Sunday, October 5, 2025







নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-১০

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_১০
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

নিষাদের ঘরের জিনিসপত্রে ধীরে ধীরে সেতুর অল্পবিস্তর দখল জুড়ল।আলমারির তাকে পুরুষালি কাপড়চোপড়ের সঙ্গে জায়গা করে নিল মেয়েলি রংবেরংয়ের শাড়ি।ড্রেসিং টেবিলের সামনে তার ব্যবহার্য ক্রিম, লোশনের সাথে মেয়েলি সিঁধুরকৌটার স্থান!আয়নায় কখনো সখনো সেতুর কপালের আঠাসমেত লাল টিপের অস্তিত্ব।বেলকনির দঁড়িতে ভেজা শার্ট মেলে দেওয়ার সঙ্গে ভেজা শাড়িও মেলে দেওয়া থাকে।নিষাদ থম মেরে বসে রইল নীরকে পাশে বসিয়ে। ফিসফিসিয়ে আপসোসের সুরে বলল,

” মন দখল করেছে।হৃদয়ে স্থান নিয়ে রাজত্ব চালাচ্ছে।আস্তে আস্তে ঘরের সবও দখল করে নিচ্ছে।কোনদিন না জানি আমার দেহমন সমস্ত কিছুই দখল করে নিয়ে আমায় মে’রে দিবে।বুঝলে নীর?”

নীর চোখ বড়বড় করে চাইল।আলতো গলায় বলে উঠল,

” ম্ মা মা ম্ মা।”

নিষাদ ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,

” কি মামামা?”

নীর ঠোঁট উল্টাল।আবারও আধো গলায় বলল,

” বা্ বা্ বা্ বা।”

নিষাদ গর্ব করে হাসল।কাঁধ ঝাড়া দিয়ে নীরের গাল টিপে বলল,

” এবার ঠিকাছে!”

নীর হাত নাড়িয়ে হেসে হুড়মুড় করে নিষাদের কোলে উঠে বসল। তুলতুলে ছোট্ট হাতজোড়া দিয়ে ঝাপটে ধরল নিষাদের ঝাকড়ানো চুল।দুই হাতে চুল ছেড়ার ন্যায় টান মেরেই খিলখিলিয়ে হাসল আওয়াজ তুলে।যেন বেশ মজা পাচ্ছে সে।নিষাদ বোকাবোকা চোখে তাকিয়ে থাকল নীরের দিকে।হতাশার সুরে বলল,

” ভাইরে ভাই!এটা কোন ভালো কাজ করছো?ব্যাথা পাই তো।”

নীর মানল না।আরো দ্বিগুণ বেগে নিষাদের চুল টানল।নিষাদ হতাশ চোখে চেয়ে আলতো কন্ঠে বলে উঠল,

” আরো জোরে টান ভাই!একটা চুলও যাতে না থাকে মাথায়।টাকলা হয়ে তোকে পার্কে ঘুরতে নিয়ে যাব, তোর সাথে ফুটবল খেলব।তোর বিয়ে ঠিক করতে যাব।হুহ?দারুণ মানাবে।তাড়াতাড়ি টাকলা করে দে। ”

নীর পুনরায় খিলখিলিয়ে হাসল। নিজের মতো করে নিষাদের চুল টানতে ব্যস্ত হলো।তুলতুলে নরম মুখটায় আলাদা উচ্ছ্বাস, আলাদা খুশি। এই উচ্ছাস আর খুশির মাঝেই দৌড়ে ঘরে ডুকল নীরু।নিষাদের দিকে তাকিয়েই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ল সে।কান্নার আওয়াজেই নীরের চুল টানাটানি খেলা থেমে গেল।ড্যাবড্যাব করে নীরুর দিকে তাকিয়ে রইল সে।নিষাদ হেসে উঠল।নীরুর দিকে তাকিয়ে এক ধমক দিয়ে বলে উঠল,

” কি হয়েছে?ছোট বাচ্চার মতো কাঁদছিস কেন? কি করেছিস আবার!”

নীরু মিথ্যে কান্না করার অভিনয়ের ইতি টানল।নাক টেনে মুখ ভার করল।গম্ভীর কন্ঠে অভিযোগের সুরে বলল,

” তোমার বন্ধু নাকি বিয়ে করবে? কাকে বিয়ে করবে?কেন বিয়ে করবে?উত্তর চাই আমার।উত্তর দাও।”

নীরু যে রঙ্গনের কথাই বলছে তা বুঝে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ল নিষাদ। রঙ্গন নিষাদের স্কুলজীবনের বন্ধু।জীবনের সিঁড়িতে ধাপে ধাপে অনেক বন্ধু হারালেও রঙ্গন হারায়নি। এখনও তাদের বন্ধুত্ব আগের মতোই উচ্ছল।নিষাদ ভ্রু উঁচিয়েই বলল,

” তোকে কেন উত্তর দিব?রঙ্গনের তো বিয়ের বয়স হয়েছে।বিজন্যাসও সামলাচ্ছে বেশ দক্ষ হাতে।বিয়ে করতেই পারে।তোর তাতে কি?ছেলেটা বিয়ে করবে এটাই তো সুন্দর আর সুখের খবর।তোর তো বিয়ে খেতে পারার খুশিতে খুশি হওয়া উচিত।”

নীরু খুশি হতে পারল না।হুট করেই নিষাদের কোল থেকে ঝাপটে নীরকে কোলে তুলে নিল।গাল ফুলিয়ে বলল,

” রঙ্গন গাঁধার মা এই পাড়ায় এক মেয়েকে দেখতে এসেছিল।মেয়েটার নাম পূজা!আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে বাড়ি।বয়সে আমার থেকে চারবছরের বড়।সৌন্দর্যের দিক দিয়ে ধবধবে ফর্সা,লম্বা চুল।একদম দিয়া দির মতোই সুন্দরী!যদি রঙ্গন গাঁধা হ্যাঁ বলে দেয়?পাড়ায় কি মেয়ের অভাব হয়েছে বলো? সে মেয়েটা ছাড়া আরো তো কত মেয়ে আছে এই পাড়ায়।নেই? রঙ্গন গাঁধার মা আর কাউকে দেখল না কেন? উনার চেনাজানার মধ্যেই তো কত মেয়ে আছে।একটু চোখ দিয়ে খুঁজলেই তো হয়।খুঁজছে না কেন একটু ভালো করে?”

নিষাদ পাত্তা দিল না নীরুর এতগুলো কথাকে।স্পষ্টভাবেই বলল,

” তুই?চেনাজানা মেয়ের মধ্যে তুই?বিয়ের বয়স হয়েছে তোর?”

ভাইয়ের কথায় নীরু হঠাৎ লজ্জ্বা ফেল। উজ্জ্বল শ্যামলা মুখ লালাভ বর্ণ ধারণ করতেই নীরকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরোতে বেরোতেই শুধাল,

” জানি না।বিয়ের বয়স হোক,বা নাহোক।তোমার বন্ধুকে বলবে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে না করতে।তাহলে কিন্তু সোজা মে’রে ঝু’লিয়ে দিয়ে আসব।আমায় কিন্তু চেনে না হুহু!”

নিষাদ গোলগোল চোখ করে চেয়ে থাকল।সবটাই বুঝে, সবটাই জানে, তবুও কোথাও গিয়ে না জানার ভান করল।দুইজন মানুষের অনুভূতিতে হস্তক্ষেপ করা যায় না।অনুভূতি তো কখনো হস্তক্ষেপ করে তৈরি করা যায় না।বোনের দিক থেকে রঙ্গনের প্রতি অনুভূতি যেমন শুদ্ধ, তেমনই রঙ্গনের দিক থেকেও দিয়ার প্রতি অনুভূতি শুদ্ধ।কেবল পার্থক্য এক জায়গাতেই!অনুভূতি গুলো দুজন দুজনের জন্য পুষছে না।বরং ভিন্ন মানুষেন জন্য।নীরু পুষছে রঙ্গনের জন্য।আর রঙ্গন পুষছে তার প্রাক্তন দিয়ার জন্য!

.

রাতের খাওয়া শেষ হতেই বাড়িতে নিরবতা নামল।নিলিরাও চলে গিয়েছে তাদের বাড়িতে।নয়তো নিলুসহ থাকলে হৈচৈ বাঁধত।নীর ঘুমাচ্ছে দেখেই বাধ্য হয়ে নিজের ঘরে পড়ায় মনোযোগ দিল নীরু।নিষাদও ঘুমন্ত নীরের পাশে বসে ল্যাপটপে মনোযোগী।সেতু আর নিষাদের মা দ্রুত হাতে খাবার টেবিল গুঁছাল।এঁটো বাসনপত্র ধুঁয়ে গুঁছিয়ে রেখে তবেই বের হলো সেতু।শ্বাশুড়ীর কথামতো চুপচাপ নিজের ঘরে পা রাখল।নীর ঘুমোচ্ছে এখনো।ঘড়িতে তখন এগারোটা।সেতু বিছানার একপাশে বসে থাকা নিষাদের দিকে তাকাল।তার আসার আওয়াজ শুনেও ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে চাইল না লোকটা।সেতু মৃদু আওয়াজ তুলেই বলল,

” আপনি কি কাজ করছেন?”

নিষাদ মনে মনে চাইছিল মাথা তুলে সেতুর দিকে তাকাতে।কোন অযুহাত না পেয়ে তাকাতে না পারলেও এতক্ষনে যেন সুযোগ পেয়ে বসল।সেতুর কথার জবাব দিতেই সেতুর দিকে ঘুরে চাইল।ফর্সা মুখে অল্প ক্লান্তির ছাপ।কপালের দিকটায় হালকা ঘামে ছোট ছোট চুল লেপ্টে আছে।চিকন ঠোঁটজোড়া স্থির।নিষাদ গলা ঝেড়েই উত্তরের বিনিময়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

” কেন?”

সেতু ইতস্থত বোধ করে বলল,

” আলো নিভানোর জন্য জিজ্ঞেস করেছিলাম।থাক সমস্যা হবে না।আপনার কাজ থাকলে কাজ করুন।”

কথাটা বলেই সেতু ওয়াশরুমের দিকে পা বড়াল।নিষাদ চুপচাপ দেখল।ল্যাপটপ অফ করে পাশে রেখেই উঠে দাঁড়াল।বেলকনিতে পা রেখে বাইরের আকাশটায় দৃষ্টি ফেলল।আকাশে চাঁদ নেই আজ।আলোর রেশও নেই।নিষাদ বেলকনির গ্রিলে হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট চাপল।লম্বা শ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই কানে এল চিকন মেয়েলি কন্ঠ,

” আপনি কি আমার কথাতে কাজ না করে ল্যাপটপ রেখে চলে এসেছেন?আমি কিন্তু কাজ থামানোর উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাইনি।আপনার কাজ থাকলে শেষ করে নিতে পারেন।”

নিষাদ সরু চোখে তাকাল।বলল,

” তোমার কথায় কাজ রেখে দিব কেন?তুমি কে?আমার প্রেমিকা তুমি?যে তোমার কথায় উঠবস করব আমি?সবসময় নিজেকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করো কেন?”

সেতুর চাহনী এবার নড়বড়ে হলো।চোখ টলমল করল মুহুর্তে।সেতু অন্যদিকে ঘুরে চাইল তৎক্ষনাৎ। গলার স্বর নামিয়ে বলল,

“আপনি আমার কথার ভুল অর্থ বের করলেন।আমি কিন্তু নিজেকে কখনোই অতোটা গুরুত্বপূ্র্ণ মনে করি না।আপনার কাছে তো আরো নয়।”

” কেন মনে করো না?”

সেতু চোখ তুলে তাকাল এবার।প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট কন্ঠে বলল,

” গুরুত্ব নেই তাই।”

নিষাদ আহত দৃষ্টিতে তাকাল।পরমুহুর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে গমগমে সুরে বলল,

” তাহলে বলেছো কেন আমি তোমার কথায় কাজ রেখে চলে এসেছি?”

” কথাটার তেমন কোন মানে ছিল না কিন্তু।আমি কথাটা এই কারণেই বলেছি, কারণ আমার কথায় কারো কাজে ব্যাঘাত ঘটুক এইটা চাই না,তাই।আশা করি বুঝেছেন?”

নিষাদ কঠিন কন্ঠে শুধাল,

“কাজকর্মে ব্যাঘাত নয় শুধু, কাজকর্ম সব লন্ডভন্ড করে ছারখার করে দিয়ে বসে আছো। সে বেলায়?সে বেলায় দোষ নেই? এখন এত ব্যাঘাতের কথা ভাবতে কে বলেছে?আমি বলেছি?”

সেতু অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইল।ঠোঁট নেড়ে অবিশ্বাস্য সুরে শুধাল,

‘ আমি আপনার কাজ লন্ডভন্ড করেছি?”

” তো?আমি করেছি?”

সেতু পুনরায় অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।আবারও বলল,

” কখন?”

নিষাদ নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দিল,

” সবসময়ই!দিনরাত চব্বিশ ঘন্টাই!”

সেতু অবাক হলো।বেশ কিছুক্ষন কিছু একটা ভেবেই প্রশ্ন ছুড়ল,

” নীর কি আপনার কাজে কোন ব্যাঘাত ঘটিয়েছে?যখন আপনার কাছে ছিল তখন কোনকিছু করেছে?বিরক্ত করেছে খুব? নাকি আমি আপনার বিরক্তির কারণ?আমার জন্য বিরক্ত হয়ে কাজ করতে পারছেন না?”

নিষাদ হতাশ হয়ে চোখ ছোট ছোট করে চাইল। ঠান্ডা গলায় বলল,

” তুমি বলেছিলে তোমার মনে আমায় আর নীরকে নিয়ে কোন সংকোচ বা সংশয় নেই।এই প্রশ্নটা আশা করিনি।”

সেতু অনুতপ্ত হলো।মস্তিষ্ক দ্রুত বার্তা পাঠাল, কথাটা বলা উচিত হয়নি তার।যে মানুষটা এত কম সময়ে নীরকে এতটা আপন করে নিয়েছে। নীরের সঙ্গ পেলেই আগের মতো প্রাণবন্ত, উচ্ছল দেখায় যে যুবকটাকে তাকে সত্যিই নীরের প্রসঙ্গে এমন একটা কথা বলা উচিত হয়নি।অনুতাপের সুর টেনেই বলল,

” দুঃখিত।কথাটা হুট করেই বেরিয়ে গেছে মুখ থেকে।ও তো ছোট।কিছু বুঝে না।তাই ভেবেছিলাম ও আপনার কাজে বিরক্ত করেছে কিনা।আমি সত্যিই ইচ্ছে করে আপনাকে আঘাত করতে চাইনি নিষাদ।বিশ্বাস করুন।”

” আঘাত তো একবার নয় সেতু।বহুবার করেছো।কখনো নিজ ইচ্ছায় কখনো অনিচ্ছায়।আঘাত সহ্য করার অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।”

সেতু দৃষ্টি আরো ক্ষীণ হলো।গলা আরো নরম করে বলল,

” সত্যিই এমন কোন উদ্দেশ্য আমার মাথায় ছিল না।আমি জানি এবং মানিও, আপনি নীরকে খুব ভালোবাসেন।শুধু আপনি নয়, নীরু,নিলু প্রত্যেকেই নীরকে খুব আদর করে।এই আদরে শঙ্কা রাখা যায় না, এই আদরে অনিশ্চয়তার আভাস নেই।আমি মন থেকে মুগ্ধ হই সেই স্নেহ, সেই ভালোবাসায়।আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি নিষাদ।”

নিষাদ হালকা হাসল।বলল,

” বাদ দাও।ঘুমাও গিয়ে।”

” আপনি কি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছেন?”

নিষাদ আহত কন্ঠেই বিষাধ ঢালল।বলল,

” আমার জীবনে কষ্টরা বারংবার এসেছে সেতু।বারংবার আমার সঙ্গী হয়েছে।কখনো অবহেলায়, কখনো অনিশ্চয়তায়,কখনো ভালোবাসার অভাবে কিংবা কখনো ভালোবাসারা পালিয়ে যাওয়ায়।কষ্ট পেলে খুব বেশি কিছু এসে যায় না আজকাল। কষ্ট পাওয়াতে আমি বরাবরের ন্যায় অভ্যস্ত।তোমায় যখন বিয়ের পাকা কথার দিন কল দিয়েছিলাম?বলেছিলাম তোমায় যত্ন করে কষ্ট দিব।প্রতিশোধ নিব।কিন্তু আজ দেখো, কষ্টরা আমায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে সেতু।চেয়েছিলাম তোমায় অবহেলায় মুড়িয়ে দিব। দিনশেষে আমি ব্যর্থ!প্রতিশোধরা ঘুরিফিরে আমার দিকেই ঝুঁকে গেল।কষ্ট সব আমার দিকেই পা বাড়াল।আমি তো চাইনি এমনটা হোক।”

সেতু চোখ বুঝল।সামনের মানুষটার কথা শুনে অস্থিরতা কাজ করল বুকের ভেতরে।তবুও নিজেকে দমিয়ে রাখল।ক্ষীন কন্ঠে কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠল,

” ঘুমাবেন না?সকাল হলে তো অফিস আছে আপনার।”

” আমার চোখে বহুদিন হলো এত তাড়াতাড়ি ঘুম নামে না। ঘুমেদের বন্দি করতে করতে বেশ রাত হয়।কখনো সখনো রাত পার হয়ে ভোর হলেও ঘুম নামে না।”

সেতু ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

” তাহলে ঘুমান কখন?”

” ঘুমাই তো।রাত দুটো, তিনটে, মধ্যরাত কিংবা ভোররাতে।দেখোনা সকালে পড়ে পড়ে ঘুমাই?তবে আজকাল মনে হয় চোখে ঘুম না নামলেও অসুবিধা নেই।বরং সারারাত জেগে থাকতে পারলেই যেন বিরাট লাভ আমার!”

সেতুর চোখে প্রশ্ন খেলে গেল নিষাদের উদ্ভট কথাবার্তা শুনে। বলল,

“রাত জাগলে অসুস্থ হন না?”

নিষাদ হাসল মৃদু।বলল,

” অসুস্থতা থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে অসুস্থতাই ভালো।তাই না?”

সেতু কথার আগামাথা বুঝল না। পুনরায় প্রশ্ন করল,

” অসুস্থতা থেকে কি ভালো হয়?”

” অনেক কিছুই ভালো হয়। তুমি বুঝবে না।”

” আমি তো কখনো এমন কিছু শুনিনি নিষাদ।আপনার কাছে শুনলাম আজ।”

নিষাদ এবার বাঁকা হাসল।সেতুর দিকে হালকা ঝুঁকে প্রশ্ন ছুড়ল,

” শুনবে কি ভালো হয়?”

সেতু ঘাবড়াল না।স্পষ্টভাবে তাকিয়ে বলল,

” বলুন।”

নিষাদ স্বস্তির শ্বাস ফেলল।সোজা হয়ে অন্যদিকে ফিরে বলতে লাগল,

” আগে আমার চোখ রাত জাগত না পাওয়ার বেদনায়।প্রিয় মানুষের সাথে অন্য মানুষকে সহ্য না করতে পারার কষ্টে বুকের ভেতর ছটফট করত।অস্থিরতায় অস্থির হতো মন।আর এখন সেই চোখজোড়া রাত জাগে দৃষ্টিদের সামলাতে না পারার লোভে।চোখজোড়ার অতৃপ্ত তৃষ্ণা মেটাতে।সারারাত ভর জেগে কারোর মুখ দেখে মুগ্ধ হওয়াতে প্রশান্তি খুঁজে পাই হৃদয়ে।শীতল অনুভব হয় বুকের ভেতর।যেখানে সহস্র কষ্টেও আমি সুখ অনুভব করি।সহস্র বিষাদেও আমি অমৃত খুঁজে পাই।তাহলে বলো,ঘুম না এলে লাভ হবে না আমার?বুঝলে এবার অসুস্থতা থেকে কি ভালো হতে পারে?নাকি বুঝোনি?”

সেতু জড়সড় হয়ে চেয়ে থাকল।নিষাদের কথার বিনিময়ে কোন জবাব না দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করল সেই স্থান থেকে।আলো নিভিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নীরের পাশে গুঁটিশুঁটি মেরে শুঁয়ে চোখ বুঝল।কিন্তু ঘুম নামল না চোখে।অস্বস্তি, জড়তায় শরীর জড়োসড়ো হলো।মাথার মধ্যে কেবল ঘুরপাক খেল,”নিষাদ কি রাত হলে না ঘুমিয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করে? ”

#চলবে….

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ