শুরুটা অন্যরকম পর্ব-০৬

0
906

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়

নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার জন্য এত কিছু করবে৷ নিয়তি চিন্তা ধারনার বাহিরে কাজ করে যাচ্ছে নির্বণ চৌধুরী। নিয়তি মুগ্ধ নয়নে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের কাঁশিতে নিয়তি বাস্তবে ফিরে আসে৷

— নির্বণ ব্রু কুঁচকে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি। তুমি এভাবে কার দিকে তাকিয়ে আছো?” এতো মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে থাকার মানে কি?

— না এমনি৷ আমি একটা বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। কারো দিকে তাকাই নি৷ আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকার।

— গুড। এখন আমরা হসপিটালে যেতে পারি৷ তোমার তো ২ ঘন্টা সময় হসপিটালের জন্য বরাদ্দ করা।

নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নির্বণ নিয়তির হাত ধরে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়৷ নিয়তি নির্বণের হাতে ভর করে হসপিটালে আসে তার বাবার সাথে দেখা করতে যায়৷ নিয়তির বাবা নির্বণকে দেখে খুশি হয়ে যায়৷ নিয়তির বাবা জানে নির্বণ সত্যি সত্যি নিয়তিকে বিয়ে করেছে৷

— নিয়তির বাবা নির্বণকে পাশে বসিয়ে, ” বাবা জীবন ; আমার মেয়েটাকে কষ্ট দিও না৷ সে ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে৷ ”

নির্বণ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না? নিয়তির চোখ টলমল করছে। বৃদ্ধ লোককে মিথ্যাও বলতে পারছে না৷ নির্বণ কোন উপায় না পেয়ে বলে উঠে, ” কোন চিন্তা করতে হবে না৷ আমি সব সময় খেয়াল রাখবো।” নিয়তিকে উদ্দেশ্য করে, “আমার অফিসে অনেক কাজ আছে৷ আমাকে অফিসে যেতে হবে৷”

নির্বণ নিয়তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বাহিরে চলে আসে। নিয়তির তার বাবার সাথে কথা বলে৷ ডাক্তারের সাথে কথা বলে তার অবস্থা বর্তমানে কেমন৷ কবে তার বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে? নিয়তির বাবার দেখাশোনা নিয়তির বড় বোন করছে৷ সেজন্য নিয়তিকে হসপিটালে থাকতে হয় না৷
___________

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়৷ নিয়তির পা শুকিয়ে গেছে৷ সে আগের মতো হাঁটাচলা করতে পারে। নিয়তি নির্বণের মায়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের কথা শেয়ার করছে৷

— মা আপনাকে আগামী কাল থেকে হাঁটতে হবে৷ আপনার পা বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণ স্টং।

— নির্বণের মা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সুপ্ত কন্ঠে বলে উঠে, ” সোনা মা৷ আমার পায়ে ভীষণ ব্যথা করে। আমি হাঁটতে পারব না৷”

— তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি কোন কথা শুনতে চাই না৷ আপনি আমার কথা মতো চলবেন৷ ব্যাস আমি আর কিছু জানি না৷”

— দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে উঠে, ” ওকে তুমি যা বলবে তাই হবে৷”

— এখন অনেক রাত হয়ে গেছে । আপনি ঘুমিয়ে পড়েন৷ আমি আবার এসে দেখে যাব আপনি ঘুমিয়ে আছেন কিনা৷

নির্বণের মা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। নিয়তি নির্বণের মায়ের গায়ে কম্বল দিয়ে এয়ারকন্ডিশন অন করে চলে আসে৷
____________

— “স্যার আপনার চা। আমি নিজ হাতে আপনার জন্য চা করে এনেছি৷” উচ্ছাসের সহিত বলে উঠে।

— ফাইলের দিকে মুখে রেখেই, ” বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব পড়েছে? তোমাকে চা বানাতে হচ্ছে। আর তুমি কিভাবে ভাবলে তোমার হাতের চা আমি খাবো?”

— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করেছি? আমার হাতের চা খেতে কোন সমস্যা নেই তো? আপনার পছন্দের দার্জিলিং চা নিয়ে এসেছি৷ বেশি করে ফ্লেভার দেওয়া৷”

— জাস্ট সাট আপ। আমার সামনে অভিনয় করতে আসবে না৷ এতদিন তুমি অসুস্থ ছিলে সে জন্য তোমাকে সাহায্য করেছি৷ ইট’স বেরি সিম্পল। ভেবে নিও না আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছে।

— নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আমি তেমনটা মিন করিনি স্যার৷ আই অ্যাম সরি৷ আমি বুঝতে পারিনি৷”

— মিস নিয়তি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ৷ তুমি এখানে এসেছো এক মাসের জন্য৷ সো, আমার আছে আসার চেষ্টা করবে না৷ তোমাকে যে কাজের জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, সে কাজ মন দিয়ে কর?

— ধন্যবাদ স্যার৷ আমার জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম সেগুলো আপনার মানবিকতা ছিল।

— এখন কথা বলা শেষ হলে নিজের কাজে যাও৷ আমাকে আমার কাজ করতে দাও৷ তুমি ভালো করেই জানো আমি কাজের টাইমে ডিস্টার্ব একদম পছন্দ করি না৷

নিয়তি চোখের জল মুছে চা নিয়ে বাহিরে চলে যায়। নিয়তি সব সময় ভুল করে বসে৷ সবাইকে অল্পতেই আপন ভেবে নেয়৷ কেউ তার আপন নয়, সে কেন বুঝতে পারে না?
__________

নিয়তি রুমে এসে দেখতে পাই নির্বণ এখনো কাজ করছে৷ খাবারগুলো ঢাকা পড়ে আছে৷ এখনো ডিনার করে নি৷ য়তি নির্বণের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিয়তি শুধু হাত কাচুমাচু করছে।

— নিয়তির এমন অবস্থা দেখে, ” কিছু বলবে মিস নিয়তি?”

— আসলে স্যার একটা কথা বলার ছিল৷ অনুমতি যদি দেন তাহলে বলতে পারি৷

— কি কথা? কথা বলার জন্য হাত কাচুমাচু করছো?

— আসলে স্যার কিভাবে বলবো বুঝে উঠতে পারছি না৷ বলার সাহসও পাচ্ছি না৷

— কর্কট কন্ঠে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি আমি একদম ন্যাকামি পছন্দ করি না৷ বলতে না পারলে বলতে এসেছো কেন? রাতের রাত হয়েছে ঘুমাতে পারো।”

— নিয়তি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” স্যার আমার কিছু টাকার দরকার ছিল৷ আপনার দেওয়া পুরো টাকা শেষ হয়ে গেছে৷ এখন বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ বাবার মেডিসিনের জন্য কিছু টাকা লাগবে৷”

নিয়তির কথা শুনে নির্বণ নিয়তির দিকে চোখ ছোট করে তাকায়। চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, কিছু একটা প্রশ্ন জুড়ে রয়েছে চোখে।

— নিয়তি কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” স্যার আমার কাছে দিনে দুই ঘন্টা সময় ছিল৷ আমি এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই এই বাড়িতে থাকবো। প্লিজ আমার টাকাটা খুব দরকার।”

— নির্বণ ফাইল বাঁধতে বাঁধতে বলে উঠে, ” কত টাকা লাগবে? আর টাকা কখন লাগবে?”

— নিয়তি প্রফুল্লের সাথে বলে উঠে, “তেমন লাগবে না৷ হাজার বিশ হলেই চলে যাবে৷”

— নির্বণ সোফায় টাকা ছুঁড়ে মেরে বলে উঠে, ” এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে। আশা করি, এই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে চলে যাবে। আরও লাগলে বলতে পারো৷”

— না স্যার আর লাগবে না৷ এতেই হয়ে যাবে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” আপনার টাকা আছে বলে, আজ গরিবের দিকে এভাবে টাকা ছুঁড়ে মারেন৷ স্যার অহংকার থাকা ভালো। তবে অতি অহংকার ভালো না৷” আপনি মনে হয় ভুলে যান৷ “অহংকার পতনের মূল।”

— নিয়তি চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে, ” মিস নিয়তি টাকাটা তুলে নাও৷ নাকি আমি সেটাও করে দিব৷ আর দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ পাতাল ভাবতে হবে না৷”

— নিয়তি অপ্রস্তুতভাবে বলে উঠে, ” এভাবে ছুঁড়ে মারা টাকা না নেওয়াই ভালো৷ আমাদের কি মানুষ মনে হয় না? ”

— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, “হোয়াট ডু ইউ মিন”

নিয়তি বুঝতে পারে ফুস করে সত্য কথা বলে দিয়েছে৷ এখন তো নিয়তির ১২ টা বাজিয়ে ছাড়াবে।

— নিয়তি শুকনো ঢোক গিলে, ” আসলে স্যার কিছু না৷ এমনি বলে ফেলেছি৷ প্লিজ ফরগেভ মি৷”

নিয়তি টাকাটা নিয়ে নিজের আলমারিতে রেখে দেয়৷ নিয়তি আসার পর নির্বণ নিয়তির জন্য আলাদা একটা আলমারি নিয়ে এসেছে। যেন নিয়তির কোন সমস্যা না হয়৷

— নির্বণ সোফায় শুয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে, ” মিস নিয়তি আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বললে তার শাস্তি পেতে হবে৷ তো তুমি শাস্তি থেকে বঞ্চিত হবে এটা মানা যায় না৷ শাস্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও।

–নিয়তি টাকা রেখে শুতে যাবে তখনই নির্বণ বলে উঠে, ” আউচ, পা’টা ভীষণ ব্যথা করছে। নিয়তি একটু হ্যাল্প করবে?”

— কি সাহায্য করতে হবে স্যার?

— আমার পা গুলো ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি ঘুমাতে পারছি না৷ যদি তুমি পা গুলো একটু টিপে দিতে ভালো হতো৷ আসলে সোফায় ভালোভাবে পা রেখে ঘুমানো যায় না। সেজন্য মেবি ব্যথা করছে।

— মিয়তি আবাক চোখে তাকিয়ে, ” কি আমি পা টিপে দিব? আমি আপনার পা ধরতে পারব না৷ আমার একটা মূল্যবোধ আছে।”

— চোখ বন্ধ করে, ” আমি কি তোমাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেছি৷ আমি তো বলেছি আমার পা একটু টিপে দিতে৷ মানবতার খাতিরে তো এমন কাজ করতে পারো৷”

— “সালা শয়তান পোলা, আপনি আমাকে দিয়ে পা টিপানোর জন্য এমন নাটক করছেন৷ আর আমাকে বলে আমি ড্রামাবাজ৷ নিজে একটা মস্ত বড় ড্রামাবাজ সেদিকে কোন খেয়াল নেই৷” নিয়তি মনে মনে বলে উঠে।

— নির্বণ পা সোজা করতে নিয়ে, ” আহ্ পারছি না৷ পা ছিঁড়ে যাচ্ছে। প্লিজ নিয়তি এত নিষ্ঠুরতম মনোভাব পোষণ করবে না৷”

— নিয়তি বিরক্তের সাথে বলে উঠে, ” ওকে আমি পা টিপে দিচ্ছি।”

নির্বণ সাথে সাথে পা সোজা করে সোফার উপর রাতে৷ নিয়তি বাধ্য হয়ে পা টিপ যাচ্ছে।

— আহ্ নিয়তি প্রচুর ব্যথা। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না৷ প্লিজ আস্তে আস্তে একটু টিপে দাও৷

— স্যার আপনি বরং বিছানায় শুয়ে পড়েন। আমি আপনার পা টিপে দিচ্ছি৷ এখানে তো পা সম্পুর্ন সোফায় পড়ে না৷

— আচ্ছা নিয়তি৷

নির্বণ সোফা থেকে উঠে পা ফেলতে নিবে। কিন্তু পা ফেলছে না৷ নির্বণ মনে মনে ভাবছে, ” মিস নিয়তি তুমি যদি পাতায় পাতায় ঘোর আমি ঢালে ঢালে৷ আমি পা ফেললে বলতে পারবে পা ঠিক আছে। দেখাচ্ছি মজা৷”

— নির্বণ এক পা ফেলে বলে উঠে, ” নিয়তি পারছি না৷ প্লিজ আমাকে একটু ধর৷ পড়ে যাব এখনই৷ আমি এই বয়সে কোমরটা ভাঙতে চাই না৷”

নিয়তি নির্বণের কথা বিশ্বাস করে দৌড়ে নির্বণকে ধরে। নির্বণের হাত কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়তি নির্বণকে বিছানায় নিয়ে যায়৷ বিছানায় শুয়ে দিয়ে নির্বণের পা টিপতে থাকে।

— নিয়তি আস্তে আস্তে বলে উঠে, ” মন বলছে আপনার গলা টিপে দিতে৷ একদম ভেজাল শেষ হয়ে যেত৷”

— নিয়তি কিছু বললে? আমি ঠিক শুনতে পারলাম না৷

— না.. না.. স্যার। কিছু বলিনি৷ আপনি কি কিছু শুনেছেন?

— না কিছু শুনতে পাইনি৷ তুমি বরং তোমার কাছে মন দাও৷ আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করি।
নির্বন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠে, ” কমপক্ষে তোমাকে দিয়ে আমি দুই ঘন্টা পা টিপাবো। তোমাকে দিয়ে আমি দুই ঘন্টা পা টিপাতে না পারলে আমিও নির্বণ চৌধুরী নয়৷”

আধ ঘন্টার পর নিয়তি দেখে নির্বণ চোখ বন্ধ করে আছে৷ নিয়তি পায়ে আস্তে করে একটা চিমটি কাটে৷ কিন্তু নির্বণ চোখ মেলে তাকায় না৷ নিয়তি শিউর হওয়ার জন্য নির্বণে কাছে আসে। নির্বণের সামনে হাত নাড়িয়ে বুঝতে পারে নির্বণ ঘুমিয়ে গেছে।

নিয়তি চলে আসতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। নিয়তি হেঁচকা টানে নির্বণের উপর গিয়ে পড়ে৷ নিয়তির খোলা কেশগুলো নির্বণের সারা মুখে ছড়িয়ে যায়৷ নিয়তির মাথা সরাতে নিলে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ দু’জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে