শুধু তুই ৩ পর্ব-১৮+১৯

0
1242

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৮
#Tanisha Sultana

ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো সাথে কেউই সয্য করতে পারে না। নিধিও তার ব্যতিক্রম নয়। তারও ভেতরটা জ্বলে পুরে যাচ্ছে। তবে নিধি নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। অল্প বয়সের ভালোবাসাটা ভয়ংকর হয়। তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ম্যাচুয়িটি জিনিসটা তাদের মধ্যে থাকে না। তাদের মন যা বলে সেটাই করে। যেমন নিধি আদির ধমক খেয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলে। আসলে ভালো লাগাটাকেই ভালোবাসা বলে ধার্য করে। আদিকে বিয়েও করে ফেলে।
কিন্তু এখন নিধি নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করবে। নিজেকে নিয়ে ভাববে। যে থাকার সে এমনিতেও থেকে যাবে আর যে যাওয়ার তাকে হাজার চেষ্টা করেও আটকে রাখা যায় না। আদি যদি নিধির হয় তো দিন শেষে নিধিরই থাকবে।
নিধি আলতো হাসে। বইটা বন্ধ করে রেলিঙ ওপর রাখে
রেলিং এ হাত ঠেকিয়ে গালে হাত দেয়। মুখটা গম্ভীর করে এক মনে তাকিয়ে আছে আদি আর জুঁইয়ের দিকে।
নিধি সকাল সকাল ছাঁদে চলে এসেছিলো। এই বাড়ির ছাঁদটা বেশ সুন্দর। পুরো ছাঁদ জুড়ে নানারকমের ফুল গাছ। নানান ধরনের ফুল। বৃষ্টি হওয়াতে ফুল গাছ গুলোকে নতুন লাগছে। সকালে ফুরফুরে বাতাস নিধির দারুণ লাগে।
সারা রাত বৃষ্টি হওয়াতে পরিবেশটাকে মারাক্তক লাগছে।
আদি রান্না করছিলো। আদি কখনোই নিধির সাহায্য নেবে না তাই নিধি ছাঁদে চলে এসেছে।
খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো নিধি। হঠাৎ চোখ পড়ে নিচে। আদিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে জুঁই নামের মেয়েটা। খুব স্পষ্ট ভাবে দুজনকেই দেখা যাচ্ছে।
জুঁই কেঁদে কেঁদে কিছু বলছে আদিকে। আদি হাত ভাজ করে শুনছে। কখনো কখনো জুঁই আদির গায়ে ধলে পড়ছে। আদি সরিয়ে দিচ্ছে। হয়ত দুজনের মান অভিমানের পালা শেষ করছে।
নিধি গালে হাত দিয়ে এই দৃশ্য দেখছে।

বিয়ের পরে কোনো মেয়েই নিজের স্বামীকে ছাড়তে চায় না। নিজের আচলে বেঁধে রাখতে চায়৷ কিন্তু নিধি অন্য কথা ভাবছে। নিধি বড় হয়ে গেলে আদিকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে। আদি জুঁইকে পেয়ে যাবে।
এসব ভেবে নিধির চোখের কোনো এক চিলতে পানি এসে জমে। নিধি বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে মুছে নেয়।
“কাঁদবো না। দুর্বলদের মানুষ আঘাত করে। আমি দেখিয়ে দেবো আমিও পারি। ওনাকে বিয়ে করে আমি যে ভুল করেছি সেটা এবার সুধরে নেবো। আদি আমার কাছে আর পাঁচটা মানুষের মতো। ওনার প্রতি আমার কোনো ফিলিং নেই।
অভিমানে বলে নিধি।

আদি রান্না করছিলো। তখনই ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে জুঁই নামটা দেখে বেশ অবাক হয় আদি। কেনোনা তিন বছরে জুঁই কখনো আদিকে কল করে নি। তিন বছর আগে প্রতিদিন চারপাঁচবার করে কল করতো।
হঠাৎ ফোন দেওয়ার কারণ আদি বুঝতে পারে না। কেনো জানি কল রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। তাই আর ফোনটা রিসিভ করে না। নিধি বলে কয়েকবার ডাকে। কিন্তু নিধির কোনো সারাশব্দ নেই।
” ইডিয়েট একটা। কখনো পাওয়া যায় না। বিরক্ত নিয়ে বলে আদি।
হাতের মুঠো ফোনটাতে মেসেজ আসে। আদি আবার ফোনের স্কিনে তাকায়। জুঁই মেসেজ দিয়েছে।
“আমি তোমার বাড়ির নিচে। প্লিজ একবার বাইরে আসো। প্লিজ ”
আদির মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে ও যাবে। জুঁইকে কড়া করে কথা শুনিয়ে দেবে।
এসব ভেবে যায় আদি।

বেশ কড়া রোদ উঠেছে। এখন আর রোদে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। নিধি এক হাতে বই আরেক হাতে মোরা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
রুমের সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা। নিধি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
“কোথায় গেছিলে?
রান্না ঘর থেকে আদি বলে ওঠে।
” ছাঁদে
আস্তে করে উওর দিয়ে রুমে চলে যায়। আদি বেশ অবাক হয়। মেয়েটার হলো কি? শরীর খারাপ না কি?
টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিধির রুমে যায়। মুখের ওপর বই দিয়ে শুয়ে আছে নিধি।
“শরীর খারাপ?
আদি নিধির মুখের ওপর থেকে বই সরিয়ে নেয়। নিধি চোখ খুলে না।
” নাহহহ খিধে পেয়েছে।
নিধি বলে।
“খাবার রেডি আসো।
” আপনি খেয়ে নিন আমি পরে খাবো।
“এই তো বললা খিধে পেয়েছে?
নিধি কিছু বলে না।
” পবলেম কি তোমার? আমি বেরবো। কাজ আছে।
“তো আমি কি বেঁধে রেখেছি? তেঁতে উঠে বলে নিধি। উঠে বসে পরে।
আদি ভ্রু কুচকে তাকায়। হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না।
” খেতে এসো। আদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে।
“আম
নিধি বলতে গেলে আদি থামিয়ে বলে
” বেশি কথা পছন্দ না।
বলেই আদি নিধির কোমল হাতটা মুঠো করে ধরে হাঁটা শুরু করে। ইচ্ছে না থাকলেও নিধির আদির পিছু পিছু যেতে হয়।
টেবিলে নিধিকে বসিয়ে আদি খাবার বেড়ে দেয়।
“আমি বাসায় থাকবো না। তোমার একা একা লাগবে। তাই টমকে আনার ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গী পেয়ে যাবা।
আদি নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে বলে।
নিধি উওর না দিয়ে চুপচাপ খেতে থাকে। আদি ভ্রু কুচকে নিধির দিকে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে। এর মতিগতি কিছুই আদি বুঝতে পারলো না।

খাওয়া শেষে নিধি হাত ধুয়ে রুমে চলে যায়। আদি থালা বাসন ধুয়ে রুমে যায়। গোছল সেরে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিধির রুমের সামনে আসে।
নিধি ঘুমিয়ে গেছে। এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। আদি নিধিকে ঠিক ভাবে শুয়িয়ে দিয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে দেয়। গলা ওবদি চাদর টেনে চলে যায়।

কলিং বেলের শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। চোখ ডলে দরজা খুলে দেয়। আদির এক ফ্রেন্ড টমকে নিয়ে এসেছে। নিধি টমকে ভেতরে নিয়ে নেয় ওনাকেও আসতে বলে। উনি তারা আছে বলে চলে যায়।
ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে টমকে খেতে দেয় নিধি। তারপর গোছল করতে যায়। গোছল সেরে ভেজা জামাকাপড় রোদে মেলে দিয়ে আস।
একা একা খেতে নিধির ভালো লাগে না। তাই না খেয়ে আদির রুমে এসে বসে। আদির রুমে টিভি আছে। টিভি দেখলে হয়ত সময় কাটবে। এই বাড়িতে একা একা দম বন্ধ হয়ে আসছে নিধির। এখানে আরও কিছুদিন থাকলে নিধিও আদির মতো গোমড়ামুখো হয়ে যাবে।

ফ্লোরে বসে পড়ে নিধি। পাশেই টম বসে। চ্যানাল পাল্টাতে পাল্টাতে একটাতে চোখ আটকে যায়। হিন্দি মুভি হচ্ছে। নিধি কখনো হিন্দি মুভি দেখে নি। বাংলা মুভিও খুব কম দেখে। আসলে টিভির প্রতি ওর তেমন কোনো লোভ নেই। তবে মুভিটা ভালো লাগে নিধি। রিমোট খাটে রেখে মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে।
মুভির এক পর্যায়ে হিরো হিরোইনকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নায়িকার দুইগালে হাত দিয়ে মুখটা এগিয়ে নেয়। নিধি একবার টমের দিকে তাকায়। তারপর আবার টিভির দিকে তাকায়। আর তখনই ঠাস করে টিভি বন্ধ হয়ে যায়।
নিধি রেগে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে আদি।
“টিভি কেনো বন্ধ করলেন? লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে নিধি
” বাচ্চাদের এইসব মুভি দেখতে নেয়। তুমি মটুপাতলু টম এন্ড জেরি এসব দেখো।
বেশ গম্ভীর সুরে বলে
নিধি গাল ফুলায়।
“আপনি টিভিটা আমার রুমে দিয়ে আসেন। একা একা বোরিং লাগে আমার। টিভি দেখলে সময় কাটে।
নিধি যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় আদি হাত ধরে।
” তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
নিধির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। এই বুঝি আদি বলবে আমি তোমাকে ডিভোর্স দেয়ে দেবো।
“ববলুন
মাথা নিচু করে থেমে থেমে বলে নিধি।
আদি নিধিকে খাটে বসায়। নিজেও নিধির পাশে বসে। টম এসে আদির পায়ের কাছে বসে।
” আমার কথা গুলো মন দিয়ে শুনবে।
“আমি সব কিছুই মন দিয়ে শুনি।
” বেশি পাকামো করবা না। বিরক্ত লাগে। ইডিয়েট
“তো আসেন কেনো ইডিয়েটের সাথে কথা বলতে? আমি তো যায় না আপনার সাথে কথা বলতে।
তেঁতে উঠে বলে নিধি।
“রাগীও না আমাকে। অনেক কষ্টে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তোমার সামনে বসে আছি।
” থাকতে বলি নি তো।
“আদি নিধিকে খাটে ফেলে দেয়। নিধির পেটের ওপর বালিশ দিয়ে তাতে উঠে বসে। নিধির হাত দুটো মুঠো করে ধরে আছে। নিধি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। আদি নিধির দিকে ঝুঁকে
” বলছিলাম না রাগীও না
নিধির মুখের একদম কাছে মুখ নিয়ে বলে আদি।
“একদম মুখে মুখে কথা বলবা না। আমি কথা বললে চুপচাপ আমার কথা শুনবে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আদি।
নিধি চোখ খুলতে পারছে না। হার্ট বিট উঠানামা করছে। বুক ধুকবুক করছে।

চলবে।

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana

“আমি কোথাও যাবো না। ডিভোর্স ও দেবো না আপনাকে বলে দিলাম।
বেশ কড়া গলায় বলে নিধি। আদি ভ্রু কুচকে তাকায় নিধির দিকে। এতোখন যে রেগে আগুন হয়ে ছিলো নিধির একটা কথায় রাগ অবাকে পরিনিত হয়।
নিধির হাত দুরো একটু আলগা করে দেয়। নিধি এখনও আদির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আমার সতীনের সংসার করতে কোনো অসুবিধা নেই। আপনি ভাবছেন আমি অশান্তি করবো? ঝগড়া করবো। ঝামেলা করবো তাই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে নতুন বড় আনবেন। বিশ্বাস করুন আমি একদম ঝগড়া করবো না। আপনাকে নিয়ে ঝামেলা করবো না। আপনি সব সময় আপনার দ্বিতীয় বউয়ের কাছেই থাইকেন। বাসার সব কাজ আমি করবো। প্রমিজ
বাচ্চাদের মতো মুখ করে অসহায়ের মতো বলে।
আদি নিধির ওপর থেকে নেমে যায়। সোজা হয়ে বসে। নিধির কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই মেয়েটা এই সব চিন্তা মাথায় আনলো কি করে?
নিধির চোখের কোনো পানি টলমল করছে যে কোনো সময় টুপ করে গড়িয়ে পড়বে।
নিধিও উঠে বসে। আদির থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসে। আদির দিকে এক পলক তাকায়। আদি এক মনে সামনের বেসিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।
“আমার বাবা মা খুব কষ্ট পাবে। আমাকে বুঝতে না দিলেও আমি বুঝতে পারি আমার বাবা অনেক কষ্ট করে। সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে চিন্তা করে। ভাবে ওনার টাকা নেই বলে আমাকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারবে না। আপনার পরিবার থেকে সমন্ধ আসার পরে কতো খুশি হয়েছিলো আমার বাবা সেটা আপনি জানেন না। বিয়ে ভেঙে গেলে আমার বদনাম হবে। বাবা মা কষ্ট পাবে। প্লিজ এমনটা করবেন না।
ভাঙা গলায় বলে নিধি।
চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে। আদির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।
আদি নিধির সামনে হাঁটু মুরে বসে। নিধির দুই গালে হাত দেয়।
” হেই কাঁদছো কেনো? কান্না থামাও
চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে। নিধি নাক টেনে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করে।
“আমি তোমাকে এসব বলতে চাই নি। আমাদের এইখানে তিন মাস থাকতে হবে। তো ভাবছিলাম এখানকার একটা কোচিং সেন্টারে তোমাকে ভর্তি করাতে চাই।
আদি শান্ত গলায় বলে।
নিধি চোখ মুছে নেয়। মুখটা এখনো গম্ভীর করে আছে।
” আমি তোমাকে মানতে পারছি না এটার কারণ তোমার বয়সটা। তাই বলে তোমাকে ডিভোর্স দেবো বা অন্য কাউকে বিয়ে করবো এটা ভাবি নি কখনো।
আবার নিধির পাশে এসে বসে বলে।
“তুমি যেমন আছো এখানে তেমন ভাবেই থাকবা। এতোসব তোমাকে ভাবতে হবে না। জাস্ট মন দিয়ে পড়ালেখা করো। ওকে
নিধির বাম গালে হাত দিয়ে বলে আদি। নিধি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
“খেয়েছো?
নিধি উওর দেয় না।
” জিজ্ঞেস করেছি কিছু। ঝাঁঝালো গলায় বলে আদি।
নিধি নরেচরে বসে।
“আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।
নিধি অভিমানীর সুরে বলে।
” ভাবতে হবে না? সিরিয়াসলি? ভাবতে হবে না। তারপর না খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাবে দেন আমাকে সেবা করতে হবে। ড্রামাটা বেশ ভালোই করতে পারো তুমি।
মাথায় হাত দিয়ে ছটফট করে বলে আদি।
নিধি চুপ করে আছে। কথা বলছে না। আদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটা কি কখনো কাউকে ভালোবাসে নি? সে কি জানে না ভালোবাসার অনুভুতি কেমন হয়? সে কি জানে না একটু মিষ্টি করে কথা বলতে হয়?
নিধি ভাবে।
“মঙ্গল গ্রহে পায়ে হেঁটে যাওয়ার মতো কোনো কিছু আবিষ্কার করছো না কি?
আদির কথায় নিধি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।
” যখনই ভাবি তোমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো। তখনই তুমি মাথাটা গরম করে দাও। কেনো বলোতো? ড্রামা না করলে কি তোমার চলে না?
“ড্রামা করি আমি? তো থাকেন না আমার থেমে দুরে
চেঁচিয়ে বলে নিধি।
” মুখে মুখে তর্ক করছো? সাহস তো কম না? চোখ রাঙিয়ে বলে আদি।
নিধির চোখে আবার পানি চলে আসে।
“আমাকে না রাগালে তোমার চলে না?
এক দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়।
” এটা কি হলো? এই তো ইমোশনাল কথা বললো। আবার রেগে গেলো কেনো?
আদি ভাবতে থাকে।

রুমের দরজা বন্ধ করে বই পড়ছে নিধি। চোখ ভিজে আসছে। কিন্তু কান্না পাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। আদি তো বকে নি। ডিভোর্সের কথাও বলে নি। তাহলে?
“আমি না সত্যিই ড্রামা করি। না হলে কেনো কাঁদছে? স্টুপিট একটা
নিধি নিজেকে নিজেই বকে।
ভালো করে চোখ মুছে মনোযোগ পুরোটা বইয়ের দিকে দেয়।
টম নিধির দরজার কাছে বসে লেজ নারাচ্ছে। আদি ফ্রেশ হয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে নেয়। টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিধির রুমের কাছে যায়।
” এই গাঁধি খেয়ে যাও। খাবার রেডি করেছি।
দরজায় টোকা দিয়ে বলে আদি।
নিধি শুনেও না শোনার ভাব ধরে জোরে জোরে বই পড়ে।
“সামনে আসলে কিন্তু ঠাটিয়ে চর মারবো তোমাকে। তারাতাড়ি দরজা খুলো।
রেগে বলে আদি।
নিধি আরও জোরে বই পড়ে।
” ইডিয়েট
আদি রাগে ফুসতে ফুসতে খেতে বসে। খেলে খাবে না খেলে নাই।
আদি কোনোরকম কয়েকবার খাবার মুখে দেয়। খাওয়া শেষল টমের সামনে খাবার রাখে।
“খেয়ে নে
টম একবার নিধির রুমের দিকে তাকায়। দুইবার ঘেউ ঘেউ করে ডাকে। তবুও নিধি সারা দেয় না।

আদির অফিসে জুঁই জয়েন করেছে। বস আদি আর জুঁইকে এক টিমে কাজ করতে বলেছে। আদির মাথা গরম হয়ে আছে। সে জুঁইয়ের সাথে কাজ করতে চায় না। এখন চাকরিটাও ছাড়তে পারছে না। এতোভালো চাকরি ছেড়ে দিলে করবে কি? আবার জুঁইয়ের সাথে মিলে কাজ করতেও ভালো লাগছে না।
আদি সারা রুম পায়চারি করছে। কোনো উপায় বের করতে পারছে না।
আবার নিধি খেলো না তাতেও কেমন লাগছে।
” পাগল হয়ে যাবো আমি
আদি মাথায় হাত চেপে বসে পড়ে।

নিধি বেলকনিতে যায়। পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গেছে। বেলকনিতে যেতেই দেখতে পায় গেটের কাছে একটা সুন্দর মাঠ সেখানে কিছু পিচ্চি ছেলে ফুটবল খেলছে। মুহুর্তেই নিধির মুড ভালো হয়ে যায়। খুব করে ইচ্ছে করছে ওদের সাথে খেলতে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে না রেখে নিধি ড্রেসটা পাল্টে দরজা খুলে। সাথে সাথে টম দাঁড়িয়ে লেজ নারায়।
“খেলতে যাচ্ছি। চল
নিধি খুশি হয়ে বলে।
মপইন দরজার কাছে এসে চুপিচুপি দরজা খুলে। দরজা না আটকেই নিধি আর টম দৌড়ে চলে যায়।

বাচ্চাদের দুই তিনবার খেলার জন্য বলতেই বাচ্চারা নিধিকে খেলতে নেয়।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে মাঠের ঘাস গুলো ভিজে গেছে। খালি পায়ে তারওপর দৌড়ে বল খেলছে। দারুণ লাগছে নিধির। টম এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

আদি পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হয়ে গেছে মেইন দরজা খোলা।
” এটা কে খুললো?
নিধির রুমের দিকে তাকিয়ে দেখে নিইর রুমও খোলা। চোয়াল শক্ত করে আদি। বুঝে যায় নিধি বাড়ির বাইরে গেছে। আদিও বের হয়।
উঠোনে আসতেই দেখতে পায় নিধি বাচ্চাদের সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে ফুটবল খেলছে।
“দুনিয়ায় যত পাগল আছে সব কেনো আমার ঘাড়ে এসেই পড়ে?
আদি বিরবির করে বলে।
নিধিকে কয়েকবার ওই ওই বলে ডাকে নিধি শুনে না। পরে বাধ্য হয়ে এগিয়ে যায়। মাঠের মধ্যে দাঁড়াতেই নিধি বলটাকে লাথি মারে আর বলটা আদির মুখে এসে লাগে।
নিধি আদিকে দেখে চমকে যায়। বাচ্চারাও দৌড়ানো বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়। বলের কাঁদা আদির মুখে লেগে গেছে। নিধি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়। আদি কটমট চোখে নিধির দিকে তাকায়।
” আজ আর মার্ডার হওয়া থেকে নিধিকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
নিধি বিরবির করে বলে।
আদি রাগে গজগজ করতে করতে নিধির দিকে এগোয়। নিধি বাচ্চাগুলোর পেছনে লুকায়।
আদি বাচ্চা গুলোকে সরিয়ে নিধির কাছে গিয়ে কান ধরে।
“আমি কিছু করি নি
বলে নিধি কান্না শুরু করে দেয়।
” আজ তোমার নেকামো তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে