সাঝের বাতি পর্ব-৬+৭

0
758

#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan
#পর্ব_৬

……….ফ্লাসব্যাক
-তোকে কম করে হলেও শতবার ফোন করেছে।তোর চাচা চাচীর সাথে তো ঝামেলা হয়নি।বারবার ফোন করছেন তারা।আর তুই?একটিবার গেলে কি হবে ওখানে?দু বছর তুই ও বাড়িতে যাসনি আর তোর কারনে তোর বাবা যেটুকু সময় ও বাড়িতে দিতো এখন দেয়না।সেও দু বছর যাননি তোর চাচার সাথে দেখা করতে।তোর চাচা আসতে বললে কাজের অজুহাত দেখিয়ে আর যায় না।কেনো বলতো?তোর জন্য কারন তুই যাসনা তাই!এতবার করে তারা যেতে বলছে তাও তুই কিভাবে না বলতে পারিস?আমার একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ,তোর জন্য দু ভাইয়ের সম্পর্কে আবার বিভ্রাট হোক এটা আমি চাই না।তাই তোকে ও বাড়িতে যেতে হবে এটাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট ডিসিশন।

-কিন্তু আম্মু ওখানে সিয়াম ভাইয়া আমায় এলাও করবে না।দেখো আমিও চাইনা আব্বু আর চাচ্চুর সম্পর্কে আবার কোনো ছিট ধরুক।কিন্তু…..

-তবে..!তবে তুই যেতে চাইছিস না কেনো?দেখো আমি তোমায় ভালো করে বলছি,তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও আর বেড়িয়ে পড়ো।

-আম্মু তুমি বোঝার চেষ্টা করো।

-দু মিনিট মাএ দুমিটে তোমায় রেডি হয়ে বাইরে দেখতে চাই।আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।

কথাটা বলেই বাইরে চলে গেলো আম্মু। আম্মুকে আমার পজিশনটা বোঝাতে পারলাম না।ও বাড়িতে যেত হবে ভাবতেই বুকটা মোচর দিয়ে উঠছে।কি করবো আমি?এটাও তো ঠিক আমার জন্য আব্বুও দু বছর ও বাড়িতে যায়নি।এমনিতেই জোড়াতালি দেয়া সম্পর্ক।আর তার উপর আমি…

-সিয়া রেডি হয়েছিস?নাকি তুই তোর জেদ ধরে এখনো বসে আছিস!

আর কিছুই করার নেই।বাইরে থেকে হাকডাক শুরু হয়ে গেছে।ঝটপট রেডি হয়ে বাইরে আসলাম।আম্মু আর আব্বুকে বলে বেড়িয়ে পড়লাম।একটা ভ্যান নিয়ে পৌছালাম সেখানে।টাকা মিটিয়ে গেটের সামনে আসলাম।একদম অন্যরকম লাগছে বাড়িটাকে।যেনো পুরোই পাল্টে গেছে বাড়িটা।কাঁপা কাঁপা পায়ে দরজার সামনে দাড়ালাম।ভয় করছে!ঠিক কিভাবে নেবে আমার আাসাটা সিয়াম ভাইয়া?মাত্রাতিরিক্ত সিনক্রিয়েট করবে না তো?ভয় নিয়েই দরজায় বেল বাজালাম।সাথেসাথে দরজা খুলে দিলো চাচী।

-কি রে! কেমন আছিস?আমাদের একবারও দেখতে ইচ্ছে হয়না বুঝি।দু বছর তোকে দেখিনি।একদম পাল্টে গেছিস। আয় ভেতরে আয়।

দু পা এগিয়ে দাড়িয়ে পড়লাম।আশেপাশে স্লো মোসনে চেক করে নিলাম উনি আছে নাকি।উপরে তাকানোর সাহস হলো না।যদি রেলিং এর কিনারে থাকে তখন?

-কি রে দাড়ালি যে!আয় ভিতরে আয়।বুঝেছি, সিয়ামকে ভয় পাচ্ছিস তো?ও এখন বাড়িতে নেই। তুই নির্দিধায় আয়।

একটা সস্তির নিশ্বাস নিলাম।দৌরে গিয়ে চাচীকে জড়িয়ে ধরলাম,

-কেমন আছো চাচী?চাচ্চু কোথায়?চাচ্চু ভালো আছে?

-তোকে ছাড়া যে ঠিক কতটা ভালো থাকা যায় তা আমারা এই দু বছরে বুঝেছি।
__তুই আসবি বলে আজ তোর সব পছন্দের খাবার রান্না করছি।তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় আর তোর চাচ্চু অফিসে,এখনো আসেনি।

যেহেতু সিয়াম ভাইয়া নেই তাই মনের আনন্দে উপরে উঠলাম।সোজা চাচীর ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।চাচী আমায় ডয়নিংয়ে বসিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো।কিছুক্ষণ কথাও হলো আমাদের।একটু পর চাচীর কাজে সাহায্য করতে লাগলাম।যদিও চাচী আমায় কাজ করতে দিতে চাইছিলো না।কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা।তাকে বললাম,

-তুমি আমায় বলোনা কি করতে হবে।আমি করে দেবো।তুমি শুধু হুকুম করো।তারপর দেখো।

-কি বলি বলতো?তুই আমার কথাটা…

-ওহ্ চাচী আমি কাজ করবো তো কি হয়েছে?আমি কি আগে এখানে কাজ করিনি।তাহলে এখন..!আর রেশমি আন্টি থাকতে তুমিই বা এসব করছো কেনো?

-ও একটু দেশের বাড়ি গেছে।আর দেখনা কাল বার্থটাবে পড়ে আমার পায়ে কি লেগেছে কি বলবো।তাই আমি ওপড়েও যেতে পারিনি।আর সিয়ামের কাপড়গুলো…..

আমতা আমতা করে বললাম,

-ক.. কি কাপড়গুলো?

-ও বলছিলো ওর কাপড়গুলো অনেক ময়লা হয়েছে। সব কাপড় নাকি বিছানায় দলা করে রেখেছে।এখন আমি কি করে উপরে গিয়ে সেগুলো আনবো? আমিতো কাল রাতেও নিচের একটি ঘরে ছিলাম।তুই যদি নিয়ে আসতি?

-না চাচী আমায় মাফ করো।আমি ও ঘরে যেতে পারবো না।এমনিতেই উনি আমায় এক্কেবারে সহ্য করতে পারে না।আর তুমি বলছো নিজেই আজরাইলের কছে যাবো।

-এইতো বলছিলি কাজ করবি।একটা কাজ দিলাম আর অমনি চুপসে গেলি।
__তাহলে এখন কি যে করি?

চাচীর বলা কথাটা মনে পরলো,সিয়াম ভাইয়া তো বাসাই নাই তাহলে এতো ভয় কিসের?মনে সাহস নিয়ে উপরে গেলাম। সিয়াম ভাইয়ার রুমে ডুকে কেবল কাপড়ে হাত দিলাম আর তখনি উনি পেছন থকে……
……..বাকিটা তো আপনারা জেনেনই!

.

-তুই একটু বিশ্রাম নিয়ে খেতে আসিস।আমি যাচ্ছি!ডাকতে যেনো না হয়।আচ্ছা আমি আসছি।আর ফ্রেশ হয়ে আয়তো!জলদি।

-দাড়াও চাচী!

আমার কাথায় চাচী দাড়ালেন।পেছন ফিরে বললেন,

-কিছু বলবি?

-চাচী তুমি যে বললে সিয়াম ভাইয়া বাসায় নেই!তাহলে উনি কিভাবে রুমে ছিলেন!

-আমিও এটাই ভাবছি!আমি তো ও দিকে ব্যাস্ত ছিলাম।হয়তো তুই যখন উপরে ফ্রেশ হতে গিয়েছিলি তখনি ও এসেছে।

চাচী রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।চোখের কোনে এখনো পানি লেগে আছে।ওয়াশরুমে গিয়ে চোখমুখে পানি দিতে লাগলাম।ওয়াশরুমের বাইরে বেডের কিনারের ছোট্ট টেবিল থেকে ফোনের আওয়াজে তারাতাড়ি বেড়িয়ে ফোনটা হাতে নিলাম।আকাশ বাবু ফোন করেছেন।প্রথম কলটা রিসিভ করতে পারিনি।উনি আবার কল করলেন, রিসিভ করলাম,

-কই তুমি?আজ আসবেনা কলেজে?কি করো?কিছু বলছো না কেনো?আজিব,কিছুকি হয়েছে?

নিজেকে সামলে ভয়েস ঠিক করে উওর দিলাম,

-আমায় বলতে দিবেন তারপর তো বলবো।একটানা প্রশ্ন করেই চলেছেন।কিছু হয়নি!

-তাহলে আজ কলেজে কেনো আসোনি?তুমি আসবেনা?কিন্তু কেনো?

-আমি আজ কলেজে আসতে পারবো না।আমি…

-কি?আর কেনোই বা আসবে না।অসুস্থ?

– না আসলে আমি চাচা-চাচীর সাথে দেখা করতে এসেছি।তাই আজ কলেজে আসতে পারবো না।

কিছুক্ষণ নিরবতা।তারপর উনি বললেন,

-আমি সিয়ামদের বাসায় আসছি।আমি না আসা পর্যন্ত তুমি ও বাড়ি থেকে আসবে না।ওকে?

আগে থেকেই জানতাম সিয়াম ভাইয়ার ক্লোজ ফ্রেন্ড হন উনি।হয়তো প্রায়ই আসেন।যাগগে,তাকে ওকে বলে কেটে দিলাম।অনেক্ষন নিচে আসতে বলেছেন চাচী।না গেলে বিপদ আছে।তাই রুম থেকে বেড়িয়ে নিচে গেলাম।ডাইনিং টেবিলে সিয়াম ভাইয়া বাদে সবাই আছে।চাচী বসার জন্য ইসারা করলো।যাক,ভয়ার্ত মানুষটা নেই এটাই শান্তি। অনেক কথা বলেছি কে জানে ভাগ্যে কি নাচছে ?তবে আমার কাছে সব কথাগুলো সঠিক মনে হয়েছে তাই বলেছি!

-কই যাস?অসময়ে কই বেরোচ্ছো সিয়াম?

চাচীর কথায় পেছন ফিরে তাকালাম।চাচীর কোনো উত্তর না সিড়ি বেয়ে নামছেন সিয়াম ভাইয়া।কোনো চাঞ্চল্যকর সাজ নেই।ট্রাউজার ও একটি গেঞ্জি পরেছেন। মুখটা গোমরাটে,বিন্দু বিন্দু ঘাম স্পষ্ট।বুকটা কেমন ধুকধুক করছে।চাচী আবারো বললেন,

-কথার উওর দাও সিয়াম।এই ভর দুপুরে কই যাও?

মুখটা একটু বাকা করে দাড়ালেন উনি।কিছু একটা ভেবে উওর দিলেন সিয়াম ভাইয়া,

-সামন্য কাজ আছে।সামনেই যাচ্ছি।

চাচী আর কিছুই বললেন না।চাচ্চু তখন থেকে একবারও তাকয়নি পর্যন্ত। আমার দিকে একপলক দেখে দু পা এগিয়েই থেমে গেলেন সিয়াম ভাইয়া।আমি এখনো তাকিয়েই আছি।তার থেমে যাওয়াতে সামনে তাকালাম,আকাশবাবু!উনি এসেছেন!

-কেমন আছিস সিয়াম?অনেকদিন পর দেখা!

-হঠাৎ তুই এখানে?দু বছর পর এখানে আসতে মন চাইলো?

-হুম চাইলো তো!আর কিভাবেই বা আসবো?দু বছর নিজের ভাইকে খুজতেই তো চলে গেলো!

সিয়াম ভাইয়া যতই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও তার কটমটে দুটি চোখ আর খিচে ধরা চেয়াল দ্বারা স্পষ্ট তিনি আকাশবাবুর আসাটা মটেই পছন্দ করেননি।কিন্তু কেনো?আমি যতদূর জানি তারা ফ্রেন্ড আর খুব ভালো ফ্রেন্ড।তাহলে?

-তা কিসের জন্য এসেছিস?

-সিয়াম…!

সিয়াম ভাইয়া আর আকাশবাবু চাচ্চুর কথায় আমাদের দিকে তাকালেন।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।চাচ্চু এগিয়ে গিয়ে বললেন,

-এতটা নিচ মানুষিকতা হয়েছে তোমার।অনেকদিন পর তোমারি তো বন্ধু এসেছে।আর তুমি বলছো কেনো এসেছে?তুমি ওর কথায় কিছু মনে কোরোনা আকাশ।তুমি ভেতরে এসো লান্স এখানে করবে।

-সরি!

এটা বলে উনিও ডাইনিং এ এসে বসলেন।চাচী,চাচ্চু আর এই অবলা আমি সবাই হতভম্ব। উনি তো বাইরে যাচ্ছিলেন তাহলে?আকাশবাবু এসেছেন তাই হয়তো!

#চলবে….

#সাঝের_বাতি
#Sajid_Hasan

🥀#বোনাস_পর্ব🥀

-আপনারা ভালো আছেন আন্টি,আঙ্কেল?

-আল্লাহর রহমতে, আলহামদুলিল্লাহ ভলো আছি!

-নিজেকে,নিজের ক্যারিয়াকে ভলোই গড়ে তুলেছো আকাশ?

-জ্বী!

-আকাশ!তোমার ভাইকে খুজে পেয়েছো?…

মুহূর্তেই আকাশবাবুর মুখটা বিবর্ন হয়ে গেলো।উনি নিজেকে যথসম্ভব সামচ্ছেন।চাচ্চু আর চাচী খাওয়ায় ব্যাস্ত।আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি।
আর চাচ্চু কোন ভাইয়ের কথা বলছে?আকাশবাবুর ভাই আছে?কই উনি তো কখনো বলেনি!একটু পর আকাশবাবু বললেন,

-মেঘ কে এখনো পাওয়া যায়নি!

আকাশবাবু,চাচ্চু,চাচী ওনারা কথা বলছেন।কিন্তু আমি যেনো এখানেই নেই।তখন হুট করেই সিয়াম ভাইয়ার মত বদলের কথাটা মস্তিষ্ক কুড়ে খাচ্ছে।আর আকাশবাবুর ভাই মেঘ!লান্স সেড়ে সিয়াম ভাইয়া উপরে চলে গেছেন অনেকক্ষণ।অবাক হলাম,উনি একবারও তার বন্ধুকে ডাকলেন না!এখনো সবাই টেবিলেই বসে আছি।তবে সবার খাওয়া শেষ।আমিও উঠে আসছিলাম আকাশবাবু দাড়াতে বললেন।চাচ্চুকে কি জানি বলে আমার সাথেই উপরে আসলেন।ভেবেছিলাম চলে যাবো।তবে আমি জানি চাচী যেতে দিবে না।তাই এ নিয়ে কোনো কথা বলি নি।সিড়ি দিয়ে দুজনে একসাথেই উঠছিলাম,উনি বললেন,

-চলো ছাদে যাই।

সম্মতি দিলাম।উনি আর আমি একসাথেই ছাদে গেলাম।বরাবরই সিয়াম ভাইয়াদের ছাদটা ফুলে মোড়ানো। সামনে,পেছনে,একোনে,ওকোনে সবখানে ফুলের সমাহার।ছোটনকাকা এগুলোর যত্ন নেয়।বাড়ির উত্তরের দিকে একটা বড় জাম গাছ আছে।গাছটা এতটাই বড় যে ছাদ পেড়িয়ে উপরে উঠে গেছে।দুজনে দুপুরের তির্যক রোধ থেকে মুক্তি আর প্রাকৃতির সুমিষ্ট বায়ু সেবনের জন্য জামতলার নিচে রেলিং এর কাছে গিয়ে দাড়ালাম।

-তুমি তো এখানে সেদিনের পর আসোনি তাহলে?আজ হঠাৎ এ বাড়িতে?

আজ!এ পর্যন্ত!ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আকাশবাবুকে খুলে বললাম।উনি নিতান্তই আমার টুসি!তাই সবটা বললাম!কোনোরকম দ্বিধাছাড়া।

-সিয়াম আবার তোমাকে কিছু বলেনি তো?তোমাকে অপমান করেনি তো?

সিয়াম ভাইয়ার করা অদ্ভুত কাজের কথাটা লুকিয়ে গেলাম।

-না!

-ওওও…সত্যি তো?নাকি কিছু লুকাচ্ছো আমার কাছ থেকে?

-না!আর তো আর সিয়াম ভাইয়ার সাথে ঠিক মতো কথাও হয়নি।

-তুমি জানো?সেদিনের পর আমি নিজে একদিনো সিয়াম এর সাথে কথা বলিনি।দেখাও করিনি।আর আজও করতাম না শুধু….

-কেনো?শুনেছি উনি তো আপনার খুব ভালো বন্ধু হয় তাহলে?

-ভালো বন্ধুই শুধু নয় ও আমার ভাইয়ের মতো ছিলো।আমি প্রায়ই আসতাম এ বাড়িতে।বলতে পারো এখানে থেকেই আমি ডাক্তারি পরেছি।আমি হোস্টেলে থাকতাম।তবে সপ্তাহের বেশি দিনগুলুই এখানে কাটানো।আন্টি-আঙ্কেল আমাকে সিয়ামের থেকে কোনো অংশে কম চোখে দেখেনি।আর এখনো দেখেনা।তারপর কিছুদিন পর আমি বিদেশে আমি আমার ছোট ভাই সিয়ামের এর কাছে যাই।আর যখন আসি,আমার ছোটভাই মেঘ আসার জন্য বায়না ধরে।ওকে নিয়েও আসি।কিন্তু আমি কি করে জানবো বলো যে এটাই ওর…..!

-এটাই ওর কি?বলুন!

-তাহলে শোনো,
আমি,সিয়াম,মেঘ আর আমাদের কিছু ফ্রেন্ড মিলে গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে জঙ্গলে গিয়েছিলাম।যেদিন তোমায় সিয়াম ওভাবে অমানুষের মতো মেরেছিলো তার আগের দিন।আমরা সবাই ভেবছিলাম ওখানেই রান্না করে খাবো।সবিই ঠিকঠাক গুছিয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু নেইনি পর্যপ্ত পানি।সবাই মিলে ঠিক করলাম মেঘ আর সিয়াম জঙ্গলে পানি খুজতে যাবে।যদি সেদিন আমি মেঘকে সিয়ামের সাথে না পাঠাতাম তাহলে এরকম কিছুই হতো না।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছি কিন্তু সিয়াম কিংবা মেঘের পাত্তা নেই।সারাদিন খুজেছি ওদের পাইনি কাউকেই।সবার কাছেই টর্চ ছিলো তাই আমরা রাতেও খুজেছি অবশেষে রাত আটটার দিকে পাই।কিন্তু শুধু সিয়ামকে মেঘকে পাইনি।সিয়ামের সারা শরীরে রক্ত লেগে ছিলো।ওকে অনেকক্ষন ধরে প্রথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এটা যে,ওর শরীরে কোনো আঘাতই নেই।তাহলে এতো রক্ত কার?এই চিন্তায় আমার মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছিলো।একটু পর সিয়ামের জ্ঞান ফিরে।আমি ওকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছি মেঘ কোথায়?অথচ ও কোনো উত্তরই দিতে পারেনি।এতে আর আমি কি ধরে নেবো,এটাতো স্পষ্ট ওই কিছু করেছে আমার ভাইকে।পুলিশকেও ফোন করেছি কিন্তু কোনো প্রমান পায়নি বলেই ওকে ছেরে দেয় পুলিশ।আর আমি ইচ্ছে করেই আঙ্কেল আন্টিকে বলতে বাড়ন করেছি।এমনকি পুলিশও যেনো না বলে তারও ব্যাবস্হা করছি!তারপর ওকে যখন পুলিশ ছেড়ে দেয় সময়টা বিকেল।ও সোজা বাসায় চলে আসে।কিন্তু আমার আর ওর সেদিন তুমুল ঝগরা হয়!ও প্রচন্ড রেগে ছিলো।আর একটু পরই ফোন আসলো তোমায় ও এভাবে মেরেছে।এখনো আমার ভাই নিখোঁজ।পাইনি তাকে!আর হয়তো পাবোও না।আর যখন ওর ওই মানুষ নামক অমানুষের চেহারাটা দেখেছিলাম সেদিনি ঠিক করে রেখেছিলাম আর কোনো যোগাযোগ রাখবো না ওর সাথে।রাখিও নি।নিজের কথায়,চিন্তায় অটুট ছিলাম!

-আপনি বলতে চাইছেন সিয়াম ভাইয়া আপনার ভাইকে..

-তা ছারা আর কি ভাববো বলো?এটা তো নিসন্দেহে সিয়ামেরই কাজ!

-কিন্তু সিয়াম ভাইয়া এরকম মানুষ নন।আমার এটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছ আকাশবাবু।

-তাহলে তুমি বলো?কই আমার ছোটভাই মেঘ?

-কিন্তু ওনার এসব করে লাভ কি?

-বিপদ থেকে বাচতে এসব হয়তো করেছে ও।

-মানে?

-মানে?মানেটা হলো সিয়াম নিষ্চই কোনো বিপদে আমার ভাইকে ঠেলে দিয়েছিলো।ওসব কথা বাদ দাও!কখন যাবে তুমি?

সেদিন আমায় ও ভাবে মারার কারনটা কি ওই রাগ।উনি রেগে ছিলেন বলেই হয়তো সামান্য কারনে আমায় মেরেছিলেন।উনাকে বললাম,

-যেতে তো এখনি চাই কিন্তু চাচী কিংবা চাচ্চু যেতে দিবে না।তারা আমাকে বড্ড ভালোবাসে আর আমিও।এই দুটো বছর অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে তাদের বীনা।আজ এতদিন পর এখানে এসে তারা এবং অনেক খুশি।

-এইযে জাম গাছটা দেখছো,এটা আমি আর সিয়াম কতো উঠে জাম পেড়ে খেয়েছি।তবে সিয়াম উঠতে পারতো না আমি টেনেটুনে ঠেলেঠুলে উঠাতাম।আর দুজনে মিলে জাম খেতাম।অঙ্কেল গাছটা কেটে দিতে চেয়েছিলো। আমাদের তখন তুমুল প্রতিবাদের কারনে তারপর উনি আর কাটেননি।

-তাই নাকি!

-আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই কেনো ও এতো বাজেভাবে মেরেছে তোমায়?

-সেদিন আমারো দোষ ছিলো।আমি যদি একটু দেখে চলতাম তাহলে এরকম হতো না।আগে থেকেই আমি এ বাড়িতে আসলেই মনটা আনন্দিত হয়ে থাকতো।আর সেদিনো খুশিতে আত্মহারা হয়ে ছিলাম যার কারনে আমি ওই কোল্ড কফি সিয়াম ভাইয়া উপর ফেলে দেই।

উনি হঠাৎই মাথায় একটা ঝাকি দিয়ে বললেন,

-এসব আর ভালো লাগছে না।বাদ দাও..

উনিতো জিজ্ঞেস করলেন তাই তো বললাম😒।টপিক চেঞ্জ করলাম।উনি ফানি জোক শোনালেন।উনি এতো তারাতাড়ি নিজের মাইন্ড সেটআপ করলেন কি করে?উনি একটু আগেই তো উনার ভাইয়ের কথা বলতে বলতে,,,আর এখন জোক্স শোনাচ্ছেন যাগগে,দুজনেই হাসছি।উনি বরাবরই হাসিখুশি একজন মানুষ।

পেছন থেকে কারো হাত তালি আওয়াজে হাসি থেমে গেলো আমাদের।দুজনেই পেছন ফিরে তাকালাম,

-বাহ্!ব্রিলিয়ান্ট!এক্সেলেন্ট!অসাম!

সিমাম ভাইয়া!উনি আমাদের দিকে তাকিয়ে হাততালি দিতে দিতে কথাটা বললেন।অদ্ভুত হাসি টেনে রেখেছেন উনি।উপর ঠোঁটটা বা দিকটা একটু উচু করা।আকাশবাবু উনার দিকে তাকিয়ে আছেন আর আমিও।

-ভালোই তো নাগর জুটিয়েছিস সিয়া!তোকে প্রশংসা না করে পারছি না।যেই দেখলি আমাকে কাবু কারতে পারছিস না অমনি আরেকটা!
লজ্জা নেই তোর?বেহায়া একটা মেয়ে।খুব হাসছিস দুজনে!তাহলে তোকে শাস্তি দেয়াটা কোনো ভুল ছিলোনা বল?আর শাস্তি দিয়েই বা কি হয়েছে,কুকুরের বাকা লেজ যে সোজা হয়না তুই তার বাস্তব প্রমান!কত দিনের সম্পর্ক তোদের?

তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না।তবে একটু আগে বলা আকাশবাবুর কথাগুলো শোনেনি উনি।আর নাগর!কে সে?আকাশবাবু?উনি তো আমার বন্ধু!কিছু না জেনেই উনি সেদিনের মতো আবার…

-সিয়াম তুই এসব কি বলছিস?তোর মাথা ঠিক আছে?এতগুলো বাজে কথা!তোর মুখে আটকালো না সিয়াম।আর তুই ওকে কেনো এভাবে গালি দিচ্ছিস?ঠিক কোন সাহসে?নাগর,আমরা যদি হয়েও থাকি তাতে তোর কি আসে যায়?

আকাশবাবুর কথায় উনার দিকে তাকালাম।কি বললেন আকাশবাবু?উনি কি ঠিক আছেন।তার কথায় যদি সিয়াম ভাইয়া অন্য ভাবে নেয় তাহলে তো আরও বিপদ….

-বলবিই তো?প্রেমিক যে হয় তোর।তাকে অপমান করেছি গায়ে তো লাগবেই।

-মুখ সামলে কথা বল সিয়াম!নিজের লিমিট ক্রস করিস না।

তারা দুজনে একে অপরের সাথে এভাবে ঝগরায় ব্যাস্ত কেউ কাউকে একচুল ছাড় দিতে রাজি নয়।অথচ,মনটা বারবার বলছে এর জন্য আমি দায়ী।দুজনের এই ঝগড়া কিভাবে থামবো আমি?কি করা উচিত আমার?

ঝগড়ার মাঝেই আকাশবাবুকে হাতটা টেনে হাটা শুরু করলাম।কারন আমি জানি ওনাকে আমার সাথে দেখেই উনি এভাবে রিয়েক্ট করছেন।অন্যকোথায় হলে আমিও ছেড়ে কথা বলতাম না।হঠাৎ এরকম সিয়াম ভাইয়ার ব্যবহার!কিছুই মাথায় ডুকছে না।

-নাগরকে খুব ভালোবাসিস তাই না রে?তাই তো নিয়ে যাচ্ছিস!আজেবাজে মানুষের কথা কেনো শুনতে হবে তাকে?আহারে,কি প্রেম?

তার কথা আর সহ্য হলো না দাড়িয়ে পরলাম।চোখের ক্ষুদ্রতর পানির কনাটুকু মুছে সামনে গিয়ে দাড়ালাম।কড়া গলায় বললাম,

-কতোটা নিচ মনের মানুষ আপনি?এতগুলো আজেবাজে কথা বলতে বাধছে না মুখে আপনার।এরকম সেদিনো আপনি না জেনে আমায় মেরেছেন।সেদিনো আমার কোনো দোষ ছিলো না আর না আজ আছে।উনি শুধুমাত্র আমার একজন বন্ধু।সেদিনের পর যখন আমি ভেঙে পরেছিলাম।সেদিন এই মানুষটাই আমায় সাহস যুগিয়েছিলো।উনি আর টাপুরই আমার খুশি হওয়ার মাধ্যম ছিলো।
__জীবনে যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম সে আর কেউ নয় আপনি!হ্যা আপনাকে আমি ভালোবাসতাম।তবে এখন আমি ঘৃনা করি আপনাকে।ঘৃনা করি।
সামন্যতম মনুষ্যত্ব নেই আপনার মাঝে।এতটুও নেই কি?
কিভাবে বলতে এই মানুষটাকে আমার..

শেষের কথাটা আকাশবাবুর দিকে তাক করে কথাটা বললাম।কিন্তু পেছনে উনি নেই।এইমাত্রই তো এখানে ছিলেন উনি।কোথায় গেলো উনি?সিয়াম ভাইয়ার দিকে একপলক তাকালাম উনি রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
কোনোকিছু না বলে নিচে আসলাম।চাচীকে গিয়ে আকাশবাবুর কথা জিজ্ঞেস করলাম চাচী বললো উনি চলে গেছেন!

#চলবে….

রিচেক দেইনি।ভুল ত্রুটি সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন🥀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে