Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"মায়াজালমায়াজাল পর্বঃ ০৭ (শেষ)

মায়াজাল পর্বঃ ০৭ (শেষ)

মায়াজাল পর্বঃ ০৭ (শেষ)
লেখকঃ আবির খান

অধরা চলে যায় ওর বাসায়। রিফাত পিছাতে পিছাতে গাড়ির সাথে গিয়ে ধাক্কা খায় আর মাটিতে বসে পড়ে। রাস্তার অনেক লোক ওর দিকে তাকিয়ে আছে। সেদিকে ওর খেয়াল নেই৷ রিফাতের চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। বড় ভুল করে ফেলেছে ও। এটা করা ঠিক হয়নি। অধরা ওকে খুব খারাপ ভাবছে। খুব৷ ভুল যখন ও করেছে তা ঠিকও ও করবে। রিফাত চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। গাড়ি নিয়ে সো করে কোথায় যেন চলে যায়।

অধরার বাসায়,

মাঃ কি হয়েছে মা? তোকে এমন লাগছে কেন? আর তুই এতো দামী শাড়ী গহনা পেলি কই?

অধরা একটা কথা বলে না। নিথর মলিন মুখ নিয়ে সোজা ওর রুমে চলে যায়। দরজা দিয়ে অধরা বিছানায় ওর শরীরটা ছেড়ে দেয়। টপটপ করে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে বিছানায়।

বাবাঃ কি হয়েছে অধরার মা?

মাঃ মেয়েটা কেমন করে যেন ভিতরে চলে গেল। মনে হচ্ছে কষ্ট পেয়েছে।

বাবাঃ থাক চিন্তা করোনা। ও অনেক বড় হয়েছে। কিছু হলে আমাদের বলবে। ওকে একা থাকতে দেও। ঠিক হয়ে যাবে।

মাঃ কিন্তু…

বাবাঃ আহ! আসো ঘুমাবে। তোমার শরীরটাও এমনিই ভালো না। ঘুমাবে আসো।

মাঃ আচ্ছা। চলো।

অধরা বিছানা ছেড়ে উঠে ধীরে ধীরে আয়নার সামনে গিয়ে বসে। নিজেকে দেখছে ও। অসম্ভব সুন্দরী লাগছে ওকে। কিন্তু ঠোঁটের দিক তাকাতেই অধরার বুক ফেটে কান্না আসে। রাগে দুঃখে কষ্টে অধরা হাত দিয়ে ওর ঠোঁটটা ডলতে থাকে। ও মুছে ফেলতে চায় রিফাতের স্পর্শ। কিন্তু তা যেন মুছেই না। কারণ এ স্পর্শ মনে গেঁথে গিয়েছে। অধরা দ্রুত গহনা, শাড়ী, গোল্ড বিস্কুট যা যা রিফাত ওকে দিয়েছিল সব গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে রেখে দেয়। ও কিচ্ছু চায় না রিফাতের৷ অধরা ঝর্ণার নিচে বসে আছে। নিজেকে কেমন জানি অপরিষ্কার মনে হচ্ছে। ঝর্ণার নিচে বসে অধরা কাঁদছে। ওর বিল্লুর জন্য কাঁদছে।

অধরার সব মনে আছে। দীর্ঘ পনেরোটা বছর যাবৎ ও মনের ভিতরে ওর বিল্লুকে ধরে রেখেছে। একমুহূর্তের জন্যও হারাতে দেয় নি। কখনো প্রেম ভালোবাসা বা শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য কোন ছেলের স্পর্শে যায় নি। নিজেকে সেইফ রেখেছে। আর আজ সেই বিল্লুর আমানতে রিফাত মুখ দিয়েছে। অধরা পারেনি নিজেকে সেইফ রাখতে। খুব খারাপ লাগছে ওর। ওর বিল্লু জানলে তো ওকে কখনো মেনে নিবে না। কখনো না। অনেক খুঁজেছে ওর বিল্লুকে ও। কিন্তু পায় নি। তাও ভালবাসাটা আজও বেঁচে আছে মরতে দেয় নি। অধরার রাতটা অঝোর অশ্রু বৃষ্টিতে কেটে যায়।

পরদিন বেলা ১২.৩৯ মিনিট,
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


অধরা এখনো ঘুমিয়ে আছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিলো ওর। না চাওয়া স্বত্তেও ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। (যারা অযথা কোন কারণ ছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ঔষধ খান, জেনে রাখুন আপনি নিজের শেষ নিজেই করছেন। এগুলো থেকে বিরত থাকুন।) মায়ের ডাকাডাকিতে অধরার ঘুমটা ভাঙে। মাথাটা খুব ভার হয়ে আছে। ব্যথাও করছে। মাথায় হাত দিয়ে দরজা খুলে অধরা। ওর মা অস্থির হয়ে বলে,

মাঃ ঠিক আছিস? কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?

অধরাঃ কিছু হয়নি মা। ওর জন্য মন খারাপ ছিল।

মাঃ মারে ওর হয়তো বিয়েও হয়ে গিয়েছে। কতগুলো বছর চলে গেছে। ও হয়তো তোকে ভুলেও গিয়েছে। তুই সামনে আগা। ওকে মন থেকে মুছে ফেল।

অধরাঃ মা, বিল্লু আমার সব৷ আমি ওকে কখনো ভুলতে পারবো না।

মাঃ ভুলতে তোকে হবেই। শোন সন্ধ্যায় রেডি থাকবি। সকালে তোর আব্বুকে কে যেন ফোন দিয়ে বলল তোকে দেখতে আসবে। যদি পছন্দ হয় একবারেই আংটি পরিয়ে যাবে।

অধরাঃ মা অসম্ভব। আমি কাউকে বিয়ে করবো না। আমি শুধু বিল্লুকে চাই।

মাঃ অধরা তোর বাবার বয়স হয়েছে। আমার শরীরটাও খারাপ। একবার আমাদের কথা ভাব দোহাই লাগে তোর৷ তোর বাবা খুব খুশী। একবার বাইরে গিয়ে দেখ আমি অসুস্থ তাই নিজেই সব ঘুছাচ্ছে। বাবা-মা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। তারা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না। ছেলে পক্ষ আসুক।তারা তোকে দেখুক। আমরাও তো দেখবো। পছন্দ না হলে না করে দিব। কিন্তু তুই আর না করিস না। তোর বাবাটা অনেক কষ্ট পাবে।

অধরার চোখে পানি। ঠাস করে বিছানায় বসে পড়ে। সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগছে ওর। অধরার মা ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

মাঃ তোর বিল্লুকে যদি তুই সত্যিই ভালবেসে থাকিস দেখবি যাকে বিয়ে করবি তার মাঝে তোর বিল্লুকে খুঁজে পেয়েছিস। দেখিস তুই অবশ্যই পাবি। আর না করিস না।

অধরাঃ তোমাদের যা ভালো মনে হয় করো। আমার এমনিই সব শেষ। আমার কোন ইচ্ছাই কখনো পূরণ হয়না। আল্লাহ বোধহয় আমাকে ভালবাসে না।

মাঃ তোদের বয়সটাই এমন। হাজার ভালো থাকলেও খারাপ থাকাটাকে প্রাধান্য দিস। তোর হয়তো মনে হচ্ছে তোর সাথে খারাপ হচ্ছে। কিন্তু এই খারাপ হওয়াও তো একদিন ভালো হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ সব পারে। তার ওপর বিশ্বাস রাখ। তিনি তোকে খুব শিগগিরই অনেক খুশী করবেন। বাবা-মা হলো তার একটা মাধ্যম। তিনি আমাদের মাধ্যমে সন্তানকে বাচিঁয়ে রাখেন খুশী করেন। বুঝলি?

অধরা মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

অধরাঃ বিল্লুটাকে আর পাওয়া হলো না।

মাঃ সবই হবে একদিন। অপেক্ষা কর৷ এখন ফ্রেশ হয়ে নিজেকে গুছিয়ে নে। আমি রান্না…

বাবাঃ বাহ! মা আর মেয়ের তো ভালোই ভালবাসা হচ্ছে। ভালো ভালো। এরকম আরেকটা মা পাবি তুই অধরা। দেখিস কত্তো ভালবাসবে তোকে। কিন্তু আমরা আরেকটা মেয়ে পাবো কই অধরার মা?

অধরা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তিনজনই কাঁদছে। সবারই এক কষ্ট, হারানোর কষ্ট।

সন্ধ্যা ৭.২৩ মিনিট,

অধরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে একবার দেখে নিচ্ছে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। কারণ রুমের শক্ত দেয়ালের ওপারে কজন মানুষ অপেক্ষা করছে ওকে দেখবে বলে। অধরা জানে, তাদের অবশ্যই ওকে পছন্দ হবে। হয়তো এটাই শেষ ওর আয়নার সামনে দাঁড়ানো। এরপর আর সময় হবে না। অধরা নীল শাড়ী, হালকা মেকাপ আর চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষা শুধু তাদের সামনে যাওয়ার। গতরাতে কথা খুব মনে পড়ছে। রিফাতকে অনেক যাতা বলেছে। তার জন্য খারাপও লাগছে। আবার রিফাত যা করেছে তার জন্যও খারাপ লাগছে। অন্যদিকে অধরার ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে ওর ছোটবেলার বন্ধু বিল্লুর জন্য৷

মাঃ চল মা। চা’টা সবাইকে দিবি। সালাম দিস ভালো করে। ছেলেটা খুব সুন্দর আর ভদ্র। আমাদের কিন্তু পছন্দ হয়েছে। এবার বাকিটা তোর আর তাদের হাতে। আয়।

অধরা কিছু বলেনা। চায়ের ট্রে টা নিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে আস্তে করে নিচে তাকানো অবস্থায় সবাইকে সালাম দেয়।

অধরাঃ আসসালামু আলাইকুম।

ছেলের বাবা-মাঃ অলাইকুম আসসালাম।

ছেলের মাঃ বাহ! দেখেছো, ছেলেটার পছন্দ আছে বলতে হবে।

ছেলের বাবাঃ কার ছেলে দেখতে হবে না।

অধরা কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে। পাশাপাশি মাথায় অন্য কথা ঘুরছে। তাদের ছেলে পছন্দ করেছে মানে! ছেলে কি আগেই ওকে দেখেছে? অধরা ভাবতে ভাবতে ছেলের মাকে আর বাবাকে চা দেয়। তারা চা গ্রহণ করে খুশী হয়। ঠিক এরপর যখন অধরা ছেলেকে চা দিতে গিয়ে তার দিয়ে তাকায়, অধরা যেন ৫১২ ভোল্টেজের সক খায়।

অধরাঃ আপনি! (আস্তে করে)

রিফাত অধরার হাত থেকে দ্রুত চা’টা নিয়ে চুমুক দেয়৷ অধরা ট্রে টা রেখে অবাক হয়ে রিফাতের পাশেই বসে নিয়ম অনুযায়ী। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। অধরা আবার রিফাতের দিকে তাকায়৷ রিফাত মন মতো যা খাচ্ছে।

ছেলের মাঃ মা তুমি সব রান্নাবান্না পারো? আমাদের খুব ইচ্ছা বউয়ের হাতের রান্না খাবো।

অধরাঃ জ্বী পারি।

ছেলের বাবাঃ মাশাল্লাহ।

ছেলের মাঃ মাঝে মাঝে রান্না করে খাওয়াবে আমাদের। আমাদের বাসার রান্না করার লোক, কাজ করার লোক সব আছে। তোমার কাজ শুধু একটাই আমার ছেলেটাকে দেখে রাখবা। আর কিছুই চাইনা তোমার কাছে।

ছেলের বাবাঃ তাহলে বেয়াই সাব মেয়েতো আমাদের পছন্দ। শুভ কাজে দেরী কিসের। ওরা আংটি টা পরিয়ে ফেলুক কি বলেন?

অধরার বাবাঃ অধরা মা ছেলে তোর পছন্দ হয়েছে তো? কোন সমস্যা নেই তো? তুই যা বলবি তাই হবে।

অধরা ওর বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর বাবার চোখ উজ্জ্বল হয়ে আছে। ও না বলে সেই উজ্জ্বলতা হারাতে চায় না। অধরা ভাবে, “রিফাতের পরিবার এবং রিফাত দুজনই ভালো। আর রিফাততো আমাকে স্পর্শ করেছেই। তাই আর না বলে লাভ নেই।বাস্তবতাকেই মেনে নি।” অধরা আস্তে বলে,

অধরাঃ কোন সমস্যা নেই।

রিফাত অবাক হওয়ার পাশাপাশি অনেক খুশী হয়। ও ভেবেছিলো অধরা শেষ মুহূর্তে এসে না করবে। কিন্তু এটা প্রমাণিত হলো অধরা ওর বাবা-মাকে অনেক ভালবাসে। এরপর যথারীতি ওদের আংটি পরানো হয়ে গেল। পরশুদিন ওদের বিয়ে ঠিক হলো। রিফাতের বাবা বলেন,

বাবাঃ বেয়াই সাব, আমাদের শুধু আপনার ফুলের মতো মেয়েটাকে চাই। সাথে আর কিচ্ছু লাগবে না। আপনি কোন চিন্তাই করবেন না। নিশ্চিন্তে মেয়েকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েন।

অধরার বাবা অধরার মায়ের দিকে তাকিয়ে ইমোশনাল হয়ে পড়ে। অধরার মাও। অধরা তাকিয়ে দেখছে সব। ওর বাবা মা আজ অনেক খুশী। সবাই চলে যাওয়ার সময় অধরার বাবা রিফাতকে জড়িয়ে ধরে। আর কি কি যেন বলে। অধরা আড়ালে দাঁড়িয়ে তা দেখে৷ ও বুঝে না কিছু। সব কিছু কেমন যেন নীরবে হয়ে গেল। সবাই চলে যায়। অধরার বাবা-মা অসম্ভব খুশী রিফাতের মতো একটা জামাইকে পেয়ে।

অন্যদিকে অধরা বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এতোদিনের জমিয়ে রাখা ভালবাসাগুলো বাবা-মার খুশীর কাছে বিসর্জন দিয়ে কিঞ্চিৎ হাসি ঠোঁটের কোণায় এনে বিষের মতো কষ্টগুলোকে সহ্য করে যাচ্ছে। এভাবেই বুঝি ভালবাসা হেরে যায়। বিল্লুর শেষ স্মৃতি ওর দেওয়া ছোট টেডিবিয়ারটাকে আঁকড়ে ধরে শেষ কান্না কেঁদে নেয় অধরা। হঠাৎই ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। অধরা ম্যাসেজটা খুলে দেখে তাতে লিখা,

– “আমি ঠিক চিনতে পারলেও তুমি আজও পারো নি। কষ্টটা এখানেই। আসছি আমি।”

অধরার কাছে আজকের ম্যাসেজটা মূল্যহীন লাগে। কোন মূল্য নেই এই ম্যাসেজ এর৷ কিছু ভাবতেও চায়না ও। সব শেষ।

বিয়ের দিন,

খুব ধুমধাম করে অনেক লোকের সমাগমে রিফাত আর অধরার বিয়ে হয়। রিফাত পুরোটা সময় অধরার দিকে তাকিয়ে ছিল। অধরাকে পরীর মতো করে সাজিয়েছে ও। অসম্ভব খুশী রিফাত আজ। ও ওর সেই পুরনো বান্ধবী অধরাকে একদম নিজের করে পেয়েছে। রিফাত কেন অধরাকে বলছে না ওই সেই ওর বিল্লু? কারণ রিফাত দেখতে চায় অধরা কি করে বাসর রাতে। আরে বউকে একটু না জ্বালালে হয়। এরপরে তো সারাজীবন বউ জ্বালাবে৷ বিয়ের আগ পর্যন্ত না হয় ওই একটু জ্বালাক। বিয়ে শেষ।

অধরা রিফাতের রুমে বধূ সাজে বসে আছে। ওর এসব কিছুই ভালো লাগছে না। শুধু ওর বিল্লুর কথা মনে পড়ছে। রিফাতের আবিরের সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে অধরার কাছে যায়। অধরা আস্তে করে সালাম দেয়। সেদিন রাতের পর আজ প্রথম ওদের কথা হচ্ছে। রিফাত সালামের উত্তর দিয়ে অধরার সামনে বসে। আর বলে,

রিফাতঃ আমাকে রাগ করাইছিলা না? অনেক উল্টো পাল্টো বলছিলা। কি জানি বলছিলা হ্যাঁ মনে পড়ছে। বিল্লু চিল্লুরে ভালবাসি আমি। কই গেল তোমার ভালবাসা?

অধরা নিজেই ঘোমটা সরিয়ে খুব রাগি ভাবে রিফাতের কলার ধরে চোখ বড় বড় করে বলে,

অধরাঃ আমার বিল্লুর সম্পর্কে একটা আজেবাজে কথা বলবেন না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

রিফাতের খুব মজা লাগছে অধরাকে এভাবে দেখে। ও আরও অধরাকে চেতানোর জন্য মজা করে বলে,

রিফাতঃ কি করবা হ্যাঁ? তোমার বিল্লু দেখো যাইয়া বিল্লির সাথে বিয়া করে এভাবে বসে আছে।

অধরাঃ করলে করুক৷ আপনার কি?

রিফাতঃ তোমার বিল্লুকে গুল্লি মারি। হাহা।

অধরাঃ তবেরে ব্যাটা। তুই আমার বিল্লুরে গুল্লি মারবি। দাঁড়া আজ তোর খবর আছে। ওইদিন আমার সাথে খুব খারাপ করছস। আজ তোর খবর আছে।

রিফাতঃ ছেড়ে দে বিল্লি ছেড়ে দে আমায়। বাঁচাও বাঁচাও। কে কোথায় আছো আমাকে বাঁচাও। বিল্লি তার বিল্লুকে মারছে। বাঁচাও।

অধরা রিফাতের উপর উঠে ওকে মারতে নিয়েছিল। কিন্তু রিফাতের ফানি কথা শুনে ওর কেন জানি হাসি পায়না। ও কেঁদে দেয়। রিফাতের উপর থেকে নেমে পাশে বসে কাঁদে। রিফাতের খুব খারাপ লাগে। আর না। রিফাত উঠে অধরাকে রেখে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অধরার ফোনে আরেকটি ম্যাসেজ আসে। অধরা কান্না করতে করতে ম্যাসেজটা ওপেন করে। তাতে লিখা,

– “বিল্লি তুই তোর বিল্লুকে বিয়ে করেও কাঁদছিস? আর তোর বিল্লু তোকে দেখে দেখে রোজ কাঁদতো। টেবিলের উপর মানিব্যাগটা খুলে দেখ। তুই আজও আমায় চিনলি নারে অধরা।”

অধরা দ্রুত লাফিয়ে রিফাতের মানিব্যাগটা খুলে দেখে ওর পনেরো বছর আগের সেই ছবি। রিফাত খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছে। অধরা রিফাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,

অধরাঃ বিল্লুউউউ….

রিফাত অধরার দিকে ঘুরে তাকায়। অধরা বিছানা ছেড়ে দৌঁড়ে রিফাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। অধরা কাঁদছে সাথে রিফাতও। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। রিফাত কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে উঠে,

রিফাতঃ একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে? খুব ইচ্ছা হচ্ছে।

অধরা রিফাতের বুকের সাথে মিশে যায় মুহূর্তেই। অধরা অঝোরে কাঁদছে। কিন্তু খুব শান্তি পাচ্ছে ও। রিফাত অধরাকে নিয়ে বেডে আসে। অধরা রিফাতের কোলে বসে। রিফাতের গলা জড়িয়ে ধরে ওকে দেখছে ও মন ভরে। যেন কত বছর পর আবার আজ দেখলো। অধরা বলে উঠে,

অধরাঃ তুমি বাবা-মাকে সব বলেছো তাই না? তাই তারা হঠাৎ করে আমাকে বিয়ে দিয়েছে। সব তোমার প্ল্যান ছিল?

রিফাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। অধরার মুখে আস্তে আস্তে হাসি ফুটে। ও রিফাতকে অবাক করে দিয়ে ঠাস করে রিফাতের উপর ঝাপিয়ে পড়ে রিফাতের উপর উঠে বসে৷ একদম ওর মুখের কাছে মুখ এনে অধরা বলে,

অধরাঃ এতদিন কষ্ট দিতে পারলা তুমি আমাকে? কতোটা ভালবাসিইই তোমাকে জানো? কীভাবে পারলা?

রিফাতঃ এতো এতো হিন্ট দিসি যে আমি তোমার বিল্লু। বাট তুমি চিনো নাই। কষ্ট তুমি আমাকে দিসো আমি না।(দুঃখী ভাবে)

অধরাঃ তুমি কষ্ট পাইসো না? নিজেতো কিস টিস দিয়ে একদম পাগল করে ফেলছো। তার কি হবে? (লজ্জাসিক্ত হয়ে)

রিফাতঃ তাহলে আসো এখন আবার তোমাকে পাগল করে দি। হিহি।

রিফাত ওর বাহুডোরে অধরাকে জড়িয়ে ওর গোলাপি নেশাকাতর মিষ্টি ঠোঁটটাকে একদম নিজের করে দেয়। এবার অধরাও তার বিল্লুকে পেয়ে পরম সুখে হারিয়ে যায়। দুজনের সত্যিকারের ভালবাসার মায়াজালে ওদের সব দূরত্ব আজ শেষ হয়ে যায়। মিশে যায় ওরা একে অপরের মাঝে। আর সে সাথে পূর্ণতা পায় ওদের পুরনো ভালবাসা।

– সমাপ্ত।

পুরো গল্পটি কেমন লেগেছে আপনাদের তা জানবেন কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের মূল্যবান মন্তব্যের আশায়। ধন্যবাদ সবাইকে এতোটা সময় ধরে সাথে থাকার জন্য। সামনেও থাকবেন আশা করি। আর,

বাসায় থাকুন-আল্লাহর ইবাদত করুন-সবার জন্য দোয়া করুন।

© আবির খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ