শুধু তুই পর্ব-১+২

0
6463

#শুধু তুই
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)

কবুল বলেই বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায় সায়ান। বিয়ে বাড়িতে হট্টগোল পরে যায়। সবার মুখে এক কথা বর কোথায় গেলো। সায়ানের মা বলে

“আমার ছেলেটার সাথে এটা তুমি না করলেও পারতে

সায়ানের বাবাকে কথাটা বলে চলে যায়।

রাত বারোটা। সবাই এখানে ওখানে ফোন করছে। সায়ান কোথায় গেলো খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছে। তুলি সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে তুলির।

” একদম সোজা হয়ে বসে থাক। তোর বরকে পাওয়া যাচ্ছে না আর তোর ঘুম পাচ্ছে।

তুলির মা তুলির কানে ফিসফিস করে বলে। তুলি বিরক্তি নিয়ে একবার মায়ের দিকে তাকায়

“তোমরা এরকম একটা ছেলের সাথে কেনো আমার বিয়ে দিলে? উনাকে আর কখনো খুঁজে না পাওয়া গেলে বাঁচি।

” চাপকে গাল লাল করে দেবো। চুপ করে বসে থাক।

তুলি মাকে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে।

“সায়ান

সায়ানের মায়ের কথায় তুলি মাথা তুলে তাকায়। প্রচন্ড লম্বা একটা ছেলে ঢুলতে ঢুলতে আসছে। হাতে মদের বোতল। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে। সায়ানের মা এগিয়ে গিয়ে সায়ান জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে

” কোথায় গেছিলি তুই?

“আমি রুমে যাচ্ছি

সায়ান ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে যায়।

” কেমন ছেলেরে বাবা মা কাঁদছে একটু সান্ত্বনা দেবে তা না চলে গেলো।

“মনা (সায়ানের বোন) এই মেয়েটাকে সায়ানের রুমে দিয়ে আয়। কর্কশ গলায় বলে সায়ানের মা চলে যায়।

তুলির মা বাবাও বিদায় নিয়ে চলে যায়। এখন শুধু সায়ানের বাবা মুরাদ মনা আর তুলি দাঁড়িয়ে আছে

“তুলি রুমে যাও।

মুরাদের নরম গলার কথায়ও তুলি চমকে ওঠে। রুমে যাও শব্দটাতেই তুলির ভয়। মাতাল একটা ছেলের ঘরে তুলি কি করে যাবে যদি মারধর করে। এসব ভেবে তুলির আরও ভয় করছে।

মনা তুলির হাত ধরে বলে

” চলো

মনা তুলিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তুলি বারণও করতে পারছে না। মনা তুলিকে সায়ানের রুমের সামনে দাঁড় করায়।

“তুমি ভেতরে যাও আমি যাচ্ছি।

তুলি মাথা নারায়। মনা চলে যায়। এবার তুলি ভাবছে কি করবে।

” তোমাকে এখানে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে কেউ বলে নি

সায়ানের মায়ের কথায় তুলি চমকে ওঠে।
সায়ানের মা তুলির হাতে একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয়।

“এটা আমার ছেলেকে খাইয়ে দিও

তুলি দরজাটা একটু ফাঁকা করে উঁকি মারে। সায়ান বিছানায় শুয়ে আছে।

” এই সুযোগে আমি দৌড়ে বেলকনিতে চলে যাবো আর বেলকনির দরজা বন্ধ করে দেবো

যেই ভাবা সেই কাজ। তুলি লেহেঙ্গারটা একটু উঁচু করে ধরে এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়

“যাক বাবা বেঁচে গেছি। কিন্তু ওই করলা মহিলা যে বললো এইটা মাতালকে খাওয়াতে। এবার

তুলি কিছুখন ভাবে

” ধুর এটা আমিই খেয়ে ফেলি। খুব টেষ্টা পেয়েছে।

তুলি ঢকঢক করে লেবুর শরবতটা খেয়ে ফেলে।

“এবার শুয়ে পরি।

বেলকনির দোলনায় শুয়ে পড়ে তুলি। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরে।

চোখে রোদের আলো পরতেই তুলির ঘুম ভেঙে যায়। বেলকানির দরজাটা খুলে রুমে উঁকি মারে কোথাও কেউ নেই।
তুলি নিশ্চিত হয়ে রুমে চলে আসে। তুলির লাকেজটা খুঁজে লাকেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে গিয়ে দেখে সবাই খাচ্ছে। করলা থুক্কু শাশুড়ী সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছে। তুলি খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে সায়ান নেই। তুলি ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। তুলিকে দেখে তুলিল শশুর বলে

” এখানে বসে ব্রেকফাস্ট করে নাও

তুলি বসে পড়ে।

“জানো তোমার স্বামী কোথায়?

তুলি মাথা নিচু করে ফেলে সত্যিই তো জানে না।

” সত্যিই তো সায়ান কোথায়? তুলি
মুরাদ জিজ্ঞেসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুলি মাথা নিচু করে বলে

“আমি জানি না

” দেখো কেমন মেয়ে এনেছো স্বামীর খবরই রাখতে পারে না আমাদের খবর রাখবে কি করে

“আহ আয়শা৷ চুপ করো তো। তুলি তুমি কোথায় ছিলে?

তুলি পরেছে এখন ঘোর বিপদে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন হুরমুর করে একটা মহিলা একটা পুরুষ আর একটা মেয়ে ঢোকে। মেয়েটা মনা আর মনার মাকে জড়িয়ে ধরে। এদের কথা শুনে তুলি বুঝতে পারলো সায়ানের কাকা কাকিমা আর তাদের মেয়ে ডলি।

ওদের আলাপ শেষে সবাই খেতে বসে যায়। সায়ানের কথা আর তোলে না। তুলি বুঝতে পারে সায়ানের মা জানে সায়ান কোথায়।

তুলির আর খাওয়া হয় না রুমে চলে আসে। খুব কান্না পাচ্ছে তুলির। সবাই পর পর বিহের করছে। কেউ একটু ভালো করে কথা বলছে না পর্যন্ত। রাগে দুঃখে তুলি এবার কেঁদেই ফেলল।

” আমার রুমে ড্রামা নটএলাও

সায়ানের কন্ঠ শুনে তুলি কান্না থামিয়ে সায়ানের দিকে তাকায়। কোথাও গিয়েছিলো। পরনে সাদা শার্ট আর কালো জিন্স। শার্টের বোতাম খোলায় ব্যস্ত।

তুলি বেলকানিতে চলে যায় কাঁদতে। সায়ান ফ্রেশ হয়ে কফির মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে যায়।

“এই সময়টা আমি বেলকনিতে কাটায়। আশা করবো নেক্সট টাইম এই সময় এখানে আপনাকে দেখবো না।

তুলি দোলনায় বসে ছিলো সায়ানের কথায় উঠে দাঁড়ায়। সায়ান দোলনায় বসে কফি খাওয়ায় মন দেয়। তুলি একটু দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।

” এ আমি কোথায় এসে পরলাম। করলার বংশধর। কারো মুখে মধু নেই। এখানে থাকলে আমি পাগল হয়ে যাবো। বাবা মায়ের ওপর খুব রাগ হচ্ছে। ওনারা কেনো আমাকে করলার বাগানে পাঠালো।

বিরবির করে এসব বলছে তুলি। তখন মনা আসে রুমে

“শুনো

তুলি মনার দিকে তাকায়

” জ্বী

“মা তোমার জন্য এই শাড়ি গুলো পাঠিয়েছে

তুলি শাড়িগুলো নিয়ে কিছু বলতে যাবে দেখে মনা চলে যাচ্ছে

” যাহ বাবা এমন করে চলে গেলো কেনো? আমার সাথে কথা বললে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না কি?

চলবে।

#শুধু তুই
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (Writer)

প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তুলির। রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।

“এখন খাওয়ার জন্য গেলে করলা শাশুড়ী আমাকে করলা ভাজি খাইয়ে দেবে। আবার না খেয়েও থাকতে পারছি না। করবোটা কি?

তুলির ফোন বেজে ওঠে। তুলির বাবা ফোন দিয়েছে

” একদম সিমপেথি দেখাতে আসবা না। বলে দিতা বাসা থেকে বেরিয়ে যেতাম। এরকম একটা করলার বংশধরের বাড়িতে না পাঠালে পারতে।

“আমার কথাটা তো শোন

” কোনো কথা শুনবো না। ফোন রাখো আর নেক্সট টাইম কল দিবা না।

তুলি ফোন কেটে দেয়। প্রচুর রাগ হচ্ছে তুলির। নিজের চুল নিজে টানছে। সায়ান রুমে আসে।

“আমি খাবো

সায়ান সরু চোখে তুলির দিকে তাকায়। তুলি মাথা নিচু করে আছে।

” আমাকে কি আপনার খাবার মনে হয়? রাগী গলায় প্রশ্নটা করে সায়ান। তুলি আমতা আমতা কটছে।

“আমার খিদে পেয়েছে। যদি কোনো খাবার হতো। তুলি বলে।

সায়ান কিছু না বলে কানে হেটফোন গুজে শুয়ে পরে।
” এ কেমন মানুষরে বাবা। একটা মানুষ নিজ থেকে খাবার চাইছে তাকে ইগনোর করে শুয়ে পরলো। তুলি বিরবির করে বলছে।

“আসবো। সায়ানের বাবা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে।

” হুম আসুন। পারমিশন নেওয়ার কি আছে? তুলি বলে।

সায়ানের বাবা ভেতরে আসতে আসতে বলে
“ছেলে এখন বিয়ে করেছে তার রুমে কি পারমিশন ছাড়া ঢোকা যায়।

তুলি একটু লজ্জা পায়। যদিও লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলে নি।

সায়ানের বাবা সোফায় বসে খাবারের প্লেট টা টেবিলে রাখে।
” আমার পাশে বসো। হালকা হেসে বলে সায়ানের বাবা। তুলি ওনার পাশে বসে। উনি ভাত মেখে তুলির মুখের সামনে ধরে। তুলি খেয়ে নেয়।
“কাল থেকে তুমি অফিসে যাবে। তুমিই সায়ানের নতুন পিএ

তুলির গলায় খাবার আটকে যায়। সায়ানের বাবা তুলিকে পানি দেয়। পানি খেয়ে তুলি একটু শান্ত হয়ে মিনতির সুরে বলে
” আমি ওনার পিএ হতে পারবো না।

“কেনো
” প্লিজ

“তুলি তুমি আমার কথাটা রাখবে না।
তুলি পরেছে বিপদে।
” ওই গোমড়া মুখোর পিএ হলে তো সারাদিন ওনার সামনে থাকতে হবে।

“কি ভাবছো? সায়ানের বাবা তুলিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে।
” কিছু….. না। থেমে থেমে বলে তুলি।
সায়ানের বাবা তুলির মুখে ভাত দিয়ে বলে

“কাল থেকে অফিস জয়েন করবে। সকালে তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠবে ওকে।
তুলি ভাত চিবতে চিবতে মাথা নারায়।

সকালের খাবার বিকেলে খেয়ে তুলির খুব খারাপ লাগছে। সায়ান বেরিয়ে গেছে। তুলি এপাশ ওপাশ হাটছে। হঠাৎ তুলি চোখ পরে দেয়ালে থাকা একটা ছবির দিকে সায়ান আর একটা মেয়ের ছবি। সায়ান মেয়েটাকে হাটু মুরে প্রপোজ করছে আর মেয়েটা এক গাল হেসে ফুলটা নিচ্ছে।

” কে এই মেয়েটা ওনার গার্লফ্রেন্ড। আমি তো শুনেছিলাম ওনার একবার বিয়ে হয়েছিলো তাহলে এই মেয়েটাই ওনার বউ? কোথায় আছে এই মেয়েটা? দেখে তো মনে হচ্ছে উনি মেয়েটাকে খুব ভালোবাসে। তাহলে আমায় বিয়ে করলো কেনো? ধুর এসব ভেবে লাভ নেই।

বাইরে একটা বাচ্চার হাসির শব্দ শুনে তুলি বাইরে যায়।

“এবাড়িতে বাচ্চাও আছে। বাহ ভালোই হলো।

তুলি বাইরে গিয়ে দেখে সায়ানের কোলে একটা চার পাঁচ বছরের মেয়ে।সায়ানকে আবার পাপা বলছে।

“এমা ওনার তো দেখছি আবার বাচ্চাও আছে। বাবা আমাকে একটা বুরোর সাথে বিয়ে দিলো

” পাপা ওই বউটা কে?

বাচ্চা মেয়েটা সায়ানকে জিজ্ঞেস করে। ওখানে সায়ানের মা মনা আর একটা মেয়ে ছিলো।

“কি হলো পাপা বলো

সায়ান একবার তুলির দিকে তাকায়। তুলি সায়ান কি উত্তর দেবে এটার শোনার জন্য অধিক আগ্রহে সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

” তুমি ওকে আন্টি বলতে পারো।

“তোমার কে হয় সেটা জানতে চাইছি

“কি বিচ্ছু মেয়েরে বাবা জেনেই ছাড়বে। বলুন বলুন আমি কে হই

” আমার আপু হয়

সায়ানের কথায় সবাই চোখ বড়বড় করে সায়ানের দিকে তাকায়।

“আমি ওনার আপু হই। আল্লাহ আমারে তুইলা নেও
বিরবির করে বলছে তুলি।
তুলি মুখ ফুলিয়ে রুমে চলে যায়।

” আজ আর দোলনায় শুতে পারবো না। তারাহুরো করে খেয়ে খাটে শুয়ে পরবো

যেই ভাবা সেই কাজ। তুলি চক করে খেতে চলে যায়। সবে রাত আটটা বাজে। তুলি খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার বেরে রুমে চলে যায়। তারপর পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে খাওয়া শুরু করে।

খাওয়া শেষে চাদর মুরি দিয়ে শুয়ে পরে। সায়ান খাবার খেয়ে রাত দশটায় রুমে আসে। দেখে তুলি বিছানায় শুয়ে আছে। সায়ান লাইট বন্ধ করে সোফায় শুয়ে পরে।

সকালে তুলি চোখ খুলে দেখে রুমের কোথাও সায়ান নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নয়টা বাজে

“ও মাই গড এতো বেলা হয়ে গেছে।

তুলি তারাহুরো করে উঠে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে নিচে যায়। দেখে সায়ানের বাবা বসে আছে খাবার টেবিলে।

” এতো লেট হলো

তুলি এক হাতে কান ধরে বলে

“সরি

সায়ানের বাবা একটু হেসে তুলিকে বসতে বলে। তুলি বসে খাওয়া শুরু করে।

সায়ান নিজের অফিস রুমে বসে আছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কারণ সায়ানের পিএ আসে নি এখনো।

” মায়া মায়া
চিৎকার করে ডাকে সায়ান। মায়া নামের মেয়েটি দৌড়ে সায়ানের কেবিনে ঢোকে

“সসস্যার

” পিএ আসে নি কেনো?

“বড় স্যার আপনার জন্য নতুন পিএ ঠিক করেছে

” কোথায় সে

“এখনো আসে নি

” আসে নি মানে নি?

সায়ানের রাগে মায়ার ভয় করছে।

“মে আই কাম ইন স্যার

সায়ান আর মায়া বাইরের দিকে তাকায়। তুলি ভয়ে ভয়ে ভেতরে ঢোকে।

” ডিসিপ্লিন বলে একটা শব্দ আছে জানেন

শান্ত গলায় বলে সায়ান।

“জ্বী

” আমি কি আপনাকে পারমিশন দিয়েছি ভেতরে ঢোকার
চিৎকার করে বলে সায়ান। তুলি কান চেপে ধরে

“আমি তো বলেছিলাম মে আই কাম ইন আপনি তে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলেন হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না। তো আমি ভেবেছিলাম আপনি কথা বলতে পারেন না। পরে

” সাট আপ
সায়ানের ধমকে মারা দৌড়ে চলে যায়। তুলি চোখ বুজে নেয়। এই বুঝি গালে থাপ্পড় পরলো।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে