সুখ পাখি পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
1867

গল্পের নামঃ- #সুখ_পাখি🕊️💖

লেখিকাঃ- আইদা ইসলাম কনিকা

পর্বঃ১৩ শেষ 💖

ওপরেশন থেয়েটার বাইরে ঘাটা দুয়েক ধরে বসে আছে মাহির। সাথে আছে নিশু মিলি। নিশু মিলিও কান্না করছে। মাহিরের বাবা -, মাকে ফোন দিয়ে নিশু বলে যে আদারা কার এক্সিডেন্টে করেছে। অপর দিকে নিশু ইমারেনর ফোনে মেসেজ করে দিয়েছে,,, মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে কোনো বাবা-মাই রাগ করে থাকতে পারে না। তাই তারাও ছুট লাগিয়েছে। মাহিরের চোখে পানি টলমল করছে কিন্তু সেটা গরিয়ে পরছে না। মাহির আর পারবে না এভাবে বসে থাকতে । সোজা চলে যায় মসজিদে। নিশু মিলি ডাকলেও কোনো শারা পায়নি। মাহির আজকে তার কাছে তার আদারাকে চাইবে যে কখনো তাকে ফিরিয়ে দিবে না । মাহিরের বাবা মা এক প্রকার দৌড়ে হসপিটালে ঢুকছে। আদারার মা-বাবাও চলে এসেছে এতক্ষণে। আদারা চাচি তো নিজের সাজুগুজ ঠিক করতে ব্যস্ত। উদ্দেশ্য মিলির জন্য ইমারানের হাত চাইবে। এই সময়েও কেউ এমন কিছু ভাবতে পারে তা ভাবলেই অবাক লাগে। মাহিরের মা নিশুর কাছে গিয়ে বলে

—- আদারা আদারা কোথায়, ডক্টর কি বলেছে,, ? আদারার মাও নিশুর কাছে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। নিশু বলে

— এখনো ডক্টর বেরহয়নি। তখনই মাহিরের বাবা বলে

— মাহির কোথায়? নিশু বললো

— ভাইয়া অনেক ভেঙে পরেছিল হঠাৎ করেই উঠে কোথায় যেন চলে যায়। আদারা চাচি পান চিবুতে চিবুতে বলে

— এত সুন্দর একখানা সমন্ধ আইছিল,,, যদি কু-কর্ম না কইরা ঐ খানে বিয়া হইতো ভালা হইতো। গ্রামের মাইয়া এইহানে মানায় নাকি? আর যেই চুনকালি মাখাইছে আমাদের মুহে,,৷ এমন মাইয়া না থাহাই ভালো,, আর কিছু বলার আগেই একটা চড় বসিয়ে দেয় আদারা চাচা তার চাচির গালে। আর বলে

— তোর মতো খারাপ মহিলা আমি দুইটা দেখি নাই!! তুই পারিসই অন্যের খুত আর কুটনামি করতে। নিজেকে কি মনে করছ,,, মেয়েটা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর তুই তোর এই অকর্মা কথা কইতেছিস।

সবাই রেগে একাকার এখানে আদারার জীবন মরনের ব্যাপার সে আছে তার কথা নিয়ে । তখন মাহিরও চলে আসে। মাহির বলে

— আদারা এখান মিসেস মাহির আহনাফ আবিদ খান। ওর নামে উল্টো পাল্টা কথা বলার আগে ভেবে নিবেন। আর আদারার কোনো দোষ ছিল না আর আমাদের আগেও বিয়ে হয়নি,, ঐগুলা সব নাটক ছিল কারণ। আর কিছু বলতে যাবে তখন মায়া পিছন থেকে বলে

— কারণ মাহির আদারাকে ভালেবাসতো,,, আর ওর কাছে অন্য কোনো উপায় ছিলনা বিয়েটা আটকানোর। আদারার মা গো কান্না জুড়ে দিয়েছে সে তার মেয়েকে বিশ্বাস না করে কত কিছু বলেছে। আর অপর দিকে মাহির তো অবাক। মায়া কেনো সত্যিটা লুকালো। আদারার বাবা বলে

— তুমি কে মা আর তুমিবা এইসব কিভাবে জানো? মাহির এখন ভাবছে মায়া কি বলবে। আর সত্যি টা চাপা থাকে না কোনোদিন না কোনোদিন সেটা বেড়িয়ে আসবে। মায়া বলে

— আমি আকাশের উডবি মানে আমাদের বিয়ের কথা চলছে আর মাহিরকে আমে সেই থেকেই চিনি। মাহিরের বাবা মায়ার বুদ্ধি দেখে খুশিই হলো কারণ এখন যদি সত্যি টা মাহির বলে দিত তাহলে অবস্থা আরো বিগরে ঢ়েতো হয়তো এখন এই সুন্দর সম্পর্কটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতো। আদারার বাবাও কথা বাড়ায় না এখানে যে তার মেয়ে নিষ্পাপ এটা জেনেই সে খুশি। কিছু সত্যি মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হয়। একটু পরই ডক্টর বেড়িয়ে আসে তা দেখে মাহির এগিয়ে যায়। ডক্টর একটা বিজয় হাসি দিয়ে বলে

— পেসেন্ট ভালো আছে৷। কিন্তু তাকে কোনো কিছুর চাপ দেওয়া যাবেনা। সেন্স আসলে তাকে বেডে দেওয়া হবে।
সবার মুখে খুশির ঝলক। মাহির তো অনেক খুশি,,,, তার থেকে আল্লাহ তার আদরাকে কেড়ে নেয়নি। কিন্তু এই মেয়েকে এখন মানাতে হবে। তারপরের দিন সকালে আদারার সেন্স আসে। আদারার চাচা চাচি আর ইমরান গ্রামে ফিরেগেছে কারণ সেখানে সমস্যা হচ্ছে। আদারার মা বাবা,, মেয়েকে না দেখে যাবে না। তাই রয়েগেছে।

বেডে দেওয়ার পর আদারার সাথে দেখা করতে যায় মাহির। আদারা চোখ বুঝে শুয়ে আছে। সে ভেবেছিল হয়তো আর আপন মানুষগুলোর দেখা সে পাবে না। হঠাৎ কেউ তার হাত ধরাতে সে ধীরে ধীরে তার চোখ মেলে তাকায়। দেখে মাহির। মাহির আদারার হাত ধরে বলে

—- মানি ভুল করেছি তাই বলে এত বড় শাস্তি? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আর আমি বসে বসে দেখবো? কখনোই না জানে মেরে দিব। আদারা মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে অনেক কষ্টে বলে

— তাহলে বাঁচালেন কেন? মরে যেতে দিতেন আপনার আর কষ্ট করতে হতো না। মাহির আদারা হাতটা ছেড়ে আদারার মুখটা নিজের দিকে ফেরায়। আদারা ভালো করে দেখে হলুদ শার্টে রক্তের ছাপ গালে খুচা খুচা দাড়ি। চুলগুলো এলোমেলো চোখ লাল হয়ে আছে হয়তো ঘুমায়নি রাতে। আদারা কিছু বলে না।

দেখতে দেখতে ৫ মাস কেটে যায় ঐদিন রাগ অভিমান ভুলে সবাইকে আপন করে নিয়েছিল শুধু মাহিরকে ছাড়া। মায়ার সাথে আদারার এখন বেস ভালো বন্ধুত্ত আজ তাদের বৌভাত,,, বেশ বড় আয়োজন। আদারা পরিবারের সবাই এসেছে। আদারা এখন সুস্থ আজকে সে একটা সম্পূর্ন পাথর দিয়ে ডিজাইন করা গাউন পরেছে। ড্রেসটা পারপাল কালারের। সাথে উড়না চুলগুলে কার্ল করা,, ঠোঁটে ডার্ক পারপাল কালারের লিপস্টিক,, কানে ডায়মন্ডের দুল। অসাধারণ লাগছে আদারাকে। মাহিরও কমনা আদারার সাথে মেচিং করে সেও পরেছে সাদা,শার্ট পারপাল কালারের কোট সম্পূর্ণ ফরমাল ড্রেসআপ। জাস্ট ওসাম। মাহির আদারার কাছে গিয়ে বলে

— আজ তোমাকে প্রপোজ করবো তারপর আবার বিয়ে করব। আদারা বলে

— মামাবাড়ির আবদার আর কিছু দিন পর আপনার আর আমার ডিভোর্স সো এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দিন। আমি আমার আগের লাইফে বেক করব আর আপনি। আর কিছু বলতে যাবে দেখে মাহির নেই। আদারাও বেশ মজা লাগছে মাহিরকে জ্বালাতে সেও বুঝুক ইগনোর করলে কেমন লাগে। তখনই লাই ওফ
হয়ে যায়। আর যখন লাইট ওন হয় দেখে সব যারা আদারাদের বয়সী দাড়িয়ে আছে। ইভেন মায়া আকাশও। হঠাৎ মিউজিক বাজতে শুরু করে আর তার মাঝ থেকে মাহির বেরিয়ে আসে সেই এটিটিউড আর ভাব নিয়ে আর গান গাইতে থাকে আর সাথে তাল মিলিয়ে ডান্স করতে থাকে আর গান গাইতে থাকে

— আরে Love you… love you.. love you..love you… love… you…. ( আদারার দিকে তাকিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে)

— মান চায় আজ পাখি উড়া উড়ি তুমি আমি একসাথে। তুমি আমার পাশে থাকলে ( আদারার দিকে ইশারা করে) দুনিয়ার কেয়ার আর কে করে? (

(আদারাতো অবাক, আর বাকি সবাইরা তো হাসছে আর অনেকে বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে এখানে)

— তুমিতো জানো তুমিতো বুঝো,, এই মনটা কি যে চায়। ( বুকের বাপাশে হাত দিয়ে) আমার ফোকাস শুধু তুমি আর আসে পাশে কিছু নাই। ( আকাশ এসে মাহিরের সামনে এসে হাত নারায় কিন্তু মাহির তাকিয়ে আছে আদারার দিকে, আকাশের ধাক্কা দেয় মাহিরকে আর মাহির হুশ আসলে সে আবার গানে ফিরে আসে আর আদারার দিকে আগাতে লাগে)

— জান কাছে আসো, I need you….
জান কাছে আসো,,, I wanna kiss you ( আর সাথে সাথে আদারার গালে একটা কিস করে দেয় আদারা তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে,,, মিহির কি করছে এইসব,,, আর সবাই তো মিটমিট করে হাসছে)

—- জান কাছে আসো,, I wanna love you….আরে love you,,,, love you,,,,। (আদারাকে নিজের সাথে নিয়ে ডান্স করতে করতে) জান কাছে আসো I need you…জান কাছে আসো I love you…..। (বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)গান শেষে আদারা মাহিরকে লজ্জায় জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ লুকায় তখনই একজন বলে

—- এই সব ঢং দেখলে বাচিনা বিয়ের আগেই নষ্টফস্টি। মাহিরের মাথায় আগুন ধরে যায় সে বলে

—- What you mean by that’s? ও আমার বিয়ে করা স্ত্রী,,, আমারা বিয়ে করেছি আর পরিবারের সবাই জানে। আর আমার বউকে নিয়ে যা ইচ্ছে করব আপনাদের সমস্যা থাকলে হু কেয়ার? আজ আমি সবার সামনে বলছি আদারা আমার বিয়ে করা স্ত্রী। কিন্তু আমরা আমাদের বিয়েটা কোনো এক কারণে মিডিয়াতে প্রকাশ করেনি। আর সবাই জেনে রাখুন উনি হলেন মিসেস….মাহির আহানফ আবিদ খান।।। আদারার চোখে আজ খুশির পানি আজ মাহির সবার সামনে তাকে স্বকৃীতি দিয়েছে তাদের সম্পর্কের ফাটল দূর করেছে। রাতে পার্টি শেষে যে যার মতো ঘুমিয়ে পরে কিন্তু মাহির এখনো রুমে আসছেনা তাই দেখে আদারা নিচে নামতে যায়। হাঠাৎ করেই মাহির এসে আদারাকে কোলে তুলে নিল আর কিছু না বলেই ছাদের দিকে হাটা দিলো। ছাদে এসে আদারা অবাক অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। অনেক বেলুন। মাহির আদারাকে কোলে থেকে নামিয়ে দিয়ে কাউকে ফোন করে কিছু বলে আর হঠাৎ করেই ফানুস উড়তে লাগে।

আর তখনই মাহির হাঠু গেরে বসে পরে আদারার সামনে আর বলে

—- হয়তো বলতে পারবো না নিজের সব কথা, তাও বলি ভালোবাসি, জানি রেগে আছো আমি এই রাগ বহন করতে রাজি,, ভালোবাসি খুব করে। তুমি যখন হসপিটালের বেডে ছিলে,, ভেবে ছিলাম আমার #সুখ_পাখি হয়তো আমায় একা ছেড়ে উড়াল দিবে। আমি বলি মায়ার প্রতি ছিল আমার মায়া কিন্তু,,, আর কিছু বলতে যাবে আর আদারা মাহিরের চুল গুলো টেনে বলে

—- মহিষের বাচ্চা,, মায়া তোর ভাবি লাগে ছোট তো কি হইছে মায়া বলবিনা মায়া ভাবি বলবি এত সুন্দর মূহুর্তটাকে দিলিতো খারাপ করে,, আরেকবার যদি তোর মুখে অন্য মেয়ের নাম শুনছি, তোকে এই ছাঁদ থেকে ফেলে দিব।। মাহির হুহু করে হেসে দিয়ে ঐভাবেই আদারাকে জড়িয়ে ধরে বলে

— ভালোবাসি #সুখ_পাখি। আদারা বলে

— আমার এখনো আপনাকে ইগনোর করা বাকি আছে,, রিভেন্ঞ্জ নেয়া বাকি অনেক ইগনোর করছেন। মাহির বলে

— তাই না তোমাকে দেখাচ্ছি মজা,, আমিও দেখবো কি করে তুমি আমাকে ইগনোর কর,,,আদারা মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় দৌড়। মাহিরও আদারার পিছন পিছন দৌড় দেয় আর বলে

—- একবার হাতে পাই, তারপর তোমাকে বুঝাচ্ছি।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে