সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-০৯

0
2271

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_৯
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আহিল ভাইয়া পাড়ে এনে রিংকিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে আশেপাশের সবার দিকে একবার চোখ বুলালেন৷ কয়েকজন ছেলেরা রিংকির দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে৷ আহিল ভাইয়া ব্যাপারটা বুঝে ভাইয়ার গা থেকে শার্ট খুলে রিংকির গায়ে জড়িয়ে দিলেন৷ রিংকি লজ্জা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি আর সামু একেবারে বেকুব বনে গেছি৷ কী হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা৷

আরুহিঃওরে সামুরে আমারে কেউ ধর এতো ভালোপাশা দেখে আমি যে অজ্ঞান হইয়া যামু৷
.
সামান্তাঃহোতা হে কিয়া৷
.
আহিল ভাইয়া রিংকির কাছ থেকে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন তারপর কোমড়ে হাত গুজে বললেন,
বেশি পাকনা হয়ে গেছিস তোরা৷ দেখলি কিভাবে পানিতে পড়ে গেলো৷ তোরা তো আর ওকে তুলবিনা তাই আমিই তুললাম৷
.
সামন্তাঃ বুঝি বুঝি৷ মায়ের চাইতে মাসির দরদ বেশি হুহ৷
.
আহিল ভাইয়া কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো৷
আরুহিঃএই বেটা বেটির মনে আবার কি লাড্ডু ফুটছে আল্লাহই জানেন৷
🍁🍁🍁🍁
আয়েশা আপু ওরা সবাই চলে গেছে৷ দুটো গাড়ি আনাতে বেশ সুবিধাই হয়েছে৷এখন আমি,সামু,রিংকি,আহিল ভাইয়া যাবো৷ আমি আর সামু ব্যাক সিটে এসে বসেছি৷ রিংকি আমাদের কাছে আাসতে চাইলে ওকে ফ্রন্ট সিটে আহিল ভাইয়ার কাছে পাঠিয়ে দিলাম৷
আমি আর সামু এদেরকে ফলো করছি৷ কী সুন্দর একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে৷ চোখে চোখ পরতেই রিংকি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিচ্ছে৷

আরুহিঃচোখে চোখ যেই পরেছে এন্টার্নটিক নড়েছে৷
.
সামান্তাঃহৃদয়ের কানেকশনে তরতাজা সিগনাল৷
.
আহিল ভাইয়া আমার আর সামুর কাউয়া কন্ঠ মার্কা গান শুনে বিরক্তির সহিত বললেন,এটা কীরকম গান আর ওই তোরা ওতো ফলো করছিস কেনো বলতো?
.
আরুহিঃওহো বেশ করেছি ফলো করেছি করবোইতো৷
.
আহিলঃযা পারিস কর৷
🍁🍁🍁🍁
রিসোর্টে আসার পর থেকেই খেয়াল করছি রিংকি কেমন মিটিয়েমিটিয়ে হাসছে৷ আমরা কিছু বললে পাত্তাই দিচ্ছেনা৷

আরুহিঃবুঝলি সামু,এই বেটি আহিল ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে৷ আর আহিল ভাইয়াও৷
.
হুম আমিও সেটাই ভাবছি৷ তবে রিংকিকে ভাবী বানাতে আমার কোনো আপত্তি নেই৷
.
আমাকে ভাবী বানাতে আপত্তি আছে??(আনমনে)
.
রুহি আর ইউ সিরিয়াস এটা তুই বলছিস৷ আই জাস্ট কা’ন্ট বিলিভ দিস ইয়ার৷
.
আমার যখন খেয়াল হলো আমি কী বলে ফেললাম তখুনি আমার মনে তক্তা+বাঁশ দিয়ে বারি শুরু হয়ে গেলো৷ আমি কী বললাম আমি নিজেই জানিনা৷
.
ধুর আমি সেভাবে বলিনি৷
.
হুম৷
🍁🍁🍁🍁
পরেরদিন আবার সবাই বেড়িয়েছি চায়ের বাগান ঘুরার জন্যে৷আমি, আহিল ভাইয়া,রিংকি,সামু আমরা একসাথে৷ আর বাকি সবাই এক সাথে৷ রিংকি আসার পর থেকেই আহিল ভাইয়া আমদের সাথে সাথে আছে৷ আমরা চায়ের বাগানে ঘুরার সাথে সাথে চা গাছের কুড়িও চুরি করছি আর ব্যাগে ঢুকাচ্ছি৷
হঠাৎই একটা ছোট মেয়ের দিকে চোখ পরলো মেয়েটি এক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে৷

আরুহিঃও আল্লাহ্ গ মেয়েটা কী চা বাগানের মালিকের মেয়ে নাকি৷
মেয়েটি কপাল কুচকে কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো,,
“তোমরা ছা ফাতা নেও কেল্লাগি৷ ছা ফাতা দিয়া কিতা করতায় তোমরা৷

রিংকি এগিয়ে এসে ভেংচি কেটে বললো,,
“কেল্লাগি আবার ছা খাইবার লাগি ছা ফাতা নেই৷ তর কিতা অইছে গ৷ তুই কিতা মালিকের ফুরি নাতা৷
.
আমি আর সামু রিংকির সিলেটি ভাষা শুনে হাসতে হাসতে শেষ৷

“ওরে সিলেটিরেরররর😂😂
.
আহিল ভাইয়া ফোন বের করে রিংকির কথা ভিডিও করছে আর হাসছে৷

ওই তুমরা ইখান থেকি যাও খইলাম৷ নাইলে জানো নি কিতা করমু৷ সকলরে ডাক দিয়া ফিটা খাইয়াইমু৷
.
কত শখ৷ ওই যা ইখান থেকি আমরা কিতা বেশি ছা ফাতা নিতাছি নাতা কয়েকটা নিতাছি৷
.
ইতা দিয়া তোমরা কিতা করবায় গ৷
.
ইতা দিয়া আমরা ছা খাইমু গ৷
.
ইভাবে খায় নাতা৷
.
তে কিভাবে খায়৷
.
ওতা ফাতারে মিশিনও দিবো এরপরে মিশিন দিয়া গুরা গুরা কইরা ফাওডারের মতো বানাইবো৷ এরপরে ছা পাতি বানাইয়া ছার মাঝে দিলে কালার ওইবো৷
.
ছিনি গ আর কওয়া লাগতনা৷ ওখন আমরারে একটু সাধ দে ফাতা তুলাত৷
.
আইচ্ছা৷
মেয়েটি চায়ের কুড়ি ভাঙতে ভাঙতে বললো,

‘আইচ্ছা তোমরা কোনানের৷ কোনান থেকি আইসো৷ তোমার নাম কিতা৷ আর ওই পোলা কিতা তোমার জামাই নাতা৷
.
মেয়েটির কথা শুনে সামু হাসতে হাসতে মাটিতে পরে গেছে৷ আদিল ভাইয়াও মুখ টিপে হেসে তাকিয়ে আছে৷

রিংকি আমাদের সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,, “আচ্ছা এখানে তো আরও দুজন আছে এদেরকে তো বললি না আমায় কেন বললি৷ আর উনি আমার জামাই না৷
.
না মানে দেখছি উনি তোমার ছবি তুলতাছইন আর হাসতাছইন৷
.
আর এরলাগি আমার জামাই অইগেছে৷
.
আইচ্ছা কও গ তোমরা কোনান থেকি আইসো৷
.
আমরা ঢাকা থেকে আইছি৷
.
ওহ আইচ্ছা৷
.
তে তোমার বাড়ি কই??
.
আমরার বাড়ি সুনামগঞ্জ ওখানো বেরানিত আইসি ঘুরবার লাগি৷ আইচ্ছা আমি যাই নাইলে আম্মু মারবা৷
.
আইচ্ছা যা৷
.
আহিল ভাইয়া রিংকির আর মেয়েটির কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ৷ তারপর হাসি বন্ধ করে বললেন,
আরেহ্ বাহ রিংকি তুমি তো খুব সুন্দর করে সিলেটি বাসায় কথা বলো৷ কোথায় থেকে শিখলে৷
.
ওই আমার প্রাইমারি স্কুলের এক ফ্রেন্ড সিলেটের ছিলো তার কাছ থেকেই শিখেছি৷
.
হুম খুব ভালো৷
.
সামান্তাঃরিংকি তোর বিয়ে হলে ভাইয়ার সাথে সিলেটি ভাষায় কথা বলিস৷
.
মানে??
.
কিছু না এমনি৷

আমরা চায়ের বাগান থেকে বেড়িয়ে গেলাম সবাই৷ এবার বিছানাকান্দি যাবো৷
🍁🍁🍁
আরুহিঃও আল্লাহ্ গ বিছানাকান্দি তো আরও সুন্দর৷ কী সুন্দর চারিদিকে পাহাড় পাথর৷ পানির উপরে আবার নৌকাও আছে৷
.
সামান্তাঃরুহি দেখ এতো কম পানিতে আবার নৌকাও আছে৷।
.
আদনান ভাইয়া আমাদের সবাইকে নিয়ে নৌকায় উঠলেন৷ পাথরের উপরে কী সুন্দর স্বচ্ছ পানি৷নৌকা পানির মধ্যেখানে আসতেই সামান্ত বলে উঠলো,,
“এমা এখানে এতো কম পানি৷”
কথাটা বলে সামান্তা পানিতে নেমে গেলো৷
.
সামান্তাঃও আল্লাহ গ এখানে তো কোমড় পানি এখন কী করবো আমি৷এ্যা এ্যা এ্যা৷
.
সামান্তার অবস্থা দেখে সবাই পেটে হাত দিয়ে হাসছে৷ ওদের হাসির জন্যে নৌকাও কাঁপছে৷ সামান্তা কোমড় পানিতেই দাঁড়িয়ে আছে৷ আদনান ভাইয়া হাত বাড়িয়ে দিলেন যাতে ভাইয়ার হাতে ধরে উঠে আসে৷ সামান্তা হাত ধরে নৌকার পাশে পা রেখে ভর দিয়ে উঠতেই সবাই নৌকা উল্টে পরে গেলো৷ আদনান ভাইয়া সামান্তাকে নিয়ে একেবারে পানির নিচে৷

সামান্তাঃও আমার আল্লাহ গ৷ আমি যে পানি খাইসি৷
.
আহিলঃরোমান্স করার আর জায়গা নাই পানির নিচে৷
.
আদিবঃআজ রোমান্স করার মানুষ নাই বলে৷

আদিব ভাইয়ার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো৷
ভাইয়ারা সবাই সাতার কাটছে আয়েশা আপু,অদ্রিতা আপু আর রিংকিও সাতার কাটছে৷ আমি আর সামান্তা শুধু নৌকায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি৷
এখন প্রতিযোগিতা হবে কে কত দূর পানির নিচে ডুব দিয়ে যেতে পারে৷
সবাই ডুব দিয়েছে৷ আহিল ভাইয়া বেশি দূর যেতে পারলোনা শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির উপরে উঠে এলো৷ রিংকি ও ডুব দিয়ে সাতার কাটছে৷ পানির নিচে কারও সাথে ধাক্কা খেয়েছে বলে আবার পানির নিচ থেকে উঠে এলো৷ ওর থেকে এক আঙুল দূরে আহিল দাঁড়িয়ে আছে৷ আর নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ রিংকি আহিলের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো৷আহিল ওর দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে এতে ওর মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে৷

আদিল ভাইয়া পানির উপর দিয়েই সাতার কেটে নৌকার কাছে আসছেন৷ হঠাৎ ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে আমি আদিল ভাইয়ার উপরে পরে গেলাম৷ ভাইয়া আমার কোমড় দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন৷ আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে সামুর দিকে তাকালাম সে নৌকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে৷ আর চোখ টিপ দিচ্ছে৷ বজ্জাত মাইয়া আমারে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এখন দাঁত বের করে হাসছে৷ ইচ্ছে তো করছে সিলেটের সব পাথর এর দাঁতে ছুড়ে মারি৷

“রুহি তোকে ভেজা অবস্থাতে কিন্তু খুব সুন্দর লাগে৷” আদিল ভাইয়ার এমন কথা শুনে তারাতাড়ি সরে গেলাম আমি৷ ভাইয়া এমন কথা বলবে কখনো ভাবিনি৷ ভাইয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ আমি সামান্তার হাত ধরে নৌকায় উঠে পরলাম৷ আদিল ভাইয়া পানিতে থেকেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম৷

চলবে♥️

[প্রায় সবাই কনফিউজড এদের সবার নাম নিয়ে৷ কে কার ভাই আর কে কার বোন এটা অনেকেই বুঝতে পারছেনা৷ (আদনান,আদিব,আয়েশা,আরুহি),,(আদিল,অদ্রিতা,আহিল,সামান্তা) এরা আপন ভাইবোন৷ গল্পের কাপল চারটা৷ (আদিল,আরুহি),(আদনান,সামান্তা),(আহিল,রিংকি) আর রইলো বাকি আদিব,ওর জন্য পরে খুঁজবো😜😜 আর গঠনমূলক মন্তব্য অবশ্যই করবেন]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে