হঠাৎ পাওয়া পর্ব-০১

0
3181

#হঠাৎ_পাওয়া
#রাবেয়া_সুলতানা

#১

এই প্রথম কারো স্পর্শ পেয়ে নিজের অজান্তেই শরীরটা শিহরিত হয়ে উঠলো। করুণ দুটো টলমল চোখ নিয়ে উপরের দিকে তাকালাম।সামনে থাকা মানুষটা নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো উপায় না পেয়ে নিজের হাতটা আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দিলাম।
হাত দিতেই আমায় টেনে দাঁড় করিয়ে,এই মেয়ে চোখ কি পিছনে নিয়ে হাঁটো নাকি?সামনে কি আছে তা দেখতে পাওনা।নাকি ছেলেদের দেখলে মাথা ঠিক থাকেনা কোনটা?
আমি বিস্মিত চোখ নিয়ে অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি যে কথা গুলো আমার বলার কথা সেই কথা গুলো ছেলেটা আমায় বলে যাচ্ছে।বাহঃ বেশ ভালো তো!
-এই মেয়ে এইভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? নাকি জীবনে কোনো ছেলে দেখোনি তাই আমাকে দেখে তোমার এলিয়েন মনে হচ্ছে।
ছেলেটার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে এইপাশ ওপাশ হাত বুলাচ্ছি।

ছেলেটার পিছন থেকে একটা লোক কানের কাছে ফিসফিস করে কি বললো তারপর ছেলেটা দাঁড়িয়ে আমার কথার অপেক্ষা না করে সামনে এগিয়ে চলে গেলো।
আর আমি সেই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে ছেলেটার চেহারাটা পরিদর্শনে নেমেছি।কে এই ছেলে এই ফাস্ট কোনো ছেলেকে দেখে আমার মনে লাড্ডু ফুঁটেছে। প্রথম দেখায় একটা মানুষকে এতো ভালো লাগতে পারে এই ছেলেটাকে না দেখলে বুজতামনা।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে, কিরে প্রাপ্তি তুই এইখানে দাঁড়িয়ে আছিস আমি তোকে সারা ভার্সিটি খুঁজে বেরাচ্ছি।তুই এইখানে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

-লাভ এট ফাস্ট সাইড।
-কি!
প্রাপ্তি চমকে উঠে, কিছুনা চল।

প্রাপ্তি সারাক্ষণ মাথায় ছেলেটার কথা ঘুরঘুর করে।প্রতিটি সেকেন্ডে সেকেন্ডে ছেলেটার বলা কথা গুলো তার কানে টেপরেকর্ডারের মতো বাজতে থাকে। কে এই ছেলে? কি তার পরিচয়? কিছুই তো জানিনা।নামটা পর্যন্ত জানিনা।তবুও কেনো ছেলেটার স্পর্শ আমাকে শিহরিত করেছে?

এইভাবেই চলছে প্রাপ্তির দিন।কয়েকটা দিন যেতেই প্রাপ্তির কয়েকটা ফ্রেন্ড ঠিক করলো আজ ক্লাস শেষ করে সবাই শপিং করতে যাবে।শপিং শেষ করে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডরা মিলে রেস্টুরেন্টে বসেছে হালকা নাশতা খাওয়ার জন্য।

প্রাপ্তির পাশের টেবিলের উপর চোখ যেতেই অবাক হয়ে নিজের অজান্তেই বলে উঠলো আরে এই তো সেই ছেলেটা।

প্রাপ্তির সব ফ্রেন্ড চমকে উঠলো,
রিয়া প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিয়ে কোন ছেলে?

-না কিছু না বলে আবার তাকাতেই দেখে ছেলেটা তার দিকে উঠে আসছে।ছেলেটাকে নিজের দিকে আসতে দেখে প্রাপ্তি সেইদিনের কথাটা মনে পড়তেই ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো।
প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে আল্লা এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও। এইছেলে কি আজ ও আমায় অপমান করে যাবে নাকি?
সেইদিন ও আমার কোনো অন্যায় ছিলো না তবুও বানর টা আমায় কতো কথা শুনিয়ে গেলো।প্রাপ্তি আল্লাকে মনে মনে ডাকতে ডাকতে এক চোখ খুলে দেখে কেউ নেই। প্রাপ্তি চমকে উঠে এইবার দুটোই চোখ খুলে তাকিয়ে, একি কোথায় গেলো।এদিক সেদিক তাকিয়ে না দেখে পিছনে ফিরে দেখে ছেলেটা ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে, (মনে মনে)ওহঃ প্রাপ্তি মাঝে মাঝে তুই এতো অদ্ভুত চিন্তা কেনো যে করিস বুজতেই পারিনা।ছেলেটাকে তোর ভালো লাগতে পারে। কিন্ত ছেলেটার তোকে নাও ভালো লাগতে পারে। দেখিস না কেমন অদ্ভুত টাইপের।
প্রাপ্তিরা অল্প কিছু খেয়ে সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এলো।
বিকেলে বাড়ি এসে দেখে অনেক লোকজন ড্রইংরুমে বসে আছে। প্রাপ্তি সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই প্রাপ্তির মা এগিয়ে এসে প্রাপ্তিকে কাছে এনে এই আমার একমাত্র মেয়ে মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি। প্রাপ্তি সবাইকে সালাম করে মাকে মিনমিন করে বললো তার রুমে আসতে।
সবার সামনে থেকে মুচকি হেঁসে বিদায় নিয়ে রুমে এসে চটপট করতে লাগলো।প্রাপ্তি মা এসে, কিরে তোর চটপটানির রোগে ধরছে নাকি? আর ওদের সামনে থেকে চলে এলি কেনো?

-মা এরা কারা।আমার বাপ দাদার বংশধর বলে তো মনে হচ্ছে না এবং কি নানার ও না।তাহলে এই উটকো ঝামেলা আনছো কোথায় থেকে?

-তুই আর চেঞ্জ হবিনা তাই না? শুন ওরা তোকে দেখতে আসছে।(একটা শাড়ি আলমারি থেকে নামিয়ে এনে)ধর এইটা পরে নে।

-আমাকে দেখতে আসছে মানে? আর তুমি আমাকে ওদের সামনে এলিয়েন সাজিয়ে নিয়ে যাবে নাকি?
মা! প্লিজ আমি বিয়ে করতে চাই না।

-আমি কিছু জানিনা।আমি যাই তোর বাবা এসে তোকে রেডি করাবে।

প্রাপ্তি ন্যাকা স্বরে, মা আমি কি জোকার! যে ওদের সামনে পারফর্মেন্স করতে যেতে হবে।আমি যেই ভাবে আছি এইভাবে যদি পছন্দ হয় তাহলে হবে না হলে নাই।

প্রাপ্তির মা ভালো করেই জানে মেয়ে একবার যেটা বলেছে সেটাই করবে।এরচেয়ে কথা না বাড়িয়ে এইভাবে নিয়ে যাই।অবশ্য আমার মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী। ওদের পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায়।

প্রাপ্তিকে এনে তাদের সামনে একটা চেয়ার দিয়ে বসালো।

কেমন আছো প্রাপ্তি?

প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে এই মহিলা জানলো কি করে আমার নাম প্রাপ্তি। অবশ্য মেয়ে দেখতে আসছে নাম না জেনে আসবে নাকি?

-খারাপ থাকলে এইভাবে জোকারের মতো বসে থাকতাম।আপনি ভুল প্রশ্ন করলেন কেনো? বলবেন প্রাপ্তি তোমার মন ভালো আছে? যদি এইটা জানতে চান তাহলে বলবো,আপাতত এখন ভালো নেই।যাইহোক আপনি ছেলের কি হন?

প্রাপ্তির বাবা আর মা মেয়ের কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে, আসলে কিছু মনে করবেন না।প্রাপ্তির বাবা কথাটা বলতেই, আরে না না আমরা কিছু মনে করেনি ও তো ঠিকি বলেছে আমাদের আগে পরিচিত হওয়া উচিৎ ছিলো।প্রাপ্তি! আমি হচ্ছি ছেলের বড় ভাবী, ছেলের বোন,আর এরা কাজিন, ইনি হচ্ছেন ছেলের কাকা।

– বজ্জাতটা আসেনি?
বজ্জাত কথাটা শুনে ছেলের ভাবী( মিহিকা) গলাটা একটু ঝেড়ে, বজ্জাত কে?

-বুজলেন না? মাথায় কি গোবর নিয়ে মেয়ে দেখতে আসছেন? যাইহোক বুজিয়ে বলছি,কি আর করার নিজের বাবার খেয়ে আপনাদের বুজাতে হচ্ছে।যার জন্য আমাকে দেখতে আসছেন।

-ইয়ে মানে ওর কাজ আছে তো তাই আসতে পারবে না।আর ওর নাম বজ্জাত না।ওর ভালো নাম হচ্ছে আদনান মাহমুদ আয়ান। নিজের বিজনেস আছে,,
আরও কিছু বলার আগেই, হয়েছে হয়েছে আপনার কাছে কারেক্টার সার্টিফিকেট চাইনি।ছেলেরা কেমন হয় আমার ভালো করেই জানা আছে।
মিহিকা প্রাপ্তির কথা শুনে যেনো কানে চোখে আগুন বেরুচ্ছে। সব কিছুতেই যেনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাচ্ছে। এই মেয়েকে যাই বলিনা কেনো সবকিছুই উল্টো করে ফেলে।মিহিকা ভয়ে ভয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো,কিসে পড় তুমি?

-একি আপনি জানেন না আমি কিসে পড়ি? ( প্রাপ্তি তার বাবার দিকে তাকিয়ে) আব্বু তুমি বলো, এরা কি আমাকে বউ করে নিয়ে যাবে? নাকি আমার স্যারদেরকে।শুনুন আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ার । আর হ্যাঁ মেয়ে দেখতে আসলে সব কিছু জেনেই আসতে হয়।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই তো বেহুশ। এই কেমন মেয়েরে বাবা।আয়ান এই আমাদের কোথায় পাঠালো?আয়ান তুই এই কোন আমাজন অঞ্চলে আগমন করালি আমাদের? মিহিকা মনে মনে ভাবছে আর কান্নায় মনকে শান্তনা দিচ্ছে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে