হূর part 2

0
1698

হূর part 2
#Roja_islam

হূর ঘুম থেকে উঠে দেখলো আদনান তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে! হূর আস্তে করে আদনানকে সরিয়ে উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আদনান এর রুমটা গুছালো। কাল ভয়ে এইরুমে ঢুকেনি সে যদি আদনান আবার এটানিয়ে কিছু বলে!

হূর গিয়ে নাস্তা বানাতে লাগলো। আদনান ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে বসতেই! নাকে সুন্দর স্মেল এলো। আদনান চোখ ঢলতে ঢলতে কিচেনে গেলো। হূর মন দিয়ে গোসত ভুনা করছে আর চালের রুটি বানাচ্ছে! আদনান এসব দেখে চোখ বড় বড় করে বললো, ” গোসত কই পেলে বাসায় তো ছিলো না? ”

হূর এর মন চাইলো বললতে, ” চুরি করেছি! ”

কিন্তু বললো না এটা বললে একটা টর্নেডো আসবে যা তার গালে পাঁচ আঙুলের দাগ করে দিয়ে যাবে তাই! সে বললো, ” মা আপনার জন্য দিয়ে দিয়েছে এসব ”

আদনান কিচেন থেকে চলে যেতে যেতে ভাবলো সে খাবে না। তারপর আবার ভাবলো না স্মেল তো ভালোই আসছে খাওয়া যেতে পারে! ফ্রেস হয়ে রেড়ি হয়ে ডাইনিং গিয়ে দেখলো হূর খাবার বেড়ে দাড়িয়ে আছে। আদনান আর কিছুনা বলে খেয়ে চলে গেলো। হূর দরজা লাগিয়ে রুমে এসে ধুপ করে শুয়ে পড়লো বেডে। জ্বর কমেনি দুর্বল লাগছে শরীল খুব হূর আবার ঘুম দিলো৷

এভাবে ১মাস চলে গেলে আদনান লখ্য করলো হূর আগের থেকে তার সাথে কম কথা বলে। বলে না বললেই চলে৷ পাশের রুমে ঘুমিয়ে থাকে। পাশে ফ্ল্যাটেও আর যেতে দেখেনা৷ একদম চুপচাপ বসে থাকে। রান্নাও ঠিক হয়েগেছে। আধসিদ্ধ, পোড়া খেতে হয়না। সুন্দর স্মেল বের হয় রান্না থেকে। একদম পার্ফেক্ট রান্না খেতেও মজা! আদনান এখন বাসায়ই খায়৷ হূর এখন আদনান এর সব কথা শুনে ভুল হয় না কিছুতেই! আদনান বুঝতে পারে হূর চেঞ্জ হচ্ছে কিন্তু কিছুই বলেনা কারণ চেঞ্জ হলেই তো ভালো। এখন অনেকটা প্যারা মুক্ত আদনান৷

রাত ১১টা আদনান স্কুলের খাতা দেখছে! পাশের রুমে হূর শুয়ে পরেছে খাওয়া দাওয়া শেষে সব গুছিয়ে! হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ কানে এলো আদনানের সে চেচিয়ে বললো হূরকে, ” এই মেয়ে কলিংবেল বাজছে শুনতে পারছো না? যাও দেখো কে এসেছে? ”

হূর আস্তে করে উঠে গেলো দরজা খুলতে৷ কিন্তু খোলার আগে লুকিং গ্লাস এ দেখতে পেলোই পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি দাড়িয়ে৷ হূর উনাকে দেখে আর খুললো না। পিছন ফিরে রুমে যাবে দেখলো আদনান দাড়িয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। হূর বললো, ” পাশের ফ্ল্যাটের আন্টি খুলতে হবে না! ”

বলে হূর নিজের রুমে চলে গেলো। আদনানের হূরের কথাটা ভালোলাগেনি। সে হূরের রুমে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো, ” কেনো? খুলতে হবে না কেনো? আমার সামনে ঐ মহিলার সাথে কথা বললে ধরা খাবে নিশ্চয়ই? ”

হূর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললো, ” আপনার উনাকে পছন্দ না তাই খুলিনি…! ”

আদনান চেচিয়ে উঠে, ” শাট আপ। মিথ্যে কথা বলবে না। একদম না৷ বলো ঐ ফ্ল্যাটে ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা থেকে কি করো তুমি? ”

হূর ফোফাতে লাগলো কান্না করে দিবে দিবে অবস্থা! জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো, ” আদনান এসব কি বলছো? ”

আদনান রেগে আর কিছু বলবে। তার আগেই হূর ফ্লোরে বসে পরলো! হূর কাদতে কাদতে বললো, ” প্লিজ আর ছোট করবেন না আমায় প্লিজ…দোয়া করুন৷ আমি অনেকদিন বলতে চেয়েছি! আমি কেনো যাই ঐ আন্টির কাছ! আপনি শুনার আগেই আমার গায়ে হাত তুলেছেন! তাই বলতে পারিনি এটা কি আমার দোষ? আজ আপনি না যেনেই আমায় কোন কিছুর অপবাদ দিতে পারেন না। না কিছুতেই না! ”

হতভম্ব হয়ে গেলো আদনান। কারণ হূরের কথা সত্যি সে শুনেইনি কি বলতে চায় হূর! তার আগেই রেগে গিয়েছে। সে কি করবে ঐ পাশের ফ্ল্যাট সংক্রান্ত কোন কথা শুনার আগেই তার মাথা গরম হয়ে যায়! কিন্তু সেটার দোষ তো আর তার বৌ এর নয়। আদনান এর ভেতরের ভালো মানুষটি আজ বললো। না আদনান তুই ভুল।

আদনান কিছু বলবে তার আগেই হূর আবার বললো, ” ঐ বয়স্ক আন্টি ডিভোর্সি! উনি উনার বুড়ো মা নিয়ে একাই থাকেন। আন্টি জব করে সকালে যায় আসতে রাত হয় জ্যাম এর জন্য। বুড়ো মা বাসায় একা থাকে। আমিও একা থাকি জেনে আন্টি আমার কাছে বলে যায় উনার বুড়ো মাকে একটু গিয়ে দেখে আসতে যদি কিছু হয়ে যায়। বুড়ো নানু হাটতে পারেনা আমারো ভয় হয়ে যদি পড়ে টরে ব্যাথা পায়? তাই না গিয়ে পারিনা। আর গেলে নানু উনি ছাড়তে চায়না বুড়ো মানুষ গল্প জুড়ে দেয়৷ উনাকে কষ্ট দিয়ে আসতে পারিনা! এটাই আমার বিরাট অপরাধ তাই তো! আর যাই না উনি ডাকলেও রাতে এসে দরজা খুলিনা! এতেও আপনার প্রবলেম? আপনি আমায় পছন্দ করেন না জানি সেটা তাই বলে এইসব লেইম চিন্তাভাবনা করবেন না আমার ব্যাপারে। ”

এইটুকু বলেই চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ হূর। আদনান মূর্তির মত দাড়িয়েই রইলো৷ হূর আবার বললো, ” আমার বয়স কত আপনি জানেন?? জানতে চেয়েছেন কখনও? আচ্ছা আমিই বলছি! আপনার সাথে আমার বিয়ের ১৫ দিন পর আমি ১৮ তে পাদি! যখন আমার স্কুলে কলেজে পড়ার কথা। বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেয়। তার কারণ ছেলে ভালো শিক্ষিত এবং শিক্ষক বলে কথা। আমার বাবার মতে শিক্ষকরা। আর যাই হোক স্ত্রীকে অসম্মান আর মূর্খের এর মতন গায়ে হাত তুলবে না। কারণ মূর্খ মূর্খই হয় এরা এসব বুঝেনা৷ তাদের এই চিন্তা ভাবনায়! আমি ছোট সেটাও তাদের চোখে পড়েনি৷ আপনার সাথে বিয়ের পর এতছোট বয়সে মা বাবাকে ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে হঠাৎ শহরে এসে আমি ভয় পেয়ে যাই৷ আমি তখনি বুঝতাম আপনার আমাকে পছন্দ নয়৷ আপনার ব্যাবহার এ ভয়ে আমি সব গুলিয়ে ফেলতাম৷ শুরু হয় কাজে একের পর এক ভুল৷ বিয়ের এক মাসেই আমি বেশ কিছুবার থাপ্পড় খাই আপনার হাতে। ভয়ে ভুল আরো বারতে থাকে। এর মধ্যে আন্টি এসে উনার মার কথা বলে। আমার অদের ফ্ল্যাটে যাওয়া শুরু হয়৷ আমার ভুল সুধরাতে পারিনা। আর আপনার বিহেভিয়ার আরো খারাপ হয়৷ আমার কি দোষ বলুন আমি সুধরাতে পারনি কারণ আমি ঘরের কাজ একদমি পারতাম না..! ”

হূর আবারো জোরে কাদতে লাগলো। সে পারে না ঘরের কাজ এটা জেনো তার কত কষ্ট হচ্ছে বলতে৷

আদনান এখনো একি ভাবে দাড়িয়ে! তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। হূর এর বয়স সে জানতো না। কিন্তু ১৮ মাত্র এটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলোনা সে৷ হ্যাঁ বয়স কম ভেবেছিলো কিন্তু এতো কম ভাবেনি সে৷ আর আজকের মতো লজ্জা সে গ্রামের শিক্ষিত ছেলে হয়ে কখনো কাউর থেকে পায়নি। যতটা আজ হূরের কথায় পেলো।

হূর বেশকিছু ক্ষণ কেদে চোখ মুছে বলে উঠে, ” আমাকে আপনার পছন্দ নয় এটা আমার দোষ নয় আপনার দোষ ও নয়৷ তবে আপনি চাইলে বিয়ে ভাঙতে পারতেন আমি পারতাম না। আমার ইচ্ছে ছিলোনা বিয়ে করার পড়ার স্বপ্ন ছিলো খুব করে৷ কিন্তু তাও মা বাবা কথার উপর কথা বলতে পারিনি ছোট বলে আপনি পারতেন কিন্তু করেনি। কিন্তু এভাবে তো আর চলেনা৷ আপনি আমার বাবাকে বলে দিয়েন আমায় এসে নিয়ে যেতে!কারণ আমি বললে তারা বিশ্বাস করবে না আপনি আমায় পছন্দ করেন না। কারণ তাদের মতে আপনি তো শিক্ষক আর ভালো মানুষ। আপনি খারাপ কিছু করতেই পারেন না আমার সাথে। তাই আপনাকেই বলতে হবে বাবাকে! ”

হূরের কথা শেষ হতেই আদনান চলে গেলো রুম থেকে হূর কান্নার ভেঙে পড়লো। আজকেও আদনান বললো না৷ সরি হূর চলো নতুন করে শুরু করি আমাদের ভুল গুলো ভুলো৷ না আজকেও আদনান বললো না। হূরের কপালে হ্যাসবেন্ড, সংসার, স্বপ্ন কিছুই নেই! কেনো? কেনো? কেনো?

চলবে!

[আর ১ পর্বে শেষ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে