স্পর্শের_ভাষা part – 13

0
919

স্পর্শের_ভাষা part – 13
writer – তানিশা

— রাত প্রায় ৯ টা বাজে, আরাফ তিন্নির পায়ে আলতো করে মলম দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছে। পায়ে ব্যথা তিন্নি পেলেও আরাফ যেন তীব্রতার সাথে নিজেই তার ব্যথাটা অনুভব করছে। আর তিন্নি আরাফের দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে। সত্যি আরাফ তাকে এতটা ভালবাসে? নাকি আবারও কোনো অবিশ্বাসে কড়া নাড়া দিয়ে আরাফ তার আত্মসম্মানকে দূমড়েমূচড়ে দিবে?? আরাফকে বিশ্বাস করতেও তার অনেক ভয় হয়। আরাফ তার পায়ে মালিশ করে দিয়ে বলল,,,

আরাফ : ব্যথা কি কমেছে?

তিন্নি : আমি আহামরি কোনো ব্যথা পাইনি। এতটা reacted… করার কোনো প্রয়োজন নেই। ( স্বাভাবিক ভাবে )

আরাফ : reacted… কই করলাম? আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

তিন্নি : না, আমি নিজেই যেতে পারবো।

— আরাফ বিছানা ছেড়ে উঠে তিন্নির দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : যেতে পারবা?

তিন্নি : হুম।

— তিন্নি বিছানা থেকে নেমে হাটার জন্য পা বাড়াতেই, পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পেলো। নিজেকে সামলাতে না পেরে আরাফের কাঁধে জড়িয়ে ধরলো। আরাফ মুচকি হেসে একহাত দিয়ে তার কোমরে জড়িয়ে ধরে বলল,,,

আরাফ : সবকিছু আমার কাছে আসার বাহানা তাইনা?

তিন্নি : মোটেও না, আমি হাটার চেষ্টা করছি।

— তিন্নি মাথা নিচু করে আরাফের থেকে কিছুটা দূরে সরতে চাইলো। আরাফ তার দুহাত দিয়ে তিন্নির কোমরে জড়িয়ে ধরে তাকে আরও কাছে টেনে নিলো। আরাফ তাকে এতটা কাছে টেনে নিয়েছে, আরাফের গরম নিশ্বাস তিন্নির মুখে এসে পরছে। আরাফের নিশ্বাস এসে তার মুখে পরতেই সে শিউরে উঠে চোখদুটি বন্ধ করে নিলো। তার ঠোঁট দুটি কাঁপছে, না পারছে আরাফকে দূরে ঠেলে দিতে, না পারছে কাছে টেনে নিতে। আরাফ তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। এই মায়াবী মুখটার দিকে সে যতবার তাকায়, ততবার যেন তার মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তিন্নির কাঁপাকাঁপা ঠোঁট দুটি নিজের ঠোঁটে আলতো করে ছুয়ে দিতে। কিন্তু সব ইচ্ছে তো আর পূরণ হয়না। তিন্নি তার পাশে আছে এটাই আরাফের অনেক বড় পাওয়া। তবুও কেন জানি তিন্নিকে নিজের অন্তরঙ্গর কাছে পাবার নেশাকে কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। তিন্নিকে তার সবটা জুড়ে চাই। আরাফ তার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : তিন্নি তুমি তো বলতে স্পর্শের ও একটা ভাষা আছে। আমার এই স্পর্শে কি তুমি ভালবাসা খুঁজে পাওনা? একবার আমার এই #স্পর্শের_ভাষা অনুভব করে দেখো না, আমার ভালবাসায় কোনো অবিশ্বাসের ছায়া নেই। আছে অটুট বিশ্বাস আর তোমার জন্য হৃদয়ের উজাড় করা ভালবাসা।

— তিন্নি চোখদুটি খুলে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফ ক্লান্ত তার ভালবাসা পাবার জন্য। আরাফের চোখ দেখে বুঝা যায় তিন্নির জন্য তার ভালবাসার গভীরতা কতটা। আরাফের এই স্পর্শে শুধু পবিত্রতা অনুভব হয়। তিন্নি যেন হারিয়ে যাচ্ছে আরাফের ভালবাসার গভীরতা। ক্ষণিকের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। আরাফ তার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ হয়ে বলল,,,

আরাফ : এই খাটাশটাকে কি একটু ভালবাসা যায় না? একটুও কি কাছে টেনে নেয়া যায় না?

তিন্নি : জানিনা। ( নিচের দিকে তাকিয়ে )

— আরাফ যেন তিন্নির জানিনা কথার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পেয়েছে। এই জানিনা কথার মাঝে একটাই উত্তর “হ্যা” খুঁজে নিয়ে একগাল হেসে দিলো। তিন্নিকে বিছানায় বসিয়ে নিচে নেমে খাবার নিয়ে আসলো। তিন্নির খাওয়ার শেষে অনেক ঘুম পাচ্ছে। তাই সে আরাফকে বলল,,,

তিন্নি : এই যে শুনছেন?

আরাফ : কিছু লাগবে?? ( তিন্নি কাছে এসে )

তিন্নি : আমাকে একটু ধরেন। ( এক হাত এগিয়ে দিয়ে )

আরাফ : ওয়াশরুমে যাবা?

তিন্নি : না সোফায় গিয়ে শুইবো।

আরাফ : ফাজলামি পাইছো? প্রতিদিন একই নাটক। প্রতিদিন এক নাটক ভালো লাগেনা। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকো। ( ধমক দিয়ে )

তিন্নি : আমি সোফায় শুইবো, এখানে কিসের ফাজলামি দেখলেন আপনি? প্রতিদিন নাটক আপনি করেন। আপনার এসব নাটক দেখতে দেখতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। ( রাগে গজগজ করে )

আরাফ : আমার নাটক দেখে অতিষ্ঠ হয়ে গেছো? আচ্ছা বলো কার নাটক ভাললাগে? আমি ডাউনলোড করে দিচ্ছি। ( মোবাইল হাতে নিয়ে )

তিন্নি : এই আপনি কি পাগল নাকি? আমি আপনার সাথে ঝগড়া করছি, বুঝতে পারছেন না?

আরাফ : না বুঝার কি আছে? তুমি শুধু ঝগড়া করতেই জানো। রোমান্স কিভাবে করতে হয় এটা জানোনা। আসো ঝগড়া বন্ধ করে রোমান্স কিভাবে করতে হয় আমি তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি।

— আরাফ দুষ্টামি করে তিন্নির পাশে গিয়ে বসতে গেলে। তিন্নি চোখ রাঙ্গিয়ে এক ধমক দিয়ে বলল,,,

তিন্নি : এই একদম আমার কাছে আসবেন না। আসলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবো।

আরাফ : তোমার নিজের ঠ্যাং কি অবস্থা আছে সেটা দেখো। আমার ঠ্যাং কিভাবে ভাঙ্গবে?

— বলেই আরাফ হো হো করে হেসে দিলো। তিন্নি রেগে ফোঁপাতে লাগলো, কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। আরাফ হাসতে হাসতে তিন্নির পাশ থেকে উঠে বলল,,,

আরাফ : অনেক ঝগড়া হয়েছে। এবার ঘুমিয়ে পরি।

— আরাফ লাইট অফ করে তিন্নির পাশে শুয়ে পরেছে। তিন্নি আরাফের সাথে কথা না বাড়িয়ে মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে তার উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো। আরাফ মাঝখান থেকে বালিশটা নিয়ে একপাশে রেখে তিন্নির পেটে একহাত দিয়ে তাকে তার দিকে ফিরানোর চেষ্টা করতেই তিন্নি আরাফের হাতে জোরে একটা চিমটি দিলো। চিমটি অনেক জোরে পরতেই আরাফ তার হাত তিন্নির পেটের উপর থেকে সরিয়ে নিলো। তিন্নি তাকে চিমটি দিয়েছে এর প্রতিশোধ তো নিতেই হবে, এতো সহজে তো আর তিন্নিকে ছেড়ে দেয়া যাবেনা। ভাবতে ভাবতেই তিন্নিকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে, গলায়, গালে অনেক গুলো চুমু দিয়ে বলল,,,

আরাফ : চিমটি দেবার স্বাদ এবার টের পাও। সারারাত এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখবো, এটাই তোমার শাস্তি।

তিন্নি : আরাফ ভাল হচ্ছেনা কিন্তু, ছাড়েন আমাকে। ( রেগে গিয়ে )

আরাফ : ভাল মন্দ সবই বুঝি, চুপচাপ ঘুমাও।

তিন্নি : আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমি ঘুমাবো কিভাবে? ( দাঁতে দাঁত চেপে )

আরাফ : আমার ভালবাসা অনুভব করতে করতে ঘুমিয়ে পরবা।

— অনেকক্ষণ ছটফট করে তিন্নি আরাফের থেকে নিস্তার পেলোনা। শেষমেশ দুজনেই ঘুমিয়ে পরলো।

২ দিন পর,,
আজ আরাফের বাসায় ফিরতে সন্ধা হয়ে গেছে, বাসায় ফিরে সোজা রুমে চলে গেছে। মনটা অনেক খারাপ করে সোফায় বসে নাদিয়ার কথা ভাবছে। নাদিয়া আরাফের অফিসে জব করে। নাদিয়া মেয়েটা আরাফ আর তিন্নির ব্যাপারে সব জানে। কিভাবে জানলো মেয়েটা? এটাই তার মাথায় আসছেনা। তিন্নি যদি নাদিয়া আর আরাফের আজকের বিষয়টা জানতে পারে তখন কি হবে? এক মুহূর্ত চিন্তা না করেই আরাফকে ছেড়ে চলে যাবে। আজকের বিষয়টা কখনোই তিন্নি পর্যন্ত পৌঁছাতে দিবেনা। নাদিয়া তো তিন্নিকে চিনে, যদি কখনো তিন্নির সামনে এসে পরে। তখন কি হবে? ভাবতেই আরাফের গলা শুকিয়ে গেছে।

তিন্নি রুমে ঢুকে আরাফকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে বলল,,,

তিন্নি : এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? আজ আপনার ফিরতে লেট হলো যে?

— তিন্নির কথায় আরাফের হুশ ফিরতেই সে স্তব্ধ হয়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে রইলো। তিন্নি তাকে প্রশ্ন করছে? হঠাৎ সে কিভাবে এতটা চেঞ্জ হয়ে গেলো? তার মানে কি সে আরাফের কেয়ার করতে শুরু করেছে? নাকি সে কিছু ভুল শুনেছে? আরাফকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিন্নি আবারও বলল,,,

তিন্নি : কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন??

— আরাফ কিছুটা আমতা আমতা করে বলল,,,

আরাফ : একটা ফ্রেন্ডের সাথে ছিলাম।

তিন্নি : সত্যি বলছেন তো? ( ভ্রু কুচকে )

— আরাফ মাথা নিচু করে ফেললো। তিন্নির সাথে সে মিথ্যা বলতে মোটেও অভ্যস্ত না। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আজ হঠাৎ তিন্নি তাকে এতটা জেরা করছে কেন? আরাফকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে তিন্নি বলল,,,

তিন্নি : আচ্ছা থাক বলতে হবেনা। আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন, আমি কফি নিয়ে আসছি।

— তিন্নি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরাফের সবকিছু ঘুলিয়ে যাচ্ছে। তিন্নি সকালেও তার সাথে কেমন ব্যবহার করেছে। হঠাৎ এমন কি হলো তিন্নি এতটা চেঞ্জ? অনেক ভাবনাচিন্তার পর, আরাফ উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে দেখে টেবিলর উপর দুই মগ কফি রাখা। তিন্নি কি দুই মগ কফি তার জন্যই এনেছে? নাকি সে নিজেও খাবে? ভাবতে ভাবতে হাতে থাকা তোয়ালেটা বিছানার পাশে রেখে আরাফ সোফায় এসে বসে পরলো। তিন্নি কোথায় থেকে এসে তার পাশে বসে, কফির মগ হাতে নিয়ে কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,,,

তিন্নি : এক মগ কফিতে সারাদিনের কান্তি নিমিষেই চলে যায়।

আরাফ : তুমি ঠিক আছো তো? ( অবাক হয়ে )

তিন্নি : হ্যা ঠিক আছি, পা একদম ভাল হয়ে গেছে।

আরাফ : আমি পায়ের কথা বলছিনা। তোমার মাথার কথা বলছি। তোমার মাথা ঠিক আছে? নাকি পাগল টাগল হয়ে গেছো?

তিন্নি : আমি পাগল হতে যাবো কেন? পাগলের সংলাপ তো আপনি করছেন।

আরাফ : আমার সাথে বসতে গেলে তোমার কতো এলার্জি দেখা দেয়। তাই জিঙ্গেসা করছি।

— বলেই আরাফ কফিতে চুমুক দিলো। তিন্নি তাকে কিছু বলতে যাবে তখনি আনহা ড্রয়িংরুম থেকে চেচিয়ে তিন্নিকে ডাকতে লাগলো,,,

আনহা : ভাবি,, নাদিয়া আপু এসেছে।

— নাদিয়া নামটা শুনার সাথে সাথে আরাফ থমকে গেলো। তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : নাদিয়া কে?

তিন্নি : জানিনা, হয়তো আমার কোনো ক্লায়েন্ট হবে।

— তিন্নি বসা থেকে উঠে দরজার কাছে যেতেই, আরাফ উঠে গিয়ে তিন্নির হাত ধরে বলল,,,

আরাফ : কোথায় যাচ্ছো?

তিন্নি : কি আশ্চর্য! আপনি তো এখনি শুনলেন একটা মেয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।

আরাফ : কোথাও যেতে হবেনা, তুমি বসো আমি আসছি।

তিন্নি : আপনি বলবেন আর আমি বসে পরবো? হাত ছাড়েন।

আরাফ : বললাম না কোথাও যেতে হবেনা।

— আরাফ তিন্নিকে ধমক দিয়ে টেনে রুমের ভিতরে নিয়ে তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে বাহির থেকে দরজা লক করে দিলো। ভিতর থেকে তিন্নি দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল,,,

তিন্নি : আরাফ দরজা খুলেন, কাজটা কিন্তু মোটেও ভালো হচ্ছেনা।

— আরাফ তিন্নির কথায় তোয়াক্কা না করে নিচে নেমে গেলো। আগে দেখতে হবে কোন নাদিয়া। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে তার অফিসে স্টাফ নাদিয়া বসে আছে। তাকে দেখেই তার মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠলো। মেয়েটা এখানে কেন এসেছে? আরাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,

আরাফ : এই মেয়ে তুমি এখানে এসেছো কেন?

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে