শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব-২০+২১

0
504

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
২০

-আসিফ একদিন একটা কাগজ ইলহামের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে তাশরিফের থেকে সাইন করে আনতে। এটাই ছিলো সে এগ্রিমেন্টের কপি। সেদিন ইলহাম রাজি হয়না এটা করতে। তাশরিফকে সে কোনো ভাবে ঠকাতে পারবে না আর না তার কোনো ক্ষতি হতে দেবে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসিফের জেদের কাছে হেরে যায় ইলহাম। বাধ্য হয় তাশরিফকে দিয়ে এগ্রিমেন্টে সাইন করাতে। তাশরিফ,ইলহামকে খুবই ভালোবাসতো আর বিশ্বাস করতো, তাই ইলহাম কিসের কাগজে সাইন নিচ্ছে কেনো নিচ্ছে একবারও জিজ্ঞেস করেনি। ইলহাম সেদিন বড় আঘাত পেয়েছিলো তাশরিফের এমন অন্ধবিশ্বাস দেখে তার প্রতি। ইচ্ছে করছিলো তাশরিফকে সব কিছু বলে দিতে৷ কিন্তু ইমরানের কথা ভেবে চুপ করে সব সহ্য করে যায়।

— এইভাবে কিছুদিন যায়। ইলহাম ভাবে যা হওয়ার হবে আর আসিফের কথা শুনবে না। তাশরিফকে উপেক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব না। তাশরিফ আর তার মধ্যে দুরত্ব হওয়ার আগেই এর সমাধান করতে হবে। তাই ইলহাম, আসিফকে জানায় সে আর তার কথা মতো চলবে না৷ যদি ইমরানকে না ছাড়ে তাহলে পুলিশের কাছে যাবে। সব বলে দেবে সবাইকে। কথাটা শুনে আসিফ বিকট হাসি দেয়। কারণ আসিফ যে এইসব করেছে কীভাবে প্রমাণ করবে ইলহাম। আসিফ কোনো ক্লু বা প্রমাণ রাখেনি তার কাজে৷ উল্টো ইলহামকে ফাঁসানোর রাস্তা তৈরি করে রেখেছে। আসিফ যে নাম্বার থেকে ইলহামের সাথে যোগাযোগ করে সে নাম্বার অন্যজনের নামে আছে। আর সে ব্যক্তি মৃ’ত এখন। চাইলেও আসিফকে ধরতে পারবে না। আসিফ ইলহামকে কয়টা ছবি দেখায়৷ যেখানে ইলহাম আসিফের হাত ধরে আছে, কাধে মাথা রেখে আছে। এইসবই যে নিখুঁত হাতে এডিট করা বুঝতে বাকি নেই ইলহামের। কিন্তু কেউ দেখলে সেটা বিশ্বাস করবে না সহজে তাছাড়া তাশরিফকে দিয়ে সাইন করা এগ্রিমেন্ট। তাশরিফের সামনে এইসব একসাথে হলে তাশরিফ কখনোই ইলহামকে বিশ্বাস করবে না। অন্ধকারে তলিয়ে যায় ইলহাম। একের পর এক জালে আটকে যায় আসিফের কাছে। ৷
— এদিকে তাশরিফ দিনের পর দিন অন্য ইলহামের সাক্ষাৎ পাচ্ছে। যে মেয়েটাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো সে মেয়েটা এখন তার সামনে থাকে না৷ তাশরিফ স্পর্শ করলে বিরক্ত প্রকাশ করে। সব সময় দূরে দুরে থাকার চেষ্টা করে তাশরিফের থেকে। যাতে তাশরিফ ভেঙে পড়ে আস্তে আস্তে। তাশরিফ ইলহামকে সন্দেহ করা শুরু করে। ইলহামের ঘনঘন ফোন আসা, টেক্সট আসা সব কিছুই তাশরিফের নজরে পড়ে। তাশরিফ নিজের কাজে ফোকাস করতে পারে না। রেকর্ডিংয়ের ডেট একের পর এক চেঞ্জ করেও নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেনা সে। ইলহাম বুঝতে পারতো তাশরিফের অবস্থা তারপরও নিরুপায় সবাই তারা।
— তাশরিফ আর কিছু না ভেবে ইলহামকে জিজ্ঞেস করে কেনো এমন করছে? কি হ’য়েছে তার? কেনো এমন ভাবে এভোয়েড করছে তাকে৷ ইলহাম কোনো জবাব দেয়নি৷ নিশ্চুপ ছিলো। যেটা তাশরিফের ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় আরও। তাদের মধ্যে ঝামেলা হয় ভীষণ।

— এত কিছু ইলহামের পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিল না আর। তাই সে ভাবে হয় আসিফের থেকে মুক্তি নেবে নয়তো নিজেকে শেষ করে দেবে। কিন্তু এত কিছু করেও কি ইমরানকে ফিরে পাবে? সব ভাবনায় ডুবে ম:রে ইলহাম।

— ইলহাম আসিফের কাছে গিয়ে হাত জোড় করে ভিক্ষা চাই ইমরানকে৷ এইসব কিছু থেকে মুক্তি চাই৷ এইভাবে আর চলতে পারছে না সে। অবশেষে আসিফ জানায় ইলহাম আর ইমরান দুজনকেই মুক্তি দেবে সে তবে! আসিফের সাথে একদিন সময় কাটাতে হবে ইলহামকে। তাকে একদিনের জন্য খুশি করতে হবে। তাহলে আসিফ আর কখনো ইলহামকে বিরক্ত করবে না৷ তাদের মধ্যে আসবে না৷ কথাটা শোনামাত্র ইলহামের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়।

তাশরিফ ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের স্পর্শ থাকবে তার শরীরে এটা ইলহাম কখনোই মেনে নিতে পারবে না৷ বেঁচে থেকেও ম’রে যাবে সে। তাই ইলহাম বলে সে পারবে না। কিন্তু আসিফ ইলহামকে আবার ব্ল্যাকমেইল করে। বলে ছবি আর এগ্রিমেন্টের কপি তাশরিফের কাছে দেবে৷ এরপর বলবে তাদের গোপন সম্পর্ক চলছে। যেহেতু তাশরিফ এখন ইলহামকে সন্দেহ করতে শুরু করেছে সেহেতু এইসব দেখে তাশরিফ দ্বিতীয়বার কিছু ভাববে না ইলহামকে ছাড়তে। তাই ইলহাম কি তাশরিফের সাথে থাকতে চাই নাকি তাশরিফের থেকে দূরে সরে যেতে চাই ভেবে আসিফকে জানাতে৷ আবার আছে ইমরান। আসিফের কাজ হাসিল না হওয়া পর্যন্ত ইমরানকে ছাড়বে না বলেছে।

— ইলহাম সব কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় সে আসিফের কথায় রাজি হবে৷ তবে তার কথা শোনার পর যে ইমরানকে ছেড়ে দেবে তার কি গ্যারান্টি আছে?

ইলহাম এই প্রশ্ন রাখলে আসিফ বলে সে ইমরান কে ছেড়ে দেবে তার কাজ হয়ে গেলে৷ কারণ এরপর তো তার আর ইমরানকে দরকার হবে না। আসিফ তো ইলহামকে পাওয়ার জন্য আরেক খেলা সাজায়। ইলহাম তার কাছে সপে দিলে সেটা ভিডিও করে তাশরিফকে দেখাবে৷ তারপর তাশরিফ এমনিতেই ইলহামকে ছেড়ে দেবে৷ তখন ইলহাম শুধু আসিফের হয়ে যাবে আবার এগ্রিমেন্টের কপি দেখিয়ে তাশরিফকে চিরদিনের মতো গানের জগৎ থেকে বিতাড়িত করবে৷ সব কিছু নিখুঁত প্ল্যান করে রাখে আসিফ।

– এরপর ইলহামকে আসার সময় বলে দেয় আসিফ৷ ইলহাম যেনো মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসে তার কাছে। সেদিন তাশরিফ গান রেকর্ডিং এর জন্য স্টুডিও যায়। দীর্ঘদিন ঘোরানোর পর সেদিন সে গান রেকর্ড করতে যাই কারণ তার জন্য অনেকেরই ক্ষতি হচ্ছিলো। ইলহাম চেয়েছিলো তাশরিফের সাথে একটু কথা বলতে তার বুকে ভালোবেসে আবারও একটু মাথা রাখতে৷ কিন্তু সাহস করে বলতে পারেনি আবার তাশরিফও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গিয়েছিলো। ইলহাম তার খালার কাছে যায়। খালাকে বলে যদি তার কিছু হয়ে যায় তাহলে যেনো ইমরানকে দেখে রাখে আর তাশরিফ যেনো তাকে মাফ করে দেয়। ইলহামের উদ্ভট কথার মানে তার খালা বুঝতে পারেনা৷ তিনি অস্থির হয়ে উঠেন ইলহামের কথায়৷ ইলহাম তাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে শান্ত করে আর এটা বলে যে আজ ইমরানকে ফিরে পাবে তারা। এরপর ইলহাম সোজা আসিফের কাছে যায়।

– তাশরিফ স্টুডিও থেকে ফিরে আসে সেদিন। কোনো একটা সমস্যার জন্য সেদিন তার গান রেকর্ড হয়না৷ বাড়ি এসে ইলহামকে পায়না সে। সারা বাড়ি খুঁজে যখন ইলহামকে পাইনা তখন ফোন দেয় ইলহামের নাম্বারে। ইলহাম আগে থেকেই ফোন সুইচ অফ করে রেখেছিলো। তাশরিফ টেবিলের উপর একটা চিরকুট পাই৷ ইলহাম রেখে গেছে সেটা।

” আমাকে মাফ করে দিও পারলে৷ জানি অনেক অভিযোগ আমার প্রতি তোমার কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম এখনো আছি। শুধু একটা কথা বলতে চাই, আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি ইমরানের দায়িত্ব নিও৷ ওকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিও। আমি ছাড়া ওর আর খালার কেউ নেই পৃথিবীতে। তাই ওদের তুমি দেখো প্লিজ৷ হয়তো খুব শীগ্রই সবটা সামনে আসবে তোমার আর সেদিন বুঝতে পারবে আমি ভুল ছিলাম না আর না অন্য কারো ছিলাম৷ আমি শুধু তোমার ছিলাম আর থাকবো। আমার দুঃখ কি জানো! এত ভালোবাসা পেয়েও আমি ধরে রাখতে পারলাম না সেটা। পারলাম না সারাজীবন তোমার সাথে কাটাতে। আমাকে ক্ষমা করে দিও আর নিজেকে সামলে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করো।

ইতি-
অসহায় একজন বোন।

এই চিরকুটের মানে বুঝতে পারে না তাশরিফ। ইলহাম কেনো এইসব বলছে কোথায় গেছে বুঝতে পারে না৷ পাগল হয়ে উঠে সে। ছুটে যায় খালার কাছে। তাকে গিয়ে সবটা জানালে সে আর দ্বিধা না করে সবটা বলে দেয়। ইলহাম তার খালাকে বলেছিলো আসিফ তাকে নিয়ে কোথায় যায় কোথায় দেখা করে। আসিফের এই গেস্ট হাউজের ঠিকানা তাশরিফও জানে। সব শোনার পর তাশরিফ ছুটে যায় সেখানে। যেকোনো ভাবে ইমরান আর ইলহামকে বাঁচাতে হবে তাকে৷

— ইলহামের সামনে বসে আছে আসিফ৷ বেশ খোশমেজাজে আছে সে। ইলহাম মুর্তির ন্যায় বসে৷

— আমার ভাই কোথায়? ইলহামের কথায় ইমরান একজনকে কল করলে সে নিয়ে আসে ইমরানকে। বোনকে পেয়ে ইমরাম ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। ইলহামের বুকটা শীতল হয়ে যায় ভাইকে দেখে।

— আসিফ বলে ইমরান বাইরে থাকবে৷ কাজ শেষ হলে ইলহাম ইমরানকে নিয়ে চলে যেতে পারবে। কিন্তু ইলহাম বলে আগে ইমরানকে যেতে দিতে। তারপর তার যা করার করবে ইলহাম বাঁধা দেবে না৷ আসিফ তাই মেনে নেয়। একজন লোককে বলে ইমরানকে তার খালার কাছে দিয়ে আসতে। ইমরানকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে আসিফ ইলহামের কাছে যেতে শুরু করে। অনেক প্রতিক্ষার পর এই দিনটা পেয়েছে সে। আর যেনো অপেক্ষা করতে পারছে না৷ কিন্তু ইলহাম নিজের জীবন দেবে তাও বেঁচে থাকতে সম্মান খোয়া দেবে না কারো কাছে। তাই সামনে ছিলো ফল কাটা ছুড়ি। সেটা হাতে তুলে নেয় ইলহাম। এটা দেখে আসিফ ঘাবড়ে যায় অনেক। ইলহাম এমন কিছু করবে ভাবেনি। কিন্তু ইলহাম নিজেকে শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়েছিলো আজ৷ কিভাবে করবে জানতো না৷ কিন্তু আসিফের থেকে নিজেকে রক্ষা করবে যেকোনো উপায়ে এটা সে প্রতিজ্ঞা করে নিজের কাছে।

— তুমি কি ভেবেছো এইভাবে ভয় দেখিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে আমার কাছ থেকে। তোমার ভাই এখনো আমার লোকের কাছে আছে ভুলে যেওনা৷ ফেলে দাও ওইটা। আসিফের কথায় ইলহাম মুচকি হেসে বলে আমাকে আর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই আসিফ, আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। জানি তোমাকে কিছু করতে পারবো না কিন্তু আমি তো আমার জন্য কিছু করতেই পারি তাইনা৷ জীবনে একজনকে ভালোবেসেছি আর তাকেই স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি৷ একজন পুরুষেরই স্পর্শ আছে আমার শরীর জুড়ে আর আমি তার স্পর্শে সন্তুষ্ট। তাই কোনো নোংরা স্পর্শ নিয়ে আমি বাঁচতে চাইনা৷ আমি আমার স্বামীর পবিত্র ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিতে চাই৷ তোমার মতো নোংরা মানুষের কাছে নিজের সম্মান বিলিয়ে দেওয়ার চেয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়া অনেক ভালো কথাটা বলে ইলহাম নিজের শরীরে আঘাত করে ছুড়িটা দিয়ে। হতভম্ব হয়ে যায় আসিফ৷ এক মুহুর্তে সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। ইলহামের পেট থেকে র:ক্ত ঝড়ছে অঝোরে। ইলহাম ছুড়িটা তার পেটে ঢুকিয়েছে। তখনই তাশরিফের কন্ঠস্বর শোনা যায়। চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে উপরে আসছে সে। তাশরিফের আসার ভাঁজ পেয়ে আসিফ বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

– তাশরিফ ঘরে এসে দেখে ইলহাম র/ক্তাক্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে। প্রচন্ড র/ক্তক্ষরণ হচ্ছে পেট থেকে। ছুড়িটা এখনো তার পেটের মধ্যে আছে। তাশরিফ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ইলহামের চোখ মুখ জুড়ে হাসির রেখা তাশরিফ কে দেখে। তার প্রিয় মানুষের সাথে শেষ দেখা করতে পেরে অনেক শান্তি লাগছে তার।
তাশরিফ ছুটে যায় ইলহামের কাছে। ইলহামের মাথাটা তাশরিফ কোলের উপর নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

— আমাকে মাফ করো তাশরিফ। আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারিনি৷ ইমরানকে বাঁচাতে আমাকে এইসব করতে হয়েছিলো৷ তুমি প্লিজ আমার ভাইকে বাঁচিও। ওকে সব সময় আগলে রেখো। কখনো আমার অভাব বুঝতে দেবে না৷ সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে কথা দাও। ইলহাম তাশরিফের হাত ধরে কথাগুলো বলে। তাশরিফ কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ পাগলপারা হয়ে উঠে ভালোবাসার মানুষের এমন করুণ পরিনতি দেখে।

— তোমার কিছু হবে না ইলহাম। আমি তোমাকে বাঁচাবো। তুমি থাকবে আমার সাথে, ইমরান থাকবে৷ আমি কারো ক্ষতি হতে দেবো না৷ হসপিটাল যেতে হবে ইলহাম। চলো আমরা হসপিটাল যাই। তাশরিফ পাগলের মতো করতে থাকে৷ ইলহামের পেট থেকে ছুড়িটা টেনে বের করলে ফিরনি দিয়ে র/ক্ত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। কিছুটা তাশরিফের গায়ে হাতে। কিছুক্ষণের মধ্যে ইলহাম প্রাণত্যাগ করে। তখনই আসে আসিফ।

– এটা তুই কি করলি তাশরিফ! মে/রে ফেললি ইলহামকে। তাশরিফ রাগী চোখে তাকায় আসিফের দিকে। ছুড়িটা নিয়ে তেড়ে যায় আসিফের দিকে। আসিফের লোক এসে তাশরিফকে ধরে। ইমরানকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে আসিফ। তার খেলার ধরণ বদলে ফেলেছে সে। ইমরানকে গুটি করে তাশরিফকে শেষ করার খেলায় মেতে উঠে এবার। আগে থেকে ভিডিও করছিলো আসিফ৷ ইলহামের সাথে কাটানো মুহুর্তের ভিডিও ধারণ করে তাশরিফকে দেখাতে চেয়েছিলো এখন সেটা ইলহামের খুনের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এরপর পুলিশ আসে তাশরিফকে ধরে নিয়ে যায়। ছুড়িতে তাশরিফ আর ইলহামের হাতের ছাপ। ভিডিও থেকে ক্লিপ কেটে সেগুলোর ছবি পুলিশের কাছে দেয় আসিফ। তাশরিফ ইলহামের পেট থেকে ছুড়ি বের করছে এটা দেখে সবাই ধরে নেয় তাশরিফ খু’নি। এদিকে ইমরানকে সরিয়ে দেয় আবারও৷ এরপর তাশরিফকে বলে সমস্ত দোষ নিজের করে নিতে৷ নাহলে ইমরানকে মে;রে ফেলবে৷ তাশরিফ যেহেতু ইলহামকে কথা দিয়েছে ইমরানের কিছু হতে দেবে না তাই সে সব দোষ নিজের করে নেয় আর তাশরিফকে ফাঁসাতে যা যা করনীয় আসিফ সব করে।

– আসিফের কথাগুলো শুনে ছায়ার রাগ হয় ভীষণ। ইচ্ছে করছে এখুনি শেষ করে দিতে আসিফকে। একটা মানুষ কতটা জঘন্য হলে এমন কাজ করতে পারে ভেবে পাচ্ছে না।

– আচ্ছা ইমরান কোথায়? ছায়ার প্রশ্নে আসিফ হো হো করে হেসে উঠে। ছায়া এতে ঘাবড়ে গিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়৷

— চলবে….

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#আলো_ইসলাম
২১

“ইমরান কোথায় আছে এখন? ছায়ার প্রশ্নে আসিফ হো হো করে হেসে উঠে। ছায়া ঘাবড়ে যায় আসিফের হাসিতে। আসিফ কি হুসে ফিরে এসেছে কোনোভাবে নাকি তার সাথে আবারও অভিনয় করছে সবটা?
কি হলো হাসছো কেনো? ছায়া বলে বিস্মিত কন্ঠে।

তাশরিফ অনেক বড় ষ্টুপিড একটা! ইমরানকে ওর নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে নিয়ে বেড়ায় তাও বুঝতে পারেনা। তাশরিফের আশেপাশেই ইমরানকে রাখি কিন্তু তাশরিফ তারপরও নাগাল পাইনা ইমরানের। অনেক চেষ্টা করেছে বেচারা ইমরানকে পেতে কিন্তু পারিনি। ও যতবার ইমরানের খোঁজ পেয়েছে আমি ঠিক ততবারই ইমরানকে সরিয়ে দিয়েছি৷ কথাগুলো বলে আবারও হাসে আসিফ। এদিকে ছায়া দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। ছুটির ইচ্ছে করছে আসিফকে পায়ের তলায় পিষে মারতে।

– তবে ইমরান ছেলেটা বিরক্তিকর। সব সময় ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে৷ মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে গলা টিপে দম’টাই বন্ধ করে দিই৷ কিন্তু না! ইমরান যে আমার তাসের ঘরের মুল্যবান সম্পদ। তাই ওকে সহ্য করি। কাল তাশরিফের ফাঁ’সি হয়ে গেলে ওকে মুক্তি দিয়ে দেবো৷
– ছায়া বিরক্ত হয় আসিফের কথায়৷ এত কথা কে বলতে বলছে তাকে৷ তাদের তো দরকার ইমরান কে।।
– বলো না ইমরান কোথায় আসিফের হাত ছায়া মুঠোয় নিয়ে বলে। আসিফ মাদক চাহনি রেখে বলে আই নিড ইউ ছায়া ডার্লিং।

– অবশ্যই! তুমি কিন্তু আমার কথায় পাত্তা দিচ্ছো না৷ এতে আমি রাগ করছি এবার। গাল ফুলিয়ে বলে ছায়া।

– আমি তোমাকে পাত্তা দিচ্ছি না৷ ছি ছি জানু এমন টা বলতে নেই৷ বলো না কি বলবে? আসিফের কথায় ছায়া আবারও বিরক্ত নিয়ে বলে ইমরান কোথায়?

– ইমরান সে তো আছে ওই তাশরিফের বাড়ির আশেপাশেই। এক কথায় বলে দেয় আসিফ।

– তাশরিফ ভাইয়ার বাড়ির আশেপাশে মানে? হকচকিয়ে উঠে বলে ছায়া।

— এখন কোথায় আছে ইমরান বলো না! আদুরে কন্ঠে বলে ছায়া। আসিফ ছায়ার দিকে স্তম্ভিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছায়া ভ্রু কুচকে তাকায় এতে। আসিফ ছায়াকে ইশারা করে ডেকে কানের পাশে মুখ নিয়ে বলে ইমরানকে আমি একটা গোডাউন ঘরে আটকে রেখেছি। তাশরিফের বাড়ির মোড়ের দিকে একটা বড় গোডাউন আছে। ওইখানে আমার লোকেরা ইমরানকে দেখাশোনা করছে আপাতত। কথাটা শেষ হতেই ছুটি উঠে দাঁড়ায়।

– মোড়ের মাথায় গোডাউন? তার মানে! আবির উঠে ব্যস্ত কন্ঠে বলে রোহান তুমি এদিক সামলাও আমি যাচ্ছি। তাশরিফকে সবটা জানিয়ে ইমরানকে উদ্ধার করতে হবে। তবে একা গেলে হবে না৷ সাথে পুলিশও লাগবে।

– ওকে তুমি যাও আমি এদিকটা দেখছি রোহান বলে আবিরকে আশ্বস্ত করে। এদিকে ছুটি রেগে বেরিয়ে যায় আসিফের ঘরের দিকে।
– ছুটি দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো রোহানও ছুটির পিছু পিছু যায়।

– ইমরান, তাশরিফ এদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে৷ আর ভালো লাগছে না। এই একটা নাম আমার জীবনের কাটা৷ আজ এমন সুন্দর মুহূর্তে এই নামটা নিয়ে মুহূর্ত টা নষ্ট করতে চাইনা। এবার কাছে এসো ছায়া। আসিফ ছায়াকে ধরবে তখনই ছায়া ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আসিফকে। আসিফ নিজেকে সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়। তখনই আসে ছুটি। ছুটির পায়ের কাছে পড়ে আসিফ।

– ক্রোধান্ধ ছুটি, চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে যেনো। দাঁত মুখ এটে আসিফের কলার ধরে তুলে৷ আসিফ ড্রাংক থাকায় টলে বেড়ায়। চোখেও ঝাপসা দেখছে সে।
– মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে খুব ভালো লাগে তাইনা৷ মেয়েরা হাতের ময়লা তোর? যাকে ভালো লাগবে তাকেই চাই তোর তাই না৷ আজ বোঝাবো মেয়েরা কি জিনিস! ছুটি সর্বস্ব শক্তি দিয়ে চ’ড় মা’রে আসিফকে৷ আসিফ ছিটকে বিছানায় পড়ে । রোহান পেছনে দাঁড়িয়ে। ছায়াও রেগে আসিফকে দাঁড় করায় আবার।
– ভালোবাসা চাই না তোর! দেখ এবার কেমন ভালোবাসা দিই কথাটা বলে ছায়া আসিফের পায়ে লাথি দেয়, আসিফ হুড়মুড়িয়ে নিচে পড়ে। টেবিলের কোণায় লেগে কপাল কেটে যায় একটু। ব্যথায় আহ করে উঠে সে।

— ছুটি কি করছো শান্ত হও! ইমরানকে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের একশন নেওয়া ঠিক হবে না। রোহান বলে উত্তেজিত কন্ঠে।
– আবির আর তাশরিফ ভাইয়া ইমরানকে ঠিক খুঁজে নেবে আমার বিশ্বাস। কিন্তু এই জা’নো’য়ার’কে আজ ছেড়ে দিলে আমি শান্তি পাবো না কোনো দিন। নিজ হাতে শাস্তি দেবো ওকে আমি আজ ছুটি ক্রোধান্বিত হয়ে এদিক ওদিক তাকায়। হাত দিয়ে মে:রেও যেনো সাধ মিটবে না তার।

– তেমন কিছু দৃষ্টিগোচর না হওয়াতে ছায়া একটা ফুলদানি তুলে নেয় হাতে৷ যেটা কাঠ দিয়ে তৈরি। বেশ ভারী আর মজবুত ছিলো।

– আপাই কি করছিস? এটা দিয়ে মা’রলে ম’রে যাবে তো? ঘাবড়ে গিয়ে বলে ছায়া।
– আমি ও এটাই চাই৷ ওর মতো কু:ত্তার বেঁচে থাকার অধিকার নাই। এদিকে আসিফ যেনো কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে। ব্যথায় টনটন করছে কপাল। আবার ড্রিংক করার ফলে শরীরে শক্তি নাই।

— ছুটি ফুলদানিটা নিয়ে আসিফের বাহুতে আঘাত করে। আসিফ আর্তনাদ করে উঠে। এবার মাথায় আঘাত করতে যাবে রোহান ছুটিকে ধরে।
– ছুটি প্লিজ আইন নিজের হাতে তুলে নিওনা। ওর শাস্তি আদালত দেবে কাল। আর এমন শাস্তি হবে যে ও সারাজীবন মনে রাখবে৷ আমি সে ব্যবস্থা করবো চিন্তা করো না।

– আপাই শান্ত হো তুই। রোহান ভাইয়া ঠিকই বলেছে। ছায়া বলে মলিন কন্ঠে।
– ভেতরে আ’গুন জ্বলছে৷ কতটা জঘন্য আর বিবেকহীন হলে মানুষ এমন হয় সেটাই ভাবছি। কোনো প’শুর সাথে এই জা:নো”য়ার’টার তুলনা করলেও সে পশুর অপমান করা হবে।

– আমাদের এখন যেতে হবে এখানে থেকে। সব কিছু রেডি করতে হবে রাতের মধ্যে। কাল সকালে কোর্টে যেতে হবে মনে আসে নিশ্চয়। ও এখানে থাক। সকালে পুলিশ এসে আদর করে নিয়ে যাবে৷ রোহান বলে।

– আসিফের জ্ঞান নাই আপাতত। মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। রোহান ক্যামেরাটা সহ সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

– আবির এসে তাশরিফকে সবটা জানালে তাশরিফ পুলিশের সাহায্য নিয়ে ইমরানকে উদ্ধার করে। আসিফের লোককে এরেস্ট করে নিয়ে যায় পুলিশ৷ এদিকে আসিফ কিছুই জানে না এইসবের। তার জন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে দিনের আলো ফোটার সাথে সাথে বুঝবে।

— সূর্যদ্বয়ের সাথে সাথে নতুন দিনের সূচনা হবে তাশরিফের৷ এই প্রত্যাশায় অপেক্ষিত চার’টা প্রাণ। সকাল হতেই তাশরিফ ফোন দেয় আসিফকে। আসিফ এখনো একই ভাবে মেঝেতে পড়ে আছে। রোহানরা যাওয়ার আগে ওয়েটারকে বলে যায় আসিফের উপর নজর রাখতে। কোনো সমস্যা হলে তাদের জানাতে।

– ফোন বাজায় আসিফের ঘুমভাব কেটে যায়। শরীর সহ মাথায় অনেক যন্ত্রণা করতে থাকে। চোখ মেলে তাকাতেও যেনো একরাশ বেদনা। অনবরত ফোন বেজে যাচ্ছে। বিছানার উপর ফোন টা আছে। আসিফ টেবিল ধরে উঠে বসে মাথা চেপে ধরে। নিজের অবস্থা দেখে নিজেই চমকে উঠে ভুত দেখার মতো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে ছাড়া কেউ নেই। তড়িঘড়ি ফোন হাতে নিয়ে দেখে তাশরিফ কল করেছে। আজ তো কোর্টের দিন আছে সেখানে যেতে হবে৷ ইমরানকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া ছায়া কোথায়? এইভাবে মেঝেতে পড়ে আবার শরীরের এই হাল৷ আসিফ অনেক গুলো চিন্তা নিয়ে ফোন রিসিভ করে।

Good Morning বন্ধু! তাশরিফের হাস্যজ্বল কন্ঠ। আসিফ ভ্রু কুচকে বলে তুই?
— শরীর কেমন আছে বন্ধু? নিশ্চয় সুন্দর যন্ত্রণা উপভোগ করছিস এই মুহুর্তে। বাই দ্যা ওয়ে ঘুম তো ঠিকঠাক দিয়েছিস আজ তাই না? তাশরিফের কথার আগাগোড়া বোধগম্য নয় আসিফের।

— কি বলতে চাইছিস? রেগে বলে আসিফ।
– তেমন কিছু না৷ শুধু এটা বলতে ফোন দিয়েছি যে,রাতে বিশেষ আপ্যায়ন করার পর তোর জন্য সুন্দর একটা ঘুমের ব্যবস্থা করেছিলাম৷ কারণ এটাই তোর জীবনের শেষ ঘুম হবে কি-না! আই মিন সুখের শেষ ঘুম৷ এরপর যতগুলো রাত পার করবি তুই সবগুলো যন্ত্রণা, কষ্ট ব্যথা নিয়ে। যেমন আমি পার করেছি। রাগী কন্ঠে বলে তাশরিফ।

এদিকে আসিফ হতভম্ব তাশরিফের কথায়। অন্য রকম সুর পাওয়া যাচ্ছে আজ তাশরিফের কন্ঠে।

তুই অমানুষ হতে পারিস কিন্তু আমি তো তাই না। তাছাড়া খুব ভালো বন্ধু তুই আমার তাই ভাবলাম তোকে নরকে দেওয়ার আগে শান্তির ঘুম দেওয়ার ব্যবস্থা করি৷ তাই কাল ছায়াকে পাঠিয়েছিলাম তোর সাথে প্রেমলীলা চালাতে। তবে আর যাই বলিস চাই ছায়া কিন্তু একটা এওয়ার্ড ডিজার্ভ করে তার অভিনয়ের জন্য। তোর সাথে একদম নিখুঁত অভিনয় চালিয়ে গেছে কাল, তাই তো তোর মতো রাঘব বো’য়ালও ঘায়েল তাতে।

– এতখনে আসিফ বুঝতে পারে তার সাথে বড় গেম করা হয়েছে কাল। আসিফ এত বড় বোকামি কিভাবে করলো ভেবেই নিজের মাথা নিজের ফাটাতে ইচ্ছে করছে।
– অনেক কথা হলো এবার রাখি, কোর্টে দেখা হবে আমাদের তবে অবশ্যই আজ জায়গা পরিবর্তন হবে। তোকে নেওয়ার জন্য তোর বাপ দাঁড়িয়ে আছে রুমের সামনে। মানে মানে চলে আয় কথাটা বলে তাশরিফ ফোন কেটে দেয়। আসিফ তো হকচকিয়ে উঠে বাইরে আসবে তখনই দেখে পুলিশ এসে হাজির। তাশরিফরা সব প্রমাণ তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। যার জন্য আসিফকে তারা আদালতে নেওয়ার জন্য এসেছে৷ পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যায় আসিফ। আপনারা এখানে?

– আমাদের সাথে চলুন গম্ভীর কণ্ঠে বলে একজন পুলিশ। আপনাদের সাথে যাবো মানে? আসিফ বলে কৌতুহল নিয়ে।

– মানেটা আদালতে গেলে বুঝবেন। জীবনের বাকি মানে জেলে গেলে ক্লিয়ার হয়ে যাবে চলুন তাড়াতাড়ি।

– আজব! কি করেছি আমি। এইভাবে নিয়ে যেতে পারেন না আমায়৷ আমাকে চেনেন না৷ আপনাদের বিপদ হয়ে যাবে বলছি। আসিফ বলে রেগে।

– আগে নিজের বিপদ কাটিয়ে উঠুন তারপর আমাদের কথা ভাববেন৷ এই ওকে নিয়ে এসো টানতে টানতে। এরপর আসিফকে নিয়ে যায় ওরা। আসিফ কিছু করার সুযোগ টাই পাইনা।

– সমস্ত প্রমাণ আসিফের বিরুদ্ধে। নিজ মুখে স্বীকৃতি, ইমরানের সাক্ষ্য সব কিছু মিলিয়ে আসিফ ফেঁসে যায় ভালো ভাবেই। তাশরিফ মুক্তি পাই স্ব-সম্মানে। যে দোষের বোঝা এতদিন বয়ে বেড়াতে ছিলো সে, আজ তার থেকে মুক্তি মেললো। এর জন্য সে রোহান,আবির ছায়া আর ছুটির উপর কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে ছুটি, যার আত্মবিশ্বাস আর প্রচেষ্টায় এতকিছু সম্ভব হয়। ছায়ার হাত ধরে সত্যিটা সামনে আসা।

আসিফের ক্যারিয়ার, ওর নাম জোশ এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়। এতদিন যারা তাশরিফকে ছিছি করতো। ঘৃণার চোখে দেখতো এখন সেটা আসিফের উপর বর্তায়। সবাই ক্ষিপ্ত হয় আসিফের উপর। এক চেটিয়া ভাবে সবাই আসিফের ফাসির দাবি করে। কোর্ট আসিফের যাবতজীবন জেল দেয়। আসিফ তার কর্মের উপযুক্ত শাস্তি পাই।।

— ইমরান বোনের খবর পেয়ে পর্যন্ত কান্না করে চলেছে। এতদিন সে জানতো না তার বোন আর নেই। শেষ দেখা ইলহাম খু:ন হওয়ার দিন হয়। এরপর ইমরান আবার আসিফের কবলে। আসিফও কখনো বলেনি ইলহামের কথা।

— ইলহামের খালা এসেছে ইমরানকে নিতে। খালাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে ইমরান। এখন একমাত্র সম্বল খালা।

–ছুটি ইমরানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ইমরানকে নিজের কাছে নেয়। ইমরান ছোট ছোট চোখে তাকায়। চোখ মুখ ফুলে গেছে কান্না করার ফলে। ইমরানের বয়স বারোতে গিয়ে ঠেকেছে মাত্র।

— আপু নেই তো কি হয়েছে আমি কি তোমার আপু হতে পারিনা? ছায়াকে দেখিয়ে বলে এটাও তোমার আপু ইমরান। এইভাবে কান্না করলে তোমার আপু যে কষ্ট পাবে। আমাদেরও তো খারাপ লাগবে তোমাকে কাঁদতে দেখে৷ আর কেঁদো না প্লিজ৷ ইমরানের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ছুটি।

– ছায়া ইমরানের কাছে এসে ওকে ধরে বলে শুন,আমি তোকে তুমি আজ্ঞে করতে পারবো না। তুই আমার ছোট ভাই আজ থেকে তাই তুই করে বলবো। আর যদি একবার কান্না করিস না তাহলে কি করবো জানিস? ছায়ার কথায় সবাই ভ্রু কুচকে তাকায়।

– তোকে কাতুকুতু দিয়ে হাসাবো৷ ছায়ার ছেলেমানুষী দেখে সবাই ফিক করে হেসে উঠে। সাথে ইমরানও হেসে দেয়।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে