হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-০৯

0
1187

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_9
#sarika_Islam
,
,
এইদিকে,,অনেক রাত করে হৃদয় বাসায় ফিরল,,ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না,, সেই সকালে বের হয় অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে,ঘরের কারো সাথে কথা বলে না,নিজের মতো করে চলে,,

2 3 দিন পর,,

হৃদয় আবারও আজকে একিই রকম করে দের রাতে বাড়ি ফিরল,,ফিরে ডাইরেক্ট নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল,,তার মা হেনা চৌধুরী হৃদয়ের এই জিনিস গুলো প্রায় অনেক দিন ধরে লক্ষ করছে,,আজও করল,,

সকালে,,,

হেনা চৌধুরী আগে আগে উঠে হৃদয়ের রুমে গেল,,যেন হৃদয় উঠেই চলে যেতে না পারে,,দরজায় নক পরায় হৃদয় উঠে দরজা খুলে দিল,,হেনা চৌধুরীকে দেখে ভিতরে আস্তে দিল,,হেনা চৌধুরী ছেলের দিকে তাকিয়েই রইল,একি হাল করেছে ও?চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে এ যেন কয়েকদিন যাবত না ঘুমানোর দশা,,হেনা চৌধুরী জিজ্ঞেস করল,,

_হৃদয় বাবা কি হয়েছে তোর?এমন দেখাচ্ছে কেন?(হৃদয়ের মাথায় হাত দিয়ে)
_কই নাতো আকি ঠিক আছি,,

বলেই চলে যেতে নিলে হেনা চৌধুরী হৃদয়কে আটকে আবার বলল,,

_দেখ আমি তোর মা, আমি বুঝি কখন আমার ছেলের সুখ কখন দুঃখ,,তো এখন বল বাবা কি হয়েছে,,,

হৃদয়ের হাল কেউ এইভাবে জিজ্ঞেস করায় হৃদয় তো বেচারা কান্নাই করে দিল,,তার মা তার দুঃখ কষ্ট বুঝেছে,,সে তার মাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেদে দিল,,হেনা চৌধুরী ছেলের এভাবে কান্না করায় ঘাবড়ে গেল,, অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল “কি হয়েছে” কিন্তু না হৃদয় সেই আগের ন্যায় মাকে ধরে কান্না করেই চলছে,,হেনা চৌধুরী ছেলেকে বিছানায় বসালো তারপর আদুরে হয়ে জিজ্ঞেস করল,,

_কি হয়েছে বাবা কান্না করছিস কেন?আমাকে বল,,
_মা আমি অন্তরাকে ভালোবাসি,,আমি আর পারছিনা ওকে ছাড়া থাকতে,,(হেচকি তুলতে তুলতে বলল)

“অন্তরাকে ভালোবাসি” এই কথাটা শুনে যেন হেনা চৌধুরী কিছুক্ষনেইর জন্য হাড়িয়ে গেল,সে নেই তার মধ্যে তার ছেলে কি বলল এইটা?সে যা শুনেছে তাকি আদো সত্যি?হেনা চৌধুরী জিজ্ঞেস করল,

_অন্তরাও কি তোকে ভালোবাসে?
_অন্তরার তো কিছুই মনে নেই মা ও আমাকে ভুলে গেছে,ভুলে গেছে মা আমাকে ভুলে গেছে,,

কথা গুলো বলতে হৃদয়ের গলা ধরে আসছিল,,তার চোখ থেকে আবার পানি পরছে,,তার মা হেনা চৌধুরী বলল,,,

_তোর বাবা ডাক্তার সোলাইমানের মেয়ে রিয়াকে তোর সাথে বিয়ে দিবে বলে ঠিক করেছে,, রিয়াও এইবার ডাক্তারি পড়া শেষ করল,,
_নাহ মা আমি অন্তরাকে ছাড়া কারো সাথে বিয়ে করবো না,আমার অন্তরাকেই চাই ওকেই চাই মানি চাই,,

বলেই মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল আর বলে বিড়বিড় করতে লাগল “আমি অন্তরাকেই চাই আমার ওকেই চাই” হেনা চৌধুরী ছেলের পাগলামি দেখে চোখের কোন ভিজে আসলো,,তার ছেলে তো এমন ছিল না,,অন্তরার প্রেম আজ আমার ছেলেকে কোথায় নিয়ে এসেছে,,ঘুম খাবার সব হারাম হয়ে গেছে,,এসব ভেবেই চোখ ভড়ে এলো,,টপ করে ছেলের মুখের উপর এক ফোটা জল পরল,,ছেলের মাথায় হাত বুলাতে লাগল,,হৃদয় গুটিশুটি মেরে তার মায়ের কোলে শুয়ে আছে,,না যানি কতো দিন ধরে ছেলেটা নির্ঘুম,,

হেনা চৌধুরী আস্তে করে ছেলের মাথা নিজের কোল থেকে বালিশে রেখে বাহিরে আসলো,,আর মনে মনে বলতে লাগল,,

_আমার ছেলেকে আমি অন্তরাকেই এনে দিবো,,আমার একটি মাত্র ছেলে আমি কোন মনেই তাকে হারাতে পারবো না,,,আমি বুঝাবো হৃদয়ের বাবাকে,,

ওইদিকে অন্তরা আর জিসান পুকুরের কিনারা ঘেষে ঘুরে বেরাচ্ছে,,বেশ ভাব জমেছে তাদের,,হাটতে হাটতে হঠাৎ জিসান থেমে গেল,,অন্তরা জিসানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো,,,জিসান বলল,,

_অন্তরা আজ আমি তোমাক্ব কিছু বলতে চাই,,
_হুম বলুন,,
_অন্তরা আমি তোমাকে ভালোবাসি,,সেই ছোট বেলা থেকে আমি তোমাকে ভালোবেসে এসেছি,,তোমাকে দেখে রাখি তোমার প্রটেক্ট করে রাখি, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না অন্তরা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তুমি কি রাজি?

অন্তরা চুপচাপ জিসানের চাপা গুলো শুনছিল,,জিসান অতি আগ্রহ নিয়ে অন্তরার দিকে উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছে,,অন্তরা হাল্কা মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেল্ল,,জিসান যেন তার উত্তর পেয়ে গেছে,বিশ্ব জয়ের হাসি দিল,,

পরেরদিন,,

হেনা চৌধুরী অনেক কষ্টে তার স্বামি হাসান চৌধুরীকে মানালো ছেলের খাতির হাসান চৌধরী ও রাজি হয়ে গেল,,তারা তিনজন গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হলো,,

গাড়ি চলছে আপন গতিতে,,হাসান চৌধরী ড্রাইভ করছে তার পাশে তার বউ হেনা চৌধিরী আর হৃদয় পিছের সিটে বসেছে,,যেতে যেতে হঠাৎ হৃদয়ের চোখ পরল নদির পারে বসা অন্তরার দিকে,,জিসান আর অন্তরা বসে আছে খুব ক্লোজ হয়ে,,অন্তরার সাথে অন্য ছেলেকে দেখা মাত্র হৃদয়ের মুহুর্তে যেন মাথা গরম হয়ে গেল,,চোখ লাল হয়ে আছে,,রাগে যিদ্দে শরীর ফেটে যাচ্ছে,,পারছে না কিছু বলতে ভদ্রতার খাতিরে,তাই সে চুপচাপ সিটে বসে আছে আর চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে,,প্রায় কিছুক্ষন পর তারা পৌছে গেল প্রেমতলায়,,

মাদবর সাহেব হঠাৎ হাসান চৌধুরীকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল,,মাদবর সাহেব হাসান চৌধিরীর উদ্দেশ্য বলল,,

_আরে ভাই আপনি আজ হঠাৎ?
_হুম আপনার সাথে জরুরি তলবে এসেছি,

খালেদ মিয়া চিন্তায় পরে গেল তার সাথে আবার জরুরি তলব কি হতে পারে,,তার ভাবনার ছেদ কেটে হাসান চৌধুরী বলল,,

_ভিতরে নিবেন না?

খালেদ মিয়া হাল্কা হেসে ভিতরে ঢুকালো,,সবাই মিলে সোফায় বসল,,হাসান চৌধুরী বলা শুরু করল,,

_আমরা আমাদের ছেলের জন্য আপনার মেয়ে অন্তরাকে নিতে চাই ভাই,,

খালেদ মিয়া যেন এক বড়সড় সক খেল,,আমতা আমতা করে বলল,,

_কি কি বলছেন আপনি?
_হুম ঠিকি বলছি আমার হৃদয়ের জন্য আপনার অন্তরাকে নিতে চাই যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে,,
_আরে নাহ নাহ আমার আবার কিসের আপত্তি থাকবে,আমি খুব খুশি,,

বলেই দুইজন কোলাকুলি করল,,হৃদয়ও খুব খুশি তার মুখে তৃপ্তির হাসি,,হেনা চৌধুরী ছেলের মুখে হাসির ঝলক দেখে খুশি হয়ে গেলেন,,তারপর খালেদ সাহেব আবার বললেন,,

_আমি অন্তরাকে জিজ্ঞেস করতে চাই একবার যদি ও রাজি থাকে,,,,,,

হৃদয় এবার ভড়ক গেল, কারন অন্তিরা তো রাজি হবেনা,, সে উঠে খালেদ মিয়ার পাশে গিয়ে বসে তার হাতে হাত রেখে নরম শুরে বলল,,

_চাচা আপনি না বলেছেন আমি যা চাইবো আমাকে দিবেন?
_হুম বাবা,,
_তাহলে আমি এখন অন্তরাকে চাইছি আমাকে অন্তরা দেন চাচা,,

খালেদ মিয়া হৃদয়ের এভাবে করুন শুরে বলায় খুব মায়া হলো সে বলল,,

_আচ্ছা ঠিক আছে,,,

হৃদয় মুহুর্তে খুশি হয়ে গেল,,সেই সময় অন্তরা মাত্র ঘরে ঢুকলো,,হাসান চৌধুরী আর হেনা চৌধুরীকে দেখে তাদের সামনে গিয়ে তাদের সালাম দিল,,কিছু টুকটাক কথা বলে নিজের রুমেত দিকে চলে গেল,,হৃদয়ের দিকে একটি বারের মতো ফিরেও তাকায়নি,,হৃদয় তো এতক্ষন অন্তরার দিকেই তাকিয়ে ছিল এক ধেনে,,অন্তরা তার দিকে না তাকাতে তার কিছুটা কষ্ট হলো,তারপর কিছু একটা ভেবে আবার খুশি হয়ে গেল,,

দুপুরে সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছে,,অন্তরা আর তার মা সবাইকে বেড়ে দিচ্ছে খাবার,,খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল,,

বিকেলের দিকে অন্তরা তার রুমে বসে আছে,,তার মা তার রুমে ঢুকলো মাকে দেখে মার দিকে তাকালো,,তার মা তার কাছে এসে দারালো,,অন্তরা মাকে এভাবে দাড়াতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো,,তার মা সোজাসাপ্টা ভাবে বলল,,

_রেডি হয়ে নে এখন কাজি আসবে তোর বিয়ে পরাতে,,

অন্তরা যেম আকাশ থেকে পরল,,তার মাথায় বাজ পরল,,একি বলছে তার মা?তার বিয়ে মানে?সে চট করে উঠে দারালো মায়ের মুখোমুখি,,তারপর জিজ্ঞেস করল,,

_কি বলছ তুমি এসব আমার বিয়ে?কার সাথে?
_হৃদয়ের সাথে আর তাও এখন,,

অন্তরা যেন আরো একদফা সক খেল,সে মুহুর্তেই বলে দিল,,

_আমি হৃদয়কে বিয়ে করবো না বেস,,
_বেশি কথা না বলে রেডি হয়ে নে কাজি চলে আসবে,,(বলেই তার হাতে একটি শাড়ি ধরিয়ে দিল)
_আমি বললাম তো আমি বিয়ে করবো না(বলেই শাড়ি ফেল দিল)
_আমরা সবাই রাজি এখন তোর মত নিতে আসিনি,,

বলেই চলে গেল,,অন্তরা তো চিল্লাতে লাগলো সে এই বিয়ে করবে না,,কিন্তু নাহ কেউ তার কথা কানেও নিচ্ছে না,,তার চিল্লাফাল্লা শুনে হৃদয় অন্তরার মাকে বলল,,

_আন্টি আমি অন্তরার সাথে কথা বলতে চাই,,
_ঠিক আছে বাবা যাও,,

হৃদয় অন্তরার রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল,,দরজা লাগানো শব্দে অন্তরা পিছে ফিরে তাকালো দেখলো হৃদয় দারিয়ে আছে,,সে হৃদয়কে দেখে চলে যেতে নিল দরজার পাশে হৃদয় চট করে অন্তরার হাত ধরে ফেলে,,,অন্তরা ঝারা দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নেয়,,এভাবে হাত নেওয়ায় হৃদয়ের খুব রাগ হলো,,তাও সে নিজের রাগকে কান্ট্রল করল,,অন্তরা আবার দরজার লক খুলে যাবে এইবার হৃদয় আর নিজের রাগ কান্ট্রল করতে পারল না,,অন্তরার দুই হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল,,অন্তরা ছারার জন্য ছুটছুটি করছে আর বলছে,,

_আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,,আমি জিসানকে ভালোবাসি ওকেই বিয়ে করবো,,

“জিসানকে ভালোবাসি” অন্তরার মুখ থেকে অন্য কেউকে ভালোবাসি শুনে আরও খেপে গেল হাত আরও চেপে ধরে দাতে দাতে চেপে বলল,,

_তুই আমার আমার কাছেই থাকবি আমাকেই ভালোবাসবি,,এক মুখ দিয়ে শুধু আমাকে ভালোবাসি বলবি যদি অন্য কারো নাম শুনি তাহলে তোর হাল এমন করবো যা ভেবেও পাবি না,,

কথা গুলো বলতে বলতে চোখ গুলো লাল হয়ে গেল,অন্তরা হাতের ব্যাথায় কান্নাই করে দিল,,হৃদয় অন্তরার কান্না দেখে তার হুশ ফিরল, সে তারাতারি অন্তরার হাত ছেরে দিল,,অন্তরা হাত ছাড়া পাওয়ায় হাত ধরে নিচে বসে কান্না করতে লাগল,,হৃদয় অন্তরার কান্না দেখে ঘবড়ে গেল,,সেও নিচে বসে পরল অন্তরার বরাবর,অন্তরাকে নানান জিনিস বলে সান্তনা দিচ্ছে,,

_জান তুমি কান্না কর না দেখ তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না প্লিজ থামো,,

বলেই অন্তরাকে বুকে জরিয়ে নিল,অন্তরা হৃদয়ের বুক থেকে উঠে আস্তে চাইলে হৃদয় অন্তরার মাথা তার বুকে আরো জোরে চেপে ধরে আর বলে,,

_কেন তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকো?আমার বুকের ভিতর অনেক ব্যাথা হয় বিশ্বাস করো আমি বাচবো না তোমাকে ছাড়া,,

অন্তরা আর কিছু বলল না সে চুপ করে রইল,,,

চলবে🖤
(ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে