হঠাৎ হাওয়া (৭)

0
1090

হঠাৎ হাওয়া (৭)

রাত অনেক মায়া বাইরের বেঞ্চিতে বসে আছে। পাশে পুষ্প,মায়া পুষ্পের হাতের মধ্যে হাত নিয়ে বসে আছে, পুষ্পের খুব জ্বর। পুষ্প একা একাই এখানে বসে থাকতে চাচ্ছিলো মায়া নাছোড়বান্দা সবাইকে বিদেয় করতে পারলেও ওকে পারে নি তবে পুষ্প খুব বুঝছে ওর বন্ধুরাও আশেপাশেই আছে কেউ ঘুমুতে যায় নি পুষ্প আনমনে একটু হাসলো, মায়া এতক্ষণ পুষ্পের হাতটা ধরে ছিল, পুষ্পের দিকে তাকিয়ে ওর হাসিতে হেসে বলল,
—হাসছ কেন আপু?
পুষ্প মায়ার দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—আমি খুব বিশ্রী একটা মেয়ে তাই না মায়া?
মায়া পুষ্পের থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে চেয়ে বলল,
—আমার থেকেও বেশি?
পুষ্প মায়ার চিবুকে হাত রেখে বলল,
—এত ভালো হয়ে কি হবে? একটু বিশ্রীই ভালো।
বলতেই দুজনে হেসে ফেললো। পুষ্প ছোট করে হেসে বলল,
—গান গাইতে পারো মায়া?
—নাহ, নাচতে পারি নাচবো?
বলেই মায়া এক লাফে উঠে দাড়িয়ে কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে হাত পা নেড়ে লাফাতে লাগলো
পুষ্প হেসে ফেললো,হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা মায়া পুষ্পের দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে বলল,
—দেখলে কেমন পারি?
—হ্যা দেখলাম খুব পারো
—এবার তুমি গান শোনাও
—আমি গান পারি তোমাকে কে বলল?
মায়া চোখেমুখে ভাব ফুটিয়ে বলল
—জানো না তো কার সাথে আছো,হেহ
—কে?সবজান্তা সমশের?
মায়া অবাক চোখে চেয়ে বলল,
—সমশের আবার কে?
—কেউ না।
পুষ্প মায়ার হাতটা শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো, মায়া পেছনে তাকিয়ে দেখলো মিষ্টি এসে দাঁড়িয়ে পেছনে দিহানও আছে,কথা, আবির,ধ্রুব। শুধু একটু তফাতে নিরব দাড়ানো তার পাশেই সেই লোকটা যাকে মায়া দেখতে চায় না।ধ্রুব আঙুল ইশারা করে মায়াকে চুপ থাকতে বললো।মায়া চোখ সরিয়ে পুষ্পের দিকে চাইলো।
পুষ্প চোখ বন্ধ করে গান গাইলো,

সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়

আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি,
যদি আসে কোনোদিন সেই সুখপাখি ।।
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়

ভালোবেসে সুখী হতে বলো কে না চায়?
রাধা সুখী হয়েছিল সেই শ্যাম রায়। ।
আমিও রাধার মতো ভালোবেসে যাবো,
হয় কিছু পাবো নয় সবই হারাবো
এই চেয়ে থাকা আর প্রাণে সয় না।।

সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না।
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।।
সবাই তো সুখী হতে চায়……।

পুষ্পের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনবরত ওর বন্ধুরা স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে,পুষ্প যে এত ভালো গান করে ওদের জানা ছিলো না!হিমালয় এই প্রথম পুষ্পের কষ্টের গাঢ়ত্ব বুঝতে পারলো আবির আর ধ্রুবও মমতা নিয়ে মেয়েটিকে দেখছে ওরা জানতো পুষ্প বরাবরের জেদী, অহংকারী আর বাচাল একটা মেয়ে।নিরব একমনে চেয়ে আছে এই মুহুর্তে ওর মনে হচ্ছে পৃথিবী আর কোনো মানুষ এত গুরুত্বপূর্ণ না ওর সামনে থাকা মেয়েটি থাকলেই চলবে।নিরব ছোটো করে নিঃশ্বাস ফেলে পুষ্পের সামনে গিয়ে দাড়ালো,পুষ্পের সামনে দুহাটু গেড়ে বসলো। পুষ্প চোখ খুলে দেখলো ওর সামনে সেই প্রতিক্ষিত মানব,নিরব এবার মুখ খুললো এতক্ষণে ও নিরবতা ভাঙলো।পুষ্পের হাত দুহাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
—তোমার খুব জ্বর পুষ্প।
পুষ্প মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো, মায়া আস্তে সেখান থেকে উঠে দূরে গিয়ে দাড়ালো,দিহান মায়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো
—তোমার সাথে আমার একটু কথা আছে
মায়া দিহানের দিকে না তাকিয়েই বলল
—ট্রাজেডি শেষ এখন ক্লাইম্যাক্স চলছে কথা পরে চুপচাপ দেখে যান।
দিহান হা হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর নিরব আর পুষ্পের দিকে তাকালো।হিমালয় আড়চোখে দিহান আর মায়াকে দেখছে মায়া এখনো একবারো হিমালয়ের দিকে তাকায়নি।
পুষ্প নিরবের দিকে না তাকিয়ে বললো
—আমার জ্বর সেটা আমি মনে হয় বুঝি।আমি অবুঝ নই
—আমি কখনোই জানতাম না তুমি এতটা অবুঝ।
পুষ্প নিরবের দিকে তাকালো,নিরব পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—তুমি একটা পাগল মেয়ে পুষ্প, তুমি এমন একজন কে ভালোবাসছ যে সম্পূর্ণ তোমার বিপরীত।
—আমি দুঃখিত আমি ভুল করেছি, আমার কোনো অনুভূতি যদি তোমাকে কোনোভাবে হার্ট করে থাকে দেন আই এম রিয়েলি সরি প্লিজ গেট লস্ট।
পুষ্প নিরবের হাত থেকে হাত টা ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারলো না।নিরব হালকা হেসে বলল,
—আমি হাত ধরেছি ছেড়ে দেব বলে না।
পুষ্প নিরবের দিকে তাকালো,মায়া খুশিতে বাকবাকুম করছে ওর চোখ ছলছল করছে হাত পা কাপছে অদ্ভুত ও এরকম কেন করছে! মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।নিরব পুষ্পের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—সরাসরি বিয়ে করবে নাকি প্রেম করার ইচ্ছে আছে?
—তুমি কি আমাকে প্রপোজ করছ?
—সেরকম মনে হচ্ছে?
—এটা প্রপোজ?
—না, প্রপোজ করলে ডিনাই করে দেওয়ার চান্স থাকে এখানে তা নেই শুধু দুটো অপশন আছে।কিছুক্ষণ শান্ত চোখে চেয়ে হুট করে পুষ্প নিরবের চুল টেনে ওর বুকে কিল ঘুষি মেরে বলল,
—বেয়াদব, আই হেট ইউ আমাকে এত্ত কষ্ট দিলে তুমি…
আবির কথা দৌড়ে গিয়ে পুষ্প কে থামিয়ে কথা বলছে
—তুই তো খুব দস্যি মেয়ে, এই ভালোবাসা না পেয়ে মরে যাচ্ছিলি এখন ভালোবাসা পেয়ে ওকে মেরে ফেলছিস!
সবাই হেসে ফেললো….।ধ্রুব পুষ্পের কাছে এসে বললো
—এত স্মার্ট একটা ছেলে রেখে তোর চোখে নাকি এই গবেট টাই পড়ল! অদ্ভুত!
সবাই আরেক দফা হেসে নিলো।মিষ্টি সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো অদ্ভুত ভালোলাগা ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো! দিহান মায়ার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো, হিমালয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো,
—মায়া শোনো কথা টা খুব ইম্পর্টেন্ট
—আরে কি কথা?
—আমি বুঝলাম না তুমক এদের কি হও?
—এটা জরুরি কথা?
—হ্যা
—কেউ না।
—মানে?
—মানে আমি বিয়ে থেকে পালিয়েছিলাম এরা আমাকে সঙ্গে নিয়েছে
—কি!
—আপনার মানে কি পরে শুনবো এখন ওদিকে চলুন।
দিহান কিছুক্ষণ মুর্তির মত দাঁড়িয়ে থেকে আবার সবার সাথে যোগ দিলো।সবাই বেশ জমজমাট আড্ডা শুরু করেছে, পুষ্প অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছে। হুট করে মায়ার ফোনে একটা কল এলো।সবাই চুপ হয়ে গেলো,মায়া শুধু রাতের বেলায় ফোন অন রাখে বাকিটা সময় অফই রাখে।মায়ার খুব নার্ভাস লাগছে ও কলটা রিসিভ করে বললো
—হ্যালো
ওপাশ থেকে মায়ার বাবা বললেন
—মামনি?
মায়া ঠোট বাকিয়ে ফেললো সবাই মায়ার দিকেই চেয়ে আছে।
—বাবাই
—তুমি এমন কেন মায়া?
মায়া ফুপিয়ে কেদে উঠলো তারপর খুব ছোট্ট করে বলল
—আই এম সরি।
—তুমি কোথায়?
—সিলেটে
—তুমি কেমন আছো মা?
মায়ার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো,মায়া হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বললো
—আমি তোমার কাছে যাবো বাবাই এক্ষুনি যাবো তুমি আমাকে নিয়ে যাও বাবাই।
স্পবাই হতভম্ব হয়ে গেলো।হিমালয় শুধু উঠে গিয়ে মায়ার কান থেকে ফোনটা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ালো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে