স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২০

0
3389

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে আছি।রাতের বেলায় এইরকম সুন্দর দৃশ্য দেখলে চোখ সেখানেই আটকে যায়।আর সেই সাথে উনার কথা ভাবছি।আমার রাগি বরটা আমাদের বিয়ের ২ মাসের মধ্যেই আমার হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছে।ও একটু না অনেকটাই রাগি আর জেদি হলেও ওর মনটা অনেক পরিষ্কার।ওর দেওয়া একটু একটু ভালোবাসা আর যত্ন আমাকে তা ক্ষণে ক্ষণে বুঝিয়েছি।ওর এই ভালোবাসা নিয়ে বাকিটা জীবন ভালোভাবে পাড়ি দিতে চাই।আর তাই এখন মনে মনে এইও ঠিক করে ফেলেছি ওকে আমার অতীতের কথা জানাবো না।আমার সংসারে আর নতুন করে আমি ঝামেলা চাই না।তাছাড়া ওর সামনে ওই কথা বলার পর হয়ত আমার প্রতি ওর ভালোবাসার অস্তিত্ব আর থাকবে না আর সেইসাথে ওর সামনে আর মাথা উঁচু করে আমি দাঁড়াতে পারব না।আর এটাই সবচেয়ে চরম সত্য কথা।তাই কষ্ট হলেও অতীতের কথা ওর কাছে গোপন রাখব।

আর এইদিকে ফারিদ যে আমার কাছে এসে আমাকে দেখছে সেদিকে আমার কোন খেয়াল ই ছিল না।

“বাহ ম্যাডামের তো কোন হুশই নেই দেখছি।” পিছনের দিক থেকে ও আমাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল।

“আপনি?”

আমার চুলেই মুখটা ডুবিয়ে ফারিদ জবাব দিল,, “হুম আমি। বুঝলে কি করে এইটা আমি?”
না বুঝার কি আছে।আপনার স্পর্শ আমি খুব ভালো করেই চিনি।তাছাড়া আপনি ছাড়া আমাকে এইভাবে ধরার সাহস আর কারোর আছে নাকি?”
“হুম ঠিক বলছ।আর যেই ব্যাটা এই সাহস করবে তার হাত পা ভেঙ্গে কুকুরদের কাছে দিয়ে আসব।আমি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ করার অধিকার আর কারোর নেই।”
“তা এত রাতে এইখানে আসার কারণটা কি?”
“আমার বউ মনে হয় যেন কিছুই জানে না।বউ যে তার স্বামীকে না জানিয়েই শশুড় বাড়ি ছেড়ে নিজের মায়ের বাসায় একদিন থাকার জন্য চলে আসছে সেটা কি সে ঠিক করেছে?”
“আরে শুশুড় বাড়ি থেকে আমার মায়ের বাড়িতে আসতে জাস্ট ৫ মিনিট সময় লাগে। যখন আপনার মন চাইবে তখন এখানে চলে আসবেন।তা এই খবরটা কি আপনাকে জানিয়ে এরপর এখানে আসা লাগবে?”
“একশবার লাগবে।তোমাকে রুমে না পেয়ে খুব টেনশন হচ্ছিল।পরে মা বলল তুমি তোমার মায়ের কাছে আসছ।সেই যাই হোক আমাকে জানিয়েই তারপর এখানে আসবে।নাহলে কিন্তু পরে দিয়ে শাস্তি দিব।”
“আচ্ছা তাই?তা কি শাস্তি দিবেন শুনি?”
“হুম তাই।আর শাস্তিটা হবে…… আমার কানের কাছে কিছু বলল…..”

লজ্জায় মাথা নিচু করে,,”মনে মনে তাহলে এইগুলো ঘুরে না?”
“হুম এইগুলো ঘুরে” বলে দুষ্টুমি একটা হাসি দিল।
শুনো,,মায়ের বাসায় এসে থাকো সমস্যা নাই কিন্তু রাতের বেলায় এখানে থাকা চলবেনা।রাতের বেলায় তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না।”

আমি এবার পিছন থেকে ফিরে ফারিদের সামনে আসলাম। ফারিদ অনেক লম্বা হওয়ায় ওর সাথে কথা বলার সময় আমার মাথাটা ফারিদের বুক পর্যন্ত আটকে থাকে।ফলে আমি ফারিদের চোখের দিকে তাকিয়ে মন ভরে কথা বলতে পারি না।আর বিষয়টাও ফারিদ বুঝতে পেরে আমাকে বলেছিল ওর পায়ের উপর পা রেখে যাতে কথা বলি।তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।এখন ফারিদ আমাকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝাচ্ছে আমি যাতে ওর পায়ের উপর পা রাখি।বিষয়টা বুঝতে পেরে আমি আর একটুও দেরি করলাম না।তাড়াতাড়ি করে ফারিদের পায়ের উপর পা রাখলাম।ওর এই ইশারার জন্য এতক্ষণ ধরে আমি অপেক্ষা করছিলাম।এরপর ফারিদের গলাটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে একটু দুষ্টুমি ভঙ্গিতে বললাম,,,

“আচ্ছা তাহলে বিয়ের আগে বউকে ছেড়ে কিভাবে ঘুমাতেন ?”
“তখনো খুব কষ্ট হত।কিন্তু এখন বিয়ে করে সে কষ্টটা আর সহ্য করতে পারি না।তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গেছ।তোমাকে পেয়ে সে অভ্যাসটা ত্যাগ করা খুব কষ্ট জান।”

“এই ছিহ আমাকে জান বলবেন না। স্যার আপনি জানেন না এইভাবে কোন মানুষকে জান বলতে হয় না।জান মানে হচ্ছে জীবন।তার মানে আপনি কাউকে জান বলে ডাকলে তার অর্থ হবে তুমি আমার জীবন।কিন্তু এই জীবনটা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।তাহলে অন্য কেউ আপনার জীবন কি করে হয়?আর এক্ষেত্রে আপনিও বা কেমন করে একজন মানুষকে জান বলে ডাকেন!এইভাবে কাউকে জান বলে ডাকলে আল্লাহ রাগ করবেন।আর কখনো এই ফালতু নামে আমাকে ডাকবেন না।আকীকা করে মামণি আমার এত সুন্দর একটা নাম রাখছে। আর সেই নামে আমাকে না ডেকে…….. ”

আমার কোমড়টা শক্ত করে ধরে,,, আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘষে ফারিদ বলল,,,”আমার বউটা তো দেখি অনেক কিছু জানে।সরি আর কখনো এই কথা বলব না।আসলে সবাইকে দেখি ওরা ওদের ভালোবাসার মানুষকে আদর করে জান,বাবু বলে বেড়ায়।আমিও ভাবলাম তোমাকে আদর করে জান ডাকি।কিন্তু এইভাবে ভালোবাসার মানুষ বা অন্য কাউকে কে যে জান বলে ডাকতে হয় না সেটা আমার মাথায় আসেনি।সরি।”

“ইটস ওকে।আর এই ভুল করবেন না।”
“হুম,, বাবুর আম্মু।”

ফারিদের বুকে মাথা রেখে বললাম,,, “শুনেন,”
“জ্বী বলেন,,”
“আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন তাই না?”

আমার মাথাটা ওর বুক থেকে উঠিয়ে,, “ম্যাডাম আপনার কি মনে হয়?যদি মুখ দিয়ে মিথ্যা কথা বলি তাহলে তা বিশ্বাসও করে ফেলতে পারেন।সেজন্য আমার ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে এটা আপনাকে অনুভব করতে হবে যে আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি কিনা তাহলেই এর উত্তর পেয়ে যাবেন।”

মুচকি হেসে,,”হুম।শুনেন শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন অন্য কাউকে না।আপনার অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরে অনেক কষ্ট করে নিজের মনকে বুঝিয়েছি যে আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসেন অন্য কাউকে না।প্লিজ আমার এই বিশ্বাসটাকে ভেঙ্গে দিবেন না।”

“আমি কখনো এই জঘণ্য কাজটা করব না।”
“কিন্তু আপনি এই জঘন্য কাজটা কিন্তু আমার সাথে করেছেন?”
“কখন?”
“আমাকে কিডন্যাপ করে এরপর ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বিয়ে করে।”
“সেইদিনের সেই কাজটার জন্য আমি খুব দুঃখিত।আসলে সেইদিন নিজের রাগটাকে সামলাতে পারিনি।তুমি আমাদের বাসায় গিয়ে আমার সম্পর্কে আমার মাকে যা যা বলো এসেছ তাতে উনি খুব কষ্ট পেয়েছেন।বাসায় আসার পর মায়ের কাছে এইসব কথা শুনে নিজের রাগটা সামলাতে পারিনি। ।আবার তোমাকে হারানোর ভয়টাও ছিল তাই এইরকম একটা বাজে কাজ আমি তোমার সাথে করে ফেলছি।”
“আচ্ছা আমি যদি বিয়েতে রাজী না হতাম আপনি কি সত্যি সত্যি আমার ক্ষতি করতেন?!
“কি মনে হয় তোমার?”
“তখন মনে হয়েছিল আপনি যে পাগল সত্যি সত্যি এই কাজটা করে ফেলতেও পারেন।”
“আর এখন?”
“এখন মনে হয় আপনি আমাকে ভয় দেখানোর জন্যই এই কথাটা বলছিলেন।কিন্তু কখনো এই খারাপ কাজটা আর যাই হোক করতেন না।”

আমার কপালে চুমো দিয়ে,, “থ্যাংকস তিলোত্তমা আমাকে বুঝার জন্য।যা করেছিলাম দুইজনের ভালোর জন্যই করেছিলাম যদিউ তোমাকে বিয়ে করার পদ্ধতিটা ছিল অন্যায়।”
“অন্যায় আমিও করেছিলাম।আমারো দোষ ছিল।আপনার মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করা আমার মোটেও ঠিক হয় নাই।যাই হোক আপনার আর আমার অন্যায়টা কাটাকাটি করে ফেলি।তাহলেই হল।এখন আর কারোর অন্যায় নেই।”
“হুম,,বাবুর আম্মু।”
.
.
এর কয়েকদিন পর,,,,

মামণির বাসায় গিয়ে দেখি মামণি পড়ার টেবিলে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে।মামণিকে এইরকম শান্তভাবে বসে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগছিল।জীবনে কত কষ্টটাই না পেল আমার মামণিটা।

“মামণি,,,হঠাৎ করে বাসায় আসতে বললে যে?”
“তোর রুমে একটা চিঠি আছে।রুমে গিয়ে সেটা দেখ গিয়ে।”
“মামণি তুমি কি কাঁদছিলে? তোমার চোখ দুইটা ফুলা কেন?”
“ও কিছু না।”
“কিছুতো একটা হয়েছে?বলো কাঁদছিলে কেন?কে আমার মামণিকে কষ্ট দিয়েছে একটাবার তার নাম বল,দেখবা ওর অবস্থা আমি একদম খারাপ করে দিব।”
“আরে কিচ্ছু হয়নি।তুই একটু বেশি ভাবছিস।
যা রুমে যা।চিঠিটা পড়া শেষ হয়ে গেলে আমার কাছে আসিস।জরুরি কথা আছে।তাড়াতাড়ি যা।”

খুব অবাক হয়ে গেলাম। চিঠি! তাও আবার আমার রুমে! কে পাঠাল চিঠি?চিঠির কথা শুনে মনে ভয় লাগা শুরু হয়ে গেল।এইরকম চিঠি একবার আমার কাছে এসেছিল কিন্তু চিঠির কাগজটা পড়েই যখন জানতে পারলাম আমার ভালোবাসার মানুষটা আত্মহত্যা করেছে তখন খুব খুব কষ্ট হচ্ছিল।আর সেই কষ্টটা এখন আবার হচ্ছে।আবারো কিছু হারানোর ভয়ে।তখন একটা কথাই শুধু মনে হচ্ছিল আমার কাছে চিঠি আসা মানে আমার কাছের মানুষের মৃত্যুর খবর আসা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে