সম্পর্ক ৫ম পার্ট

0
1915

#সম্পর্ক ৫ম পাঠ

,,রকিবুল্লা কিভাবে মারা গেছে,

,, সুস্থ মানুষ ছিল রাতে খাবার পর শুয়েছিল সকালে রাজিয়া বেগম চিল্লাপাল্লাতে ঘুম ভেঙে যায় গিয়ে দেখি রকিবুল্লা মারা গেছে, রাজিয়া বেগম বলল, কিছুক্ষণ আগে প্রেসার বেড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে পানি ঢালছিলাম, মারা গেলো, অনেক কাঁন্নাকাটি করলো রাজিয়া বেগম ও আকিব।
কিন্তু আমার মনে সন্দেহ হয়েছে।

,, কি রকম সন্দেহ, রকিবুল্লাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

,, হ্যাঁ সেরকম সন্দেহ হয়েছে, সন্দেহ করার কারণ আছে।
রকিবুল্লার কখনো হাই প্রেসার ছিল না।

,, তাহলে আপনি মনে করেন রকিবুল্লাকে খুন করেছে রাজিয়া বেগম

,, হ্যাঁ খুন করেছে, টাকার জন্য রাজিয়া বেগম সবকিছু করতে পারে।

সব ঘটনা শুনে আমি আব্বাসউদ্দীন চাচাকে বললাম, আমরা পুলিশকে সব জানাবো রাজিয়া বেগমের এই অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, সে যে এত গুলো বছর হিসামকে পাগল বানিয়ে রাখছে, হিসামের টাকা আত্নসাধ করছে সবকিছু পুলিশকে আপনি বলবেন।
চাচা আপনি আমাদের সঙ্গে চলেন।

,, মা আমি তো অসুস্থ কিভাবে এত দূর যাবো।

চাচাকে অনেক বঝিয়ে রাজী করালাম আমার সাথে যাবার জন্য, চাচাকে বললাম আপনি আমাদের বাসায় থাকবেন, আমার আম্মা আপনার দেখাশোনা করবে, কোন চিন্তা কইরেন না, চাচা আপনি কি চান না হিসাম তার অধিকার ফিরে পাক আর হিসামের সাথে যারা অন্যায় অত্যাচার করেছে তাদের শাস্তি হোক।
চাচা বলল, চাই একশবার চাই ওই ডাইনি রাক্ষসী রাজিয়া বেগমের আর তার ছেলে আকিবের শাস্তি হোক।

সেদিনই আব্বাসউদ্দীন চাচাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা চলে আসলাম।
আব্বার পরিচিত এক উকিল আছে তার সাথে পরামর্শ করলাম সে বলল থানায় গিয়ে কেইস ফাইল করতে। আব্বা আমি আব্বাসউদ্দীন চাচা তিন জন মিলে থানায় গেলাম, ওসি আকমাল শেখ আব্বাসউদ্দীন চাচার কাছ থেকে বিস্তারিত ঘটনা শুনে বললেন, এত বড় অন্যায় করে কেউ বাঁচতে পারবেনা ওই মহিলাও বাঁচতে পারবেন না, আমরা কালই আপনাদের বাসায় গিয়ে রাজিয়া বেগমকে আটক করব, তদন্ত করে দেখার পর সে যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আইন তাকে কঠোর শান্তি প্রধান করবে।

পরেরদিন আমি হিসামের কাছে চলে আসলাম, শাশুড়ী মা আমার সাথে রাগারাগি শুরু করে দিলো, বলল, তোমার মা না কি অসুস্থ তাহলে তুমি কুমিল্লা গিয়েছিলে কেন।
শাশুড়ী মা জানল কি করে আমি কুমিল্লা গিয়েছিলাম।
আমি বললাম কি বলছেন আম্মু আমি কিসের জন্য কুমিল্লা যাবো।
মিথ্যা বলনা, ড্রাইভার তোমাকে দেখেছে তুমি তোমার বাবা আরেকটা বয়স্ক লোক কুমিল্লার বাস থেকে নেমেছ।

ধরা পড়ে গেছি, কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে স্বীকার করতে হবে, ওহ এই কথা যে বয়স্ক চাচাকে ড্রাইভার আমাদের সঙ্গে দেখছে তার বাড়ি কুমিল্লা সে আমার আব্বুর ফুফাতো ভাই ঢাকা আসছিল ডাক্তার দেখাতে, ডাক্তার দেখিয়ে বাসে তুলে দিতে গিয়েছিলাম, শরীর বেশি খারাপ থাকার কারণে কুমিল্লা যেতে পারলেন না।
শাশুড়ী মা আমার কথা মেনে নিলেন, আমি তাড়াতাড়ি হিসামের কাছে আসলাম।
চারদিন ধরে হিসামকে দেখিনা রুমে যেয়ে দেখি হিসাম ঘুমাচ্ছে, হিসামের কপালে চুমু দিলাম, সে জেগে উঠলো।

,, অবনী তুমি আসছ, তোমাকে ছাড়া খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার।

,, আমারো কষ্ট হয়েছে সোনা তোমাকে ছাড়া এই চারদিন থাকতে।

হিসাম আমাকে জড়িয়ে ধরছে, আমিও জাপ্টে ধরে রইলাম কিছুক্ষণ।
চাচার বলা কথা গুলো হিসামকে বললাম, হিসামের জীবনে কি ঘটেছিল, যাকে সে মা জেনে আসছে সে তার মা না, আর যাকে বাবা মনে করতো সেও তার বাবা না, তাদের কারো সাথে হিসামের রক্তের সম্পর্ক নেই।
তার মা বাবা বেঁচে নেই সমস্ত কিছু হিসামকে বললাম, আমার কথা শুনে হিসাম স্তব্ধ হয়ে গেছে, হিসাম হয়তো কান্না করে দিবে তার চোখের কোনায় পানি জমে উঠেছে।

,, জান মন খারাপ করে না আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে, তোমার পাশে আমি আছি, আল্লাহতালার রহমত আছে, না হলে যে আমি বিয়ের জন্য রাজী ছিলাম না, তোমাকে দেখার পর তোমার মায়ায় জড়িয়ে গেছি, তোমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।

আমার কথায় হিসাম চোখ মুছে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আই লাভ ইউ অবনী অনেক ভালোবাসি তোমাকে, তুমি না হলে আজ আমি পাগল হয়েই থাকতাম।
আরে পাগল তোমার জন্য আল্লাহ আমাকে পাঠাইছে, সবকিছু মহান আল্লাহর শুকরিয়া

হিসামকে বললাম আব্বা পুলিশ নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে, সঙ্গে আব্বাসউদ্দীন চাচাও আসবে, পুলিশ তোমাকে যা যা জিজ্ঞাস করবে তুমি ঠিকঠাক ভাবে উত্তর দিও।
আর শুনো রাজিয়া বেগম কিন্তু খুব ধৃত মহিলা, পুলিশের সামনে হয়তো মায়াকান্না শুরু করে দিবে, তুমি তার মায়াকান্নায় গলে যেয়ো না।
হিসাম বলল, ঠিক আছে তুমি যা বলছ তাই হবে।

পুলিশ নিয়ে আব্বা চলে আসছে, রাজিয়া বেগম পুলিশ দেখে অবাক, ওসি আকমাল শেখ, রাজিয়া বেগমকে বলল, আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।
আপনি হিসাম আহম্মেদকে ড্রাগস মেডিসিন সেবন করিয়ে মানসিক রুগী করে রাখছিলেন।
রাজিয়া বেগম বললেন আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যে, আমি কেন আমার নিজের ছেলের সাথে অন্যায় করব।
আব্বাসউদ্দীন চাচা ওসিকে বললেন, স্যার এই মহিলা মিথ্যা বলছে, সে হিসামের মা না, সে ম্যানেজার রকিবুল্লার স্ত্রী, হিসামের মা হাফসা আহম্মেদ হিসামকে চারবছরের রেখে মারা গেছে।
ওসি আকমাল শেখ, হিসামের কাছে জানতে চাইলো আপনি বলেন ওনি কি আপনার মা না কি মা না, ওনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো কি সত্যি, আপনাকে কি রাজিয়া বেগম অত্যাচার করেছেন।

ওসির প্রশ্ন শুনে হিসাম ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণে বলতে শুরু করল।

,, আসলে আমি জানিনা ইনি আমার মা কি না, আমার ছোট বেলার স্মৃতি মনে নেই, আমাকে ওনি যে মেডিসিন খাওয়াইছে তাতে আমার স্মৃতি শক্তি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারি সে আমার মা হতে পারে না, কোন মা নিজের ছেলের ক্ষতি চায়না কখনো, আকিব ভাইয়াকে অনেক আদর যত্ন করে আর আমাকে পাগল বলে অবজ্ঞা করে, মা হয়ে এটা কি করতে পারতো।

হিসামের কথা অনুযায়ী রাজিয়া বেগম ও আকিবকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো পুলিশ, রাজিয়া বেগম স্বীকার করল সবকিছু হিসামের সম্পত্তি, তার স্বামী সব সম্পত্তি ছোট ছেলে হিসামের নামে উইল করে দিয়ে গেছে, হিসাম তার নিজের পেটের সন্তান।

আমি থানায় যেয়ে ওসি আকমাল শেখকে বললাম,

,, রাজিয়া বেগম নিজে আমাকে বলেছে, আমরা হিসামের সাথে যা করছি করতে দাও, বেশী বাড়াবাড়ি করলে তোমার খারাপ হবে, তুমি যদি আমার কথা মেনে চল তাহলে তোমাকে জমি লিখে দেবো।
এখন আপনিই বলুন মা হলে এমন করতে পারতো।

,, আসলে কি জানেন আমি আপনাদের দুই পক্ষের কথা শুনে কনফিউশানে পড়ে যাচ্ছি, আপনারা বলছেন রাজিয়া বেগম হিসামের মা না, কিন্তু রাজিয়া বেগম কিছুতেই মানতে চাইছে না সে হিসামের মা নয়।

,, স্যার আপনি বুঝতে চেষ্টা করেন রাজিয়া বেগম আমাকে জমির লোভ দেখাইছে, বলছে তুমি যদি আমার কথা রাখো আমি যা করি তা প্রতিবাদ না কর তাহলে আমি তোমাকে জমি লিখে দেবো।
তাহলে সে কি করে হিসামের মা হয় মা হয়ে ছেলের সাথে এটা করতে পারতো।

,, আমি একটা ডিসিশন দিতে চাই।

,, কি ডিসিশন স্যার।

,, রাজিয়া বেগম ও হিসামের ডিএনএ টেস্ট করাব, ডিএনএ টেস্ট করতে হলে উপর থেকে পারমিশন নিতে হবে, আপনি যদি চান তাহলে আমি সব ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

,, আচ্ছা স্যার ডিএনএ টেস্টের ব্যবস্থা করেন, তখনি প্রমাণ হয়ে যাবে, হিসাম রাজিয়া বেগমের ছেলে কি না।

চলবে,,,,

সাদমান হাসিব সাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে