সতীনকাঁটা পর্ব ৪

0
854

#সতীনকাঁটা পর্ব-৪
লেখায়ঃ(Nosrat Monisha)

হেঁচকা টানে তানজিনাকে নিজের দিকে টেনে তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় আজুয়াদ।

দরজা খোলা থাকায় পুরো দৃশ্যটা দেখতে পায় রাফিয়া।
রাফিয়ার মনে হচ্ছিল কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে তার কলিজাটা কুচি কুচি করে কাটছে।
রাফিয়া মনে মনে বলে,
-খোদা, বেবাকতা (সব) জাইন্ন্যা-হুইন্ন্যা (জেনে-শুনে) ইত্তো হত্তীনের ঘর করবার আইছি তয় পরাণডা অত পুরাইতাছে কিয়ের লাইগ্যা?

আজুয়াদ একবার বাইরে দরজার তাকিয়ে দেখতে পেল রাফিয়া কাঁদছে।দৃশ্যটা দেখে তার গা জ্বলে ওঠে।তাই সে দেরী না করে তানজিনাকে ছাড়িয়ে রাফিয়ার মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।


রেহানা বেগম স্বামীকে পান সাজিয়ে দিচ্ছিলো।

-কামডা কি ঠিক অইলো, আবরারের মা?
-কুন কাম?
-ছোড বউমারে কুনদিন মন থেইক্যা আমরা কেউ মাইন্যা নিবার পারি নাই, আইজ নাটক কইরা কাম আদাই করতাছি। নাহ আমার পরানে মানতাছে না।

-আবাইত্তার(ফালতুর) মতো কতা কইয়ো না।ছোড বউয়ের কতা থুইয়্যা নিজের বইনজির (ভাগ্নী) কতা বাবো(ভাবো) । ছুডো মাইয়া এই বয়সে হত্তীনের ঘর কেমনে করবো।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আজম খান বলে,
-কতা হাছা কইছো। কি পোড়া কপাল লইয়্যা জন্মাইলো, বাপ মরা মাইয়্যাডার জীবনডা তোমার পোলার লাইগ্যা নষ্ট হইয়্যা গেলো।

মুখে আরো একটা পান গুঁজে দিয়ে, একটু রেগে রেহানা বেগম বলে,
-হুদাই(শুধু) হুদাই আমার আজুরে দোষ দিয়ো না। বেডা(পুরুষ) মাইনসের এড্ডু আড্ডু ছুকছুক স্বভাব থাহেই। ঘরের বউ বালা না হেয় তো অইলে বাইরে মুক দিবঐ। আর তোমার বইনজি পানিত পইরা যায় নাই। আমার আজুর খালি আগের একখান বউ আছে এইডা ছাড়া আর কুনো সমিস্যা নাই। হুন বেডা মানু অইলো সন্নের আংটি, ব্যাঁহ্যা (বাঁকা) অইলেও দর কমে না।

আমজাদ খান তার স্ত্রীর যুক্তি শুনে চুপ হয়ে যায়, কারণ তিনিও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে পুরুষ মানুষ স্বর্ণের আংটি।


এদিকে দরজা বন্ধ করে আবার তানজিনাকে কাছে টেনে নেয় আজুয়াদ ।

তানজিনা এবার চুপচাপ না থেকে নিজেকে আজুয়াদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-দাঁড়াও আজুয়াদ। আগে বোঝাপড়াটা শেষ হোক। এসবের জন্য সারারাত পড়ে আছে।

-তানু, কি বলছো তুমি কিসের বোঝাপড়া?

-তুমি খুব ভাল করেই জানো আমি কিসের বোঝাপড়ার কথা বলছি।এখন বলো।

-তানু, আজকে না। আমার এই অনুরোধটা রাখো।

-ঠিক আছে আমি জোর করবো না। কিন্তু সবকিছু না জেনে তোমার কাছাকাছি গেলে আমার নিজের উপর ঘৃণা চলে আসবে। তাই এখন চলে যাচ্ছি।
-না আমি তোমাকে যেতে দেব না।
ভ্রূ কুঁচকে তানজিনা বলে,
-জোর করবে?
-যদি বলি তাই।

তানজিনা গলাস্বর ভারী করে বলে,
-হ্যাঁ, সেটা তুমি করতেই পারো। সারাদিন পেছনে পড়ে থেকে প্রেম করতে পারো, আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য করতে পারো, যখন ইচ্ছা গায়ে হাত তুলতে পারো আবার নতুন করে বিয়েও করতে পারো। এসব যদি তুমি করতে পারো তবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার সাথে জোরও খাটাতে পারবে।

আজুয়াদের জানা ছিল না তানজিনা তার মনে এত অভিমান লুকিয়ে রখেছে। অবাক হয়ে আজুয়াদ বলে,
-তানু!

-অবাক হওয়ার কি আছে। আমি কি মিথ্যে বলেছি।
-না তানু, তুমি সত্যিটা বলেছো। আমি তোমাকে সম্মান দিতে পারি নি।

-তাহলে কি আমি চলে যাবো?

আজুয়াদ তানজিনার মনোভাব বুঝতে পারলো, তানজিনা সত্যিটা না জেনে আর কোনমতেই তাকে মানতে পারবে না।
তাই মনে মনে ভাবলো,
যে সত্যিটা এক না এক দিন তানজিনা জানতে পারবে তা আজকে বললে ক্ষতি কি?বরং অন্য কারো মুখে শোনার চেয়ে আমার মুখে শোনা ভালো ।
আজুয়াদ বলে,
-না, আমি এখনই সব বলবো।তুমি থাকো কিন্তু কথা দিতে হবে তুমি সবটা শুনবে।

-আচ্ছা শুনবো। তবে আমারও একটা কথা আছে, তোমাকে আল্লাহর কসম দিলাম একটা শব্দ মিথ্যা বলবে না আর লুকাবে না।

আজুয়াদের শেষ আশার আলোটা নিভে গেল সে ভেবেছিলো, কিছু সত্য কিছু মিথ্যা আর কিছু কথা গোপন করে তানজিনাকে বুঝিয়ে নিবে। কিন্তুু কসমের কারণে আর সেই উপায় রইলো না।

অবশেষে আজুয়াদ আর তানজিনা মুখোমুখি বসে। আজুয়াদ বলা শুরু করলো।

-তানু তুমি তো জানো, চাকরি হওয়ার পর আমি ঢাকায় গেলাম। ঢাকা আমার কাছে নতুন ছিলো না। আমার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সব ঢাকাতেই ছিল।
তবু বিয়ের পর তোমার সঙ্গ ছাড়া থাকতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, চিরচেনা ঢাকা শহরে আমি অনেক একা।

এর মাঝে একদিন ফুফুর ফোন আসে।

-আসসালামু আলাইকুম ফুআম্মা(ফুফুআম্মা)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।আজু বালা আছোছ নি।
-জ্বি,আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা?
-আমরাও বালা। তয় একখান মুশকিলো পইরা ফোন দিছি৷
-কি বিপদ?
-তর বইনে হের ফুআম্মার লগে ঢাহা গেছিন। অহন তো এলহা(একা) এলহা আইবার পারে না। তুই যুদি হেরে এড্ডু দিয়া যাইতি।

-আমার তো অফিস আছে।
-তর না শুক্কুর শনি বদ্দ।
-জ্বি,আচ্ছা আমি শুক্রবার রাফিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিবো।

-না শুক্কুরবার না। মাইয়াডা খুব আউস(আশা) কইরা গেছিল, ঢাহা গুরবো। তুই এক কাম করিস শুক্কুরবারে হেরে এড্ডু গুরাইয়া শনিবার লইয়া আসিস। পরে তুই রোরবারে যাইছগা।

-আচ্ছা তাহলে রাফিয়ারে বলবেন শুক্রবার বিকেলে তৈরি হয়ে থাকতে।

-বিহালে কেন সহালে বাইর অইলে তো বেশি গুরন যাইবো।
-ফুআম্মা ঢাকায় কেউ সকালে ঘুরে না সবাই বিকেলেই ঘুরে।
-অ..

এরপর দিন চলে যায়। শুক্রবার বিকেল চলে আসে।
আমি রাফিয়ার ফুপুর বাড়ির বসার ঘরে তার ফুপুর সাথে গল্প করছিলাম আর তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
তখন রাফিয়া আসে। আমি রাফিয়াকে প্রথম এত খেয়াল করে দেখলাম। কেননা এর আগে আমি তাকে বাচ্চা ভাবতাম।
সেদিন রাফিয়াকে লাল থ্রি-পিসে অন্যরকম লাগছিলো। খেয়াল করলাম চোখে গাঢ় কাজল আর লিপস্টিক ছাড়া গোলাপি ঠোঁটে তার চেহারায় অদ্ভুত আভা ফুটে উঠেছে। বুঝতে পারলাম কৈশোর শেষে নব্য যৌবনে পা রাখার সৌন্দর্য এটা।

রাফিয়াকে নিয়ে বের হলাম। অনেক ঘুরলাম, রাতে বাইরে খেলাম তুমি তো এগুলো সবই জানো।
সন্ধ্যার পর তাকে নিয়ে তার ফুপুর বাড়ি দিয়ে আসলাম।
পরদিন সকালে ঢাকা থেকে রাফিয়াকে নিয়ে ফুপুর বাড়ি গেলাম।

তুমিতো জানো ফুপুর বাড়িতে এখনো বিদ্যুৎ যায় নি। তাই খুব গরম লাগছিলো। তার উপর রাতে হারিকেনের উত্তাপ গরমটা বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
ঘুম আসছিলো না। তাই আমি দরজাটা খোলা রেখেই শুয়েছিলাম।

মাঝরাতে বুঝতে পরলাম কেউ ধীর পায়ে আমার ঘরে প্রবেশ করেছে।

দেখি রাফিয়া একটা নীল রঙের পাতলা জর্জেট শাড়ি পরে আমার বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি ধড়ফড় করে বিছানা থেকে উঠে রাফিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

-কিরে এত রাতে তুই এই ঘরে কি করিস। কেউ দেখলে ঝামেলা হবে যা।
-কেউ তো এইডা দেহে না আমি আপনেরে কত ভালাবাসি। তয় এইডা কেমনে দেকবো আমি এইহানে আইছি।

-কি বললি তুই? তোর মাথা ঠিক আছে তো?

-না, আমার মাতা ঠিক নাই, আমি পাগল অইয়্যা গেছি। যহনেত্তে ভালবাসা কি বুজজি, আপনেরে ভালবাসছি। আর আপনে তানজিনা ভাবীর লগে ভাগাইয়্যা বিয়া কইরালাছেন। আমার কতা ইট্টু(একটু) চিন্তা করলেন না।
বলে রাফিয়া কাঁদতে লাগলো।

কথাটা বলে আজুয়াদ থামলো হয়তো ভেবেছিলো তানজিনা কিছু বলবে কিন্তু তাজিনার পাথরের মতো স্থির দৃষ্টি নিয়ে বসেছিল।

তাই সে আবার বলতে লাগলো।
আমার কি হয়েছিলো জানি না।
কিন্তু এক সাড়ে সতেরো বছর বয়সী নব্য যুবতীর পাতলা শাড়ির আড়ালে থাকা যৌবন এক মুহূর্তের জন্য আমাকে বাধ্য করলো তোমার কথা ভুলে যেতে।

রাফিয়ার চোখের পানিতে সেইরাতে আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস ধুয়ে গেলো৷

আমি দুহাতে রাফিয়ার ধবধবে ফর্সা কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে কাছে টেনে নিলাম।
তারপর ওর ওষ্ঠদ্বয়কে গভীর চুম্বনে বার বার সিক্ত করে দিচ্ছিলাম।
তখনই রাফিয়ার দাদী চলে আসে।
উনি পানি খাওয়ার জন্য উঠেছিলো। আমাকে আর রাফিয়াকে ঐ অবস্থায় দেখে চিৎকার করে উঠে।
বাড়ির সবাই চলে আসে।আমার ঘোর কাটলে, নিজের ভুল বুঝতে পারি। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সবাই নানান কথা বললো, রাফিয়াকে মারধর করলো।

পরদিন ভোরে আমি পালিয়ে বাঁচলাম।

ঘটনার অনেক দিন কেটে গেলো।মা-বাবা বা অন্যকেউ আমাকে কিছু না বলায় আমি সবটা ভুলে গিয়েছিলাম।
তারপর বাবা গতকাল হঠাৎ ফুপু বাড়ি দাওয়াত নিয়ে উনার সাথে যেতে বলে।

আমি ভাবলাম সবার কাছ থেকে মাফ চাওয়ার এর চাইতে ভাল সুযোগ আর পাবো না তাই সাথে গেলাম।

ঐ বাড়ি গিয়ে দেখি রাফিয়ার হলুদ। খুব খুশি হলাম এই ভেবে রাফিয়ার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু আজ সকালে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো, যখন বাবা বললেন রাফিয়ার বিয়ে আমার সাথে হচ্ছে।

-বাবা এসব কি বলছেন। আমি রাফিয়াকে বিয়ে কেন করবো আমি বিবাহিত ৷
-হেই জওয়াবডা(জবাবটা) আমি দেই আজু।
-ফুআম্মা,আপনি!
-হেইদিন রাইতে তর ঐ কান্ডের পর আমি মাইয়্যার বিয়া ঠিক করছিলাম। কিন্তু মাইয়্যা বিষ খাইলো।
-কি, বিষ! কিন্তু কেন?

মুখ বিকৃত করে তিনি বললেন,
-বেবাকতা জাইনা ঢঙ করিস না আজু। রাফিয়া আমারে সব কইছে। তুই হের লগে দিনের পর দিন পেরেম করছোস। ঢাকা নিয়া হের লগে ছি!ছি!ছি!

-ঢাকাতে আমি ওর সাথে কি করবো। আপনিইতো বলেছিলেন রাফিয়াকে নিয়ে ঘুরতে যেতে।

-আমি বাইরে গুবার কতা কইছিলাম আমার মাইয়্যারে লইয়া তর বাসাত গিয়া লীলা খেলা করনের লাইগ্যা কই নাই।

-ছি ফুআম্মা কি বলছেন এসব। আমি রাফিয়াকে নিয়ে আামার বাসায় কেন যাবো।

বাবা বললো,
-আমারে যহন বইনে কইল তর লাইগ্যা রাফিয়া বিয়া ভাইঙ্গা বিষ খাইছে, আমি এই বাইত আইলাম। ইতা(এসব) কতা মানতে আমি রাজি আছলাম না। কিন্তুক যহন মাঐমা(বোন/ভাইয়ের শ্বাশুড়ি) কইলো হেইলা কি দেখছে,শরমে আমার মাতা কাঠা গেল।
আমি কতা দিলাম কলঙ্ক যহন তুই দিছোছ তুইঐ ঘুচাবি। রাফিয়ারে তুই বিয়া করবি৷

আমি মাথা নিচু করে রইলাম।

ফুপু কেঁদে বলেছিল,
-দেখ আজু, তোরে জোর করমু না। তয় একখান কতা মনে রাহিস এই বিয়া না অইলে আমি আর আমার মাইয়্যা গলায় কলসি বাইন্দা ডুইব্যা মরুম।

-না বইনে(বোন) এই বিয়া অইবো। না অইলে খান বাড়িত আইজ আমজাদ খানের লাশ যাইবো। আজু ফয়সালা অহন তর বিয়া করবি কিনা।

এসব বলা শেষে আজুয়াদ থেমে তানজিনার হাত ধরে বলে,

-আমি কাউকে বুঝাতে পারলাম না যে রাফিয়ার সাথে আমার কিছু হয় নি,সে মিথ্যা বলেছে । তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতে হলো । বিশ্বাস করো তানু আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি।

তানজিনা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।

তারপর কিটমিট করে বলে,
-আমার এই মুহূর্তে কি ইচ্ছে করছে জানো, আজুয়াদ? বাইরে থেকে জুতা এনে ঠাস ঠাস করে তোমার দুই গালে মারতে। একজন তার মাথায় হাত দিয়ে কসম কাটিয়েছিল যে, শ্বশুর বাড়িতে যাই হোক আমি যেন বাবার বাড়ি ফিরে না যাই। তাই এখনো আছি, তা-না হলে অনেক আগেই তোমার সংসারের কপালে লাত্থি মেরে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতাম।

অস্ফুটস্বরে আজুয়াদ বলে,
-তানু!!

-কি তানু? কিসের তানু? আমি ভাবছিলাম বাবা জোর করে তোমাকে বিয়ে করিয়েছে। আমি তো রাফিয়াকে আমার শত্রু ভাবছিলাম কিন্তু আমার প্রধান শত্রু তো তুমি। এখন ভালবাসার কথা বলছো, যখন সতের বছরের এক মেয়ের যৌবন দেখে সব ভুলে গিয়েছিলে, তখন কোথায় ছিলো এই ভালবাসা।

অনুরোধ করে আজুয়াদ,
-তানু, আমাকে মাফ করে দাও।ভুল হয়ে গেছে।কিন্তু এভাবে আমাকে অপমান করো না।

চেঁচিয়ে তানজিনা বলে,
-অপমান!মান-আপমান বোধ থাকলে রাফিয়ার সাথে এমন করতে?মেয়েটার এখানে কোন দোষ নেই, সে যাকে ভালবেসেছে তাকে সব উজাড় করে দিতে চেয়েছে। সেদিন ওর দাদী ঐ ঘটনা না দেখলে তুমি মেয়টার সাথে ছি! কি ভেবে এমন করেছিলে গাছের খাবে আবার তলারও কুড়াবে এমন কিছু?
আচ্ছা একটা কথা বলো, একই ভুল আমি করলে মাফ করতে তুমি। যাকগে তোমার সাথে কথা বলতে আমার গা ঘিনঘিন করছে।

আজুয়াদ রেগে গেল।এবার গলারস্বর উঁচু করে বলে,
-অনেক হয়েছে তানু। কখন থেকে মাফ চাইছি, বলছি ভুল হয়ে গেছে।তাছাড়া তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি রাফিয়ার কাছে যাই নি, সে নিজেকে সঁপে দিতে আমার কাছে এসেছিল। তাই দোষটা কিন্তু তার।আমার ভুল এটুকুই যে আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি, একটু পিছলে গিয়েছিলাম। আর তুমি এই ছোট একটা ভুলের জন্য যা মুখে আসছে তা বলে অপমান করছো । ভুলে যেও না আমি তোমার স্বামী, আমাকে সম্মান করতে শেখো।

-এই হল তোমার আসল চেহারা। আসলে তুমি আমাকে ভাল-টাল কিচ্ছু বাস না যদি বাসতে তাহলে এটাকে ছোট ভুল মনে হতো না।তোমার মতো চরিত্রহীন কাপুরুষকে স্বামী বলতে আমার আত্মসম্মানে লাগে।

আজুয়াদ রাগ দেখিয়ে বলে,
-তানু আমার ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছ; যেন আমি চুরি,ডাকাতি বা খুনের মত জঘন্য কোন অপরাধ করেছি। আমি কালেমা পড়ে বিয়ে করেছি। তাছাড়া অনেকেই দুই বিয়ে করে, আর আমাকে তো বাধ্য করা হয়েছে বিয়েটা করতে।
এই যে, আমার ভালবাসা নিয়ে তুমি প্রশ্ন করছো, এখন আমি যদি প্রশ্ন করি তুমি আমাকে কেমন ভালবাস? যে সামান্য একটা ভুল মাফ করে রাফিয়াকে মেনে নিতে পারছো না।

তাচ্ছিল্য করে হাসলো তানজিনা,
-এতক্ষণে তোমার মনের কথা বুঝতে পারলাম। তোমার রাফিয়াকে বিয়ে করার জন্য কোন আফসোস হচ্ছে না। এত নাটক শুধু আমি যাতে রাফিয়াকে মেনে নিই তাই।

কথাগুলো বলে আজুয়াদ বুঝতে পারলো এইগুলো বলা তার উচিত হয় নি।
-তানু, তুমি আবার আমাকে ভুল বুঝছো।

-আমার যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।

এই কথা বলে তানজিনা দরজা খুলে দেখলো রাফিয়া কান্নাভেজা চোখে দাঁড়িয়ে আছে।

তানজিনা রাফিয়ার দিকে এগিয়ে রাগী গলায় বলে বলে,
-এই লোকটা আমার কেউ হয় না, তুমি ভেতরে যাও। আমার ভালবাসাতো সেদিনই মরে গেছে যেদিন বিবাহিত হয়েও সে তোমাকে ছুঁয়েছিলো।

তাজিনা আর দাঁড়ায় না। দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজায় খিল দেয়।

আজুয়াদ রাফিয়াকে বাহিরে রেখেই দরজা বন্ধ করে।

বাইরে রাফিয়া দরজা ধরে বসে পড়ে।
আর কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-আমি আপনেগো মইদ্দ্যে কুনদিন আইমু না। আমারে খালি হেই(সেই) রাইতের(রাতের) লাহান(মতো) এড্ডু কাছে টাইন্যা লইন।

আজুয়াদ কথাটা শুনতে পেলো, ওর বুকের ভিতরটা একটু মোচড় দিয়ে উঠলো । সে বুঝতে পারলো না তার রাফিয়ার জন্য খারাপ লাগলো কি-না।


মধ্যে রাত। কাল বৈশাখী ঝড় উঠেছে।

রাফিয়া দরজা ধরে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

কিন্তু তানজিনার চোখে ঘুম নেই। বাতাসে জানালা খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে সেজন্য জোরে জোর আওয়াজ হচ্ছে।
তানজিনা মনে মনে ভাবছে,
-বাহিরের ঝড়তো থেমে যাবে কিন্তু যে ঝড় আমার জীবনে উঠেছে সেটা থামবে কিভাবে। কি করে মুক্তি পাবো এমন একটা বিয়ে থেকে যেখানে সতীনকাঁটা ফুটে আছে।

বাইরে প্রচন্ড বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সেই আলোর ঝলকানিতে মাথার উপর স্থির ঝুলানো বৈদ্যুতিক পাখাটার উপর তানজিনার নজর পড়ে ।

ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল।

ফজরের পর আকাশটা বেশ পরিষ্কার দেখা গেলো।ভোরের আলো কেবল ফুটছে।

এমন সময় সানজিদার চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙে গেলো।
-ও মা গো! কি সব্বনাশ অইলো গো।

-চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে