শুধু তুই পর্ব-২২+২৩

0
2511

#শুধু তুই
#পর্বঃ২২
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ানের কেবিনে সায়ান যে চেয়ারটাতে সায়ান বসে তুলি সেখানে বসে।

“ম্যাম স্যার খুব রেগে যাবেন

” কেনো?

“এই চেয়ার কেউ টাচ করলেই স্যার বকাবকি করে আর আপনি তো বসেছেন

” আমি কে😎

“কে আপনি

” সায়ানের বউ

“হুম জানি। তবুও

” যাও আমার জন্য কফি নিয়ে আসেন

“কিন্তু

” যেতে বলছি

মায়া হতাশ হয়ে চলে যায়। তুলি এবার টেবিলের ওপর পা রেখে বসে। কিছুখন বসে তুলির বিরক্ত লাগে।

“সায়ান ঠিকি বলে। আমি সত্যিই স্টুপিট। পাঁচটা মিনিটও চুপ চাপ বসতে পারি না।

তুলি ঘুরে ঘুরে সবটা দেখছে। আলমারির পেছনে একটা ময়লা একটা চিঠির খাম দেখে। তুলি সেটা তুলে ময়লা পরিষ্কার করে খুলে দেখে তাতে সায়ান আর জুঁইয়ের হাসি মাখা অনেক ছবি।আর একটা চিঠি। তাতে লেখা

” তোর এই হাসি মাখা মুখটা আমার একদম সয্য হয় না। বিরক্ত লাগে। তোর চোখের পানির মাঝেই আছে আমার ভলো থাকার মেডিসিন। জুঁইকে খুব তারাতাড়ি আমি আমার করে নেবো। রেডি থাক। আর হ্যাঁ এর পরও যদি কোনো মেয়ে তোর হাসি মুখের কারণ হয় আমি তাকেও তোর থেকে দুরে করে দেবো। আই প্রমিজ

এটা তো রিতিনত থ্রেট। সায়ানকে কেউ দিয়েছিলো চিঠিটা। সায়ান নিশ্চয় এটা পড়ে এখানে ফেলে দিছে। আমি শিওর চিঠিটা নিরব দিছে। আর আমি এটাও শিওর নিরব বেঁচে আছে। নিরব কি এখন আমাকে টার্গেট করবে? আর জুঁই আপু উনি কোথায় গায়ের হয়ে গেলো

এসব আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনা করছে তুলি। জিসান যে কখন থেকে তুলিকে ডাকছে সেদিকে তুলির খেয়াল নেই। জিসান এবার তুলির মাথায় গাট্টা মারে

“কি হয়েছে?

” কখন থেকে ডাকছি তোকে

“কেনো ডাকছিস

” দোস্ত

তুলি চোখ ছোট ছোট করে জিসানের দিকে তাকায়।

“হেল্প মি

” কেসটা কি

“আগে বস

তুলি চিঠিটা আগের জায়গায় ফেলে বসে. জিসান তুলির পায়ের কাছে বসে

” একটা ভুল হয়ে গেছে

“কি রকম

” তন্নি প্রেগন্যান্ট

তুলি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“কিহহহহহহহহহহ

জিসান তুলি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান সোফার পেছনে চলে যায়।

” এতো নোংরা তুই ছি। আমার ভাই তুই এটা ভাবতেই লজ্জা লাগছে

“এতো ছি ছি করার কি আছে? ভালোবাসে তন্নিকে। বিয়ে করবে

” এটাকে ভালোবাসা বলে?

“হুম এটাকেই ভালোবাসা বলে। কতো ফাস্ট জিসান দেখছেন। বিয়ের আগেই বউ প্রেগন্যান্ট। আর আপনি বিয়ের তিন বছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত একটা কিছও করেন নাই। আবার বড় বড় কথা বলছেন।

” আমিও তো তন্নিকে কিছ কি হাতটাও ধরি নি

জিসান সোফার পেছন থেকে বলে। সায়ান তুলি দুজনই অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকায়

“মানে

জিসান এবার সোফার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে

” মানে না আমিও বুঝতেছি না। সকাল থেকে তন্নির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। আমি কিছু করি নি

সায়ান তুলি দুজনই ফিক করে হেসে ওঠে। জিসান হাবলার মতো তাকিয়ে আছে

“আমার মান সম্মান নিয়ে টানাটানি আর তোমরা হাসছো

” পাগল ওর গ্যাসে পবলেম হইছে তাই এমন হইতেছে।

তুলির কথায় জিসান বুকে থু থু নেয়

“আল্লাহ বাঁচছি।

” এতো গাধা কেনো তুই

“এক ভাই গাধা আর একটা নিরামিষ

জিসান কাশি দেয়। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকায়।
সায়ানের জরুরি মিটিং থাকায় তুলিকে একা বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে। তুলি জুজুকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। তাই জুজুর স্কুলের যায়। স্কুল ছুটে হতে এখনো দশ মিনিট বাকি আছে। তাই তুলি স্কুলের চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে

” এক্সকিউজ মি

কোনো একটা ছেলের কন্ঠ শুনে তুলি পেছনে তাকায়। দেকে একজন সু দর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার হাসি।

তুলি এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলে

“আমাকে বলছেন?

ছেলেটা মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

” জ্বী আপনাকে বলছি

“বলুন

” নাম কি আপনার?

“সরি

” আরে নাম জিজ্ঞেস করলে নাম বলতে হয়। কিন্তু আপনি সরি বলছেন তো আমি কি ধরে নেবো আপনার নাম সরি

তুলি বোকার মতো তাকিয়ে আছে

“সরি কি আপনার ডাক নাম

“যদি ভাবেন আপনি আমাকে পটাবেন তো আমি বলবো আপনি রং নাম্বারে ডায়াল করেছেন

ছেলেটা এবার হো হো করে হেসে ওঠে। হাসলে ছেলেটাকে মারাক্তক সুন্দর লাগে

” এই ছেলে কি পাগল না কি? এতো সুন্দর ছেলে পাগল?
তুলি মনে মনে ভাবছে

“আপনি যে দাঁত ব্রাশ করেছেন সেটা আমি জানি। দাঁত কেলিয়ে দেখাতে হবে না

” হুম ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করছি কিন্তু আফসোস আপনি এখনো দুরেই দাঁড়িয়ে আছেন। কাছে আসলেন না

“কোন দেশের পাগল আপনি

ছেলেটা হাসি দ্বিগুন বেড়ে যায়। এই মুহূর্তে ভয়ংকর সুন্দর ছেলেকে তুলির বিরক্ত লাগছে। তাও আবার প্রচন্ড বিরক্ত

তুলি যেতে নেয় ছেলেটা তুলির সামনে দাঁড়ায়

” হোয়াট

“জাস্ট নামটা জানতে চায়

” আমি বিবাহিত একটা মেয়ে আছে

“নাম, এসব না

” বললাম তো বলবো না

“কেনো?

” কেনো বলবো?

“জিজ্ঞেস করছি তাই

” বলবো না বলবো না বলবো না

তুলি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কি বিরক্তিকর লোকরে বাবা।

মনে মনে ছেলেটাকে হাজারটা গালি দিচ্ছে আর হাঁটছে তুলি।

রাতে তুলি বেলকনিতে বসে আছে। হাজারটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সায়ান তুলির পাশে এসে বসে

“কি ভাবছো?

” কতো কিছু

“যেমন

” আমার বেবি চায়

সায়ান বেষম খায়। তুলি টুস করে সায়ানের গালে একটা পাপ্পি দেয় আর আপনা আপনি সায়ানের কাশি থেমে যায়

“বাহহ আমার পাপ্পির কি জাদু

” ভয়ংকর ইডিয়েট তুমি

“আর

” কিছু না

তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়েই আছে

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

” ভয় পাচ্ছেন

“ননা তো

” তাহলে সমস্যা কি তাকিয়েই থাকি

না মানে

“না মানে কি

” তুমি খেয়েছো?

“খাই নি খাবো

” চলো খায়। আমিও খাবো

“কি

” কি মানে কি

“ধুর একটু রোমান্টিক মুডে ছিলাম নষ্ট করে দিলো

তুলি বিরক্তি নিয়ে বলে। সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তুলি সায়ানের কাঁধে মাথা রাখে।

“আমি আপনাকে ভালো বাসতে চায়। আপনার সাথে থাকতে চায়। আপনার হাসি মুখের কারণ হতে চায়। আপনার বেবির মা হতে চায়

সায়ান তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর তুলির কথা গুলো শুনছে।

” আপনি কি আমার হবেন

সায়ান কিছু বলছে না। তুলির সায়ানের কাঁধ থেকে মাথা তুলে সায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়

“বললাম তো আমার একটু সময় চায়। একটু সময় দাও।

তুলি কিছু না বলে রুমে চলে যায়

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ২৩
#Tanisha Sultana (Writer)

কিছুদিন পরেই এক্সাম। তাই তুলি আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছে। সায়ান তুলিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিবে। সায়ান ডাইভ করছে তুলি পাশে বসে আছে

“শুনুন না

” বলুন

“আমাকে কেমন লাগছে

” সব সময় যেমন লাগে তেমন

“নিরামিষ

” আই নো। নতুন কিছু বলো

“ভাল্লাগে না

” আমাকে

“হুররর

” পাগলি
সায়ান মুচকি হেসে বলে।

“আমার সামনে হাসবেন না

” কেনো?

“খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে

” কিসব যে বলো

“তুমি তো ফিটার খাও বুঝবা না

” বোঝার দরকার নেই।

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামায় সায়ান

“নামেন

তুলি সায়ানের গালে একটা কিছ করে বেরিয়ে যায়।

” সাবধানে যাইয়েন। পৌঁছে আমাকে কল করবেন। না করলে খবর আছে

তুলি চলে যায়। সায়ান মুচকি হেসে বলে

“আমি তো চায় তুলির সাথে স্বাভাবিক হতে। কিন্তু পারছি না। কেনো পারছি না? যদি জুঁইয়ের মতো তুলিকেও হারিয়ে ফেলি। না না এটা আমি হতে দেবো না

ভার্সিটিতে তুলির কোনো ফ্রেন্ড নেই। তুলি একা একা ক্লাসে বসে আছে।

“হেই

তুলি সামনে তাকিয়ে দেখে ওই দিনের সেই ক্লোজ আপ ছেলেটা।

” এ এখানে কেনো?

ছেলেটা তুলির সামনে এসে দাঁড়ায়। একগাল হেসে বলে

“এখন যে স্যারের ক্লাস সে আসে নি তো ক্লাস হবে না।

” জানতে চায় নি

“কিন্তু আমার জানাতে ইচ্ছে হলো।

ছেলেটা তুলির সামনে বসে।

” ফ্রেন্ডশিপ করবা

“নাা

” কেনো?

“আলরেডি এক ফ্রিজ ফ্রেন্ড আছে।

ছেলেটা হো হো করে হাসে

” ডিজগাস্টিং

তুলি বিরক্ত হয়ে উঠে ক্লাসের বাইরে যায়। ছেলেটাও তুলির পিছনে যায়

“আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেনো

“কিছু শেয়ার করতে চায়

” কিহহহ

“আমার দুঃখ কমাতে চায়

তুলি কিছু না বলে ঘাসের উপর বসে। ছেলেটা তুলির থেকে একটু দুরে বসে

“জানেন সময় হলো পৃথিবীর সব থেকে বড় বেইমান। একটা সময় আমি হাসতে পারতাম না আর এখন কাঁদতে পারি না।

তুলি মন দিয়ে শুনছে।

” আমিও একদিন এই ভার্সিটিতে পড়তাম। আমার কলিজার ফ্রেন্ড ছিলো তিনটা। সব সময় আমরা চার জন এক সাথে থাকতাম। মজার বেপার কি জানো আমরা চারজন মিলেমিশে দুজন হয়ে গেছিলাম

তুলি ভ্রু কুচকে বলে

“মানে

” মানে আমি ভালোবাসতাম প্রিয়াকে আর সায়ান জুঁইকে।

সায়ান নামটা শুনে তুলি চমকে ওঠে। ছেলেটা একটু হাসে

“আমি প্রিয়াকে এতোটা ভালোবাসতাম। ভীষণ ভালোবাসতাম। কিন্তু সায়ান প্রিয়াকে মেরে ফেলেছে

” মানে

তুলি জোরে বলে। ছেলেটা হো হো করে হাসে। তুলি ঘাবড়ে যায়

“হাসছেন কেনো?

” এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? চলো তোমায় দেখাবো আমার প্রিয়াকে।

ছেলেটা তুলির হাত ধরে টেনে হিচরে নিয়ে যাচ্ছে।

“আমি যাবো না ছাড়েন আমার

ছেলেটা তুলির কোনো কথা শুনছে না। তুলিকে টানতে টানতে ভার্সিটি থেকে অনেকটা দুরে একটা কবরের সামনে নিয়ে আসে। কবরটা সুন্দর করে সাজানো। নিরন প্রিয়া লেখা।

” দেখো আমার প্রিয়াকে।

কবরের পাশে বড় একটা ছবি টাঙানো। সেই ছবিটা যেটা তুলি বিয়ের দিন সায়ানের রুমে দেখেছিলো। তুলি ছবিটা ছুঁতে যায়। ছেলেটা বাধা দেয়

“এটা ধরবে না

” কেনো?

“আমার প্রিয়াকে আমি ছাড়া আর কেউ ছুঁবে না

” আপনি নিরব। জুঁইয়ের হাজবেন্ড।

“আমি নিরব শুধু নিরব। প্রিয়ার নিরব আর কিছু না

নিরব চেচিয়ে বলে। তুলি ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
নিরব শব্দ করে হাসছে। তুলির খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে আপনার ফুটফুটে একটা পরি আছে কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।

তুলি দৌড় দেয়। এক দৌড়ে ক্লাসে চলে আসে।

রাতে তুলি জুজুকে খাইয়ে রুমে এসে দেখে সায়ান সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি চিকচিক করছে।

” কি হয়েছে?

সায়ান চোখের পানি মুছে নেয়। তারপর একটু হেসে বলে

“কিছু না

তুলি বেডে বসে বলে

” কি বেপার বলেন তো? আগে গোমড়ামুখো হয়ে থাকতেন আর এখন কথায় কথায় হাসেন।

সায়ান তুলির পাশে বসে বলে

“ইদানীং আমার ব্যবহারে আমিই অবাক। জানি না কি হয়েছে?

তুলি সায়ানকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে

“প্রেমে টেমে পড়লেন না কি?

“জানি না

” জানেন ডা কি

“সেটাও জানি না

“এই কিছ ইউ

” হপ

“ধমক দেন কেন

” বলো কি

তুলি সায়ানের কলার ধরে সায়ানকে কাছে নিয়ে আসে

“তুলি প্লিজ

তুলির কিছু শোনার মুডে নেই। যেই তুলি সায়ানকে কিছ করবে তখনই সায়ানের মা চলে আসে

” কি অবস্থা

তুলি সায়ান দুজনই ছিটকে দুরে সরে যায়। সায়ানের মা গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। তুলি আমতাআমতা করে বলে

“আন্টি আপনি

সায়ানের মা ধমকের সুরে বলে

” দরজা খোলা রেখে এসব কি হচ্ছে

“আসলে আপনার ছেলে যে নিরামিষ। কোনোরকম চান্সটা পেয়েছিলাম। কিন্তু আপনার জন্য কিচ্ছু হলো না

তুলির এরকম কথা শুনে সায়ান আর সায়ানের মা দুজনই বড় বড় চোখ করে তাকায় তুলির দিকে। তুলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

” আমার কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি গোলুমোলু একটা নাতি নাতনি চায়

তুলি খুশি হয়ে শাশুড়ীকে টেনে বিছানায় বসায় আর নিজেও বসে

“তোমার ছেলেকে বলো। ও তো আমাকে

আর কিছু বলার আগেই সায়ান মুখ চেপে ধরে

” মা তুমি কিছু বলতে এসেছিলে।

“হুমম। কাল তন্নি আর জিসানের পাকা কথা বলতে যাবো তাই বলতে এসেছি

তুলি মুখ ছাড়িয়ে নিয়ে বলে

” আমিও যাবো

“ঠিক আছে

শাশুড়ী চলে যায়। সায়ান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলির দিকে।

” এএভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

তুলি ভয়ে ভয়ে বলে।

“সব সময় আমাকে ছোট করো কেনো?

তুলি খাটের অন্য পাশে যায়।

” সরি

সায়ান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

“এতো রেগে গেলো কেনো?

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে