স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৯

0
862

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৫৮.

চারদিকে মেঘলা আকাশের মেঘমালা। বইছে শীতল বাতাস। গোলাপি রংয়ের একটা টপস আর একটা ব্লু কালারের জিন্স পড়ে তড়িঘড়ি করে সাইড ব্যাগটা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ইচ্ছে। আদ্র কল দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলেছে তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে। আদ্র কখনো গম্ভীর ভাবে ইচ্ছের সাথে কথা বলেনি আজ বলেছে তাই ইচ্ছে ভয়ে আছে। বিয়ে উপলক্ষে তার বাবা আদ্রদের বাসায় তাকে দিয়ে গেছে অদ্রির সাথে থাকবে সে। ইচ্ছে বুঝতেই পারছেনা বিয়ে তাই বলে বরের বাড়িতে থাকতে হবে! আজব।

৫৯.

কলেজ ক্লাসে ঢুকতেই পুরো ক্লাস অন্ধকার দেখে ঘাবরে যায় ইচ্ছে। ধীর পায়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘আদ্র ভাই… কোথায় আপনি?

‘ইচ্ছে মনে মনে পুনরায় আবার বললো,

‘সবাই কোথায় গেলো?

‘হঠাৎ সারা ক্লাসে আলো জ্বলে উঠলো৷ সবাই একসাথে বলে উঠলো, “হ্যাপি বার্থডে ইচ্ছে….

‘ইচ্ছে পুরো অবাক। আজকে তার বার্থডে আর তারই মনে ছিলোনা। হঠাৎ পেছনে থেকো শুনতে পেলো কেউ একজন বলছে,

‘Happy Birthday Ecche Pori”

‘ইচ্ছে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আদ্র হাতে কেক নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

৬০.

এইটা তোমার গিফট ইচ্ছে পরী।

‘থেংকস আদ্র ভাই।

‘ইচ্ছে আদ্রের দেওয়া ডায়েরীটা গুটিয়ে গুটিয়ে একবার দেখলো। অনেক সুন্দর ডায়েরী। উপরে লিখা “Love at First Sight”

‘আদ্র ইচ্ছের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে হোট করে ইচ্ছের এক হাত টান দিয়ে একদম নিজের কাছে এনে ফেলে। একজনের হার্টবিট অন্যজন শুনতে পাচ্ছে। ইচ্ছে পলকহীন ভাবে আদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র এরপর যা করে বসলো এইটা ইচ্ছে কখনো ভাবেনি।

৬১.

আদ্র অফিসে বসে বসে পিসির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসছে। কারণ ইচ্ছে আয়নার সামনে গিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে বারবার নিজের ঠোঁট মুছার চেষ্টা করছে। আদ্র হেসে হেসে মনে মনে বললো, “ভালোবাসার পরশ মুছা যায়না ” ইচ্ছে পরী” হঠাৎ আদ্রের ফোনে কল আসে।

৬২.

রুপ…সত্যিটা কখন সামনে আসবে?

‘আপু..আর কয়েকদিন ওয়েট করুন..আদ্র ঠিক যেইভাবে সাজিয়েছে ঠিক সেইভাবে হলে খুব তাড়াতাড়ি সত্যিটা সামনে আসবে।

‘ইনশিয়া বিরক্ত নিয়ে বললো,

‘কাব্য…কাব্যকে আমি ছাড়বোনা। কখনোইনা। কাব্য আমার জীবনটা নরক বানিয়ে ফেলেছে।

‘আপু কাব্যকে আদ্র কখনোই শেষ করে ফেলতো। শুধু আপনার দিকে তাকিয়ে এখনো চুপ আছে।

‘ইনশিয়া চোখের পানি মুছে বললো,

‘আদ্র ভাইয়ার জন্যইতো আমি বেঁচে আছি রুপ।

৬৩.

কিরে ইচ্ছে কি করছিস আয়নার সামনে?

‘অদ্রির কন্ঠ শুনে ইচ্ছে আমতা আমতা করে বললো,

‘না মানে আসলে আমি ঠোঁটটা একটু কেটে গেছে কিভাবে যেনো তার জন্য টিস্যু দিয়ে রক্ত আটকাচ্ছিলাম।

‘সে কিরে? ভাইয়া জানতে পারলে জানিস কি হবে? তাড়াতাড়ি ঠোঁটে কিছু লাগিয়ে নে।

‘ইচ্ছে অদ্রির কথা শুনে মনে মনে বললো,”তোমার ভাই ইতো করেছে। শয়তানের নানা একটা।

‘এই ইচ্ছে শুন যেইটা বলতে এসেছি.. ভাইয়া অফিস থেকে বেরিয়ে শপিংমলে আসবে। আর আমি আর তুই এইখান থেকে চলে যাবো। উচ্ছ্বাসও অফিস থেকে ওইদিকে চলে যাবে। বিয়ের কেনাকাটা করতে। তুই বরং তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নে।

‘আচ্ছা আপু। ইচ্ছে মনে মনে বললো, “এই বিয়ে হলেতো বিয়ে করবো ”

৬৩.

শপিংমলে আসতেই ইচ্ছেকে দেখে চোখ টিপ মারে আদ্র।

‘ইচ্ছে মনে মনে অবাক হয়ে ভাবলো, “এই আদ্র ভাইয়ের কি হলো? আগেতো এমন করতোনা। ইদানিং বেশি রোমান্টিক হয়ে গেছে ]

আদ্র ইচ্ছের ভাবান্তর ফেইস দেখে অদ্রি আর উচ্ছ্বাসের সামনেই ইচ্ছেকে বললো, ” কি ইচ্ছে পরী? আজকে কি ভাবনার ডোজ বেশি হয়ে গেলো?

‘ইচ্ছে হঠাৎ চমকে উঠলো। অদ্রি আর উচ্ছ্বাসের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে আদ্রের দিকে তাকালো। অসভ্য লোক একটা। সবার সামনে এইভাবে লজ্জাটা না দিলেই কি হতোনা? আদ্র উচ্ছ্বাস আর অদ্রিকে বললো, “তোরা ওইদিকে যা। আর আমরা এইদিকে যায়।

” ওকে।

৬৪.

হাতে এক গাদা শপিং ব্যাগ নিয়ে বাসায় ঢুকলো অদ্রি ইচ্ছে আর উচ্ছ্বাস। পেছনে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বাসায় ঢুকছে আদ্র। আদ্র সোফায় বসেই গা এলিয়ে দেয়। মিসেস আনেয়া নীড় সবার জন্য শরবত নিয়ে এসে বললো,

“কি দরকার ছিলো এই গরমে বের হওয়া? বলেছিলাম না? বিকেলে যেতে।

‘মা..বিয়ের কেনাকাটা। সেইটা কি বিকেলে গেলে পুরোপুরি করতে পারতাম?

‘তুই থাম অদ্রি। কি একটা যা তা অবস্থা। তোরা যা সবাই। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

মিসেস আনেয়া নীড় চলে যাচ্ছিলেন তাকে থামিয়ে আদ্র বললো,

‘ইনশিয়া আর রুপ খেয়েছে মা?

৬৫.

ইনশিয়া…

‘আরে আদ্র ভাইয়া আসুন।

‘ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে আমার৷ তোমার অপারেশনের জন্য আমি তোমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিবো।

‘না ভাইয়া আমি বাহিরে যেতে চায়না।

‘যেতে হবে৷ আমার আর তোমাকে এইভাবে দেখতে ভালো লাগেনা ইনশিয়া।

‘যাবো তবে,সত্যিটা..সবার সামনে এনে।

‘আদ্র ভাবশীল হয়ে বললো,” হুম’।

৬৬.

দিন যায় রাত যায়। এইভাবে কেটে গেলো এক সপ্তাহ৷ ঘনিয়ে এসেছে গায়ে হলুদের দিন। ইচ্ছেকে কনে বেশে আর অদ্রিকে কনে বেশে সাজিয়েছে পার্লারের ২ জন মহিলা। এর মধ্যে আদ্র ইচ্ছেকে তেমন একটা বিরক্ত করেনি। যদিও তার মন সবসময় ইচ্ছের পানেই ছিলো। আর সিসিক্যামেরায় ২৪ ঘন্টায় নজর রাখতো তার ইচ্ছে পরীর উপর।

‘স্টেজে ইচ্ছে বসে আছে৷ ইচ্ছের হঠাৎ চোখ যায় হলুদ পান্জাবী পড়া আদ্রের দিকে৷ হেসে হেসে একটা ছেলের সাথে হাত মিলাচ্ছে। হাতে ঘড়িটা যেনো তার স্মার্ট অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। চুলগুলো উল্টোভাবে মিলিয়ে আছে। হঠাৎ আদ্র তাকাতেই ইচ্ছের চোখাচোখি হয়েছে। আদ্র তাকাতেই আদ্র ইচ্ছেকে দেখে একটা হাসি উপহার দেয়। জানেনা আজ ইচ্ছের এই হাসিটা কেনো এতো স্নিগ্ধ লাগছে। ইচ্ছের মুখে আনমনেই হাসি আসলো।

অদ্রি উচ্ছ্বাস মিটিমিটি হাসছে একে অপরকে দেখে। উচ্ছ্বাস হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো,”তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

‘আদ্র ফোনে রুপের সাথে কথা বলছিলো..হঠাৎ আনেয়া নীড় এসে বললো,

“আদ্র যা যা তাড়াতাড়ি ইচ্ছের পাশে গিয়ে দাঁড়া। কয়েকটা কাপেল পিক নে। মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই..ইনশিয়া এসে বললো, ” ভাইয়া চলুন।

‘ইচ্ছের পাশে আদ্র দাঁড়াতেই আদ্র ইচ্ছের দিকে কয়েকমিনিট এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে৷ এই দেখার যেনো শেষ নেই। ক্যামেরা ম্যান ওই অবস্থায়ই..ইচ্ছে আর আদ্রের একটা পিক তুলে নেয়। আর হেসে বললো,

‘স্যার ম্যাম.আপনাদের এই চাহনিটা বেষ্ট ছিলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে