সতীনকাঁটা পর্ব ২

0
948

#সতীনকাঁটা
পর্ব-২
লেখায়ঃNosrat Monisha

-একদম ঢং করবি না আমার সামনে। আমাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করার সময় মনে ছিলো না?তোরে তো আমার খুন করতে ইচ্ছে করতেছে।
আজুয়াদ এতটা চেঁচিয়ে কথাগুলো বলছিলো যে পাশের ঘর থেকে আমজাদ খান চলে এলো।

-হইতাছেটা কি এহানে? আজু, নতুন বউয়ের উপর কেউ এমনে চিল্লায়?
ধমকের সুরে কথাটা বলে আমজাদ খান।

-আমি তো কাল থেকে চুপই ছিলাম,আব্বা।এই কালনাগিনীর সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেেন। তাও চুপ ছিলাম। কিন্তু সে এই ঘরে থাকবে না বলে দিলাম।

-এগুলাইন কি কতা? মুহে মধু নাই? আর ভুইল্যা যাইস না যা হইছে এতে তোরও বরাবর দোষ আছিলো।তোর পছন না হইলে রাফিয়া এই ঘরে থাকবো না। কিন্তু হেইডা অইবো ফিরউল্ডার পর।

একথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে আজুয়াদ,
-কিসের ফিরউল্ডা আব্বা? বিয়েটাই যখন আমি মানি না।

দাঁত কিটিমিটি করে চিৎকার করে আমজাদ খান বলে,
-এহন না মানলে কি অইবো? ঘরে বউ রাইখ্যা পিরীত করবার সময় মনে আছিলো না?তিনদিন বাদে শুক্কুরবার তোগো বৌভাতের অনুষ্ঠান। তোর লাইগ্যা বইনের কাছে হের হউর(শ্বশুর) বাড়ির মাইনসের কাছে আমারে অনেক ছোড হউন লাগছো। এহন চুপচাপ এই অনুষ্ঠানগুলা কইরা আমারে উদ্ধার কর।

একটু নরম হয়ে আজুয়াদ বলে,
-আব্বা আমি কালও বলেছি, আজকেও বলতেছি রাফিয়া যা বলেছে তার অর্ধেকই মিথ্যা কথা।

-বাকি আধা তো হাছা এইডাই অনেক।

“ঘরে বউ রাইখ্যা পিরীত করার সময় মনে আছিল না?” শ্বশুরের এই কথাটা তানজিনার কানে বিষের মত বাজতে ছিলো, আর কোন কথা তার কানে পৌঁছাতেই পারলো না। সে বুঝতে পারলো আজুয়াদের সম্মতিতেই এ বিয়েটা হয়েছে ।

নিজেকে সর্বশক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে একটু জোরে কঠিন গলায় বলে,
-বাবা, এত ঝামেলা কেন হচ্ছে তাইতো বুঝতে পারছি না।শুধু শুধু একটা ঘর আগলে থেকে আমি কি করবো?যেখানে মানুষটাকেই আগলে রাখতে পারলাম না। আমি ঐ ঘরে চলে যাচ্ছি।

তানজিনা বের হয়ে গেলো।

আজুয়াদ এবার আর তাকে আটকাতে চেষ্টা করলো না। কারণ তানজিনা যেভাবে আর যে কথা বলেছে তাতে আজুয়াদের সাহস হলো না তাকে আটকানোর।

-দেখছো নি তেজ কমে না,মাইয়্যার। কতা-বারতার লাগাম নাই। বেত্তমিজ কোনহানকার।
রেহানা বেগম এত চেঁচিয়ে কথাগুলো বলেছে যে ঘর থেকে বের হয়ে উঠানে গিয়েও সব শুনতে পাচ্ছে তানজিনা।

-মা তানুরে কিছু কইলে বাড়িতে কিন্তু আগুন লাগাইয়া দিমু।

গলার স্বর উঁচুিয়ে আমজাদ খান বলে,
-আরে আবার কি অইলো? আর আবরারের মা তুমি এত কতা কিয়ের লাইগ্যা কইতাছো? বুইড়া বয়সে কেচা(মাইর)খাইবার মন চাইছে নি?

আমজাদ খানের কথায় রেহানা খাতুনের মুখটা চুন হয়ে গেল।

-আজু, তুই খারাইয়্যা আছোছ কেন?জলদি যা গতর ধুইয়্যা ল বাজারো যাওন লাগবো। আবরাররে ফোন করছি হের আইতে আইতে বুইধবারে অইবো।তাই আমার লগে সব বাজার-আট তোরই করন লাগবো।

আজুয়াদ পুকুরে ডুব দিতে চলে গেল। আর আমজাদ খান নিজের ঘর।

ইচ্ছেমত তানজিনাকে কথা শুনাতে না পারায় গা জ্বলতে ছিলো রেহানা খাতুনের।
-শত্তুরের ঘরে তো শত্তুরইতো জন্ম নিবো। যেমুন বাপ তেমুন পোলা। আমার লগে হেরা ভালা ব্যবহার করতেই পারে না।
নাকি কান্না কেঁদে কথাগুলো বলছিলো তিনি।

তখন আফিয়া বলে,
-আম্মা ছোট ভায়ের আর আব্বার কি দোষ? সব তো হইছে ভাবীর লাইগ্যা।

মুখ বাঁকিয়ে রেহানা খাতুন বলে,
-হের কতা আর কি কমু? যবেত্তোন (যেদিন থেকে)এ বাইত আইছে আমার হাড্ডী-গোশত জ্বালাইয়্যা খাইতাছে।

এতক্ষণ রাফিয়া চোখের পানি ফেলছিলো।
-থাহুক না মাইমা(মামীমা)। তানজিনা ভাবীরে আর বইক্যেন না। দোষতো আমার আমিই তো হের সংসার ভাঙবার আইছি।
বলে আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল।

সানজিদা মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-অ্যাঁ..তুমি কান্দ কিয়ের লাইগ্যা? তানজিনা আফারে আমি ছোডোত্তে চিনি। হের পেডে পেডে যে কত্ত বড় শয়তান লুকাইয়্যা আছে হেইডা আমি জানি। হের আর হের মা’র কামই অইলো ছলাকলা কইরা বাড়ির পুরুষ মাইনসেরে বশ করা।

রেহানা খাতুন সানজিদার কথায় তাল মিলায়,
-বড় বৌমা উচিত কতা কইছে। তুই কানবি না। নিজের সোয়ামীর মন জয় কর। কিরে পারবি না।

-আফনেরও যেমুন কতা আম্মা কেন পারবো না? আমাগো রাফিয়ার যে রূপ! হেই রূপ দেইখাইতো আজুয়াদ ভাই সব ভুইল্যা যাইবো।
বলে রাফিয়ার গায়ের সাথে নিজের গা দিয়ে একটা ধাক্কা দিলো সানজিদা।

সানজিদার এমন টিটকারির বিপরীতে রাফিয়া কিছু বলতে পারলো না । শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

-অক্করে হাছা কতা কইছেন বড় ভাবী কই ছোড ভাবী আর কই আমাগো রাফিয়া। কথাটা আছিয়া বলে। তার রাজপুত্রের মতো ভাইয়ের বৌ তানজিনার মত বয়সী কালো মেয়ে এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি।

ভারাক্রান্ত গলায় রাফিয়া বলে,
-না,গো আফিয়া আফা। তানজিনা ভাবী অনেক গুণবতী।হেইলার তুলুনায় আমি কিচ্ছু না।

মুখ বাঁকায় সানজিদা,
-ভাবী কি গো রাফিয়া আফা ডাহো। হেয় অহন তোমার হত্তীন। আর তুমি অতো নরম অইয়ো না। হেরে অহনো তুমি চিনো নাই। ছুডুবেলাত্তন আমারে জ্বালাইছে। হেয় নাহি ফাশ কইরা জজ-বেরিস্টার অইবো।আমি পড়া-লেহায় এড্ডু খারাপ আছিলাম তাই কত কতা হুনতে অইছে। আমার আব্বাতো আমার চাইতে তানজিনা আফারে আদর করে।কিয়ের লাইগ্যা না হেয় গুনবতী। ভাইগ্যা বিয়া বওনের সময় কই আছিলো গুণ?পুরা বংশের মুহে চুনকালি মাহাইছিলো। এরপরেও আমার বাপে তানজিনা তানজিনা করে। পুরুষ মাইনসেরে হেরা মা-বেডী খুব বাইন্দা রাখবার পারে। সময় থাকতে নিজের সোয়ামীরে সামলাও গো রাফিয়া। নাইলে তোমার হত্তীন তোমারে এই বাড়ির বাত(ভাত) খাইবার দিবো না।

-বড় বৌ ঠিকই কইছে তোর মন পরিষ্কার তাই ঐ মাইয়্যার ছলা-কলা তুই বুঝবি না। নিজের সোয়ামীরে আঁচলের সাথে বাইন্ধা রাখবি বুঝবার পারছস নি?

এভাবেই তিনজন মিলে রাফিয়ার কানে বিষ ঢালতে থাকে তানজিনার বিরুদ্ধে।

-কি-রে আজু হুনলাম তুই নাহি আবার বিয়া করছোস?
শান বঁধানো পুকুর ঘাটে বসে দাঁতে খিলাল করতে করতে প্রশ্নটা করেছে আজুয়াদের পাশের বাড়ির মুরব্বি করিম মুন্সি। সাধারণত ই সময় খান বাড়ির পুকুরে তিনি ছাড়া আর কেউ আসে না।

আজুয়াদ কিছু বলতে পারলো না। শুধু মাথা নিচু করে সায় দিলো।

-তগো এহনকার পোলাপাইনের মতিগতি বুঝা মুশকিল। অত কিছু কইরা তো পাশের গেরামের ভুঁইয়াগো মাইয়াডারে বিয়া করছোস, অহন বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার নয়া বউ ঘরে তুলছোস? তয় কি সবাই রূপের পুজারি।একখান কতা কই, আগের বউডারে অনাদর করিস না। তরে ভরসা কইরা ঘর-দোর ছাড়ছিলো অহন হত্তীনের বাত খাওন লাগবে।ডর লাগতাছে, মাইয়াডা না আবার তগো বাড়ির মাইনসের অত্যাচার আর তর অনাদরে হারায়িয়্যা যায়।
ওজু করে করিম মুন্সি চলে গেলো। তিনি এখন খান বাড়ির মসজিদে বসে কুরআন তিলাওয়াত করবেন। তারপর একবারে জোহরের নামায পড়ে বাড়ি যাবেন। এটাই তার রোজকার নিয়ম।

পুকুরে ডুব দিতে দিতে আজুয়াদ মনে মনে ভাবতে লাগলো,
-রূপে আমি ভুলে যাবো? আমি অনাদর করবো তাও তানুকে? কখনোই না। সারাজীবন ওকে আগলে রাখবো আমি। একটা ছোট ভুলের জন্য আমি তানুকে হারাতে পারবে না। দরকার হলে রাফিয়াকে তালাক দিবো। আব্বার সাথে আজই কথা বলবো।

আজুয়াদ উঠানে পা রাখতেই আমজাদ খান বলে,
-আজু, তুই তৈয়ার হইয়া ল।হাটে যামু। বাবুর্চি ঠিক করুন লাগবো৷ কিছু সদাইও করুন লাগবো।

-আচ্ছা।
বলে আজুয়াদ ঘরে গেলো।

আজুয়াদ আলমারি খুলে দেখে তানজিনার কাপড়ের জায়গায় রাফিয়ার কাপড়। এটা দেখে তার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেলো।

এমন সময় রাফিয়া গোসল করে ঘরে এলো।

রাফিয়াকে দেখে নিজের রাগ ঝাড়তে আজুয়াদ রাফিয়ার গালে স্ব জোরে চড় দিলো। রাফিয়া মেঝেতে পড়ে গেল।

-ও মাগো। বলে রাফিয়া চিৎকার করে উঠে।

– আমার লগে ন্যাকামি করবি না তোর জিনিস যাতে আমার আলমারিতে না থাকে।
বলে রাফিয়ার সব কাপড় ছুঁড়ে তার মুখের উপর ফেলতে লাগলো।
রাফিয়ার চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আজুয়াদের ঘরে এলো৷

ঘরের এলোমেলো অবস্থা আর রাফিয়ার ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে সবাই বুঝতে পারলো কি ঘটেছে।

আমজাদ খান হুংকার দিয়ে ওঠে,
-আমার মা’য়ের গায়ে হাত তোলার তোর সাহস কেমনে হয়?

আজুয়াদ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। কারণ যাই হোক সে একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলে অন্যায় করেছে।

অবশ্য এই অন্যায়টা এর আগেও সে একদিন করেছিলো তানজিনার সাথে। আর এই মানুষগুলোই তার কাজের জন্য সেদিন তাকে বাহবা দিয়েছিলো।

কিন্তু আজ রাফিয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বদলে যায়।

আজুয়াদের চোখের সামনে সেই দিনটা ভেসে উঠে,
-আজুরে, কই গেলি রে? দেইখা যা তোর বউ কি করছে। আমার কি সব্বনাশ অইলো গো।

-কি হয়েছে আম্মা চিল্লাচ্ছো কেনো?

-হ আমি তো খালি চিল্লাই আর তোর বউ আমার লগে কাইজ্জা করে তার বেলা?

তানজিনার বিয়ের তখন তিনমাসও হয় নি।শ্বশুড় বাড়ির সবাই তার সব কাজে ভুল ধরতো।বিশেষ করে তার শ্বাশুড়ি।

তানজিনা সহ্য করতো।কিন্তু আজ এত সামান্য একটা ব্যাপারে তিনি এত হুলস্থুল বাঁধিয়েছে যে
তানজিনা জবাব দিয়ে ফেলে,
-মা আপনি শুধু শুধু ব্যাপারটা নিয়ে ঝামেলা করতেছেন। আমি হাতের কাজটা করেই আসছিলাম।

মুখ বাঁকিয়ে রেহানা খাতুন বলে,
– তোমার কাম মানে তো সারা দিন তো কিতাবের মাইধ্যে থাহা। সংসারের কামে মন নাই কিছু না।

আজুয়াদ বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-হইছেটা কি বলবা তো?
-কি আর অইবো? তোর আব্বায় এতগুলান বাজার আনছে। তোর বউরে কছিলাম গুছাইয়া রাখতে হেয় কইলো হাতের কাম সাইরা পরে আইবো। একঘন্টা হইয়া গেলো হেয় কিচ্ছু করে নাই। যাইয়া দেহি নবাবের ছেড়ি টেবিলে বইয়্যা পড়ে । মাছগুলাইন পঁইচা গেলো। এতক্ষণ কেরে আইলো না জিগাইতেই কয় এতো জরুরি হইলে আফিয়ারে কেন ডাকলাম না।

প্রতিবাদ করে তানজিনা বলে,
-মা আপনি কেন শুধু শুধু মিথ্যা বলছেন। আপনি আমাকে ডেকেছেন দশ মিনিটও হয় নাই তার মধ্যেই আমি চলে আসছি। আর আফিয়ার কথাতো আমি এমনি….

কথাটা শেষ করার আগেই আজুয়াদ তানজিনার দুই গালে ঠাস ঠাস করে চড় মেরে বসে।

তারপর প্রবল আক্রোশে বলে,
-হারামজাদি আমার আম্মারে মিথ্যাবাদী বলিস? আমার মা-বোন তোরে কাজ করে খাওয়াবে? আর তুই নবাবের বেটী পায়ের উপর পা তুলে বসে খাবি? আজকে থেকে তোর পড়ালেখা বন্ধ। আবার যদি তোরে বইয়ের সামনে বসতে দেখি তবে আমি তোর বই খাতা আগুন দিয়া পুড়িয়ে ফেলবো।
এরপরে গটগট করে বের হয়ে গিয়েছিল।
ঘটনার আকষ্মিকতায় তানজিনা বুঝতে পারছিল না, কি হচ্ছে তার সাথে। এই কি সেই আজুয়াদ য়ার হাত ধরে সব সম্পর্ক ভুলে সে ঘর ছেড়ে এসেছিলো।

[অবশ্যই পেইজটি ফলো করে, নোটিফিকেশন ফাস্ট অপশন চালু করে রাখুন। তাহলে গল্প পোস্ট হওয়া মাত্রই জেনে যাবেন]

এতসবের পরেও ছেলের শাসনে খুশি হতে পারে নি রেহানা খাতুন। তাই আমজাদ খান বাড়ি এলে বিচার দেন।
আমজাদ খানও জরুরি তলব পাঠায় ছেলে আর ছেলের বউকে।

-তেমার মায়ের কাছ থেইক্কা সব হুনলাম। বউয়ের হইয়া তোমার কিছু বলার আছে আজু?

-আব্বা, তানু একটা ভুল করে ফেলেছে।

ধমক দিয়ে আমজাদ খান বলে,
-কিয়ের ভুল। নিজের হউরির(শ্বাশুড়ির) লগে তক্ক করে, হেরে মিথ্যাবাদী কয়,এইডা কোন ভুল? না, এইডা গুনা । তাই তুই যা শাস্তি ঠিক করছোস তাই অইব। আইজকার পর ছোট বউমা লেহাপড়া করবো না।

-কিন্তু বাবা আমি তো এমনি রাগের মাথায় কথাটা বলেছিলাম।

-হেইডা আমি বুইঝাই তোগোরে ডাকছি। এই বাড়ির বাত খাওনের হইলে তোর বউয়ের পড়া ছাড়ুন লাগবো।

তানজিনা শ্বশুরের পায়ে ধরে বসে কান্না করে দেয়।
-বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে। আমারে আর একটা সুযোগ দেন। আমার পড়া বন্ধ করবেন না।একটু দয়া করেন।

আমজাদ খান তার সিদ্ধান্তে অনঢ় হয়ে বল,
-অহন সুযোগ দিলে তুমি আবার একই অন্যায় করবা।হেইডা আমি অইতে দিমু না। তাই কোন সুযোগ দেওন যাইবো না।

সেদিন তানজিনার পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির পায়ে ধরেও লাভ হয় নি।
সেদিন বাড়ির সবার কাছে অনেক প্রশংসা পেয়েছিল আজুয়াদ।

আজও একই কাজ করেছে শুধু মানুষটা বদলে যাওয়ার কারণে তিরস্কার পাচ্ছে !

আমজাদ খানের চিৎকারে হুঁশে আসে আজুয়াদ।
-কিরে কতা কছ না কেরে? এই শিক্ষা দিছি? ফুলের মতো মাইয়ার গায়ে হাত দেছ।

-ভুল হইছে আব্বা।
বলে বের হতে নিলে তাজিনার মুখোমুখি হয় আজুয়াদ।

চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সেও এসেছে। সব দেখে পুরোনো কথাগুলো মনে করছে। মাথা নিচু করে সরে গিয়ে আজুয়াদকে জায়গা দিলো।

আজুয়াদ দিকে তাকিয়ে দেখে এই কয়েক ঘন্টায় যেন ঝরে যাওয়া শুকনো ফুলের মত শুকিয়ে গেছে তানজিনা।

তানজিনার এ চেহারা সহ্য করতে পারছে না আজুয়াদের নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে তার। চোখ নামিয়ে তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

-পোলার উপর চিল্লাও কেন? নষ্টের গেড়া তো অইলো তোমার ছোড বউমা । হেয়ই আড়ালে আজুর কান ভারী করছে। নাইলে এমুন পরীর লাহান বউরে আমার পোলায় মারে? রেহানা বেগম নিজের স্বামীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে।

আমজাদ খান তানজিনার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-তোমার জইন্য যুদি আমাট ভাগ্নীর কোন অসুবিদা অয় তাইলে কিন্তু তোমারে আমি ছাইড়া দিমু না।

আমজাদ খান রেগে বের হয়ে যায়।

রেহানা বেগম চেঁচিয়ে বলতে থাকে,
-সংয়ের মত খারাইয়া আছো কেন?যাও ভালা কিছু নাস্তা বানাও। দুফুরের পরেই নতুন বৌ দেখতে সবাই আইতে শুরু করবো, তাগো সামনে তো কিছু দেওন লাগবো। আফিয়া, যাতো দৌড়াইয়া ফিরিজত্তে বরফ লইয়া আয়। আহারে গালঢা লাল হইয়া রইছে। না জানি কত জ্বলতাছে।

তানজিনা এই আদিখ্যেতাগুলো আর নিতে পারছিলো না। তাই বের হয়ে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে।
আর মনে মনে ভাবছে,
-কি কপাল আমার স্বামী সতীন নিয়ে এলো।মন খুলে একটু কাঁদতেও পারলাম না। পাড়ার লোক সতীনকে দেখতে আসবে তাদের আপ্যায়নের জন্য রান্নাও আমাকেই করতে হবে। আজ আমি এতটাই অসহায় আর নিরুপায় যে বাপের বাড়িও যেতে পারছি না। কপালে সতীনকাঁটা ফুটে সব তছনছ হয়ে গেছে।

একটা করুণ দীর্ঘঃশ্বাস্ বের হয়ে এলো তানজিনার মুখ থেকে।

-চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে