Monday, October 6, 2025







লবঙ্গ লতিকা পর্ব-০১

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১

–ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়েকে বিয়ে! এটা কী সম্ভব!
বিস্ফোরিত কন্ঠে সাদ বলে উঠলো। সাদের দাদী আঙুরবালা পালঙ্কের ওপরে হেলান দিয়ে বসে আছেন। একটু পরপর মাথাও চাপড়াচ্ছেন।

সাদের এত উৎকন্ঠা দেখে সাদের দাদী আঙুরবালা চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
” তোর বয়সই বা কত রে? তুই তো মাত্র কলেজে পরিস!তোরা সবই করতে পারবি শুধু আমার বেলাতেই যত আপত্তি!”

সাদ তাঁর দাদীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেল। যত যাইহোক এত অল্প বয়সে বিয়ে করবে না সে। সাদকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে সাদের বাবা মহসীন খান তাঁর মাকে বলে উঠলেন,
” আম্মা তুমি ভালো কিছু চাইলে না করতাম না। এটা তোমার কেমন আবদার? আমার ছেলেটা মাত্র কলেজে পড়ে। এরমধ্যেই ওর বিয়ে দিয়ে দেবো? ওর ভবিষ্যত তো পুরো অন্ধকার! তাও যেই মেয়েকে ঠিক করেছো সে পরে ক্লাস নাইনে। তুমি কী আমাদের পুলিশের ধাওয়া খাওয়াতে চাও? জানো না ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ? ”

আঙুরবালা ছেলে মহসীন খানের বলা কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ” হইসে! আর কথা কইস না তোরা। কয়দিন পরে যামুগা মইরা। তহন তো আর এতডি কথা হুনানের মানুষ পাবি না তোরা। কত শখ আছিলো নাতি নাতনীগো বিয়া দেইখা মরুম। সেই শখ আর মিটলো আমার। আমি মরলে তোরা শান্তি হবি!”

মহসীন খান আর পাল্টা যুক্তি খুঁজে পেলেন না। মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় শুধু হালকা ভাবে তাঁর মা আঙুরবালাকে বলতে শুনলেন,” আমার লগে এমন করিস না তোরা। মইরা যাওয়ার আগে এই একটাই ইচ্ছা আমার। তোর পোলাডার বিয়া দেইখা মরবার চাই। কবে তোর পোলা বড় হইবো। চাকরি-বাকরি করবো। ততদিন কী আর আমি বাঁইচা থাকুম?”

মহসীন খান চোখ মুছতে মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তাঁর মায়ের শরীর আসলেই খারাপ। যখন তখন কিছু একটা হয়ে যেতে পারে। সেজন্য সপরিবারে মায়ের সাথে দেখা করতে;গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।এখানে এসেই দেখলেন আরেক কান্ড। তাঁর মা ক্লাস নাইনে পড়ুয়া এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে বললেন তাঁর ছেলে সাদের সাথে বিয়ে দিতে। সাদ মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরছে। এই অবস্থায় ছেলের বিয়ে দেওয়া মানেই ছেলেকে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া। একবার ছেলে-মেয়েদের সংসারের দিকে মন চলে গেলে তখন আর পড়াশোনায় মন বসে না। মহসীন খান এবার বেশ দুশ্চিন্তায় পরে গেলেন। মায়ের শেষ আবদার! আবার আরেক দিকে ছেলোর ভবিষ্যত। কোনটা রেখে কোনটা জলাঞ্জলি দেবেন!

মহসীন খান চিন্তা করতে করতে বাড়ির উঠোনে গিয়ে চেয়ার পেতে বসলেন। এরকম পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো উপায়ন্তর খুঁজতে শুরু করলেন। বাড়ির কাজের লোকটা হঠাৎ দৌড়ে এলো মহসীন খানের সামনে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,” চাচা! দাদী কেমন জানি করতাসে। হাত পা ঠান্ডা হইয়া আইতাসে। আপনে তাড়াতাড়ি আহেন।”

মহসীন খান পিলে চমকে উঠলেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। দৌড়ে তাঁর মা আঙুরবালার ঘরের দিকে অগ্রসর হলেন। ঘরে গিয়ে দেখলেন তাঁর মা ব্যাথায় কোকাচ্ছে। আঙুর বালা তাঁর ছেলে মহসীন খানকে দেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,” মরন যন্ত্রণা যে কী কষ্টের আগে বুঝি নাইরে বাবা। আল্লাহ আমারে উঠায়া লয় না ক্যা? আমার তো এত কষ্ট আর সহ্য হইতাসে না রে বাপ। ভাল্লাগে না আর দিনদুনিয়া। এত মানুষ মরে। আমি মরি না ক্যা? আল্লাহ আমারে আর কত কষ্ট দিবো?”

মহসীন মায়ের হাত ধরে কেঁদে উঠলেন। আঙুর বালা বারবার ব্যাথায় গোঙ্গাছে। মহসীন এবার সবচেয়ে কঠিন আর চূড়ান্ত একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। চোখ মুছতে মুছতে ঘরের বাইরে গিয়ে তাঁর স্ত্রী অনিতাকে ডাকলেন। অনিতা ঘোমটা ঠিক ঠিক করতো করতে তাঁর বর মহসীনের সামনে আসলো। মহসিন শক্ত গলায় অনিতাকে বললেন,” আম্মা সাদের জন্য যে-ই মেয়ে ঠিক করেছে ওর সাথেই সাদের বিয়ে দাও।আম্মার শরীরের প্রচন্ড খারাপ অবস্থা। কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। তুমি তাড়াতাড়ি ওই মেয়ের সাথে সাদের বিয়ে দাও। আম্মার শেষ ইচ্ছে এটাই যে উনি সাদের বিয়ে দেখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। তুমি তাড়াতাড়ি বিয়ের কথাবার্তা শুরু করো।”

অনিতা থমকে গেলেন। ছেলেটার বয়স তো খুব বেশি না। এখনই বিয়ে! অনিতা মহসীনের কথাটা মেনে নিতে পারলেন না। রুদ্ধ কন্ঠে বললেন, ” আমার এতটুকু একটা ছেলে। এখনই বিয়ে দেবো! আমার ছেলের ভবিষ্যত কী তাহলে? আম্মা যে-ই মেয়েকে ঠিক করেছেন সেই মেয়েও তো ছোট। ক্লাস নাইনে পড়ছে মাত্র। বয়সও হবে ১৫ কী ১৬। এই পিচ্চি মেয়ে আবার সংসারের কী বুঝবে?”

মহসীন করুন দৃষ্টিতে অনিতার দিকে তাকালেন। তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বললেন, “আমিও সেই কথাই চিন্তা করছি। কী করি বলো তো! মায়ের কথাও ফেলতে পারছি না। আবার সামনে ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। কোনটা রেখে কোনটার দিকে নজর দেবো বলো?”

অনিতা মহসীন খানের দিকে তাকিয়ে বললেন,” তুমি দাঁড়াও, আমি আম্মার সাথে কথা বলে দেখি কী হয়। এত অল্প বয়সে আমার ছেলেকে আমি বিয়ে দেবো না।”

অনিতা আর দাঁড়ালেন না। ক্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেলেন আঙুর বালার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলতে।

আঙুর বালার ঘরে গিয়ে অনিতা দেখলেন আঙুর বালা হাত কপালে ঠেকিয়ে শুয়ে আছেন। অনিতা আঙুর বালার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো। পায়ের কাছে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে, আঙুর বালা কপালের সামনে থেকে হাত সরিয়ে অনিতাকে দেখতে পেলেন। অনিতা আঙুর বালাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে উঠলেন,” আম্মা, আপনি না কি সাদের বিয়ে দিতে চান? এত অল্প বয়সে ওর বিয়ে দেই কীভাবে? যে-ই মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চান। ও নিজেও তো খুব ছোট। আপনার কথাও থাক আর আমার কথাও থাক। বিয়েটা আরও কয়েকটা বছর পরে হোক। কথা দিলাম আম্মা যে-ই মেয়েকে আপনি পছন্দ করেছেন। সেই মেয়ের সাথেই আমি সাদের বিয়ে দেবো।”

আঙুর বালা অনিতার কথা মেনে নিতে পারলেন না। অসুস্থ শরীরেই উঠে বসলেন। উত্তেজিত কন্ঠে বললেন, ” মাইয়াডা কেলাস নাইনে পড়ে। অনেক বড় হইসে আর কত বড় হইবো। গেরাম গঞ্জে মাইয়ারা সেভেন এইটে পরলেই ওগো বিয়া হইয়া যায়। মাইয়াডারে আমার অনেক ভালো লাগসে। নিজের গেরামের বইলা কথা। তুমি সাদের লগে ওর বিয়া ঠিক করো জলদি। আমি সাদের বিয়াডা দেইখা চোখটা বন্ধ করবার চাই। আমার বংশের বড় নাতী সাদ। আমার ওরে লইয়া অনেক স্বপ্ন আশা। অয় বিয়া করবো সংসার করবো। বউ লইয়া ঘুরবো। আমার তো দিন শেষই। তোমরা আমারে নিরাশ কইরো না। সাদের বিয়াডা দেও জলদি। আমি একটু শান্তিতে মরতে চাই।”

আঙুর বালার এত আশা ভরসা দেখে অনিতা আর কোনো কথা বলতে পারলেন না। শয্যাশায়ী মানুষটার দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওই জায়গা থেকে সরে গেলেন। ছাঁদে গিয়ে দেখলেন সাদ সেখানে বসে আছে। সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,” বাবা আমার, তোমার দাদী কী চান সেটা তো শুনেছো। তুমি দ্বিমত করো না বাবা। মৃত্যুর সময় তোমার দাদীর শেষ ইচ্ছে হলো, তোমার বিয়ে দেখা। তুমি বংশের বড় ছেলে। তোমাকে নিয়ে তোমার দাদীর শখ আহ্লাদের শেষ নেই। তুমি তৈরি থাকো। আমরা বিয়ের কথাবার্তা শুরু করবো খুব জলদি।”

সাদ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। রোষারক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” আম্মু আমার বন্ধু -বান্ধবরা এটা নিয়ে কত হাসাহাসি করবে তুমি জানো? প্রেম করবো ঘুরবো ফিরবো। এটাই হচ্ছে লাইফ! তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়ে বিবাহিত বানাতে চাচ্ছো? কী একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে দাদু! নাক টিপলে দুধ বের হবে। ওই মেয়ে করবে আবার সংসার! কী পছন্দ দাদুর! ইয়াক!

চলবে….

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ