স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় পর্ব-১১

0
835

#স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়
#পর্ব ১১
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি

নিজের মুর্খামির জন্য এখন মাথা ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার। একটু লাজুক মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম, আমার লজ্জা পাওয়া দেখে হৃদান ভাই মুচকি হেসে বলল,,থাক আর লজ্জা পেতে হবে না তোকে। নূপুর গুলো নে,দেখতো পছন্দ হয়েছে কি না? আমি ওনার হাত থেকে নূপুর গুলো নিয়ে বললাম পছন্দ হয়েছে আমার, তার পরেই দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলাম। এইখানে থাকতে এখন লজ্জা করছে আমার, ভীষণ লজ্জা করছে।

বন্ধ একটা রুমের মধ্যে চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে আয়াশ। হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করেও কোনো লাভ হয়নি,গত এক ঘন্টা ধরে এখানে বন্দি অবস্থায় বসে আছে আয়াশ। কিছুক্ষণ আগে যখন আফিফ স্নিগ্ধার ঘরে ওর বয়ফ্রেন্ডের সম্পর্কে কিছু জানতে খুজাখুজি করছিল তখন একটা ডায়েরি তে ও আয়াশের নামে কিছু ভালোবাসাময় কথা লিখা দেখে বুঝতে পারে এই স্নিগ্ধার বয়ফ্রেন্ড, সাথে ওর একটা ছবিও ছিল। ব্যাস আফিফের কাজ হয়ে গেছে,ও তখনি বেরিয়ে পড়ে আয়াশের খোঁজে, একটু পরে পেয়েও যায় আর তার পরেই ওকে কিডন্যাপ করে এইখানে নিয়ে আসে। একটু পরে বন্ধ রুমের দরজা খুলে গেল,আধো অন্ধকার দরজার সামনে একটা চেয়ারে বসে আফিফ আয়াশ কে জিজ্ঞেস করল,,, কেমন আছো আয়াশ?
আয়াশ নিজের হাত পা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,,

কে আপনি? আমাকে এইভাবে নিয়ে আসার কারণ কি?
ওফ তোমাকে তো বলাই হয়নি তাই না? তবে এখন বলছি শোনো, তুমি তো স্নিগ্ধার বয়ফ্রেন্ড তাই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তুমি এখন কারন জেনে গেছো তাই পরবর্তী তে তোমার সাথে যে যে ঘটনা গুলো ঘটবে তার জন্য প্রস্তুত থাকো।

আফিফ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো তার পর বললো,,
আমার হাত থেকে তোমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না, তুমি স্নিগ্ধার,,,,,,আর কিছু না বলে আফিফ একটু হেসে রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেল।আফিফ চলে যাওয়ার পর আয়াশ একটা শুকনো ঢোক গিললো। মনে মনে ভাবতে লাগলো,,ও যে স্নিগ্ধা কে ঠকিয়েছে তার কারনেই হয়তো এই ছেলেটা ওকে এইভাবে বন্দি করে রেখেছে। স্নিগ্ধা ওকে ঠকানোর প্রতিশোধ নিচ্ছে, ওর পাপের শাস্তি ওকে এই ছেলেটা দিবে। অজানা এক ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো আয়াশের।
______________________________________
এক সপ্তাহ পর,,,,,,,

সবকিছু কেমন যেন বদলে গেছে,হৃদান ভাই অফিসের কাজে শহরের বাইরে গেছে দুই দিন আগে, আমাদের বিয়ের তারিখ ও ঠিক করা হয়েছে।আর মাত্র চার দিন পরে আমার আর হৃদান ভাইয়ের বিয়ে, আমি এই প্রস্তাবে বিনা বাক্য ব্যয়ে রাজি হয়েছি। কেন এমন ভাবে রাজি হয়েছি তা নিজেও বুঝতে পারিনি,দুর্বল হয়ে পড়েছি হৃদান নামক মানুষটির উপর। মনে হচ্ছে যেন আস্তে আস্তে আমিও হৃদান ভাইয়ের স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায় জড়িয়ে পড়ছি, এখন ওনার কথা ভাবলেই লজ্জা লজ্জা লাগে আমার।
বাগানের বেঞ্চে বসে বেলি ফুলের গাজরা বানাচ্ছিলাম এমন সময় ভাইয়া আমার পাশে এসে বসে বললো,,
জানিস স্নিগ্ধা, আয়াশ কে কিছুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ করে কালকে কে যেন ওকে ওদের বাসার সামনে আধামরা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়, এখন আয়াশ হসপিটালে আছে বাচে না কি মরে তার ঠিক নাই।ডক্টরেরা বলছে প্রচুর টর্চার করা হয়েছে না কি ওর উপরে।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম।আয়াশের মতো এতো ধুর্ত একটা ছেলেকে কে কিডন্যাপ করে টর্চার করতে পারে,তাও আবার কিছুদিন ধরে। একটু পরে ভাইয়া কে বললাম,,
আয়াশ বলে নি যে ওকে কে কিডন্যাপ করেছিল?
ভাইয়া কিছুটা চিন্তিত মুখে বললো,, না রে, আয়াশ কিছু বলার অবস্থাতেই নেই।এক কাজ করি চল, তুই আর আমি গিয়ে হসপিটালে আয়াশ কে দেখে আসি,ও যতোই তোর সাথে প্রতারণা করে থাকুক, একটা সময় তুই ওকে ভালোবাসতি তো।
আমি ভাইয়ার কথায় প্রতিবাদ করলাম না, চুপ চাপ রাজি হয়ে গেলাম আয়াশ কে দেখতে যাওয়ার জন্য। একটু পরে হসপিটালে পৌঁছে গেলাম।
হসপিটালের সাদা বেডে হালকা নীল রঙের পোশাকে শুয়ে আছে আয়াশ।দেখেই মনে হচ্ছে অবস্থা খুব বেশিই খারাপ, মাথায় হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা,স্যালাইন চলছে। আমি মনে মনে বললাম,, আল্লাহ পাপিদের শাস্তি ঠিক দেয়, আমাকে ও বিনা দোষে শারীরিক যন্ত্রনার চেয়ে বেশি কষ্ট মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছিল। আল্লাহ তাই ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে দিয়েছে সেটা যেভাবেই হোক না কেন। কিছুক্ষণ ওখানে থাকার পর আমরা চলে এলাম, আসার সময় দেখলাম নেহা আই সি ইউ এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ লাল হয়ে গেছে ওর। আমি শুধু আস্তে করে বললাম ওকে,পাপীরা ঠিক শাস্তি পায় নেহা, দেখেছিস তো আয়াশ ওর কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে কে জানে হয়তো তুই ও পাবি, ভালো থাকিস। ভাইয়া আমার কথা শুনে হাসলো শুধু কিন্তু কিছু বললো না।

আফিফ স্নিগ্ধা কে দেখছে আর অবাক হচ্ছে, নিজের বয়ফ্রেন্ডের এমন অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও ও এতো টা স্বাভাবিক কি করে? দিব্বি হাসছে ঘুরছে আনন্দ করছে, কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? এতোক্ষণে তো ওর কেঁদে কেটে অস্থির হওয়ার কথা অথচ ও তা না করে ও মজা করছে।আফিফের মাথা হালকা কাজ করা বন্ধ করে দিলো, বিষয় টা নিয়ে ও গভীর ভাবনায় পড়ে গেছে। যেভাবেই হোক ওকে জানতেই হবে যে স্নিগ্ধা এতো টা স্বাভাবিক কেন না কি ওকে দেখানোর জন্য নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে যাতে ও স্নিগ্ধা কে দুর্বল না ভাবতে পারে।

আমি ছোট ফুপির সাথে বসে গল্প করছিলাম তখন আফিফ কে আমার দিকে ওইরকম বন মানুষের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হলাম। আমাকে কি দেখতে আজব প্রাণী লাগে না কি, একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। কিছুক্ষণ পরে আমি আমার রুমে চলে এলাম, রুমে এসে হৃদান ভাই কে একটা ফোন করলাম।হৃদান ভাই ফোন রিসিভ করার পর একটু কথা বলে ফোন কেটে দিয়ে জানালার পাশে নিজের ডায়েরী টা নিয়ে বসলাম। এই ডায়েরী তে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে, আয়াশের সাথে রিলেশনশিপ এ থাকা অবস্থায় ওকে নিয়ে মনের সমস্ত অনুভূতি গুলো এইখানে লিখে রাখতাম। ওকে নিয়ে যতো চিন্তা ভাবনা ছিল আমার সবকিছু এই খানে লিপিবদ্ধ আছে। একদিন এই গুলোর খুব দাম ছিল আমার কাছে কিন্তু আজ আর কোনো মূল্য নেই এইগুলোর। এইগুলো আয়াশের মতোই মূল্যহীন এখন আমার কাছে, ওকে নিয়ে যতো গুলো পৃষ্ঠায় লেখা ছিল সবগুলো পৃষ্ঠায় ক্রস চিহ্ন দিয়ে দিলাম।তার পর নতুন পৃষ্ঠায় হৃদান ভাই কে নিয়ে লিখতে শুরু করলাম,,,

৫ এপ্রিল ২০২২

তুমি কি জানো হৃদান, আমি তোমাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি,জড়িয়ে গেছি তোমার মায়ায়। আগে তোমাকে ভালোবাসবো এমন টা ভাবিনি কখনো, ভাবিনি তোমায় আমার প্রিয় মানুষ হিসেবে। সবসময় ভেবেছিলাম মামাতো ভাই হিসেবে কিন্তু যেদিন তুমি বললে তুমি আমাকে ভালোবাসো সেদিন থেকে আমার মনের মধ্যে তোমাকে নিয়ে একটা সুক্ষ্ম অনুভূতি জাগতে শুরু করেছে। না চাইলেও তোমার কথা ভাবছি, তোমাকে নিয়ে ভেবে লজ্জায় লাল নীল হচ্ছি, নিজের অজান্তেই তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাকে বলবো না আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে না বলা থাকবে। তুমি নিজে থেকে বুঝে নিবে আমার ভালোবাসা,যেদিন তুমি সেটা বুঝতে পারবে সেদিন আমার কাছে খুব আনন্দের হবে কারণ আমার ভালোবাসার মানুষ টি আমাকে বুঝেছে। জীবনের প্রথম ভালোবাসা আমাকে ঠকিয়েছে কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে কখনো ঠকাবে না, তোমার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। তুমি ওর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানুষ যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তুমি কবে আসবে ফিরে, তোমার অপেক্ষায় দিন গুনছি এখন।

চলবে…………… ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে