Monday, October 6, 2025







তোকে চাই❤(সিজন-২)part: 59+60

তোকে চাই❤(সিজন-২)part: 59+60
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

?
— রোদ! রোদ চুপ করে দাঁড়াও। দাঁড়াচ্ছো কেন রে বাবা। এবার কিন্তু রাগ লাগছে আমার। দাঁড়াও বলছি।
— আমি তো দাঁড়াতে পারছি না৷ পা গুলো দৌঁড়াচ্ছে। আমি দৌঁড়াচ্ছি না।
— হোয়াট! বাচ্চামোরও একটা লিমিট আছে রোদ। বিয়ার খেয়েছো বলে দুই বছরের বাচ্চার মতো বিহেভ করবা তা তো হতে পারে না। চুপচাপ বিছানায় এসে বসো আর শরবত টুকু খাও। এখনও বাচ্চার বাপ হলাম না কিন্তু ধিঙ্গি একটা বাচ্চা সামলাতে হচ্ছে। ইয়া মা’ বুদ রক্ষা করো!
এবার কান্না পেয়ে গেলো আমার। আমার মনে হচ্ছে আমি থামতে পারছি না। পা’ দুটো অটোমেটিক দৌঁড়াচ্ছে। আচ্ছা? পা দুটো দৌঁড়ে দৌঁড়ে যদি মঙ্গল গ্রহে চলে যায় তখন? আমি পা কোথায় পাবো?
— শুভভভভ্র বাঁচাও…আমার পাগুলো চলে যাচ্ছে। ধরো ওদের….( কাঁদো কাঁদো গলায়)
— হোয়াট! কি সব আজগুবি কথা বলছো তুমি? চুপচাপ দাঁড়াও নয়তো কানের নিচে মারবো এক চড়।
কথাটা বলে এক লাফে সোফা ডিঙিয়ে আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলেন উনি। পাঁজাকোলা করে বিছানায় নিয়ে বসালেন। শরবতের গ্লাসটা হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন,
— খাও!
— এটা কি? কেনো খাবো?
— আমি বলেছি তাই খাবে। চুপচাপ খাও।
আমি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গ্লাসটির দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর মুখে বলে উঠলাম,
— নাহ্ এটা ভালো দেখা যায় না। এটা খাবো না। আপনার গালগুলো ভালো দেখা যায়। আমি গাল খাবো।
— কিহ! পাগল হইছো তুমি? চড়াই দাঁত ফেলে দিবো। চুপচাপ শরবত খাও বলছি। হয়রান লাগে না তোমার? বিরক্ত করে ফেলছো তুমি। দুই ঘন্টা ধরে নিজেও দৌঁড়াচ্ছো আর আমাকেও দৌঁড় করাচ্ছো। শাড়িতে পা বেজে তিনবার ফ্লোরে পড়েছো। পা ছড়িয়ে কেঁদে কেটে আবার দৌঁড়, এসব কি? তুমি বাচ্চা নও। অনেক হয়েছে এবার আমি যা বলবো তাই হবে। শরবত খাও….
— নননননননা… আমি গাল খাবো। খাবোই খাবো।
— আল্লাহ! আমাকে ধৈর্য দাও, প্লিজ! (একটা জোড়ে শ্বাস নিয়ে) ওকেহ্ রোদ সোনা। তুমি গাল খাবে তাই তো?
উনার প্রশ্নের উত্তরে তুমুল গতিতে মাথা নাড়লাম আমি।যার অর্থ “হ্যা,খাবো!”
— আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে গাল খেতে দিবো তার আগে এই শরবতটুকু খেতে হবে তোমায়।
— খেতেই হবে?(করুণ চোখে)
— হুম! খেতেই হবে। নাও খাও।
— আচ্ছা।
কথাটা বলেই গ্লাসটা নিয়ে খানিকটা শরবত মুখে নিয়ে মুখ কুঁচকে বলে উঠলাম,
— এটা পঁচা লাগে।
— পঁচা লাগে না তো। খুব ভালো লাগে। সম্পূর্ণ খাও এটা অনেক মজা।
আমি উনার দিকে মুখ ফুলিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই শরবতটুকু খেয়ে নিলাম। উনি আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে উঠলেন,
— গুড গার্ল! বমি পাচ্ছে?
আমি তুমুল গতিতে মাথা নাড়িয়ে জানালাম , “হ্যা পাচ্ছে।” উনি আমায় কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে ভেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বললেন,
— বমি করো।
উনি বলার আগেই বমি করে ভেসিন ভাসালাম আমি। দু’বার বমি করার পর ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলাম,
— ওটা পঁচা ছিলো।
— না রোদপাখি। ওটা পঁচা ছিলো না। এর আগে যেটা খেয়েছো ওটা পঁচা ছিলো।
কথাটা বলে টেনে ভেসিনের সামনে থেকে সরিয়ে নিলেন আমায়। ভেসিনটা পরিষ্কার করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। শাড়িটা খুলে পাশে রেখে ভালো করে হাতে মুখ ধুয়ে দিলেন উনি। আমি সম্পূর্ণটা সময় গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম মাত্র। হাত-মুখটা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে আমাকে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নিতেই হাত দিয়ে শাড়িটা ইশারা করে বলে উঠলাম,
— ওটা আমার শাড়ি।
— হুম ওটা তোমার শাড়ি। এবার রুমে চলো।
— কিন্তু ওটা তো আমার শাড়ি।
— হ্যা ওটা তোমারই শাড়ি। কেউ নিবেনা তোমার শাড়ি। এখানে থাকুক। পরে নিয়ে যাবো।
কথাটা বলে একমুহূর্ত দাঁড়ালেন না উনি। আমাকে কোলে নিয়ে রুমে গিয়ে সোজা শুইয়ে দিলেন বিছানায়। এসির টেম্পারেচার ফুল করে আমার উপর কম্বল টেনে দিলেন উনি। নিজেও কম্বলের নিচে ঢুকে আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
— এখন চুপচাপ ঘুমাও তো। একদম বাচ্চামো করবে না।
আমি উনার কথাকে পাত্তা না দিয়ে উনার পাঞ্জাবীর কলার টেনে অবাক চোখে বলে উঠলাম,
— এটা কি পড়েছেন?
— পাঞ্জাবি পড়েছি, রোদপাখি।
— আমিও পড়বো।
— আশ্চর্য! তুমি কেন পড়বে? এটা মেয়েরা পড়ে না সোনা। ঘুমাও!
— না! আমি এটা পড়ে ঘুমাবো। নয়তো ঘুমাবো না। খুলুন,, এটা আমার।
উনি বাধ্য হয়ে পাঞ্জাবি খুলে আমাকে পড়িয়ে দিলেন। পাঞ্জাবি পেয়ে আমি মহাখুশি। খুশি হয়ে দৌঁড়ে বিছানা থেকে নামতে গেলেই বিছানার সাথে চেপে ধরলেন আমায়। চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন,
— উঠার চেষ্টা করলেই মাইর। এখন আমরা ঘুমাবো। ঘুমানোর সময় নো দৌঁড়াদৌঁড়ি। ওকে?
— এখন কি রাত?
— হুম এখন রাত৷
আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে হাত দিয়ে জানালা ইশারা করে বললাম,
— তাহলে ওখানে আলো কেন?
— ওখানে লাইট জ্বালানো তাই আলো।
— ওখানে লাইট জ্বালানো কেন?
— বাইরে তো ভূতেরা থাকে। লাইট অফ করে দিলে ভূতেরা ভয় পাবে তো। তাই লাইট জ্বালানো।
— ভূতেরা ভয় পেয়ে কান্না করে?
শুভ্র এবার চরম বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। হুট করেই নিজের সমস্ত ভর ছেড়ে দিলেন আমার ওপর। কম্বল দিয়ে মাথা পর্যন্ত ঢেকে নিয়ে শ্বাস নেওয়ার সব পদ্ধতিই বিনষ্ট করে ক্ষান্ত হলেন উনি।
ঘুমের মাঝেই বুঝতে পারছি মাথাটা খুব ব্যাথা করছে আমার। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ মেলে তাকালাম। ঘরে লাইট জ্বলছে। আমার পাশে বসেই ল্যাপটবে কিছু একটা করছেন শুভ্র। উনার গায়ে কালো রঙের টি-শার্ট। চুলগুলো হালকা ভেজা।বুঝা যাচ্ছে শাওয়ার নিয়েছেন উনি। আমাকে তাকাতে দেখেই মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন,
— ম্যাডামের ঘুম ভেঙেছে?
— কয়টা বাজে?
— আটটা।
উনার কথায় কপাল কুঁচকে এলো আমার। একঝাঁক প্রশ্নভরা দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠলাম,
— আটটা মানে? সকাল আটটা?
— না। রাত আটটা।
— আজ না চিত্রার গায়ে হলুদ ছিলো? আমি ঘুমোলাম কখন? গায়ে হলুদ কি হয়ে গেছে?
— জি ম্যাম। গায়ে হলুদ আরো তিন ঘন্টা আগে শেষ। তোমার জন্য আমিও এটেন্ট করতে পারি নি। আর আপনি মাত্র একঘন্টা ঘুমিয়েছেন। এতোক্ষণ জেগেই ছিলেন।
— আশ্চর্য! এক ঘন্টা আগে ঘুমোলে আমি চিত্রার হলুদ এটেন্ট করতে পারলাম না কেন?
— কারণ আপনি মাতাল ছিলেন এবং আপনার সাথে আমিও মাতাল ছিলাম। এবার দয়া করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন মহারানী।
শরীরে কম্বল পেঁচিয়ে মাথা ধরে চুপচাপ বসে রইলাম আমি। সারাদিন যা যা করেছি তার সবকিছুই হালকা মাথায় আসছে আমার। চিত্রার হলুদ নিয়ে এতো প্ল্যান ছিলো আর সবটায় ভেস্তে গেলো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আমার। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শুভ্র। ডানহাতে আমার বামহাতটা টেনে নিয়ে বলে উঠলেন,
— থাক মন খারাপ করে না। আমরা চিত্রা-শিশিরের আবার গায়ে হলুদ করবো।
— আমি বাচ্চা নয়। বাচ্চাদের মতো গাঁজাখোরি যুক্তি দিবেন না আমায়।
— একটু আগে তো বাচ্চায় ছিলে। আমাদের মেয়েটা তোমার মতো হলে কি যে হবে আল্লাহ জানে। তবে যায় ছিলে কিউট ছিলে। মদ হারাম না হলে আমি প্রতিদিন তোমায় খাওয়াতাম।এনিওয়ে সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমরাও যাবো। দেখবে মন ভালো লাগবে তোমার।
আমি মন খারাপ করে শরীরে কম্বলটা ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করেই বলে উঠলাম,
— না। আমি যাবো না। মাথা ব্যাথা করছে। ঘুমোবো।
— আরে ফ্রেশ তো হয়ে নাও। আর খাও নি তো কিছু। রোদ? এই রোদ?
শুভ্র ডেকে চলেছেন আর আমি নাক-মুখ ঢেকে চোখ -মুখ খিঁচে শুয়ে আছি। লজ্জায় উনার দিকে তাকানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি আমি। একে তো হলুদের সব এক্সাইটমেন্টে পানি তার ওপর সারাদিনে উনার সাথে কি কি করেছি ভাবতেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। ইশশ! কি লজ্জা!
?
আজ চিত্রার বিয়ে। হুমায়ূন স্যারের একটা উপন্যাস আছে। উপন্যাাটার নামও “আজ চিত্রের বিয়ে”। আগে উপন্যাসটা পড়ার সময় চিত্রাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বলতাম, ” চিতা বাঘ! এই চিতা বাঘ?আজ তোর বিয়ে আমায় তো দাওয়াত দিলি না। আহ কষ্ট! বুকটা চিৎকার করে বলছে সে কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। এই কাজটা তুই করতে পারলি? লুকিয়ে লুকিয়ে বরের সাথে হানিমুন সাড়তে পারলি? কি নির্দয় তুই! ” অবশেষে সেই দিনগুলো শেষ হতে চলেছে। চিত্রার বিয়েটা সত্যি সত্যিই হতে চলেছে। দুপুর ১১ টার দিকে চিত্রাকে পার্লার থেকে মেয়েরা এলো সাজাতে। বিয়ের সাজে চিত্রাকে অপ্সরীর মতো লাগলেও বাদ সাধলো তার চশমা। বিয়ের কনে চশমা পড়ে আছে ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। কিন্তু আমাদের চিত্রা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ! সে চশমা খুলবে না। আমিও কম যাই না। সাথে সাথেই দিলাম এক চড়। চিত্রা অবাক চোখে বলে উঠলো,
— তুই এই বিয়ের দিনেও আমায় মারবি?
— অবশ্যই মারবো। চশমা খোল নয়তো আরো দু’টো খাবি।
চিত্রা মুখ ফুলিয়ে চশমা খুলে রেখে দিলো। আমিও দাঁত কেলিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আজ খয়েরী রঙের একটা ভারি লেহেঙ্গা পড়েছি আমি। আর শুভ্র খয়েরী রঙের শেরওয়ানি। বরকে স্টেজে বসানো হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। আমি ধীর পায়ে হেঁটে শুভ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনি ভার্সিটির স্যারদের সাথে গল্প করছিলেন। স্যাররা আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— আরে রোদেলা যে, কেমন আছো?
— আলহামদুলিল্লাহ, ভালো স্যার। আপনারা কেমন আছেন?( মুচকি হেসে)
— ভালো।
পাশ থেকে পলাশ স্যার বলে উঠলেন,
— তো রোদেলা? আমরা তোমাকে কি বলে ডাকি বলো তো? ভাবি ডাকবো নাকি? শুভ্র স্যারের ওয়াইফ বলে কথা।
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম। শুভ্রও হাসছেন। হঠাৎই সবার চোখ লুকিয়ে উনার পায়ে পাড়া দিলাম আমি। উনি অবাক চোখে তাকালেন। ভাগ্য খারাপ রাহুল স্যারের চোখেও পড়ে গেলো ব্যাপারটা। উনি হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,
— স্যার? চলুন না, আমরা ওদিকে যাই। শুভ্র স্যার আর ভাবিকে একটু একা ছেড়ে দিই। কি বলেন ভাববববি?
এবার আমার অবস্থা ” ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!” লজ্জায় মাথায় উঠাতে পারছি না আমি। উনারা চলে যেতেই ফিসফিস করে বলে উঠলেন শুভ্র,
— এই? তোমার মদের নেশা কাটে নি এখনও?
আমি তার থেকেও ফিসফিস করে বলে উঠলাম,
— আপনি কোন পক্ষ?
আমার কথায় অবাক হলেন শুভ্র। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,
— মানে?
— মানে হলো, আপনি ভার্সিটির স্যার হিসেবে শিশির স্যারের সাইড থেকে এসেছেন? নাকি আমার হাজবেন্ড হিসেবে চিত্রার সাইড থেকে এসেছেন, কোনটা?
— দুটোই। আমাকে দু’জনেই দাওয়াত দিয়েছে। আমি দু’ পক্ষের।
— এটা কোনো কথা? দু’পক্ষের হওয়া যায় না। যেকোনো একটা সিলেক্ট করতে হবে। আপনার কাছে আমার থেকে শিশির স্যার বড় হলো?
— কই থেকে কই যাচ্ছো তুমি?
— এতো কই কই না করে বলুন আপনি কোন পক্ষ?
— আচ্ছা বাবা কনে পক্ষ। এবার বলো কি সমস্যা?
— আমার ওড়নার নিচে তাকান।
— হোয়াট! এই তোমার নেশা নামে নি তাই না?
উনার কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম,
— অলওয়েজ নেগেটিভ ভাবেন কেন? লুচু ছেলে। আমার ওড়নার নিচে আমার হাত। আর হাতের মাঝে শিশির স্যারের জুতো। চুরি করেছি।
— ওহ্ মাই গড। আমার বউ এতো বড় চুর জানা ছিলো না তো। ওখানে এতোগুলোই পাহাড়া দিচ্ছে তারমধ্যে কেমনে পারলা তুমি?
— সেটা আপনাকে না জানলেও চলবে। এই জুতোগুলো ওই তাকের উপর যে ফুলের ঝুড়িটা আছে ওর পেছনে রাখবো। আমি অতটুকু লম্বা নই। আপনি রেখে দিন না প্লিজ।
— আহারে বাচ্চাটা! এজন্য বলি কমপ্লেইন খাও। শুনো না তো।
— আজব তো। আমাকে যদি বিয়ের পরও কমপ্লেইন-ই খেতে হয়। তাহলে আপনার মতো লম্বুকে বিয়ে করেছি কি ঘাস কাটতে?
— হোয়াট? তারমানে তুমি আজকের দিনে আমাকে ব্যবহার করার জন্য বিয়ে করেছো?
— ইশশ! এতো বেশি কথা বলেন কেন আপনি। তুলে দেন না। দেখে ফেলবে তো ওরা।
— আচ্ছা দিচ্ছি। এমনি তুললে দেখে ফেলবে। আগে একটা ওড়না আনো।
— ওড়না দিয়ে কি হবে? (ভ্রু কুঁচকে)
— আরে আনো তো।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে চিত্রার ছোট বোনকে দেখতে পেয়েই দিলাম ডাক। মেয়েটি একটু অস্থির টাইপ। সবসময় একধরনের অস্থিরতায় ভুগে সে। যেন কতো কাজ তার! এবারও তাই হলো একগুচ্ছ অস্থিরতা নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,
— রোদাপু ডেকেছো? কিছু লাগবে? কিছু বলবে?
— হ্যাঁ বলবো। আচ্ছা চৈতি, তোমার কাছে ওড়না হবে? হলে ঝটপট রুম থেকে একটা ওড়না এনে দাও তো।
চৈতি আর কোনো প্রশ্ন না করে ছুঁট লাগালো রুমের দিকে। ওড়না দিয়ে কি করবো তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার মাঝে দেখা গেলো না। কয়েক মিনিটের মাঝেই ফিরে এসে একটা লাল ওড়না ধরিয়ে দিলো শুভ্রর হাতে। শুভ্র ওকে ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। একদম নড়াচড়া বন্ধ। হাত উঁচিয়ে তাক থেকে ফুলের ঝুড়িটা নিয়ে সাইডের কয়েকটা বেত নিজের ইচ্ছেতেই ভেঙে ফেললো সে। আমি আর চৈতি দুজনই অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ঝুড়ির বেশ কিছুটা ভেঙে নিয়ে একটু জোড়েই রাতুল ভাইকে ডাকলেন শুভ্র। বলতে গেলে সবাইকে শুনিয়েই ডাকলেন উনি। রাতুল ভাইয়া পাশে দাঁড়াতেই আগের মতো জোড়েই বলে উঠলো,
— এই রাতুল? এই ওয়েডিং হাউজের ম্যানেজারকে ডাক তো। কিসব কাজ করে এরা? রান্না ঘরে পিঁপড়া পাওয়া যায়। আর এখন এই ঢালাও ভাঙা। সব ফুলই তো পড়ে যাচ্ছে। এদের সার্ভিস এতো খারাপ কেনো?
শুভ্রর কথায় ছেলেপক্ষরাও ঘুরে তাকালো। ম্যানেজার ছুটে এসে বললো,
— সরি স্যার! এমনটা আর হবে না। আই থিংক কোনো স্টাফের ভুল ছিলো এটা।
— ইটস ওকে।ওদিকটার ডেকোরেশন দেখুন। এই ঢালিটা আপাতত এই ওড়না দিয়ে বেঁধে দিচ্ছি ফুলগুলো আর পড়বে না। দয়া করে দেখবেন ঢালিটা যেন কেউ নাড়া চাড়া না করে। এই ফুলগুলো বাসরের জন্য আনা হয়েছে। এটুকু তো পারবেন মিষ্টার?
— ইয়েস স্যার। অবশ্যই।
ম্যানেজার আর শুভ্রর কথায় সবাই আবারও যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ম্যানেজারও চললো অন্যদিকে। শুভ্র খুব মনোযোগ দিয়ে ঢালায় ওড়না পেঁচালেন। তারপর ঘুরে ঢালাটা উপরে রাখার আগে আমার হাত থেকে হুট করে জুতো জুড়ো নিয়ে ওড়নার ভাজের মাঝে ঢুকিয়ে দিলেন। যেদিকটায় জুতো রাখা হয়েছে সেদিকটা দেয়ালের দিকে মুখ করে রেখে দিলেন। আমি আর চৈতি শুধু চোখ বড় বড় করে দেখেই গেলাম। ঢালাটা রেখে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চৈতীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে উঠলেন উনি,
— শালিকা নাম্বার ২। মুখ অফ।
চৈতি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললাম,
— এতো কাহিনী করলেন কেন?
— তোমার জুতো সেইভ রাখতে। এমনি রাখলে ওরা চেইক করতোই। তাই সবাইকে জানিয়ে শুনিয়েই রাখলাম। সবাই জানবে ঢালিতে সমস্যা। ম্যানেজারও ওটা ধরতে দিবে না। তারপরও যদি চেইক করে তাহলে ঢালির ভেতরে ফুলের মাঝেই দেখবে। ওড়নায় পেঁচানো আছে কি না সেটা ভাববে না।
কথাটা বলেই রোহুন ভাইয়াদের দিকে এগিয়ে গেলেন উনি।৷ আমি সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। মাথায় কি বুদ্ধি রে বাবা। আজ মনে হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে বিয়ে করছি। কি কূটনীতি রে বাবা!
#চলবে…..
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 60
?
শুভ্র বিছানায় বসে ফোন গুতাচ্ছেন। আর আমি তার ঠিক সামনে দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। শুভ্র এ পর্যন্ত দু’বার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েছেন কিন্তু তাতে আমার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় নি বললেই চলে। শুভ্র এবার ফোনটা পাশে রেখে আমার দিকে তাকালেন। ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলেন,
— কি? ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
উনি কথাটা বলার সাথে সাথেই একরকম লাফিয়ে গিয়ে উনার গা ঘেষে বসে পড়লাম আমি। আমার কাজে উনি চরম অবাক। কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে হালকা কেশে কিছুটা সরে বসলেন উনি। আমি আবারও উনার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। উনি এবার সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকালেন। আরেকটু সরে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন,
— এই তুমি আবার বিয়ার খেয়েছো?
— আজব? বিয়ার খেতে যাবো কেন? আর আপনিই বা এমন বিহেভ করছেন কেন?
— এই প্রশ্নটা আমার করা উচিত। এমন বিহেভ করছো কেন? বিয়ার খাওয়া ছাড়া তো আমার প্রতি তোমার এতো দয়া হওয়া পসিবল না। টেনেও তো পাশে বসানো যায় না আবার ভালোবাসা। তাই আজ যেহেতু এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছো নিশ্চয় কাহিনি আছে। যদি বিয়ার খেয়ে থাকো তো আমার থেকে দূরে থাকো। মাতাল হলে তোমার ভালোবাসা একটু বেশিই বেড়ে যায়। নিজেকে তখন অসহায় মোরগ মনে হয়। টোটাল এগ্রেসিব রোদ….প্লিজ দূরে…
কথাটা বলে আরেকটু দূরে সরে বসলেন উনি। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ চুপচাপ উনার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলাম,
— একটু পর চিত্রার বাসর।
উনি অবাক চোখে কিছুক্ষণ আমায় দেখে নিয়ে বলে উঠলেন,
— তো? তুৃমিও বাসর করতে ইচ্ছুক নাকি? হলে বলো….সাজিয়ে দিই রুম। আমার কিন্তু কোনো প্রবলেম নেই। আই এম অলওয়েজ রেডি।
— ধেৎ! অলওয়েজ ফালতু কথা বলবেন না। আমি বাসর করতে চাচ্ছি না। হেল্প চাচ্ছি।
এবার যেনো আরো অবাক হলেন উনি। চোখ কপালে তুলে বলে উঠলেন,
— কিসের হেল্প?
আমি আবারও উনার পাশে গিয়ে বসলাম। ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলাম,
— এতো সহজে বাসর হয়ে যাবে? জ্বালাবো না? সেই কতো বছর থেকে প্ল্যানিং করে আসছি চিত্রার বাসরে এভাবে ডিস্টার্ব করবো,ওভাবে ডিস্টার্ব করবো বাট….এখন কিছুই মাথায় আসছে না। ভাল্লাগে না….
— আহারে। তো আমাকে কি করতে বলো? আমি দুলাভাই হয়ে তো শালিকার বাসরে ডিস্টার্ব করতে পারি না রোদপাখি। যা করার তুমিই করো।(ভাব নিয়ে)
— আপনি হেল্প করবেন না?
— উহুম।
— সিউর তো?
— হ্যাঁ।
— ওকে দেন। করতে হবে না আপনাকে হেল্প। আমাকে হেল্প করবেন কেন আপনি? আপনি তো হেল্প করবেন আপনার শ্রেয়া বেপিকে তাই না??আর কে কে যেনো আছে? হেল্প করার মানুষের অভাব নেই তো আপনার। ভার্সিটি স্টুডেন্টরাও তো এখন ইনিয়ে বিনিয়ে প্রোপোজাল দেয়। বাচ্চা বাচ্চা কচি কচি মেয়ে… আহা! তাদের রেখে আমাকে হেল্প করতে যাবেন কেন? কি মনে করেন বুঝি না আমি? সব বুঝি।
কথাটা বলে মুখ ফুলিয়ে ওঠে যেতে নিতেই টেনে কোলে বসিয়ে নিলেন উনি। আমার মুখ তখন অমাবস্যার রাতের মতো কালো। আর উনার মুখে মিষ্টি হাসি। আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলেন উনি,
— আপনি এতো বুঝেন,জানায় ছিলো না আমার। তো? আর কি কি বুঝেন?
আমি কিছু বললাম না। মুখ ভার করে বসে রইলাম। এবার উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। আমার ঠোঁটে হালকা ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে উঠলেন,
— এই ঠোঁটে হাসি ফুটানোর জন্য কি করতে পারি ম্যাডাম?
এবারও চুপ করে রইলাম আমি। মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বসে রইলাম চুপচাপ। আমাকে চুপ থাকতে দেখে ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে কাঁধে একটা কামড় দিয়ে বলে উঠলেন,
— আচ্ছা মহারানী, আপনার আদেশই শিরধার্য তবু একটু হেসে এই অধমকে ধন্য করুন।
আমি এবার উনার দিকে তাকালাম। চোখে চোখ পড়তেই মুচকি হেসে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি শক্ত করে কোমর চেপে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলে উঠলেন,
— থেংকিউ মহারানি।
চিত্রার বাসর ঘরটা সাজানো হয়েছে একদম দক্ষিণের ঘরটাতে। সেদিক থেকে দক্ষিণা বাতাস আসবে এই মতবাদেই সাজানো হয়েছে সেই রুম। এই ওয়েডিং হাউজের বেশির ভাগ রুমগুলোর পাশেই ব্যালকনি আছে কিন্তু সমস্যা হলো ব্যালকনি গুলো এক্সট্রা নয় লম্বালম্বি। অর্থাৎ সব রুমের পাশ দিয়ে একই বারান্দায় চলে গিয়েছে লম্বালম্বি ভাবে। আমি বারান্দার এক কোণে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে জানালার উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছেন শুভ্র। রাত প্রায় বারোটা পনেরো। হালকা জোস্ন্যার আলো চারপাশে। আমাদের দুজনের দৃষ্টিই চিত্রাদের রুমের বারান্দায়। ওখানে দাঁড়িয়ে আছে রোহান ভাই, সাব্বির ভাই, সাকিব -রাতুল ভাই সহ সব। এমনকি শিশির স্যারের ভাই মিসির আলী সরি মিশির আহমেদও আছেন। এতোগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আছে অথচ জায়গাটা একদম নিশ্চুপ। কিছুক্ষণ পর পর কেউ একজন করে খুব জোড়ে কাশি দিয়ে উঠছে। একটানা কয়েক সেকেন্ড কাঁশতে কাঁশতে আবারও নিশ্চুপ হয়ে লুকিয়ে পড়ছে সব। কয়েক মিনিট পর অন্য আরেকজন গিয়ে শুরু করছে সেই বিখ্যাত কাঁশি আর এসব দেখে বাকিগুলো হাসতে হাসতে কাহিল। শিশির স্যার এই পর্যন্ত দু’বার দরজা খুলে চেক করেছেন কেউ আছে কি না। কিন্তু বেচারা! কাউকেই চোখ পড়ে নি তার। সাকিব ভাই আর রাতুল ভাইয়ের উৎসাহই বেশি। কাশতে কাশতে যেন এখনই রক্তবমি করে দিবেন এমন অবস্থা করে লুকিয়ে পড়েন ব্যালকনির বাইরের ভারতি ওই অংশটুকুতে। কি ভয়াবহ অবস্থা। শুভ্রর মাথায় এমন সব প্ল্যান কোথা থেকে আসে কে জানে? আজ বেচারা শিশির-চিত্রা কাশি বিড়ম্বনায় ক্লান্ত হয়ে পড়বে নির্ঘাত। রাত প্রায় একটার দিকে সবাইকে কাছে ডেকে বলে উঠলেন শুভ্র,
— বহুত জ্বালাইছিস। এবার রুমে যা। বাকি সময়টা ওদেরকে নিজের মতো থাকতে দে। বাসর বলে কথা। লাইফের সবচেয়ে মেমোরিবেল ডে। এভাবে সম্পূর্ণটায় নষ্ট করে দেওয়া উচিত নয়।
উনার কথা মেনে নিয়ে যার যার রুমে চলে গেলেন সবাই। তবে যেটুকু জ্বালিয়েছে সেটুকু জীবনে ভুলবে বলে মনে হয় না আমার।
রাত ক’টা বাজে জানি না। হঠাৎই শুভ্রর হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। চোখ দুটো পিটপিট করে তাকিয়ে আশেপাশের অবস্থানটা বুঝতে চেষ্টা করে উঠে বসলাম আমি। কম্বলটা ভালো করে পেঁচিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই ল্যাপটপে চোখ পড়লো আমার। শুভ্র ভিডিও কলে কথা বলছিলেন। আমাকে উঠতে দেখে মুচকি হাসলেন উনি। ওপাশ থেকে সাহেল ভাইয়া বলে উঠলেন,
— হেই সানশাইন? কেমন আছো? ওপস্ সরি! ভাবছি এখন থেকে ভাবি ডাকবো। আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেডের একমাত্র বউ বলে কথা। তো ভাবি কেমন আছেন?
আমি হাসলাম। চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে নিয়ে নিয়ে ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে উঠলাম,
— ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?
— আমিও ভালো। শুধু একটা প্রবলেম। এদের ঘাস ভুস খেতে খেতে বাঙালী খাবারের টেষ্ট ভুলে যাচ্ছি। দেশে গিয়ে একটা বাঙালী রাধুনী মেয়ে দেখে বিয়ে করবো বুঝলা? কয়েক মাস শুধু বসে বসে খাবো। একটা পাক্কা রাধুনী মেয়ে খুঁজো তো সানশাইন ভাবি।
উনার কথায় আবারও হাসলাম আমি। হাসিমুখে বলে উঠলাম,
— ওখান থেকেই একটা ধলাসুন্দরী বিয়ে করে আনুন ভাইয়া। পরে নাহয় রান্না শিখিয়ে দিবো।
— আরেহ নাহ। বিয়ে তো আমি দেশী মেয়েকেই করবো। তাও আবার শ্যামবতী। আমি নিজেই যে সাদা আরেক সাদাকে বিয়ে করলে আমার বাচ্চাগুলো সব ফার্মের মুরগীর মতো দেখাবে। তারথেকে দেশী মেয়েই ভালো…
আমি কিছু বলার আগেই শুভ্র কিছু একটা বললেন। তার বিপরীত সাহেল ভাইয়াও কিছু একটা বললেন৷ তারপর শুরু হলো দু’জনের হাসাহাসি। শুধু হাসাহাসি নয়… একে বলে চরম রকম হাসাহাসি। আমি আবালের মতো তাকিয়ে আছি। উনাদের কথার আগামাথাও বুঝতে পারছি না আমি। আমি আর চিত্রাও কোড টাইপ কথা বলি কিন্তু এদের মতো…এভাবে? কখনোই নয়…!!
?
চিত্রার বিয়ে শেষ করে কালই বাসায় ফিরেছি আমরা। বিয়েতে সারাদিন দৌঁড়া দৌঁড়ি লাফালাফিতে পা ব্যাথা কাকে বলে বুঝতে না পারলেও এখন বেশ বুঝতে পারছি। বিকেল ৩ টা বাজে। সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়েছি আজ কিন্তু শুভ্র! সে সকাল সকাল উঠে ভার্সিটিতে চলে গেছেন চুপচাপ। ক্লান্তি জিনিসটা উনার মাঝে নেই বললেই চলে। বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখি মুখে গম্ভীর ভাব নিয়ে বসে আছেন শুভ্র। আমি কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললাম,
— কখন ফিরলেন?
আমার কথায় সটান দাঁড়িয়ে পড়লেন উনি। আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,
— আজ তোমাদের সেমিষ্টার ফাইনাল রেজাল্ট দিয়েছে জানো?
আমি পাত্তা না দিয়ে বললাম,
— হুম লিমা ফোন দিয়ে বলেছিলো সকালে।
উনি আগের থেকেও গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন,
— রেজাল্ট কি?
— ৩.৫৭
— মাত্র! ৪ এর মধ্যে মাত্র ৩ সামথিং? লাইক সিরিয়াসলি? তুমি জানো? প্রত্যেকটা সেমিস্টারে আমার রেজাল্ট ছিলো সিজিপিএ ৪ আর তুমি? অবিশ্বাস্য।
উনার কথায় যেনো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ৩.৫৭ তার কাছে মাত্র? এটা পেয়েই আমি আর চিত্রা যেখানে লুঙ্গি ডান্স করি সেখানে উনি বলছেন মাত্র? আমি থতমত খেয়ে বলে উঠলাম,
— এটা মাত্র?
— তো? মাত্র নয়? ভার্সিটি টিচারের বউ হয়ে এই রেজাল্ট? আমি পলিটিক্স করার পাশাপাশি পড়াশোনা করেও ৪ পেয়ে গেছি আর তুমি তো সারাদিনই বাসায় বসে থাকো। এতো লাফালাফি ঝাঁপাঝাপি না করে একটু পড়াশোনা করলে কি হয় শুনি?
— আমি এতো ভালো রেজাল্ট দিয়ে কি করবো? ৩.৫৭ ই আমার জন্য অনেক। তাছাড়া আপনার মতো বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকতে মোটেও ভালো লাগে না আমার।
— আমি সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকি নি। ফ্রেন্ডদের সাথে ইঞ্জয়, পলিটিক্স সবই করেছি। এক্চুয়েলি মনোযোগ তো থাকতে হবে৷ তোমার মাথায় তো সারাদিন ফাউল ফাউল বুদ্ধি ঘুরে বেড়ায়। মনোযোগ থাকবেটা কিভাবে? তোমার মনোযোগ এক্চুয়েলি কোথায় থাকে সেটাই তো বুঝি না আমি।
সাথে সাথেই দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলাম,
— আমার মনোযোগ তো আপনার কাছে থাকে।
কথাটা উনাকে ডিসট্রেক্ট করার জন্য ছিলো কিন্তু হায় নিয়তি! উনি আরো গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন,
— রোদপাখি? লাভ নেই। আমার দুর্বলতায় আঘাত করে লাভ নেই। আপনার এই প্রেমবান আপাতত নিজের কাছে রাখুন। নেক্সট এক্সামে ৪ না এলে খবর খারাপ হবে তোমার। আজ থেকে লাফ ঝাপ বন্ধ। অফিস থেকে এসে যদি দেখি দৌড়া দৌড়ি করছো বা ঘুমিয়ে গেছো তাহলেই চলবে মাইর। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি টেবিলে খাবার দিতে বলো। যাওয়ার আগে পড়া দেখিয়ে দিয়ে যাবো। চুপচাপ কমপ্লিট করবা সব৷ গো….
কথাটা বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন উনি। আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি। টিচার বিয়ে করার সাইড ইফেক্টটা মাথায়ই ছিলো না আমার। এবার বুঝো ঠেলা। এর থেকে তো আম্মুই ভালো ছিলো। ধেৎ বিয়ে করে লাভটা কি হলো??কথাটা ভেবেই মুখটা কালো হয়ে গেলো আমার। যদিও কালো ভাবটা বেশিক্ষণ থাকলো না যখন মনে হলো চিত্রার বরও টিচার। আহা! কি শান্তি। নিজে একা বাঁশ খেলে যতটা দুঃখ দুঃখ ফিলিংস হয়, বেস্ট ফ্রেন্ডকে নিয়ে বাঁশ খেলে তার থেকেও বেশি সুখ সুখ ফিলিংস হয়। যে সুখটা এখন আমার লাগছে। চিত্রার বিয়েটা শিশির স্যারের সাথে হয়েছে বলে আল্লাহ কে কয়েক লক্ষবার থেংকিউ জানিয়ে, আনন্দে নাঁচতে নাঁচতে নিচে নেমে গেলাম আমি। আর মনের মাঝে কনটিনিউয়াসলি চলছে ,” চিত্রা বেবি! ইউ আর গন।”
#চলবে….?

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ