হৃদয়ের অন্তরা পর্ব-০৬

0
1199

#হৃদয়ের_অন্তরা❤️
#part_6
#sarika_Islam
,
,
হৃদয়ের বুক ধক করে উঠল,,কিছুক্ষন অন্তরার দিকে তাকিয়ে রইল,,তারপর আবেগের বশে “হুম” বলে দিল,, তারপর বলল,,,

_তুমি কিভাবে জানলে?
-আরেএএ আমাকে আন্টি বলেছে,,

“আন্টি বলেছে” কথাটা শুনেই হৃদয়ের টনক নরল তার আম্মু?আম্মু কিভাবে জানল?হৃদয় কিছুটা সজা হয়ে বসল,,অন্তরা আবার বলল,,

_আন্টি বলেছে যে আমাকে আদর করে সেই আমাকে ভালোবাসে তুমিও তো আমাকে অনেক আদর করো,,,

হৃদয়ের ভিতর যেন জান ফিরে আসল এতক্ষনে,,এতক্ষন মনে হচ্ছিল কেউ তার শ্বাস আটকে রেখেছিল,,,, হৃদয় বলল,

_হুম,,
_তাহলে আমাকে ভালোবেসে কিছু দাওওও,

হৃদয় পরল এখন মুস্কিলে তাকে কি দিবে এখন?ভেবে পাচ্ছে না আর অন্তরা চাইতেই আছে,,

_আচ্ছা আসো আমরা একটা সেল্ফি তুলি তারপর এইটা তোমাকে আমি ফ্রেম করে দিব ঠিক আছ?
_হুম হুম ঠিক আছে,,

হৃদয় উঠে তার ফোন নিয়ে অন্তরার কাছে গেল,,ফোন এর কেমেরাটা অন করে অন্তরার সামনে এসে তার ফোনটা ধরল অন্তরা হুট করে হৃদয়কে জরিয়ে ধরল,,,এইভাবে হুট করে ধরায় হৃদয় কিছুটা ভরকে গেল,,পর মুহুর্তে হৃদয়ও তাকে এক হাতে জরিয়ে নেয়,,এইভাবে তারা সেল্ফি তুলে,,অন্তরা বলল,,

_আচ্ছা আমাকে কবে দিবা এইটা?
_আগে এইটা ফ্রেম করে নেই তারপর ঠিক আছে,,
_আচ্ছা,,

হঠাৎ ঝুম করে বাহিরে বৃষ্টি নেমে গেল,,অন্তরা হৃদয়ের রুমের জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখে খুশি হয়ে গেল তারপর কিছুটা লাফিয়ে বলল,,

_ভাইয়া,, চলো না আমরা বৃষ্টিতে ভিজি,,আমার বৃষ্টিবিলাস করতে খুব ভালোলাগে,,চলো না,,
_নাহ তুই রুমে জা আমার কিছু কাজ আছে,,

অন্তরার মুখটা মলিন হয়ে গেল,,সে চুপচাপ মাথা নিভু করে চলে গেল,,হৃদয় তার কাজে আবার মন দিল,,অন্তরা হৃদয়ের রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে গেল সে বৃষ্টিতে আজ ভিজবেই,,অন্তরা একা একা চলে গেল,,,গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল অনেক মজা করে,,লাফাতে লাগল হঠাৎ লাফাতে লাফাতে ঠাসসসসসস করে পরে গেল,,,অন্তরা “আহ” করে উঠল কিছুটা জোরে,,হৃদয় শুনতে পেল অন্তরার চিৎকার, সে একপ্রকার দৌড়ে প্রথমে তার রুমে গেল গিয়ে দেখল অন্তরা নেই,,ভাবতে লাগল অন্তিরা কোথায় হয়ে পারে,,তারপর কান্নার শব্দ আসছে সে কান্নার অনুসরণ করে উপরে গেল,,গিয়ে দেখে অন্তরা নিচে বসে পা ধরে কান্না করছে,,হৃদয় হাতে ছাতা নিয়ে তারাতারি অন্তরার কাছে গেল,,অন্তরাকে আইস্তা করে উঠাল,,অন্তরাকে ছাদের একটি বেঞ্চে বসাল,,তারপর অন্তরা তার পা উপরে তুলে পা ডলছে আর কান্না করছে,,হৃদয় বুজতে পারল অন্তরার পায়ে ব্যাথা পেয়েছে,,সে অন্তরার পায়ের থেকে শাড়ি কিছুটা উপরে তুল্ল,অন্তরার সাদা পা টা এই প্রথম হৃদয় দেখল কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে যখন হৃদয় অন্তরার পায়ে হাত দিয়ে মাসাজ করতে লাগল,এমন সময় অন্তরা হুট করে হৃদয়ের বা হাত নিজের দান হাত দিয়ে চেপে ধরল,,হঠাৎ এভাবে চেপে ধরায় হৃদয় অন্তরার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাল,,

_কি হয়েছে?
_নাহ কেমন জানি গা শিউরে উঠল,,

হৃদয় দ্রুত অন্তরার পায়ের থেকে হাত সরিয়ে নিল,,,তারপর উঠে দাড়াল,,হৃদয় ভাবতে লাগল,,

_হয়ত ইঞ্জেকশন কাজে লেগেছে, ওর অনুভুতি গুলো ও বলতে পারছে,,

এইসব ভেবে আনমনেই হেসে দিল হৃদয়, তাহলে তার অন্তরা সুস্থ হয়ে উঠবে খুব শীগ্রই,,,অন্তরা উঠে হৃদয়ের পাশে দাড়াল,,বলল,,

_হৃদয় ভাইয়া তুমিও ভিজ খুব মজা লাগছে,,

হৃদয় পাশ ফিরে অন্তরার দিকে তাকিয়ে বলল,,

_নাহ চলো এখন অনেক ভিজা হয়েছে ঠান্ডা লেগে যাবে,,

বলেই হৃদয় যেতে নিল হুট করে অন্তরা হৃদয়ের হাত থেকে টান মেরে ছাতা নিয়ে ফেলে দিল,হৃদয় এই কাজ টার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না,,হৃদয় ভিজে গেল প্রায় বেশখানিক এখন সে যেতেও পারবে না ভিজেই তো গেছে,,অন্তরা হৃদয়কে ভিজাতে পেরেছে বলে খুবি খুশি,,লাফাতে লাগল অন্তরা দুই হাত মেলে আকাশের দিকে মুখ তুলে ঘুরতে লাগল,,হৃদয় এতক্ষনে অন্তিরাকে ভালো করে দেখল,,তার পরনে লাল শাড়িটা একদম শরিরের সাথে লেপ্টে গেছে তার শরিরের সব কিছুই বুঝা জাচ্ছে,,হৃদয় লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিল,ছাদের এক কোনে চলে গেল৷ সে আর অন্তরাকে এইভাবে দেখতে পারবে না, হয়ত নিজের ভিতর কন্ট্রল করাটা মুস্কিল হয়ে পরবে,, তাই তার এখন চোখ ফিরানোটাই বেস্ট,,,অনেকক্ষন ভেজার পর হৃদয় বলল,,

_চলো অন্তরা নিচে চলো,,
_নাহ আমি আরও ভিজবো বৃষ্টি শেষ হওয়া পর্যন্ত,,

হৃদয় অনেক করে বলছে কিন্তু অন্তরা তার কথাতেই অটুট,,, হৃদয় আর না পেরে অন্তরাকে কোলে তুলে নিল,,অন্তরা হৃদয়ের কোল থেকে নামার জন্য ছুটছুটি করছে,,

_আমাকে নামাও ভাইয়া আমি ভিজবো,,
_বেশি কথা বললে এখনি ফেলে দিবো,

বলে হাতের বাধন হাল্কা করল,,অন্তরা পরে যেতে নিলে শক্ত করে হৃদয়ের গলা জরিয়ে ধরল,,হৃদয় অন্তরাকে নিচে নিয়ে গেল,,অন্তরার রুমের ওয়াশ্রুমে নিয়ে ছারল,

_এইগুলো চেঞ্জ করে বের হবা তারাতারি,,(ধমকের শুরে)

অন্তরা ধমক খেয়ে ঠোট উল্টে নিল তারপর জোরে দরজা লাগিয়ে দিল,,,হৃদয় ও নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে,,

সন্ধ্যায়,, হৃদয় তার আম্মু আব্বু সবাই মিলে টিভি দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে,,টিভি দেখতে দেখতে হেনা চৌধুরী এক সময় বলে উঠল,,

_অন্তরা কোথায় হৃদয় ওকে তো দেখছি না,
_আমি জানি না,,হয়ত নিজের রুমেই আছে

টিভির দিকে তাকিয়ে বলল,,হেনা চৌধুরীও আর কিছু বলল না,,

রাতে ডিনারের সময়ও অন্তরা আসল না,,হেনা চৌধুরী হৃদয়কে বলল,,

_যাতো বাবা অন্তরাকে খাবার দিয়ে আয় হয়ত ওর ভালো লাগছে না তাই আসেনি,,
_আচ্ছা,,

হৃদয় খাওয়া শেষে অন্তরার রুমে গেল তার জন্য খাবার নিয়ে,,রুমের দরজা খুলে দেখল ঘরের লাইট অফ,,হৃদয় ঘরের লাইট জালাল,,দেখল অন্তরা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আসে গুটিশুটি মেরে,,হৃদয় অন্তরার কাছে গেল গিয়ে অন্তিরাকে ডাকতে লাগল,,

_আমি অন্তরা উঠ উঠ খেয়ে নে,,
_নাহ ভাইয়া আমি খাবো না আমার মাথাটা ব্যাথা করছে,,,,(ভাংগা কন্ঠে)
_আমি বলেছিলাম বৃষ্টিতে ভিজিস না কিন্তু না আমার কথা কি তুই শুনিস,,এখন উঠ খেয়েনে,,(কিছুটা রেগে বলল)

হৃদয় অন্তরাকে জোর করে উঠিয়ে কয়েক নালা ভাত খাইয়ে দিল,,অন্তরা আর খেতে পারছে না,হৃদয়ও আর জোর করল না তাকে ঔষধ খাইয়ে শুয়ে দিল,,,,হৃদয় চলে গেল,,,

হৃদয় নিজের রুমে গিয়ে কিছু কাজ করল,,রাত প্রায় 2টা,,,তার কাজ শেষ,হৃদয় পানি খাবে দেখল জগে পানি নেই সে পানি আনতে নিচে জাওয়ার জন্য নিজের রুমের থেকে বের হলো,,,অন্তরার রুম অতিক্রম করার সময় “উহহহহহ আহহহহহ” এমন কিছু শব্দ শুনল,,হৃদয় অন্তরার রুমের দরজা হাল্কা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখল অন্তরা গুটিশুটি মেরে শুয়ে কাপছে,,হৃদয় তারাতারি অন্তরার পাশে গেল,গিয়ে অন্তরার কপালে হাত দিয়ে দেখল খুব জর এসেছে,,,সে তারাতারি করে তার রুম থেকে থার্মোমিটার নিয়ে আসল,,অন্তরার জর মাপল,,অন্তরার জর দেখে হৃদয় মাথা ঘুরে গেল,,102 জর এত্ত,,,হৃদয় কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে তরিঘরি করে তার আম্মুর রুমে গেল গিয়ে দেখল তার আম্মু শুয়ে আছে,,এখন তাকে জাগানোটা শ্রেয় হবে না বলে হৃদয়ের মনে হলো,তাই সে আবার বেক করল অন্তরার রুমে,,সে একজন ডাক্তার তার সব জানার কথা কিন্তু এইসময় তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে,, হঠাৎ তার মাথায় জলপট্টি দেওয়ার চিন্তা আসল, যেই ভাবা সেই কাজ,,,জলদি গিয়ে একটি বাটিতে পানি আর একটা রুমাল নিয়ে আসল,,অন্তরার পাশে বসল তার কপালে জলপট্টি দিতে লাগল,,,বেশ কিছুক্ষন পর অন্তরা পিটপিট করে চোখ খুলল,হৃদয়ের অবস্থা এতক্ষন নাজেহাল হয়ে ছিল,, অন্তরার চোখ খুলায় সে যেন তার মধ্যে ফিরে আসল,,,

_এই অন্তরা অন্তরা
_শীত শীত,,

বলতে লাগল অন্তরা,হৃদয় উঠে কাবার্ড থেকে কম্বল আনল তার শরিরে দিয়ে দিল,,তাও যেন অন্তরার শীত কমছে না সে কেপেই চলছে,, হঠাৎ অন্তরা বলে উঠল,,

_তুমি আমার পাশে ঘুমাও আমার জর আসলে আম্মুও আমার পাশে আমাকে জরিয়ে শুয়ে পরত,,

হঠাৎ এমন কথা বলায় হৃদয় অন্তরার দিকে তাকাল,,,বেচারার মুখটা মলিন হয়ে গেছে এই এক রাতেই,,,হৃদয়ের খুব মায়া হলো,,অন্তরা আস্তে করে তার পাশে একটু জাগা করল হৃদয়ের জন্য,,হৃদয় কোন উপায়ন্তর না পেয়ে শুয়ে পরল কিছুটা ডিসটেন্স রেখে,,,অন্তরার মাথায় হাত বুলাতে লাগল,,হুট করে অন্তরা ঘুমের ঘোরে হৃদয়কে জরিয়ে ধরল,,এভাবে হুট করে জরিয়ে ধরায় হৃদয় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল,,সে হাত বারাল অন্তরাকে সরানোর জন্য কিন্তু অন্তরার কাপাকাপি দেখে আর সরাতে মন চাইল না,,সেও একপাশে অন্তিরাকে জরিয়ে ধরল,,অন্তরা ঘুমের মধ্যে একদম হৃদয়ের সাথে মিশে যাচ্ছে আস্তে আস্তে,,হৃদয় অন্তরার দিকে একবার তাকিয়ে তাকে সুন্দর ভাবে নিজের সাথে শক্ত ভাবে জরিয়ে নিল,,হৃদয়ের শরিরের তাপে অন্তরার কাপাকাপি কিছুটা কমল,,,হৃদয় ও এক পর্যায় অন্তরাকে জরিয়েই শুয়ে পরল,,,

চলবে🖤
(গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন,,ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🥰)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে