শূন্য অনুভূতি পর্ব-০২

0
1057

#শূন্য_অনুভূতি
#রোকসানা_ইয়াসমিন
#পার্ট:”দুই”

ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করার চেষ্টা করতে করতে পিট পিট চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুঁচকে শান্ত দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ডানে বামে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে ভ্যা ভ্যা করে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিলাম।আমার এমন কাণ্ডে উনার কুচকানো ভ্রু আরো বেশি কুঁচকে গেল।হাতের বাধন হালকা করে বলে উঠলেন,
“হোয়াট রাবিশ!”
উনার এই দৃঢ় কণ্ঠে বলা কথাটায় আমি কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়ে নিজের মতোই কেদে গেলাম।কাঁদতে কাঁদতেই এক সময় হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে পরলাম।আমাকে বসতে দেখে উনি হাত ছেড়ে আমার সাথে সাথেই মাটিতে হাঁটু না লাগিয়ে আমার সামনেই বসলেন।উনার চোখে এই মূহুর্তে “কি হচ্ছে এসব”এরকম টাইপের কিছু একটা ফুটে উঠেছে।আমি উনার দিকে নজর না দিয়ে ন্যাকা কান্না কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠলাম,
“আপনি খুব খারাপ।খুব খারাপ একটা মানুষ আপনি।কোথায় এ বাড়িতে আমি নতুন এসেছি,উনি আমার আদর আপ্যায়ন করবেন তা না সেই তখন থেকে শুধু খেই খেই করেই চলেছে।ধুর ভাল লাগে না।আপনার সাথে কোনো কথা নেই।যান তো যান এখান থেকে।”
কথাটা বলে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ঠিক আমার দিকে নয় আমার ঠোঁটের দিকে।ব্যাপার টা বুঝতে পেরেই আমি চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে উঠলাম,
“এই কী দেখছেন কী আপনি হ্যা!”
কথাটা বলেই আমি দেয়ালের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিলাম।আমার এমন আচমকা চেঁচিয়ে ওঠায় উনি খানিকটা ভড়কে গেলেন।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একবার ডান দিক আর একবার বাম দিকে চোখ ঘুরিয়ে আচমকা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।উনি বেরিয়ে যেতেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।যাক বাবা বাঁচা গেল।রাক্ষস একটা।দেখলেই মনে হয় এই বুঝি খেয়ে ফেলবে।মনে মনে উনাকে কয়েকখানা কড়া কথা শুনিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে লাগলাম।ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই উনি কোথা থেকে এসে আমার এক হাত দেয়ালে চেপে ধরে অন্য হাত আমার কোমর জড়িয়ে আমায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিল।হঠাৎ ঘটা এই ঘটনায় আমি ভয় পেয়ে উনার বাহুর শার্ট খামচে ধরে উনার দিকে তাকালাম।কিন্তু কিছু বুঝতে পারার আগেই উনি আমার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন।উনার এমন কাজে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।বুকের ভেতরে হার্টবিট কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে।কী হচ্ছে এসব!স্বপ্ন দেখছি না তো!নিজের ভুল ভাঙানোর জন্য আমি একহাতে উনার বাহুতে হাল্কা চিমটি কাটলাম।এতে উনি আরো গভীর ভাবে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।এটা স্বপ্ন নয়!
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমায় ছেড়ে আমার চোখের দিকে তাকালেন।কিন্তু পরক্ষেণেই উনি আবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।ভাব এমন যেন এতক্ষণে উনি একটা ভ্রমের মাঝে ছিলেন।আমি থ মেরে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।এতক্ষণ যাবৎ কী ঘটে গেল তার মাথা মণ্ডু কিছুই মাথায় ঢুকলো না।আচ্ছা, লোকটা এরকম কেন?
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে নামতেই জানতে পারলাম উনি না খেয়েই বেরিয়ে গেলেন।তবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।মিঠুনের কাছ থেকে জানতে পারলাম উনি কখনো বাড়িতে খান না।বলতে গেলে বাবার সাথে বসে একসাথে খান না।মিঠুনের কথায় আমি খানিক টা অবাক ই হলাম।তবে সেই অবাক হওয়াটা বেশিক্ষণ রইল।বাবা মিঠুন এদের সাথেই গল্পে মগ্ন হয়ে গেলাম।
.
.
.
.
.
রাত প্রায় আট টা বাজে।মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলাম এমন সময় উনি অফিস থেকে ফিরলেন।কোনো কথা না বলে ল্যাপটপ বেডের ওপর রেখে নিজের মতো নিয়ে তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।আমি আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মায়ের সাথে কথায় মনোযোগী হলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর উনি স্নান শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন।খালি গায়ে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।উনাকে এই অবস্থায় দেখে এক মূহুর্তের জন্য আমার দম আটকে গেল।এই লোকটা আমায় খুন করবে নাকি?যখনই দেখি তখনই বুকের ভেতরটা কেমন যেন এলোমেলো অগোছালো হয়ে যায়।আমি অনেক কষ্টে নিজের অনুভুতিটা দমিয়ে উনার দিকে এগিয়ে গেলাম,
“হুম,মা আপনার সাথে কথা বলতে চান।”
হাতের ফোনটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।কথাটার শেষ হতেই উনি আমার হাত থেকে ফোনটা নিলেন।কিন্তু পরক্ষণেই কিছু ভাঙার শব্দে আমি চট করে নিচের দিকে তাকালাম।আমার ফোন ভেঙে পড়ে আছে।চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার পাশ কাটিয়ে বেডের দিকে চলে গেলেন।ভাব এমন যেন কিছুই হয় নি।উনার এই এটিটিউডে আমার পুরো গা জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেল।সাথেই যেন বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে লাগল নিজের অতি প্রিয় এই ফোন টার জন্য।ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো হয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি বেডের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনের পাওয়ার অন করছেন।ব্যাটা আমার ফোন ভেঙে এখন নিজের ফোনের মজা লুটছে।লুটাচ্ছি মজা তোকে।আমি রাগে গটগট করে গিয়ে উনার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে যাবো তখনই উনি হাত সরিয়ে নিলেন।আর আমি উনার সামনের গিয়ে পড়লাম।
চলবে💞

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে