স্নিগ্ধ চাহনি পর্ব-০৭(অন্তিম পর্ব)

0
1337

#স্নিগ্ধ চাহনি
#পর্বঃ৭(অন্তিম পর্ব)
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘আমি আফনান’ শুধু মাত্র এই দুটি শব্দেই যেন তছনছ করে দিল মৃন্ময়ীর সকল অনুভূতি। চিরচেনা সেই কন্ঠস্বর শুনে দুমড়েমুচড়ে গেল তার ভেতরটা। মুগ্ধ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো মৃন্ময়ীর মুখের পরিবর্তন হওয়া।
ফোনের ওপাশ থেকে আবারও করুন কণ্ঠ ভেসে আসলো-

‘মৃনু শুনছো! কথা বলবে না!’

মৃন্ময়ী রাগ করতে চাইলো। ভীষণ রাগ নিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু কিছুতেই রাগ প্রকাশ করতে পারলো না। থমথমে গলায় নিম্ন স্বরে প্রশ্ন করল-

‘আমাকে কল করেছেন কেন আফনান?’

মৃন্ময়ী কন্ঠস্বর শুনেই আফনান উত্তেজিত হয়ে পরে। হড়বড়িয়ে একনাগাড়ে কথা বলা শুরু করলো-

‘মৃনু প্লিজ আমার কথাটা শোনো। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি মৃনু। তুমি তো জানো আম্মু কি পরিমাণ জেদি একজন মানুষ। ওনার সামনে আমার কথার কোনো মূল্যই নেই। নানানরকম কছম টছম কাটিয়ে আমাকে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে। প্লিজ তুমি এ নিয়ে রাগ করো না।’

‘আমাকে এসব কেন শোনাচ্ছেন আপনি!’

মুগ্ধ ছোঁ মে’রে মৃন্ময়ীর হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়। মৃন্ময়ী বিস্মিত চোখে চাইলো মুগ্ধর দিকে। সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ফোন নিজের কানের কাছে ধরে রেখেছে। যেন ফোনটা তার-ই। আর ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটা যেন তার সঙ্গেই কথা বলতে চাইছে।

‘মৃনু আমি চাই না আমাদের মধ্যে কোনো প্রকার ভুলবোঝাবুঝি থাকুক। আমি খুব দ্রুত ফ্লোরিনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরে আসবো। প্লিজ তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো মৃনু।’

আফনান একদমে কথা গুলো বলেই থামলো। মুগ্ধ অতি ভদ্রতার সঙ্গে বলল-

‘আমি মৃন্ময় আহসান মুগ্ধ। যদিও আমি একজন নামকরা এডভোকেট তবে এর থেকেও বড় পরিচয় হলো আমি মৃন্ময়ীর হাসবেন্ড। পুরোপুরি হাসবেন্ড হইনি তবে খুব শীগ্রই হয়ে যাচ্ছি।’

‘মানে কি বলছেন আপনি এসব! বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে কি? মৃনু কোথায়! ওর কাছে ফোনটা দিন। ওর ফোন আপনার কাছে কেন!’

মুগ্ধ মৃন্ময়ীর নির্বিকার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো৷ কড়া গলায় বলল-

‘বার বার মৃনু.. মৃনু ডাকবেন না। আমার বউকে এসব নিক নেইমে ডাকার পারমিশন আমি অন্য কাউকে দিচ্ছি না। আর হ্যাঁ একটা কথা। আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর প্রয়োজন ছিল।’

আফনান আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে-

‘ধন্যবাদ! কিন্তু কেন!’

মুগ্ধ ভীষণ গম্ভীরমুখে বলল-

‘সেদিন কাজি অফিসে না এসে মায়ের আঁচল ধরে দেশ ছাড়ার জন্য ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এত বড় একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। ভালো হয়েছে আপনি মৃন্ময়ীকে ধোঁকা দিয়ে কান্না করিয়েছিলেন। ও যদি কান্না না করতো তাহলে আমি কার চোখে বশীভূত হতাম! কাছে থাকলে নিশ্চিত আপনাকে একটা টাইট হাগ দিতাম।’

‘পাগলের মতো কি সব যা-তা বলছেন!’

মুগ্ধ মৃন্ময়ীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আফনানের উদ্দেশ্যে নরম গলায় বলল-

‘যা-তা নয়। মৃন্ময়ীকে আমার সঙ্গী করে রেখে যাওয়ার জন্য। আমি সত্যিই আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। একটা কথা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনে রাখুন। ভালোবাসলে এত ভীতু হতে হয় না। সব কিছুতে মায়ের দোষ দেওয়া ঠিক না। আপনি নিজেই মৃন্ময়ীকে পাওয়ার যোগ্য না।’

আফনান ক্ষিপ্ত গলায় বলল-

‘আপনি কিন্তু বেশ বারাবাড়ি করছেন। আমি এখনো মৃন্ময়ীকে ছাড়িনি।’

মুগ্ধ নিজেকে যথাসাধ্য গম্ভীর করে বলল-

‘অনেক কথা হলো এবার রাখছি। আমাদের ডেটে বাধা দিলেন আপনি এজন্য খুব রাগ হচ্ছে আমার। আর হ্যাঁ আরেকবার যদি নিজের বউকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছেন তাহলে এমন মিথ্যা মামলায় আপনাকে ফাঁসাবো যে সারাজীবন জেলের শুকনো রুটি খেয়ে দিন কাটাবেন। তখন বউকে তো কাছে পাবেনই না আর বাচ্চাকাচ্চার মুখও দেখা হবে না। একটা কথা তো জানেন এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার এন্ড লাভ। আর আমি কিন্তু আপনার মতো ভীতু নই। আমি মৃন্ময়ীর জন্য সব করতে রাজি।’

আফনানের কথার অপেক্ষা না করেই মুগ্ধ ফোন কেটে দিলো। তার সাথে সাথেই আফনানের নাম্বার ব্লাক লিস্টে ফেলে দেয়। বিশ্বজয়ী একটা হাসি দিয়ে মৃন্ময়ী দিকে তাকায়। মৃন্ময়ী অবাক চোখে কিছুক্ষণ স্থির চেয়ে রইলো। পরক্ষণেই খিলখিল করে হেসে উঠলো। মানুষ গম্ভীরমুখে এসব কথা কিভাবে বলতে পারে!! মৃন্ময়ী হেসেই যাচ্ছে। মুচকি হাসি নয় শব্দ করে, ঝর্নার পানি বয়ে যাওয়ার মতো তরল হাসি। এই প্রথম বুঝি মুগ্ধর সামনে খিলখিল করছে হাসলো। এখন আর সব সময়ের মতো মুগ্ধর মুখে হাসি নেই। সে অদ্ভুত চাহনিতে একমনে দেখছে মৃন্ময়ীর হাসি।

অর্পির প্রতি ভীষণ রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার। মনে মনে কয়েক দফা অর্পির গুষ্টি শুদ্ধো উদ্ধার করে ফেলছে। তবুও রাগ কমছে না। রাগের ফলে চিরবির করছে তার শরীর। মেয়েটা একটা কাজও ঠিক মতো করে না। একে-তো আফনানের কথায় গলে তার নাম্বার দিয়ে দিয়েছে। যদিও অর্পি এর জন্য অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে। আর সে-ও ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু আজকের ভুলের জন্য কিছুতেই সে ক্ষমা করবে না। তার পা ধরে কান্নাকাটি করলেও না। জীবনে প্রথম ঘটা করে তাকে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছে অথচ আজকের দিনেই অর্পি তার মামুর বাসায় গিয়ে ঘুপটি মে’রে আছে। আজকের দিনেই কেন যেতে হলো!! কে থাকবে এখন তার সাথে!
হঠাৎই তার রাগ কমে গেলে। ঝেঁকে বসলো মন খারাপ। বিষন্নতায় অন্ধকার হয়ে আসলো তার মুখ। যদি আজ তার মা-বাবা বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো তাদের দুই ভাইবোনকে এতটা অস্থির হতে হতো না৷ এই বিষয় গুলো তারাই হয়তো তাদের পাকাপোক্ত হাতে সামলিয়ে নিতো। মেহমানদের আপ্যায়নের জন্য ধ্রুব আর রঞ্জনকে এমন উতলা হওয়া লাগতো না। বোকাদের মতো বার বার একই কাজ ঘুরেফিরে এলোমেলো করছে। তার মা থাকলে নিশ্চয়ই সব সামলিয়ে নিতেন। মেয়েকে ধরে মেহমানদের সামনে নিয়ে বসাতেন। তার মা থাকলে এই মুহুর্তে তাকে একা একা অস্বস্তি আর ভয় নিয়ে বসে থাকতে হতো না। নিজেকে বড্ড অসহায় হিসেবে উপলব্ধি করলো মৃন্ময়ী। চোখদুটো আপনাআপনি ঝাপসা হয়ে আসছে। মনের গহীন কোণে অসহ্য চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল সে।

‘খুব নার্ভাস লাগছে তাই না!!’

মিষ্টি মধুর এক নারী কণ্ঠস্বরে চমকে উঠে মৃন্ময়ী। ঝট করে দৃষ্টি দেয় দরজার দিকে। মধ্যবয়স্কা এক অতি রূপবতী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। মুখে অদ্ভুত সুন্দর হাসি। ভদ্রমহিলা এগিয়ে আসতে আসতে বললেন-

‘আমিও এই দিনটায় খুব নার্ভাস ছিলাম। উনি যেদিন আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন সেদিন কিভাবে তাদের সামনে যাবো একথা ভেবেই আমার শরীর থরথর করে কাঁপছিল। কিন্তু মা আর বড় আপা মিলে আমাকে সামলিয়ে নিয়েছিল। মুগ্ধ আমাকে বলেছে তোমার কথা। আমার মনে হলো এই মুহুর্তে তুমিও আমার মতো অবস্থাতেই আছো। কিন্তু তুমি একা। একদমই একা। তোমাকে সামলানোর জন্য কিংবা সাহস দেওয়ার জন্য কেউ নেই। তাই আমি চলে আসলাম তোমার সেই অভাবটা পূরণ করতে।’

মহিলার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে ইনি মুগ্ধর আম্মু। এনাকে দেখেও মৃন্ময়ী অবাক হলো। প্রথম দেখাতেই এতটা আন্তরিকতার সাথে কিভাবে কথা বলছেন!! মুগ্ধ কি তাহলে ওনার মতোই হয়েছেন!!
মুগ্ধর আম্মু খুব সহজ সরল ভাবে কথা বলে যাচ্ছেন। কথা বলতে বলতে মৃন্ময়ীর পাশে এসে বসলেন। বেশ আগ্রহ নিয়ে বললেন-

‘আমি মুগ্ধকে বলে দিয়েছে আজ তুই আর তোর বাপ একা একা থাক। আমি আজ তোর পক্ষের না বরং মেয়ের পক্ষের হয়ে কথা বলবো। তাই সাবধানে থাকিস তোরা বাপ ছেলে। আমার কথা শুনে মুগ্ধ একদম চিমসে গিয়েছিল। ওর মুখটা দেখার মতো ছিল।’

ভদ্রমহিলা হাসছেন। তরল ভঙ্গির হাসি। তার হাসির মাঝেও ভালো লাগা জড়িয়ে আছে। তাদের মা ছেলের হাসিতে যেন চারপাশে ভালো লাগায় ছেয়ে যায়। একজনের হাসিতেই আশেপাশের সবার মন ভালো হয়ে যায়। মৃন্ময়ীকে চুপ থাকতে দেখে তিনি ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করলেন-

‘কথা বলছো না যে! আমি একা একাই কত কথা বলে ফেললাম। তুমি নিশ্চয়ই অস্বস্তিবোধ করছো তাই না!’

মৃন্ময়ী ঝাপসা চোখে ওনার দিকে চাইলো। ধরা গলায় বলল-

‘আপনি অনেক ভালো।’

কথাটা বলেই মৃন্ময়ী চোখের পানি ছেড়ে দেয়। ভদ্রমহিলা মৃদু হাসলেন। মৃন্ময়ীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-

‘আমার ছেলে ঠিকই বলেছে তোমার চোখে কিছু একটা আছে। তোমার চোখদুটো মানুষকে বাধ্য করে তোমাকে ভালোবাসতে।’

——————

❝তোমার ওই নির্মল চোখদুটোতে কেবলই মাত্র স্নিগ্ধতা,
তোমার মাঝেই দেখতে পাই আমি এক আকাশ মুগ্ধতা।❞

মুগ্ধর মুখে এমন ছন্দ শুনে মৃন্ময়ী বিস্ময়ের চোখে চাইলো পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে। বরাবরের মতোই মুগ্ধর মুখে মনকাড়া হাসি। সে মৃন্ময়ীর দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে বলল-

‘বিয়ের তারিখ হয়তো এই সপ্তাহের মধ্যেই পরবে৷ আম্মু চাচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে।’

মৃন্ময়ী কিছু বলল না। আবারও নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকায় নিচের পিচঢালা রাস্তায়। মুগ্ধ আর সে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাকিরা ভেতরে বিয়ের তারিখ নিয়ে আলোচনা করছে না।
মৃন্ময়ীকে চুপ থাকতে দেখে মুগ্ধ আবারও বলল-

‘তুমি খুব সাংঘাতিক মেয়ে। আমাকে তো বশ করিছিলে ভালো কথা। কিন্তু এখন দেখি আম্মুকেও বশ করে ফেলেছো। ছেলের জন্য বউ দেখতে এসে উনি পাত্রী পক্ষের লোক হয়ে গেছে। ভাবা যায় এগুলো!! কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার।’

‘আপনি খুব লাকি আপনার এত ভালো একটা মা পেয়েছেন।’

‘লাকি আর রইলাম কোথায় আম্মুকে তো তুমি নিয়েই গেলে।’

মুগ্ধর হতাশা দেখে মৃন্ময়ী ঠোঁট চেপে হাসলো। কিছুটা সময় পর মুগ্ধ বেশ গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলো-

‘মৃন্ময়ী!’

মুগ্ধর ডাকে মৃন্ময়ী ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। মুগ্ধ অতি গম্ভীর কণ্ঠে বলল-

‘একটা অন্যায় কাজ করতে ইচ্ছে করছে। মনের মধ্যে খুব ভয়ংকর একটা ইচ্ছে জেগেছে। ইচ্ছেটা খুবই অন্যায় তবুও ইচ্ছে করছে। সব জেনেও অন্যায় কাজ করতে চাচ্ছি।’

মৃন্ময়ীর সরু চোখে চেয়ে রইলো। মুগ্ধর গম্ভীর কথা মানেই উল্টাপাল্টা কিছু। দু’দিন আগের কথা এখনও মনে আছে তার। কিভাবে তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল৷ আর আফনানাকেও হুমকি দিয়েছিল কি অদ্ভুত ভাবে।
মৃন্ময়ী সন্দেহের গলায় ছোট করে প্রশ্ন করে-

‘সেই অন্যায় কাজটা কি?’

মুগ্ধ কোনো জবাব দিলো না। ধীর পারে এগিয়ে এলো মৃন্ময়ীর নিকটে। মৃন্ময়ী কপাল কুচকালো। মুখ ফুটে আগ্রহের সঙ্গে কিছু বলবে তার আগেই বাধা দেয় মুগ্ধ। ডান হাতে ঢেকে ফেলে মৃন্ময়ীর স্নিগ্ধ চোখদুটো। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই উষ্ণ স্পর্শে মূর্তি ন্যায় রূপ ধারণ করল। স্তব্ধ হয়ে গেল তার মন, মস্তিষ্ক, শরীর সব কিছুই। ডান গালে একজোড়া তপ্ত ঠোঁটের গাঢ় স্পর্শ অনুভব করলো। মুহুর্তেই বরফের ন্যায় জমে থরথর করে কেঁপে উঠলো তার হৃদয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। গলার মাঝেই যেন আটকে যাচ্ছে নিঃশ্বাস। এভাবেই কিছুক্ষণ কেটে গেল। পাড় হয়ে গেল অবাঞ্ছিত কিছু মুহুর্ত। গালের উপর চেপে রাখা ওষ্ঠদ্বয়ের উষ্ণ অত্যাচার কমে এলো। মুগ্ধ সরিয়ে নিল তার ঠোঁট জোড়া। তবে হাত এখনও মৃন্ময়ীর চোখ ঢেকে রাখা। মৃন্ময়ী নড়ছে না। আগের মতোই স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ শীতল গলায় কিছুটা ফিসফিসিয়ে বলল-

‘আজ আর তোমার চাহনিতে নিজেকে বন্দী করতে পারবো না। এই অন্যায়ের পর তোমার নিষ্ঠুর চোখের দিকে তাকানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এইমুহূর্তে তোমার স্নিগ্ধ চাহনিতে আমি নিজেকে ঘায়েল করার সাহস দেখাবো না। তোমার বশীকরণ চোখদুটিতে নিজেকে বশ করতে চাচ্ছি না। ক্ষমা চাচ্ছি নিজের করা অন্যায় কাজের জন্য। খুব শীগ্রই আসবো তোমাকে বউ বানিয়ে নিতে৷ তোমরা চোখের নিষ্ঠুরতার জন্য তোমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে। তৈরি থেকে এই পাগলাটে মৃন্ময়ের সঙ্গে মৃন্ময়ীকে যুগলবন্দী করতে।’

মৃন্ময়ীর মস্তিষ্ক সচল হতেই হাল্কা নেড়েচেড়ে উঠলো। মুগ্ধর বুকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে বলল-

‘মৃন্ময় সরুন।’

মুগ্ধ মুচকি হাসলো। কন্ঠে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে বলল-

‘যাক অবশেষে তোমার মুখে মৃন্ময় ডাক শুনতে পেলাম।’

মুগ্ধ মৃন্ময়ীর চোখ থেকে হাত সরালো। মৃন্ময়ী পিটপিট করে আস্তে ধীরে চোখ মেলে সামনে তাকায়। নাহ.. সামনে কেউ নেই। মুগ্ধ চলে গেছে। সিড়ি দিয়ে নামার শব্দ হচ্ছে। মৃন্ময়ী স্থির হয়ে রইলো কিছুক্ষন। পরক্ষনেই ঠোঁটের কোণে ক্ষীন হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এর কারণ তার অজানা।

আর মাত্র পাঁচ দিন পর বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। একটু আগেই মুগ্ধর বাবা-মা বিয়ের ফাইনাল তারিখ ঠিক করে বিদায় নিলেন। মুগ্ধকে আর দেখা যায়নি। সে পালিয়েছে মৃন্ময়ীর চাহনি থেকে। মৃন্ময়ী এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।

‘অবশেষে মাটির তৈরী রাজকুমারীর জন্য একটা রাজকুমার খুঁজে পেলাম। এবার তুই খুশি তো!! সারাজীবন তোর পাশে থাকার জন্য মুগ্ধ আছে। মায়ের অভাব পূরণ করার জন্য মুগ্ধর মা আছে।’

ধ্রুবর কথায় মৃন্ময়ী মনে মনে হাসলো৷ তবে মুখে গম্ভীর ভাব এনে বলল-

‘নাহ এখনো খুশি না। আমার আরেকটা গিফট লাগবে।’

ধ্রুব ক্লান্ত গলায় প্রশ্ন করে,

‘আবার কি!!’

‘সারাজীবন তোমার পাশে থাকার জন্য আমার একটা ভাবি লাগবে। একটা সানসাইন লাগবে। যে কি-না আমি না থাকা অবস্থায় তোমার জীবনটা খুশিতে উজ্জ্বল করে দিবে।’

মৃন্ময়ী কথাগুলো বলেই মিষ্টি করে হাসে। ধ্রুব সন্দিহান কন্ঠে বলল-

‘তা না হয় পরেই দেখা যাবে। আপাতত তোর বিয়ে নিয়ে চিন্তা কর।’

বেশ কিছুটা সময় দুজনে চুপচাপ কাটিয়ে দেয়। মৃন্ময়ী দোলনায় বসে নরম গলায় বলল-

‘আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ভাইয়া। আব্বু আম্মুর থেকেও বেশি ভালোবাসি। একা একা এত কিছুর দায়িত্ব নিয়েছো। ছোট থেকে আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছ। এসবের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ বলে ছোট করবো না। তবে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ পুরুষ তুমি। আর সব সময়ই আমার চোখে তুমিই সেরা থাকবে।’

ধ্রুব মৃন্ময়ীর পাশে বসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলল-

‘আম্মুর কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে সেরা উপহার হলি তুই। আম্মু চলে যাওয়ার সময় এই মূল্যবান উপহারটা আমাকে দিয়ে গেছে। এই উপহারটাকে ভালোবেসে আগলে রাখার দায়িত্ব তো আমারই তাই না! তাই এসব ধন্যবাদ টন্যবাদ বাদ। তুই আমাকে ভালোবাসিস আমিও তোকে ভালোবাসি হিসেব বরাবর।’

মৃন্ময়ী স্মিত হেসে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে। দুঃখবিলাসী বাগানটা আজ তাদের খুশিতে জ্বলজ্বল করে আলো ছড়াচ্ছে। মৃন্ময়ীর সকল দুঃখ কষ্ট যেন শুষে নিয়েছে এই বাগানের গাছ গুলো। শুরু হয়েছে মৃন্ময়ীর সুখের দিন। মন ভালোর দিন। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ আগামী মৃন্ময় যুগলপ্রেমের দিন।

সমাপ্ত__🌻

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে