স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-১০

0
818

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ১০
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

প্রতি মুহূর্তে মন তোকে কাছে চাইছে শুধু, মনের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম যন্ত্রনা হচ্ছে তোকে কাছে না পাওয়ার। তোর ওই স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় আমি জলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি তুই কি তা বুঝিস না?
আমি বড় বড় চোখ করে হৃদান ভাইয়ের কথা শুনছি, ওনার কথা শুনে শরীর হিম হয়ে আসছে আমার। হালকা ধাক্কা দিয়ে আমার থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম,,, কি যা তা বলতে শুরু করেছো তুমি?
একটু আগেই তো বড় মুখ করে বলেছিলে যে খালি বাসায় তুমি আমার সাথে মিস বিহেভ করবে না তাহলে এটা কি ছিল?

হৃদান ভাই একটু রেগে গিয়ে বলল,, এটা মিস বিহেভ ছিল তোর কাছে? আমি আমার মনের অনুভূতি গুলো বলছিলাম তোকে আর তুই বাজে ভাবে নিচ্ছিস কেন? আমি তো তোকে সেরকম কিছুই বলিনি।

আমি কিছু বললাম না আর, চুপ করে রইলাম। এমনিতেই আফিফের কথা গুলো মনে হচ্ছে বারবার,ও আমার কোন প্রিয় মানুষটাকে কেড়ে নেওয়ার কথা বললো কে জানে।ওর মতো একটা ছেলে যা ইচ্ছে করতে পারে,বড় মুখ করে তখন বলে এসেছি যে ওর হুমকি তে আমি ভয় পাই না কিন্তু এখন তো ভয়ে মরে যাচ্ছি। এইসব ভাবতে ভাবতে দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটতে লাগলাম, আমি কিছু বলছি না দেখে হৃদান ভাই আমাকে বললো,,,,,

তুই কি কিছু নিয়ে ভাবছিস স্নিগ্ধ? কোনো সমস্যা হলে বল আমাকে। এইভাবে দাঁত দিয়ে নখ কাটার কি মানে?
আমি একটু ভেবে নিয়ে থেকে বললাম,, আমার এখন খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে, বাসায় আইসক্রিম আছে কি?
হৃদান ভাই আমার কথা শুনে একটু কাচুমাচু হয়ে বললো,, না রে বাসায় তো আইসক্রিম নেই। তুই একটু অপেক্ষা কর আমি কাছেই দোকান আছে ওখান থেকে আইসক্রিম নিয়ে আসছি। বলে হৃদান ভাই আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না, তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। আমি থামাতে গিয়েও কেন জানি থামালাম না,হৃদান ভাই চলে গেছে এখন শান্তি মতো আফিফের কথা গুলো নিয়ে ভাবতে পারবো এই ভেবে আর থামালাম না ওকে। আমার প্রিয় মানুষ বলতে বাবা মামনি আর ভাইয়াই,এরা ছাড়া আগে ছিল আয়াশ কিন্তু এখন এরাই আমার প্রিয় মানুষ।আফিফ কি তবে এদের কোনো ক্ষতি করবে?নাহ তা কি করে হয়, ওরা তো ওর কোনো কিছু করে নি,যদিও আমিও কিছু করি নি কিন্তু আফিফ সেটা মানছে না। আল্লাহ না করুক,আফিফ তো আমাদের বাসাতেই আছে যেন ওদের কিছু না করে।

প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো হয়ে গেছে এখনো হৃদান ভাই আসছে না দেখে আমার একটু চিন্তা হচ্ছে।হৃদান ভাই তো বললো কাছেই দোকান তাহলে এতো দেরি হওয়ার তো কথা না, এখনো আসছে না কেন। একটু পরে আমার ফোনে একটা এসএমএস এলো, আমি এসএমএস টা ওপেন করে দেখি সম্পূর্ণ ইংরেজি ক্যাপিটাল অক্ষরে লেখা আছে,,,,
TOMAR PRIO MANUS TAKE AMI PEYE GECI.EKHON CHOKHER PANI FELAR JONNO TOIRY THAKO.BYE BYE SNIGDHA..
এসএমএস টা দেখে চমকে উঠলাম আমি,আফিফের নাম্বার থেকেই এস‌এম‌এস টা এসেছে।ও কার কথা বললো আমাকে, আমার কোন প্রিয় মানুষটাকে সে পেয়ে গেছে। মাথা কাজ করছে না আর, বাসায় ফোন করলাম তাড়াতাড়ি করে। ফোন করে দেখি বাসায় সবকিছু ঠিক আছে, কারো কোনো কিছু হয় নি তাহলে কি আফিফ হৃদান ভাইয়ের কথা বললো আমাকে?সে কি হৃদান ভাই কে পেয়ে গেছে যে আমাকে এই কথা গুলো বললো,হৃদান ভাইয়ের আবার কোনো ক্ষতি করে দেবে না তো ও? তাড়াতাড়ি করে হৃদান ভাইয়ের নাম্বারে ডায়াল করলাম কিন্তু বন্ধ দেখাচ্ছে নাম্বার টা।ওফ কি করবো আমি এখন বুঝতে পারছি না, কোনো এক অজানা শঙ্কায় বুক টা কেঁপে উঠছে আমার,হৃদান ভাইয়ের যেন কিছু না হয়। একটু পরেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল, আমি গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলাম, না জানি কি দেখবো দরজার বাইরে।আফিফ কে যদি দেখি তাহলে ওর মাথা ফাটিয়ে দেবো আমি যাতে ও হৃদান ভাইয়ের কোনো কিছু না করতে পারে।হাত সেই পজিশনে উঠিয়ে দরজা খুলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে যেই একশন করতে যাবো তখনি কে যেন আমার হাত ধরে ফেলল আর বললো,,,,
এই এই কি করছিস তুই? একটু দেরি হয়ে গেছে বলে মারিস না আমাকে, লাগবে তো আমার।
আমি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি হৃদান ভাই আমার সামনে এক হাতে আইসক্রিমের বক্স নিয়ে আরেক হাতে আমার হাত আটকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।হৃদান ভাই কে দেখে আমার ভিতরে যেন প্রান ফিরে এল, আমি ওনার হাত থেকে আমার হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,,,, এতো দেরি হলো কেন তোমার,আর ফোন টা বন্ধ ছিল কেন?
হৃদান ভাই আমাকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকে সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে বললো,,, কাছের যেই দোকান টা ছিল ওখানে আইসক্রিম পাইনি তাই আইসক্রিম পার্লারে যেতে হয়েছিল আমাকে।তোর জন্য আমি অনেক দূরে থেকে আইসক্রিম আনতে গিয়েছিলাম আর ফোনে চার্জ ছিল না তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আমি ওনার পাশে এসে বসে হাত থেকে আইসক্রিমের বক্স টা নিয়ে খুললাম। যদিও আমার তখন আইসক্রিম খেতে একটুও ইচ্ছে করছিল না কিন্তু মিথ্যে কথা বলে যখন ওনাকে এতো কষ্ট করিয়েছি তখন খেতে তো হবেই। আমি আইসক্রিম খাচ্ছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আমার খাওয়া দেখছেন, আমি খেতে খেতে ইশারায় জিগ্গেস করলাম, খাবে না কি?
উনি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আমি মুচকি হেসে আইসক্রিম খাওয়ায় মন দিলাম, এখন পুরোপুরি নিশ্চিন্ত আমি। বাসায় সবাই ঠিক আছে,হৃদান ভাইয়ের ও কিছু হয়নি তাই আমার ও কোনো চিন্তা নেই,আফিফ কোন হনুমান কে আমার প্রিয় মানুষ ভেবেছে কে জানে। একটু পর আইসক্রিম খাওয়া শেষ করে আমি হৃদান ভাই কে একটা বড় করে ধন্যবাদ দিলাম। বেচারা কষ্ট করে এনে খাইয়েছে তাকে তো একটা ধন্যবাদ দেওয়াই উচিত আর সেই ধন্যবাদ হিসেবে আমি হাতের মধ্যে একটু আইসক্রিম ছিল ওইটুকু ওনার গালে মাখিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালালাম ওখান থেকে। মামির রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলাম। বাইরে এসে একটু থতমত খেয়ে গেলাম,হৃদান ভাই হাতে কি যেন একটা নিয়ে হাত পিছনে করে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে একটা শয়তানি হাসি লেগে রয়েছে।নাহ ওইদিন বেঁচে গিয়েছিলাম কিন্তু আজ হয়তো আর বাঁচবো না, আমাকেও কিছু একটা মাখাবে এখন। আমি তাড়াতাড়ি করে দুই হাতে মুখ ঢেকে বললাম,সরি আমাকে কিছু মাখিও না প্লিজ। তুমি তো জানো আমি একটু দুষ্টুমি করতে ভালোবাসি তাই তোমাকে আইসক্রিম মেখে দিয়েছিলাম, তুমি কিছু মাখিও না আমাকে। তাছাড়া তুমি তো ভালো ছেলে, আমার ভালো হবু বর তাই না?
হৃদান ভাই একটু হেসে বললো,,

আচ্ছা আমি ভালো ছেলে? তুই আমাকে তোর ভালো হবু বর বলে মানছিস?

হ্যা ম মানবো না কেন? কয়েক দিন পরেই তো তোমার আর আমার বিয়ে হবে আমি তো তাও মেনে নিয়েছি।

হৃদান ভাই আমার কথা শুনে পিছন থেকে হাত বের করে এক জোড়া নূপুর আমার সামনে ঝুলিয়ে বললো,,, আমি তো তোর জন্য এই নূপুর জোড়া এনেছিলাম আসার পথে ভাবছিলাম তুই খুশি হবি। কিন্তু এখন তো আমি এখানে এসে নতুন কিছু জানতে পারলাম, তুই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছিস।
আমি জিভে কামড় দিলাম, কিছু না দেখেই ফটফট করে এইসব কেন যে বলতে গেলাম আমি?

চলবে……….. ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে