হৃদমাঝারে পর্ব-১৮+১৯

0
1090

#হৃদমাঝারে -[১৮+১৯]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা

ডিনার শেষে অর্ণা আর রওনাক দুজনে প্ল্যান করলো ওরা লং ড্রাইভে যাবে। কিন্তু এখন প্রবলেম হলো মুনকে নিয়ে। মুনকে একা এভাবে রেখে অর্ণা কিছুতেই রাওনাকের সাথে যাবে না। যদিও মুন বারবার বলছে ওদের চলে যেতে কিন্তু অর্ণা শুনতে নারাজ। অর্ণার এক কথা সে এত রাতে কিছুতেই মুনকে এখানে একা রেখে যাবে না। দরকার হলে অর্ণা রাওনাকের সাথে না গিয়ে মুনের সাথে বাড়ি ফিরে যাবে। পরক্ষনেই মনে হলো এখানে ফারহান আছেই। ফারহান এতক্ষণ ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো। কথা বলা শেষ করে ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো। অর্ণা আর রওনাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহানের ভ্রুযুগলে কিঞ্চিৎ ভাজ পরলো। মুনের দিকে এক পলক তাকিয়ে অর্ণাকে জিগ্যাসা করলো,

– এ্যানি প্রবলেম?

অর্ণা উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, আসলে আমি আর রওনাক লং ড্রাইভে যেতে চাইছি। কিন্তু মুন এখানে একা থাকবে। ও তো তোমাকে ছাড়া আর কাউকেই ভালো করে চিনে না। তাই বলছিলাম,,

– আমি মেহরিমাকে ড্রপ করে দিবো। উম্ যদি কারো প্রবলেম না থাকে। অর্ণাকে থামিয়ে দিয়ে বলল ফারহান।

– উম্, প্রবলেম কেন থাকবে। মুনের দিকে তাকিয়ে বলে, তোর কোন প্রবলেম নেই তো মুন।

– নো নিড। আমার কারো হেল্পের প্রয়োজন নেই। আচ্ছা অর্ণা আমি কি ছোট্ট বাচ্চা নাকি হুম। আমি একা চলে যেতে পারবো। তুই যাতো। কথাটা বলেই সামনের দিকে পা বাড়ায় মুন। ফারহান একবার অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা যাও এদিকটা আমি দেখছি। ফারহান লম্বা পা ফেলে মুনের পিছনে চলে যায়। অর্ণা মৃদু হাসে। রওনাক ওর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

– এই এদের কেসটা কি বলতো?

– সময় হলেই জানতে পারবে। এখন চলতো আমাদের লেট হচ্ছে। অর্ণা রাওনাকের হাত ধরে টেনে ওকে বাহিরে নিয়ে যায়।

রেস্টুরেন্ট থেকে কিছুটা দূরে পিছনের সাইডে এসে দাঁড়িয়ে আছে মুন। চারিদিকে নিস্তব্ধ, ঘন কালো অন্ধকার। কোথাও কোন জন মানবের ছিটাও নেই। মাঝে মাঝে দু একটা প্রাইভেট গাড়ি যাচ্ছে। পাখিরা সব নিড়ে ঘুমাচ্ছে। মোবাইলের আলোতে চারিদিকটা পরখ করে নিলো মুন। উহ্ কেন যে পিছনের দিক দিয়ে আসতে গেলাম কে জানে? ভয় লাগছে এখন। শরীরের লোমগুলো কাটা দিয়ে উঠছে। ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে পা ফেলছে মুন। মনে হলো কেউ ওকে ফলো করছে। কিছু পিছনে ঘুরে তাকানোর সাহস পেল না সে। থমকে দাঁড়িয়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে শুরু করলো। এমন সময় কেউ করে কাধে আলতো করে হাত
রাখে। ভয়ে কেপে উঠে মুন। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শব্দগুলো গলায় এসে কুণ্ডলী পাকাচ্ছে। ভয়ার্ত গলায় বলল,

-ক্ – কে?

আগন্তুকের কোন শব্দ না পেয়ে মুন আবার বলে, ক্- কে আপনি? এবার কোন শব্দ পেল না। তবে সে অনুভব করলো তার কাধে গরম হওয়া ভয়ছে। ভয়ে মুনের হাত থেকে মোবাইলটা পরে যায়। চিৎকার করে উঠে আর তখনি কেউ তার মুখটা চেপে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

– নো সাউন্ড, আমাকে গন ধুলাই খাওয়ার হচ্ছে তাইনা। মৃদু স্বরে বলা কথাগুলো কানে আসতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুন। দিশেহারা মনে এক চিলতে আসার আলো খুজে পায়। মনে মনে বলে উঠে, ফারহান। ফারহান নিজের হাত ছাড়িয়ে নিচে পরে থাকা মুনের মোবাইলটা তুলে ওর হাতে দিয়ে বলে,

– এতই যখন ভয় পাও তাহলে এই রাস্তায় এসেছো কেন?

মুন কোন জবাব দেয়না। নিচের দিকে তাকিয়ে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শুধু। আচ্ছা আজ যদি ফারহানের জায়গায় অন্য কেউ থাকতো তাহলে! তাহলে কি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো মুন। মুনকে এভাবে ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান আর কোন কথা বাড়ায় না। বুঝতে পারছে মুন ভয় পেয়েছে। ফারহান মুনের হাতটা শক্তকরে ধরে ওকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।

-আমি যাবনা আপনার গাড়িতে। গাড়ি থেকে নামতেই যাবে মুন তখনি ফারহান ওর আঙ্গুলটা মুনের ওষ্ঠের উপর রেখে বলে,

– হুস। কোন সাউন্ড হবে না। পাকনামো করতে একা এসেছিলে না এ দিকটায় দেখলে তো কি হলো। এখন বেশী,কথা বললে এই নির্জন রাস্তায় তোমাকে একা ছেড়ে দিয়ে যাবো। আর যাওয়ার আগে তোমার মাথায় কয়েকটা তেলাপোকা ছেড়ে দিয়ে যাবো। তাদের অত্যাচারে যদি তোমার মাথার জেদের পোকা কমে।

মুনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয় ফারহান। মুন ফারহানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর সামনের দিকে তাকায়। ফারহান সামনের দিকে তাকিয়ে এক মনে ড্রাইভ করছে। ফাকা রাস্তা পেড়িয়ে বড় রাস্তায় উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফারহান। মুনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনো বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারহান গাড়ির গতি কমিয়ে নেয়। সামনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

– মেয়েটা কে ছিলো?

– আমার ফ্রেন্ড।

– আই নো। বন্ধুর সাথে গেইম কেন খেলছো সেটাই জানতে চাইছি।

মুন বড় বড় করে ফারহানের দিকে তাকায়। এতে ফারহানের ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।

– কি বলতে চাইছেন আপনি?

– এর মানেও তোমাকে বুঝাতে হবে মেহরিমা। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কি বলতে চাইছি। ওকে ফাইন আমি বলছি, ওই মেয়েটাকে ত
তোমাদের বাড়িতে কাজের লোক করে রেখেছো কেন?

ফারহানের কথা শুনে চমকে উঠে মুন। জিগ্যেসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। ফারহান ওর দিকে ঘুরে মৃদু হেসে বলে,

– আই নো আমি ভেরী স্মার্ট, তাইবলে তুমি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। কথাটা বলেই চোখটিপ দেয় ফারহান। মুন তাড়াতাড়ি করে ওর চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে বলে,

– ম্ মোটেও না। এসব ভুল ধারনা মন থেকে বের করে দিন।

– কোনটা ভুল ধারনা?

– এই যে, আপনার নিজেকে ইউনিক ভাবা।

– ওহ্ রিয়েলি!

– হুম।

– কে যেন একসময় আমাকে বলেছিলো তুমি ইউনিক। তোমার এই বাদামী চোখ সবার থেকে আলাদা যেটাতে আমি ডুবে যাই বারংবার। থাক বাদ দাও এসব। এখন বলতো, তুমি তোমার ফ্রেন্ডকে কেন কাজের লোক সাজিয়ে রেখেছো?

– আপনি কি করে জানেন এসব?

ফারহান গাড়িটা থামিয়ে দেয়। সিটবেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে যায়। তারপর মুনকে টেনে গাড়ির বাইরে বের করে দাঁড় করায়। ফারহান মুনের দিকে ঝুকে বলে,

– আই নিড ইউর হেল্প মেহরিমা।

স্মিত হাসে মুন। তারপর বলে, কি এমন হলো যে ক্যাপ্টেন ফারহানের আমার হেল্পের প্রয়োজন হলো।

– ঘটেছে তো অনেক কিছুই। যেটা তোমার অজানা নয়। আমি তোমার বাবার সম্পর্কে জানতে চাই। জানতে চাই কেন তুমি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলে? জানতে চাই কেন তুমি রনিকে শাস্তি দিচ্ছো মা এখনো। আর এটাও জানতে চাই, তুমি এখনো চাও তোমার বাবা শাস্তি পাক। সবশেষে একটা প্রশ্ন, সবকিছু জেনেও কেন তুমি এনআর নার্সিংহোমে জনেয় করলে। প্লিজ এ্যানসার মি মেহু। আমি জানি সব প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে আছ। প্লিজ টেল মি।

মুন এতক্ষণ অবাক হয়ে ফারহানের কথা শুনছিলো আর ভাবছিলো এতকিছু ফারহান কি করে জানলো। ফারহানের চোখে চোখ রাখে মুন। ফারহান এখনো ওর দিকেই ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে। মুন ওকে ধাক্কাদিয়ে সড়িয়ে দিতে চাইলে ফারহান মুনের দুপাশে হাত রাখে ওর দিকে আরো একটু ঝুকে দাঁড়ায়।,

– যতক্ষণ না তুমি আমার সব প্রশ্নের এ্যনসার দিচ্ছো ততক্ষণ তুমি এখানে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে মেহুআ।

– দে্ দেখুন, অনেক রাত হয়েছে আমাকে যেতে দিন।

– আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।

– কিসের জবাব দিবো আমি। আমি কিছু জানি না।

– তাহলে আমি মনে করিয়ে দেই। ফারহান ঝুকে আরো কাছে আসে মুনের।

– কি্ কি মনে করিয়ে দিবেন আপনি?

– তুমি নিজে প্রমান জোগাড় করে তোমার বাবার মানে থানায় ডাইরি করেছিলে।

– আপনি এসব কি করে জানলেন? অবাক দৃষ্টি মুনের।

– কমিশনড স্যারের কাছ থেকে জেনেছি। কমিশনড স্যার আমার চাচার বন্ধু। সিনিয়র পুলিশ কমিশনার ফাহাদ শিকদার। নামটা শুনেছো নিশ্চয়?

– পাচ বছর আগে কার এক্সিডেন্টে যে পুলিশ কমিশনার মারা যায় সেটা আপনার কাকা?

– হুম। আর একটা কারন বলছি, এই কেইসের ইনভেস্টিগেশন আমি করছি। সো তোমায় সবটা বলতেই হবে।

– আপনি? আপনি কি করে ইনভেস্টিগেশন করেন। আপনি তো সৈনিক।

– হুম। তবে আমার একটা এনজিও আছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চ। সেটার হলেই ইনভেস্টিগেশন করছি। আচ্ছা এখনো কি তুমি আমাকে হেল্প করবে না। তুমি চাওনা তোমার বাবা তার অন্যায়ের শাস্তুি পাক।

মুন কিছু বলে মা শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফারহানের মুখপানে।

#হৃদমাঝারে – [১৯]

১৩,
জাল ঔষুদ ও ড্রাগস এর কারবারি, বেনামে ঔষুদ পাচার ও হসপিটালে গরীব মানুষের অরগান বিক্রির অপরাধে ডক্টর ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছ পুলিশ। গতকাল রাতে ড্রাগস সহ কিছু ঔষুদের গাড়ি আটক করেছে পুলিশ। তদন্তে জানা গেছে এইসব ঔষুদের কারবার চলে এনআর নার্সিংহোমে।

টেলিভিশনের নিচে লাল অক্ষরে লেখা ব্রেকিং নিউজের পর এই লেখাগুলো ভেসে আসছে। প্রতিটা চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ এটা। খাবার খেতে খেতে টেলিভিশনে গান দেখছিলো মুন আর তখনি নিচের লেখাগুলো ওর চোখে পরে। মুন চ্যানেল ঘুরিয়ে নিউজ চ্যানেলে দেয়। ভলিয়মটা একটু বাড়িয়ে ড্রাইনিং এর দিকে তাকায়। সবাই ড্রাইনিং এ বসে গল্প করছে আর খাচ্ছে।

ঠিক কতবছর ধরে চলছে ডক্টর ইমরান খানের এমন দুর্নীতি। কত মানুষের মানুষের প্রাণ নিয়েছেন তিনি। ডক্টর ইমরান খান কি তার কৃতকর্মের শাস্তি পাবে? নাকি ক্ষমতার জোড়ে সে বাইরে বের হয়ে আসবে। কি বলছে পুলিশ প্রশাসন। জানতে হলে দেখতে থাকুন শুনতে থাকুন পথের দিশারী। মামুনুর রহমানের ক্যামেরায় আমি তামান্না।

সবাই খাওয়া বাদদিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে টেলিভিশনের দিকে। এসব কি দেখাচ্ছে টিভিতে কারো বোধগম্য হচ্ছে না। মুনের মামা ওর মুনের দিকে শান্ত দৃষ্টি রাখতেই মুন মাথা নাড়ে। অর্ণা এসে মুনের কাঁধে হাত রেখে বলে,

– টিভিতে এসব কি দেখাচ্ছে রে মুন। খালু সত্যিই এরকম জঘন্য কাজ করেছে।

– প্রমান তো সেটাই বলছে রে বোনু। মুন উঠে দাঁড়ায়। ওদের বাড়ির সকলে ব্যাস্ত হয়ে পরে ডক্টর ইমরান খানের বাড়ি যাওয়ার জন্যে। না জানি মুনের মা ও মিঠুর অবস্থা এখন কেমন। মুন সবার দিকে এক পলক তাকালো সবাই কেমন অস্থির হয়ে গেছে। মুন সবাইকে উপেক্ষা করে উপরে নিজের রুমে চলে আসলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো ফারহানের নাম্বার থেকে দুটো মিসড কল। মুন তাড়াতাড়ি করে কল ব্যাক করলো। রিং হতেই ওপাশ থেকে ফারহান কল রিসিভ করে বলে,

– থ্যাংকস মেহরিমা। থ্যাংক এ লট। তোমার সাহায্য না পেলে আমরা এই কেইসটা এত তাড়াতাড়ি সলভ করতে পারতাম না। তুমি যদি কাল রাতে খবরটা না দিতে তাহলে,,,

– এত ফর্মালিটির প্রয়োজন আছে কি? আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আচ্ছা আমার লেপটপটা! ওটা খুজে পেয়েছেন?

– হ্যাঁ । ডক্টর ইমরান খানের পারসোনাল লকার থেকে একটা লেপটপ পাওয়া গেছে। আমাদের ব্রাঞ্চেই আছে। তুমি একবার দেখে নিও ওটা তোমার কি না।

– ওকে ঠিক আছে। রাখছি।

মুন হসপিটালে যাওয়ার জন্যে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই শুনতে পেলো, প্রায় দশ বছর যাবৎ এনআর নার্সিংহোমে এসব কারবারি চলছিলো। কত মানুষ প্রান হাড়িয়েছে, কত যুবকের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। এনআর নার্সিংহোমের দরজা বন্ধ, পুলিশ চারিদিক থেকে হসপিটালটিকে ঘিরে রেখেছে।

ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে পরে মুন। মুনের মামা বলে উঠে, কোথায় যাচ্ছিস? হসপিটালে তো যেতে পারবো না কাজেই এখন আমাকে থানায় যেতে হবে। একবার দেখে আসি ডক্টর ইমরানের কেমন সমাদর চলছে। টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে বলে মুন। তারপর ওর মামার দিকে তাকিয়ে বলে, আজ আর আমার মনে কোন আক্ষেপ নেই মামা। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। এখন ওই ডক্টর রুপি কশাইটা সঠিক সাজা পেলেই হবে। আমি আসছি মা। বলেই বেড়িয়ে যায় মুন।

থানার সামনে শত মানুষের ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় মুন। সব মানুষের মুখে একটাই কথা ইমরান খানের শাস্তি চাই। কেউ কেউ ব্যানারে ইমরান খানের ছবি একে তাতে কালি লাগিয়েছে কারো হাতে জুতা কারো হাতে ঝাড়ু। মুন সকলের দিকে একপলক তাকিয়ে হাসলো। তারপর সে সোজা চলে যায় থানার ভিতরে। সেখানে আগে থেকে ফারহান ও তার টিম ছিলো। মুন ফারহানের দিকে তাকিয়ে দু পা এগিয়ে যেতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়। থানার ভিতরে মিঠু মাথা নিচু লরে করে বসে আছে। মুন দ্রুত পায়ে মিঠুর সামনে গিয়ে বসে দু-হাতে মিঠুর মাথা তুলে সামনে দিকে করে তুলে। মিঠুর মাথায় কিছুটা কেটে সেখানে রক্ত জমাট বেধে আছে। মনে হয় অনেক আগেই কেটেছে। মুন মিঠুর মাথার কাটা স্থানে হাত রেখে বলল,

– কি হয়েছে ভাই? মাথায় কাটলো কি করে? বল কি হয়েছে?

মিঠু কিছু বলে না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে। তখন ফারহান ওদের সামনে হাটু গেরে বসে বলল, তোমার ভাই হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে জনগণের সাথে রামধোলাই খেয়েছে। মানে! প্রশ্ন করে মুন। মানে হলো গিয়ে, পাবলিককে বুঝাতে গিয়েছিলো যে তোমার বাবা নির্দোষ, আর পাবলিক সেটা মানতে না পেরে ওর উপর এ্যটাক করে। ফারহানের কথা শুনে মুন মিঠুর দিকে তাকিয়ে বলে, তুই এখানে কেন এসেছিস ভাই? জানিস তো এখন বাড়ির বের হলেই তোদের বিপদ বাড়বে তাহলে কেন এসেছিস তুই এখানে? আর আম্মু কোথায়? আম্মুকে বাড়তে একা ফেলে চলে এসেছিস তুই? বাড়ি যা মিঠু, মা-কে সামলাতে হবে তো। জানি নানুর বাড়ির সবাই এখম আম্মুর কাছে আসে তবুও সাধারন পাবলিক আর মিডিয়ার লোকদের কম্প্লিমেন্ট সামলাতে পারবে না কেউ। ভাই তুই যা। আম্মুর কাছে ফিরে যা। উঠে দাঁড়ায় মুন সাথে ফারহানও। মুন ফারহানের দিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
মিঠুকে বাড়ির ফেরার ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন?

– যথা আজ্ঞা ম্যাডাম। ফারহান পলাশের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা মিঠুকে বাড়ির দিয়ে আসার ব্যাবস্থা করো। আর হ্যা ভুলেও যেন মিঠু পাবলিকের সামনে না পরে। ফারহান শিমুলের টেবিল থেকে একটা লেপটপ হাতে নিয়ে মুনকে উদ্দেশ্য করে বলে, দেখতো এটাই তোমার সেই লেপটপ কি না? মুন ফারহানের হাতে থাকা লেপটপের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্লতার সাথে বলে উঠলো,

– হুম এটাই আমার লেপটপ। কোথায় পেলেন এটা?

– তোমার বাবার সিক্রেট ড্রয়ারে।

মুন আর কিছু না বলে টেবিলের উপর লেপটপটা রেখে সেটা অপেন করতে লাগলো। পাশেই দাঁড়িয়ে মিঠু সবটা লক্ষ করছিলো আর ভাবছিলো কি থাকতে পারে এটাতে। আর এটা মুনের লেপটপ। এটা তো সে তার বাবার হাতে দেখেছিলো। তার বাবা মাঝে মাঝেই এই লেপটপটা নিয়ে কিছু একটা করতো। তবে এই নিয়ে সে তার বাবাকে কিছু জিগ্যেস করে নি। কিছুক্ষণ পর মুন একটা ভিডিও অপেন করলো। যেটাতে স্পষ্ট দেখা এনআর নার্সিংহোমের ভিতরে কয়েকটা লোক কিছু পার্সেল খুলে ঔষুদের প্যাকেট বের করে সেটাতে ড্রাগস ডুকিয়ে দিচ্ছে। আর তাদের দিছু কথোপকথন শুনতে পেলো। সব শুনে ফারহান স্মিত হাসলেও মিঠু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মুনের দিকে। তারপর বলে,

– আপু, তুই আগে থেকেই সবটা জানতিস?

– হুম।

– তাহলে আমাদের আগে কেন জানাস নি? আর সব জেনেও ওই নার্সিংহোমেই কেন নিজের চেম্বার নিলি। মুন এবার মিঠুর দিকে ঘুরে তাকায়। তারপর দৃঢ় স্বরে বলে, ডক্টর ইমরান খান যে প্রমান লোপাট করেছে সেগুলোর জন্যে এনআর নার্সিংহোমে আমার চেম্বার নিয়েছি। মিঠু আরো কিছু বলবে তখনি ফারহানের কলটা বেজে উঠে, ফারহান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল যেটা শুনে ফারহান হাসলো। চাপা স্বরে বলে উঠলো, এবার সবার খেল খতম।

– আবার কি হলো? বেশ উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করলো মুন। ফারহান মুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তবে আজ ওর দৃষ্টিতে নেই কোন মুগ্ধতা। আজ ফারহানের দৃষ্টি রয়েছে শুধু অনুতাপ। অপরাধবোধ।
ফারহান বেশীক্ষণ দৃষ্টি রাখতে পারলো না ওর মুখের দিকে। ভিতরটা তার ভেঙে চুরমার হয়ে আসছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে নিজের। এমনটা একটা নিঃপাপ মেয়েকে সে কতভাবে অপমান করেছে। কতটা খারাপ ব্যাবহার করেছে তার সাথে। রাগে নিজের হাতের শক্ত মুঠি করে নেয়। মুন ভ্রু কুচকে ফারহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

– এই আপনার আবার কি হলো? কার খেল খতম বললেন না তো?

– একটু পরেই জানতে পারবে। বলেই একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো ফারহান। দু-হাতে মাথা চেপে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখদুটো ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে তার।

মুন ব্যাস্ত তার লেপটপটা নিয়ে। পলাশ এগিয়ে এসে মিঠুর সামনে দাড়িয়ে বলল, এবার আমাদের যাওয়া উচিৎ। না আমি কোথাও যাচ্ছি। মিঠু ও একটা চেয়ারে বসে পড়লো।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে