শুধু তুই পর্ব-১৩+১৪

0
2501

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“আমি করলার গাড়িতে যাবো না

তুলি উল্টো পথে হাঁটা ধরে বলে। সায়ান বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নামে। জিসান তুলির হাত টেনে ধরে

” জিসান হাত ছাড়

“আমি আর কোনো ড্রামা দেখতে চাচ্ছি না

তুলি জিসানের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়

” জিসান চল আমরা বাসে করে যাবো

“কিহহহহ

” শুনতে পাস নাই? চিল্লিয়ে বলতে হবে না কি?

“জিসান তুই আমার সাথে যাবি আর এই মেয়েটাও। সায়ান বলে।

” আমি যাবো না

সায়ান তুলির হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দরজা লক করে দেয়

“ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
তুলি বেরোনোর চেষ্টা করতে করতে বলে। সায়ান গাড়ি স্ট্রার দেয়। জিসান দৌড়ে এসে কোনোরকম গাড়িতে ওঠে।

সায়ান ডাইভ করছে। তুলি ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছে। জিসান শার্ট খুলে তুলির দিকে এগিয়ে দেয়

” এটা পড়ে নে

“বাই এনি চান্স তুই কি হিরো হওয়ার চেষ্টা করছিস

” মানে

“সাধারণত হিরোরা হিরোইনদের শার্ট জ্যাকেট এগুলো দেয়।

” আমার হিরে হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই জাস্ট তোর ঠান্ডা লাগছিলো তাই দিছিলাম।

“আমার ড্রেস ভেজা তো তুই তোর শার্ট দিয়ে কি ঠান্ডা কমাবি?

জিসান বিরক্তি নিয়ে তুলির দিকে তাকায়

” তুই মানুষ হবি না

“গরুকে ঘোড়ার দৌড় শেখানোর বিথা চেষ্টা করছিস তুই।
সায়ান জিসানকে বলে।

” জিসান করলাকে সাট আপ হতে বল নয়ত আমি জুঁই ফুলের রস খাইয়ে দেবো

“স্টুপিট

” আই নো

তুলি বাড়ির পেছনের দিকে যাচ্ছে

“ইডিয়েট টা ওদিকে যাচ্ছে কেনো?

” বুঝতেছি না।

“চল তো

” কোথায় যাস

তুলি ইশারায় চুপ করতে বলে

“আস্তে কথা বল

” কেনো?

“তোর করলা মা যদি জানতে পারে আমি চলে গেছিলাম আবার ফিরে এসেছি তো আমাকে অস্ত গিলে খাবে

” তো এখন কি করতে চাইছিস

“জানালা দিয়ে রুমে যাবো

” হোয়াট?

সায়ান চেচিয়ে বলে।

“জিসান ওনাকে গলা ফাটাতে না কর

” তুলি তুই অন্ধকারে কি করে যাবি

“দেখ না

তুলি চোরের মতো লুকিয়ে রুমে ঢুকে যায়।

” পাগল একটা
সায়ান বিরবির করে চলে যায়।

তুলি ড্রেস চেঞ্জ করে উকিলের সাথে কথা বলে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওদের ডিভোর্স পেপার চলে আসবে। তুলির খুশি আর দেখে কে। খুশিতে নাগিন ডান্স করতে ইচ্ছে করছে তুলির।

সায়ান রুমে আসে। তুলি সায়ানকে ঘুরাতে থাকে। সায়ান ঠাস করে বেডে বসে পড়ে

“কি হচ্ছে?
সায়ান রেগে বলে। তুলি কানে হাত দিয়ে বলে

” সরি
তারপর সায়ানের পাশে বসে

“আর এক সপ্তাহ পরেই আমি চলে যাবো। আপনাকে মুক্তি দেবো। কি যে আনন্দ হচ্ছে

সায়ানের বুকের মধ্যে মোচড় দেয় তুলির চলে যাওয়ার কথা শুনে। ফ্যালফ্যাল চোখে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে

” খুশিতে দেখি আপনার কথায় বন্ধ হয়ে গেছে। জানেন আপনিই ফাস্ট পারসোন যে আমাকে অপছন্দ করে। জানেন আমি এতো অকাম করি দুষ্টুমি করি তবুও সবাই আমাকে ভালোবাসে। আর আপনার আর আপনার মায়ের সামনে এতো ভালো বিহেব করি তবুও আপনারা আমাকে দুচোখে দেখতে পারেন না।

“এক সপ্তাহ

” অনেক সময় তাই না। কিন্তু কি করবো আর আগানো গেলো না সময়। জানেন আমি তো প্লান ও করে ফেলেছি ফিউচারে কি করবো

“কি করবেন?

” একটা রোমান্টিক ছেলে কে বিয়ে করবো। যে আমাকে ভালোবাসবে। আমার সব আবদার পূরণ করবে। অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে না। আমাকে মারবে না। তবে চিন্তার বিষয় এমন ছেলে পাবো কই

তুলি গালে হাত দিয়ে ভাবছে।
“আচ্ছা জিসানকে বিয়ে করলে কেমন হয়? জিসানকে ঘর জামায় করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। কেমন আইডিয়াটা

সায়ান কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়।
ভোর পাঁচটায় তুলির ঘুম ভাঙে। পাশে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই।

” গোমড়ামুখোটা কোথায় গেলো? নিশ্চয় গার্লফ্রেন্ডের কাছে চলে গেছে। যাক না আমার কি? চলেই তো যাবো

তুলি উঠে বেলকনিতে চলে যায়। দেখে সায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। তুলি পা টিপে টিপে গিয়ে সায়ানের পাশে দাঁড়ায়। তারপর সায়ানের কানের কাছে মুখ নিয়ে জোরে চিৎকার করে। সায়ান ভয় পেয়ে যায়। তুলি জোরে জোরে হাসতে থাকে।

“স্টুপিট

” হুম। আমি তো ভেবে নিয়েছি

তুলি সায়ানের পাশে বসে। সায়ান ভ্রু কুচকে বলে

“কি

” যে কটা দিন আছি আপনাকে জ্বালিয়ে পুরিয়ে মারবো। জানি প্রচুর বিরক্ত হবেন আমাকে ধমক দিবেন তবুও জ্বালাবো

“কেনো

” কারণ আপনাকে জ্বালাতে ভালো লাগে।

“ইডিয়েট

” ভাবছি

“কি

” আমি চলে গেলে আপনি কাকে ইডিয়েট বলবেন

“হুম

সায়ান আস্তে করে বলে।

” জুজুর সাথে কথা হয়েছে

“সরাসরি বললেই তো পারেন জুঁইয়ের সাথে কথা বলেছি কি না

“একই হলো। তাছাড়াও আমার কোনো আপত্তি নেই আপনার যা ইচ্ছে করেন আমার কী?

” হুম

“কি হুম হুম করছেন?

” একটা কথা বলবো

“বলেন

” জুজুর বাবাকে আমি মেরে ফেলেছি

তুলি চারশো বিশ বল্ডের শক খায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সায়ান স্বাভাবিক ভাবে আছে।

“কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গেছিলাম। অনেক রাত ওবদি গান বাজনা করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরি। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি আমার হাতে চাকু আর পাশে জুজুর বাবার লাশটা পড়ে আছে।

সায়ান চোখের পানি মুছে। তুলির চোখেও পানি। এই মানুষটা খুন করছে। কথাটা হজম হচ্ছে না তুলির। কয়েকপা পিছিয়ে যায় তুলি।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana (Writer)

ছাঁদে পায়চারি করছে করছে তুলি।

“সায়ান করেছে খুন। কি করে পসিবল। উনি তো মনে হয় একটা মসাও মারতে পারবে না। সব কেমন গোলমেল লাগছে।

” কি রে

জিসানের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।

“তুই

” চল বসি

তুলি আর জিসান দোলনায় বসে।

“মুড অফ

” নাহ তো

“তাহলে চুপচাপ কেনো?

” ভাবছি

“কিহহ

” ওই দেখ আম গাছ

তুলি পাশের ছাঁদে দেখায়।

“তো

” তো এখন আম চুরি করবো

জিসান পড়ে যায়। তুলি টেনে তোলে

“চুরি করমু

” হুম

“চল

” দেখ

“দেখমু কি?

” চুরি করা মহা পাপ

তুলি জিসানের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।

“যাচ্ছি তো চল

তুলি গাছে উঠছে জিসান নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

” তাড়াতাড়ি কর কেউ চলে আসবো

জিসান

পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। জিসান চমকে ওঠে।

“তুই ওখানে কি করছিস

” ননননা মমমমমাননননে

“তুতলাসছিস কেনো?

” জিসান কে রে

তুলি গাছ থেকে বলে। সায়ান গাছের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় করে

“আপনি ওখানে কেনো?

” চুরি করতে এসেছি

“মানে

” আস্তে কথা বল ব্রো নইলে

“নইলে কি? আমি এখন চিৎকার করবো

তুলি সায়ানের মাথায় আম ফেলে

” আহহহ

“আর একবার কথা বললে মাথা ফাটায় ফেলমু
জিসান ধর

তুলি আম ফেলে জিসান কুরায়। সায়ান হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

” গাছে কে?

নিচ থেকে গাছের মালিক বলে
তুলি তাড়াহুরো করে নামতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে যায়। তাও আবার সায়ানের ওপর। জিসান হাত বাড়িয়ে দেয় তুলি হাত ধরে টান দেয় ফলে সায়ান নিচে তারওপর তুলি তারপর জিসান।

“ও আল্লাহ গো আমার কোমর গেলো রে। আমি মরে গেলাম রে। এ্যা এ্যা

” হেলো আমার ওপর দুইশো কেজির বস্তা পড়ে আছে আপনার ওপর না

তুলি এবার তাকিয়ে দেখে সত্যি তাই।

“ওই জিসানের বাচ্চা ওঠ

জিসান ওঠে। তুলিকে টেনে ওঠায়। সায়ান পায়ে বেশ খানিকটা ব্যাথা পায়। তুলি হাত বাড়িয়ে দেয়

” নিন উঠুন

“ইডিয়েট

” আই নো এবার উঠুন

সায়ান তুলির হাত ধরে উঠে।

“তাড়াতাড়ি চল না হলে মালিক আমাদের দেখে ফেললে কিমা বানাবে

কোনো রকম দৌড়ে চলে যায়। সায়ানের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে তুলি জিসান আর সায়ান। সায়ান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুলি জিসানের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।

” এএএভাবে তাকাচ্ছেন কেন? বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়ে তো মরেও যেতে পারি

“হুম তুলি ঠিক কইছে

” আপনি বাচ্চা?

“হহ নিষ্পাপ টুনুমুনু একটা বাচ্চা 😎

” চোর আপনি একটা। চিৎকার করে বলে

“ছি ছি ছি

সায়ান জিসান চোখ বড় বড় করে তাকায়।

” আপনার বউ একটা চোর। এটা তো আমি সবাইকে বলবো

তুলি বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সায়ান তুলির হাত ধরে ফেলে

“কোথাও যাবেন না আপনি

জিসান চলে যায়।

” কেনো যাবো না

“আমি বলছি তাই

” হুম যাবো না একটা শর্তে

“কিহহ

” আমাকে তুমি বা তুই করে বলতে হবে

সায়ান হাত ছেড়ে দেয়।

“যেতে পারেন

সায়ান চলে যায়।

” কি ডেমাগ। বলি আমাকে তুমি করে বললে কি মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যাবে? তবে আমি আপনার থেকে তুমি ডাকটা না শুনেছি তবে আমার নামও তুলি নয়।

তুলি বেলকনিতে চলে যায়। বসে বসে চুরি করা আম খায়।

সায়ান আজ জুজুদের বাড়িতে যায়। কাল থেকে একবারও ওদের খোঁজ নেওয়া হয় নি। জুজুদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। জুজুর নানা (আজিম) দরজা খুলে দেয়

“তুমি এখানে?

” জুজুকে দেখতে এসেছিলাম।

সায়ান ভেতরে ঢুকে।

“সায়ান তুমি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে জুঁই কে বিয়ে করবে

সায়ান চমকে ওঠে আজিমের কথা শুনে।

” কি বলছেন আপনি?

“ঠিকি তো বললাম। নিরবকে (জুজুর বাবা) তুমি মেরে ফেলেছো। কেনো? জুঁইকে পাওয়ার জন্য। আমি তখন জোর করে জুঁইয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম। আর তুমি জুঁইয়ের স্বামীকে মেরে ফেলেছো। জুজুকে এতিম করে দিয়েছো। এর দায় তো তোমাকে নিতে হবেই

” আমি মারি নি নিরবকে।

“প্রমান তো বলছে তুমি মেরেছো। তোমার কেরিয়ারের কথা আর তুমি বলেছিলে জুজু আর জুঁইয়ের দায়িত্ব নেবে তাই আমি কথাটা গোপন রেখেছিলাম। কিন্তু এখন তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে না করলে কথাটা পুরো দেশ জেনে যাবে। থানা পুলিশ হবে। তোমার পরিবার কি কথাটা সয্য করতে পারবে

সায়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

” সিদ্ধান্ত তোমার

“জুজু কোথায়?

” তুমি সিদ্ধান্ত জানাও আমি ওদের কথা বলবো

“ভাবার জন্য একটু সময় চায়

তুলি সায়ানকে ফলো করতে করতে এখানে চলে আসে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনে

” সায়ানকে ভয় দেখাচ্ছে কেনো লোকটা। সব কিছুর পেছনে এই লোকটা জড়িয়ে নেই তো? জানতে হবে আমাকে। সায়ানকে আমি ছাড়ছি না। দেখি এই টাকলুটা কি করে আমার বরের সাথে ওনার মেয়ের বিয়ে দেয়।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে