সন্দেহ পর্বঃ ৬ থেকে ১০

0
1374

সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ ৬ থেকে ১০
.
.
পর্বঃ৬
.
.
রাগে গজগজ করতে করতে ইরা রুমে এসে বসে পড়লো। নীলাভ্র ল্যাপটপে কিছু করছিলো। সামনে ইরা কে দেখে কিছু বললো না। কাজে আবার মন দিলো।
ইরার মেজাজ এবার চূড়ান্ত খারাপ হলো।
কোথায় নীলাভ্র ওকে তোষামদ করবে তা নয়, কাজে ডুবে আছে।
খুব রাগ হচ্ছে ইরার। বালিশ ফেলে দিলো। নীলভ্র বসে বসে চিন্তা করছে কি করা যায়৷
সে কি এগিয়ে যাবে?
ইদানীং ইরার মুড সে বুঝে না।
কখনো সে খুব রেগে আছে আবার কখনো যেনো কাদা মাটি।
.
নীলাভ্র- কমলালেবু!
ইরা- কতবার বলছি না! এ নামে ডাকবা না।
– কমলালেবু কে কমলালেবু ডাকবো না তো কি ডাকবো?
– অসহ্য লাগছে কিন্তু।
– অনুকে একটু বলো না ওর স্পেশাল টি টা করে দিতে। গলা খুশ খুশ করছে।
.
.
অনুর কথা শুনে ইরা আরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।
নিলয় কি কম ছিলো যে এখন নীলাভ্র যুক্ত হলো ওর সাথে?
– পারবো না।
– কেনো?
– পারবো না মানে পারবো না।
.
– আচ্ছা লাগবে না। শোন কাল কি পড়বে? মানে কোন শাড়ি?
– কেনো? প্রতিদিন কি শাড়ি ছাড়া থাকি?
– আরে না! কাল শোভনের আকদ। ভুলে গেলে? আমরা সবাই যাচ্ছি তো।
– অহ! হ্যাঁ। এখনো ভাবি নি। আসলে ভুলে গিয়েছিলাম৷ যাবো তো।
তুমি কি যেনো বলছিলে? চা খাবে তাই তো?
আমি অনু কে বলছি৷
.
নীলাভ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইরার যাওয়ার পথে।
.
.
আগের চঞ্চল অনুকে নিলয় কোথাও খুজেও পায় না।
অফিস থেকে আসার পর ডেকে ডেকে এনে এটা দাও, ওটা দাও বলতে হতো৷
ফাজলামো করতো, বায়না করতো।
কিন্তু ইদানীং সব গুছানো থাকে।
অফিস থেকে আসার পর সাথে সাথেই সব রেডি পায়৷
কিছুর জন্য ডাকতে হয়না।
.
অনু বিছানায় বসে বসে কিছু করছিলো।
নিলয় দেখেনি।
পিছন ফিরে বসে ছিলো।
কাছে যেতেই দেখলো
অনুর হাতে কয়েকটা ছবি।
অনেক পুরোনো। বুঝতে অসুবিধা হলো না কারণ ছবির পিচ্চি মেয়েটার সাথে অনুর অনেক মিল আর কম বয়সী মেয়েটার সাথে যার কোলে অনু তার সাথে অনুর মুখের আদলে অনেকটা মিল।
.
কাল রাতেও অনুকে অনেক বকেছে মা। নিলয়ের সামনেই। নিলয়ের ইগো তে লেগেছিল, রুমে এসে ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলো, সারা রাত বাহিরে বসে ছিলো অনু।
ঈশ! মেয়েটার আজকে জন্মদিন।
আর এই দিনেই? ওকে সরি বলা দরকার ছিলো।
নিলয় এগিয়ে যেতেই দরজায় টোকা পড়ে।
ইরা এসে ডাক দিয়ে নিয়ে গেলো।
.
.
অনু চা বানাচ্ছে। সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
তুলসি পাতা,আদা,শুকনো মরিচ,এলাচ,দারুচিনি, তেজপাতা,লবঙ দিয়ে পানি জাল করে। নামানোর একটু আগে চা পাতা, মধু দিয়ে নামিয়ে নেয়।
.
.
চায়ের সুবাসে সবাই ড্রয়িংরুমের চলে এসেছে।সবাই চায়ের আড্ডা দিতে দিতে কালকের প্ল্যান করে নিলো। ইরাও সুযোগ ছাড়লো না প্রথমে চায়ের বাহানা পরে মেহেদীর বাহানায় অনুকে ব্যস্ত করে রাখছে।
.
.
পরদিন সকালে
.
অনু ঘুম থেকে উঠেই লেগে পড়েছে কাজে।
একা হাতে সব করে নিয়েছে।
সবাই রেডি হয়েছে শুধু সে বাকি। হাতের কাজ দ্রুত সেরে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে নিলো।
রুমের ভিতরে এসে দ্রুত রেডি হয়ে নিচ্ছে।
নিশ্চয়ই সবাই অপেক্ষা করছে।
ড্রয়িং রুমে টিভি চলছে। সবাই সেখানে বসে আছে শুধু তার জন্য দেরি হচ্ছে।
দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে এসে
চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়লো সে।
পুরো বাড়ি ফাকা।
কেউ নেই। সবাই নিশ্চয়ই ওকে ভুলে রেখে গেছে।
দ্রুত নিলয়ের ফোনে কল দিলো বাড়ির ফোন থেকে৷
দুইবার রিং হওয়ার পর নিলয় রিসিভ করে
– হ্যালো অনু বলো।
– আপনারা কি চলে গেছেন?
– হ্যাঁ! কেনো? কিছু ফেলে এসেছি কি?
.
গলার মাঝে সব কিছু দলা পাকিয়ে যাচ্ছে অনুর। খুব কান্না পাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– না! পৌঁছেছেন কি না তাই জিজ্ঞেস করছিলাম। সাবধানে যাবেন। রাখি।
.
.
ফোন রেখে অনু নিজের রুমে চলে এলো৷ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নায় তাকাতেই চমকে উঠে।
তার মায়ের চেহারার সাথে তার চেহারার যে বড্ড মিল। তবে কি? নিয়তিও মিলে যাবে.
.
.

পর্বঃ৭
.
.
মায়ের খুব বেশি জিনিস পত্র নেই অনুর কাছে।
এক জোড়া দুল আর কয়েকটা শাড়ি৷
তাদের দুল টা অনু সব সময় সাথে রাখে। পড়েই থাকে আর শাড়ি গুলো ক্ষেত্র বিশেষে।
আজকে সে তার মায়ের এক শাড়ি পড়েছিলো।
কালো শাড়ি, লাল পাড়ের৷ সাথে ডিপ ব্ল্যাক ব্লাউজ, কানে মায়ের সেই দুল, হাতে পাথরের চূড়ি,ছোট্ট একটা স্টোনের নাকফুল।
সাজার জন্য আহামরি কিছু লাগে না।
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ কয়েক ভাবে দেখছে অনু।
আচ্ছা? একদম মায়ের মত লাগছে না?
হুম! মা কে এই শাড়িতে এমন লাগতো।
ধীরেধীরে কাপা কাপা হাতে সব খুলছে অনু।
শরীর থেকে শাড়িটা খুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
খুব কষ্ট হচ্ছে মা!
.
কিছুক্ষণ ওভাবেই শুয়ে থাকার পর নিজেকে সামলে নেয়।
অনেকদিন পর কাদতে পেরে বেশ হালকা লাগছে। কিন্তু মাথা ব্যথা করছে।
চুলোয় চায়ের পানি চড়িয়ে এসে আবার শাওয়ার নিয়ে সাথে সাথে মেডিসিন নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
.
তলিয়ে যায় গভীর ঘুমের দেশে।
.
.
আড় চোখে তাকিয়ে আছে ইরা নিলয়ের দিকে। ওর কৈশোরে প্রেম।
খুব কৌশলে আজ সে অনুকে বাড়িতে রেখে এসেছে।
নিলয় ড্রাইভ করছে, পাশে নীলাভ্র। পিছনে শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে বসে আছে ইরা।
লুকিং গ্লাসে বার বার দেখছিলো নিলয় কে।
আজ সে নিলয়ের সাথে মিলিয়ে পড়েছে।
নিলয়ের হাল্কা অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী সাথে ম্যাচ করানো তার শাড়ি।
অনু আসলে অবশ্যই নিলয় বাইক নিয়ে আসতো আর অনু থাকতো ওর সাথে।
না এসব ভাবতে পারে না ইরা।
কষ্ট হয়। আচ্ছা তার কষ্ট গুলো কেউ কি বুঝবে?
কেউ কি মর্যাদা দিবে তার এই ভালোবাসার?
মাঝেমধ্যে বলতে ইচ্ছে করে চল না নিলয়,পালিয়ে যাই৷ অনুর থেকেও অনেকটা ভালোবাসবো। কিন্তু বলা হয় না। এ যে সমাজ মেনে নিবে না।
.
.
নীল আর সিমন্তনী আগেই চলে এসেছিলো। বাহিরে সবাইকে আসতে দেখে এগিয়ে গিয়ে দেখে অনু নেই।
.
নীল- অনু কই?
ইরা- আসেনি। ওর না কি শরীর খারাপ।
নীল- মেঝভাই তাহলে তুই কেনো আসতে গেলি? মেয়েটা একা আছে যে?
নিলয়- আমাকে বলেনি সে অসুস্থ। ইরা কে বলেছিলো ইরা আমাদের আসার সময় বলেছে। আর তাছাড়া ও বেশি মানুষ পছন্দ করে না৷
.
সিমন্তনী এবার এগিয়ে গেলো।
– আমার সাথে কথা হয়েছিলো তখন তো বললো ও আসবে তাহলে….
.
আর কথা বাড়ানোর আগেই ডাক পড়লো। ইরার যেনো কেনো বেশ সন্দেহ হচ্ছে যে নীল বিশ্বাস করেনি কথাটা।
.
.
অনুষ্ঠানের সব টা তেই নিলয়ের আশেপাশে ছিলো ইরা। নীলাভ্র বলতে যে কেউ আছে হয়তো সে ভুলেই গিয়েছে।
সবাই মিলে গানের আড্ডা বসিয়েছে। নিলয়কে জোর করেই রবীন্দ্র সংগীত গাইতে।
ইরার জোরের কাছে হেরে গিয়ে সুর তোলে নিলয়
.
.
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয়-পানে চাই নি
আমার সকল ভালোবাসায় সকল আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়–
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম, কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার দুঃখসুখের গানে
সুর দিয়েছ তুমি, আমি তোমার গান তো গাই নি
.
.
বাসার ফোনে বার বার কল করে যাচ্ছে নীল। কিন্তু তুলছে না।
কাজের মেয়েটাও সাথে নিয়ে এসেছে। খুব রাগ হচ্ছে।
আর সবার কথা বাদ। নিলয় কিভাবে রেখে এলো? সবার সাথে না মিশতো আলাদা রেস্ট নিতো।
সবাই খেয়াল রাখতে পারতো।
মনে মনে জঘন্য ভাষায় গালি দিলো ইরা কে।
বেশ বুঝতে পারছে ইরা কিছু একটা কারসাজি করেছে এখানে।
.
.
চুলোয় পানি দিয়ে এসে অনু যে ঘুমিয়েছে আর জাগতে পারেনি।
এদিকে পাতিল পুড়ে আগুন ধরার অবস্থা।
চারিদিকে ধোয়ায় ভরে গেছে ঠিক সেসময় বাসায় আসে সবাই।
অবস্থা বুঝতে বেশি সময় লাগে না।
নীল গিয়ে চুলো বন্ধ করে এদিকে ওদের মা এতো রেগে যায় যে ঘুমন্ত অনুকে টেনে হিচড়ে নামাচ্ছে আর বাংলা ভাষায় গালি দিচ্ছে।
কি হতো যদি সময় মতো না আসতো। ৩৫ বছরের সাজানো গুছানো সংসার পুড়ে ছাই হয়ে যেতো।
.
.
পর্বঃ৮
.
.
ডক্টর বুঝতে পেরেছে ভদ্র মহিলা বেশ ভয়ে আছে।
ইদানীং কালে ছেলের বউ অসুস্থ হলে শ্বাশুড়ি এতটা চিন্তিত হতে পারে জানা ছিলো না।
না কি অন্য কোন কারণ?
যাক মেয়েটা কে আগে দেখা যাক।
.
.
অনুর শ্বাশুড়ি যখন বিছানা থেকে নামিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসতেছিলো মেয়েটা তার হাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
দুহাতে ঝাপ্টে ধরে প্রথমে মনে হয় ঘুমে আছে তাই এমন করছে কিন্তু না সত্যি অজ্ঞান হয়ে গেছে।
বেশ ঘাবড়ে গেছে৷ হ্যাঁ এটা ঠিক অনুকে সে মেনে নিতে পারেনি কিন্তু তাই বলে মা মরা মেয়েকে সে এতটা কষ্ট দিবে বলে চিন্তা করেনি আর বড় কথা হলো নিলয়ের জান এই মেয়ের মধ্যে, ওর কিছু হলে ছেলেটা মরে যাবে। তাছাড়া নীলাভ্র,নীল আজ প্রথম মায়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বলেছে।
বেশ ভয়ে আছে। যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এই মেয়ের মামা কি তার মেয়ে আমার নীলের কাছে দিবে?
এমন শত কাহিনী ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তাকে নীলাশা রহমান কে।
.
.
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীল। অনুর পাশে বসে আছে নিলয়।
চোখেমুখে লেপ্টে আছে ভয়।
ইদানীং অনুর শরীর যে ভালো যাচ্ছে না সেটা যে তার অজানা এমন নয়।
কিন্তু কাজের জন্য সময় দেওয়া হয়নি।
অনুও কিছু বলেনি। নিজেই অনুভব করতো মেয়েটা অসুস্থ হচ্ছে কিন্তু……..
.
.
অনুর জ্ঞান ফিরেছে। সারা বাড়িতে আনন্দ লুটোপুটি খাচ্ছে। শ্বশুর শ্বাশুড়ি তো খুশিতে কেদেই দিয়েছে।
নীলাভ্র,নীল ছুটেছে মিষ্টি আনতে।
নিলয় সেই যে হাত ধরেছে, এখনো ছাড়েনি।
অনু কনসিভ করেছে।
ছোট্ট একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে তার মাঝে।
কিন্তু অনুর মাঝে একটা ভয় কাজ করছে।
সে জানে যে নিজেই এই সংসারে নিজে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে কিভাবে ছোট্ট আরেকটা প্রাণ এখানেই আসবে?
.
.
.
এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন শেষ আজ করে নিজের সিটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সাম্য। উইন্ডো সিটে বসে কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ বন্ধ করে আছে।
প্লে লিস্টে কারো রেকর্ড করা গান বাজছে
– মেনে জিসকো দিল এ দিয়া হ্যে
মেনে জিসকো প্যেয়ার কিয়া হ্যে
ওহো হো তুম…….

.
.
চার বছর পর আজ সে দেশে ফিরছে৷ ফিরার কোন ইচ্ছে ছিলো না। ছোট্ট সীমন্তিনী টার বিয়ে আর….
আর ছোট্ট শমপাপড়ি টা না কি মা হতে চলেছে।
তার ছোট্ট পুতুলটা আবার না কি ছোট্টো পুতুল জন্ম দিবে।
সীমন্তিনীর বিয়েতে না গেলেও এই খবর টা শুনে তাকে যেতেই হচ্ছে।
কারণ সে তো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই সময় টা সে থাকবে, তার শমপাপড়ির সাথে।
ফ্লাইট টেকঅফ করেছে৷
আর সাম্য ডুব দিচ্ছে তার স্মৃতির সাগরে।
.
.
ফুপুর বেবি হয়েছে। তখন সাম্যর বয়স সাত। হাসপাতালে যাওয়ার পর ফুপু কাপড়ে প্যাচানো একটা পুতুল কোলে দিয়ে বলেছিলো নে এটা তোর সুন্দর পুতুল।
সীমন্তিনী দেখতে শ্যামলা ছিলো। যখন ওর মা সীমন্তিনী কে দিয়ে বলেছিলো এই নে তোর পিচ্চি পুতুল তখন শুধু বলতো যে না আমার সুন্দর পুতুল চাই।
ঠিক বাইশ বছর আগে তার ফুপু তাকে সুন্দর একটা পুতুল দিয়েছিলো।
পুতুল টা পেয়ে সাম্যর আর কি চাই?
সেই ছোট্ট পুতুলটাকে আগলেই রাখতো।
মাঝে কেটে যায় অনেক বছর। সাম্যর বাবা, অনুর মা ছিলো আপন ভাই বোন। আর কোন ভাই বোন ছিলো না। অনু ছিলো একা আর সাম্য সীমন্তিনী।
অনেক বছর পর গ্রামে সবাই একত্র হয়েছে৷
সারাদিন আড্ডা দেয়। আরো চাচাতো মামাতো ভাইবোনের সংখ্যা নিতান্ত কম না।

সেবার সাম্য ইঞ্জিনিয়ারিং এ ২য় বর্ষ আর অনু নিতান্তই বাচ্চা ক্লাস এইটে উঠবে।
.
খুব চঞ্চল মেয়ে। এক কথায় ক্লাস ফাইবের বাচ্চাদের মতো।
ফুপু খাইয়ে দিচ্ছে, চুল বেধে দিচ্ছে, খুব আদরের সবার।
কারণ ফুপুর আর কোন সন্তান হবে বলে আশা করা যায় না।
তাই মেয়েই যেনো সব।
সারাদিন চঞ্চল অনুকে ক্যামেরা বন্দী করেছে সাম্য।
প্রচন্ডরকম ভালোলাগা কাজ করে এই পুতুলের উপর।
হুম! সাম্যের পুতুল। তাইতো তার বাইশ বছরের জীবনে কোন মেয়ে জায়গা করে নিতে পারেনি।
রাতে শুয়ে-বসে অনুকে দেখছিলো। পাশের রুমেই সীমন্তিনীর সাথে ঘুমিয়েছে সে।
কতটা পাগল হলে মেয়েটা রাতে তাদের সাথে থাকতে বলতে পারে?
ঘুম ঘুম এসেছিলো। অনুভব করলো কেউ একজন চুপচাপ এসে তার উপর হাত দিয়ে শুয়েছে।
ফোনের আলো জ্বালাতেই দেখে অনু।
– তুই এখানে?
– তুমি তো আমাদের সাথে রইলে না তাহলে আমিই এসেছি।
– এভাবে কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– কেনো?
– তুই বুঝবি না। যা তুই!
– আগে বল কি হবে?
.
.
ততক্ষণে ওরা দুজন উঠে বসেছে।
বাইরে শীতকালীন বৃষ্টি হচ্ছে।
ঠান্ডায় চারপাশের মানুষ ঘুমে মগ্ন, টিনের চালে বৃষ্টির ফোটা পড়ছে।
– মানুষ খারাপ বলবে।
– এহ বললেই হলো? আগেও তো কত থেকেছি৷ তখন তো কেউ কিছু বলেনি। তুমি, আমি, শিমুদি।
– আগে বলেনি, এখন বলবে।
– চুপ! একদম চুপ৷
– তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস?
– বেশ করেছি। কি এমন বদলে গেছে এই দুই বছরে? যে আমি তোমার পাশে থাকতে পারবো না? শিমুদি তো ঠিক ছিলো বিকেলে। তখন তো কিছু বলোনি।
– শিমুদি আর তুই কি এক না কি?
– কেনো এক হবো না?- উফ জ্বালাস না তো! যা বলছি।
– সত্যি চলে যাচ্ছি। থাকো তোমরা। শিমুদি পারে আমি পারি না।
তোমাদের কারো সাথে কথা নেই। আমি মায়ের কাছেই যাচ্ছি।
বিছানা থেকে নেমে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে সোজা ঘরের বাইরে চলে যাচ্ছে।
বাহিরে তখন তুমুল বৃষ্টি৷ এ বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত মারা যাবে।
.
.
সাম্য কাছে গিয়ে আটকানোর আগেই সে নেমে গেছে। অপর ঘরে দরজায়টোকা দেওয়ার আগেই সাম্য হাত ধরে।
– চল ভিতরে চল।
– ?
– চল বলছি।
-??
– ?? যাবি না?
– মায়ের কাছে যাবো
– কেনো আমার সাথে থাকার শখ শেষ?
– মা….
.
সাম্য মুখ চেপে ধরে টেনে ঘরে নিয়ে আসে। পাশের রুমে এতকিছু হচ্ছে অথচ সীমন্তিনী এখনো ঘুমে।
কি ঘুম মাইরি। ভাবা যায়?
.
.
পর্বঃ৯
.
.
সাম্য ধমক দিয়ে বিছানায় বসিয়ে গামছা এগিয়ে দেয়।
মেয়ে নাছড়বান্দা৷ সে চলেই যাবে৷
উফ আচ্ছা জ্বালাতন তো।
এই মেয়ের সাথে জোর গলায় কথা বলা যায় না। কষ্ট লাগে। কিন্তু উপায় নেই।
– একটু আগেই তো বললি! থাকবি এখন এমন করছিস কেনো?
– তুমি না করলা কেনো?
– বুঝবি না।
– শিমুদি কে তো না করো না।
– সীমন্তিনী আর তুই কি এক না কি? ও আমার আপন বোন।
– আর আমি? আমি বুঝি কেউ না।
– ও আর তুই এক হলি না কি?
– আলাদা কিসে?
– চুপ।
– না?
– একদম খেয়ে ফেলবো কিন্তু?
– পেটের নাড়িভুঁড়ি কি করবা? ?
.
.
এ পর্যায়ে সাম্য হেসে দিলো। কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো। অনু বেশ জমে গেছে ঠান্ডায়।
হাত পা নাড়াতে পারছে না।
তাই সেও চুপচাপ শুয়ে পড়লো।
নিজ থেকেই সাম্যর বাম হাত এগিয়ে নিয়ে মাথা রাখলো সাম্যর কাধে।
আর শুরু হলো কথার ঝুড়ি
– আচ্ছা সাম্যদা! কি এমন পাল্টেছে বললে না তো?
– কিছুই না।
– আগের মতো ভালোবাসো না আমায় তাই না?
– কেনো এমন মনে হলো?
– আগে বারবার দেখতে যেতে, কথা বলতে এখন এড়িয়ে যাও।
– বাব্বাহ অনেক বুঝিস।
– বুঝবো না? ক্লাস এইটে উঠবো। এখনো পিচ্চি নেই । আচ্ছা তোমার সেই বুনো কাকার কথা মনে আছে । গল্পটা বলো না!!!
.
গল্প বলতে বলতে সাম্য বুঝতে পারলো অনু ঘুমিয়েছে। কিন্তু সে ঘুমালো না। হাতড়ে মোবাইল বের করে ৪.৪৫ এ এলার্ম দিলো। এক হাত অনুর দুহাতে মুষ্টি বদ্ধ অন্য হাতে শুয়ে আছে৷
মেয়েটা পারেও।
এলার্ম বাজতেই সাম্য অনুকে সীমন্তিনীর পাশে শুইয়ে দিয়ে এলো। সীমন্তিনীর ঘুম দেখে সে রীতিমতো অবাক।
দেশ জলে ভেসে গেলেও তো এই মেয়ে জানবে না।
.
.
পরদিন সকালবেলা নদীর পাড়ে বসেছিলো সীমন্তিনী আর অনু।
সাম্য এসে কৌশলে সীমন্তিনী কে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
নদীর পানির দিকে দাঁড়িয়ে সাম্য নিজের গায়ের শার্ট খুলতে থাকে।
সিক্সপ্যাক এবস গুলো স্পষ্ট, শ্যামলা,লম্বা,তীক্ষ্ণ নাক। চেহারা মা-শাহ্-আল্লাহ্।
অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।
চোখে চোখ পড়তেই অনু অন্যদিকে তাকায়।
– এই যে শমপাপড়ি! নদীতে নামবি?
– না! পানি ঠান্ডা।
– তাতে কি?
– সাতার জানি না।
– আমি তো আছি।
– উহু! তোমায় বিশ্বাস নেই।
– রাতে এক খাটে থাকতে বিশ্বাস পাও অথচ এখন পাও না?
– ??ভালো। আর যাবো না।

.
অনু চলে যেতে নিলেই সাম্য আবার তাকে ধরে নিয়ে পানিতে নামে। এদিক টা তে কেউ আসে না তেমন। কারণ নদীর বাক ঘুরেছে।
পানিতে দাঁড়িয়ে অনু ঠাই পাচ্ছে না। এদিকে সাম্য হাত ছেড়ে দিচ্ছে বারবার।
বাধ্য হয়েই দু হাতে সাম্যর গলা আকড়ে ধরলো।
– তুই আসলেই শমপাপড়ি।
– শমপাপড়ি বলো কেনো?
– আরেকটু বড় হয়েযা তারপর বলবো।
– লাগবে না! ছাড়ো!
– সত্যি ছাড়বো? আচ্ছা নাক বন্ধ রাখ তো নিশ্বাস নিবি না। তাহলে পানি যাবে।
.
সাম্য অনুকে নিয়ে ডুব দেয়৷ কয়েক সেকেন্ডে উঠার পর অনু কাশতে থাকে।
যাচ্ছে তাই অবস্থা।
– কি রে বলছিলাম না? নাক বন্ধ রাখতে?
– রেখেছিলাম তো। নাক বন্ধ রেখে মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়েছি। মুখ খোলা ছিলো। তাই পানি….
– তোকে মুখ কে খোলা রাখতে বলেছে?
– বন্ধও তো রাখতে বলোনি।
.
.
এমন হাজারো ইচ্ছে পূর্ণতা পাচ্ছিলো। দিনে লোকচক্ষু আড়ালে মিষ্টি রঙের ছোঁয়া আর রাত জেগে গল্প।
দেখতে দেখতে যাওয়ার সময় চলে এলো
রাতে সাম্যর পাশেই ছিলো অনু।
ঠিক প্রথম রাতের মতো।
– এবার ফিরে রাতে আর ঘুম হবে না। সব শান্তি রেখে দিলি।
– কই রাখলাম! রাখিনি তো।
আমি থাকবো না রাতে আরো বেশি ঘুম হবে। কেউ জ্বালাবে না ।
.
সাম্য কিছু বলেনা শুধু হাসে। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে।
অনু হাত থেকে মাথা তুলে সাম্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ।
– সাম্যদা! আচ্ছা তুমি আশেপাশে থাকলে আমার এমন কেনো লাগে? বলবে? খুব কষ্ট হয় তুমি চলে গেলে ।
জানো মা ছাড়া আমি শুধু তোমার এত কাছাকাছি। অন্য কারো সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না কিন্তু তোমার সাথে আমার সব কথা। তোমার মাঝে এক শান্তি পাই।
সাম্যর গালে কয়েক ফোটা পানি পড়ে৷ সাম্য চোখ খুলে তাকাতেই দেখে অনুর দু চোখ।
– কাদছিস কেনো?
– জানিনা! খুব কান্না পাচ্ছে।
– পিচ্চি
– প্রমিস টা ভুলবে না তো?
– কোন টা?
– এখনি ভুলে গেছো?
– উহু, কিন্তু… আসলে
– আমার যখন বাবু হবে, ছোট্ট একটা বাবু তখন তুমি আমার পাশে সব সময় থাকবে। কারণ আমি এত পেইন নিতে পারবো না,আর তুমি থাকলে আমার কোন ব্যথাই ব্যথা মনে হয় না।
– হুম থাকবো তো৷
– সাম্যদা!
– হুম!
– কিছুনা।
.
দুজনেই চুপ। ঠিক সময় এলার্ম বাজতেই অনু চলে যাচ্ছিলো। সাম্য দুহাতে জড়িয়ে নিলো।
– দ্রুত বড় হয়ে যা। খুব ইচ্ছে করছে আজকেই তোকে ঘরে বউ করে নিয়ে যাই। এখানেই থাক না আর কিছুক্ষণ।
.
.
সময় দ্রুত পার হয়৷ ছোট্ট অনুর আবেগ, ভালোবাসা কোন কিছুর দাম দেয়নি সাম্য।
মেয়েটা শুধু হারিয়েছে। প্রথমে মা, বাবার বিয়ের পর বাবা কে, তারপর সাম্য কে।
সাম্য চাইলে অনেক কিছু পাল্টে যেতো কিন্তু সে চায়নি৷
বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এলো। সামনে সীমন্তিনী, বাবা, মা অপেক্ষা করছে। সাম্য এগিয়ে যাচ্ছে তাদের দিকে।
.
.
অনুর প্রেগন্যান্সির খবর ইরার মাথায় বাজ ফেলেছে।
অনু কি কম ছিলো যে এখন আবার বাচ্চা?
নিলয় ধীরেধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কি?
দুধের সাথে কন্ট্রোসেপ্টিক পিল মিশিয়ে দিবে? বেবি এবোর্ট হয়ে যাবে! না তিন মাস চলছে। এতদিনে সম্ভব না। তবে? কিছু একটা করতে হবে না হলে এসব সহ্য হচ্ছে না তার। এই বাচ্চা কোন ভাবে দুনিয়ার আলো দেখতে পারে না
.

পর্বঃ১০
.
.
ইদানীং অনুর মাঝের পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করার মতো।
বিশেষ করে মানসিক । কখনো ইচ্ছে করে মন খুলে হাসতে আবার কখনো খুব চিৎকার করে কাদতে।
নিলয় চেষ্টা করে এখন যথেষ্ট সময় দিচ্ছে।
বেশ খেয়াল রাখছে । রাতে অনুর পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
হালকা আলোতে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ তাদের বিয়ের দিনের কথা মনে হয়ে গেলো৷
রাতে নীল এসে বললো একটা মেয়ের কথা, সকালে বাবা দেখতে গেলো। দুপুরে নীল ব্যাংকে এসে হাজির, হাফডের ছুটি নিয়ে সবাই ছুটলো মেয়ের বাড়ি৷
ছিমছাম গড়নের কালো থ্রিপিস পড়া মেয়ে কে নিয়ে এলো।
প্রথম দেখাতেই মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়েছিলো নিলয়।
হুটহাট করে বিয়ে হয়ে গেলো৷
বিয়েতে মেয়ের কোন সাজসজ্জা ছিলো না ।
হালকা আকাশী শাড়ি পড়ে মেয়েটা এই বাড়িতে এলো৷
নিলয় যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল মানুষ।
সদ্য উনিশে পা দেওয়া এই মেয়ের পৃথিবীতে কেউ নেই৷
মা হারিয়েছে ৪ বছর আগে, বাবা কে হারিয়েছে মায়ের মৃত্যুর ৩ দিন পর৷
সব হারানো মেয়েটিকে নীলয় আপন করে নিবে৷
.
বাসর রাতে নীলয় অনু কে প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলো
– আচ্ছা নিউটনের তৃতীয় সূত্র টা কি পারো?
.
অনু অকপটে উত্তর দিলো। নীলয় হেসে বললো
– রেজাল্টের পর কলেজে এডিমিশন করিয়ে দিবো। আমি চাই আমার বাচ্চাদের তাদের মায়ের নামেই চিনবে সবাই।
পারবে তো?
.
.
অনু চুপচাপ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো। কি চলছিলো তখন অনুর মনে?
.
শারিরীক সম্পর্কের জন্য নীল অনুকে কখনো জোড় করেনি।
সে চাইতো আত্নার বন্ধুত্ব। দেহের সাথে দেহের সম্পর্ক ভ দিয়ে সংসার হলেও ভালোবাসা হয় না।
সে মেয়েটিকে ভালোবাসতে চায়।
.
বিয়ের পরদিন সকালে অনু দেখলো নিলয় তাকে ডেকে তুলে ওযুর পানি গরম করে দিতে বললো।
কারণ মায়ের অনুকে খুব একটা পছন্দ হয়নি।তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে মায়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার।
.
প্রথমত কষ্ট হলেও পরে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে গেলো৷
সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হলো।
অনু অতীত ভুলে নতুন করে বাঁচতে শিখলো।
নিলয় তখন হারে হারে টের পাচ্ছিলো সবার সামনে ভালো,শান্ত মেয়ে অনু একা নিলয়ের সাথে কতটা চঞ্চলতা আছে।
নিলয় বড্ড ভালোবাসে অনুকে। অন্য কাউকে ওর ভাগ সে দিতে পারবে না।
কাউকে না৷ তাই তো এতটা পজেসিভ৷ বিয়ের তিনটে বছর পেরিয়ে গেলো৷ নতুন অতিথি আসছে। তাকে নিয়ে যে কত্ত প্ল্যান! হিসেব নেই।
.
.
এয়ারপোর্টের বাহিরে দাড়িয়ে সীমন্তিনী সাম্য কে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।
চারটা বছর! কম নয়। আজ চার বছর পর ভাইয়ের সাথে দেখা।
সাম্য যেনো কেমন অনুভূতিহীনের মতো আছে।
বাবা – মায়ের কাছে এসে ভালোমন্দ কথা বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে।
.
আজ চার বছর পর বাসায় এলো। দরজা খুলে দিলো একটা মেয়ে। হয়তো কাজের মেয়ে!
চারবছর আগে যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তখন দরজা ধরে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো অনু।
চোখে পানি ছিলো কি না সাম্য জানে না। কারণ তাকানোর মতো সাহস ছিলো না সেদিন।
.
সাম্য- মা! আমি একটু রেস্ট নিবো। প্লিজ ডিস্টার্ব করো না। বড্ড ক্লান্ত লাগছে।
.
কেউ কোন কথা বাড়ালো না। সাম্য নিজের রুমে চলে এলো৷
গা এলিয়ে দেওয়ার আগেই প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তার৷
পুরুষ মানুষের কাদঁতে নেই কিন্তু আজ ইচ্ছে করছে৷
.
.
সালটা সঠিক মনে নেই। তবে অনুর জেএসসি পরীক্ষার আগের দিনগুলো ছিলো।
সাম্য নিজের লেখাপড়া তে ব্যস্ত, অনুও বেশ জোড়সোরে পড়াশোনা করছে।
রেগুলার কথা না বললে সাম্যর ইদানীং ঘুম আসে না।
কিন্তু ফুপু কি ভাববে এই ভেবে কল দেয় না।
রাত যখন গভীর হতে থাকে, সাম্যর বুকের বা পাশ টা খুব খালি খালি লাগে।
কষ্ট হয়। তাই সিগারেট শেষ উপায়।
এমন এক রাতে হঠাৎ অনুর মায়ের ফোন থেকে কল এলো
.
সাম্য- আসসালামু আলাইকুম।
অনু- ওয়ালাইকুম সালাম। তো বাবা কেমন আছো?
– ছিঃ কি সব বলছিস?
– তাহলে তুমি সালাম দিলে কেনো?
– ফুপুও তো কল দিতে পারে? আফটার অল নাম্বার টা ফুপুর।
– হুম! লজিক আছে।
– কি করে আমার শমপাপড়ি?
– শুয়ে আছি। না বসে আছি।আরে না দুটোই আছি।
– একা?
– দোকলা পাবো কই?
– ইমো তে আয় ভিডিও কল দিবো।
– আম্মোর ফোনে স্বামী বিদেশ এপস নাই।
– ইমোর নাম স্বামী বিদেশ এপ্স হলো কবে থেকে?
– ধরে নাও আজ থেকে।
– ইন্সটল করে একটা ম্যাসেজ দে।
– পারবো না।
– সিউর?
– দিচ্ছি তো।
.
কিছুক্ষণ পর
– কিছুই তো দেখা যায় না।
– লাইটস অফ তাই।
– অন কর।
– উঁহু।
– প্লিজ!
– কি দেখবা দেখো…
– কাজল দিয়েছিস?
– হুম!
– ঘুমিয়ে যা!
– ডিসকানেক্টেড করবো?
– মাইর খাবি?
– কেনো?
– এমন পজিশনে রেখে দে যাতে আমি তোকে দেখতে পারি।
– সাম্যদা! না! তুমি জানো আমার ঘুমের কন্ডিশন ভালো না। কাপড়, ওড়না ঠিক থাকে না।
– তাতে কি?
– ঘোড়ার ডিম।
– যখন এক খাটে থেকে আমার ঘুম হারাম করলে তখন মনে ছিলো না?
– প্লিজ।
– নো আরগুমেন্ট
.
অনু ফোন রেখে চোখ বন্ধ করলো। এদিকে সাম্য তাকিয়েই আছে।
কিছুক্ষণ পর অনু এক চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সাম্য চুপচাপ সিগারেট টানছে।
– সিগারেট শেষ?
– উঁহু।
– কেনো খাচ্ছো?
– বুঝবি না।
– বুঝাও ?
– এরপর যেদিন আবার সামনাসামনি দেখা হবে সেদিন বুঝাবো।
– বায়।
.
.
অনু রাগ করে কল কেটে দেয়। তারপর দুদিন কল আসেনি।
হঠাৎ একদিন বিকেলে অনু কল দিয়ে বললো মায়ের খুব জ্বর। ক্লিনিকে এডমিটেড।
সাম্য চিন্তা করতে না করলো।
কাল সকালে বাবা কে নিয়ে যাবে বললো।
কিন্তু আল্লাহ্ তালার ইচ্ছে হয়তো অন্য ছিলো।
রাত ১.১৯ এ আবার কল এলো।
খবর এলো অনুর মা আর নেই।
কে জানতো মায়ের সাথে মেয়ের কপালের সব সুখ মরে গেলো!
.
.
#চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে