Monday, October 6, 2025







আড়ালে তুমি পর্ব – ৪

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৪
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

আমি রিফাতের আর আমার পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে ওকে রেডি করে দিতে গিয়ে দেখি ও সেভিং ফোম পুরো মুখে মাখিয়ে রেখেছে আর রেজার উল্টো করে ধরে রেখেছে। এটা দেখে আমি হাসি আটকে রাখতে পারলাম না৷ জোরেই হেসে দিলাম। আমাকে হাসতে দেখে রিফাত বললো

রিফাতঃ বাবা তুমি হাসছো কেনো?

আমিঃ এসব কি করছো বাবা?

রিফাতঃ তুমিও তো এরকম করছিলে তাই আমিও করলাম।

আমিঃ আগে আমার বাবাটা বড় হয়ে যাক তারপর করবে।

তারপর আমি ওর মুখটা মুছিয়ে দিলাম আর ওকে পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়ে রেডি করলাম৷ ওকে বসিয়ে রেখে আমি রেডি হয়ে নিলাম। আমি বড়ি থেকে বের হতে যাবো তখন রফিক ভাই দরজায় নক করলেন।

রফিক ভাইঃ নীল হয়েছে তোর?

আমি দরজা খুলে দিলাম। দেখি রফিক ভাই একটা নীল কালারের পাঞ্জাবি পরে আছে।

আমিঃ বাহ ভাই বাহ। পুরাই হিরো

রফিক ভাইঃ কি যে বলিস না। তোকে এই কালো পাঞ্জাবিতে জোস লাগছে।

আমিঃ পাম দিওনা। ভিতরে আসো।

রফিক ভাইঃ তোর রেডি হওয়া হয়নি?

আমিঃ হুম হয়ে গেছে।

রফিক ভাইঃ তাহলে আর দেরি করছিস কেনো?

আমিঃ আচ্ছা চলো।

রফিক ভাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্যারদের বাসার উদ্দেশ্যে। একটা রিকশা নিয়ে গেলাম স্যারদের বাসায়। ভিতরে গিয়ে দেখি বিশাল আয়োজন। অনেক মানুষ এসেছে৷ পুরো বাড়ি লাইটিং করা। এর মাঝে কোথা থেকে যেনো বর্না আপু চলে আসলো।

আমিঃ আপু তুমি কখন আসলে?

বর্না আপুঃ একটু আগে এসেছি। তোমাদের খুজলাম তবে পেলাম না।

ভালো করে লক্ষ করে দেখি বর্না আপু আর রফিক ভাই ম্যাচিং করে পোশাক পরেছে। আমার কেনো জানি মনেহয় বর্না আপুও রফিক ভাইকে ভালোবাসে।

বর্নাঃ কোথায় হারিয়ে গেলা?

আমিঃ কোথাও না আপু।

বর্নাঃ রফিক কেমন আছো?

রফিক ভাইঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

বর্নাঃ আলহামদুলিল্লাহ। চলো ভিতরে যায়।

রফিক ভাইঃ আসলে আমার ভিড়, কোলাহল এসব ভালো লাগেনা।

বর্নাঃ আরে অন্তত স্যারের সাথে দেখা করে আসি?

রফিক ভাইঃ চলো তাহলে।

বর্নাঃ আরে আমার কিউট বাবাটাকে আমি খেয়াল করিনি। ( রিফাতের দিকে দেখে) কেমন আছে আমার বাবাটা?

রিফাতঃ ভালো আছি আন্টি। তুমি কেমন আছো?

বর্নাঃ আমিও ভালো আছি।

তারপর বর্না আপু রিফাতকে কোলে নিয়ে নিলো। আমরা ভিতরে গেলাম। গিয়ে স্যারকে খুজতে লাগলাম। স্যারকে না পেলেও নিরাকে দেখতে পেলাম। আমাকে দেখতে পেয়ে উনি নিজেই আমার সাথে দেখা করতে এলেন

নিরাঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?

আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন?

নিরাঃ আলহামদুলিল্লাহ। ভাবিকে নিয়ে আসেন নি?

আমিঃ আসলে আমার বউ আর নেই। আমার ছেলেকে আর আমাকে রেখে সে দূরে চলে গেছে।

নিরাঃ সরি ভাইয়া।

আমিঃ এতে সরি বলার কি আছে?

নিরাঃ তা আপনার ছেলেকে দেখাবেননা?

আমিঃ অবশ্যই। ( আমি বর্না আপুকে ডাকলাম) আপু এটাই আমার ছেলে।

নিরাঃ সো কিউট। নাম কি বাবু তোমার?

রিফাতঃ আমি রিফাত

নিরাঃ বাহ নামটাও তোমার মতো দারুন।

আমিঃ তা দুলাভাইকে তো দেখছিনা।

নিরাঃ একটু দাড়াও আমি ডেকে নিয়ে আসি।

নিরা একটা রুমে গিয়ে একজনকে নিয়ে আসলেন। ভালোই হ্যান্ডসাম আছে। আমাদের এখানে এসে বললো

নিরাঃ ভাইয়া আমার হাসবেন্ড।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই।

দুলাভাইঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি রাশেদ মির্জা।

আমিঃ আমি শাহরিয়ার কবির নীল

রাশেদঃ Nice to meet you.

আমিঃ pleasure is mine.

দুলাভাইঃ আচ্ছা ভাই আমি আসি কিছু গেস্ট আসছে কথা বলে আসি।

আমিঃ আচ্ছা

নিরাঃ ভাইয়া আপনারা ইনজয় করুন আমিও দেখে আসি।

আমিঃ আচ্ছা। এরপর ওরা চলে গেলো।
পাশে দেখি রফিক ভাইও নেই।

আমিঃ আপু রফিক ভাই কই গেলো?

বর্নাঃ এখানেই তো ছিলো।

আমিঃ বাইরে গিয়েছে মনেহয়।

এমন সময় আবার শিলা ম্যামের এন্ট্রি। তিনি সোজা আমাদের দিকেই আসলেন।

শিলা ম্যামঃ কখন আসলে তোমরা?

আমিঃ একটু আগে। তুমি কখন এলে?

শিলা ম্যামঃ আমি এইমাত্র এলাম। কেমন আছো রিফাত বাবু?

রিফাতঃ ভালো আছি। তুমি?

শিলা ম্যামঃ ভালো। নীল রিফাতকে আমার কাছে দাও।

আমি রিফাতকে ওনার কাছে দিলাম।

শিলা ম্যামঃ ওকে নিয়ে উপরে গেলাম। তুমি বাইরে দাড়াও।

আমিঃ আচ্ছা।।

আমি আর বর্না আপু বাইরে গেলাম। আমি ভাবলাম এইটাই সুযোগ বর্না আপুকে রফিক ভাইয়ের কথা বলে দি।

আমিঃ আপু একটু সাইডে আসবে? কিছু কথা বলতাম।

বর্নাঃ আচ্ছা চলো।

আমি একটু সাইড হলাম৷ তারপর বললাম

আমিঃ আসলে আপু একটা কথা বলতাম। জানিনা তুমি কিভাবে নিবে কথাটা।

বর্নাঃ বলো নাহলে গেলাম।

আমিঃ আচ্ছা বলছি। আসলে রফিক ভাই তোমাকে পচ্ছন্দ করে কিন্তু বলতে পারছেনা।

বর্নাঃ কেনো?

আমিঃ আসলে ওনার একটা সমস্যা আছে।

বর্নাঃ উনি কোনোদিন বাবা হতে পারবেনা তাইতো?

আমিঃ তুমি কিভাবে জানলে?

বর্নাঃ সেটা না জানলেও চলবে। আমি জানি উনি আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমার ব্যাপারে সব কিছু জানা দরকার উনার।

আমিঃ কি জানার আছে?

বর্নাঃ আসলে আমার আগেও বিয়ে হয়েছিলো। আমার বয়স যখন ২২ তখন আমার বিয়ে হয়। ভালোই চলছিলো আমার দিনকাল তবে বিয়ের ২ বছর চেষ্টার পরও আমার বাচ্চা হচ্ছিলো না। তারপর একদিন ডাক্তার দেখালে জানতে পারি আমি কখনও মা হতে পারনা৷ তারপর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। আমার বাবা এটা সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। এখন আমি আমার মাকে নিয়ে থাকি।

এখন রফিক যদি এসব জানার পর আমাকে বিয়ে করতে চাই তবে আমার কোনো আপত্তি নেই। এতিমখানা থেকে একটা বাচ্চা দত্তক নিয়ে মানুষ করবো। তুমি গিয়ে রফিককে বলো। যদি রাজি থাকে আমাকে বলবা।

আমিঃ আচ্ছা আপু। ৫ মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি।

আমি ফোন বের করে রফিক ভাইকে কল করে ডাকলাম। দেখি উনি সবার আড়ালে একা বসে আছেন। আমি নিজেই ওনার কাছে গেলাম।

আমিঃ ভাই একটা খবর নিয়ে এলাম।

রফিক ভাইঃ কিসের খবর?

আমিঃ বর্না আপু তোমাকে বিয়ে করতে রাজি আছে। তবে ওনার সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলতে চাই।

রফিক ভাইঃ কি বলবি বল

আমিঃ আসলে……….. ( সব খুলে বললাম)। এখন তুমি ভেবে বলো।

রফিক ভাইঃ বর্নাকে এখানে ডাক। ওর সাথেই কথা বলি।

আমিঃ আচ্ছা।
তারপর আপুকে ফোন করে ডাকলাম।

বর্নাঃ কি হলো ডাকলে যে?

আমিঃ ভাইকে কিছু বলবে।

বর্নাঃ বলো রফিক।

রফিক ভাইঃ আসলে তোমার ব্যাপারে আমাকে নীল বলেছে। তোমার আগের বিয়ে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নাই। পবিত্র সম্পর্ক ছিলো ওটা।

বর্নাঃ হুম

রফিক ভাইঃ আমি তোমাকে কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে করতে চাই। তবে আমারও কিছু শর্ত আছে।

বর্নাঃ কি শর্ত?

রফিক ভাইঃ প্রথমত তোমার মা আমাদের সাথে থাকবে আমার মা হয়ে। আমার তো কেউ নেই। দ্বিতীয় কথা এতিমখানা থেকে বাচ্চা দত্তক নিবো তবে তাকে সব সময় নিজের সন্তান ভাবতে হবে।

বর্নাঃ আর কিছু?

রফিক ভাইঃ আর আমাকে ভালোবাসাতে হবে।

বর্নাঃ ব্যাস?

রফিক ভাইঃ হুম। এখন তোমার আপত্তি থাকলে বলত পারো। আমি কালকেই তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।

বর্নাঃ আমার কোনো আপত্তি নেই। কালকে তুমি মায়ের সাথে কথা বলে নিও।

আমিঃ ব্যাস পার্টিতে এসে সেটিং হয়ে গেলো। আমি একসাথে ভাবি আর দুলাভাই পেলাম।

আমার কথা শুনে দুজের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বাসার পাশে স্টেজ করা আছে। আমরা সেখানে গেলাম। ম্যামও রিফাতকে নিয়ে আসলেন।

স্টেজে দেখি স্যার মাইক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে। তিনি সকলের উদ্দেশ্য বলতে শুরু করলেন

স্যারঃ লেডিস এন্ড জেন্টানমেন আজকের অনুষ্টানে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকে আমার মেয়ে আর আমার জামাইয়ের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী। প্রতিবারের মতো আজকেও আপনাদের সাথে বিশেষ দিনটা উদযাপন করতে পেরে আমি অনেক খুশি।

সবাই মিলে তালি দিতে লাগলেন।

স্যারঃ আরেকটি বিশেষ কথা বলবো আপনাদের তার আগে আমি আমার মেয়ে আর জামাইকে স্টেজে আসার অনুরোধ করছি।

ওরা দুইজন স্টেজে আসলো। সবাই মিলে করতালি দিচ্ছে।

স্যারঃ যে খুশির খবর আমি আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে চাই সেটা হলো আমি অতী শীঘ্রই নানা হতে চলেছি। এই খুশি আমি সকালের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। আজকের পার্টি আপনাদের জন্য। সবাই আনন্দ করুন।

সবাই তালি দিচ্ছে আর নিরা আর রাশেদকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এরপর কয়েকজন গান গাইলো। আমিও গান গাইতে পারি। তবে যার জন্য গাইতাম তার চলে যাবার পর আর গাইনা।

সবাই সবার সাথে কথা বলছে। এদিকে আমি, রফিক ভাই, শিলা ম্যাম, রিফাত একসাথে আছি। কেউ কোনো কথা বলছিনা। নিরবতার মাঝেই কেটে গেলো অনেকটা সময়। এরপর ডিনার করতে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।

স্যারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো ইয়াং ম্যান?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন স্যার?

স্যারঃ আলহামদুলিল্লাহ। পিচ্চিটা কে?

আমিঃ আমার ছেলে।

স্যারঃ বাহ ভারি মিষ্টি দেখতে। আচ্ছা যাও ডিনার করে নাও।

স্যারকে বিদায় দিয়ে ডিনার করতে গেলাম। পার্টি শেষ হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি বাড়ির বাইরে। তখন শিলা ম্যামের গাড়ি থামলো আমাদের সামনে।

শিলা ম্যামঃ কি ব্যাপার তোমারা বাসায় যাবেন না?

আমিঃ যাবো তবে রিকশা পাচ্ছিনা।

শিলা ম্যামঃ আচ্ছা চলো আমি পৌছে দি।

আমিঃ না না। তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা।

শিলা ম্যামঃ উঠো বলছি। ( একটু রাগি গলায়)

উপায় না পেয়ে উঠেগেলাম। রফিক ভাই ড্রাইভারের পাশে বসেছেন আর আমি পিছনে শিলা ম্যামের পাশে। অবশ্য আমাদের ফ্ল্যাট আর ম্যামের বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি না। ১০ মিনিট পর পৌছে গেলাম।গাড়িতেই রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গেলাম। গিয়ে মুখ হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। কালকে শুক্তবার তাই আরামের একটা ঘুম হলো।

দেখতে দেখতে ৭ দিন কেটে গেলো। আজকে রফিক ভাই আর বর্না আপুর বিয়ে। এই কয়দিনে অফিসের পাশাপাশি রফিক ভাইয়ের বাসায় সংসারের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মাঝে রফিক ভাই গিয়ে ওনার মায়ের সাথে কথা বলে এসেছেন। ওনার মা প্রস্তাব পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন। তারওপর মেয়ের সাথে থাকবে শুনে আরি খুশি।

কাজি অফিসে আছি এখন। বিয়ের কথা কাউকে জানানো হয়নি। গোপনেই সব করে নিলো। বিয়ে করে সেইদিনই শাশুড়ী আর বউকে ভাইয়া বাসায় নিয়ে চলে আসলেন। ভাইয়া আর আপু অবশ্য অযুহাত দেখিয়ে ৩ দিনের ছুটি নিয়েছেন। তবে আমি অফিস করি। রফিক ভাই আর বর্না আপু এই কয়দিনেই নিজেদের মাঝে খুব ভালো একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি করে নিয়েছেন।

৩ দিন পর আজকে আমরা তিনজন একসাথে অফিস গেলাম। পরশু আবার একদিনের সরকারি ছুটি বিজয় দিবস উপলক্ষে।

দুইদিন অফিস করলাম। আজকে অফিস শেষে বাসায় এলাম। রিফাতকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। আমিও ঘুমাতে যাবো এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো।

আমিঃ কে?

রফিক ভাইঃ আমি আর তোর আপু।

আমি দরজা খুলে দিলাম।

আমিঃ তোমরা এই সময়?

রফিক ভাইঃ কালকে তো ছুটি তাই গল্প করতে এলাম।

আমিঃ আচ্ছা তাহলে পাশের রুমে বসো আমি কফি নিয়ে আসি।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা।

আমি গিয়ে তিনজনের জন্য কফি বানিয়ে রুমে গেলাম।

রফিক ভাইঃ আচ্ছা আজকে তুই তোর জীবন সম্পর্কে সব বলবি।

আমিঃ আজকেই শুনবা তাহলে?

বর্নাঃ হ্যা। কালকে ছুটি সারাদিন ঘুমিয়ে নিও। এখন বলো তোমার লাইফ স্টোরি।

আমিঃ যদিও আমি চাইনা আমার অতীতটা মনে করতে। তবুও তোমাদের জন্য আবার বলছি শুনো তাহলে

★অতীত★

যেদিন থেকে আমার নিজের বুঝার ক্ষমতা হয়েছে সেদিন থেকেই একটা কথা জেনে এসেছি তা হলো আমি এতিম। অনেক ছোট থাকতেই নাকি কেউ এই এতিমখানার দরজায় ফেলে গিয়েছিলো। সেদিন থেকে সেই এতিমখানাতেই বেড়ে উঠেছিলাম। ছোট থেকেই আমার ভিতর কোনো চঞ্চলতা ছিলোনা৷ আমি বরাবরই একা থাকতে ভালোবাসতাম। সেই এতিমখানায় আমার বাড়ি ছিল। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে আমি জানিনা।

আমার বয়স যখন ৭ বছর তখন আমাকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। যেই লোক এতিমখানার খরচ চালায় তিনি কয়েকজন ছেলেকে পড়াশোনা করার খরচ দিতেন। আমি পড়াশোনায় ভালো আর আমার পড়াশোনা নিয়ে আগ্রহ ছিল।

ক্লাস ১ থেকে ক্লাস ৫ পর্যন্ত সব সময় রোল ১ ছিলো। যদিও যে স্কুলে পড়েছি তা রাজশাহীর কোনো এক সরকারি স্কুল। নাম যশ নাই। তবুও সেই সময় সবাইকে অবাক করে এই স্কুল থেকে প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জিপিএ ৫ আর সাথে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।

তারপর আরেকটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। এই সময়টাতে আমাকে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি৷ কিন্তু বিপত্তি ঘটে একদিন। তখন আমি ৮ম শ্রেনিতে পড়ি। আর বোর্ড পরীক্ষার সময় ছিলো মাত্র ৩ মাস। এতোদিনে সবকিছু বুঝতে শিখে গিয়েছি। বাস্তব দুনিয়া সম্পর্কে অনেকটা ধারনা পেয়ে গিয়েছিলাম। পড়াশোনায় সবার থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলাম বিধায় এতিমখানার মালিক আমাকে একটু বেশি গুরুত্ব দিতো।

তবে ভালো সময়গুলো যে শেষ হয়ে আসছিলো সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই ছিলোনা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও পড়তে বসেছিলাম। তবে আমাদের কেয়ার টেকার অশ্রু মিশ্রিত চোখে সবাইকে এসে যা বললো তা শুনে সবাই অনেক ভেঙে পড়ে। তিনি জানান মালিক কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছিলেন। তবে যে বিমানে যাচ্ছিলেন তা মাঝপথে বিধ্বস্ত হয়ে সবাই মারা যান। তার ছেলে তখনও জীবিত ছিলো।

তবে বাবা ভালো হলে যে সব সময় ছেলেও ভালো হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ এই ক্ষেত্রে সেটা হয়েছিলো। মালিক মারা যাবার কিছুদিন পর মালিকের ছেলে এই এতিমখানা ভেঙে ফেলে নতুন করে একটা হোটেল করার জন্য সবাইকে বললেন। একথা শুনে সবার মাথায় হাত।

এর মাঝে অনেক কে কিছু সন্তানহীন বাবা মা দত্তক নিয়ে নেন। কিছু ছেলে কুল কিনারা হারিয়ে ভিক্ষার রাস্তা বেছে নেয়। আমাকেও দত্তক নিতে এসেছিলো। তবে আমি যায়নি। কারণ ততদিনে আমি বাস্তবতা বুঝে নিয়েছিলাম যে পর কোনোদিন আপন হয়না৷ তাই যাইনি। তারপর থেকে আমি একটা কাপড়ের দোকানে কাজ নিই। সারাদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। তার বদলে মাসে ৮০০০ টাকা পেতাম। তাতেই অনেক ভালো ভাবে দিন চলছিলো। আমি স্কুল যেতাম সপ্তাহে একদিন। ভালো কোনো স্কুলে পড়লে উপস্থিত থাকা লাগে তাই ছোট খাটো স্কুলেই পড়তাম আর শুধু পরীক্ষা গুলোই ভালো করে দিলাম। একটা মেসে ছিলাম৷ সব মিলিয়ে মাসে ৬০০০ টাকা খরচ হতো আমার৷ আর বাকিটা জমা করতাম। মালিকের ছেলে প্রাইভেট পড়াতো। মালিকের কথায় আমাকে বিনা বেতনে পড়াতো।

দেখতে দেখতে ১০ম শ্রেণীতে উঠে যায়। আমার মালিক অনেক অমায়িক মানুষ ছিলেন। যখন আমার পরীক্ষার আর ৪ মাস বাকি তখন থেকে আমার কাজের সময় ২ ঘন্টা কমালেও বেতন কাটতোনা। এমনকি দরকারে সাহায্যও করতো। ৯ম শ্রেণী থেকেই আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম কারণ আমি জানতাম ফাঁকি দিলে আমার ভবিষ্যৎ অনেক ভয়াবহ হবে।

দেখতে দেখতে আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। আমি সব পরীক্ষা অনেক ভালোভাবে দেই। পরীক্ষার পর খালি সময়ে আমি দোকানে কাজ করতাম আর মালিকের ছেলে ইন্টারে পড়তো ওর পুরাতন বই নিয়ে আমি পড়তাম যেগুলা নিজে থেকেই বুঝা যায়।

যেদিন আমার রেজাল্ট বের হয় সেদিন অনেক ভয় হচ্ছিলো। তবে ভয়কে জয় করে জিপিএ ৫ পাই। এখন আমার টার্গেট ছিলো ভালো কোনো কলেজে পড়া। তবে ভালো কলেজে পড়তে গেলে ভালো টাকা লাগবে। কিন্তু আমার জমা ছিলো মাত্র ৫০ হাজার। তাই ভাবলাম যা হবে পরে দেখবো কিন্তু ভালো কোনো কলেজেই ভর্তি হবো। আর ভালো একটা কলেজে ভর্তির সুযোগও পাই।

তবে কলেজে উপস্থিতি নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিলোনা। রাজশাহীতে সবাই প্রাইভেটকে বেশি গুরুত্ব দেয় । তবে আমার সামর্থ ছিলোনা। আমাকে কলেজে ক্লাস করে সব নিজে থেকেই বুঝতে হবে৷ কিন্তু নিয়মিত কলেজ করলে তো আবার কাজ করতে পারবোনা। কাজ না করলে পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারবোনা৷ এই সমস্যার কথা মালিকের ছেলেকে খুলে বললে আমাকে আউটসোর্সিং করার কথা বলে। আমিও তার কথা মতো দুইমাস ট্রেনিং করে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড কম্পিউটারে কিনি৷ সেই থেকে মাসে ১০ হাজার মতো আসতো। তাতে চলে যেতো।

আমার প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য ছিলোনা।তাই সব ক্লাস অনেক মনোযোগ দিয়ে করতাম। কলেজে আমার সাথে কেউ কথা বলতোনা। একটাই করাণ আমি এতিম আর আমার বাবা মার পরিচয় জানিনা বলে। তাই আমি কারও সাথে কথা বলিনা। সব ক্লাস মনোযোগ দিয়ে করতাম।

জানিনা কেনো গণিত বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগতো। আর পরীক্ষাতে গণিতে আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেতাম৷ ইংরেজিতে খারাপ ছিলাম৷ তবে লেটার মার্ক থাকতো।

কলেজের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার পর আমি কলেজে ২০তম হই। সব মিলিয়ে কোনোরকমে চলে যেতো। তবে কাজ আর পড়াশোনার জন্য আমি বেশি ঘুমানোর সুযোগ পেতাম না। যদিও সময়ের সাথে সাথে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়।

একদিন ক্লাস শেষ করে কলেজের ক্যাম্পাসে বসে কিছু নোট করছিলাম৷ এমন সময় একটা মেয়েলি কন্ঠ বলল ‘ এই যে শুনছেন’? আমি ভাবলাম আমার শোনার ভুল কারণ আমার সাথে কেউ কথা বলেনা। আমি কিছু না ভেবে আবার নোট করতে লাগলাম। একটু পর আবারও সেই কন্ঠ ভেসে আসলো

অচেনা কন্ঠঃ এই যে আপনাকেই বলছি

এবার আমি মাথা তুলে তাকালাম। তবে তাকিয়ে যা দেখলাম তা হয়তো আমি কখনও ভাবিনি যে এমনটাও হতে পারে। কারণ সামনে দাড়িয়ে ছিলো………………..

চলবে……………

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ