হটাৎ এক বৃষ্টির দিনে পর্ব-০১

0
1998

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১ #এটা_গল্প_কার?
#নবনী_নীলা

হালকা ঠান্ডা বাতাসে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ খুলে বাম পাশে তাকাতেই দেখি অভি আমার পড়ার টেবিলের পাশের চেয়ারটায় বসে আছে। খুব মনযোগ দিয়ে কিছু পড়ছে। কিন্তু অভি আমার ঘরে কি করে আসবে? আমি তো গতকাল সকালে মায়ের বাসায় চলে এসেছি। আমি তাহলে জ্বরের ঘোরে ভুল কিছু দেখলাম। আমি চোখ খুলে আবার অভির দিকে তাকালাম। তারমানে অভি সত্যি আমার রুমে আছে। তাহলে কি আমার জ্বর হয়েছে শুনে আমাকে দেখতে এসেছে। আমি চোখ বন্ধ করে এই ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু মনযোগ দিয়ে অভি কি পরছিলো আমার টেবিল এ এমন কোনো বোরিং বইতো নেই যার প্রতি অভি আগ্রহ বোধ করবে।

চোখ বন্ধ করে অভির হাতের বইটার কথা ভাবছি, কালো রঙের বই একচুয়ালি বই না একটা ডাইরি। ডাইরি মানে আমার ডাইরি। কি! আমার ডাইরি পড়ছে অভি, ভেবেই ঝড়ের গতিতে সোয়া থেকে উঠে লাফ মেরে বসে পড়লাম। কত বড় সাহস আমার ডাইরি পড়ছে!

আমার হটাৎ এমন উঠে পড়ায় অভি হতভম্ব হয়ে গেছে, একটু ঘাবড়ে গিয়েছে। অভি হুরো হুরি করে আমার পাশে এসে বসলো। তারপর দুইহাতে আমাকে জড়িয়ে নিয়ে আমার মাথা নিজের বুকে রেখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। উনি হয়তো ভেবেছেন আমার সাথের জ্বীন ঘুমের মাঝে আমার গলা চেপে ধরেছে।

আমার বাসার সবাই বিশ্বাস করে আমার সাথে জ্বীন আছে। একবার ছোটো বোনকে ভয় দেখাতে বলেছিলাম। ব্যাস নিজের অজান্তেই ভূত, জ্বিনের সাথে আমার বসবাস। বাসায় সবাই জেনে গেলো তার উপর আমাকে নিজের সাথে কথা বলতে দেখে এই বিষয়ে তাদের প্রখর ধারণা তৈরি হয়েছে। কম ঝাঁটার বাড়ি, ধোঁয়ার ঘন্ধ সহ্য করিনি আমি। ওই ভুয়া ফকির বাবা গুলাকে পেলে কি যে করতাম। বিয়ের পর ঘুমের মাঝে অভিকে একটা লাথি মেরে ছিলাম মাঝের কোলবালিশটা ছিলো না তাই লেগেছে অভির গায়ে।
এই কথা মজা করে ছোটো বোনকে বলেছিলাম ব্যাস অভির কানেও জ্বিনের কথা ভরে দিয়েছে আমার বোন। অভি যদিও সেদিন একটু হেসেছিলো কথাটা শুনে। না না ফ্ল্যাশ ব্যাক এ যাওয়ার সময় এটা না।

-” তুমি কি খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছ? ভয় পেয়ো না আমি আছি।”

বাহ্! যাক তাইলে জীনে গলা টিপে ধরেছে এইটা ভাবিনি সে। একটা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডাইরি কেনো ধরবে। আমি মাথা তুলে অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,
” আপনি আমার ডাইরি কেনো পড়ছিলেন?”

-” আচ্ছা তোমার সাথের জ্বীন কি ঘুমের মধ্যে আসে পাশে কি হয় সেটাও তোমাকে বলে দেয়।” অভি খুব ভালো করে জানে জ্বীন টপিকটা আমার খুবই অসহ্য লাগে। তাও আমাকে এইগুলো বলে।

আমি রেগে বললাম,”টপিক ঘুরবেন না, আপনি আমার ডাইরি ধরেছেন কেনো?”

অভি আমার কথায় কান দিলো না। আমার কাছে আসতে লাগলো। আমার মাথায় হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করছে। কেমনটা লাগে? কি সাবলীল ভাবে আমার কথা ইগনোর করে সে বললো,” জ্বর কমেছে কিন্তু পুরোপুরি সেরে যায় নি।”

টেবিল থেকে পানি নিয়ে আমার সামনে ধরলো।”পানি খাও তোমার ভালো লাগবে।”

-” খাবো না। আগে বলুন আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডাইরি কেনো ধরেছেন? ”

অভি সুন্দর করে পানির গ্লাসটা নিজের হাতে নিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো তারপর বললো,” নওরীন আমাকে রাগিও না। You Know right রাগলে আমি কি কি করতে পারি। আমাকে না রাগানোটা তোমার জন্যই ভালো তাই নয় কি?”

একে বলে ঠান্ডা মাথায় সুন্দর করে proper way তে বাঁশ দেওয়া। এর আগে একদিন বলেছিলো রাগাতে না আমি যে জন্মগত ঘাওড়া একবারে শুনি নাকি। আমিও ঘাওরমি করেছি,আমাকে টেনে নিয়ে পানি ভর্তি বাথটাব এ ভিজিয়ে দিয়েছে। এবার আবার কি করবে কে জানে। এতো সকালে বাথটাব এ ভিজার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই অনেক ঠান্ডা থাকবে পানি।

” হ্যা আমাকে নিরীহ পেয়ে মানুষ খালি আমাকে হুমকি দিয়ে যায়। আজ আমি অসুস্থ বলে, আপনা টাইম আয়েগা। হুহ!” বলে পানিটা খেয়ে ফেললাম এক ঢোকে পরে বুঝলাম পানির নাম করে স্যালাইন খাওয়ানো হয়েছে আমাকে।

আমি কোথায় মায়ের বাসায় আসলাম একটু শান্তিতে থাকবো বলে কিন্তু এই লোকটা এখানেও জ্বালাতন করতে চলে আসছে। কোথাও আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না।

“আপনি এখানে কেনো এসেছেন?”, প্রশ্ন করে অভির চোখের দিকে তাকালাম।

” তুমি যা শুরু করেছ না এসে উপায় ছিলো,পরে তো শুনতে হবে আমি খেয়াল রাখিনি তাই এমন হয়েছে। আর তুমি যে আসবে আমাকে তো বলোনি।”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না অথৈ এর বলা কথাগুলো মনে হতে লাগলো। অথৈ ফিরে আসতে চায় অভির জীবনে। গতকাল অথৈ ফোন দিয়েছিলো আমাকে । আমাকে বলেছে অভিকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে, অভি নাকি কখনো নিজের দায়িত্ববোধের কারণে আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে না। আমাকে আরো বলেছে ওদের মাঝে একমাত্র কাটা এবার আমি।

অভি আর অথৈ এদের ভালোবাসার গল্প কে না জানে? এই পাড়ার সব ছেলে মেয়ে জানে। ওদের এই গল্পে আমি কে? এই গল্পে আমি কেনো জড়িয়েছি? আমার উপস্থিতি অভির জিবনে কোনো প্রয়োজন নেই। আমাকে কি সরে যেতে হবে?নিজের অজান্তে এইগুলো ভাবতে ভাবতে কখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো আমি বুঝলাম না। হটাৎ অভির হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম অভি আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে উঠে যেতেই অভির আমার হাত ধরে টেনে আমাকে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

আমি অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছি না। কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।

” নওরীন কি হয়েছে তোমার? কালকে আমকে না বলে চলে এলে, রাস্তায় বৃষ্টিতে বিজেছ শুনলাম এখন আবার কাঁদছো। আমাকে বলো।” বলে আমার খোলা চুলে মুখ ডুবিয়ে একটানিশ্বাস ছাড়লো অভি। এই নিঃশব্দের ভাষাটা আমি বুঝি। এটা একপ্রকার অনুরোধ, অভি চায় আমি যেনো ওকে আমার কষ্টের কারণটা বলি। অভি কখন আমার মন খারাপ থাকলে মন খারাপের কারণ জানার জন্য জোর করে না। কারো মন খারাপ হলে কি করতে হয় সেটাও অভি জানে না।

এই গল্পটাই যখন অন্য কারোর তাহলে কিসের এত পিছুটান। অথৈকে পেলে হয়তো আমার কোনো প্রয়োজন থাকবে না তখন। আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। অভি খানিকটা অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললো না।

যেই জিনিসটা তোমার না তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই নওরীন। একদিন তোমাকেই সরে যেতে হবে। আমি বুঝেছি এবার আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমি পিছে না তাকিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নেওয়ার সময় চলে এসেছে।

[চলবে]

🍁কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।🍁

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে