শুধু তুই ৩ পর্ব-০১

0
2319

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana

“আই লাভ ইউ।আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। এখনই। এখান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই একটা কাজি অফিস পাওয়া যাবে। সেখানেই আমরা বিয়ে করবো। আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হন তাহলে আমি সুইসাইড করবো।
মাথা নিচু করে এক নাগারে কথা গুলো বলে নিধি। সামন থাকা মানুষটার দিকে তাকানোর সাহস নেই। ভয়ে বুক ধুকবুক করছে। এই বুঝি ঠাটিয়ে একটা চর বসিয়ে দিলো। এই লোকটার রাগ সম্পর্কে জানে নিধি। কিছুখন আগেই একটা মেয়ের ওড়নায় লোকটার হাত স্পর্শ করেছিলো বলে মেয়েটাকে পরপর পাঁচটা চর মেরেছে। মেয়েটা ভয় আর ব্যথায় অঙ্গান হয়ে গেছে। পরে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

” এই মেয়ে কি বলছো তুমি এসব? মাথা ঠিক আছে তো?
আদির পাশে থাকা ছেলেটি নিধির দিকে এগিয়ে এসে বলে। নিধি ভয়ে সিঁটিয়ে যায়।
“মজা করার মানুষ খুঁজে পাও না? বাঘের লেজে পা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনছো কেনো?
আশিক বলে।
ইভা চলে আসতে নেয়।
” স্টপ
আদি বলে ওঠে। নিধি ভয়ে চমকে ওঠে। পা আপনাআপনি থেমে যায়।
হাত কচলাচ্ছে নিধি।
আদি নিধির সামনে এসে দাঁড়ায়।
“আশিক থাম তুই। ওকে বিয়ে না করলে ও তো সুইসাইড করবে। আজ আমি ওর বিয়ের শখটা মিটিয়ে দেবো।
শেষের কথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।
” আদি লিসেন
আদি হাত উঁচু করে আশিককে চুপ করিয়ে দেয়

আদি আচমকা নিধির হাত ধরে। ইভা চট করে চোখ তুলে তাকায় রাজের দিকে। চোখে মুখে ভয় বিদ্যমান। আদির চোখের চাহনি শান্ত। এই শান্ত চাহনিতে বেশি ভয় করছে ইভার।
” আআআসসসলে ওর
আদি নিধিকে টান নিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিধি তাক সামলাতে না পেরে আদির বুকে গিয়ে পড়ে। আদি এক হাতে নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে আর আরেক দিয়ে নিধির ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখে।
“ইসসসসস কোনো কথা না। যা বলার বলে ফেলেছো। এবার আমার যা করার করবো।
নিধির চোখে পানি চলে আসে।
” সসরি আআসলে
“বয়স কতো তোমার?
আদি নিধির দিকে একটু ঝুঁকে বলে। যাতে আদির মুখের সিগারেটের গন্ধ নিধির পুরো মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে।
নিধি কথা বলার মতো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। নিজের বয়সটা বলবে তাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
” এন্সার মি
দাঁত কটমট করে বলে আদি।
“১৬
আদি নাক সিটকায়।
” বিয়ের শখ মিটিয়ে দিবো আজ। আর কখনো কোনো ছেলেকে বিয়ের কথা বলতে গেলে আজকের দিনটার কথা মনে পড়বে।
“আদি শোন
আশিক আহাজারি করে বলে।
আদি আশিকের দিকে তাকাতেই ছেলেটা পিছিয়ে যায়।
আদি নিধিকে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে গিয়ে দজা বন্ধ করে দেয়। ভয়ে সিঁটিয়ে যায় নিধি। এবার খারাপ কিছু হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।

আদি নামটাকে মোটামুটি সবাই ভয় পায়। খুব বদমেজাজি মানুষ। কারো সাথে ভালো করে কথা বলতে জানে না। নিধির কাজিনের বিয়ে। নিধির কাজিন শুভর অফিসের বস আদি। তাই তাকেও ইনভাইট করেছে। আদি কিছুখনের জন্য এসেছে। তার সাথে এসেছে কয়েকজন সিকিউরিটি। তারা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকতে দেয় নি আদি। এই পরিবেশ একদম ভালো লাগছে না ওর। তাই এক পাশে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। আর পাশে দাঁড়িয়ে আশিক চারপাশ দেখছিলো। আশিকের খুব করে বিয়ের অনুষ্ঠানটা উপভোগ করতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আদির ভয়ে আদির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।

নিধি আর ওর অন্য কাজিনরা মিলি ট্রুথ ডেয়ার খেলছিলো। সবাই মিলে নিধিকে ডেয়ার দেয় আদিকে প্রপোজ করার। নিধি সব সময় নিজেকে সাহসি বলে পরিচয় দেয়। নিধি প্রথমে রাজি না হলেও পরে ওদের জোরাজুরিতে রাজি হয়। এমনিতে নিধি অনেক সাহসী। কখনো আদিকে সামনে থেকে দেখে নি। দুর থেকে দেখেছে অনেকবার। অনেক সাহস সঞ্চয় করে আদির দিকে যাচ্ছিলো তখন দেখে আদি একটা মেয়ে থাপ্পড় দিচ্ছে শুধুমাত্র ওড়নাতে হাত বাঁধার জন্য।
নিধি দৌড়ে ওর কাজিনদের কাছে যায়।
” আমি পারবো না ইয়ার। নিধি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে।
“এই তোর সাহস ছিঃ
মনা বলে।
” নিধি তুই ভীতু মেনে নে। তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না
রনি বলে।
“আমি যাবো। প্রপোজও করবো। আমি কাউকে ভয় পায় না।
নিধি বুক ফুলিয়ে বলে।
” তো যা
ওদের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়।

দরজা বন্ধ করে আদি পেছন ঘুরে নিধির দিকে তাকায়। নিধি ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
ফ্লোরের এদিক সেদিন চোখ ঘুরাচ্ছে। হাত দিয়ে অনবরত পানি মুছে যাচ্ছে।
” বিয়ে করবে আমায়? ফুলসজ্জা করবে আমার সাথে? বিয়ে না করলে সুইসাইড করবে? রাইট?
নিধির দিকে এগোতে এগোতে বলে আদি। নিধি পিছিয়ে যায়।
“আআআমি বললছি তো সসরি
ইভা হেঁচকি তুলে বলে।
” সাট আপপপপপপপ
আদির ধমকে ছিঁটকে পরে যায় নিধি। হাতের কাছে টেবিল থাকায় টেবিলের ওপর পড়ে যেতে নেয় হাত দিয়ে সামলে নেয়। টেবিলের ওপরের কাঁচের গ্লাস গুলো নিচে পুরে গুড়ো গুড়ো হয়ে যায়।
“তা কতো ছেলেকে এভাবে প্রপোজ করা হয়েছে? এটা কি তোমার জন্মগত স্বভাব? ছেলে দেখলেই নিকনিক করতে ইচ্ছে করে? ছেলেদের সাথে ছোঁয়া ছুঁয়ি করতে ভালো লাগে? বিয়ের প্রপোজাল দিতে ইচ্ছে হয়?
আদির কথা গুলো বিষের মতো বিঁধছে নিধির গায়ে।
” ইডিয়েট আদিল চৌধুরীকে বিয়ে করবে তুমি? তোমার সে যোগ্যতা আছে?
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় নিধির। আর পেছানোর জায়গা নেই। আদি দেয়ালের দুই পাশে হাত রাখে।
“আআমাকে ওরা ডেয়ার দিয়েছিলো। হেঁচকি তুলে বলে নিধি।
নিধির কথা আদির কান ওবদি পৌছায় না। বা কানে তুলে না।
“জাস্ট সাটআপ। ডেয়ার দিয়েছিলো? এসব ডেয়ার ফেয়ার না জাস্ট তোমার চরিএের দোষ।

এবার শব্দ করে কাঁদে নিধি। এতো অপমান আর সয্য হচ্ছে না।
” নেকামো পছন্দ না আমার। আমার সামনে একদম নেকামো করবে না। তাহলে মেরে পুঁতে ফেলে রেখে দেবো।
নিধির মুখের একদম কাছে মুখ নিয়ে বলে আদি।
মুখে সিগারেটে মারাক্তক বিশ্রি গন্ধ। মনে হয় সিগারেট খেতে খেতে ভীতরটা সিগারেটময় হয়ে গেছে। নিধি হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে।
আদির কপালের রগ হ
গুলো অদ্ভুত ভাবে ফুলে উঠেছে। নিধি মনে মনে কারো হেল্প চাইছে। ভয়ংকর লাগছে আদিকে। এখান থেকে বেঁচে কি করে ফিরবে সেটাই ভাবছে।

“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আর কখনো এমন করবো না। আমি কখনো আপনার সামনেই আসবো না। ছেড়ে দিন আমায়।
নিধি হাত জোর করে বলে।
আদি অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকায় নিধির দিকে।
” আদিল চৌধুরীর ডিকশনারিতে হ্মমা শব্দটা নাই। যে ভুল করে তাকে শাস্তি পেতেই হয়। সো ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই উঠছে না।

আদির কথা শুনে নিধও থেমে যায়। কান্না বন্ধ করে দেয়। সামান্য প্রপোজ করার জন্য এতো কিছু? আর বোধহয় এই সাইকো লোকটার থেকে বেঁচে ফেরা হলো না।

চলবে

শুধু তুই সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

শুধু তুই সিজন-০২ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে