শেষ বেলা পর্ব-০৪

0
598

#আরোহী_ইসলাম
#শেষ_বেলা
#পর্ব:চার

হুর মুচকি হেসে বললো
‘ আমি চাকরি করবো যখন আপনারা আমার থেকে দূরে চলে যাবেন তখন তো আমাকে একাই জীবন পার করতে হবে তখন তো আপনি আমার যাবতীয় কিছু বহন করবেন না। আমি চাকরি করবো কিন্তু আপনার অফিসে না।’

হুরের কথায় সবাই অবাক হলো। ফারহাজ অবাক হয়ে বললো মানে? কি বলতেছো? আমার অফিস তো তোমারো।’

‘ ধরুন আপনি আমাকে ডিভোর্স দিলেন তখন তো আমার দায়িত্ব আপনি আর নিবেন না আমাকেই নিতে হবে তাই না।’
হুর বললো।

‘ আমি তোমাকে ডিভোর্স দিবো কেনো? তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা আমি চিন্তাও করি না।’
ফারহাজ বললো।

‘ রেগে যাচ্ছেন কেনো? আমি তো এমনিই বললাম।’
হুর বললো।

ফারহাজ নরম কন্ঠে বললো
‘ শুনো সবাই আমার ** এই অফিসে কালো মাল পাচার হচ্ছে । আমি জানিনা কে করছে তবে সে আমার ক্ষতি করতে তোমাদের কে কিছু করতে পারে তাই আমি যতদিন পযর্ন্ত ওই লোকটাকে ধরতে পাচ্ছি ততদিন পযর্ন্ত বাহিরে খুব কম যাবে সবাই ওকে।’

ফারহাজের কথা শুনে ফারহাজের মা বললো
‘ কি বলতেছিস তুই?

‘ আমি একদম ঠিক বলেছি আম্মু।’
ফারহাজ বললো।

ফারহাজের মা চিন্তিত সুরে বললো
‘ তুই তাড়াতাড়ি খোঁজ লাগা। তোর আব্বু তো বাহিরে আছে ওনি এইগুলো শুনলে অসুস্থ হয়ে যাবে।’

‘ তুমি আব্বুকে কিছু বলিও না।’

ফারহাজের কথায় ফারহাজের মা আচ্ছা বললো।

কিছুক্ষণ পর
হুর মন খারাপ করে রুমে বসে আছে কারন কিছুক্ষন পরেই তার মা আর ভাই চলে যাবে। হুরকে মন খারাপ করতে দেখে ফারহাজ হুরের কাছে এসে বললো মন খারাপ করে আছো কেনো? আমরা তো কিছুদিন পর তোমাদের বাড়িতে যাবো।

‘ আমি আম্মুর সাথে যাবো।’

‘ না। কিছুদিন পর আমরা যাবো তখন যাবে।’
ফারহাজ বসা থেকে উঠে বললো। ফারহাজের কথায় হুর মন খারাপটা যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। হুর চুপচাপ বসে রইলো। ফারহাজ হুরের কাছে এসে হুরের হাত ধরতে যাবে ঠিক তখন হুর বললো আমায় ছুঁবেন না আপনি। আমার অনুমতি ছাড়া আমায় ছুঁবেন না।

হুরের কথায় ফারহাজের কিছুটা খারাপ লাগলো তবুও হালকা হেসে বললো
‘ আচ্ছা তোমায় ছুঁবো না। মন খারাপ করো না তোমায় মন খারাপে মানায় না হুর পরী।’

ফারহাজের কথায় হুর চুপ করে রইলো। ফারহাজ হুরের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে চলে গেলো। হুর মনে মনে বললো
‘ আমি একটু বেশিই করতেছি নাতো। ওই ভিডিওটার কথা ওনাকে বলা উচিত ওনি তো আমায় ভালোবাসে তাহলে কিভাবে অন্য মেয়ের সাথে না আমি আজকেই ওনাকে বললো। আমি নিজের মধ্যে চেপে রেখে যদি ওনাকে কষ্ট দেয় তাহলে এতে বিপরীত হতে পারে।’
হুর এইগুলো ভাবতেছে ঠিক সে সময় ফারহাজ এসে বললো চোখ বন্ধ করো।

হুর অবাক হয়ে বললো
‘ কেনো?

‘ কাজ আছে আগে করো তো।’
ফারহাজের কথায় হুর চোখ বন্ধ করলো ফারহাজ পকেট থেকে কিটক্যাট বের করে বললো এইবার চোখ খুলো।ফারহাজের কথায় হুর চোখ খুলে অবাক হয়ে গেলো কিটক্যাট চকলেট দেখে। হুর খুশি হয়ে বললো মাই ফেবারিট চকলেট পেলেন কোথায় এতো তাড়াতাড়ি?

‘ আমি এনেছিলাম তোমার জন্য কিন্তু মনে ছিলো না দিতে তোমার মন খারাপ দেখে ভাবলাম চকলেট দেখে মন ভালো হয়ে যাবে তাই নিয়ে আসলাম।’
মুচকি হেসে বললো ফারহাজ।

হুর খুশি হয়ে বললো
‘ এতো গুলো ধন্যবাদ আপনাকে।’

ফারহাজ বললো
‘ না আমার ধন্যবাদ লাগবে না।’

‘ তাহলে কি নিবেন?
ভ্রু কুচকে বললো হুর।

‘ অন্য কিছু লাগবে দিবে?
শয়তানি হেসে বললো।

ফারহাজের কথায় হুর বোকা চোখে তাকিয়ে বললো
‘ কি নিবেন আমার কাছে তো তেমন কিছু নেই।’
ফারহাজ হুরের কানে নিজের মুখ নিয়ে বললো একটু ভালোবাসা দিবে আমায়?

হুর ফারহাজের নেশাময় কথা শুনে বললো
‘ আমি তো আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু শেষ বেলায় কি আপনাকে পাওয়া হবে ফারহাজ?

ফারহাজ হুরের হাত ধরে বললো
‘ আমি শেষ নিশ্বাস পযর্ন্ত তোমার সঙ্গে থাকবো।’

হুর অন‍্য দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো
‘ খুব করে চাওয়া কিছু হয় না।’

তারপর হুর ফারহাজ কে বললো
‘আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

‘ কি বলো?
ফারহাজ কিছুটা অবাক হয়ে বললো।

হুর বললো
‘ কিছুদিন আগে আমার মোবাইলে,, হুর বলতে যাবে ঠিক সে সময় হুরের শাশুড়ি বললো ফারহাজ মিষ্টি তোকে ডাকে।’

ফারহাজ আসতেছি বলে চলে গেলো। হুর কিছু বলতে যাবে কিন্তু কিছু একটা ভেবে থেমে গেলো।

ফারহাজ মিষ্টির কাছে এসে বললো
‘ কি হয়েছে দিদি?

‘ আমায় একটু বাড়িতে দিয়ে আয়।’

‘ আচ্ছা।’ এই বলে ফারহাজ নিচে এসে হুরের ভাইয়ের সাথে কথা বলতে লাগলো।

বেশ কিছুক্ষণ পর

” হুর সোফায় বসে আছে। এখনই তার মা চলে যাবে। হুর তার ভাইয়ার হাত ধরে বললো ভাইয়া তুমি সবার খেয়াল রেখো আর আমাকে ফোন দিও।

হুরের ভাই মুচকি হেসে বললো
‘ চিন্তা করিস না বোন। তুই নিজের যত্ন নিস। আর কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িতে আশিস।’

‘ হুম।’
হুরের ভাই ফারহাজের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ ভাইয়া তুমি আমার বোনটাকে একটু দেখে রাখিও।

‘ তুমি চিন্তা করো না।’
ফারহাজ বললো তারপর হুর তার মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তার মাকে এগিয়ে দিতে গেলো।

বিকেলে
‘ ফারহাজ রুমে বসে আছে হঠাৎ ফোনে কল বেজে উঠাই কল ধরে কানে নিতেই অপর পাশ থেকে রফিকুল বলে উঠলো স‍্যার আমি খোজ পেয়েছি।’

ফারহাজ রফিকুলের কথা শুনে বললো
‘ কি জানতে পেরেছো?

‘ স‍্যার আমাদের অফিসের এক লোক ওই কাজ করে তবে তার নাম জানতে পারিনি।’
ম‍্যানেজারের কথায় ফারহাজ রেগে মেগে বললো
‘ এই কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছো? এইটা তো জানি নতুন কোনো খবর পেলে যানাও।’

‘ আচ্ছা স‍্যার।’
রফিকুলের কথায় ফারহাজ ফোন রেখে ল‍্যাপটপ অন করে কাজ করতে লাগলো।

এদিকে
হুর বসে আছে সোফায়। রিনা এসে হুরকে বললো ভাবি আমার প্রচন্ত মায়ে ব‍্যাথা করতেছে একটু টিপে দাও।’

হুর রিনার কথায় বললো আচ্ছা তোমার পা দেও।
তারপর রিনা হুরের কাছে পা দিতেই হুরের জোরে জোরে পা মালিশ করতে লাগলো। রিনা চিৎকার করে বললো ওরে মা আমার পা ভেঙে দিলে তুমি আস্তে মালিশ করো।’

হুর রিনার পা আরো জোরে মালিশ করতে করতে বললো
‘ ননদি তোমার না আমাকে দিয়ে পা টিপানোর অনেক সখ এখন কেমন লাগতেছে বলেই আরো জোরে দিলো। রিনা তাড়াতাড়ি করে পা সরিয়ে ন‍্যাকা কন্ঠে ফারহাজকে ডেকে বললো ভাইয়া গো ওও ভাবি আমার পা ভেঙে দিলো।’

রিনার কন্ঠে রিনার মা সহ সবাই নিচে আসলো। ফারহাজ নিচে এসে বললো কি হয়েছে রিনা?

‘ তোমার বউকে বলেছি পা টিপে দিতে তোমার বঊ আমার পা অনেক জোরে মালিশ করে দিচ্ছে জল্লাদ বউ একটা এনেছো।’
কেদেঁ বললো রিনা। হুর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহাজ হুরের দিকে একবার তাকিয়ে রিনার কথা শুনে ফারহাজ ঠা’স করে রিনার মুখে থা’প্প’ড় মে’রে বললো,,,,

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে