হঠাৎ হাওয়া (২০)

0
1115

হঠাৎ_হাওয়া (২০)

বিকেলে মায়া সাহিত্যের সাথে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো সাহিত্য সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকে বসে আছে বের হওয়ার নাম নেই
—ওই ফুপ্পার বাচ্চা সাহিত্য বের হবি তুই আজকে? ডাক্তার কি তোর দুলাভাই লাগে? তোর জন্য বসে থাকবে?
—মায়া যত কথা বলবি তত দেরি হবে তুই চুপ থাক প্লিজ,
মায়া বিরক্ত হয়ে উঠে বাইরে গিয়ে দাড়ালো ওর ফোনে আননোন নম্বর থেকে একটা কল আসলো মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না কি করবে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কন্ঠ শোনা গেলো
—মায়া! আমি আমি হিমালয়ের মা!
মায়া ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো
—কেমন আছেন আন্টি?
—তোর সাথে আমার দেখা করা খুবই দরকার মায়া, এই দুই বছরে আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি তোর সাথে যোগাযোগ করার।
—আন্টি এখন আর আপনাকে সাহায্য করার মত তো আমার কিছু নেই
—মায়া,আমায় ক্ষমা কর মা, অনেক বড় ভুল আমি করেছি তোকে আমার খুব দরকার
মায়া ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সবারই শুধু দরকার,
—আন্টি আমি ঢাকায় থাকি না বড়জোর দুদিন আছি আপনার দরকার আমি কিভাবে মেটাতে পারি বলুন
—আমি জানি মায়া আমার উপর তোর খুব রাগ, আমি তখনও অসহায় ছিলাম এখনো অসহায়,

সাহিত্যকে দূর থেকে আসতে দেখে মায়া বলল
—আমার নম্বর কি আপনাকে আবির ভাই দিয়েছে
—হ্যা, আমরা সবাই তোকে খুজেছি তোর ফিরে আসাটা যে আমাদের জন্য কতটা আনন্দের ভাবতে পারবি না তুই
—আমি একটু বাইরে আছি আন্টি আপনি একসময় বাসায় আসবেন আমরা কথা বলব।
রেহেনা আহমেদ এবার অসহায় কণ্ঠে বলল,
—তোকে খুব দরকার মায়া আমার অন্যায়ের শাস্তি আমার ছেলেটা…
মায়ার দম বন্ধ হয়ে গেলো, ও শুনতে চায় না ওই মানুষটার কথা ও জানতে চায় না
—আমি রাখছি।
মায়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখের জল আড়াল করে বলতো
—আর দুই ঘন্টা বসে থাকতি
—শুধু শুধু বাথরুমে কেন বসে থাকব!অদ্ভুত কথা বলিস আমার কি বাড়িঘর নাই?
মায়া গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,
—ডাক্তার কি এখন আছে?
—থাকলে থাকবে না থাকলে তুই তো আছিসই ডাক্তারদের দেবী
—সবসময় মজা করবি না
—আচ্ছা কোন সময় করব তুই বলে দিস।
—সাহিত্য হসপিটালে পৌছানোর আগে তুই যদি একটা শব্দ করিস আমি গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যে যাবো আর খুজে পাবি না।
সাহিত্য আর একটা কথাও বলল না,মায়াকে ও যথেষ্ট ভয়ই পায় শুধু বুঝতে দেয় না।

সাহিত্য আড়চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে ওরা যে নিউরোলজিস্ট এর সামনে বসে আছে সে ধ্রুব।মায়া সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলো,ধ্রুবকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে
—তুমি কিন্তু এখনো বলছো না তুমি এতদিন কোথায় ছিলে
—বলতে চাচ্ছি না ধ্রুব, কারণ আমি আবার ফিরে যাবো
—তুমি জানো মায়া কত কিছু পালটে গেছে
—কই? তুমি তো সেই আগের ধ্রুবই আছো এখনো শুনলাম মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করো বিয়েশাদীর প্লান নেই
ধ্রুব ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—তুমি মেয়েটা খুব খারাপ
—জানিতো
ধ্রুব ওর পিএ কে ডেকে সমস্ত এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিতেই সাহিত্য ঘাবড়ে বলল,
—প্লিজ ডাক্তার আমি খুব বিজি মানুষ অনেক প্লান বাদ দিয়ে আজ এসেছি আমার এপোয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল করবেন না, আমার দেখানোর ওতো গরজ নেই তবে বাসায় ঢুকতে হলে আমার ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঢুকতে হবে
—তুই কিসের বিজি
—স্টপ, তুই আর কখনোই আমার সাথে হসপিটালে আসবি না
মায়া অসহায় ভাবে তাকাতেই ধ্রুব হেসে বললো
—তোমার ফাইলটা দাও
সাহিত্য ফাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
—ডক্টর আদনান আমায় সাজেস্ট করেছে আপনার কাছে আসতে
ধ্রুব হেসে হেসে ফাইল দেখছিলো ওর মুখটা শুকিয়ে গেলো, মায়া অধীর হয়ে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে ধ্রুব সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো,সাহিত্য হেসে বললো
—কিছু বলবেন ডক্টর? আমি কিন্তু সব জানি।কিচ্ছু করার নেই।
ধ্রুব একটু গলায় জোড় এনে বলল
—অনেক কিছুই আছে, আমি একটু স্টাডি করতে চাই তোমার ব্যাপারে তারপর তোমাকে জানাবো।
—শুধু শুধু সান্ত্বনা দিচ্ছেন ডক্টর
—সাহিত্য শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়তে নেই, এটা আমরা অনেকেই বুঝে উঠি না
ধ্রুব এবার মায়ার দিকে তাকালো
—আবির তোমাকে কি বলেছে আদৌ কিছু বলেছে কি না আমি জানি না, তোমার সাথে এখানে দেখা না হলেও আমি তোমার বাসায় যেতাম
মায়া চোখ নামিয়ে নিলো,
—আমরা এখন আসি ধ্রুব…
—হিমালয় কোথায় জানতে চাও না?
মায়ার গলা শুকিয়ে গেলো এই একটা নামের প্রতি ওর তীব্র আকর্ষণ ও জানতে চায়, তাকে একবার দেখতে চায় কিন্তু….
—তুমি যে একটা স্টুপিড সেটা কি তুমি বোঝো?সব তোমার ইচ্ছে মত হয়? তুমি জানো আজ দেড়বছর হিমালয় ওর বাসায় যায় না, ও তোমাকে কত খুজেছে তোমার কোনো ইয়াত্তা আছে?কি করে পারলে বলোতো মায়া একজন জীবন্ত মানুষকে নিষ্প্রাণ করে দিতে..
মায়া ভয়ে ভয়ে বলল,
—মানে!…উনি কানাডাতে যান নি! কথা আপু আর উনি….
—তুমি কি বোকা মায়া? লাইফটা কি সিনেমা? যে তুমি সরে গেলেই সব স্মুথ হয়ে যাবে? হিমালয় পাগল হয়ে গিয়েছিলো মায়া তোমার প্রত্যাখ্যান ও মানতে পারে নি ওর বিস্ফোরক আচারণ দেখে আমরা সবাই হতভম্ব ছিলাম, রাগের মাথায় সেদিন ও চলে এলেও পরে তোমার বাসায় গিয়ে দেখে তুমি নেই…. প্রথম ছয়মাস ওর মানসিক অবস্থা এক্কেবারে খারাপ ছিলো প্রচুর ড্রাগ নিতে শুরু করেছিলো,আমাদের চোখের সামনে আমাদের যে বন্ধুটার সবচেয়ে ব্রাইট ফিউচার সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো,অথচ আমরা কিচ্ছু করতে পারছিলাম না…. অতিরিক্ত ড্রাগ নেওয়ার কারণে হসপিটালে এডমিট হতে হয়েছিলো তখন আন্টি খুব ভেঙে পড়ে আর আঙ্কেলের কাছে সবটা জানায় তোমার আর আন্টির মধ্যে যা কথা হয়েছিলো সে সম্পর্কে, সবকিছু জানাজানি হওয়ার পর কথাও খুব ভেঙে পড়ে, এটা ঠিক কথা ছোট বেলা থেকে হিমালয় কে খুব ভালোবাসতো কিন্তু ও কখনোই চায় নি তোমার আর হিমালয়ের মধ্যে বাধা হতে…।আমরা তোমার আব্বুর কাছে তোমার খোজ নিয়ে গেলে জানতে পারলাম তুমি তার সাথেও যোগাযোগ রাখো না! তুমি এরকম কিভাবে করতে পারো মায়া!
মায়া বিস্মিত হয়ে গেলো ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো, ও সবসময় বোকামি করে সবসময়! ও কেন ভাবলো না হিমালয় ওকে ভালোবাসে! কেন ও হিমালয়ের সাথে অন্যায় করলো!
—ধ্রুব…. মহারাজ! এখন কোথায়?!
ধ্রুব হালকা হাসলো,
—এখন তার খোজ করছ মায়া! এখন কি চাইলেই তুমি তাকে পাবে?সবকিছু কি চিরস্থায়ী মায়া?তুমি হিমালয়ের জীবনে একটা হঠাৎ হাওয়ার মতো এসে ওর পুরো জীবন ওলটপালট করে দিয়ে পালিয়ে গেলে অদ্ভুত না! একটা ছেলে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসলো তার কাছে সকাল দুপুর মাঝরাত সব তুচ্ছ হয়ে গেলো তোমার জন্যে আর তুমি….
মায়ার কান শো শো করতে লাগলো ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না ওর কাছে পৃথিবী পুরো অন্ধকার হয়ে আসছে, এতবড় পৃথিবীতে ও একটুও নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না!

সাহিত্য অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছে, এতদিন ও শুধু মায়ার ভালোবাসার গভীরতাটা দেখেছে আজ বুঝতে পারছে যাকে মায়া এত ভালোবাসে তার কাছে ভালোবাসার ভান্ডার আছে তার সামনে সাহিত্য অতি নগন্য!

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে