(সত্য ঘটনা অবলম্বনে) গল্পঃ শেষ ঠিকানা- পার্ট০১

0
3735

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
গল্পঃ শেষ ঠিকানা
written by Nahid
[ মেয়েটির আবদার যে মেয়েরা ফেসবুকে প্রেম করে গল্পটি যেনো একবার হলেও পড়ে]
আমি নুসরাত অনেক ছোট থাকতেই আমার বিয়ে আমার পরিবারের মতে হয়। ছোট বলতে তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। বিয়ের আট মাস যেতেই আমার স্বামী একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। তিনি যখন মারা যান আমি তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি তখন ছোট একটা মেয়ে বুঝে ওঠতে পারছিলামনা আমার কি করা উচিত। সবকিছু কেমন যানি ভঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো এক নিমিষেই। আমার সপ্ন,আমার আশা আমার ভবিষৎ সবকিছুই এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে আমার সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় ছয় মাস পরেই আমার সন্তানকে আমার স্বামীর ফুফুরা বিয়ে নেয়। কারন তাদের কোন সন্তান ছিলোনা। আমি আবারো একলা হয়ে পড়ি। জীবনটাকে নতুনভাবে গড়তে থাকি। হাইস্কুল জীবন পার করে কলেজে পা রাখি। তাঁরপর ঘটতে থাকে নাটকীয় সব ঘটনা। কলেজ যখন ফাস্ট ইয়ার ছিলাম তখন ফেসবুকে মানছুর নামের এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটির বাসা ছিলো কুমিল্লা আর আমার বাসা দিনাজপুর। মানছুরের সাথে কথা হত হাই, হ্যালো কেমন আছি এসব। এভাবে চলতে চলতে একসময় মানছুর আমার ফোন নাম্বার টা চেয়ে নেয়। প্রথমে একটু না করলেও পরে নাম্বারটা দিয়ে দেই। একদিন…
মানছুরঃ লতা আমি তোমাকে ভালবাসি (লতা আমার ডাক নাম)
আমিঃ এটা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না।
মানছুরঃ কেনো সম্ভব না??
আমিঃ কারন আমার একবার বিয়ে হয়েছিলো আর এখন আমি বিধবা।
মানছুরঃ সত্যি!! জানো তো লতা আমার নাহ খুব ইচ্ছা একটা বিধবা মেয়েকে বিয়ে করার। বিধবা মেয়েকে বিয়ে করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
আমিঃ এর পরেও আরো একটা সত্যে আছে যা শুনলে আর মানতে পারবেনা।
ঃ কি সেই সত্যে??
আমিঃ আমার একটা বাচ্চাও হয়েছে।
ঃ এইটা মানতে পারলামনা। তুমি বিবাহিতা এটা মেনে নিতে পারি কিন্তু তোমার বাচ্চা আছে এটা আমি মানতে পারলামনা।
আমিঃ না মানলেও এটাই সত্যি।
ঃ আচ্ছা ভালবেসেছি যখন এসবে আমার বাঁধবেনা।
আমিঃ তোমার যদি এসবে কোন সমস্যা না থাকে আমার ও সমস্যা নাই।
তাঁরপর আমিও মানছুর কে ভালবেসে ফেলি একদম মন থেকে। ঘন্টার পর ঘন্টা, রাতের পর রাত জেগে কথা বলতাম দু’জনে। একদিন মানছুর দিনাজপুরে আসে আমার সাথে দেখা করতে। আমার এক বন্ধুর ম্যাচে তাকে উঠিয়ে দেই। চারদিন সে দিনাজপুর ছিলো, আমি আমার বান্ধবি,বন্ধু আর মানছুর সবাই মিলে অনেক ঘোরাফেরা করি। তারপর মানছুর চলে যায় কুমিল্লা।
এক বছর পর বাসা থেকে আমার বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করা হয়।
আমিঃ মানছুর আমার তো বিয়ে ঠিক হতে যাচ্ছে, কি করবে এখন??
ঃ দেখো লতা ভাল যখন বেসেছি কেনো তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাবে!!! তুমি কুমিল্লা চলে আসো আমরা বিয়ে করে নিবো।
আমিও অন্ধ বিশ্বাস করতাম মানছুর কে তাই কোন কিছু না ভেবেই পালিয়ে যায় বাসা থেকে কাউকে কিছু না জানিয়েই। তারপর কাজী অফিসে আমাদের বিয়ে হয়।
ঃ লতা বিয়ে তো করলাম তুমি এখন বাসায় ফিরে যাও। আমি বাসায় সব কিছু বলে তারপর তোমাকে আসতে বলব।
আমিঃ ঠিক আছে যেটা ভালো মনে কর তুমি।
তারপর বাসায় চলে আসি আমি। বাসায় এসে যখন বলি আমি এভাবে বিয়ে করেছি তখন কেউ এটাকে মানতে চাইনা। বলে,, যা করেছো করেছো আমরা ওসব মানিনা তোমাকে আমরা যেখানে বিয়ে দেবো সেখানেই বিয়ে করতে হবে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে আমি মানছুর কে জানাই। আমি তখন কোচিং করছিলাম।
ঃ দেখো লতা বিয়ে যখন করেই ফেলেছি এতো প্রবলেম নিয়ে কোন লাভ নাই,তুমি চলে এসো আমার কাছে। আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দেবোনা,তোমার চোখে কখনো জল আসতে দেবোনা। তোমাকে অনেক ভালবাসি তুমি চলে এসো।
আমি মানছুর কে অন্ধ বিশ্বাস করি তাই বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে রাত বাড়োটার ট্রেনে রওনা দিলাম ঢাকায়। ঢাকা যাবার চার পাঁচ ঘন্টা পর মানছুর আসে আমাকে নিতে। আমি জার্নি করে একটু অসুস্থ হয়ে পড়ি। তারপর মানছুর আমাকে চাঁদপুর হাজীগঞ্জ ওর চাচার বাসায় নিয়ে যায়। ওখানে পৌছালে ওর ভাইয়া ভাবি কেউই বিশ্বাস করে যে আমরা বিয়ে করেছি। পরদিন কোর্ট থেকে কাগজ নিয়ে দেখালে বিশ্বাস করে যে, আমরা বিয়ে করেছি। প্রথমদিক ঠিক ছিলো একমাস পর সে কেমন যানি বদলে যায়। আমার গলাটা চেপে ধরে বলে…
ঃ লতা তুমি দিনাজপুর চলে যাও তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আমিঃ কেনো তুমি এ কথা বলছ আজ বিয়ের এক মাস পর। সংসার করতে পারবেনা তাহলে বিয়ে করলে কেনো??
এরকম কথা কাটা কাটির পর মানছুরের চাচাতো ভাইয়ের বউ আমাকে বাসা থেকে জোর করে বাহির করে দেয়। আমি বলি এরকম করলে আমি সোসাইটির লোক জোড় করতে বাধ্য হব। মানছুর পুরাটাই পরিবর্তন হয়ে যায় ও উল্টা আমার দোষ দিতে থাকে। আমি নাকি তাকে ঠকিয়েছি। আমি বিবাহিতা ছিলাম, আমার বাবু ছিলো এসবের কিছুই বিয়ের আগে বলিনি। ওর ভাবি আমাকে ভয় দেখায় তাদের ছেলেকে আমি ঠকিয়েছি আমার নাকি মান হানির কেস করে দেবে।
তারপর আমি জোর করে আবারো রুমে চলে যায়…
আমিঃ দেখেন আমার সাথে এমন করেন আমি কিন্তু সুইসাইড করব এখানেই। আমার বাসায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো সেখান থেকে আপনাদের ছেলে আমাকে পালিয়ে নিয়ে এলো আর এখন বলছেন আমাকে মানবেন নাহ। কেনো মানবেন নাহ!!
মানছুরঃ তোর চেহারা আর আমার চেহারা কখনো যায়? যায়না। তোর চাইতে অনেক সুন্দর মেয়ে আমার পিছে ঘুরে তুই চলে যা এখান থেকে। তোর সাথে আমি মজা করছিলাম আর তুই এমন ভাবে আমাকে গ্রাস করলি শেষ পর্যন্ত তোকে বিয়ে করতে হলো। বিয়ে করে ভাবলাম এক সাথে থাকতে হবেনা বিয়ে করেছি ফুরাই গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোকে নিয়ে সংসার ও করতে হচ্ছে, তুই চলে যা।
এসব কথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। কিসব বলছে ও। আমি এতদিন কাকে ভালবেসেছি?? কাকে বিশ্বাস করে এতদূর এসেছি??
মানছুরের চাচাতো বোনটা অনেক বোঝালো মানছুরকে কিন্তু কোন কাজ হলোনা। তারপর মানছুর আমার দুলাভাইকে ফোন করে বলে আমি নাকি ওর কাছে চলে এসেছি, আমাদের নাকি বিয়েও হয়নি। আমার দুলাভাই বলে, বিয়ে যখন হয়নি ওকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও। তারপর কুমিল্লা বিশ্ব রোড এসে বলে এখান থেকে তিশা বাসে করে যেনো আমি একাই চলে যাই।
আমিঃ আমি যাবনা, দেখো মানছুর তুমি আমাকে বিয়ে করেছো! তুৃমি যেখানে আমিও সেখানেই থাকবো।
মানছুরঃ তা কখনোই হয়না। তোর সাথে আমার কখনোই যায়না। তোর সাথে আমার অনেক পার্থক্য।
আমিঃ তো পার্থক্য আছে তুমি তিন চার বছরে বুঝতে পারলেনা এই এক মাসে বুঝলে??
ঃ হ্যাঁ আমার পরিবার তোকে কখনোই মানেনি আর মানবেও না কারন আমি বাবার একটাই ছেলে।
আমিঃ আমি তোমাকে আগেই সব বলেছি এসব তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো। তুমি আমাকে ঠকাইছো।

ঃ না তুই আমাকে ঠকাইলি।
আমিঃ তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে সাইনবোর্ডে।
তারপর ও রাজি হয় সাইনবোর্ড আসতে। রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকায় রাত ১২ টা বেজে যায় সাইনবোর্ড আসতে। তারপর ও আমাকে বলে…
ঃ আমার একটু ইমার্জেন্সি টয়লেটে যেতে হবে। (সারা রাস্তা ওর হাত ধরে ছিলাম তখনো ধরে ছিলাম যেনো পালাতে না পারে)
আমিঃ ওকে যাও।
দশ মিনিট পার হয়ে গেলেও সে আসেনা কিন্তু সে তো টয়লেট থেকে বের ও হয়নি। পরে এক ভাইয়ের সাহায্য জানতে পারি ভেতরে কেউ নেই। টয়লেটের পেছনের ওয়াল টপকে পালিয়েছে। আমি তো কান্না শুরু করে দিলাম এত রাতে আমি এখন কোথায় যাব। চারপাশের লোকজন অনেক বাজে ভাবে কথা শোনাতে লাগলো। এর মাঝে কয়েকজন ছেলে এসে বললো,, ছেলেটাকে আমরা দেখেছি আমাদের সাথে আসেন। আমি কোন কিছু না ভেবে তাদের সাথে হাঁটতে লাগলাম একটু দূর যেতেই পেছনে দৌড় দিলাম। কেনোনা তারা যদি মানছুর কে দেখতো তাহলে আমার কাছেই নিয়ে আসতো। এতক্ষন পর আমাকে কেনো তার কাছে নিয়ে যাবে একটু সন্দেহ হলো। তখন আবেগের বশে কিছু মাথায় আসেনি। এদিকে মানছুরের নাম্বারটাও বন্ধ দেখাচ্ছিলো। ফেসবুকে গিয়ে মাসুদ ভাইকে সব জানালাম (মানছুরের বন্ধু)।
তারপর মানছুর ভাই জানাই আগামিকাল ও পরিক্ষা দিতে আসবে কলেজে। আমাকে কলেজের ঠিকানা টা দিলো। রাতটা ওখানে কাটিয়ে সকালের বাসে রওনা দিলাম। এর মাঝে ১২ টার পর মানছুরের ফোনটা খোলা পাই…
আমিঃ তুমি কোথায়?
ঃ আমি তো কলেজে পরিক্ষা দিলাম এখন বাসায় যাব।
আমিঃ তুমি কেনে এমন করলা?? কেনো আমাকে একা ফালায়ে চলে গেলা?
ঃ তুমি বোঝনা তোমার সাথে আমার সংসার করা সম্ভব না । তবুও কেনো আমার পেছনে কুকুরের মত ঘুরঘুর করছো। তোমার চেহারা তো কুকুরের চাইতেই বেশি খারাপ। তোমার সাথে আমার কখনোই যাবেনা বুঝছো লতা!! তুমি চলে যাও। এই কয়টা দিন সংসার করেছো এটাই অনেক এর বেশি কখনো আশা করাটা তোমার মানাই না।
আমিঃ ঠিক আছে চলে যাচ্ছি ভাল থেকো।
ও মনে করছে সত্যিই আমি নিরুপায় হয়ে চলে যাচ্ছি। তারপর দুপুর ১ টার দিকে আমি ধর্মপুর গেলাম ওর কলেজে আমি বসে ছিলাম। দেখি মাসুদ ভাই, হৃদয় ভাই এর মাঝে হাঁটছিলো আমি এক দোড়ে ওর কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে বলে…
আমিঃ মানছুর তুমি কোথায় যাচ্ছ আমাকে একা ফেলে রেখে।
কথাটি শুনে ওখানেই জ্ঞান হারায় তারপর……..
to be continue……..
$tupid
গল্পটির ২য় পর্বের লিংক ফ্রি ফেসবুক
https://free.facebook.com/groups/247570482398370?view=permalink&id=668982240257190&_rdr
যাদের এমবি আছে তাদের জন্য….
https://m.facebook.com/groups/247570482398370?view=permalink&id=668982240257190&_rdr

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে