স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-১৬

0
1154

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৬

কলিং বেল বেজে উঠল শাহিলী ওয়াজেদ এসে দরজা খুলে দিতেই স্নিগ্ধতাকে দেখে বেশ অবাক হলেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই স্নিগ্ধতা শাহিলী ওয়াজেদকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল এই মুহূর্তে কারো সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে নেই।শাহিলী ওয়াজেদ পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলেন,

– এসময় তুই একা বাড়িতে এলি? জামাই কোথায়?

স্নিগ্ধতা কোনো উত্তর দিল না নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে বিছানায় নিস্তেজ ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিল। চেপে রাখা কান্না গুলো বের হয়ে আসছে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বালিশে মুখ গুজে অজস্র ধারায় কান্না করছে স্নিগ্ধতা।

শাহিলী ওয়াজেদ বাইরে থেকে চেঁচামেচি করছেন কিন্তু কোনো কথাই স্নিগ্ধতার কানে যাচ্ছে না। সানজিদ ওয়াজেদ বিছানা থেকে উঠতে পারেন না শাহিলী ওয়াজেদকে ডেকে বললেন,

– কে এসেছে কার উপর চেঁচামেচি করছো?

– তোমার অপয়া মেয়ে একা একা শশুর বাড়ী থেকে চলে এসেছে আর এসেই আমার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়েছে এত ডাকাডাকির পরেও একটা শব্দও করেনি।

সানজিদ ওয়াজেদ চমকায়িত কন্ঠে বললেন,
– কিহ! স্নিগ্ধা এমন করেছে?

– তোমার মেয়ের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে যদি শশুর বাড়ীতে কোনো অঘটন ঘটিয়ে এখানে আসে তাহলে কিন্তু আমি ওকে মে’রেই ফেলব।

শাহিলী আরও কিছুক্ষণ বকাঝকা করে রান্নাঘরের দিকে গেলেন।

পুরো ঘর অগোছালো একপাশে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে স্তব্ধ।অরিত্রি শিকদার ছেলের ঘরে এসে চমকে গেছেন যে ছেলে এত গোছালো পরিষ্কার সে ছেলে নিজের ঘর এমন করে রেখেছে ভাবতেই অবাক লাগছে।অরিত্রি শিকদার স্তব্ধের কাধে হাত রেখে বললেন,

– একি অবস্থা করেছিস ঘরের কি হয়েছে বাবু মমকে বল।

স্তব্ধ চোখ খুলে তাকাতেই অরিত্রি শিকদার কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। স্তব্ধের চোখ রক্তিম বর্ণের মতো হয়ে গেছে অরিত্রি শিকদার জানতে চাইলেন,

– তোর চোখ এমন লাল হয়ে গেছে কিভাবে?

– কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আমার সামনে থেকে এখন যাও।

– এমন করে কথা বলছিস কেন? আমায় বল কি হয়েছে?

– কি বলার আছে তোমাকে? তোমরা আমার জীবনটাকে নিয়ে রীতিমত খেলা করছো, একজন হুটহাট জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল সবকিছু মেনে নিয়ে যখন স্নিগ্ধকে নিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক শুরু করতে চাইলাম তখন তুমি মাঝখানে বাধা হয়ে দাড়ালে জোর করে আমার থেকে ওকে আলাদা করে দিলে, বাবা-মা হয়েছ বলে কি সন্তানের ইচ্ছে চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্য নেই তোমাদের কাছে? সবসময় নিজেদের মন মতো সবকিছু চাপিয়ে দিবে, সত্যি বলতে তোমরা আমার ভালো চাও না নিজেদের ইচ্ছা আর জেদ রাখার জন্য আমাকে ব্যবহার করছো।

অরিত্রি শিকদারের চোখের কোণে পানি জমে গেছে। উনি কখনও চাননি স্তব্ধ কষ্ট পাক তিনি ভেবেছিলেন উনার সিদ্ধান্তে স্তব্ধের ভালো হবে কিন্তু ছেলের মুখ থেকে অভিযোগ শুনে নিজের উপর রাগ হচ্ছে। অরিত্রি শিকদার স্তব্ধের দিকে হাত বাড়াতেই স্তব্ধ সরে গিয়ে বলল,

– লিভ মি মম তোমার ইচ্ছে তো পূরণ হয়েছে তারপরেও কেন আমায় বিরক্ত করছো? আমার কিছু ভালো লাগছে না যাও এখান থেকে।

– আমি তোকে বিরক্ত করছি!

স্তব্ধ উওর দিল না অরিত্রি শিকদার ছেলের ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।আজ উনার মনে হচ্ছে এত বছর হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি সন্তানের মন বুঝতে পারেননি। রাতুল শিকদার স্ত্রীর পাশে এসে দাড়ালেন কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থেকে তারপর বলতে লাগলেন,

– আমরা দু’জনেই আমাদের ছেলের ভালো চাই নাতাশাকে কখনই স্তব্ধের জন্য আমার পছন্দ ছিল না, স্নিগ্ধতার সঙ্গে বিয়েটা স্তব্ধ মেনে নিয়েছে, স্তব্ধ স্নিগ্ধতার সঙ্গেই থাকতে চায় আশা করি এটা তুমি বুঝতে পেরেছ তারপরেও কেন ছেলে আর ছেলের বউয়ের মাঝখানে বাধা হতে চাচ্ছো?কেন ছেলেকে কষ্ট দিচ্ছো? তুমি কি বুঝতে পারছো না এসব করার ফলে তুমি স্তব্ধের থেকে দূরে সরে যাচ্ছো তোমার প্রতি ওর যেই সম্মান ভালোবাসা ছিল তা চলে যাচ্ছে।

অরিত্রি শিকদার আতঙ্কিত কন্ঠে বললেন,
– না আমি এমনটা চাইনি আমি চেয়েছিলাম আমার ছেলেটা যাতে সুখী হয় ভালো থাকে, রুশি আমায় বলেছিল ওদের আলাদা করে দিতে এতে নাকি স্তব্ধের ভালো হবে আমি কখনও বিবেক দিয়ে ভাবিনি রুশি যা বলেছে তাই বিশ্বাস করেছি।

– তুমি বাচ্চা নও যে নিজের সন্তানের ভালো মন্দের সিদ্ধান্ত অন্যের কাছ থেকে নিতে হবে।

রাতুল শিকদার চলে গেলেন অরিত্রি শিকদার একা হয়ে পড়লেন। বাড়িতে সবাই নিজেদের মতো চলাফেরা করে স্তব্ধ নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে কারো সঙ্গে কথা বলে না অরিত্রি শিকদার চেষ্টা করেও ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। বাড়ির বাকি সদস্যরাও বেশি একটা কথা বলে না রাতুল শিকদারও এড়িয়ে চলছেন অরিত্রি শিকদারকে।
___________

একটা দিন কেটে গেল বেলা করে দরজা খুলল স্নিগ্ধতা চোখমুখ ফুলে গেছে কান্না করার ফলে।স্নিগ্ধতাকে দেখতেই শাহিলী ওয়াজেদ শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে জিজ্ঞেস করলেন,

– এতক্ষণ পর ঘর থেকে বের হওয়ার ইচ্ছে হলো,সত্যি করে বল এভাবে শশুর বাড়ী থেকে চলে এলি কেন?

স্নিগ্ধতা চুপ করে আছে শাহিলী ওয়াজেদ কিছু একটা ভেবে চোখ বড় বড় করে বললেন,
– তোকে কি ওরা বের করে দিয়েছে বাড়ি থেকে?

স্নিগ্ধতা কেঁদে দিল শাহিলী ওয়াজেদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন স্নিগ্ধতাকে আরও কিছু বলতে যাবেন তার আগেই স্নিগ্ধতা দৌড়ে সানজিদ ওয়াজেদের ঘরে চলে গেল।

সানজিদ ওয়াজেদ অনেক চিন্তায় ছিলেন মেয়েকে দেখে চিন্তা একটু কমেছে তবে মেয়ের চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

– কাঁদছিস কেন? ওই বাড়ি থেকে এভাবে কেন চলে আসলি?

শাহিলী ওয়াজেদ পেছনে পেছনে ঘরে আসলেন মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
– তোমার মেয়েকে ওরা তাড়িয়ে দিয়েছে আমি বলে রাখলাম এই মেয়ের কোনো জায়গা নেই এই বাড়িতে সংসার আমার ছেলের কামাইতে চলে।

– চুপ করে সবটা শুনতে দাও। স্নিগ্ধা কি হয়েছে বল আমায়।

স্নিগ্ধতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
– স্তব্ধ আমায় ডিভোর্স দিয়েছে উনার মা আমাকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেননি তাই বাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছে।

সানজিদ ওয়াজেদ অশান্ত কন্ঠে বললেন,
– তোর শশুর কিছু বলেনি?

– বলার কিছু থাকলে তো বলবে।

সানজিদ ওয়াজেদের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট মেয়েকে এখন কিভাবে রক্ষা করবেন নিজেই তো চলতে ফিরতে পারেন না।শাহিলী ওয়াজেদ ক্রোধ মাখা দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতার দিকে এগিয়ে গেলেন, স্নিগ্ধতার চুলের মুঠি ধরে বসা থেকে উঠিয়ে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলেন। এমনিতেই মাথা ব্যথা তার উপর এভাবে চুলে আক্রমণ করার কারণে স্নিগ্ধতা হাউমাউ করে কান্না করছে, সানজিদ ওয়াজেদ চিল্লিয়ে বলছেন,

– শাহিলী ওকে ছেড়ে দাও কিছু করো না।

শাহিলী ওয়াজেদ কোনো কথা কানে না নিয়ে বসার ঘরে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিলেন স্নিগ্ধতাকে তারপর ঘর থেকে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে এসে ইচ্ছে মতো মা’রতে লাগলেন। বাঁশের কঞ্চিটা মূলত স্নিগ্ধতার জন্যই আনা আগেও এটা দিয়ে অনেকবার মা’রা হয়েছে, স্নিগ্ধতা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

– মা আর মে’রো না খুব ব্যথা লাগছে ও মা….

এত অনুনয় বিনয়ও শাহিলী ওয়াজেদের নির্দয় মনকে দমাতে পারলো না এখনও স্নিগ্ধতাকে মে’রেই যাচ্ছেন।শুভ একটু বাহিরে গেছিল বাড়িতে ফিরতেই মায়ের এমন পাশবিক আচরণ দেখে দৌড়ে শাহিলী ওয়াজেদকে থামানোর চেষ্টা করলো। শাহিলী ওয়াজেদ রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

– শুভ সরে যা সামনে থেকে এই মেয়েকে আজ মে’রেই ফেলব অনেক জ্বালাচ্ছে।

রাগে যেন শাহিলী ওয়াজেদের শক্তি বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে উনাকে থামানোই দুষ্কর।শুভ শাহিলী ওয়াজেদকে থামাতে না পেরে স্নিগ্ধতাকে আড়াল করার চেষ্টা করতে লাগল।এত আঘাত লাগায় স্নিগ্ধতা জ্ঞান হারিয়েছে শুভ বোনকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। পেছন থেকে শাহিলী ওয়াজেদ অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন।

স্তব্ধ রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলো।অরিত্রি শিকদার পেছন থেকে ডেকে বললেন,
– নাস্তা করে যা স্তব্ধ।

স্তব্ধ শুনেও না শোনার ভান ধরে দ্রুত হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। স্তব্ধের এমন ব্যবহার মা হয়ে মেনে নিতে পারছেন না অরিত্রি শিকদার উনার কাছে ছেলের খুশি সবার আগে। স্তব্ধ সারারাত ধরে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর যাই হয়ে যাক স্নিগ্ধতাকে সে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে না দরকার হলে তাকে নিয়ে দূরে চলে যাবে।
_____________

বিষন্ন মন নিয়ে নিজের ক্লাস শেষ করে তিহান টিচার্স রুমের দিকে যাচ্ছিল পথিমধ্যে কারও সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল ভালো করে তাকাতেই শিরিনকে দেখতে পেল। শিরিন কপাল ঘষতে ঘষতে বলল,

– আমার মাথাটা ফেটেই গেছে রে এই লম্বু দেখে হাঁটতে পারেন না?

– আমি দেখেই হাঁটছিলাম হঠাৎ যে কোনো বটগাছ চলে আসবে আমি কি করে জানবো?

– এই এই আপনি কাকে বটগাছ বললেন?

– আমার সামনে যে আছে তাকেই বলেছি।

– এত বড় অপমান আপনাকে তো আমি…

কথার মাঝেই শিরিনের মোবাইল বেজে উঠলো। শিরিন রিসিভ করে কানে ধরতেই অপরপাশ থেকে কেউ কিছু বলল শিরিন মনোযোগ সহকারে শুনে বলল,

– তুই ওর কাছেই থাক আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি।

শিরিনের মুখে অস্থিরতা বিরাজ করছে দ্রুত পা ফেলে হাঁটা ধরলো তিহানও তার পেছনে ছুটলো। শিরিন প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে বলল,

– স্যার এখন আমার ইমার্জেন্সি ছুটির প্রয়োজন আমার বোন অসুস্থ হয়ে পড়েছে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এখনি আমাকে যেতে হবে।

প্রিন্সিপাল বললেন,
– আচ্ছা আপনি যান ফ্রি হলে একটা এপ্লিকেশন জমা দিয়েন।

– ধন্যবাদ স্যার।

আর এক মুহূর্তও না দাড়িয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেল শিরিন।

শুভ স্নিগ্ধতাকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছে, স্নিগ্ধতার এমন অবস্থা দেখে মহিলা ডাক্তার পুলিশ কেইস করার কথা বলেছিল শুভ অনেক বুঝিয়ে নিষেধ করেছে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মা’রায় অনেক জায়গা কেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে আবার কিছু কিছু জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে, শরীর ক্লান্ত এবং তীব্র জ্বর।

শিরিন রিসিপশন থেকে জেনে তারপর কেবিনের দিকে এলো।শুভকে দেখে জিজ্ঞেস করল,
– স্নিগ্ধার কি অবস্থা কেমন আছে?

– তেমন ভালো না কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তাই তোমায় ফোন করেছি তুমি ছাড়া আপুকে কেউ সামলাতে পারবে না।

– একদম ঠিক করেছিস দাড়া আমি স্নিগ্ধার সঙ্গে দেখা করে আসি।

শুভর ফোনে শাহিলী ওয়াজেদের কল আসলো কয়েক সেকেন্ড কথা বলে শুভ মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে বলল,

– শিরিন আপু বাবা আবার হার্ট অ্যাটাক করেছে আমাকে বাড়ি যেতে হবে তুমি আপুর কাছে থাকো।

– যা আর এখন স্নিগ্ধাকে কিছু জানানোর দরকার নেই এমনিতেই ওর অবস্থা ভালো না ফোন করে আমায় সবটা জানাস।

– ঠিক আছে।

শুভ বেরিয়ে গেল, শিরিন স্নিগ্ধতার কেবিনে ঢুকলো।স্নিগ্ধতা শুয়ে আছে চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে শিরিনকে দেখতেই বসার চেষ্টা করলো। শিরিন কাছে গিয়ে বসতে সাহায্য করলো,স্নিগ্ধতা বসেই শিরিনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। এতক্ষণ এমন একটা জায়গার প্রয়োজন ছিল তার যেখানে মাথা রেখে কান্না আর দুঃখগুলো বিসর্জন দিতে পারবে। শিরিন হচ্ছে স্নিগ্ধতার বেস্ট ফ্রেন্ড একসঙ্গে দু’জনে পড়াশোনা শেষ করেছে, স্নিগ্ধতার সুখ দুঃখ প্রকাশের মাধ্যম ছিল শিরিন।

শিরিন স্নিগ্ধতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
– কি হয়েছে? তোর হাজব্যান্ড কোথায়?

কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছে তারপরেও স্নিগ্ধতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগল

– স্তব্ধ আমায় ছেড়ে দিয়েছে উনার মা আমায় পছন্দ করেন না, বিশ্বাস কর আমার কোনো দোষ ছিল না ওই বাড়ি থেকে আমায় বের করে দিয়েছে বাবার বাড়িতে যাওয়ার পর মা সবটা শুনে আমায় মে’রেছে তুই বল আমি কোথায় যেতাম? কোথাও যাওয়ার জায়গাও তো নেই আমার জীবনেই কেন এত কষ্ট? কেন সবাই আমায় কষ্ট দেয়? আত্মহত্যা যদি পাপ না হতো..

শিরিন স্নিগ্ধতার মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
– একদম এসব মুখে আনবি না কাউকে দরকার নেই কেউ কারো নয় একা বাঁচতে শিখতে হবে তোকে হাসপাতাল থেকে সোজা তুই আমার বাড়িতে যাবি।

– উহু যাব না।

– তোকে আমি জিজ্ঞেস করেছি নাকি? এখন আমি জব করি নিজের ফ্ল্যাটে থাকি তাই কোনো বাধা নেই আপনজনদের তো দেখলি কেউ তোকে ভালোবাসে না এছাড়া আমি তোকে ছাড়ছি না।

স্নিগ্ধতা কিছু বলল না।

সানজিদ ওয়াজেদের অবস্থা খুব খারাপ, বাঁচার আশা ডাক্তার ছেড়ে দিয়েছে মূলত অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং চেঁচানোর কারণেই এমন হয়েছে। শাহিলী ওয়াজেদ প্রলাপ বকছেন,

– আজ আমার স্বামীর এমন অবস্থার জন্য ওই অপয়া মেয়েটাই দায়ী, কোথায় ও শুভ? ওকে আমি গলা টিপে মে’রে ফেলব।

– এসব নাটক বন্ধ করো মা আপু নয় বরং তোমার জন্য বাবার এমন অবস্থা সব জেনেও কেন বাবার সামনে আপুকে এভাবে মা’রলে।

– তুই আমার নিজের ছেলে হয়ে এমন বলছিস?

– ভুল কিছু তো বলিনি।

স্তব্ধ অফিস থেকে আগেই বের হয়ে গেছে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে স্নিগ্ধতার বাড়িতে গেছে কিন্তু বাড়িতে গিয়েই তালা ঝোলানো দেখে চমকে যায়, মাথা কোনভাবেই কাজ করছে না চোখের সামনে ধোয়াশা দেখতে পাচ্ছে।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে