হলুদ খাম  ৯.

0
1271
হলুদ খাম  ৯.
জ্যামে আটকে যাওয়ার কিছু সময় পরই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। অরিত্র বললেন
– বলেছিলাম না বৃষ্টি নামবে!
আমি মিষ্টি করে হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু আদৌ সেটা মিষ্টি হলো কিনা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
অরিত্রের দিকে তাকানোর মতো সাহস আমার নেই। তাই অস্বচ্ছ কাচ গলিয়ে বৃষ্টি নামা দেখছিলাম।
অরিত্র বললেন
– আমাদের দেশের আবহাওয়ার অবস্থা দেখেছেন?
– হুম
– দেখুন শীতকালেও বৃষ্টি নামছে তাও আবার বর্ষাকালের মতো।
– মানুষের নিজের কারণেই এই অবস্থা।
– হ্যাঁ, প্রকৃতিকে বশে আনতে গিয়ে এখন নিজেরাই প্রকৃতির বশে চলে এসেছি।
– এখনো উপায় আছে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার হওয়ার।
অরিত্র অন্যমনস্ক হয়ে বললেন
– একটা গানের নাম বলুন। আপনার সবচেয়ে ফেভারিট গান। যেটা এমন ঝুম বৃষ্টির সময় শুনতে পছন্দ করেন।
প্রশ্নটা শুনে আমার অবাক হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু অবাক হতে পারলাম না। কারণ আমার ভালোলাগা, খারাপ লাগা নিয়ে বেশ কৌতুহল অরিত্রের।
আমার নিজেরও ঠিক জানা নেই কোন গানটা আমি বৃষ্টির সময় শুনি। আন্দাজে একটা নাম বললাম
– যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো, এক বরষায়….
অরিত্র সিডি প্লেয়ারে গানটা প্লে করলেন।
চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে গানটা শুনতে শুরু করলাম। বুকের ভেতরটায় ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অসহ্যকর যন্ত্রণা নিয়ে ভালো থাকার অভিনয় করা যায়না। কিন্তু আমাকে করতে হচ্ছে।
চোখ খুলে অরিত্রের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। অরিত্র আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
চোখে চোখ পড়তেই অরিত্র বললেন
– কোনো এক বর্ষাস্নাত বিকালে আপনি সাদা শাড়িতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামা দেখবেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে শাওনের কণ্ঠের যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, গানটা বাজবে। আমি মুগ্ধ নয়নে আপনাকে দেখবো। একজন এ্যাবসলিউট বিউটি – কে খুব কাছ থেকে দেখার স্বাদ আমার অনেক দিনের!
খুব কড়া কথা বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু গলায় আটকে গেলো। কিছুই বলার নেই আমার। আমি যতই এটাকে নিয়ে ঘাটাবো ততই বাড়বে।
অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ট্যুরের কাজ গুলো গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। অফিসের ৮ জন স্টাফ ট্যুরে যাওয়ার জন্য নাম লেখালেন। তার মধ্যে অনুজের নাম আছে। তার সাথে এমন ভাবে কথা বললাম, যেন আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি। অনুজ হয়তোবা বুঝতে পারছে আমি ইগ্নোর করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাই সে নিজেও দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। অরিত্রকে লিস্ট বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় এসে সংসারের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলাম। ফেসবুকে সেদিনের পর থেকে আর যাওয়া হয়নি। কেনো যেন মনে হচ্ছে অনলাইনে যাওয়া মাত্রই নিজের ক্ষতি করে বসবো।
সময় মনে হচ্ছে আলোর গতিতে যাচ্ছে। নীরা প্রতিদিন একটু একটু করে আমার লাগেজ গুছিয়ে দিচ্ছে। আর বাবার সাথে মার্কেটে গিয়ে এটা ওটা কিনে আনছে। আমাকে কড়াভাবে বলেছে
– নীলু আপু, তুমি ওখানে গিয়ে শাড়ি পরবা। আমি শাড়ির সাথে ম্যাচ করে গয়না দিয়ে দিচ্ছি।
– শাড়ি আমি ঠিক সামলাতে পারিনা। কেমন প্যাচ খেয়ে যাই। দেখা যাবে আছাড় খেয়ে….
নীরা আর বলতে দিলোনা। নীরাই বলতে শুরু করলো
– তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু আমি লাগেজে রেখে দিব। তুমি শুধু ঘুরবে আর আমাদের জন্য অনেক অনেক গল্প নিয়ে আসবে।
– তুমি যাবা আমার সাথে?
নীরা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আপা, তুমি আর আমি দুজনেই যদি যাই তাহলে সংসার কে দেখবে? আর মীরাটা হয়েছে দুষ্টু। সারাক্ষণ তার মজা করা চাই। আম্মু সুস্থ হলে আমরা পরিবার সহ ফরিদপুরে বেড়াতে যাবো।
– ফরিদপুরেই কেনো? আমরা কক্সবাজারেও যেতে পারি।
– ফরিদপুরে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়ি। ও এই বছর ফরিদপুরে চলে গেছে। ওর বাসায় আমরা পরিবার সহ প্রথম বেড়াতে যাবো।
মনে হচ্ছে মীরা কাঁদছে। মা’কে নিয়ে ওরা কখনো বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। মা অসুস্থ হয়ে বেশিরভাগ সময়ই বিছানায় শুয়ে থাকে।
অরিত্র আর অনুজ মিলে সবকিছু ঠিকঠাক করলেন। আমার উপর কোনো দায়িত্ব দেয়া হলোনা। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।দায়িত্ব নিয়ে ট্যুরে যাওয়ার কোনো মানেই হয়না। ঢাকা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টার জার্নি যদি জ্যাম থাকে তাহলে ৪ ঘণ্টার মতো লাগবে। শুকনা খাবার আমার বাসা থেকেও এনেছি আবার এদিকে অরিত্রও সবার জন্য এনেছেন। অরিত্রের স্ত্রীকে দেখলাম না। সে যাইহোক আমি আমার মতো নিষ্ক্রিয় থাকলেই চলবে।
মাইক্রোবাসে ৮ জন স্টাফ আর একজন কাজের লোক নিয়ে যাত্রা শুরু হলো। মোট ১০ জন যাত্রী। কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে পরে রইলাম। অনুজকে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। মেজাজ ঠান্ডা রাখার এটাই একটা উপায়!
চলবে…..
~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে