর্মকান্ডে সাহায্য করা থেকেও বিরত যাচ্ছি। আপনি আমার জন্য যা করেছেন তা অনেক। তাই কখনো বাঁচা মরার প্রশ্ন উঠলে আমাকে কষ্ট করে একবার স্মরণ করিয়েন। বেঁচে থাকলে অবশ্যই সাহায্য করতে আসবো।
কথা শেষ করে ইরফানকে ডাক দিলো।
ইরফান দ্রুত ভিতরে আসলো।
সুপ্তি : গাড়ি বের করো।
কথার ধরনেই ইরফান বুঝতে পারছে সামনে থাকা ব্যক্তিটি মিস সিক্রেট। তবুও সকলের মতো সেও অবাক হয়েই বললো, ” সুপ্তি!”
সুপ্তি রাগী চোখে তাকাতেই ইরফান বললো, ” ম্যাম, এখনই বের করছি। ”
সুপ্তি : গাড়ি কিন্তু আমি চালাবো।
ইরফান : ম্যাম, আর যাই হয়ে যাক গাড়ি আমি আপনাকে চালাতে দিবো না!
সুপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো, ” ওকে, তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করো। ”
ইরফান চলে যেতেই সুপ্তি বাকিদের উদ্দেশ্যে বললো, ” ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে যাচ্ছি। কপি পাঠিয়ে দিবো। ”
বলা শেষে বের হয়ে গেল।
মাহির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। বিড়বিড় করে বললো, ” তোমার কথায় মিলে যাচ্ছে! ”
মাহফুজ চৌধুরী ও রাগিনী বেগম নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কারণ এখানে থেকে এখন ছেলের পাগলামি দেখা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই। এমনিতেই তারা অপরাধ বোধে ভোগছেন।
মাহফুজ চৌধুরী সুপ্তির সাথে আর রাগিনী বেগম মিস সিক্রেটের সাথে কতই না খারাপ আচরণ করেছেন!
গাড়িতে সুপ্তির জোরাজোরিতে ইরফান বাধ্য হচ্ছে গাড়ি স্প্রিডে চালাতে।
জ্যামপূর্ণ রাস্তায়ও ফুল স্প্রিডে চালাচ্ছে। তবে ভাগ্যক্রমে মিস সিক্রেটের গাড়ি বলে সকলে সাইড দিচ্ছে। নাহয় আজ টু ইন ওয়ানের মতো সুপ্তির পাশাপাশি ইরফানও উপরে চলে যেতো। সাথে যে গাড়ির সাথে ক্র্যাস হতো সে গাড়ি তো আছেই!
কিছুক্ষণের মাঝেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে চলে এলো তারা।
ইরফান হাফ ছেড়ে বাঁচলো বোধহয়।।
মিস সিক্রেট খুব সুন্দর একটা কালো রংয়ের থ্রি-পিচ পড়লো। তার ফর্সা গড়নে কালো রংটা বেশ মানাচ্ছে। সাথে মেচিং কালো হুডি অ্যান্ড মাস্ক তো আছেই ৷
জীবনে কোনো লাইভে বসার জন্য তার এত প্রস্তুতি ছিল না। আজই প্রথম হয় তো শেষবারও।।
লাইভ শুরু হলো আর পাঁচ দশটা দিনের মতোই ফরমালিটি দিয়ে। তবে মিস সিক্রেটের গায়ে থ্রি-পিচ টা বোধহয় সকলকেই অবাক করছে। কারণ সে তো কখনো বাঙালি সাজে সাজে না।
কিছুক্ষণের মাঝেই মিস সিক্রেট আসল কথায় আসলো।
কিছু কাগজ কয়েক সেকেন্ড ক্যামেরার সামনে ধরে তারপর সরিয়ে নিয়ে বললো, ” এগুলো সীমান্তচুক্তি সংক্রান্ত কাগজ। কিছুদিন আগে চুরি হয়েছিল। যারা চুরি করেছিল তারা বড়ই সাধারণ মানুষ আমাকে আটকে রাখার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে…”
বলার পূর্বেই কাগজগুলো ইচ্ছে করে ফেলে দিলো। কাগজগুলো তোলার জন্য ঝুঁকতেই দেখা গেল পিছনে খুব সুন্দর করে টাঙ্গানো আরও কিছু কাগজ। সম্ভবত সীমান্ত ঘেঁষে থাকা জমিগুলোর তবে তা ভারতের।।
ফেলা কাগজগুলো তুলে ঠিক করে রেখে আবারও বলা শুরু করলো, ” মূলত তারা চুরি করেছে আমি কাগজগুলো নিয়ে শুধু শুধু ফেরত আসবো নাকি! একটা কথা আছে না – ট্রিট ফর ট্রেট। ঠিক তেমনই তারা করেছে মানে আমিও করবো। এটার জন্যই আমাকে তিনদিন আটকে রাখা হয়েছিল। তারা ভেবেছিল কাগজগুলো বোধহয় আমার কাছেই আছে তবে কাগজগুলো তো কবেই আমার টিমের মাধ্যমে বাংলাদেশে চলে এসেছে।
আচ্ছা, এগুলো এখন একটু বাদ দেয়। পার্সোনাল কিছু কথা বলবো! ”
সকলের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য লাইভে তাকালো। সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুতগতিতে।
আবারো বলা শুরু করলো,
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার কাজ খুবই সহজ। যখন ইচ্ছা খুন করতে পারি, গুম করতে পারি! ফাঁসি বা কারাদণ্ড থেকে মুক্তি দিতে পারি! আসলে আমি কিছুই পারি না। শুধু রিকোয়েস্ট করতে পারি।
আপনারা হয়তো ভাবেন আমার অবস্থানে থাকলে আপনারাও যা ইচ্ছা তাই করতে পারতেন। এই ভুল ধারণা অনেকেরই গেছে এই তিন দিনে। তবুও কিছু প্রমাণ দেখায় আমার উপর দিয়ে কি যায়!
বলে উঠে দাঁড়িয়ে হুডি খুলে ফেললো।
থ্রি-পিচের হাতাগুলো উপরে তুলতেই দেখা গেল তার কাটা ছিঁড়া দুই হাত।
মিস সিক্রেট বলা শুরু করলো, ” প্রশ্ন আসতে পারে এত দাগ কিসের!
আসলে ইন্ডিয়া যাওয়ার পর খুব সম্মানের সাথে সাগ্রতম করে । দুইদিন খুব আদর যত্ন করে। বলে না চোরের মন পুলিশ পুলিশ। সো সবার নজরও আমার দিকেই ছিল। এ সুযোগে আমার টিম সকল কাজ করে ফেলে।
তৃতীয় দিন আমাকে আটক করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় জঘন্য এক অন্ধকার ঘরে। তবে আমাকে আঘাত করার কারো সাহস ছিল না ফলে বেধে ঝুলিয়ে রেখেছিল ।
সেখানের খাবার ছিল জঘন্যর উপরে যদি কোনো নিকৃষ্ট শব্দ থাকে তাই। খাবারে ভাত কম পোকামাকড় বেশি। ইয়া, ভাবলেও আমার গা ইর ইর করে ।
এদিকে আমি আমার সিক্রেট টিমকে ইনফর্ম করি। তারা আন্তর্জাতিক পাওয়ার নেয়। আর মাহির চৌধুরী অনেক হেল্প করেছে। এরজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
সব মিলিয়ে যখন তারা বুঝতে পারে আমাকে ছাড়তেই হবে তখন মারা শুরু করে।।
মাহির গাড়িতে ড্রাইভ করতে করতে লাইভ দেখছে। তার বুকের এককোনে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
খুব স্প্রিডে গাড়ি চালানোর পরও আজ রাস্তাটা বেশি মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও তো এ রাস্তা দিয়েই গিয়েছিল মিশন সম্পর্কিত কথা বলতে। যা সে বুঝতে পেরেছে দেয়ালে থাকা পেইন্টিং থেকে।।
কথা শেষ করে মিস সিক্রেট মাস্ক খুলে বললো, ” Introduce with my another version SUPTI. ”
বলে মুচকি হাসলো।
লাইভের একটা কমেন্টের দিকে চোখ পড়লো। যেখানে তাকে মিসেস চৌধুরী বলে সম্মোধন করা হয়েছে।
সুপ্তি চেয়ারে বসতে বসতে বললো, ” আমি এখন আর মিসেস নই।
I am only Miss Secret or Miss Supti. Cause
বলে ডিভোর্স পেপারটা দেখাতে নিলে মাহির এসে লাইভ অফ করে পেপারটা ছিঁড়ে ফেললো।
সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সুপ্তি ইরফানকে ডাকা শুরু করলো।
ইরফানসহ আরও কিছু বডিগার্ড ভিতরে এসে বললো, ” সরি ম্যাম। স্যার অনেক জবরদস্তি করে ঢুকেছে। ”
মাহির রাগী স্বরে হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তোমরা যাও এখান থেকে। ”
সকলে একবার সুপ্তির দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার মাহিরের দিকে। ইরফান কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে বেরিয়ে যাওয়াটাই উত্তম মনে করলো। তাই সে সহ বাকিদের নিয়ে বাহিরে চলে গেল।
সকলে চলে যেতেই মাহির দরজা লক করে দিলো।
সুপ্তি : কি হচ্ছে এগুলো? ( রেগে )
মাহির : সেটা আমার থেকে ভালো বোধহয় তুমি জানো। যাইহোক আমার সাথে যাবে চলো।
সুপ্তি : আমি কোথাও যাবো না।
মাহির সুপ্তির হাত শক্ত করে ধরে বললো, ” চলো। ”
সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” মাহির, আমার লাগছে। ”
মাহির দ্রুত হাত ছেড়ে দিয়ে বললো, ” সরি, সবকিছুর জন্যি সরি। আমি এ ডিভোর্স মানি না। তুমি শুধুই…..”
বলতে বলতে সুপ্তির কাঁধে ইনজেকশন পোষ করলো মাহির। কিছুক্ষণের মাঝে জ্ঞান হারালো সুপ্তি।
মাহির সুপ্তিকে কোলে তুলে বললো, ” আমি জানতাম জানেমান তুমি মানবে না। তাই তো আমাকে এ কাজ করতে হলো। দোষ কিন্তু তোমার তবুও আমি সরি বলছি। সরি !”
#চলবে.,.