স্যার পর্ব-০২

0
1735

#স্যার
পর্ব_২
লেখনীতে — আফরোজা আক্তার

রাতে খাবার টেবিলে রুশারা সবাই মিলে বসে আছে। রুশা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। নাসরিন তার ৭ বছরের ছেলে রাইসুলকে খাইয়ে দিচ্ছে। আশরাফ গম্ভীর মুখে বসে আছে। বাবার এমন গম্ভীর হওয়াটা খুব সহজেই ধরতে পারে রুশা। রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তার। প্রিন্সিপাল স্যার ফোন করেছে তার বাবাকে। নিশ্চয়ই ভালো মন্দ কথা শুনিয়েছে। রুশার সাহস হচ্ছে না বাবাকে কিছু বলার। তবে রুশা এটাও জানে তাকে তেমন কিছুই বলবে না তার বাবা। কারণ, রুশা তার বাবা-মায়ের কলিজার টুকরা। রুশা এটাও জানে যে, তার জন্ম খুব কষ্ট করেই হয়েছে। সেইজন্যই রুশার জন্য তারা দু’জনেই পাগল। রুশার জন্মের আবার কয়েক বছর রাইসুলের জন্ম হয়। রাইসুলে আসার পরেও রুশার ভালোবাসা এতটুকুও কমেনি।
বাবার এই গাম্ভীর্য ভাব রুশা মানতে পারছে না। খাবার সামনে রেখেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুড়ে দেয় রুশা। রুশাকে কাঁদতে দেখে আশরাফ আর নাসরিন উভয়েই অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আশরাফ শত রেগে থাকলেও মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারে না। তিনি চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মেয়ের পাশে দাঁড়ায়। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে মেয়েকে সান্ত্বনা দেয়।
“কী হয়েছে মামুনি? কান্না কেনো করছো?”
“তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলছো না বাবা? আমি কি খুব পঁচা হয়ে গেছি?”
“নাহ তো। কে বলেছে আমার মামুনি পঁচা হয়ে গেছে?”
“কেউই বলে নাই। আমিই বললাম। তাহলে তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলো না। আম্মু আজকে রাইসুলকে বেশি বেশি আদর করেছে। আমাকে একটুও কাছে ডাকেনি। কেনো বাবা?”
আশরাফ ভ্রু জোড়া কুঁচকে স্ত্রীর দিকে তাকায়৷ নাসরিনও অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্বামীর দিকে। রেজাল্ট এতোটাই খারাপ হয়েছে যে তিনিও মেয়ের প্রতি রেগে ছিলেন বলে মেয়ের সাথে তেমন কথা বলেনি আজ। আশরাফের কাছে এই জিনিসটা খুব খারাপ লাগে। তিনি রুশার সামনেই নাসরিনকে বলে,
“মেয়ের একটু রেজাল্টই তো খারাপ হয়েছে। এর জন্য তুমি মেয়ের সাথে কথা বলবে না? কেনো নাসরিন?”
“তুমিও তো মেয়েকে আজকে ফোন দাওনি। তার বেলায়?”
রুশা আবারও কান্না শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“তোমরা দু’জনের একজনও আমায় আর ভালোবাসো না। রুশা তো ব্যাড গার্ল, তাই রুশাকে আর আদর করো না। আমি তো সব বুঝি।”
আশরাফ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
“বাবা অলয়েজ লাভস ইউ বাচ্চা।”
নাসরিনও পাশের চেয়ারে বসে বলে,
“আম্মু অলসো লাভ ইউ বাচ্চা। কাঁদে না। রেজাল্ট খারাপ করেছিস বলে একটু রেগে ছিলাম। আর কান্না করে না মা।”
রুশাও চুপচাপ হয়ে যায়। তার কান্না করার আর প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট প্যাম্পার পেয়েছে সে। বেশি কাঁদলে ন্যাকামি হয়ে যাবে। তাই চুপ হয়ে যায়।
আশরাফ খাবার খেতে খেতে রুশাকে বলে,
“মামুনি, তোমার জন্য স্যার ঠিক করেছি। স্যার আগামীকাল থেকে আসবে।”
রুশা তখন পানি খাচ্ছিলো। স্যারের কথা শুনে নাকে মুখে পানি উঠে যায় তার। এসব কী কথাবার্তা! স্যার! এই সময়েও স্যার! কলেজের সবাই জানলে তাকে নিয়ে আরও হাসা-হাসি করবে। বলবে রুশা ক্লাস ফাইভের বাচ্চার মতো এখনো বাসায় টিচার রেখে পড়ে। নাহ নাহ, এটা কখনোই সম্ভব না। রুশা সাথে সাথে বলে ওঠে,
“ইম্পসিবল বাবা। কখনোই না। আমি বাসায় টিচার রাখতে চাই না। আমি পড়বো না। প্রয়োজন হলে আমি ব্যাচে গিয়ে পড়বো। তবুও বাসায় পড়বো না। তুমি ওই স্যারকে বারণ করে দাও।”
মেয়ের কথা শুনে আশরাফ আবারও ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকায় মেয়ের দিকে।
“বাসায় স্যার আসলে সমস্যা কোথায় তোমার?”
“অনেক সমস্যা। আমি কি এখনো স্কুলে পড়ি নাকি যে বাসায় স্যার আসবে। আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। আমি এখন কলেজে পড়ি৷ সো, নো টিচার।”
“এবার পেয়েছো ১০ পরের বার পাবে ৫ এরপরের বার তো আর কথাই নাই।”
তখনই রাইসুল পাশ থেকে বলে ওঠে,
“এর পরের বার আপু ডাবল জিরো পাবে। মানে দুইটা আন্ডা। আম্মু মামলেট করে দিবে আর আপু ওই দুইটা মামলেট আন্ডা পরোটা দিয়ে খাবে।”
রাইসুলের কথা শুনে আশরাফ এবং নাসরিন উভয়েই হেসে দেয়। রুশার ইচ্ছা করছে রাইসুলকে কষে এক থাপ্পড় দিতে। কিন্তু উপায় নেই। সামনে বাবা-মা দু’জনেই বসে আছে। শুধু চোখ জোড়া বড় করে তাকিয়ে আছে সে রাইসুলের দিকে। আশরাফ হাসি থামিয়ে বললো,
“স্যারকে বারণ করা যাবে না। স্যার যথেষ্ট ভালো মানুষ। তোমার সাত্তার আংকেলের মেয়েকে সে পড়ায়। চিনেছো তো সাত্তার আংকেলের মেয়েকে। ওই যে মিম, যাকে মিম আপু বলে ডাকো। তাকে পড়ায়। মিম তো অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। তোমার থেকেও বড়। সে যদি পড়তে পারে তুমিও পড়তে পারবে। আর কোনো কথা না। স্যার আগামীকাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আসবেন। টানা দু ঘন্টা তুমি তার কাছে পড়বে।”
রুশা ভালো মন্দ আর কিছু বলেনি। তার ভয় হচ্ছে রাসিনকে নিয়ে। রাসিন যদি কোনো ভাবে টের পায় সে বাসায় টিচারের কাছে পড়ে তাহলে তাকে কলেজে খুব পঁচাবে। মুখ শুকনো করে মা’কে বলে৷
“আম্মু, রাসিন যাতে কোনো মতেই না জানে আমার জন্য তোমরা বাসায় স্যার রেখেছো। নয়তো ও আমার কলেজ যাওয়া হারাম করে দিবে।”
মেয়ের কথা শুনে তারা দু’জনেই হাসে। চট করে আশরাফ বলে,
“তুমি নাকি সাইন্স গ্রুপের কোন মেয়েকে ভরা মাঠে চড় মেরেছো। কেন রুশা?”
“আমি ইচ্ছে করে মারিনি।”
“তাহলে?”
“রাসিন ক্লাস মিস করেছিল। মাঠে গিয়ে দেখি ওই মেয়ের সাথে হা হা হি হি করা শুরু করে দিয়েছে। আবার বুটও খাচ্ছে। তো আমি গিয়ে রাসিনকে বলতেছিলাম ওই মুহুর্তে ওই মেয়েটা তার লম্বা খাড়া নাকটা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সহ্য করতে পারিনি বলে মেরেছি এক থাপ্পড়। পরদিন গিয়ে স্যরি বলেছি।”
“লাভ হলো কী? তুমি মেয়েটাকে শুধু শুধু মারলে। দেখলে তো নিজে ১০ পেয়েছো।”
“বাবা, বার বার ১০ পেয়েছি ১০ পেয়েছি বলবা না তো। ভাল্লাগে না আমার।”
“রাসিন ক্লাস মিস দিয়েও ৯৫ পায়। আর আমার মামুনি এতো মনোযোগ দিয়েও পায় ১০। হায়রে পড়া রে।”
নাসরিন মুচকি হাসে। আশরাফও হাসে। রুশার নিজের কাছে অপমানিত বোধ হচ্ছে। তাই সে উঠে নিজের ঘরে চলে যায়। রুশা চলে গেলে আশরাফ নাসরিনকে বলে,
“শুনেছি ছেলেটা বেশ ভালো পড়ায়। মিমের রেজাল্ট বরাবরই ভালো। আবার শুনেছি পড়া না পারলে এমন এমন শাস্তি দেয় যার ভয়েই সবাই পড়া শিখে। মনে হচ্ছে এতো দিনে রুশার জন্য ঠিকঠাক একজন মানুষ খুঁজে পেয়েছি। যা আমরা পারিনি তা স্যার পারবে।”
“আমার তো ওর রেজাল্ট ভালো হলেই হয়। আর কিছু চাই না। আশরাফ আমি এখনো অবাক সে ১০ পেয়েছে কীভাবে? তুমি একবার আগামীকাল কলেজে যেয়ো তো। প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে ওর পরিসংখ্যান খাতাটা দেখার ব্যবস্থা করো। দেখে এসো মেয়ে লিখেছিলো টা কী?”
“আচ্ছা দেখবো। চিন্তা কোরো না।”
রাত তখন এগারোটা। রুশা অনলাইন দেখছে। নিউজফিড ঘাটাঘাটি করছে। এমন সময় রাসিনের একটা পোস্ট সামনে পড়ে তার। রাসিন স্ট্যাটাস দিয়েছে, ‘সারাবছর ক্লাস করে পাবলিক কীভাবে ফেইল করে’ আবার হা হা ইমুজিও দিয়েছে। রুশা কমেন্ট চেক করে দেখতে পায় সাইন্স গ্রুপের সেই মেয়েটাও কমেন্ট করেছে। কমেন্টটা এমন ছিলো যে, ‘থাক থাক বেচারিকে আর শোক দিয়ো না।’
রুশার চোখ ফেটে পানি পড়ছে। রাসিনকে ওই মুহুর্তে অনলাইনে পায় রুশা। সাথে সাথে ফোন দেয় ম্যাসেঞ্জারে। রাসিনও ফোন রিসিভ করে।
“কিরে ফেল্টুস! কী খবর?”
রাসিনের কথাটা শুনে আরও মেজাজ খারাপ হয় রুশার। এলোপাথাড়ি বকা শুরু করে রুশা।
“রাসিন, তুই কি মানুষ? ভুলে গেছিস অতীতের কথা? বাহ রাসিন বাহ! কত্ত ভালো বন্ধু তুই আমার। বাহ বাহ! নিজে যখন অংকে ৫ পাইলি। তোরে কত্তো সান্ত্বনা দিলাম আমি। তোর জন্য একদিন না খেয়ে থেকেছি। তুই খাস নাই বলে। আর আজ সেই তুই-ই আমারে নিয়া পোস্ট করিস। আবার তোর সেই পোস্টে সেই শাকচুন্নি কমেন্টও করছে। বাহ বাহ! রাসিন এতোদিন জানতাম সেরে গেলে সবাই বাঘের বাচ্চা হয়। কিন্তু তুই তো বাঘের বাচ্চা না। তুই হইলি কুত্তার বাচ্চা।”
রুশার কথা শুনে রাসিনের মেজাজও খারাপ হয়ে যায়। রুশা তাকে গালি দিয়েছে। সে-ও চুপ থাকে নি।
“খবরদার রুশা। গালি দিবি না। ওটা কি তোরে মিন করে বলছি নাকি তোরে ট্যাগ করে পোস্ট করছি। তুই আমায় কুত্তার বাচ্চা বলস কোন সাহসে। বেয়াদব, অসভ্য, ফাযিল মেয়ে।”
“আমায় মিন করে দেস নাই। তাহলে ওই শাকচুন্নি কমেন্টে কার কথা বলছে। তোর বউয়ের কথা?”
“থাপড়ে গাল লাল করে ফেলবো। কোনো ফেল্টুস আমার বউ হবে না। ভাগ এখান থেকে। ইশাকে শাকচুন্নি বলবি না। ও যথেষ্ট ভালো। তোর থেকে যথেষ্ট ভালো সে। সাহস হয় কীভাবে আমাকে গালি দেস।”
“একশো বার দিবো। তুই একটা কুত্তার বাচ্চা।”
“তুই হইলি গাধার বাচ্চা। বেয়াদব, দাঁড়া তোরে এক্ষুনি ব্লক করতেছি।”
ব্লকের কথা শুনে রুশা আবারও কেঁদে দেয়। কান্না করতে করতে বলে,
“দে দে। এক্ষুনি ব্লক দে। আর কখনো ব্লক খুলবি না। যদি খুলোস তাহলে আমিই ব্লক করবো। এক্ষুনি ব্লক দিবি।”
এই বলে লাইন কেটে ফোন বন্ধ করে দেয়। বালিশ চাপা দিয়ে কান্না করে রুশা। সবাই বলে তাতে তার খারাপ লাগে না। কিন্তু রাসিন স্ট্যাটাস দিলো এটা দেখে খুব খারাপ লাগছে তার। দিয়ে দেক ব্লক তাকে। সে-ও কলেজে গেলে কখনো রাসিনের সাথে কথা বলবে না। সে তো ইচ্ছে করে ফেইল করেনি। সূত্র গুলো মাথায় না ঢুকলে তার এতে কী দোষ। সে মন দিয়ে পড়বে। বাসার স্যারের কাছেই পড়বে। আসুক স্যার বাসায়। এইসব বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায় রুশা।
মেয়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে নাসরিন আর আশরাফ সবটা শুনে নেয়। রাসিনের মোটেও এমন করা উচিত হয়নি। নাসরিন মেয়ের কান্না দেখে নিজেও কান্না করে দেয়। আশরাফ তাকে বলে,
“শক্ত হও। মেয়েকে আর কতকাল এইভাবে আগলে আগলে রাখবো আমরা। এমন ছোট ছোট কষ্টগুলোই আমাদের মেয়েকে শক্ত করবে। চলো, ঘরে চলো। আমি রাসিনকে ফোন করে দেখছি ব্যাপারটা।”

পরদিন।
আজ রুশা কলেজে যায়নি। সারাদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছে। মা’কে বলে দিয়েছে রাসিন ফোন করলে যেনো তাকে না দেয়। যেনো বলে দেয় রুশা ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রাসিন তার মা’কে ফোন করেনি। এতোই ইগো তার।
সন্ধ্যায় মায়ের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুশা। রুশার বারান্দা খুব পছন্দ। তার ঘরেও একটা বারান্দা আছে। রুশা মাঝে মাঝে বারান্দায় দাঁড়ায়। রুশার বারান্দায় এক জোড়া লাভ-বার্ড আছে। আর এক জোড়া টিয়াপাখি আছে। রুশা বিকেলে তাদের সাথে একা একা গল্প করে। আবার যখন রাতে ঘুম হয় না। তাদের সাথে খেলা করে। যদিও রুশার ১৯ বছর। কিন্তু মনটা তার এখনো ছোট শিশুর মতো। বাবা-মায়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা তাকে কখনো বড় হতে দেয়নি।
সন্ধ্যার পর পরই বাসায় কলিংবেল বেজে ওঠে। রুশার সেদিকে খেয়াল নেই। কিছুক্ষণ পর নাসরিন রুশাকে ডাকে।
“রুশা তোমার স্যার এসেছে। কোথায় তুমি?”
মায়ের মুখে স্যারের কথা শুনেই ভড়কে যায় রুশা। স্যার চলেও এসেছে! সন্ধ্যা না হতেই স্যার হাজির। রুশার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে। স্যারকে বাজিয়ে দেখলে কেমন হয়? নিজে নিজে ভাবছে রুশা। স্যার যদি বুড়ো হয় তাহলে কিছু করা যাবে না। কিন্তু স্যার যদি ইয়াং হয় তাহলে লাইন লাগানো যাবে। এতো বিরক্ত করবো যে বাছাধন না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে।
রুশা এই ভেবে মুচকি হেসে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। স্যার তখন ড্রইংরুমে বসে আছেন। রুশা ড্রইংরুমে যেতেই নাসরিন বলে,
“রুশা এখানে আসো। ইনি তোমার স্যার। স্যারকে সালাম দাও।”
মায়ের কথায় সোফার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রুশা। স্যার তখন মাথা উঁচু করে রুশার দিকে তাকায়। আর রুশা সেখানেই হা হয়ে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে তার স্যারের দিকে। সালাম ভুলে গেছে সে। রুশার মা তখন চাপা স্বরে বলে,
“রুশা, স্যারকে সালাম দাও।”
কে শুনে কার কথা। রুশা তো তার স্যারকে দেখতেই ব্যস্ত। নাসরিন মেয়ের এমন আচরণে একটু বিব্রতবোধ করছেন।
সোফায় বসা সুদর্শন পুরুষটি নাসরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“সমস্যা নেই আন্টি। রুশা মেবি একটু ঘাবড়ে গেছে। সালাম আগামীকাল থেকে দিবে। এবং রেগুলারই দিবে।”
“যাক ভালো। রুশা, স্যারকে নিজের ঘরে নিয়ে যাও। আর হ্যাঁ মন দিয়ে পড়বে।”
রুশা মায়ের কথা মতো স্যারকে নিয়ে নিজের ঘরে যায়। পড়ার টেবিলের এক পাশে রুশা বসে অন্য পাশে স্যার বসেছে। রুশাকে বই খুলতে বলা হয়, কিন্তু রুশা তাকিয়ে আছে তার স্যারের দিকে।
ভ্রু জোড়া কুঁচকে স্যারও রুশাকে দেখছে। টেবিলে দুটো চাপড় মেরে রুশাকে বলছে,
“আমার মুখটাকে কি তোমার জিয়া উদ্যানের মাঠ মনে হচ্ছে? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? বই বের করতে বললাম না তোমাকে। বই বের করো।”
রুশা তখন তার স্যারকে বলছে,
“জিয়া উদ্যান কিন্তু আসলেই সুন্দর স্যার। প্রেমিক-প্রেমিকারা জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকে সেখানে।”
স্যার বেশ অবাক হয়ে বলে,
“হোয়াট!”
স্যারের হোয়াট শুনে রুশার ধ্যান ভাঙে। তখনই জিজ্ঞেস করে,
“স্যার, আপনার নাম কী?”
“নাম দিয়ে কাজ কী?”
“নাম জেনে রাখা ভালো। নাম বলেন।”
“আমার নাম নেই।”
“আপনার নাম্বারটা সেভ করবো কী নামে তাহলে?”
“আমার নাম্বার সেভ করতে হবে কেন?”
“স্যার আপনার বুদ্ধি কি হাটুতে নাকি?”
স্যার আবারও অবাক। বেশ ধমকের সাথেই বললো,
“হোয়াট!”
রুশাও একটু ভিমড়ি খেয়ে বলে,
“মানে কখনো আপনার সাথে কথা বলতে চাইলে আমি ফোন করবো কীভাবে?”
“আমার সাথে তোমার কিসের কথা তাও আবার ফোনে।”
“ঢেড়স,,,,”
“কিহ! কী বললে তুমি?”
“নাহ মানে, দেখা গেল একটা পড়া বুঝলাম না। তখন তো ফোন করতেই হবে। সেইজন্য তো নাম্বার প্রয়োজন। সেই নাম্বারটা সেভ করবো কী নামে। নামের তো প্রয়োজন তাই না?”
“স্যার দিয়ে সেভ করলেই হবে।”
“আপনার আব্বু-আম্মু কি স্যার রেখেছেন নাকি আপনার নাম?”
“তুমি বেশি কথা বলো।”
“সবাই এই একই কথা বলে স্যার। এইবার নাম আর নাম্বারটা দিন। সেভ করে পড়া শুরু করি।”
“আর ইউ শিওর?”
“শিওর শিওর।”
“আমার নাম ফায়াজ কারিম। তুমি আমায় স্যার অথবা ফায়াজ ভাইয়াও বলতে পারো। নাম্বারটা তোমার খাতায় লিখে দিয়ে যাবো। এখন বই খুলো। আর একটাও কথা না। ওকে।”
রুশা ভাবছে, আহা! ফায়াজ কারিম। কি সুন্দর নাম। নামের মধ্যে একটা পাকিস্তানি পাকিস্তানি ভাব আছে। চেহারা তো বাংলাদেশির মতোই লাগে। কিন্তু নামটা অনেক সুন্দর। দেখতেও মাশা-আল্লাহ। এই স্যার পড়াবে জানলে কখনোই মানা করতাম না। ভাগ্যিস বাবা আমার বারণ শোনেনি।
ফায়াজ ভাবছে, কোন পাগলের পাল্লায় পারলাম রে বাবা। এটা মেয়ে নাকি জোকার। এই মেয়েকে ঠিক করতে খবর ছুটে যাবে আমার।
রুশা কলম হাতে ফায়াজকে প্রশ্ন করে,
“স্যার, আপনি কি আমাকে নিয়ে কিছু বলছেন?”
রুশার কথা শুনে ফায়াজ চোখ বড় করে রুশার দিকে তাকায়। আর রুশা খিল খিল করে হেসে দেয়।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়…………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে