হার্টলেস পর্ব-০১

0
3012

#হার্টলেস🖤
#Writer_Laila_Aungoman_Eti
#Part_01

কবুল বলে আমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবি, নাকি এখনি তোর সো কল উডবিকে লাশ বানিয়ে দেবো আমাকে তো এখনো তুই চিনিসই না, আমি খারাপ হলে যে কতটা খারাপ হতে পারি তোর কোনো আইডিয়া নেই।কথা গুলো অনেকটা রেগে ধমকিয়ে বলল নীড়।ইতুর তো শরীর শিতল হয়ে যাচ্ছে মানুষটা যে এত ভয়ঙ্কর কল্পনাও করতে পারে নিই।ইতু কাপা কাপা কন্ঠে বলল,

– নীড় ভাইয়া এএ,এমন কর না প্লিজ আর বিশালের তো কোনো দোষ নেই, উনাকে ছেছছ,,ছেড়ে দেও।

নীড় এর চোয়াল আরো শক্ত হয়ে গেলো,নীড় হকিস্টিক দিয়ে বিশালের মাথায় আরেকটা বাড়ি দিল, বিশাল আর্তনাদ করে উঠলো,বিশালের এই অবস্থা দেখে ইতুর কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। কাজী সাহেব তো রিতীমত কাপাকাপি শুরু করেছে,এই কোথায় আসলো সে।ইতু ভাঙ্গা গলায় বলল,

– নীড় ভাইয়া প্লিজ এমন কর না, উনাকে কেন আঘাত করছো উনার কোনো দোষ নেই,উনাকে ছেড়ে দেও। আর আমরা এভাবে বিয়ে করলে বাড়ীরর সবাইকে কি বলব।

– আই ডোন্ট কেয়ার, তোকে কি বললাম কবুল, তুই চাস তোর জন্য এই ছেলে প্রাণ হারাক।যদি তাই চাস তাহলে ঠিক আছে।

বলেই ছুরি টা বিশালের গলায় ধরলো,টান দেবে তখনি ইতু বলে উঠলো, করব বিয়ে একটা মানুষকে মেরো না। বলেই কান্না করতে লাগল।নীড় কাজী সাহেবকে বলল,কাজী সাহেব। বলতেই কাজী সাহেব চমকে উঠে তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়াতে লাগল।কিছু খনের মাঝেই নীড় আর ইতু বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো।ইতু চুপ হয়ে আছে, কি হলো এটা সব কিছু পাল্টে গেলো।

নীড় ওর বন্ধু পিয়াসকে বলল,পিয়াস।পিয়াস বলল,বল কি হয়েছে। নীড় বলল,এই বিশাল অমানুষ টাকে হসপিটালে ভর্তি কর কিন্তু ওর হাতের চিকিৎসা যেনো না করে।বলেই ইতুর দিকে তাকালো তারপর হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো।ইতু বলল,

– তুমি আসলেই গুন্ডা একটা নীড় ভাইয়া ।তুমি একটা ছেলেকে এভাবে মারলে তার উপর একটা হাতও ভেঙ্গে দিলে।

– ওর ওই হাত তো আমি কেটেই দিতাম, দেই নিই ওর কপাল ভালো,তুই এত ন্যাকা কান্না কেন কাদছিস ওই অসভ্য টার জন্য, ভুলে গেছিস ও বাজে ভাবে তোর শরীরে হাত দিতে চেয়ে ছিল,আমি ওই দিন না থাকলে কি হতো কোনো আইডিয়া আছে তোর।আমার কাকাও না মানুষ যাচাই করে বিয়ে ঠিক করে দিয়েছিল ওই অসভ্যটার সাথে। তুই না পযন্ত করলি না, ও করবি কিভাবে তুই তো আবার পরিবারের বাধ্য মেয়ে।কিন্তু এতটা ভালো সাজিস না জেনে শুনে ওই অসভ্য লোকটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলি।

ইতু কিছু বলল না, যা বলল সব তো সত্যি। ইতু হঠাৎ বলল,নীড় ভাইয়া। নীড় ইতুর দিকে তাকিয়ে বলল,

– বল

– এখন কি হবে, বাবা মা এবং কাকীও তো এই বিয়ে মানবে না।তুমি যে আমাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে আসলে বাড়ীতে তো এত খনে কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে।

– না মানলে না মানবে তাতে আমার কি তুই এখন আমার ওয়াইফ তোর ফ্যামিলি কিছু করতে পারবে না।

– যদি পুলিশ কেস করে

– হাহাহাহাহা তোর হাসব্যান্ড যেখানে সিবিআই অফিসার তোর কিসের এত চিন্তা।

– এটা ঠিক না আমার বাবা মা অনেক কষ্ট পাবে,আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই না।

– চুপ একটা কথাও বলবি না বেশি কথা বললে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেবো।

– ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা তুমি খুব পচা, হার্টলেস একটা।

– আবার কান্না করে চুপ কর, চুপ কর বলছি

ইতু নীড়ের ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলো,মুখে আঙ্গুল দিয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো নীড়ের দিকে।হাজার চেষ্টা করেও কান্না আটকে রাখতে পারলো না, আবার ভ্যা করতেই নীড় অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো,ইতুর দিকে ইতু আবার চুপ হয়ে গেল, কিন্তু হিচকি বন্ধ হচ্ছে না। নীড় ইতুকে বলল,শান্ত হো এত কান্না করছিস কেন। তারপর সামনে তাকিয়ে বলল,চাচা পানির বোতলটা দেও তো।ড্রাইভার চাচা পানির বোতল দিয়ে বলল, নেও।নীড় ইতুকে পানির বোতল দিল, ইতু কাপা কাপা হাতে বোতল নিয়ে সামান্য গলাটা ভিজালো।

ইতু বাহিরের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে, নীড় ইতুর হাত ধরে টেনে ইতুকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।ইতু উঠতে চাইলেই আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। ইতু দূরে সরে যেতে নিলেই নীড় বলল,

– এত নাড়াচাড়া করছিস কেন স্থির থাকতে পারিস না।

– ছাড়ো আমাকে ছাড়ো

– চুপচাপ থাক

__________________________________

গাড়ি থামতেই ইতুর বুকের ধকধকানি বেড়ে গেলো।গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছুক না থাকার পরও নামতে হলো।নীড় ইতুর হাত টেনে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো সবাই ওদের দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইতুর মা এসে ইতুকে জরিয়ে ধরে বলল,তুই ঠিক আছিস মা।শাহিন সাহেব হুংকার দিয়ে বললেন,,

– নীড় এসব কেমন অভদ্রতামি তুুই কেন ইতুকে নিয়ে গিয়ে ছিলি

– রিল্যাক্স কাকা চিন্তা করবেন না তেমন কিছু করি নিই,আগামী শুক্রবার রেডি থাকবেন ইতুকে নিয়ে যেতে আসবো।

– মানে কি???? আমার মেয়েকে আমি তোর হাতে তুলে দেবো না।

– আপনি বাধ্য তুলে দিতে কারণ ইতু আমার ওয়াইফ, শুভ খবরই তো দিলাম না কিছু খন আগেই আমরা বিয়ে করেছি।

সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো,ইতুর বাবা শাহিন সাহেব রেগে বলল, বিয়ে টা ছেলেখেলা নাকি বললেই হলো বিয়ে হয়ে গেছে। নীড় শান্ত কন্ঠে বলল, হ্যা বিয়ে হয়ে গেছে আপনাদের তো সুযোগ দিলাম মেয়ের বিয়ের আয়োজন করার জন্য আর না করলে আমার বউ আমি এখনি নিয়ে যাব।নীড় ইতুর কাছে যাবে তখনি ইতুর মা মালিহা বলল,না তোমরা আগামী শুক্রবারই নিয়ে যেও।নীড় সামান্য হেসে বলল,গুড তো আসি।বলেই নীড় বেড়িয়ে পড়লো।

_________________________________

বাড়ীতে সবার মুখে গম্ভীর ভাব, শাহিন সাহেব ভিশন চিন্তিতো কি করবে,মালিহা ইতুকে জোর করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসে শাহিন সাহেবের সামনে বসলো।তারপর বলল,

– কি করবে এখন

– সেটাই ভাবছি, পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো লাভ নেই,আর এই ব্যাপার জানাজানি হলে আমাদের ইতুকে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না।

– তুমি কি করতে চাইছো,তুমি কি ওদের আলাদা করতে চাইছো।

– হ্যা ওই ফ্যামিলিতে আমার মেয়ে ভালো থাকবে না, নীড়ের মা নীড়ের বিয়ে ঠিক করে ছিল ওর খালাতো বোন বৃষ্টির সাথে, সেখানে আমাদের মেয়েকে মেনে নেবে না।আমার মেয়ের কষ্ট হবে সেখানে

– তুমি তো নীড়কে চেনো, ও ইতুর কোনো অসুবিধা হতে দেবে না

– কিন্তু মালিহা নীড় প্রচুর রাগী, আবার ওর যেই পেশা ওর জীবন অনেক ঝুকিতে থাকে প্রায় সময় যেখানে সেখানে যেতে হয় তখন আমার মেয়েটার কি করবে।

– এত চিন্তা করছো কেন কিছু হবে না।

_______________________________

নীড় বাড়ি ফিরে নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে পড়লো, চোখ বন্ধ করলো, চোখের সামনে ইতুর ভিতু মুখটা ভেসে উঠতেই নীড় এক গাল হেসে মনে মনে বলল, আমার পাগলিটা।হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলল, নীড় ভাইয়া। নীড় চোখ খুলে দেখে বৃষ্টি দাড়ানো বেশ লাজুক ভঙ্গিতে আবার বৃষ্টি বলল,আপনার জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসবো।নীড় বলল,না বৃষ্টি লাগবে না তুমি যাও।
বৃষ্টির মুখটা মলিন হয়ে গেলো,আবারও বেশ মিনমিনে কন্ঠে বলল, আপনার ভালো লাগবে।
নীড় বলল, ওকে।বৃষ্টি খুশি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,তখনি নীড়ের মা সেলিনা রুমে প্রবেশ করলো,নীড়ের সামনে গিয়ে রেগে বলল,

– নীড় তুই এটা কি করেছিস, আমি যা শুনেছি তা কি সত্যি

– হ্যা মা সত্যি, আমি ইতুকে বিয়ে করেছি, আগামী শুক্রবার ওকে এখানে নিয়ে আসবো।

– নিজেকে কি মনে করিস তুই কিভাবে করলি যেখানে বৃষ্টির সাথে তোর বিয়ে ঠিক ছিল, মেয়েটা কত আশা নিয়ে ছিল।

– এতে আমার দোষ নেই আগেই বলেছিলাম যে আমি বৃষ্টিকে বিয়ে করব না

– তুই এটা মোটেও ঠিক করিস নিই নীড়

হঠাৎ নীড়ের চোখ দরজায় পড়তেই দেখলো বৃষ্টি অনুভূতি শূন্য ভাবে দাড়িয়ে আছে, নীড় ধিরে ধিরে বৃষ্টির কাছে গেলো,তারপর বলল, আই এম সরি বৃষ্টি। বৃষ্টি কিছু বলল না শুধু মাথা নিচু করে ফেলল। নীড় আর কিছু না বলে বেড়িয়ে পড়লো বাড়ি থেকে।

___________________________________

এখন রাত ১১ টা বাজে, মালিহা ইতুকে খাইয়ে ঘুমাতে বলে চলে গেলো।ইতুর চোখে ঘুম নেই সে ভাবনায় বিভোর আজ কত কিছু হয়ে গেলো,আজ নীড় ভাইয়া কি করলো এটা, একটা সময় কতটা ভালোবাসতাম তাকে, তখন তো অবুঝের মতো ছিল,কিন্তু মাঝে মাঝে অদ্ভুত কান্ডের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করতো আবার মাঝে মাঝে এমন করতো যেন তার সাথে আমার কোনো কথা জীবনেও হয় নিই,কতবার নিশ্চুপ ভাবে আমার ছোট হ্রদয়টাকে ভেঙ্গেছে।

হঠাৎ মেসেজ আসলো,আওয়াজ পেয়ে ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে আসলো ইতু। মেসেজে নীড় বলল,বারান্দার দরজা খোল।ইতু আতকে উঠলো।বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো,অপাশে নীড় দাড়ানো।নীড় তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে বিছানায় গিয়ে বসলো।ইতু তো হা হয়ে আছে, তবুও নিজেকে সামলে বলল,

– নীড় ভাইয়া তুমি এখানে???

– হুম

– কিন্তু এত রাতে এখানে কেন???

– কেন আজ আমাদের বাসর রাত না, আজ রাত কি আলাদা থাকা যায়

#চলবে……🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে