শুধু তুই ৩ পর্ব-৪+৫

0
1386

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৪
#Tanisha Sultana

নিধিদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ির ভেতরে বসে রাগে গজগজ করছে আদি। মনে মনে হাজারটা কথা সাজাচ্ছে নিধিকে বলার জন্য। পাক্কা এক ঘন্টা যাবৎ আদি এভাবে বসে আছে। নিধির আসার নামই নেই। দুইবার ফোন দিয়েছে নিধিকে। নিধি জাস্ট ফোনটা রিসিভ করে বলছে “পাঁচ মিনিট ” নিধির এই পাঁচ মিনিটই শেষ হচ্ছে না। মনে মনে ভেবে নিয়েছে আদি নিধি আসলেই জোর একটা ধমক দেবে।

এসব ভাবতে ভাবতে আদির ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্কিনে ইডিয়েট নামটা লেখা। আদি বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে ফেলে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নিধি বলে
“লাটসাহেব আপনি কি কালার শার্ট পড়েছেন?
নিধির এরকম উটকো প্রশ্ন আগুনে ঘি ঢালার মতো। এমনিতেই আদি রেগে আছে তারপর নিধি এতোখন বসিয়ে রেখেছে। সব মিলিয়ে আদি জোরে একটা ধমক দেওয়ার জন্য মুখ খুলে তখনই নিধি বলে
” ধমক দিয়েন না। আপনার ধমকে আমি ভয় পায় না। চট করে বলে ফেলুন আমি চলে আসি৷ না বললে আমি এখন যাবো দেখতে আপনি কি রংয়ের জামা পড়েছেন দেখে আবার রুমে আসবো তারপর আপনার সেম কালার ড্রেস আমি পড়বো দেন বের হবো। এখন বলুন আপনি কি করবেন? আরও এক ঘন্টা বসে থাকবেন না কি বলবেন? সিদ্ধান্ত আপনার।
“আদি এক হাতে মাথা চেপে ধরে।
“ব্লু
চোখটা বন্ধ করে বলে।
” ওকে
নিধি খট করে ফোনটা কেটে দেয়।

আরও আধঘন্টা পরে নিধি আচল ঠিক করতে করতে বের হয়। আদি গাড়ির ছিটে ঢেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। গাড়ির কাচে খটখট শব্দ শুনে চোখ খুলে।
এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিধি। আদি ভালো করে তাকাও না নিধির দিকে।
দরজা খুলে দেয় আদি। নিধি উঠে বসে। ইচ্ছে করেই সীট বেল্ট লাগায় না।
“আমার এতো ফালতু সময় নেই। কাজের মানুষ আমি। এভাবে বসিয়ে রাখার কোনো মানেই হয় না।
বিরক্তি নিয়ে বলে আদি।
নিধি তখন মেকাপের আয়না দেখে লিপস্টিক লাগাচ্ছিলো। আগেও লাগিয়ে ছিলো কিন্তু কম কম মনে হলো তাই আবার লাগাচ্ছে।
” কিছু বলছেন?
নিধি আদিকে জিজ্ঞেস করে
“স্টুপিট
বলে আদি গাড়ি চালানো শুরু করে।
“আপনাকে হট হট গ্রীষ্মকাল লাগছে। ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা চুমু খায়।
দুই হাত মুঠ করে বলে নিধি।
আদি কপালে দুটো ভাজ ফেলে। এক পলক তাকায় নিধির দিকে। কিন্তু কিছু বলে না।
” আমাকেও হট লাগছে বলুন? অবশ্য এটা আমি জানি। আরও বেশি সুইট লাগার জন্য বেশি করে লিপস্টিক লাগিয়েছি।
নিধি বলে।
“এই মেয়ে সত্যিই পাগল
আদি বিরবির করে বলে।
” কিছু বললেন? নিধি জিজ্ঞেস করে।
“চুপ করবে? না কি গাড়ি থেকে ফেলে দেবো। বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলে আদি।
নিধি ঠোঁটে আঙুল দেয়।
” খালি বকেন কেনো? বাচ্চা একটা মেয়ে আমি। যদি পিত্তি গলে মরে যাই না তাহলে আপনার নামে কম্পেলেন করবো। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে আপনাকে। তখন আমি আপনাকে দেখতে যাবে।
নিধি আঙুল সরিয়ে বলে।
“ননসেন্স
” লাভ ইউ😘😘😘
“এভাবে ঠোঁট বাঁকালে কেনো?
আদি গাড়ি ব্রেক কষে জিজ্ঞেস করে।
” চুমু দিলাম। নিধি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে বলে।
“হোয়াট? আদি অবাক হয়ে বলে।
” এটাকে বলে উড়ন্ত চুমু। বিয়ের আগে এভাবেই চুমু দিতে হয়। আর বিয়ের পরে ডিরেক্টলি।
“ওহহহ গড
দুই হাত মাথায় চেপে বলে আদি।
জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আদি বলে
” আমি কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনবা।
“ওকে সোনা
নিধি বলে। আদির রাগ হয় তবুও কিছু বলে না।
“আমাকে বিয়ে করো না। বিয়েটা ভেঙে দাও
” কোন দুঃখে?
“আমি মানুষটা ভালো না। মারামারি করি। দুর্নীতি করি। মাফিয়া আমি। অনেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করি।
নিধি সাথে সাথে চেচিয়ে ওঠে
” ওয়াও এই টাইপের ছেলেদের আমার দারুণ লাগে। আমি তো ছোট থেকেই ভাবতাম ইসসস এমন যদি আমার বর হতো। আমার ইসসস টা এখন সত্যি হবে ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে।
আদি হতাশ হয়। এসবে কাজ হবে না ভালোই বুঝে গেছে আদি।
“আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি। বাবার মুখের ওপর কথা বলার সাহস আমার নেই। তাই তোমাকে রিকোয়েস্ট করছি বিয়েটা ভেঙে দাও।
শান্ত গলায় বলে আদি।
নিধি আদির দিকে একটু চেপে বসে।
” আমি আপনাকে ভালোবাসি। যে কোনো মূল্যে আপনাকে আমার চাই। বিয়েটা আমি ভাঙবো না। আমি আপনাকেই বিয়ে করবো আর আপনার বাচ্চার মা হবো।
আদির মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। নিধিকে গাড়ির দরজার সাথে চেপে ধরে। নিধির মুখের খুব কাছে আদির মুখটা। আজকেও প্রচন্ড সিগারেটের গন্ধ আদির মুখে। মনে হচ্ছে একটু আগেই খেয়েছে। নিধি শুনেছিলো সিগারেট খাওয়া ছেলেদের ঠোঁট কালো হয় কিন্তু আদির ঠোঁট লাল। এতো সিগারেট খায় তাও কালো হয় না কেন?

“কি চাও তুমি? কেনো বুঝতে চাইছো না। আই হেট ইউ
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি। আদির একটা হাত অজান্তেই নিধির পেটের ওপর পরে গেছে আরেক হাত গাড়ির কাচে।
” আই লাভ ইউ। জানেন আজ আসার আগে দুইবার ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করে এসেছি। যাতে আপনি আমার কাছে চলে আসেন। আপনি কাছে আসলো না (বুকের বা পাশে আদির হাতটা দিয়ে) এইটায় কেমন ধুকবুক করে। আলাদা একরকম অনুভূতি হয়।
আদি নিজের হাতটা সরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক চোখ ঘোরায়। নিধির কাছ থেকে চলে আসতে নিলে নিধি কলার চেপে ধরে।
“আমার কাছে চলে আসবেন নিজের ইচ্ছেয় কিন্তু যাবেন আমার ইচ্ছায়। বুঝলেন লাটসাহেব।
আদির দুই গালে হাত দিয়ে বলে নিধি।
আদি কি বলবে বুঝতে পারছে না।
” বলুন আমায় কেমন লাগছে?
আদি চোখ ছোটছোট করে তাকায়।
“কিহহহহ?
” আমি এতো সুন্দর করে সাজুগুজু করেছি আমাকে কেমন লাগছে?
না বললে কলার ছিঁড়ে ফেলবো কিন্তু ছাড়বো না।
“ভালোই আদি না তাকিয়েই বলে।
” আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলুন।
“এই তুমি কিন্তু
আদির কথা শেষ হওয়ার আগেই নিধি আদির কপালে চুমু দিয়ে বসে। আদি চমকে যায়। এটা কখনোই ভাবে নি।
” তুমি কিন্তু
কপাট রাগ দেখিয়ে বলতে যায় আদি। নিধি থামিয়ে দিয়ে বলে
“এর থেকে বেশি কিছু হয়ে যাক তার আগে বলুন কেমন লাগছে। ঘোর লাগা কন্ঠে বলে নিধি।
আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিধির দিকে তাকায়। মাথা থেকে গলা ওবদি দেখে বলে
” ভালো। এবার ছাড়ো।
“আই লাভ ইউ
বলেই নিধি ছেড়ে দেয় আদির কলার। আদি নিজের ছিটে গিয়ে বসে।
এই মেয়েটাকে আদি থামাতে পারছে না। কিছু একটা আছে এই মেয়ের মধ্যে যেটা আদিকে কঠোর হতে দিচ্ছে না। কি করবে এবার আদি? বিয়েটা করতেই হবে? পালানোর সব রাস্তা বন্ধ।

চলবে।

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana

আদি গাড়ি থামিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। এই মেয়েকে আদি বোঝাতেই পারছে না। আদি যা বলছে সেটাকেই অন্য কথা দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কি দিয়ে গড়া এই মেয়েটা?
“এভাবে তাকিয়েন না প্লিজ। আমার প্রেম প্রেম পায়। নিধি লাজুক হাসি দিয়ে বলে।
” এই মেয়ে বয়স কতো তোমার? তুমি প্রেম বুঝো? জাস্ট একটা বয়সের প্রভাব এটা। কিছুদিন পরে কেটে যাবে।
রেগে ধমক দিয়ে বলে আদি।
“তাই তো তারাতাড়ি বিয়েটা করে ফেলছি। যদি বয়স বাড়ার সাথে আপনাকে ভুলে যাই।
আদি মাথায় হাত দেয়।
” এবার চলুন আমরা শপিং করবো।
নিধি আচল ঠিক করে বলে।
আদি কিছু একটা ভেবে জিসানকে ফোন দেয়।
“তারাতাড়ি তৃপ্তি প্লাজারের সামনে আয়৷ আমি পাগল হয়ে গেলাম।
আদি ফোন পকেটে রেখে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নিধিও আদির পেছন পেঋন এসে আদির থেকে এক ইঞ্চি দুরে দাঁড়ায়।
আদির সাথে হাইট মাপে। আদির কাঁধের থেকে আধ হাত নিচে নিধির মাথা পরে। হাত উঁচু করে কিন্তু আদির মাথার নাগাল পায় না।
এতো লাম্বা কেনো?
” বলছিলাম কি আপনার ওয়েট কতো?
নিধি আদির সাথে চিপে দাঁড়িয়ে বলে।
আদি একটু সরে দাঁড়ায়।
“তুমি ঢলাঢলি করে অন্য ছেলেদের ইমপ্রেস করতে পারবে বাট আমাকে না।
আঙুল তুলে বলে।
” আপনাকেও ইমপ্রেস করে ফেলবো। জাস্ট ওয়েট বস
ভাব দেখিয়ে বলে নিধি।
“ইডিয়েট
” বললেন না তো?
“কি?
” ওয়েট কতো?
“বলার প্রয়োজন মনে করছি না
আদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
” শুনেন আপনি নিজেকে ঠিক যতটা স্মার্ট ভাবেন আপনি ঠিক ততোটা স্মার্ট না। কি দেখে যে ক্রাশ খাইছিলাম। লাট সাহেব একটা। নীম পাতা, জন্মের সময় মুখে চিনির বদলে করলার রস দিয়েছিলো তাই এই অবস….
নিধি কথা বলেই যাচ্ছে। আদি চোখ গরম করে তাকাতেই নিধি চুপসে যায়।
“কি ঝামেলা। আদি বিরবির করে বলে।

জিসানের আসার নামই নেই। আদি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছে। নিধি চুপ থাকতে থাকতে বোর হচ্ছে। পেটের মধ্যে কথা গুলো গড়গড় করছে। দুটো ছেলে এসে আদিকে বড় ভাই বলে সালাম দেয়। আদি সালামের জবাব দেয়।
” ভাই ইনি কে?
একটা ছেলে জিজ্ঞেস করে। আসলে ওরা কেউ কখনো আদিকে কোনো মেয়ের সাথে দেখে নি। সবাই জানে মেয়েতে আদির এলার্জি। কিন্তু আজকে একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে দেখে বেশ অবাক হয়। তাই জিজ্ঞেস করে।
“আমি?
নিধি খুশিতে গদগদ হয়ে এগিয়ে আসে। আদির হাতটা মুঠো করে ধরে বলে
“আমি হলাম ওনার অর্ধেক বউ। মানে বিয়ে ঠিক হয়েছে কাল গায়ে হলুদ পৌরসু বিয়ে। তো আমি তোমাদের বড় ভাবি। সালাম দাও
ভাব দেখিয়ে বলে। আদি ঝারা দিয়ে নিধির হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। ছেলে দুটো নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নিধি কিছুটা অপমানবোধ করে।
” আসলে হয়েছে কি গাড়িতে আমি ওনাকে কি
আদি কাশি দিয়ে নিধির মুখ চেপে ধরে। ছেলে দুটো ভ্রু কুচকে তাকায়।
“তোমরা যাও। আমি পরে কথা বলে নেবো তোমাদের সাথে।
ছেলে দুটো একবার ভালো করে নিধির দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আদি নিধির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। নিধি জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
” কি বলছিলে তুমি? পাগল তুমি? ইডিয়েট একটা। তোমাকে আমার জাস্ট সয্য হয় না। তোমার মুখটা দেখলেই আমার রাগ হয়।
জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে আদি।
নিধি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এরই মধ্যে জিসান চলে আসে।
“এতোখন লাগলো তোর? একটা কাজও ঠিক করে করতে পারিস না। এই মেয়েটাকে ভালো করে বোঝা। ও যেনো ওর এই মুখটা আমাকে আর না দেখায়। জাস্ট অসয্য লাগে। স্টুপিট
বলে আদি চলে যায়।
নিধির মন খারাপ হয়ে যায়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের কোনে পানি চলে আসে। আঙুল দিয়ে আচল পেঁচাতে থাকে।
” নিধি আসলে আমার ভাইটা এমনই। সব সময় রেগে থাকে। আমাদের সাথেই ভালো করে কথা বলে না। ভেরি সরি
নিধি চোখের পানি মুখে হনহনিয়ে চলে যায়। জিসানের খুব খারাপ লাগে।

আজ নিধি আর আদির গায়ে হলুদ। নিধি মন খারাপ করে বসে ফোন দেখছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। জিসান অনেকবার ফোন দিয়েছে কিন্তু নিধি রিসিভ করে নি। বাবা মায়ের সাথেও তেমন কথা বলে নি।

নিধিকে সাজাতে পার্লার থেকে বিউটি শেয়ান এসেছে।
নিধির ইচ্ছে না থাকলেও সাজছে যায়।
কিছু একটা ভেবে নিধি হলুদের সাজে কিছু পিক তুলে আদিকে সেন্ড করে। আদি নিধির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে নি। তবুও নিধি অনেক অনেক মেসেজ দিয়ে ভরে রেখেছে। নিধির কেনো জানি মনে হচ্ছিলো আদি আজকে ওর রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবে আর ওর পিক গুলো দেখবে।
ফোনটা রেখে নিধি যায়। সবাই নিধিকে হলুদ ছোঁয়ায়। জিসান এসেছে নিধিকে হলুদ দিতে। একদম ভুল বানিয়ে দেয় নিধিকে৷ নিধিও কম যায় না জিসানকেও হলুদ লাগিয়ে দেয়।

রাতের বেলায় নিধি ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নেয়। ডাটা অন করতেই দেখতে পায় আদিল চৌধুরী এক্সেপ্ট করে রিকোয়েস্ট। আর নিধির একটা পিক এ লাভ দিয়েছে। নিধির খুশি আর দেখে কে। খুশিতে গদগদ হয়ে লাফাতে থাকে।

আজকে আদি নিধির বিয়ে। এক ঘন্টা যাবৎ বউ সেজে বসে আছে নিধি।একটু আগে কাজি এসে সাইন নিয়ে গেছে সাথে কবুলও বলেছে।
বিয়েটা হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আদির দেখা মেলে নি। বউ সাজে নিধিকে মারাক্তক লাগছে।
অবশেষে আদিকে নিয়ে আসা হয় নিধির কাছে। আদির চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। তা দেখে নিধির মনটা একটু খারাপ হয়। উনি সারাজীবন আমাকে বিরক্তই মনে করবে?

আদি এক নজর তাকায় নিধির দিকে। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু নিধি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। এই মানুষটা এখন থেকে নিধির স্বামী। সারাজীবনের জন্য বাঁধা পড়ে গেছে এই লোকটার সাথে। এখন থেকে নিধির একটাই দায়িত্ব এই গোমড়া মুখো লাটসাহেবকে হাসিখুশি বানানো।

নিধি হাত দিয়ে আদির বুকে গুঁতো দিয়ে একটু হেসে বলে
“বলছিলাম না বিয়েটা করতো করে ফেলছি। এক বংছি বছর ঘুরতে ঘুরতে বাবুর আম্মু হবো
আদি কটমট চোখে তাকায় নিধির দিকে।
” এরকম ভালোবাসি ভালোবাসি দৃষ্টিতে তাকাও কেনো বাবু? প্রেম প্রেম পায় না কি?
“তোমাকে থাপ্পড়াইতে মন চায়। ইডিয়েট
” আর কি মন চায় জানেন?
“জানি
” এই না হলো আমার বাবুটা আমার মনের কথা বলার আগেই বুঝে যায়।
আদির গাল টেনে বলে নিধি। রুমে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে ফেলে। আদি মাথা নিচু করে। নিধি লজ্জা পায় একটু খানি।

বিদায়ের সময় নিধি একটু খানি কেঁদে ফেলে। নিধির বাবা মা অনেক কাঁদে। তার ছোট মেয়েটাকেই বিয়ে দিয়ে দিলো। নিধিদের অবস্থা তেমন ভালো না। একটা দোকানের কর্মচারী নিধির বাবা। মেয়েকে খুব আদরে বড় করেছেন। নিধির বাবারা তিন ভাই। নিধির চাচাদের অবস্থা ভালো। ওনারা নিধিকে খুব আদর করে। খুব বড়লোক ঘর থেকে নিধির সমন্ধ এসেছে আর নিধি ছেলেটাকে পছন্দ করে বলে বাবা আর না করে না।

আদির রুমটা একদম সাদামাটা ভাবেই আছে। আদি সাজাতে না করেছে। আদি বলে দিয়েছে ওর রুমে একটা ফুলের পাপড়ি থাকলেও ও চলে যাবে বাড়ি থেকে।
নিধিকে আদির চাচাতো বোন আর জিসান এনে আদির রুমে দিয়ে গেছে। নিধি ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনেক বড় বাড়ি আদিদের। দুই তালা বাড়ি কিন্তু চারপাশটা অনেক বড়। আদির রুমটাও অনেক বড়। কিন্তু রুমে একটা খাট ড্রেসিং টেবিল আর একটা আলমারি ছাড়া কিছুই নেই। দেয়ালটা কালো রং করা।
নিধি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিরামিষ জামাই বিয়ে করলেই এটাই হয়।
এরই মধ্যে দরজায় খট করে শব্দ হয়।
নিধি কোমরে হাত দিয়ে বলে
“সমস্যা কি আপনার? এটা কি ফুলসজ্জার ঘর। এই ঘরে ফুলসজ্জা হয়। এখানে তো একটা গোলাপের পাপড়িও নেই। এতো নিরামষ হলে চলে। আমারই মনে হয় কপাল পুড়লে
এক নাগারে কথা গুলো বলে সামনে তাকায় নিধি। সামনের মানুষটাকে দেখে নিধি ঢোক গিলে
“শশুড় মশাই আপনি
আদির বাবা একটু হেসে নিধির কাছে আসে। নিধির মাথায় হাত বুলায়। নিধি একটু হাসার চেষ্টা করে।
” আমার এই নিরামিষ গোমড়ামুখো ছেলেটাকে পাল্টে দে তো মা
“আমি কি পারবো?
” খুব পারবি। আর তোদের জন্য আমি আমার রুমটা সাজিয়েছি। আদিকে না জানিয়ে। তুই ওই রুমে চলে যা। আমি আদিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
নিধির বেশ লজ্জা লজ্জা লাগছে। তবুও লজ্জাকে এক পাশে রেখে বলে
“তুমি খুুব ভালো শশুড় মশাই।
” তুইও খুব মিষ্টি বউমা

নিধি শশুরের রুমে চলে যায়।

চলেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে