রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৫

0
2474

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৫
আকাশে মেঘের স্পষ্ট গর্জনের শব্দে মাইশা বাস্তবে ফিরে। বারবার না চাইতেও অতীতের সেই পাতায় হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। বৃষ্টিও পড়ছে টুপটুপ করে।তার উজ্জল শ্যামলা মুখে সেই বিন্দুগুলো একে বারে মিশে গিয়েছে।মনে আছে তার চাপা আর্তনাদ। আয়াতের অপমান , আদ্রাফের স্মৃতি সবকিছু মিলিয়ে হাহাকারে ভুগছে তার হৃদয়।
.
বৃষ্টির গতি বাড়ছে ধীরে ধীরে। আশেপাশে মানুষের পরিমাণ কমে আসছে। হেঁটে হেঁটেই মাইশা চলে যাচ্ছে বাড়ির দিকে। হঠাৎ তার মনে হচ্ছে তার শরীর বেশ দুর্বল। অনেকটাই দুর্বল । মাথা তার ঝিম ধরে যাচ্ছে। বাড়িতে যেতেও এখন আরও ৩০ মিনিটের মতো বাকি। রাস্তায় কোনো প্রকার কোনো রিক্সা নাই।আর দু’কদম এগোলেই ইনায়ার বাসা । এখন মাইশা ওর বাসাতেই যাবে।
.
***
.
দরজা খুলে ইনায়া মাইশাকে এমন ভিজা অবস্থায় দেখে অনেক অবাক হয়। তারপর ব্যস্ত স্বরে বলতে থাকে…..

”দোস্ত …..তুই এখনো বাসায় যাস নি? তুই তো ভার্সিটি থেকে অনেক আগেই চলে গিয়েছিলি । আর এমন কাকভেঁজা অবস্থায় কেন ?”
.
ইনায়ার কথার উত্তর দেয়ার মতো নুন্যতম ক্ষমতা নেই মাইশার। দুর্বল কন্ঠে সে বলে উঠে ,
”আঙ্কেল-আন্টি কোথায় ?”
.
”বাসায় নেই….তুই আগে ভিতরে আয়…..ফ্রেস হ।”
মাইশা বাধ্য মেয়ের মতো ইনায়া থেকে একজোড়া ড্রেস নিয়ে গেস্টরুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। তবে ইনায়াকে মিহি কণ্ঠে বলে ;
.
”আমি একটু একা থাকতে চাই ইনা…..বৃষ্টি কমলে আমি বাসায় চলে যাবো। প্লিজ ডিস্ট্রাব করিস না।”
,
জামাকাপড় পাল্টে খাটে শুয়ে পড়ে মাইশা। মাথাটা তার ভোঁ ভোঁ করছে। কম্বল পেচিয়ে থাকা সত্বেও অনবরত কাপছে সে । শরীর তার অনেক দুর্বল।চুলগুলো এখনো ভালোমতো না মুছার ফলে বালিশ একটু ভিজে গিয়েছে।তার ঠাণ্ডা দেহটা যেন কিছুতেই কোনো উষ্ণ পরশ পাচ্ছে না। মাইশা শুধু মনে মনে ভাবছে…….
.
”কেন এতটা ঘৃণা করো আমায় আয়াত ? যে সবার সামনে আমাকে প্রস্টিটিউট বানাতেও দুবার ভাবলে না? এখন থেকে আমাকে অপমান করার আর কোনো সুযোগ পাবে না তুমি…..”
.
মাইশা আর কিছু ভাবতে পারলো না। চোখ দুটো তার হারিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
কাধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে স্কুলের সামনে দাড়িঁয়ে আছি আমি। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আজ প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করতে গিয়েই লেট হয়ে গেলো। বাইরে তুমুল বেগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাসাতেও যেতে পারছি না । আমার আবার sinusitis এর প্রবলেম আছে। একটু ঠাণ্ডার সংস্পর্শে এলে সেদিন আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।তাই কি আর করার ? দাঁড়িয়েই আছি……..
.
হঠাৎ আমি দেখি আদ্রাফ ওপাড় থেকে এপাড়ে আসছে।পরনে নেভি ব্লু শার্ট , হোয়াইট জিন্স , হাতে ওয়াটার প্রুফ ফাইল আর ছাতা । আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি তার দিকে। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা থাকার সত্বেও কাকভেঁজা হয়ে ঘুরছে ; এমন মানুষকে নির্ঘাত সবাই পাগলই ভাববে। তার চোখ আমার চোখে পড়তেই চোখ সরিয়ে নেই আমি। আদ্রাফ আমার দিকে এগিয়ে এসে বলে…
.
”এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন?”
,
আমি তাজ্জব হয়ে যাই,
” কিভাবে তাকিয়ে ছিলাম?”
.
”ভ্রু কুচকে…..”
.
”না ….আসলে আমি দেখলাম যে ছাতার জন্য আমি বাসায় যেতে পারছি না আর আপনি এভাবে ছাতা থাকতেও কাকভেঁজা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন?”
.
আমার কথা শুনে আদ্রাফ আলতো হাসে । তারপর আমার দিকে ছাতা এগিয়ে দিয়ে বলে ,
” এই ছাতাটা নাও । বৃষ্টিতে ভিজতে বরাবরই আমি পছন্দ করি। আর এই ছাতাটা আপু আমার সবসময় দিয়ে দেয় । এখন এটা তোমার দরকার তাই তোমাকে দিলাম।”
আমি বুঝতে পারছি না ছাতাটা কি নেব না-কি নেবো না।কিছুক্ষণ পর ছাতাটা আমি নিয়ে নেই। আদ্রাফ চলে যাবে এখন তাহলে? জানি না কেন তবুও আদ্রাফ আমার আশেপাশে থাকলে আমার অনেক ভালোলাগে।হঠাৎ আমি বলি ;
”আদ্রাফ ভাই আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারবেন?”
.
আদ্রাফ কপাল ভাঁজ করে তাকায় আমার দিকে। এই রে! আমার চিন্তাটা আন্দাজ করতে পারলো নাকি। আমি একটু আমতা আমতা করে বলি…
”না , মানে ; এখন তো রাস্তাটা অনেক ফাঁকা । আমার insecure ফীল হচ্ছে। তাই বলছিলাম আরকি ; আপনি দিয়ে দিয়ে আসতে পারবেন?”

মুচকি হেসে সে আমার কানের কাছে মিহি কণ্ঠে বলে;
”আমার সাথে গেলে insecure ফীল হবে না ?”
তার কথার ধরণ দেখে আমার মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে।আদ্রাফ আমার এ অবস্থা দেখে দূরে সরে গিয়ে বলে….
”Relax , Relax মাইশা ! আমি তো জাস্ট মজা করছি । চলো তাহলে….?”
.
****
.
তুমুলবেগে মুষলধারের বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তরার ৭ নং সেক্টরের এক সরু গলিতে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা । আশেপাশে সবুজ গাছগুলো বাতাসের বেগে অপরূপ শব্দের সৃষ্টি করছে।আদ্রাফ আমার সামন হেঁটে যাচ্ছে আর আমি আদ্রাফের পিছে ।
বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা আদ্রাফের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে । নীলাভ শার্টটা একেবারে মিশে আছে তার গায়ের সাথে। আমি তার প্রতিটা জিনিস মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করছি । তার প্রতিটা কাজকর্মই আমার কাছে নিখুঁত মনে হয় । আচ্ছা এটাই কি তবে ভালোবাসা ?
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
ঘুমের মধ্যে মাইশা অনুভব করতে পারছে ও কারও সাথে মিশে আছে । কপালে বারবার কারও ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া পাচ্ছে । কিন্ত চোখ খোলার মতো শক্তি তার মধ্যে নেই । মাথাটা এখনো ঝিম ধরে আছে ওর ।
.
পিটপিট করে চোখ খুলতেই সে নিজেকে আয়াতের বুকে আবিষ্কার করে। ওর পায়ের কাছে ইনায়া বসে আছে। আয়াতের চোখ-মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ। নিজেকে আয়াতের বুকে পেয়ে সে সরে আসতে যাবে আয়াত কড়া গলায় বলে উঠে…..
” খবরদার আমার কাছ থেকে আর এককদম দূরে সরার চেষ্টা করবা ; এমন কিছু করলে I swear তোমাকে আমার সাথে বেঁধে রাখবো ”
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে । এ কোন আয়াতকে দেখছে সে?
.
.
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে