শিরোনামহীন পর্বঃ৪

0
964

শিরোনামহীন
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৪

হালকা খয়েরী এবং কালো মিশেলে একটি শাড়ি পরেছে আনতারা। খানিকটা হেলে বসেছে চেয়ারে। দৃষ্টি সামনে থাকা ভদ্রমহিলার হাতের দিকে।এক গাছি সোনার চুড়ির মাঝে উঁকি দিচ্ছে একটা লাল তিল।ভদ্রমহিলার অন্য হাতে খাবারের থালা।অথচ খাবার দেখেই কেমন বমি বমি ভাব হচ্ছে আনতারার।

কিছুক্ষণ আগে বেশ হট্টগোল বেজেছিলো বাড়ির উঠোনে।আনতারার দুই ভাই এবং ভাবীরা এসেছিলো।চেয়ারম্যান, মেম্বার সব নিয়ে। সাবেতের নামে কেস করবে , সরাসরি হুমকি দিয়ে গেছেন তারা।
ছোট ভাই তো রাগের বশে তাদের বসতে দেওয়া চেয়ার উঠিয়ে আছড়ে ফেলেছে মাটিতে।
পা ভাঙা প্লাস্টিকের চেয়ার এখনো পরে আছে উঠোনের বা পাশে।

আনতারাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে আনতারার বড় ভাবী কুমুদ।
পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী কুমুদের চেহারায় মায়াদেবীর ছাপ পায় সবাই।
কুমুদ যেনো স্বভাবে আচরণেও কুমুদ।
বাসর রাতে তাকে তার স্বামী প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলো,

“বউ, তোমার নামের অর্থ জানো?”

সদ্য বিবাহিত কিশোরী মেয়ে যখন স্বামীর মুখে প্রথম বউ ডাক শুনতে পেয়েছিলো,তখন লজ্জায় বেশ রাঙানো ছিলো তার মুখ। শুধু দু দিকে মাথা দুলিয়ে না সূচক উত্তর দিয়েছিলো।

“কুমুদ অর্থ পদ্ম, আর কুমুদিনী মানে পদ্মের গুচ্ছ।”

কুমুদের স্বভাব,চরিত্র যে পানিতে জন্ম নেওয়া ফুলের মতন বুঝতে খুব একটা সময় লাগেনি বাড়ির সকলে।
ঠান্ডা মেজাজের, শান্ত চাহনির, নিজেকে সব বিষয়ে স্থির রেখে সামলে যাওয়া কুমুদ যেনো সত্যি পানির মতন সরল।

ছোট বেলা থেকেই কুমুদ ছিলো আনতারার সব।কাঁদা মাটি হিসেবে পাওয়া আনতারা কে তাইতো কুমুদ নিজ হাতে গড়ে নিয়েছে।শৈশবে চাঞ্চল্যময় আনতারা ধীরেধীরে হয়ে উঠেছে শান্ত,চুপচাপ স্বভাবের।

“খেয়ে নে রে আরু! খেয়ে নে।”

এই মাত্র কয়েকটা শব্দ যেনো-তেনো পর্যায়ে বললেন কুমুদ বেগম। দু চোখ পানিতে ছলছল করছে, এই বুঝি বেড়িবাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে।

“ভাবীমা, আমার না কিছুই ভালো লাগে না গো।এই দেখো বুকের ভেতর কেমন খাঁখাঁ করতেছে। ভাবী আমি কি খুব খারাপ? আমার সাথেই এমন কেন হইলো?”

আনতারার প্রশ্নে হাতের খাবারের থালা রেখে দু হাতে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো আনতারাকে।ফুপিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।কি বলে স্বান্তনা দিবে সে?আনতারাকে স্বান্তনা দেওয়ার মতন কোন কথাই যে আজ তার কাছে নেই।ডান হাতে আঁকড়ে ধরে বা হাতে আনতারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কুমুদ।

ছেলের কাছে আদ্যোপান্ত সব কিছু বলে একটা শ্বাস নিলো সাবেতের মা।
আনতারা বড় ভাইয়ের থেকে ছোটটা বেশি রাগী।সাবেতের নামে কেস দেওয়া কোন ব্যাপার না।তাছাড়া সাব্বির এবাড়িতে একা ব্যাটা মানুষ। যদি কিছু করে রাগের বশে?

ভদ্রমহিলা বেশ ঘাবড়ে ভিডিও কলে সাবেতকে এসব বললেন। বলার পর খেয়াল করলেন সাবেতের পাশে অন্য একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না সে কে।
দূরে ছিলো তখন দেখেছে মেয়েটা গর্ভবতী।এর মানে তো এই হয়,
সাবেত ওর সাথে সুখেই আছে।

মারিয়ার সাথে সাবেতের মা অনেক ক্ষণ কথা বললেন।মারিয়া যেমন যেমন বলেছে তাই করবেন বলে স্থির করেছেন।
মারিয়া সাবেতের মায়ের সাথে একান্তে কথা বলতে চায় বলে সাবেত দূরে চলে গিয়েছিলো।কথা শেষে মারিয়া তাকে হাসিমুখে ফোন ফিরিয়ে দেয়। তখনো কল কাটেনি।
হাতে ফোন নিয়ে সাবেত দেখলো তার মায়ের পিছনে আনতারার ছোট্ট সংসার দেখা যাচ্ছে। পূর্ব দিকের জানালার গ্রিলে হাত রেখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে আনতারা।খোলা চুলে দাঁড়িয়ে একমনে কিছু একটা ভাবছে সে।
আনতারার মুখ দেখার এক অজানায় তৃষ্ণা চৌচির হয়ে যাচ্ছে সাবেতের বুকের মাঝে।যাইহোক না কেনো? আনতারা তার স্ত্রী,প্রেয়সী,বান্ধুবী সব। আনতারা অবশ্যই সবটা জেনে ফিরিয়ে দিবে না।
মায়ের কাছে সাবেত আনতারার কথা বলার ঠিক আগ মুহূর্তেই দেখলো,
দু হাতে মুখ চেপে আনতারা ছুটেছে কলতলার দিকে।

আপন মনেই সাবেত কিছু হিসেব করে দেখলো,পর মূহুর্তেই ভাবলো,

“এমন কিছু হলে অবশ্যই আনতারা জানাবে।অন্তত তাদের সন্তানের কথা আনতারা অভিমান করে না বলে থাকতে পারবে না।”

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে