Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এক মুঠো প্রেম রঙ্গনাএক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-২৩+২৪

এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-২৩+২৪

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ
| পর্ব ২৩ |

———————
ভাগ্য আজ এক চতুর খেলা দেখালো নওরিকে। চতুরতার খেলায় নওরি যেমন হেরে গেলো তেমনই নিঃশ্ব হয়ে গেলো। নিস্তেজ, নির্বাক হয়ে রুমের এক কোণায় বসে আছে নওরি। সারা ঘর এলোমেলো, অন্ধকারাচ্ছন্ন। দরজা বন্ধ। আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে, নওরি কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায়নি। একটিতে ওয়েটিং লিস্টে ছিলো, তবে সবার শেষে। সেটারও কোনো রকম আশা দেখতে পাচ্ছে না নওরি। পড়াশোনায় সেরকম মেধাবী না হলেও নওরি নিজের সবটুকু দিয়ে চেয়েছিলো যেন একটা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায়। উপলব্ধি করেছে, তাঁর এক মাসের পরিশ্রম-ই যথেষ্ট ছিলো না৷ আরেকটু পড়ার দরকার ছিলো। বেশি প্রত্যাশার ফল বোধহয় এমনই হয়৷ চূর্ণ-বিচূর্ণ হৃদয় নিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে নওরি। মিনমিন করে বলে ওঠে,

–“কেন আমার জীবনটা আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক হলো না বাবা? কী দোষ করেছিলাম আমি বাবা? তোমরা পাশে থাকলে হয়তো এই ব্যথা সহ্য করতাম না। তোমাদের জন্যে আমার ভেতরটা কতগুলো ক্ষ!তের সমাহার সৃষ্টি হয়েছে তা কী জানো? আমি পাবলিকে চান্স পাইনি বাবা, তোমাদের ভালোবাসাও পাইনি। সৈকত আঙ্কেলের পরিশ্রমেরও দাম পাইনি বাবা। কী করে মুখ দেখাবো তাকে?”

নওরি ডুকরে কেঁদে ওঠে। দুই হাঁটুর ভাঁজে কপাল ডুবিয়ে শব্দের সাথে কাঁদতে থাকে। আরেকবার প্রমাণিত হলো পরিবারিক মর্মতা ছাড়া একজন সন্তান কতটা অসহায় হতে পারে। কেন সময় নওরির অনুকূলে এলো না?

নওরি যখন কাঁদতে ব্যস্ত তখন ফ্রিশা বারান্দার রেলিং এ ঝুলে আছে। ছাড়লেই ধপ করে ইরা’দের বারান্দায় গিয়ে পরবে। হলোও তাই। ধপ করে গিয়ে পরেছে ইরা’দের ডিভানে। পাশাপাশি দুটো ডিভান ছিলো সিঙ্গেল। ডিভানের সামনেই বেতের টি-টেবিল। ফ্রিশা মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো। চাহনি গোল গোল। লাফ দিয়ে ডিভান থেকে নেমে পুরো ছাদের ন্যায় বারান্দায় লাফিয়ে বেড়ালো। নানান গাছের টবে ভরপুর ছাদটি। একটা চঁড়ুই পাখিকে দেখতেই তাঁর পিছে সারা বারান্দা ঘুরে বেড়ালো। আজ যেন তাঁর আনন্দের শেষ নেই। ওদিকে নওরি কেঁদে বেড়াচ্ছে আর এদিকে ফ্রিশা উড়ে বেড়াচ্ছে।

নওরিকে কল করতে করতে ইরা’দ নিজের রুমে ঢুকলো। পরিহিত ঘর্মাক্ত শার্ট দেহ থেকে মুক্ত করে টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলো ইরা’দ। চিন্তায় কপালে দু’তিনটে ভাঁজ পরেছে৷ নওরির ফোন কেন বন্ধ বলছে? আজ তো রেজাল্ট দেবার কথা।

হঠাৎ কিছু ভাঙার শব্দ শুনতে পেলো ইরা’দ। শব্দটা বারান্দা থেকেই এসেছে। কিন্তু ভাঙা শব্দের ঘটনা কী? কৌতুহলী হয়ে ইরা’দ সেদিকে এগোলো। বারান্দায় গিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। তাঁর দুইটা ফুলের টব ভেঙ্গে পরে আছে। কে ভাঙলো এগুলো? এদিকে তো কেউ আসেনি। তাহলে? কার এত দুঃসাহস? ইরা’দ আরও এগিয়ে চারিপাশে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। কিছুদূর যেতেই একটা ধূসর এবং সাদা মোলায়েম কিছু দেখতে পেলো। অনেকটা লেজের মতো। কিন্তু লেজ কিসের? ইরা’দের ভ্রু কুচকে এলো। হুট করে লেজটি নড়েচড়ে উঠলো। ইরা’দ না দাঁড়িয়ে সেদিকেই পা বাড়ালো। কাছাকাছি আসতেই টবের পেছন থেকে ফ্রিশা বেরিয়ে এলো।

ফ্রিশাকে দেখে ইরা’দের মাথা ফেটে যাবাএ উপক্রম। সে তাঁর প্রিয় বারান্দায় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি সেখানে কি না এই বিড়াল এসে তাঁর দুই দুইটা টব ভেঙে দিলো? মহা ব!দজাত বিড়াল তো। কিন্তু এই বিড়াল আসলো কোথা থেকে?

ইরা’দ খপ করে ফ্রিশাকে ধরে ফেললো এবং উপরে তুলে নিলো। ফ্রিশা পিটপিট করে ইরা’দের দিকে তাকালো। ইরা’দ হেসে বলে,
–“এবার কই পালাবি তুই? তোকে তো আমি এখন বারান্দা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিবো। আমার বারান্দায় এসে আমারই দুটো প্রিয় ফুলের টব ভেঙেছিস! এত সাহস?”

হঠাৎ ফ্রিশার ঘন পশমযুক্ত লেজটি ইরা’দের নাকে গিয়ে লাগলো। ইরা’দ ফট করে ফ্রিশাকে ছেড়ে দিয়ে হাঁচি দিয়ে উঠলো। পরপর চার বার। হাঁচিগুলোও মারাত্মক! এমতাবস্থায় নিদ্র আসলো ইরা’দের বাগানে। ফ্রিশা দ্রুত নিদ্র’র কাছে ছুটে গেলো। ইরা’দ ততক্ষণে পকেট থেকে টিস্যু প্যাকেট বের করে একটি টিস্যু নিয়ে নাক মুছলো। আবার আসলো হাঁচি। নইদ্র হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
–“নিদ্র ভাইয়া! জলদি উপরে আসো, নৌরি ফুল দরজা খুলছে না। মা, সাবানা অনেক ডেকেছে নৌরি ফুলকে। কিন্তু নৌরি ফুল কোনো সাড়া দেয়নি। দ্রুত এসো ভাইয়া, আমার খুব ভয় করছে!”

——————
সন্ধ্যা হয়েছে আরও কিছুক্ষণ আগে। আসমান থেকে আলোর আবছা রেখাও মিলিয়ে গিয়েছে। চারপাশে কৃত্রিম আলোয় শহর এবং শহরের প্রতিটি অলিগলি আলোকিত। ইরা’দ মই নিয়ে নওরির বারান্দায় উঠছে। অলরেডি আধঘন্টার মতো নওরিকে ডেকে এসেছে ইরা’দ। কিন্তু নওরি দরজা খুলেনি। সাড়া শব্দ করেনি। তাই বাধ্য হয়েই এই পথ অবলম্বন। খুব সাবধানে বারান্দায় উঠে গেলো ইরা’দ।

নওরির রুম এখনো অন্ধকারাচ্ছন্ন। নওরি নির্জীব হয়ে বসে আছে। বারান্দার দরজা দিয়ে এক ফালি আবছা আলো অন্ধকার রুমে প্রবেশ করেছে। তবে আলোতে তীব্রতা নেই; ঝাপসা। দরজাটা একটু আগেই হালকা ফাঁক করে এসেছে সে৷ ফ্রিশা বারান্দাতেই, তাই ফ্রিশা যেন রুমে আসতে পারে এজন্য দরজা খুলেছে। নয়তো বিকালে ফ্রিশাকে বারান্দায় রেখে দরজা ভেঁজানোই ছিলো। কিন্তু নওরি কী আর জানে তাঁর বিড়াল রাণী কী কান্ড ঘটিয়েছে?

হঠাৎ বারান্দায় শব্দ হতেই নওরি নাক টেনে চোখ মুছলো। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দার দিকে য্রতে যেতে বলে,
–“ফ্রিশা! খুদা পেয়েছে তোর? দেখ নিদ্র’র গাছগুলো ভাঙবি না। নয়তো…”

বারান্দায় দরজার সাথে দাঁড়াতেই নওরি থমকালো। থমকে গেলো তাঁর কন্ঠস্বরও! ইরা’দকে দেখে প্রথমে তাঁর বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কিন্তু যখন দেখলো ইরা’দ তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছে, তখন দ্রুত দরজা লাগাবে এমন সময় ইরা’দ শক্ত করে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে পরে। নওরি বারবার ব্যর্থ চেষ্টা করলো দরজা লাগানোর। কিন্তু ইরা’দের শক্তির সাথে পেরে উঠলো না। যখন দেখলো শক্তি দিয়ে কাজ হচ্ছে না তখন নওরি কম্পিত স্বরে বলে,
–“দ…দরজা ছা..ছাড়ুন!”
–“আমার কথা শুনো!”
–“না, আপনি এখানে কেন এসেছেন? চলে যান। প্লিজ!”
–“আমার চোখে চেয়ে বলো!”
–“পারবো না। প্লিজ যান।”
–“জান? খুব সুন্দর মানায় তো তোমার কন্ঠে।”

ইরা’দের এরূপ রসিক বাক্য শুনে মুহূর্তের জন্য থমকালো নওরি। ইরা’দ এই সুযোগটাই কাজে লাগালো। নওরিকে ঠেলে নিজেই ঢুকে পরলো ইরা’দ। ভেতরে ঢুকে বলে,
–“এ কী হাল করেছো রুমের? অন্ধকার কেন?”

ইরা’দ কথা বলতে বলতে পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্ল্যাশ জ্বালালো। অতঃপর সুইচবোর্ডের কাছে গিয়ে লাইট জ্বালালো। নওরি ভেতরে এসে বললো,
–“কেন এসেছেন আপনি?”
–“মাথা ব্যথা। তোমার নরম হাতে মাথা মাসাজ করাতে এসেছি। চা হলেও আপত্তি নেই!”
–“মজা নিচ্ছেন?”
–“মজা নেবার মতো সময় হলো?”
–“আপনি প্লিজ চলে যান!”

ইরা’দ শুনলোই না যেন নওরির অনুরোধ। দায় সাড়া ভাব নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। বেপরোয়া, নির্বাক ব্যবহার। নওরি চুপ থেকে দাঁড়িয়ে রইলো। ইরা’দ পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে বলে,
–“পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়া মানেই কী হেরে যাওয়া নৌরি ফুল?”

নওরি থমকায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয় ইরা’দের পানে। ইরা’দ আবার টের পায়নি তো সবকিছু? সে কী জেনে গেছে নওরির পারিবারিক অবস্থা? নাহ! সেটা কী করে সম্ভব? নওরি হয়তো বেশি-ই ভাবছে। ভাবনাটি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো নওরি। ইরা’দ নিরবে চেয়ে আছে শুকনো মুখখানার পানে। নওরি পদতলে নজর আটকে বললো,
–“প্রাইভেটে অনেক খরচ। আমার এত খরচ বহনের সামর্থ্য নেই!”
–“তোমাকে কে বলেছে প্রাইভেটে শুধু টাকাওলারাই পড়তে পারবে? অসংখ্য ছেলে-মেয়ে প্রাইভেটে পড়ছে। আর পাবলিক ভার্সিটি হচ্ছে মেধার খেলা। ওখানে হার-জিত হবেই, স্বাভাবিক। এ বলে নিজেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে রুমের এক কোণে পরে থাকবে?

তুমি-ই বলো, সময় থেমে থাকবে তোমার জন্যে? সে প্রবাহমান, চলবেই। তেমনই তোমার জীবনও থেমে থাকবে না। ধাক্কা খাবে, উঠে দাঁড়াবে; এটা জীবনেও অন্যতম মূল্যবান অংশ। ভাগ্যকে দোষ দিয়েও লাভ হবে না। কারণ, দুঃখের পরেই আছে সুখ। সেই সুখের জন্যেই এই দুনিয়ার হাজারো মানুষ ছুটে চলেছে। শুধুমাত্র একটুখানি সুখের আশায়।”

নওরি সবটুকু মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তাঁর চোখ আবারও ঝাপসা হয়ে এসেছে। কী করে বুঝাবে তাঁর ভেতরকার ক্ষ!তগুলো? ইরা’দ আবারও বলে ওঠে,
–“এডমিশনের জন্যে প্রিপারেশন নিতে তুমি সময় কম পেয়েছো, এ নিয়ে আফসোস করলে চলে? অলরেডি ওট তোমার অতীত হয়ে গিয়েছে। বর্তমান নিয়ে ভাবো। বর্তমানে কীভাবে ভালো থাকবে সেটাকে গুরুত্ব দাও। পেছনে ফেলে আসা সময় নিয়ে ভাবলে কখনোই সুখের দেখা পাবে না। বুঝেছো আমার কথা?”

নওরি আগের মতোই নিশ্চুপ। ইরা’দ বুঝলো এভাবে নওরিকে ভ্রম থেকে বের করতে পারবে না। তাই লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–“ঠিকাছে। কাল তৈরি থেকো। তোমায় নিয়ে বের হবো। আগামীকালের পুরোদিন তোমার জন্যে বরাদ্দ রইলো নৌরি ফুল। দু’জন এক সাথে পুরো শহর ঘুরবো। রাজি আছো তো? রাজি না থাকলেও কিন্তু নিয়ে যাবো। জোর করে। তখন কিন্তু কোনো অভিযোগ শুনবো না। আচ্ছা?”

~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ
| পর্ব ২৪ |

————————
সৈকত সাহেব নিরবে, খুব মনোযোগ সহকারে পত্রিকা পড়ছে। নূরজাহান তখন রুমে প্রবেশ করলেন। শব্দের সাথেই প্রবেশ করলেন। যেন সৈকত সাহেব তাঁর উপস্থিতি টের পান। সৈকর সাহেব অবধ্য এদিক দিয়ে নির্বাক। কোনোরকম অভিব্যক্তি তাঁর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। পূর্বের ন্যায়-ই বসে আছে সে। দৃষ্টি পত্রিকায়। নূরজাহান বিছানার এক কোণায় বসলেন। গলা খাঁকারি দিয়ে পুণরায় মনোযোগ পাবার প্রচেষ্টা চালালো। ব্যর্থ হলেন না অবশ্য। চোখ তুলে একপলক তাকিয়ে আবার পত্রিকায় নজর দিলেন। নূরজাহান হালকা কাশি দিয়ে মৃদু স্বরে আওড়ায়,
–“কিছু কথা বলার ছিলো!”

–“বলো। অনুমতির কী আছে?” সৈকত সাহেবের গম্ভীর কন্ঠস্বর।
নূরজাহান বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন,
–“মেয়েটা তো পাবলিকে চান্স পায়নি। তাই আমি চাইছি প্রাইভেটেই ভর্তি করিয়ে দেই! আপনি কী বলেন?”
সৈকত সাহেব গম্ভীর নজরে তাকালো নূরজাহানের দিকে। থমথমে সুরে বলে,
–“তো করাও। আমাকে বলছো কেন? যা ইচ্ছা তা করো তোমার বান্ধবীর মেয়ের সাথে!”
–“এভাবে বলছেন কেন?”
–“কীভাবে বললাম? নাটক তো কম করছো না। এক মাস খাটালে, দৌড়ালাম; সবই তো শুধু শুধুই। এই মেয়ের কী যোগ্যতা আছে পাবলিকে পড়ার? যা মন চায় করো, আমাকে বলার কী দরকার?”
নূরজাহান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
–“মেয়েটা চান্স পায়নি এটাই দেখলেন, মেয়েটা কী, কী সহ্য করেছে সেটা তো দেখেননি! মেয়েটা মানসিক দিক দিয়ে দুর্বল, তাও পরিশ্রম করেছে; চেষ্টা করেছে। নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছে। যদি ভাগ্য সহায় না হয় তাহলে কিছুই হয় না!”
–“এসব আজেবাজে কথা না বলে মূল কথায় আসো। কী বলতে চাও, জলদি বলো আর বিদায় হও!” সৈকত সাহেবের কন্ঠে একরাশ তিক্ততা, বিরক্তি।

–“বলতে চাই এটাই, মেয়েটাকে প্রাইভেটে ভর্তি করার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। সেহেতু টাকার ব্যাপারটাও আমরা-ই দেখবো!”
–“ঠ্যাকা পরেছে আমার? পরের মেয়ের জন্যে আমি আমার এতগুলা টাকা জলাঞ্জলি দিবো? মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? কোন কান পড়া দিলো তোমায় ওই মেয়ে?”

নূরজাহান এবার তেঁতে উঠলেন। চোখ রাঙালেন স্বামীর উদ্দেশ্যে। তেঁতো কথায় তেঁতে ওঠাটাই স্বাভাবিক। নূরজাহান চাপা হুংকার চেড়ে বললেন,
–“মুখ সামলে কথা বলেন। এই মেয়ের মায়ের জন্যে-ই আমি নূরজাহান এখনো বেঁচে আছি। সুস্থ আছি, ভালো আছি।”
সৈকত সাহেব চোখ তুলে তাকালো নূরজাহানের দিকে। নূরজাহান হাঁপাচ্ছে। তাঁর চোখ লাল, টলমলে। সৈকত সাহেব বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে পরলো। কী বলছে নূরজাহান? সৈকত সাহেব অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“মানে?”
–“মানে হলো এই, আমার গাফিলতির কারণে এই মেয়েটি আজ মা হারা।”

সঙ্গে সঙ্গে নূরজাহানের গাল বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরলে। এবার যেন সৈকত সাহেবের বিস্ময় ছুঁয়েছে সপ্তম আসমানে। পলক না ফেলে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রয় নূরজাহানের পানে। হতবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে যেন।

নূরজাহান নাক টেনে গালের অশ্রু হাতে উল্টো পিঠে মুছে বলতে শুরু করে,
–“সেদিন আপনি আমার সাথে খুব রাগা-রাগী করেছিলেন। সকালে না খেয়েই চলে গেছেন। সেজন্য আমারও গলা দিয়ে খাবার নামেনি। খাইনি কিছু। দুপুরের দিকে মুক্তা আমায় কল করে জানায় তাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে। তাঁর নাকি শরীর ভালো যাচ্ছে না। বমি, মাথা ঘুরায়! নানান সমস্যা। এদিকে নওরির বাবাও ছিলো অফিসে, তাই মুক্তা তার সমস্যার কথা আমাকেই জানায়। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। হসপিটাল নিয়ে গেলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের বসতে হয়েছিলো রিপোর্টের জন্যে৷

রিপোর্ট পেয়ে জানতে পারি মুক্তা প্রেগন্যান্ট। সে কী খুশি হয়েছিলো মুক্তা। ওকে নিয়ে আমরা বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তা পার হতে নিলে আমার মাথাটা হঠাৎ-ই চক্কর দিয়ে উঠেছিলো। হয়তো সারাদিন পেটে কিছু না পরার কারণে। মাথা ঘুরানোর ফলে আমার পা সেখানেই থেমে যায়। আশেপাশে খেয়াল ছিলো। হঠাৎ কোথা থেকে একটি বাস আমার দিকে ধেঁয়ে আসে। সেদিকে আমি তাকালাম কিন্তু নড়াচড়া সাহস পেলাম না।

ভয়ে, আশঙ্কায় রীতিমতো সজ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। মৃ!ত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম সেদিন। হঠাৎ কোথা থেকে মুক্তা এসে আমায় সরিয়ে ফেললো। কিন্তু হায় আফসোস, মুক্তা নিজেকে বাঁচানোর সময় পেলো না। বিশাল বাসটি আমার বান্ধবীকে….”

নূরজাহান আঁচলে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে ওঠে। সৈকত সাহেব সেখানেই থমকে বসে রইলো। তাঁর মুখে কোনো কথা নেই। বাকশক্তি এবং ভাবনার শক্তি উভয়-ই তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। নূরজাহান আবারও বলে ওঠে,
–“আমার কারণে মেয়েটা এতটা অবহেলিত, লাঞ্ছিত হয়েছে৷ সৎ মায়ের বি!ষ প্রতিনিয়ত গিলেছে, সেই মেয়েটার জন্যে সারা বছর কোটি কোটি টাকা ঢাললেও আমি তাঁর শূণ্যস্থান আমি পূরণ করতে পারবো না। সেই পর্যায়ে যদি আপনি আমায় টাকা না দেন, আমি নিজের গহনা বিক্রি করেও ওকে আমি পড়াবো। যদি তাও নাহয়, লোন নিবো৷ তাও এই মেয়েটাকে আমি পড়াবো!”

বলেই নূরজাহান ক্রন্দনরত অবস্থায় রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সৈকত সাহেব পূর্বের ন্যায়-ই একই জায়গায় মূর্তির মতো বসে আছে। কেটে যায় দীর্ঘক্ষণ। একসময় ভাবনায় বিভোর হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আফসোসের স্বরে মিনমিন করে বললো,
–“কেন সেদিন আমি রাগ দেখালাম?”

——————-
ইরা’দ নওরিকে পরেরদিনের কথা বললেও ইরা’দ ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পরে। এছাড়া নওরিও কোনোরকম অভিব্যক্তি দেখায়নি যার ফলে ইরা’দের কাছে মনে হলো, এই অল্প সময়ে জোর-জবরদস্তি ঠিক হবে না। তাই সময় দিলো। তবে শর্ত দিলো, একা থাকলেও খাওয়া – দাওয়া সময় মতো করতে হবে৷ নওরি না চাইতেও রাজি হতে বাধ্য হয়। একটু স্বস্তিও পেয়েছে এই ভেবে যে ইরা’দ তাকে কয়েকটা দিন একা থাকতে দিয়েছে। কোনো কিছুতে জোর করেনি।

সৈকত সাহেব এবং সিদ্দিক সাহেব, দু’ভাই মিলে মিনমিন স্বরে কোনো এক আলোচনায় ব্যস্ত। ফিসফিস দুই ভাইয়ের মধ্যে চলছেই। এমতাবস্থায় মৌসুমি হাজির হলো। মৌসুমি আসতে আসতেই সৈকত সাহেব উঠে পরলেন। বড়ো ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
–“ভাইজান তাহলে আসি। অফিসেও যেতে হবে।”

মৌসুমি দুই ভাইয়ের পানে সন্দিহান নজরে তাকিয়ে বলে,
–“দুই ভাই মিলে কীসব ফুঁসুরফুসুর করলে আর কীই-বা হলো যে আমায় দেখতেই দুই ভাইয়ের ওঠার তাড়া হলো? হ্যাঁ? সমস্যা কী?”

সিদ্দিক সাহেব কিছু বলার পূর্বেই ইরা’দ চলে আসে ঘটনাস্থলে। ইরা’দ থমথমে স্বরে বলে,
–“তাঁরা ভাই-ভাই! নানান আলোচনা করতেই পারে। তোমার আর খালামণির কথার মাঝে বাবা কখনো জিজ্ঞেস করেছে, তোমরা কী আলোচনা করছো?”

থতমত খেলো মৌসুমি! আমতা আমতা করে বললো,
–“না!”
–“তাহলে? প্রাইভেসি দাও না। থাকুক কিছু কথা তাদের মধ্যে। এই বলে অন্যের প্রাইভেসি তে তো হস্তান্তর করতে পারো না!”
–“হইছে আমার প্রাইভেসির বাপ! ঘাট হয়েছে এখানে এসে। করো তোমরা আলোচনা। আমি তৃতীয় ব্যক্তি আর কিছু বলতে আসবো না।”

বলেই ভেংচি কেটে মৌসুমি ভেতরে চলে গেলো। ইরা’দ হাসলো। সিদ্দিক সাহেবও। সৈকত সাহেব বিদায় নিয়ে চলে গেলেন৷ সৈকত সাহেব যেতেই ইরা’দ তাঁর বাবার দিকে তাকালো। সিদ্দিক সাহেব চোখ দিয়ে আশ্বাস দিতেই ইরা’দ স্বস্তি পেলো যেন।
–“বুঝিয়েছি সৈকতকে। দুই ভাই মিলেই এডমিশন ফি দিবো! তুই চিন্তা করিস না। ক্যারি অন!”

——————-
নওরির মন ভালো করার জন্যে ইদানীং সকলেই তার কাছাকাছি থাকে। হাসি-খুশি নানান গল্প করে। বিশেষ করে নিদ্র। নিদ্র যেন সঙ্গ-ই ছাড়ে না। নওরি যেদিন দরজা লাগিয়ে সারাদিন রুমে ছিলো, সেদিন ছোট নিদ্র ভীষণ ভয় পেয়েছিলো। সেই ভয়ের তাড়ায় নিদ্র নওরির থেকে খুব বেশি কারণ ব্যতীত আলাদা হয় না। আজ তো নিদ্র আধা লিটারের কোকাকোলা নিয়ে আসলো। নওরি চোখ বড়ো বড়ো করে বলে,
–“কোকাকোলা আনলে কোথা থেকে?”
–“ফ্রিজে পেয়েছি। চট করে চুরি করে এনেছি। তুমি আমি মিলে খাবো। সাবানাকেও দিবো না।”

বোতলটি রাখতেই নিদ্র’র একটি বিষয় খেয়ালে এলো। নিদ্র কপাল চাপড়ে বললো,
–“উফফ! গ্লাস আনতেই তো ভুলে গেছি। তুমি এটা রাখো, আমি গ্লাস নিতে যাবো এবং আসবো!”

বলেই নিদ্র ভোঁ দৌড় দেয়। নিদ্র’র যাওয়ার পানে তাকিয়ে নওরি সামান্য হাসলো। হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো ইরা’দ। ক্লান্ত, এলোমেলো ইরা’দকে দেখে নওরি বেশ চমকালো। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলে,
–“আপনি এখানে?”

ইরা’দ সাথে সাথে প্রতি উত্তর না দিয়ে ছো মেরে নওরির হাত থেকে কোকাকোলার বোতলটা নিয়ে নিলো। অতঃপর ধপ করে বিছানায় বসতেই নওরি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দূরে সরে গেলো। নওরি বিছানার-ই একপাশে বসেছিলো। ইরা’দ বোতলের ট্যাপ খুলতে খুলতে বললো,
–“আমার জন্যে? থ্যাংকস! এটার-ই দরকার ছিলো। ভীষণ ক্লান্ত! বুঝলে?”

বলেই নওরির কোনো জবাবের অপেক্ষা না করে ঢকঢক করে পুরো বোতল খেয়ে ফেললো। নওরি চোখ কপালে তুলে দেখে গেলো ইরা’দের কাহিনী। ইরা’দ পুরোটা গিলে সুখের ঢেঁকুর তুলে আবেশী স্বরে বললো,
–“আহ! শান্তি!”

নওরি দরজার দিকে তাকাতেই চমকালো। নিদ্র দুইটা গ্লাস হাতে নিয়ে ইয়া বড়ো হা করে ইরা’দের দিকে তাকিয়ে আছে। বিস্ময়ে যেন তাঁর পলক পরছে না। নওরি দুই ভাইয়ের মাঝে ফেঁসে গেলো। বুঝে গেলো বড়ো সড়ো কিছু ঘটবেই। ইরা’দেরও হুট করে নিদ্র’র দিকে চোখ গেলো। ইরা’দ ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে লহু কন্ঠে বলে,
–“পিচ্চি নিদ্র? কী হলো? মশা গিলে নেওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?”
নিদ্র কিছু বললো না। তবে মিনিটখানেকের মাঝে ঘর কাঁপানো চিৎকার দিয়ে উঠলো। কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে ওঠে,
–“এই কোক আমার ছিলো নিদ্র ভাইয়া! তুমি কেন আমার কোক এভাবে খেয়ে ফেললা! তোমার নামে কোক চুরির মা!মলা করবো! এখুনই যাবো আমি পুলিশ কাক্কুদের জেলখানায়।”

—————–
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।
রিচেক দেয়া হয়নি। ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ