Dark Mystery পর্ব-২৫+২৬

0
118

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_25+26
#Sabrina_Summa

মাহির ও সুপ্তি পাশাপাশি দুইটি চেয়ারে বসলো।

অনুষ্ঠান অনেক আগেই শুরু হয়েছে। সবাই তাদের পার্সোনাল লাইফ, প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে স্টেজে গিয়ে মাইকে বলছে। মাহিরকেও ডাকা হলো কিছু বলার জন্য।

মাহিরের বলা শেষ হলেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ডাকা হলো সুপ্তিকে। যা আশা করে নি সুপ্তি। মাইকে কথা বলতে তার একদমই ভালো লাগে না। কিন্তু প্রধানশিক্ষক ডাকছে তাই তাকে যেতে হলো। প্রধানশিক্ষক তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিলো মাহিরকে এখানে আনার জন্য।

প্রধানশিক্ষক হাত মিলাতে চাইলে সুপ্তি ‘ধন্যবাদ’ বলে মুচকি হাসলো। যার অর্থ সে হাত মিলাবে না। মাইকের কাছে গেলো।

“এমনিতে তো আমাকে এই স্কুলে কেউ পাত্তাই দিতো না যখন আমি পড়তাম। আর এখন দেখো কত ডং!” ( মনে মনে )

সুপ্তির কথা বলার স্টাইল দেখে মাহির ভাবতে লাগলো।
” মিস সিক্রেটের সাথে সুপ্তির অনেক মিল। কথা বলার ধরণ, হাত না মিলানো, একই ট্রমা, একই রং, একই ব্যবহার…..”
ভাবনার দুনিয়া থেকে বের হয়ে মাহির নিজের মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো, কী আজাইরা জিনিস ভাবছিস। মিল যেমন আছে তেমন অমিলও আছে।
একজন কালো সহ্যই করতে পারে না আরেকজন কালো ছাড়া কিছু বুঝেই না।
একজনের গলার স্বর গম্ভীর আরেকজনের স্বাভাবিক।
তবে যাইহোক, সুপ্তি মিস সিক্রেট না হলেও ওর টিম মেম্বার তো হতেও পারে! ”

নিজের সাথেই কথা বলছিল মাহির। তবে হাত তালির শব্দে ধ্যান ভাঙলো তার। সুপ্তি পাশে এসে বসতেই বললো, ” মাইকে কথা বলার অভ্যাস করো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ”

” আমার অভ্যাস আছে তাও আবার আপনার থেকে বেশি। ” মনে মনে বললেও মুখে কিছু বললো না।

অনেকক্ষণ অনুষ্ঠান চললো। তারপর গ্রুপ ফটোশুট করা হলো।

বিকেলের দিকে সবাই ট্রুথ ডেয়ার খেললো। এরপর নাচগান হলো। সুপ্তি আজ মন খুলে সব কাজ করছে। সুপ্তি যে নাচতেও পারে তা মাহিরের জানা ছিল না।
সে তো অবাক হয়ে বলেই ফেলেছিল, ” তুমি নাচতেও পারো! ”

সুপ্তি : শুধু নাচতে না নাচাতেও পারি।

মাহির বিড়বিড় করে বললো, ” হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝছি। তুমি ডিম ব্যতিত সবই পারো, আমার জিজ্ঞেস করাটাই ভুল। ”

রাত ৮ টার দিকে মাহির ও সুপ্তি রওনা দিলো সুপ্তির বাসার উদ্দেশ্যে । বাকি সবাই আরো রাত পর্যন্ত আড্ডা দিবে।
তাই সুপ্তি, মাহির চলে এসেছে। যদিও মাহির গেস্ট হাউসে থাকার বন্দবস্ত করে এসেছিল কিন্তু সুপ্তির একটা কথা মাহিরের মন ছুঁয়ে গেছে। সে বলেছিল, ” গেস্ট হাউস তো গেস্টদের জন্য। আপনি তো গেস্ট নন আমার পরিচিত মানুষ! ”
এতেই গলে গিয়ে বাধ্য হয়ে সুপ্তির সাথে সুপ্তির বাসায় যাচ্ছে সে।।

বাসায়.,.

সুপ্তির কলিং বেল বাজানোর এক সেকেন্ডের মাঝেই শাহানাজ পারভীন দরজা খুলে দিলো সুপ্তি বলে উঠলো, “আম্মু। ”

শাহানাজ পারভীন একটু হাসলেন। মেয়ের আশেপাশে চোখ পড়তেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
মেয়ের পাশের ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললো, ” তুমি তাশরিফ না? ”

মাহির : জ্বী আন্টি।
বলেই সালাম দিলো।

শাহানাজ পারভীন সালামের উত্তর দিয়ে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তার মেয়ের এত বড় বড় মানুষের সাথে উঠা-বসা তা তিনি জানতেন না।

সুপ্তি : আম্মু, তুমি এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলে আমরা ভিতরে ঢুকবো কিভাবে?

মেয়ের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে শাহানাজ পারভীনের। সাথে সাথেই দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন।

সবাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। সুপ্তির বাবাও রুম থেকে বের হয়ে শাহানাজ পারভীনের মতোই অবাক হলেন। তবে তা প্রকাশ করলেন না।

শাহানাজ পারভীন সুপ্তির কাছে এসে বললো, ” তাশরিফ আসবে আগে বলবি না। কি খেতে দিবো। রুমও গোছানো হয় নি।” ( চিন্তিত স্বরে )

শাহানাজ পারভীন আস্তে বললেও সুপ্তি উচ্চ স্বরে জবাব দিলো, ” আম্মু, মাহির কোনো স্প্রেশাল গেস্ট টেস্ট না। তাই আমরা যা খাবো তাই খেতে দিবা। আর রুম গোছাও এখন। মাহির মাইন্ড করবে না। ”

সুপ্তির কথায় শাহানাজ পারভীন কিছুটা লজ্জা পেলেন।

মাহির হেসে বললো, ” আস্টি এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই ৷ এখন আপনারা যদি আমাকে নরমাল মানুষের মতো ট্রিট না করেন তাহলে কিন্তু আমি আর কখনো আসবো না। ”

শাহানাজ পারভীন হেসে রান্না ঘরে চলে গেলেন।

মাহির নিজের পরিবারের মানুষের মতো করেই কথা বলছে সুপ্তির বাবার সাথে।
সুপ্তির বাবাও এতক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে গেছে ।

সুপ্তি বসে বসে মাহির ও তার বাবার গল্প শুনছে। মাঝেমধ্যে নিজের মাকে হেল্প করতে যাচ্ছে ।
এই তো এখনো গেছে। তবে যথা সাধ্য মাহির ও তার বাবার কাছেই থাকার চেষ্টা করছে সে। হয়তো এই ভয়ে যে তার বাবা বা মাহির ভুল কোনো তথ্য মুখ ফসকে বলে না ফেলে।!

মাহির বিষয়টা খুব ভালো করেই খেয়াল করেছে তবে সেভাবে ভাবে নি।

সুপ্তি আবারও এসে বসলো।
মাহির এদিক সেদিক তাকিয়ে একটা ফ্যামিলি ছবি দেখলো।

ছবিটার সামনে গিয়ে বললো, ” এইটা সুমি আপু না? আপু আপনাদের কি হয়? ”

প্রশ্নটা শুনেই সুপ্তি রুমে চলে গেল।

সুপ্তির বাবা বললেন, ” আমাদের প্রথম মেয়ে। ”

মাহির চোখ বড় বড় করে বললো, ” আমরা প্রতিবছরই যাই আপুর কবরে ফুল দিতে! ”

সুপ্তির বাবা মৃদু হেসে বললেন, ” হ্যাঁ জানি। ”

মাহির : সুপ্তি ওভাবে চলে গেলো কেন?

সুপ্তির বাবা আবারও মৃদু হেসে বললেন, ” সুপ্তি ওমনই। সুমির কথা উঠলেই এড়িয়ে যেতে চাই।
আসলে খুব ভালোবাসতো এর জন্য! ”

সুপ্তির বাবাকে ইমোশনাল হতে দেখে মাহির টপিক চেঞ্জ করে ফেললো।

কিছুক্ষণ পরই সবার ডাইনিং রুমে ডাক পড়লো।
সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো।

মাহির ও তানিশা বসতে গিয়েই খুব অবাক হলো এত পদ দেখে।

তারমধ্যে আবার সুপ্তির মা বললেন, ” তোমাদের হইতো খেতে অসুবিধা হবে তাও কষ্ট করে খেয়ে নেও। আসলে সুপ্তি আগে কিছু বলে নি তো তাই বেশি পদ করতে পারি নি। ”

মাহির শুকনো ঢোক গিলে বললো, ” ভাগ্যিস সুপ্তি কিছু বলে নি। না হলে তো আস্তো বিয়ে বাড়ির আয়োজন হয়ে যেতো। ”

মাহিরের কথা শুনে সবাই একটু হাসলেন। এরপর সবাই খেতে বসলো। সুপ্তির মাও সবার প্লেটে খাবার দিলেন।

সুপ্তির প্লেটে সবকিছু না দিতে দেখে মাহির প্রশ্ন করেই ফেললো, ” আন্টি, সুপ্তি কি এগুলো খাই না? ”

সুপ্তির মা হেসে বললেন, ” না, আসলে এলার্জি আছে তো তাই। ”

মাহির ‘ও’ বললো।
মাহিরের মনে পড়লো, ” মিস সিক্রেটও যখন মাঝেমধ্যে থাকতো তখন ইরফান বেছে বেছে মিস সিক্রেটের জন্য খাবার নিয়ে যেতো। ”

#চলবে.,.

(edited)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে